Home Blog Page 606

ইংরেজি Sir শব্দের পূর্ণরূপ Slave I Remain নয়

0

দীর্ঘদিন ধরেই ইংরেজি Sir শব্দের পূর্ণরূপ দাবিতে ইন্টারনেটে একটি তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, যেখানে বলা হচ্ছে Sir পূর্ণরূপ হচ্ছে  Slave I Remain। এর অর্থ আমি আপনার অনুগত দাস। ঔপনিবেশিক ভারতে ব্রিটিশরা ভারতীয় কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ করতে এই শব্দটি ব্যবহার করতো।

দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসা এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানেএখানে। আর্কাইভ  দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানেএখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘Slave I Remain’ কে ইংরেজি শব্দ SIR এর পূর্ণরূপ দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে এটির উৎপত্তি ফরাসী শব্দ SIRE থেকে এবং SIR শব্দের কোনো পূর্ণরূপ নেই। 

SIR এর অর্থ কি? 

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম ইংরেজি অভিধান ক্যামব্রিজ ডিকশনারির অনলাইন ভার্সনে শব্দটির অর্থ অনুসন্ধান করে। 

অভিধানটিতে শব্দটির অর্থ লেখা হয়েছে, ‘used as a formal and polite way of speaking to a man, specially one who you are providing a service to or who is in a position of authority’ অর্থাৎ SIR শব্দটি একজন মানুষের সাথে কথা বলার একটি আনুষ্ঠানিক এবং নম্র মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে কাউকে পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বা যিনি কর্তৃত্বের পদে আছেন তার ক্ষেত্রে।

Screenshot: Cambridge Dictionary 

অভিধানটিতে শব্দটির অন্যান্য ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে, যুক্তরাজ্যে শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষককে সম্বোধনে, ভারতীয় ইংরেজিতে কর্তৃত্বের পদে আসীন কোনো ব্যক্তিকে সম্মান প্রদর্শনের ক্ষেত্রে তার নামের পরে SIR শব্দটি ব্যবহার করা হয়। 

Screenshot: Cambridge Dictionary

এছাড়া অভিধানটি থেকে আরও জানা যায়, Sir শব্দটি ব্রিটিশ রানী বা রাজা কর্তৃক প্রদত্ত ‘নাইট’ উপাধিধারীদের নামের পূর্বেও ব্যবহার করা হয়।

Screenshot: Cambridge Dictionary

আরেকটি বিখ্যাত ইংরেজি অভিধান Merriam-Webster এর ওয়েবসাইট থেকে দেখা যায়, Sir শব্দটির উৎপত্তি Sire থেকে। শব্দটির প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল ১৩ শতকে। অর্থাৎ ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সূচনার অনেক আগে থেকেই শব্দটির প্রচলন ছিল।

Screenshot: Merriam-Webster

পাশাপাশি অভিধানটিতে শব্দটির যেসব অর্থ পাওয়া যায়, সেখানেও Sir এর পূর্ণরূপ হিসেবে Slave I Remain এর কোনো সূত্র পাওয়া যায়নি।

Screenshot: Merriam-Webster

এছাড়া শব্দটি নিয়ে আরও বিশ্লেষণ খুঁজে দেখা যায়,  Sir শব্দটি কোনো কিছুর সংক্ষিপ্ত রূপ নয়। ব্রিটিশ রানী বা রাজা কর্তৃক প্রদত্ত ‘নাইট’ বা ব্যারোনেটের সম্মানে এটি ব্যবহার করা হয়। ১৭ শতক পর্যন্ত পুরোহিতদের জন্যেও শব্দটির ব্যবহার দেখা যায়।

Screenshot: Online Etymology Dictionary 

অনুসন্ধানে আরও দেখা যায়, Sir শব্দটির উৎপত্তি প্রাচীন ফরাসি শব্দ Sire থেকে। Sire এসেছে লাতিন শব্দ  Senior থেকে, যার অর্থ  older or elder বা বড়। 

Screenshot: Online Etymology Dictionary 

অর্থাৎ Sir শব্দটির পূর্ণরূপ হিসেবে Slave I Remain এর দাবিটি অস্তিত্বহীন।

মূলত, Sir শব্দটির উৎপত্তি প্রাচীন ফরাসি শব্দ Sire থেকে। Sire এসেছে লাতিন শব্দ  Senior থেকে, যার অর্থ Older or Elder বা বড়। তবে ইন্টারনেটে দীর্ঘদিন ধরে এই শব্দটিকে Slave I Remain এর সংক্ষিপ্ত হিসেবে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, এর অর্থ আমি আপনার অনুগত দাস। ঔপনিবেশিক ভারতে ব্রিটিশরা ভারতীয় কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ করতে এই শব্দটি ব্যবহার করতো। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং দেখা যায়, ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসন শুরুর অনেক আগেই Sir শব্দটির ব্যবহার ছিল এবং ব্রিটিশরাই শব্দটিকে ব্রিটিশ রানী বা রাজা কর্তৃক প্রদত্ত ‘নাইট’ উপাধিধারীদের নামের পূর্বে ব্যবহার করে থাকে।

সুতরাং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘Slave I Remain’ কে Sir শব্দের পূর্ণরূপ দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

প্রথম আলোর সাংবাদিক গ্রেফতারের ঘটনায় পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদকের নামে ভুয়া উক্তি প্রচার

0

সম্প্রতি স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের দায় ঐ প্রতিবেদকের উপর দিয়ে পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের ‘এই দায় প্রথম আলোর নয়, এই দায় শামসুজ্জামানের’ শীর্ষক একটি উক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে
আর্কাইভ  দেখুন এখানে, এখানে, এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোতে প্রকাশিত আলোচিত প্রতিবেদনের দায় প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের বলে কোনো মন্তব্য করেননি পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বরং কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়া ভিত্তিহীনভাবে উক্ত তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে।

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম বিভিন্ন গণমাধ্যমে উক্ত ঘটনায় প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের মন্তব্য খুঁজে দেখে৷ তবে এসব প্রতিবেদনের কোথাও সাজ্জাদ শরিফের এমন কোনো বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

এই ঘটনায় ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে গত ২৯ মার্চ ‘প্রতিবেদনের শিরোনাম এবং ছবির মধ্যে অসঙ্গতির জেরে সাংবাদিক আটক‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘’আমাদের সাভার প্রতিনিধিকে গতকাল মধ্যরাতে সিআইডি পরিচয় দিয়ে সাদা পোশাকে ধরে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে এখনো আমরা তার কোন খোঁজ পাইনি। এ বিষয়ে আমরা আইনানুগভাবে যেসব পদক্ষেপ নেয়ার সেভাবেই পদক্ষেপ নেবো।

Screenshot: BBC Bangla  

দৈনিক নয়া দিগন্তে ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে প্রথম আলোর সাংবাদিককে তুলে নেয়ার অভিযোগ‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিবিসিকে দেওয়া সাজ্জাদ শরিফের উক্ত বক্তব্যটিই ব্যবহার করে। 

Screenshot:Naya Diganta 

মূলধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল abnews24 এ ‘প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে বাসা থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সাজ্জাদ শরিফ বলেন, , ‘আজ ভোর ৪টায় শামসুজ্জামানকে তাঁর সাভারের বাসা থেকে সিআইডির পরিচয়ে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়। সিআইডি নামধারী লোকজন তাঁর মুঠোফোন, ক্যামেরা ও কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক জব্দ করে নিয়ে যায়। এ সময় সেখানে ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়য়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন। আমরা এ ঘটনায় রাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছি।’

Screenshot: abnews24

অনলাইন বিজনেস নিউজ পোর্টাল অর্থসূচকে ‘প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও সাজ্জাদ শরিফের একই বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot:  Arthoshuchak 

এছাড়া স্টার সংবাদ নামে আরেকটি অনলাইন পোর্টালে ‘সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের একটি বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot:  Star Sangbad 

