জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে দিনভর হামলা, সংঘর্ষ এবং ভাংচুরের ঘটনায় গত বুধবার (১৬ জুলাই) রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্ক ও লঞ্চঘাট এলাকা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে এখন অবধি ০৫ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
এরই প্রেক্ষিতে, গোপালগঞ্জের ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে দোষারোপ করে বাংলাদেশ পুলিশের সংবাদ সম্মেলন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ভিডিওটিতে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশকে বলতে দেখা যায়, রাজাকার ওয়াকারের নির্দেশে গোপালগঞ্জ রক্তরঞ্জিত হয়েছে। প্রতেকটা প্রাণ মূল্যবান। এসব বর্বরতা থেকে তারা ফিরে আসুক। আমরা চেষ্টা করেছিলাম বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু ওয়াকারেরা বাংলাদেশকে গণহত্যার স্কোয়াড (অস্পষ্ট) মাঠ বানিয়ে ফেলেছে। এটা পরিতাপের বিষয় যে সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে আমরা এই রাজাকার দুষ্টু ওয়াকারের লাগাম টানতে পারছি না। কিন্তু জনগণ তা পারে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গোপালগঞ্জের ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে দোষারোপ করে পুলিশের সংবাদ সম্মেলন দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে কথিত এই সংবাদ সম্মেলনের ভিডিওর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও রিউমর স্ক্যানার টিমের বিশ্লেষণে ভিডিওতে এআই-জনিত অসঙ্গতি লক্ষ্য করা গেছে। যেমন – পুলিশের পোশাক, ভয়েস, বুমে অজ্ঞাত গণমাধ্যমের লোগো। তাছাড়াও, ভিডিওটি তিনটি অংশ সংযুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
প্রথম অংশ – রাজাকার ওয়াকারের নির্দেশে গোপালগঞ্জ রক্তরঞ্জিত হয়েছে। প্রতেকটা প্রাণ মূল্যবান। এসব বর্বরতা থেকে তারা ফিরে আসুক।
দ্বিতীয়াংশ – আমরা চেষ্টা করেছিলাম বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু ওয়াকারেরা বাংলাদেশকে গণহত্যার স্কোয়াড (অস্পষ্ট) মাঠ বানিয়ে ফেলেছে।
তৃতীয়াংশ – এটা পরিতাপের বিষয় যে সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে আমরা এই রাজাকার দুষ্টু ওয়াকারের লাগাম টানতে পারছি না। কিন্তু জনগণ তা পারে।
প্রত্যেক অংশ ৮ সেকেন্ড করে।
পাশাপশি ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘Veo’ গুগলের একটি উন্নত এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির প্রত্যেকটি অংশের দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড।
পরবর্তীতে, বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতে ভিডিওটি এআই (AI) কন্টেন্ট ডিটেকশন টুল ‘Cantilux’ দিয়ে যাচাই করলে তা এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বলে জানা যায়।

সুতরাং, গোপালগঞ্জের সহিংসতার ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে দোষারোপ করে বাংলাদেশ পুলিশের সংবাদ সম্মেলন দাবিতে এআই দিয়ে তৈরি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- AI Content Detection Tool: Cantilux
- Rumor Scanner’s Analysis