সম্প্রতি “লোকটি দীর্ঘ 10 বছর জেল খাটার পর অবশেষে জেল থেকে পালাতে যখন তিনি বাড়িতে ফিরেন তার বউ তাকে দেখে বলে টিভি তে 9 ঘণ্টা আগে তোমার পালানোর খবর প্রচার করা হয়েছে তাহলে তুমি এই 9 ঘণ্টা কোথায় ছিলা এবং কার সাথে ছিলা বলো? এর জন্য তার বউ পুলিশকে ফোন করে তাকে আবার পুলিশের হাতে তুলে দেয়।” শীর্ষক দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১০ বছর পর জেল থেকে পালিয়ে বাড়িতে ৯ ঘন্টা পরে আসায় স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার ঘটনাটি সত্য নয় এবং উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবিটিও সঠিক নয় বরং এটি আমেরিকার লস এঞ্জেলসে সংগঠিত একটি আন্দোলন থেকে পুলিশের হাতে গ্রেফতার একজন আন্দোলনকারীর ছবি।
মূলত, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের ওয়াল স্ট্রিটে Occupy Movement নামে একটি আন্দোলন শুরু হয়। সম্পদের অসম বন্টনের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া এ আন্দোলন পরবর্তীতে সারা বিশ্বের বিভিন্ন বড় বড় শহরে ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলনের দুই মাস পূর্তিতে আমেরিকার লস এঞ্জেলসে সংঘটিত প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে ৫০ জন প্রতিবাদকারীকে গ্রেফতার করে লস এঞ্জেলস পুলিশ। তাদের কারো একজনের ছবি কমিউনিটি ভিত্তিক ওয়েবসাইট reddit এর সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ১০ বছর পর জেল থেকে পালিয়ে বাড়িতে ৯ ঘন্টা পরে আসায় স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে৷
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিষয়টি ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হলে সেটিকে মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সম্প্রতি ‘ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি আলফি জেনারে খ্রিস্টান ধ’র্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন।‘ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলফি বেস্ট জুনিয়রের ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি সত্য হলেও তিনি ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি নন বরং ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের কোনো নির্ভরযোগ্য তালিকা না থাকলেও ইংল্যান্ডসহ যুক্তরাজ্যের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন স্যার জিম র্যাটক্লিফ।
মূলত, আলফি বেস্ট জুনিয়র নিজেই চলতি বছরের গত ২৭ ফেব্রুয়ারি CEOCAST নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তার ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
Screenshot: CEOCAST
অর্থাৎ তার ইসলাম গ্রহণের দাবিটি সত্য। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, তিনি ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয়।
এ নিয়ে অনুসন্ধানে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের কোনো নির্ভরযোগ্য তালিকা খুঁজে পায়নি। তবে ইংল্যান্ডসহ যুক্তরাজ্যের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় আলফি বেস্ট ফ্যামিলি ২৩২তম অবস্থানে রয়েছেন।
তবে যুক্তরাজ্যের জিপসি (রোমানি সাব গ্রুপ) ধনীদের তালিকায় প্রথম স্থানে আছে আলফি বেস্ট জুনিয়রের বাবা আলফি বেস্ট। অর্থাৎ, আলফি বেস্ট জুনিয়র এককভাবে ধনীদের কোনো তালিকাতেই প্রথম অবস্থানে নেই।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিষয়টি ব্যাপকভাবে ইন্টারনেটে প্রচার করা হলে সেসময় এটিকে মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সম্প্রতি ‘রাজধানীর মিন্টু রোডে আওয়ামী অবৈধ মন্ত্রীর গাড়ির ধাক্কায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নি’হ’ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। মূলধারার গণমাধ্যমে এই খবর প্রচার করতে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে।’ শীর্ষক দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাজধানীর মিন্টু রোডে মন্ত্রীর গাড়ির ধাক্কায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে এই দুর্ঘটনায় ঐ দুই শিক্ষার্থী আহত হন এবং তারা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বর্তমানে তাদের বাসায় অবস্থান করছেন।
প্রতিবেদনটিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়ার বরাতে জানানো হয়, মন্ত্রিপাড়ায় একটি দুর্ঘটনায় আহত অবস্থায় দুজনকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে আনা হয়েছে। তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
Screenshot: Ajker Patrika