সেখানে তিনি বলেন, রাতের বেলা একজন সাংবাদিককে এভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া, ১০ ঘণ্টাতেও কোনো সংস্থা কর্তৃক স্বীকার না করা খুবই দুঃখজনক। শামসকে যে সিআইডি পরিচয়ে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার বক্তব্যে স্পষ্ট। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত জানতে পারিনি শামস আসলে কোথায়? কাদের হেফাজতে! আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহ আইনগতভাবে দেখছি।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর অনলাইনে ‘আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো‘ শীর্ষক শিরোনামে একটি ব্যানার প্রকাশ করা হলে এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়৷ পরবর্তীতে উক্ত প্রতিবেদনটিকে ‘ভুয়া’ দাবি করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে একাত্তর টিভি। 

Screenshot:  Ekattor TV

সেই প্রতিবেদনেও সাজ্জাদ শরিফ কাউকে দায়ী না করে বলেন, ‘১৭ মিনিট পরেই নিউজটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হবার বিষয়টি তাদের জানার কথা নয়।’

পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে আরও নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার টিম সাজ্জাদ শরিফের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এসময় তিনি জানান, ‘এটা হতেই পারে না৷ এটা কোনো জায়গা থেকে তৈরি করা হয়েছে দূরভিসন্ধি করে। এটা ঠিক না৷ আমরা শামসের (শামসুজ্জামান) পক্ষে আছি, শামসের পাশে আছি।’

অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাজ্জাদ শরিফের নামে প্রচারিত ‘এই দায় প্রথম আলোর নয়, এই দায় শামসুজ্জামানের’ শীর্ষক উক্তিটি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।

উল্লেখ্য, গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলো তাদের ফেসবুক পেইজে ‘আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো’ শীর্ষক উক্তি সম্বলিত একটি ব্যানার প্রকাশ করে৷ তবে এরপরই ব্যানারে থাকা শিশুর ছবি ও উক্তিটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। পরবর্তীতে গণমাধ্যমটি  নিউজটি সরিয়ে নিয়ে সংশোধনী পূর্বক পুনরায় প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে৷ প্রথম আলোর  প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে। 

Screenshot:  Daily Prothom Alo

সংশোধনীতে গণমাধ্যমটি জানায়, ‘প্রথমে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের শিরোনাম এবং ব্যবহার করা ছবির মধ্যে অসঙ্গতি থাকায় ছবিটি তুলে নেওয়া হয়েছে এবং শিরোনাম সংশোধন করা হয়েছে। শিরোনামে উদ্ধৃত বক্তব্য ছবিতে থাকা সবুজ মিয়ার ছিল না, ছিল দিনমজুর জাকির হোসেনের। একই কারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া পোস্টও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।’

মূলত, গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলো তাদের ফেসবুক পেইজে ‘আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরবর্তীতে প্রতিবেদনটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলে প্রথম আলো প্রতিবেদনটি সরিয়ে নেয় এবং সংশোধনী পূর্বক পুনরায় প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে৷ তবে গত ২৯ মার্চ এই প্রতিবেদনটির প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে নিজ বাসা থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির বিরুদ্ধে। এর মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের নামে ‘এই দায় প্রথম আলোর নয়, এই দায় শামসুজ্জামানের’ শীর্ষক একটি উক্তি ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ এমন কোনো মন্তব্য করেননি।

সুতরাং, স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনের দায় প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের বলে পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের মন্তব্য দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

নিউজিল্যান্ডের ভূমিকম্পের পুরোনো ছবিকে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপের দৃশ্য দাবি

নিউজিল্যান্ডে গত ১৬ মার্চের ভূমিকম্পের ঘটনায় গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজসহ ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্টে ধ্বংসস্তূপের একটি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে মূল ধারার গণমাধ্যম এনটিভির ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এবং এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নিউজিল্যান্ডের সাম্প্রতিক সময়ের ভূমিকম্পের ঘটনায় গণমাধ্যমে ব্যবহৃত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং এটি ২০১০ সালে দেশটির ভূমিকম্পের সময়কার ছবি।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ‘Reuters’ এর ওয়েবসাইটে ২০১০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর “A council worker surveys the damage to a building in central Christchurch after a 7.1-magnitude earthquake hit the city September 4, 2010” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২০১০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর নিউজিল্যান্ডে একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই ঘটনায় একটি ধ্বংসস্তূপের ছবি এটি। 

এছাড়াও ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম ‘The Guardian’ ২০১০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর “Earthquake strikes Christchurch in New Zealand” শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদনেও ভিন্ন ফটোগ্রাফারের তোলা একই ধ্বংসস্তূপের ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। 

অর্থাৎ, সাম্প্রতিক সময়ে নিউজিল্যান্ডের ভূমিকম্পের দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ছবিটি ১৩ বছরেরও বেশি সময়ের পুরোনো। 

মূলত, ২০১০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর নিউজিল্যান্ডে আঘাত হানে শক্তিশালী এক ভূমিকম্প। এ ঘটনায় একটি ধ্বংসস্তূপের ছবিকে সাম্প্রতিক সময়ে (১৬ মার্চ) দেশটিতে ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপের ছবি দাবি করে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচার করা হচ্ছে। 

প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া নিউজিল্যান্ড ভূমিকম্পকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডে ভূমিকম্পের একটি ছবিকে সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপের ছবি দাবি করে গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

অনলাইনে জুয়া খেলে নেইমারের এক মিলিয়ন ইউরো হারানোর ঘটনাটি সাজানো

সম্প্রতি, অনলাইন ক্যাসিনো সেশনে ব্রাজিলের ফুটবল তারকা এবং ফ্রান্সের ক্লাব পিএসজির ফুটবলার নেইমার এক মিলিয়ন ইউরো হারিয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। উক্ত দাবির সাথে নেইমার কান্নার একাধিক ছবিও যুক্ত রয়েছে। 

Screenshot source: deshrupantor

উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমের কিছু প্রতিবেদন দেখুন দৈনিক বাংলা, দেশ রূপান্তর, এবি নিউজ২৪। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

Screenshot source: Facebook 

একই দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুকে পেজের পোস্ট দেখুন সময় নিউজ (আর্কাইভ)।

আন্তর্জাতিক একাধিক গণমাধ্যমে একই দাবিতে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন Marca (Spain), Politiko (Albania), Sportskeeda (India)।

Screenshot source: Prothom Alo 

কিছু গণমাধ্যমে নেইমার পোকার খেলার সময় ফেসবুকে লাইভে এসেছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন প্রথম আলো

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, অনলাইনে জুয়া খেলে নেইমারের এক মিলিয়ন ইউরো হারানোর দাবিটি সঠিক নয় বরং নেইমার তার স্পন্সর অনলাইন বেটিং প্রতিষ্ঠান ব্লেজ এর পক্ষে প্রচারণার অংশ হিসেবে উক্ত গেমে অংশ নিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে শুরুতে কিওয়ার্ড সার্চ করে ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যম ‘BFM RMC SPORT’ এর ওয়েবসাইটে ২৯ মার্চ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৮ মার্চ ভিডিও লাইভ স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম ‘Twitch’ এ এক অনলাইন সেশনে এক মিলিয়ন ইউরো হারিয়েছেন নেইমার। অনলাইন গেমিং ও বেটিং প্রতিষ্ঠান ব্লেজ এর কমার্শিয়াল পার্টনারশিপের অংশ হিসেবে নেইমার উক্ত সেশনে অংশ নেন। 

Screenshot source: BFM RMC SPORT

পরবর্তীতে ‘Twitch’ এ নেইমারের অ্যাকাউন্টে আলোচিত ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। পর্তুগীজ ভাষায় লেখা ভিডিওর ক্যাপশনে নেইমার উল্লেখ করেছেন, শান্তি বিনষ্ট হওয়ায় তিনি কান্না করছেন (অনূদিত)।

