বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঘোড়া দাবিতে প্রচারিত ছবিটি ‘AI’ দিয়ে তৈরী 

সম্প্রতি ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘোড়া!’ শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ঘোড়ার ছবি প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ),এখানে (আর্কাইভ)।

ইংরেজিতে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ),এখানে (আর্কাইভ),এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘোড়া দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ছবিটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে উক্ত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।

ঘোড়ার ছবিটি সম্পর্কে জানার আগে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরী কোনো ছবি কিভাবে শনাক্ত করা যায়, সে সম্পর্কে কিছু বিষয় জানা প্রয়োজন। 

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরী কোনো ছবি শনাক্ত করার উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো: 

  • ছবিটি জুম ইন করা: 

এভাবে ছবি জুম ইন করার মাধ্যমে ছবির বিস্তারিত খুঁটিনাটি চোখে ধরা পড়ে।

  • ছবির মুখ ও হাত খেয়াল করা: 

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরী ছবিতে সাধারণত ছবির মুখ ও হাত ঠিকঠাক ফুটে ওঠে না। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, ছবির বিদ্যমান ব্যক্তির মুখাবয়ব ও হাতে অসঙ্গতি থেকে যায়। এ নিয়ে আরও পড়ুন এখানে। 

  • রিভার্স ইমেজ সার্চ করা: 

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে যদি ছবিটির মূল সূত্র খুঁজে পাওয়া না যায় বা কোনো ফলাফল যদি পাওয়া না যায়, তাহলে সেটিও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরী হতে পারে।

ঘোড়ার ছবিটি সম্পর্কে যেভাবে নিশ্চিত হওয়া গেল

‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘোড়া!’ শীর্ষক ছবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম প্রথমেই উপরিউক্ত কৌশল সমূহ অবলম্বন করে ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। তবে এ প্রক্রিয়ায় ছবিটি সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য সূত্রে বিস্তারিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। 

পরবর্তীতে ছবিটি জুম ইন করে এতে বেশ কিছু অসঙ্গতি চোখে পড়ে। যেমন, ছবিটিতে দেখা যায়,  ছবিটির একদম ডানপাশে দাঁড়ানো ব্যক্তির পা ও ঘোড়ার পা একীভূত হয়ে আছে। অর্থাৎ ঘোড়ার পা ও ঐ ব্যক্তির পা আলাদা করা যাচ্ছে না। একই রকম দেখা যায়, বামপাশের প্রথম ব্যক্তিটির ক্ষেত্রেও৷ এখানেও ঘোড়ার পা ও ব্যক্তির পা একীভূত হয়ে আছে। আবার ডানপাশে সাদা জমা পরিহিত দাঁড়ানো ব্যক্তির বাম হাতটিও ছবিতে অস্বাভাবিকভাবে অনুপস্থিত দেখা যাচ্ছে।

Image Analysis: Rumor Scanner 

পাশাপাশি গত ৮ এপ্রিল Mervyn Chapman নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে Mid Journey Official নামের ফেসবুক গ্রুপে দেওয়া পোস্টেও এই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Mid Journey Official Facebook group 

পোস্টটিতে আলোচিত ছবিটির মতো মানুষের চেয়ে বৃহৎদাকৃতির প্রাণীসহ আরও একাধিক ছবিও খুঁজে পাওয়া যায়। একইসাথে পোস্টটিতে উল্লেখিত শিরোনাম থেকেও এটি প্রতীয়মান হয় যে, এই ছবিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্বারা তৈরী। 

ছবিটির এসব অসঙ্গতির ভিত্তিতে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয় যে, এই ছবিটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরী। অর্থাৎ ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘোড়া!’ শীর্ষক ছবিটির ঘোড়াটি বাস্তব নয়।

এছাড়া আমেরিকান ফ্যাক্টচেকিং ওয়েবসাইট Snopes ও গত ২৭ এপ্রিল ‘Does This Photo Show the Biggest Horse in History?‘ শীর্ষক তাদের একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে আলোচিত ঘোড়ার ছবিটিকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরী বলে নিশ্চিত করে। 

Screenshot: Snopes.com

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঘোড়া কোনটি?

কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে রেকর্ড সংরক্ষণকারী ওয়েবসাইট Guinness World Records  এ দেখা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা নথিভুক্ত ঘোড়ার নাম হলো শায়ার জেল্ডিং স্যাম্পসন (পরে নামকরণ করা হয়েছে ম্যামথ)।  এই ঘোড়াটির জন্ম ১৮৪৬ সালে, যুক্তরাজ্যের বেডফোর্ডশায়ারের টডিংটন মিলসে। 

Screenshot: Guinness World Records 

তবে ওয়েবসাইটটিতে ঘোড়াটির কোনো ছবি পাওয়া যায় না। যদিও স্যাম্পসন দাবিতে ইন্টারনেটে একটি ঘোড়ার ছবির অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায়, স্যাম্পসন দাবিতে ইন্টারনেটে যে ছবিটি প্রচার হয়ে আসছে, সেটি মূলত Brooklyn Supreme নামে ভিন্ন আরেকটি ঘোড়ার ছবি।

এ সম্পর্কিত অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনেল কলেজের ওয়েবসাইটে ‘Brooklyn Supreme, world’s largest horse, owned by C. G. Good & Son, Ogden, Iowa‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Grinnell College

প্রতিবেদনটিতে ঘোড়াটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঘোড়া দাবি করে উল্লেখ করা হয় যে, এই ঘোড়াটির নাম Brooklyn Supreme। এই ঘোড়াটির সঙ্গে স্যাম্পসন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত ঘোড়াটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Image Collage: Rumor Scanner 

মূলত, ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘোড়া!’ শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ছবিটি প্রচার করা হচ্ছে সেটি বাস্তব কোনো ছবি নয়। প্রকৃতপক্ষে ছবিটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরী। অপরদিকে গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নথিভুক্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঘোড়া স্যাম্পসনের কোনো ছবির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। বরং স্যাম্পসন দাবিতে যে ছবিটি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়, সেটি Brooklyn Supreme নামে ভিন্ন আরেকটি ঘোড়ার ছবি।

সুতরাং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরী ঘোড়ার ছবিকে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘোড়া দাবি করে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img