ভুল তথ্য সম্বলিত ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির এআই ভিডিও বাস্তব দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি ‘৮ বছরের একটা বাচ্চার দাদা রাশেদ ইকবাল এখন ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। ছাত্রদলকে এখন আর চাচ্চুদল নয়, বলতে হবে দাদাদল’ শীর্ষক শিরোনামে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানের ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন  এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানের বক্তব্য দাবিতেআলোচিত এই ভিডিওটি বাস্তব নয় বরং ইন্টারনেট থেকে  তার একটি ছবি ডাউনলোড করে এআই টুলের মাধ্যমে সম্পাদনা করে একটি ভয়েস যুক্ত করে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।

Screenshot: Facebook 

২০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিতে বলতে শোনা যায়, “আমি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নতুন সভাপতি রাশেদ ইকবাল। আমার বয়স মাত্র ৪৭ বছর। আমার বড় ছেলে তাওহীদ, ওর বয়স ২৭ বছর। তাওহীদের আবার ৮ বছরের একটা মেয়ে সন্তান রয়েছে। আমি জোবায়দা রহমানের ক্লাসমেট। প্রিয় ছাত্রসমাজ, সবাই আমাকে চাচাজী বা দাদা বলে ডাকবেন এবং সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।” 

এছাড়াও ভিডিওটির বামপাশের নিচের দিকে D ID লেখা লোগো দেখা যায়। ডি-আইডি একটি জেনারেটিভ এআই টুল। এটির মাধ্যমে একটি ছবিকে ভয়েস সহকারে ভিডিওতে রূপান্তর করা যায়।

পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটির কি-ফ্রেম কেটে কয়েকটি স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক পোস্টে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত ছবিটির অনুরূপ একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Rashed Iqbal Khan Facebook

অর্থাৎ, রাশেদ ইকবাল খানের ফেসবুক পেজ থেকে এই ছবিটি সংগ্রহ করে এআই প্রযুক্তির সহায়তায় ভয়েস যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

এছাড়াও দেশের মূলধারার অনলাইন গণমাধ্যম ডেইলি ক্যাম্পাসের ওয়েবসাইটে গত ০৯ আগস্ট ‘ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির বয়স ৪৭ বছর নয়’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: The Daily Campus

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাশেদ ইকবাল ২০০৫ সালে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এছাড়াও প্রতিবেদনে উল্লেখিত জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী রাশেদ ইকবালের জন্ম পহেলা ডিসেম্বর ১৯৮৭ সালে। সে হিসেবে তার বর্তমান বয়স দাড়ায় ৩৬ বছর। 

এছাড়াও প্রতিবেদনে উল্লেখিত ছাত্রদল সভাপতির বক্তব্য থেকে জানা যায়, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন এবং ২০০৩ সালে এসএসসি ও ২০০৫ সালে এইচএসসি সম্পন্ন করেন।

উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, আলোচিত ভিডিওটি বাস্তব নয় এবং ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানের বয়সও ৪৭ বছর নয়।

মূলত, গত ০৮ আগস্ট ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান সংগঠনটির সিনিয়র সহ সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পরই তার বয়স ৪৭ বছর এবং তার ছেলের বয়স ২৭ বছর শীর্ষক দাবিসহ তার পরিবারকে জড়িয়ে বেশকিছু তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে উক্ত দাবি সম্বলিত ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানের কথিত বক্তব্যের ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত এই ভিডিওটি বাস্তব নয় এবং ইন্টারনেট থেকে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানের বয়সও ৪৭ নয়। প্রকৃতপক্ষে রাশেদ ইকবাল খানের গত ২১ ফেব্রুয়ারির প্রোগ্রামের একটি ছবি সংগ্রহ করে করে এআই টুলের মাধ্যমে সম্পাদনা করে একটি ভয়েস যুক্ত করে উক্ত ভিডিওটি তৈরী করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, ইনভেস্টোপিডিয়া অনুযায়ী, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) হলো মেশিন বা প্রোগামের মাধ্যমে মানুষের বুদ্ধিমত্তার অনুকরণ করা। অথবা বলা যেতে পারে মানুষের মত চিন্তা করতে পারে এমন প্রোগ্রামকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বলা হয়। কৃত্তিম উপায়ে এই বুদ্ধিমত্তার প্রোগ্রাম তৈরি করা হয় বলে বলে একে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বলে।

প্রসঙ্গত, পূর্বেও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ছবি বাস্তব দাবিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন পড়ুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) দিয়ে তৈরী ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবালের ভিডিওকে তার দেওয়া বাস্তব বক্তব্যের ভিডিও দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img