Screenshot source: Twitch

একই অ্যাকাউন্টে নেইমার সেদিন উক্ত ভিডিওর আগে আরেকটি ভিডিও আপলোড করেন। যেখানে ভিডিওর ক্যাপশনে ব্লেজ এর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, “চলো যাই ব্লেজ (দায়িত্ব নিয়ে খেলুন / শুধু ১৮+)।”

Screenshot source: Twitch

ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যম ‘ouest france’ এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্লেজ নেইমারের ২৬তম স্পন্সর। প্রতিষ্ঠানটির কমার্শিয়াল অপারেশনের অংশ হিসেবেই নেইমার আলোচিত সেশনটিতে অংশ নিয়েছিলেন। 

Screenshot source: ouest france

ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ‘Globo’ জানিয়েছে, নেইমার সত্যিই জুয়া খেলে এক মিলিয়ন ইউরো হারেননি। এটা অনলাইন বেটিং প্রতিষ্ঠানের প্রচারণার অংশ ছিল। 

নেইমারের প্রতিনিধি ‘গ্লোবো’কে জানিয়েছেন, এ সব লাইভে প্রচারণার কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়, তিনি (নেইমার) সেখানে টাকা ঢালেননি।’ 

Screenshot source: Globo

গ্লোবো বলছে, প্রচারণার এ কৌশলের কারণ হলো, অনলাইনে জুয়া খেলায় বিখ্যাত ব্যক্তিরাও যে হারতে পারেন, তা সাধারণ মানুষকে বোঝানো।

অর্থাৎ, নেইমার সত্যি সত্যিই অনলাইনে জুয়া খেলে এক মিলিয়ন ইউরো হারেননি।

মূলত, গত ২৮ আগস্ট ভিডিও স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম টুইচ-এ লাইভে এসে জুয়া খেলে এক মিলিয়ন হারার বিষয়ে জানান নেইমার। তবে একইদিন উক্ত লাইভের পূর্বে আরেকটি ভিডিওতে অনলাইন বেটিং প্রতিষ্ঠান ব্লেজ এর পক্ষে প্রচারণা করেন তিনি। নেইমারের এক মিলিয়ন ইউরো হারানোর বিষয়টি সত্য ভেবে গণমাধ্যম ও ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, নেইমার সত্যিই জুয়া খেলে এক মিলিয়ন ইউরো হারেননি। এটি নেইমারের স্পন্সর অনলাইন বেটিং প্রতিষ্ঠান ব্লেজ এর প্রচারণার অংশ ছিল। 

উল্লেখ্য, গত বছরের (২০২২) ডিসেম্বরে পরবর্তী চার বছরের জন্য ব্লেজ এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হন নেইমার। চুক্তি অনুযায়ী, ব্রাজিল ছাড়া বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠানটির অনলাইন ক্যাসিনোর প্রচারণা চালাবেন নেইমার। 

সুতরাং, অনলাইন বেটিং প্রতিষ্ঠান ব্লেজ এর প্রচারণাকে অনলাইনে জুয়া খেলে নেইমারের এক মিলিয়ন ইউরো হারানোর দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

বাংলাদেশি পেসার হাসান মাহমুদ আইপিএলে খেলবেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা 

0

সম্প্রতি, “আইপিএলে হাসান মাহমুদ খেলবে মুম্বাইয় ইন্ডিয়ান্সের হয়ে, জানালেন কাপ্তান“শীর্ষক শিরোনামে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক রোহিত শর্মার বরাত দিয়ে বাংলাদেশী পেসার হাসান মাহমুদ আইপিএলে খেলবেন দাবি করে একাধিক ভূঁইফোড় অনলাইন পোর্টালে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। 

প্রতিবেদনগুলো দেখুন বাংলা শিরোনাম (আর্কাইভ) এবং ডেইলি ডি (আর্কাইভ)।

পরবর্তীতে, বাংলাদেশ শিরোনাম নামের ভূঁইফোড় পোর্টালটির ফেসবুক পেজ থেকেও প্রতিবেদনের লিংক শেয়ার করা হয়। ফেসবুকের পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এছাড়াও ইউটিউবে একই দাবিতে একটি ভিডিও প্রচারিত হয়। ভিডিওটি দেখুন, এখানে(আর্কাইভ

যা দাবি করা হচ্ছে

দাবি ১: “হাসান মাহমুদের অগ্নিঝড়া বোলিং দেখে হঠাৎ লাইভে এসে বড় সুখবর দিল রোহিত শর্মা। তবে সাকিব-মুস্তাফিজ-লিটনের পর আইপিএলে জায়গা পাবে এই তরুন পেসার হাসান মাহমুদ”- এমন বিবৃতিতে শর্মার ভিডিও বার্তার বরাত দিয়ে আইপিএলে হাসান মাহমুদের অন্তর্ভুক্তির দাবি করা হয়।

দাবি ২: “ওই ম্যাচে(বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ড ম্যাচ) হাসান মাহমুদের বোলিং তান্ডব দেখে ফেসবুক লাইভে এসে প্রশংসা করেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তিনি ছোট এক ভিডিও বার্তায় বলেন ও অসাধারন বল করেছে, প্রতিটি বল ছিল দেখার মতো, ভবিষ্যতে ও আরো ভালো কিছু করবে।” বিবৃতির মাধ্যমে রোহিত শর্মা হাসান মাহমুদের প্রশংসা করেছেন বলে দাবি করা হয়।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশি পেসার হাসান মাহমুদ আইপিএল ২০২৩ এ খেলবেন দাবিতে প্রচারিত সংবাদটি সঠিক নয় বরং কোনোপ্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই চটকদার শিরোনামে ভিত্তিহীনভাবে উক্ত সংবাদটি প্রচার করা হচ্ছে।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হাসান মাহমুদের অগ্নিঝরা বোলিং দেখে রোহিত শর্মা ফেসবুক লাইভে এসে হাসান মাহমুদের প্রশংসা করেছেন এমন দাবির কোনো সত্যতা খুঁজে পায় নি রিউমর স্ক্যানার টিম। রোহিত শর্মার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ ও ভেরিফাইড ইনস্টাগ্রাম একাউন্টের সাম্প্রতিক অ্যাক্টিভিটি অনুসন্ধান করে এ ধরনের কোনো ভিডিও বার্তা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Photo Collage by Rumor Scanner

এছাড়া, মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজেও রোহিত শর্মার কোনো ভিডিও বার্তা কিংবা হাসান মাহমুদের মুম্বাই দলে অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Screenshot: Facebook/Mumbai Indians

পরবর্তীতে,কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বেরিফাইড ইনস্টাগ্রাম একাউন্টে ২৯ মার্চের প্রি-সিজন প্রেস কনফারেন্সের একটি ভিডিও খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি বিশ্লেষণ করেও হাসান মাহমুদের আইপিএল খেলার ব্যাপারে কোনো তথ্যের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

Screenshot: Instagram/mumbaiindians

অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েকঘন্টা পরেই, ‘আইপিএলে হাসান মাহমুদ খেলবে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে, জানালেন কাপ্তান’ শীর্ষক শিরোনাম(আর্কাইভ) বদল করে ‘সাকিব-মুস্তাফিজ এবং লিটনের পর ভবিষ্যতে আইপিএল কাঁপাবে টাইগার পেসার হাসান মাহমুদ’ শীর্ষক নতুন শিরোনামে(আর্কাইভ) পূর্বের প্রতিবেদনটিই প্রকাশ করে ভুঁইফোড় পোর্টালটি। 

Photo Collage by Rumor Scanner

এছাড়াও রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে, বাংলাদেশি পেসার হাসান মাহমুদের আইপিএল খেলার বিষয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশিত কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক রোহিত শর্মার বরাত দিয়ে বাংলাদেশি পেসার হাসান মাহমুদ আইপিএল খেলবেন বলে একাধিক ভুঁইফোড় অনলাইন পোর্টালে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তবে এই প্রতিবেদনগুলো পর্যবেক্ষণ করে কোনো তথ্যসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে এটা নিশ্চিত যে,আইপিএলে হাসান মাহমুদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে রোহিত শর্মা কিংবা মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স কতৃপক্ষ কেউই কোনোরূপ বিবৃতি দেয়নি।