পাশাপাশি বেসরকারি টিভি চ্যানেল যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২৮ আগস্ট ‘সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর গাড়িতে মোটর সাইকেলের ধাক্কা, আহত ২’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘রাজধানীর হেয়ার রোডে সড়ক দুর্ঘটনায় দু’জন আহত হয়েছেন। রাত পৌনে ১১টার দিকে মিন্টু রোডের মন্ত্রী পাড়ায় ঢোকার রাস্তায় একটি মোটর সাইকেল সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের গাড়িতে আঘাত করে। এসময় বাইক আরোহী দুইজন আহত হন।
Screenshot: Jamuna TV Youtube
প্রতিবেদনটি আরও জানা যায়, দুর্ঘটনার সময় প্রতিমন্ত্রী গাড়িতেই ছিলেন। পরে প্রতিমন্ত্রীর গাড়িতে করেই তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়। আহত দু’জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর বাসায় নিয়ে যায় পরিবার। আহতদের নাম আবিরুজ্জামান অভি ও মো. তাফসির। তারা দু’জনই এইচএসসি পরীক্ষার্থী।
এছাড়া আরেকটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল নিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে ২৯ আগস্ট সকাল ৭ টা ১৭ মিনিটে ‘প্রতিমন্ত্রীর গাড়ির সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ, ২ শিক্ষার্থী আহত’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও জানা যায়, এই দুর্ঘটনায় কোনো নিহতের ঘটনা ঘটেনি বরং আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের পরিবার বাসায় নিয়ে যায়।
Screenshot: News24
অনুসন্ধানে এসব তথ্যের বাইরে তাদের নিহত বা মারা যাওয়ার ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, বাঁশের কেল্লা নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে এই তথ্যটি প্রচারের সময় পরবর্তীতে হালনাগাদ করা হবে বলে জানানো হলেও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ১৭ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও তাদের ফেসবুক পোস্টটি (আর্কাইভ) হালনাগাদ করা হয়নি।
Screenshot: Basher Kella Facebook Post
মূলত, গত ২৮ আগস্ট রাত ১১ টার দিকে রাজধানীর হেয়ার রোডে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের গাড়ির সাথে সংঘর্ষে ২ বাইক আরোহীর আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে, এই দুর্ঘটনায় আহত ঐ দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের গাড়ির সাথে সংঘর্ষে দুই মোটরসাইকেল আরোহীর নিহত হওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
সুতরাং, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের গাড়ির সাথে সংঘর্ষে দুই মোটরসাইকেল আরোহীর নিহত হওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “পদত্যাগের ঘোষণা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল ”একাত্তর টিভি” এর আদলে তৈরি করা একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে ।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়,”পদত্যাগের ঘোষণা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী” শীর্ষক তথ্য সম্বলিত ফটোকার্ডটি একাত্তর টিভির নয় বরং গত ২৮ আগস্ট একাত্তর টিভির ফেসবুক পেজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে প্রচারিত একটি ফটোকার্ডের শিরোনামকে বিকৃত করে উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে একাত্তর টিভির প্রচারিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ফটোকার্ডটিতে দেখা যায়, দুই লাইনের শিরোনামে দুইরকমের ফন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। যা মূলত একাত্তর টিভি করে না।
Screenshot : Facebook claim
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে একাত্তর টিভির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ২৮ আগস্ট প্রচারিত দাবিটির মতো হুবহু ছবি সম্বলিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Ekattor TV
উক্ত ফটোকার্ডটি সেখানে “সংবাদ সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী” শীর্ষক লেখা দেখতে পাওয়া যায়।
Image comparison: Rumor Scanner
অর্থাৎ, একাত্তর টিভির ফেসবুকে গত ২৮ আগস্ট প্রচারিত এই ফটোকার্ডটির শিরোনাম এডিট করে তাতে ‘পদত্যাগের ঘোষণা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক তথ্য লিখে প্রচার করা হচ্ছে।
পরবর্তী অনুসন্ধানে একই তারিখে একাত্তর টিভির ওয়েবসাইটে “সংবাদ সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Ekattor TV
