সম্প্রতি, ভারতে বিষাক্ত শুঁয়োপোকার হুলে মৃত্যু সম্পর্কিত কিছু পোস্ট এবং মৃত্যুবরণকারী দুইজন ব্যক্তির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। যেখানে ছবির দুই ব্যক্তিকে বিষাক্ত পোকার হুলে মারা যাওয়ার দাবি করা হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে( আর্কাইভ) ,এখানে ( আর্কাইভ) এবং এখানে ( আর্কাইভ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলোতে যে দুইজন মৃত ব্যক্তির ছবি প্রচার করা হয়েছে, তারা শুঁয়োপোকার হুলে বা কামড়ে মারা যাননি বরং ছবি দুটি বজ্রপাতে মারা যাওয়া দুজন ব্যক্তির ছবি। এখানে শুঁয়োপোকার সাথে তাদের মারা যাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘Team AZN’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৭ জুলাই প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। “The worm that kills 3 people in 5 minutes?? What is the matter after all…#truth” (অনূদিত) শিরোনামে ঐ ভিডিওটির আলোচ্য বিষয়ের সাথে ফেসবুকে প্রচারিত দাবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওতে পোকার কামড়ে মানুষ মারা যাওয়ার দাবিটি খণ্ডন করতে দেখা যায়। ভিডিও থেকে জানা যায় ঘটনাটিকে অনেকে ভারতের কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র বা তেলেঙ্গানার বলে প্রচার করছেন। বজ্রপাতের কারনে মৃত্যুবরন করা ব্যক্তিদের আশেপাশের গাছে শুঁয়োপোকা থাকার কারনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষজন পোকার কামড়ে তাদের মৃত্যু দাবিসহ বিভিন্ন তথ্য প্রচার করছে বলে তিনি জানান।
পরবর্তী অনুসন্ধানে মহারাষ্ট্রের স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেল Aadhar News এ ২০২২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ‘চালিসগাঁওয়ে বজ্রপাতে পিতা-পুত্র নিহত হয়েছেন(অনূদিত)’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ২০২২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ৪৫ বছর বয়সী কৃষক এবং তার ১৪ বছর বয়সী ছেলে বজ্রপাতের সময় একটি গাছের নীচে আশ্রয় নেওয়ার পরে বজ্রপাতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
উক্ত প্রতিবেদনে প্রকাশিত ছবিগুলোর সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ছবিগুলোর হুবহু মিল পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে একটি টুইটার অ্যাকাউন্টের টুইটে মৃত ঐ দুই ব্যক্তির ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। ২০২২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বরের সেই টুইটে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীকে ট্যাগ করে বাবা এবং ছেলের বজ্রপাতে নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম Maharashtra Times এ উক্ত ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও তাদের বজ্রপাতে নিহত হওয়ার একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, যে ছবি দুটি প্রচার করে তাদের পোকার হুলে বা কামড়ে মারা যাওয়ার দাবি করা হয়েছে তারা মূলত বজ্রপাতের আঘাতে মারা গেছেন।
মূলত, ২০২২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ভারতের মহারাষ্ট্রের জলগাঁওতে বজ্রপাতে নিহত বাবা এবং ছেলের মাটিতে পড়ে থাকা মৃতদেহের ছবি প্রচার করার মাধ্যমে তাদের পোকার হুলে বা কামড়ে মারা যাওয়ার ভুয়া দাবি করা হয়েছে।
সুতরাং, প্রচারিত ছবির ব্যক্তি দুজনের বিষাক্ত শুঁয়োপোকার হুলে মৃত্যু হওয়ার দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- YouTube Channel : Team AZN
- Media Outlet: Adhar News
- Media Outlet : Maharashtra Times