উল্লেখ্য, আইপিএলের এবারের আসরে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান এবং ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাস কোলকাতা নাইট রাইডার্স এবং পেসার মুস্তাফিজুর রহমান দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছেন।

সুতরাং, বাংলাদেশি পেসার হাসান মাহমুদ মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে আইপিএলে খেলবেন শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত সংবাদটি দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

প্রথম আলোর সাংবাদিক গ্রেফতারের ঘটনায় পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদকের নামে ভুয়া উক্তি প্রচার

0

সম্প্রতি স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের দায় ঐ প্রতিবেদকের উপর দিয়ে পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের ‘এই দায় প্রথম আলোর নয়, এই দায় শামসুজ্জামানের’ শীর্ষক একটি উক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে
আর্কাইভ  দেখুন এখানে, এখানে, এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোতে প্রকাশিত আলোচিত প্রতিবেদনের দায় প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের বলে কোনো মন্তব্য করেননি পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বরং কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়া ভিত্তিহীনভাবে উক্ত তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে।

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম বিভিন্ন গণমাধ্যমে উক্ত ঘটনায় প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের মন্তব্য খুঁজে দেখে৷ তবে এসব প্রতিবেদনের কোথাও সাজ্জাদ শরিফের এমন কোনো বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

এই ঘটনায় ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে গত ২৯ মার্চ ‘প্রতিবেদনের শিরোনাম এবং ছবির মধ্যে অসঙ্গতির জেরে সাংবাদিক আটক‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘’আমাদের সাভার প্রতিনিধিকে গতকাল মধ্যরাতে সিআইডি পরিচয় দিয়ে সাদা পোশাকে ধরে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে এখনো আমরা তার কোন খোঁজ পাইনি। এ বিষয়ে আমরা আইনানুগভাবে যেসব পদক্ষেপ নেয়ার সেভাবেই পদক্ষেপ নেবো।‘’

দৈনিক নয়া দিগন্তে ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে প্রথম আলোর সাংবাদিককে তুলে নেয়ার অভিযোগ‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিবিসিকে দেওয়া সাজ্জাদ শরিফের উক্ত বক্তব্যটিই ব্যবহার করে। 

মূলধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল abnews24 এ ‘প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে বাসা থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সাজ্জাদ শরিফ বলেন, , ‘আজ ভোর ৪টায় শামসুজ্জামানকে তাঁর সাভারের বাসা থেকে সিআইডির পরিচয়ে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়। সিআইডি নামধারী লোকজন তাঁর মুঠোফোন, ক্যামেরা ও কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক জব্দ করে নিয়ে যায়। এ সময় সেখানে ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়য়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন। আমরা এ ঘটনায় রাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছি।’

অনলাইন বিজনেস নিউজ পোর্টাল অর্থসূচকে ‘প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও সাজ্জাদ শরিফের একই বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়।

এছাড়া স্টার সংবাদ নামে আরেকটি অনলাইন পোর্টালে ‘সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের একটি বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়। 

সেখানে তিনি বলেন, রাতের বেলা একজন সাংবাদিককে এভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া, ১০ ঘণ্টাতেও কোনো সংস্থা কর্তৃক স্বীকার না করা খুবই দুঃখজনক। শামসকে যে সিআইডি পরিচয়ে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার বক্তব্যে স্পষ্ট। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত জানতে পারিনি শামস আসলে কোথায়? কাদের হেফাজতে! আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহ আইনগতভাবে দেখছি।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর অনলাইনে ‘আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো‘ শীর্ষক শিরোনামে একটি ব্যানার প্রকাশ করা হলে এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়৷ পরবর্তীতে উক্ত প্রতিবেদনটিকে ‘ভুয়া’ দাবি করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে একাত্তর টিভি। 

সেই প্রতিবেদনেও সাজ্জাদ শরিফ কাউকে দায়ী না করে বলেন, ‘১৭ মিনিট পরেই নিউজটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হবার বিষয়টি তাদের জানার কথা নয়।’

পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে আরও নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার টিম সাজ্জাদ শরিফের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এসময় তিনি জানান, ‘এটা হতেই পারে না৷ এটা কোনো জায়গা থেকে তৈরি করা হয়েছে দূরভিসন্ধি করে। এটা ঠিক না৷ আমরা শামসের (শামসুজ্জামান) পক্ষে আছি, শামসের পাশে আছি।’

অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাজ্জাদ শরিফের নামে প্রচারিত ‘এই দায় প্রথম আলোর নয়, এই দায় শামসুজ্জামানের’ শীর্ষক উক্তিটি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।

উল্লেখ্য, গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলো তাদের ফেসবুক পেইজে ‘আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো’ শীর্ষক উক্তি সম্বলিত একটি ব্যানার প্রকাশ করে৷ তবে এরপরই ব্যানারে থাকা শিশুর ছবি ও উক্তিটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। পরবর্তীতে গণমাধ্যমটি  নিউজটি সরিয়ে নিয়ে সংশোধনী পূর্বক পুনরায় প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে৷ প্রথম আলোর  প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে। 

সংশোধনীতে গণমাধ্যমটি জানায়, ‘প্রথমে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের শিরোনাম এবং ব্যবহার করা ছবির মধ্যে অসঙ্গতি থাকায় ছবিটি তুলে নেওয়া হয়েছে এবং শিরোনাম সংশোধন করা হয়েছে। শিরোনামে উদ্ধৃত বক্তব্য ছবিতে থাকা সবুজ মিয়ার ছিল না, ছিল দিনমজুর জাকির হোসেনের। একই কারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া পোস্টও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।’

মূলত, গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলো তাদের ফেসবুক পেইজে ‘আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরবর্তীতে প্রতিবেদনটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলে প্রথম আলো প্রতিবেদনটি সরিয়ে নেয় এবং সংশোধনী পূর্বক পুনরায় প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে৷ তবে গত ২৯ মার্চ এই প্রতিবেদনটির প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে নিজ বাসা থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির বিরুদ্ধে। এর মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের নামে ‘এই দায় প্রথম আলোর নয়, এই দায় শামসুজ্জামানের’ শীর্ষক একটি উক্তি ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ এমন কোনো মন্তব্য করেননি।

সুতরাং, স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনের দায় প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের বলে পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের মন্তব্য দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

মেসি ও রোনালদোকে জড়িয়ে ব্যালন ডি’অর বিষয়ে আরলিং হালান্ড কোনো মন্তব্য করেননি

সম্প্রতি, নরওয়ে জাতীয় ফুটবল দলের সদস্য এবং প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটির খেলোয়াড় আরলিং হালান্ডের বক্তব্য সম্বলিত একটি পোস্ট ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

কী দাবি করা হচ্ছে? 

ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে জনৈক এক সাংবাদিকের সাথে হালান্ডের কথোপকথন রয়েছে।  

কথোপকথনটি এরকম- 

হ্যালান্ড:- আমি ক্রিস্টিয়ানোর মত ৫ টা ব্যালন ডি’অর জিততে চাই।

প্রতিবেদক:- মেসির মত ৭ টা নয় কেন?

হ্যালান্ড:- আমি প্রথমেই বলছি,আমি জিততে চাই,,সেটেলমেন্ট (কেউ লিখেছে চুরি) করে নয়।

Screenshot source : Facebook 

উক্ত দাবিতে ছড়িয়ে পড়া কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক  

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মেসি ও রোনালদোকে জড়িয়ে ব্যালন ডি’অর বিষয়ে আরলিং হালান্ড কোনো মন্তব্য করেননি বরং কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য সূত্র ব্যতীত তার নাম ব্যবহার করে মন্তব্যটি প্রচার করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে রিউমর স্ক্যানার টিম আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং ফুটবল বিষয়ক আন্তর্জাতিক একাধিক সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে ম্যানুয়াল এবং কিওয়ার্ড সার্চ করেও হালান্ডের এমন মন্তব্য বা কথোপকথনের বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি।  

সূত্র ধরে অনুসন্ধান

মেসি ও রোনালদোকে জড়িয়ে ব্যালন ডি’অর নিয়ে আরলিং হালান্ডের মন্তব্যের বিষয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে অন্তত তিনটি সূত্র পেয়েছে। 

কিছু পোস্টে (,,) উক্ত মন্তব্যের সূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ‘Football Daily Goal’ নামক একটি ফেসবুক পেজের নাম। 

Screenshot source: Facebook

পরবর্তীতে Football Daily Goal নামক পেজটিতে গতকাল ২৮ মার্চ দুপুরে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত পোস্টটি খুঁজে পেয়েছি আমরা৷ 

Screenshot source: Facebook

কিন্তু উক্ত পোস্টেও হালান্ডের আলোচিত মন্তব্যের কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি। 

পরবর্তীতে অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম কিছু পোস্টে (১,,) হালান্ডের মন্তব্যের সূত্র হিসেবে ফুটবল বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম Goal এর নাম উল্লেখ থাকতে দেখেছে। 

Screenshot source: Facebook

কিন্তু Goal এর ওয়েবসাইটে ম্যানুয়াল এবং কিওয়ার্ড সার্চ করেও হালান্ডের এমন মন্তব্য বা কথোপকথনের বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি।  

Screenshot source: Goal

পরবর্তীতে অনুসন্ধানে কিছু পোস্টে (,) হালান্ডের মন্তব্যের সূত্র হিসেবে হালান্ডের মন্তব্য সম্বলিত একটি ভিডিও যুক্ত করে প্রচার হতে দেখা যায়। 

Screenshot source: Facebook

ভিডিওটির সূত্র অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ ব্যবহার করে ইউটিউবে Martha Nag নামক একটি চ্যানেলে ২০১৮ সালের ৬ জুলাই প্রকাশিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।  

Screenshot source: YouTube 

২০১৮ সালে হালান্ড যখন Molde FK তে খেলতেন তখন ভিডিওতে দেখানো সাক্ষাৎকারটি দেন তিনি। কিন্তু ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে সেখানে মেসি রোনালদো বা ব্যালন ডি’অর প্রসঙ্গে কোনো তথ্য মেলেনি। 

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, এই ভিডিও যখন (২০১৮) ধারণ করা হয় সেসময় মেসির ব্যালন ডি’অরের সংখ্যা ছিল পাঁচটি। 

Screenshot source: Topend Sports

কিন্তু সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে মেসির সাতটি ব্যালন ডি’অর পাওয়া বিষয়ক তথ্য রয়েছে। 

হালান্ডের মন্তব্যটি তাই ২০১৮ সালে হওয়া সম্ভব নয়। যদি হতো তিনি মেসির পাঁচটি ব্যালন ডি’অরের বিষয়েই উল্লেখ করতেন, সাতটি নয়। 

অর্থাৎ, হালান্ডের মন্তব্যের বিষয়ে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে সূত্র হিসেবে যেসব ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেজের নাম উল্লেখ রয়েছে সেসব সূত্রে উক্ত মন্তব্য বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ বিষয়ে কোনো তথ্য না পাওয়ায় আলোচিত পোস্টগুলোতে বানোয়াট একটি মন্তব্যই প্রচার করা হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়। 

দাবিটি ছড়িয়েছে কীভাবে? 

গত ২৮ আগস্ট Troll Football নামক একটি সার্কাজম বিষয়ক টুইটার অ্যাকাউন্টে হালান্ডের একই মন্তব্য নিয়ে করা একটি টুইট খুঁজে পাওয়া যায়। এখন পর্যন্ত ১৪.৭ মিলিয়ন ভিউ হওয়া এই টুইটেও কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি। 

Screenshot source: Twitter

এই টুইটের স্ক্রিনশটও ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে ফেসবুকে। 

তাছাড়া, ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্টের কমেন্টে ২৭ মার্চ @timesofball নামক ইউজার নেইম সম্বলিত ‘Fotballandslaget’ নামক একটি টুইটার অ্যাকাউন্টের একটি টুইটের স্ক্রিনশট দেওয়া হয়, যেখানে হালান্ডের একই মন্তব্য দেখা যায়। 

Screenshot source: Twitter

কিন্তু ‘Fotballandslaget’ নামক উক্ত টুইটার অ্যাকাউন্টে এ সংক্রান্ত কোনো টুইট খুঁজে পাওয়া না গেলেও timesofball নামক ইউজার নেম সম্বলিত একটি টুইটার অ্যাকাউন্টে উক্ত টুইটটি খুঁজে পাওয়া যায়। এই টুইটেও Goal কে সূত্র হিসেবে দেখানো হয়েছে। অথচ, Goal এর ওয়েবসাইটে এমন কোনো তথ্য মেলেনি। 

Screenshot source: Twitter 

অধিকতর অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম দেখেছে গত ২৩ মার্চ উক্ত দাবি সম্বলিত একটি পোস্ট করা হয় ফেসবুকে। এই পোস্টেও কোনো সূত্র উল্লেখ ছিল না। 

Screenshot source: Facebook

একই মন্তব্য ব্রাজিলের ফুটবলার ভিনিসিয়াস জুনিয়রের নামেও ছড়িয়েছে। গত ২২ আগস্ট প্রকাশিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে। 

Screenshot source: Facebook

তাছাড়া, একই মন্তব্য ফ্রান্সের ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপ্পের নামেও ছড়িয়েছে। গতকাল ২৮ আগস্ট প্রকাশিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে।

কিন্তু, এই দুইজন খেলোয়াড়ও যে এমন মন্তব্য করেছেন সে বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি। 

অর্থাৎ, মেসি ও রোনালদোকে জড়িয়ে ব্যালন ডি’অর বিষয়ে একই মন্তব্য অন্তত তিনজন খেলোয়াড়ের নাম উল্লেখ করে ছড়িয়ে পড়েছে। 

মূলত, সম্প্রতি নরওয়ের ফুটবলার আরলিং হালান্ডের বক্তব্য সম্বলিত একটি পোস্ট ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে যেখানে দাবি করা হয় হালান্ড ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো ৫ টি ব্যালন ডি’অর জিততে চান, মেসির মতো ৭ টি ব্যালন ডি’অর সেটেলমেন্ট করে জিততে চান না। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, হালান্ড এমন মন্তব্য করেননি। এই তথ্যের উৎস হিসেবে একাধিক সূত্র উল্লেখ থাকলেও সেসব সূত্রে এ বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি। তাছাড়া, একই মন্তব্য ভিনিসিয়াস জুনিয়র এবং কিলিয়ান এমবাপ্পের নামেও ছড়িয়ে পড়েছে।  

সুতরাং, মেসি ও রোনালদোকে জড়িয়ে ব্যালন ডি’অর বিষয়ে আরলিং হালান্ড একটি মন্তব্য করেছেন দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।  

তথ্যসূত্র

মিছিল সমাবেশে সেনাবাহিনী গুলি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি এডিটেড

0

সম্প্রতি ‘স্বৈরাচারী সরকারের ক্ষমতা শেষ, এবার সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা। মিছিল সমাবেশে গুলি বন্ধ করার ঘোষণা দিলেন সেনাবাহিনী।  শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও টিকটকে প্রচার করা হচ্ছে।

টিকটকে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা যাওয়া ও মিছিল সমাবেশে সেনা প্রধান গুলি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি এডিটেড। প্রকৃতপক্ষে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় দুইটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ের ভিডিও যুক্ত করে উক্ত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনী এরকম কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

সেনাপ্রধানের বক্তব্যটি কখনের, কি বলেছিলেন তিনি? 

ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড  অনুসন্ধানে বেসরকারি টিভি চ্যানেল যমুনা টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২১ সালের ২৪ জুন ‘সেনাবাহিনীর সাথে জনগণের কোন দূরত্ব থাকবে না: নতুন সেনাপ্রধান‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Jamuna TV

ভিডিওটির বক্তব্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটি সেনাপ্রধান হিসেবে নতুন দায়িত্ব গ্রহণকালে জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও। সাবেক সেনা প্রধানের কাছ থেকে দায়িত্বভার গ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে এসব বক্তব্য দেন তিনি।

এ সময় তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, এমন একটা অর্জন মহান আল্লাহ তাআলার আশীর্বাদ ছাড়া কোনক্রমেই সম্ভব নয়। আমি বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, এমন একটি গুরুত্ব দায়িত্ব আমার ওপর অর্পণ করেছে। আপনারা জানেন আজ ২৪ জুন, ২০২১। এই ২০২১ সালের একটি স্পেশাল সিগনিফিকেন্স রয়েছে। আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছি এবং এই অনুষ্ঠান আরও মহিমান্বিত হয়েছে, যে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর সঙ্গেই বঙ্গবন্ধুর জন্মের শতবর্ষ উদযাপন হয়েছে। এই মহিন্দ্রক্ষণে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পেরে আমি নিজেকে সত্যিই খুব ভাগ্যবান মনে করছি। 

সেনা প্রধান বলেন, এরকম একটা গুরু দায়িত্ব আমি যেন সঠিকভাবে পালন করতে পারি সে জন্য মহান আল্লাহ তাআলার কাছে চাচ্ছি যে উনি যেন আমাকে সেই সক্ষমতা দান করে, যাতে আমার দায়িত্ব আমি সঠিকভাবে পালন করতে পারি। তবে এ কথা সত্য যে, আমাদের সকলের সহযোগিতা ছাড়া এই গুরুদায়িত্ব পালন করা যাবে না। 

সেনা প্রধান আরও বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যে ক্লাসিক্যাল রোলগুলো আছে, আমরা সচরাচর যে দায়িত্বগুলো পালন করে থাকি, সেই দায়িত্বগুলো আমরা যেন সঠিকভাবে পালন করতে পারি। বিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছাতে যা করণীয় তা যেন করতে পারে এ জন্য আপনাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।

সেনাবাহিনীর সঙ্গে জনগণের দূরত্ব থাকবে না উল্লেখ করে সেনা প্রধান বলেন, সেনাবাহিনীর সাথে মিডিয়ার দূরত্ব থাকবে না। আমি স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি। সুতরাং অজানা বলে কিছু থাকবে না।

পাশাপাশি সাংবাদিকেরা সেনাপ্রধান হিসেবে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার দর্শন নিয়ে আমি পরিকল্পনা করব এবং তারপর সেটা সবাইকে জানিয়ে দেব। এখনই কিছু একটা বলে দেয়া সঠিক হবে না।

অপরদিকে টিকটকের ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেখানে সেনাপ্রধানের পুরো বক্তব্যের মাত্র দশ সেকেন্ডের মতো অংশ কেটে নিয়ে ‘স্বৈরাচারী সরকারের ক্ষমতা শেষ, এবার সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা। মিছিল সমাবেশে গুলি বন্ধ করার ঘোষণা দিলেন সেনাবাহিনী।’ শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। তবে ঐ অংশে সেনাপ্রধান এমন কোনো বক্তব্যই দেননি।

Screenshot: Tiktok

এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে সেনাপ্রধানের এমন কোনো বক্তব্যও মূলধারার গণমাধ্যম সূত্রে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ ২০২১ সালে সেনাপ্রধানের দায়িত্বভার গ্রহণকালে বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের বক্তব্যের খন্ডিত অংশকে ভিন্ন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

টিকটকের ভিডিওটির দ্বিতীয় অংশটি কখনের? 

সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা ও মিছিল সমাবেশে সেনাবাহিনীর গুলি বন্ধ করার ঘোষণার দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটির দ্বিতীয় অংশ যাচাই করে দেখা যায়, এই ভিডিওটি ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবের ‘Pinaki Bhattacharya’ নামের একটি চ্যানেলে ‘পুলিশ কেন শান্ত হবে?‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল। 

Screenshot: Pinaki Bhattacharya

উক্ত ভিডিওটির শুরুতেই পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, ‘আগামী কাল থিকা বাংলাদেশের পুলিশ মিছিলে সমাবেশে শান্ত থাকেব। কেউ কেউ কইতে পারেন আপনার হাতে কি ম্যাজিক আছে? না ম্যাজিক নাই কিন্তু পাওয়ার বা ক্ষমতা আছে। না হাসিনার ক্ষমতা না, এই ক্ষমতা গল্পের, এই ক্ষমতা মস্তিষ্কের। এই গল্প শুনলে পুলিশের হাতের বন্দুক আর মিছিল সমাবেশের কারো দেহকে নিশানা করতে পারবে না।’ 

তার এই বক্তব্যের খন্ডিত অংশের সঙ্গেই সেনাপ্রধানের ২০২১ সালের বক্তব্যকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পিনাকী ভট্টাচার্যের ১৪ মিনিট ২ সেকেন্ডের পুরো ভিডিওটি বিশ্লেষণ করেও এর সঙ্গে সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা ও মিছিল সমাবেশে সেনাবাহিনী গুলি বন্ধ করার ঘোষণা সম্পর্কিত তথ্যের কোনো যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ 

মূলত, সম্প্রতি সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা ও মিছিল সমাবেশে সেনাবাহিনী গুলি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটকে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০২১ সালে নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে দেওয়া বক্তব্যের খন্ডিত অংশের সাথে ২০২২ সালে সোশ্যাল মিডিয়া এক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যের ২০২২ সালের একটি ভিডিওয়ের খন্ডিত অংশ যুক্ত করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে সেনাপ্রধান বা সেনাবাহিনী সম্পর্কিত এমন কোনো বক্তব্যও রিউমর স্ক্যানারের সার্বিক অনুসন্ধানে পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, মিছিল সমাবেশে সেনাবাহিনী প্রধান গুলি বন্ধ করার ঘোষণা দেননি। সেনাবাহিনী প্রধান মিছিল সমাবেশে গুলি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন দাবিতে টিকটকে যে ভিডিওটি প্রচার করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ এডিটেড। 

তথ্যসূত্র

চাতক পাখি শুধু বৃষ্টির পানি পান করে শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি, “এটা সেই চাতক পাখি, যে কিনা বৃষ্টির পানি ছাড়া কিছুই পান করে না। সুবহানআল্লাহ!!!” শীর্ষক শিরোনামে একটি  দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
দাবি করা হচ্ছে:

  • চাতক পাখি বৃষ্টির পানি ছাড়া কিছুই পান করেনা। 
  • পোস্টে সংযুক্ত ছবির পাখিটি চাতক পাখি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

চাতক পাখি বৃষ্টির পানি ছাড়া অন্য কোনো উৎস থেকে পানি পান করেনা শীর্ষক দাবি এবং চাতক পাখির ভুল ছবি সম্বলিত গণমাধ্যমের কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে; ডেইলি বাংলাদেশ(আর্কাইভ), দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (আর্কাইভ), দৈনিক বাংলা(আর্কাইভ), দৈনিক ইত্তেফাক (আর্কাইভ) এবং RTV(আর্কাইভ)।

একই বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন আনন্দবাজার পত্রিকা(আর্কাইভ), জি নিউজ (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চাতক পাখি বৃষ্টি ছাড়া অন্য কোনো উৎস থেকে পানি পান করে না শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় এবং চাতক পাখির ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটিও চাতক পাখির নয়।  

প্রকৃতপক্ষে, চাতক পাখিরা নদী, পুকুর বা অন্যান্য সব পানির উৎস থেকেও পানি পান করে এবং চাতক পাখি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি পেলিক্যান প্রজাতির পাখির।

চাতক পাখির পরিচয়

চাতক (jacobin cuckoo) হচ্ছে Cuculidae গোত্রভুক্ত একটি পরজীবী পাখি যারা অন্য পাখির বাসায় ডিম পাড়ে। পরিযায়ী এই পাখিরা গ্রীষ্মের শুরুতে সুদূর আফ্রিকা থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে আসে এবং শীতকালে আবার আফ্রিকাতেই চলে যায়। সুতরাং বলা যায় যে, সারা পৃথিবীর একটা বিশাল অংশ জুড়ে এদের আবাস। সাধারণত উই, পিঁপড়া, ছারপোকা এই পাখির প্রধান খাদ্য। এছাড়াও এরা বিভিন্ন ধরনের ফড়িং, পোকা (বিশেষ করে শুঁয়োপোকা) খেতে খুবই পছন্দ করে।

চাতক পাখি (Jacobin Cuckoo)

তথ্যের সত্যতা যাচাই

চাতক পাখি বৃষ্টির পানি ছাড়া অন্য কোনো উৎস থেকে পানি পান করে না’ শীর্ষক দাবির সত্যতা যাচাইয়ে বিস্তর অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

ফ্যাক্ট

রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায় যে চাতক পাখি কেবলমাত্র বৃষ্টির পানি পান করে এই দাবিটি মোটেও সত্য নয়। বিভিন্ন রিসোর্স থেকে পাওয়া তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে দেখা যায় চাতক পাখি চাতক পাখি বৃষ্টির পানি ছাড়াও অন্যান্য পাখিদের মতোই বিভিন্ন জলাশয়,যেমন: খাল-বিল, পুকুর, হৃদ এবং পানির অন্যান্য সম্ভাব্য উৎস থেকে পানি পান করে। 

চাতক পাখি কি শুধু বৃষ্টির পানি পান করে?

আমাদের সমাজে চাতক পাখি নিয়ে বেশ কিছু প্রচলিত মতবাদ রয়েছে। প্রাচীন কাবাইগ্রন্থেও এই পাখিটির উপস্থিতি বেশ লক্ষণীয়। অনেকেই বলে থাকে যে, চাতক পাখি বৃষ্টির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁ করে থাকে। বৃষ্টি এলে মুখের মধ্যে ফোঁটা পড়ে। চাতক সেই পানি খায়। বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে করতে একসময় গলা শুকিয়ে গরম হয়ে যায়। চাতক তখন বৃষ্টির জন্য চিৎকার করতে থাকে। তবু বৃষ্টি হয় না! তখন চাতকের গলা দিয়ে আগুনের ফুলকি বের হয়। চাতক পাখি শুধুমাত্র বৃষ্টির পানি পান করে। তবে, উপরোক্ত দাবিগুলো কেবলমাত্র প্রচলিত লোককথা হলেও বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু গণমাধ্যমে উক্ত ঘটনাগুলোকে সত্য বলে প্রচার করে আসছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রতিবেদন নিম্নে তুলে ধরা হলো: 

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে মূলধারার গণমাধ্যম ‘ডেইলি বাংলাদেশ’ এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়,“পানির অপর নাম জীবন। দীর্ঘ দিন পানি ছাড়া এই বিশ্বে কোনো মানুষ বা প্রাণী জীবিত থাকতে পারে না। তবে এই পৃথিবীতেই এমন জীব আছে যারা পানি ছাড়া দিনের পর দিন কাটিয়ে দিতে পারে। যদিও কোনো পানি পান করে, তা কোনো ঝিল, বিল বা পুকুরের নয়। এই পাখিরা নাকি একমাত্র বৃষ্টির পানি পান করে। বিষয়টি হয় তো অবিশ্বাস্য মনে হবে। তবে এমন এক ধরনের পাখি আছে যারা বৃষ্টির পানির জন্য অপেক্ষা করে থাকে। আর সেই পাখিটির নাম চাতক পাখি। এই পাখির নামটা অনেকেই শুনেছেন। এই পাখিই বৃষ্টির পানি ছাড়া অন্য কোনো পানি পান করে না।”

Screenshot from Daily Bangladesh

ডেইলি বাংলাদেশ ছাড়াও ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকাতেও সংশ্লিষ্ট দাবির আরেকটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট:

Screenshot from আনন্দবাজার পত্রিকা

তাছাড়া, The Business Standard কর্তৃক ১৭ ই মার্চ ২০২২ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, “পানি পান করা ছাড়া যে বেশিদিন বেঁচে থাকা সম্ভব না, তা আমাদের সবারই জানা। কিন্তু এই পৃথিবীতেই এমন জীব আছে যারা পানি পান করা ছাড়াই দিনের পর দিন কাটিয়ে দিতে পারে। বিষয়টি অবিশ্বাস্য হলেও এদের মধ্য অনেক জীবই নির্দিষ্ট কোনো উৎসের পানি পান করে থাকে। এ ধরনের প্রাণির মধ্যে চাতক অন্যতম।

বৃষ্টির পানি ছাড়া অন্য কোনো উৎসের পানি পান করে না এই পাখি। কোনো স্থানে বৃষ্টি কম হলেও অন্য কোনো উৎস থেকে পানি পান করে না চাতক।” 

২০২২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তারিখে  মূলধারার গণমাধ্যম RTV কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, “আমরা জানি, পানি পান করা ছাড়া কোনো প্রাণীর বেঁচে থাকা অসম্ভব। আবার অনেক জীব নির্দিষ্ট উৎসের পানি পান করে থাকে। এদের মধ্যে চাতক পাখি অন্যতম। যারা বৃষ্টির পানি ছাড়া অন্য কোনো উৎসের পানি পান করে না।”

Screenshot: RTV News

তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে বিভিন্ন ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি এবং ভিডিওগ্রাফিতে চাতক পাখিকে অন্যান্য পাখির মতোই নদী, খাল-বিল, হ্রদ এবং অন্যান্য সম্ভাব্য উৎস থেকে পানি পান করতে দেখা গিয়েছে। 

জলাশয় থেকে পানি খাচ্ছে চাতক পাখি (Image Source: Birds of Gujarat)
পাত্রে জমা হওয়া পানি খাচ্ছে চাতক পাখি (Youtube Video)
জলাশয় পানি খাচ্ছে চাতক পাখি (Youtube Video)

অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য এবং উপাত্ত এটাই প্রমাণ করে যে চাতক পাখি বৃষ্টির পানি ছাড়া অন্য কোনো উৎস পানি করে না শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয়। 

ছবিটি কি চাতক পাখির?

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভাইরাল হওয়া পোস্টে সংযুক্ত ছবিটিতে যে পাখিটিকে দেখানো হচ্ছে সেটি চাতক পাখি নয়। প্রকৃতপক্ষে এটি পেলিক্যান (বাংলায়: গগণবেড়) প্রজাতির পাখি।

Australian Pelican (Image Source: Australian Museum

পেলিক্যান বা গগণবেড় হচ্ছে Pelecanidae গোত্রের একটি বৃহৎ আকৃতির পাখি। এই পাখিটি তাদের বিশাল আকৃতির ঠোঁটের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। মূলত এদের ঠোঁটের নিচে একটি চামড়ার থলি থাকে। এরা কিছু শিকার করার পর থলিতে পানিসহ খাদ্য জমিয়ে রাখে এবং খাদ্য গলাধঃকরণের আগে পানি ফেলে দেয়। এই প্রাণীদের প্রধান খাদ্য মূলত মাছ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এদেরকে দলবদ্ধভাবে শিকার এবং ভ্রমণ করতে দেখা যায়। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের এই প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায় সারা বিশ্বে পেলিক্যানদের ছয়টির অধিক প্রজাতি রয়েছে। তবে ভাইরাল ফেসবুক পোস্টে থাকা পাখিটির বাহ্যিক গড়ন দেখে নিশ্চিত যে এটি Australian Pelican প্রজাতির। 

Australian Pelican (Image Source: Birdlife Australia)

উল্লেখ্য যে, pakhi.tottho.com ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি আর্টিকেলে বলা হয়েছে, প্রায় তিন যুগ আগেও সুন্দরবনসহ আমদের দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে Great White Pelican (প্যালিকেন এর একটি প্রজাতি) এর দেখা পাওয়া যেত। তবে বর্তমানে প্রাকৃতিক পরিবেশে এদের দেখা না গেলেও বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় এদের দেখতে পাওয়া যায়। তাছাড়া দৈনিক প্রথম আলোর ২০১৯ সালের একটি প্রতিবেদন থেকে তৎকালীন সময়ে গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কেও একটি সাদা প্রজাতির পেলিক্যান থাকার তথ্য পাওয়া যায়। 

পেলিক্যানটি হঠাৎ শূন্যে গলা বাড়িয়ে হাঁ করে চিবুক মেলে ধরল ক্যামেরার সামনে। ছবি: প্রথম আলো। 

অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য এবং উপাত্ত এটাই প্রমাণ করে যে, চাতক পাখির ছবির দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ছবিটি পেলিক্যান প্রজাতির পাখি।

পূর্বেও কি কোথাও চাতক পাখির ছবি সম্পর্কিত ভুল তথ্য প্রচারিত হয়েছিলো?

চাতক পাখি দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ছবির মূল উৎসের সন্ধ্যনে রিভার্স  ইমেজ সার্চের সার্চের মাধ্যমে foreverfulfilled.com নামক একটি ওয়েবসাইটে  ২ জুলাই ২০১৭ সালে RAIN BIRD & SPIRITUAL SIGNIFICANCE OF MONSOON SEASON IN INDIA! শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত  প্রতিবেদনে একই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। মূলত ওই পুরো প্রতিবেদনটি চাতক পাখিকে (Pied Cuckoo/Clamator jacobinus) নিয়ে বানানো হলেও প্রতিবেদনের সম্পাদক কোনো একটি অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে প্রতিবেদনটিতে চাতক পাখির বদলে পেলিক্যান এর ছবি সংযুক্ত করে দিয়েছেন। 

ওয়েবসাইটটিতে Pied cuckoo বা চাতক পাখি নিয়ে আলোচনা করা হলেও ছবি ব্যাবহার করা হয়েছে Australian Pelican এর। 

অর্থাৎ, সাম্প্রতিক সময় ছাড়াও বহু সময় আগে থেকেই চাতক পাখির ছবি সম্পর্কিত ভুল তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।  

মূলত, চাতক পাখি বৃষ্টি ছাড়া অন্য কোনো উৎস থেকে পানি পান করেনা দাবির পাশাপাশি একটি ছবিকে চাতক পাখির ছবি দাবি করে দীর্ঘদিন ধরে গণমাধ্যম ও ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায় চাতক পাখি বৃষ্টি ছাড়াও অন্যান্য উৎস থেকে পানি পান করে এবং চাতক পাখি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি পেলিক্যান প্রজাতির পাখির, চাতক পাখির নয়।

সুতরাং চাতক পাখি বৃষ্টি ছাড়া অন্য কোনো উৎস থেকে পানি পান করেনা শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

দুবাই আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতার ফল প্রকাশের পূর্বেই তাকরিমকে প্রথম দাবিতে প্রচার

0

সম্প্রতি ‘২০২৩ সালে আবারও দুবাই আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা ১ম স্থান অধিকার করেছে হাফেজ সালেহ আহমাদ তাকরীম’ শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানেএখানে
আর্কাইভ  দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানেএখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সালেহ আহমেদ তাকরীমের দুবাই আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতা-২০২৩ এ প্রথম হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে প্রতিযোগিতাটি এখনো চলমান এবং আগামী ১২ বা ১৩ রমজান এই প্রতিযোগিতার চূড়ান্তপর্ব অনুষ্ঠিত হবে এবং ফলাফল ঘোষণা হবে।

কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে  প্রতিযোগিতাটির আয়োজক সংস্থার ফেসবুক পেইজ ‘Dubai International Holy Quran Award جائزة دبي الدولية للقرآن الكريم‘ গত ৩ মার্চ এই প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি সম্পর্কিত আরবি ভাষায় প্রদত্ত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Dubai International Holy Quran Award Facebook Post 

পোস্টটির ইংরেজি অনুবাদ ও ব্যানার থেকে জানা যায়, দুবাই আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতার ২৬ তম আসরটি দ্বিতীয় রমজান থেকে শুরু হয়ে ১৩ রমজান পর্যন্ত চলমান থাকবে।

পরবর্তীতে একই পেইজে গত ৮ মার্চ এই প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি সম্পর্কিত আরবি ভাষায় প্রদত্ত আরও একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Dubai International Holy Quran Award Facebook Post

পোস্টটির ইংরেজি অনুবাদ থেকে জানা যায়, এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৬০ জনের বেশি প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করবেন। 

পরবর্তীতে আরও অনুসন্ধানে দেখা যায়, আয়োজক সংস্থার ইনস্টাগ্রামে গত ২৭ মার্চ স্ব-বিভাগের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশের প্রতিযোগী সালেহ আহমেদ তাকরিম। 

Screenshot: Dubai International Holy Quran Award Instagram Post

প্রতিযোগিতায় তাকরিমের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সৌদি আরব, উগান্ডা, ফ্রান্স, কঙ্গো ও কমোরোসের প্রতিযোগী। 

Screenshot: Dubai International Holy Quran Award Instagram Post

এছাড়া আয়োজকদের এই ইনস্টাগ্রাম একাউন্টটির বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিযোগিতাটি এখনো চলমান এবং কোনো পর্বের ফলাফল এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়নি।

প্রসঙ্গত, অনুসন্ধানে গণমাধ্যম সূত্রে হাফেজ সালেহ আহমাদ তাকরিমের শিক্ষক হাফেজ মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুনের একটি সাক্ষাৎকার খুঁজে পাওয়া যায়। 

সেখানে তিনি জানান, বিশ্বজয়ী হাফেজ সালেহ আহমাদ তাকরীম বর্তমানে মারকাযু ফয়জিল কুরআন আল ইসলামী ঢাকার কিতাব বিভাগে পড়াশোনা করছে। মাদরাসার ব্যবস্থাপনায় সে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। এই প্রতিযোগিতার ফলাফল বাংলাদেশ সময় ১২ রমজান আর মধ্যপ্রাচ্যের সময় হিসেবে ১৩ রমজান ঘোষণা হবে।

Screenshot: Amader Somoy

মূলত, গত দ্বিতীয় রমজান থেকে আরব আমিরাতের দুবাইয়ে দুবাই আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতার ২৬তম আসর শুরু হয়৷ এই প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন দেশের ৬০ জনের বেশি প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করেছেন সালেহ আহমেদ তাকরিম। তিনি গত ২৭ মার্চ তার স্ব-বিভাগের প্রতিযোগিতায় প্রথম রাউন্ডে অংশ নেন৷ তবে এর মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে, এই প্রতিযোগিতায় তাকরিম প্রথম হয়েছেন। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিযোগিতাটি এখনো চলমান, যা চলবে আগামী ১৩ রমজান পর্যন্ত। পাশাপাশি এই প্রতিবেদন লেখার আগ পর্যন্ত প্রতিযোগিতার কোনো পর্বের ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি।

উল্লেখ্য, গত বছর সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ১১১টি দেশের মধ্যে/ দেশের সাথে/ দেশকে পেছনে ফেলে/ দেশকে হারিয়ে সালেহ আহমদ তাকরিম তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ গণমাধ্যমে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। তবে দাবিটি নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে বিষয়টি আংশিক মিথ্যা হিসেবে প্রতীয়মান হয়। এ নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধান পড়ুন এখানে। 

সুতরাং, ২০২৩ সালে দুবাই আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি হাফেজ সালেহ আহমাদ তাকরিমের ১ম স্থান অধিকার করার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র