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ব্রিকস সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এছাড়া, একাত্তর টিভির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ,অফিশিয়াল ওয়েবসাইট কিংবা অন্যকোনো গণমাধ্যমে ”পদত্যাগের ঘোষণা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী” শীর্ষক কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চায়না ও দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে গঠিত ১৫তম ব্রিকস সম্মেলন অংশ নিতে ২২ থেকে ২৬ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ সফর করেন শেখ হাসিনা। সেখান থেকে রোববার (২৭ আগস্ট) সকালে দেশে ফিরেন শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) সংবাদ সম্মেলনের খবর দেন প্রেস সচিব। এরই প্রেক্ষিতে গত ২৮ আগস্ট বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তর টিভির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ‘সংবাদ সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ফটোকার্ড প্রচারিত হয়। পরবর্তীতে উক্ত ফটোকার্ডের শিরোনাম বিকৃতের মাধ্যমে ‘পদত্যাগের ঘোষণা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক শিরোনামে একাত্তর টিভির ফটোকার্ড দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়।
সুতরাং, ‘পদত্যাগের ঘোষণা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড।
সম্প্রতি ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের’ শীর্ষক দাবিতে একটি ব্যাংক চেকের ছবি মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া সংক্রান্ত ভাইরাল চেকটি ভুয়া। প্রকৃতপক্ষে চেকটিতে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের ব্যাংক একাউন্টের নাম ও নাম্বারের মিল না থাকাসহ বেশ কিছু অসংগতি পাওয়া গেছে। এছাড়া চেকটি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের প্রণোদনার একটি চেক থেকে সম্পাদনা করা হয়েছে।
দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতেই রিউমর স্ক্যানার টিম চেকটিতে প্রদত্ত তথ্যসমূহ যাচাই করে। এ যাচাইয়ের কাজে ওপেন সোর্স থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গকে দেওয়া একাধিক চেকের সাহায্য নেওয়া হয়।
অসংগতি ১: প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের অ্যাকাউন্ট নাম এবং নাম্বার ভুল
‘ওবায়দুল কাদের ৫০ লাখ টাকা চিকিৎসা সহায়তা নিয়েছিলেন* দাবিতে ভাইরাল চেকটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেখানে প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের অ্যাকাউন্ট নাম PM’s Relief Fund এবং অ্যাকাউন্ট নাম্বার দেওয়া 4435403007037।
Image Analysis: Rumor Scanner
অপরদিকে ওপেন সোর্সে পাওয়া প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের চেক বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের অ্যাকাউন্ট নাম PRODHAN MONTRIR TRAN O KALYAN TAHABIL এবং অ্যাকাউন্ট নাম্বার হলো 0107333004093।
অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া সংক্রান্ত ভাইরাল চেকটিতে প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের অ্যাকাউন্ট নাম এবং নাম্বারটি ভুল।
অসংগতি ২: একই চেকে ভিন্ন ভিন্ন অ্যাকাউন্ট নাম্বার
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া সংক্রান্ত ভাইরাল চেকটির দুই জায়গায় অ্যাকাউন্ট নাম্বারের ভিন্নতা রয়েছে।
Image Analysis: Rumor Scanner
চেকটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, এর একস্থানে অ্যাকাউন্ট নাম্বার রয়েছে 4435403007037। আবার এরই নিচে যে অ্যাকাউন্ট নাম্বারটি রয়েছে সেটি হলো 4435403000037। অর্থাৎ শেষ চার সংখ্যার এক জায়গায় লেখা ৭০৩৭, অন্য জায়গায় লেখা ০০৩৭।
অসংগতি ৩: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের সিল ও স্বাক্ষর
পাশাপাশি ওপেন সোর্সে পাওয়া প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের চেকগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের সিল ও স্বাক্ষর লক্ষ্য করা যায়, যা আলোচিত চেকটিতে অনুপস্থিত।
ভাইরাল চেকটিতে দেখা যায়, সেখানে সোনালি ব্যাংকের শাখা উল্লেখ করা হয়েছে তেজগাঁও শাখা, ঢাকা। তবে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যান তহবিলের প্রকৃত চেকগুলোতে সোনালি ব্যাংকের শাখা উল্লেখ করা আছে প্রাইম মিনিস্টার অফিস কর্পোরেট, ঢাকা।
Image Analysis: Rumor Scanner
অসংগতি ৫: চেকে ভাষাগত অসংগতি
চেকটি নিয়ে বিশ্লেষণে দেখা যায়, চেকটিতে সহায়তা গ্রহণকারীর নাম অর্থাৎ ওবায়দুল কাদেরের নাম ও অর্থের পরিমাণ ইংরেজিতে উল্লেখ রয়েছে।
Image Analysis: Rumor Scanner
তবে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের প্রাপ্ত চেকগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেখানে এই তথ্যগুলো বাংলায় উল্লেখ থাকে।
অপরদিকে তার চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে সিঙ্গাপুর যাওয়ার দাবিতে প্রচারিত চেকটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চেকটি ইস্যু করা হয়েছে গত ২০ আগস্ট। অর্থাৎ ওবায়দুল কাদের সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরার পরে।
Image Analysis: Rumor Scanner
এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ওবায়দুল কাদেরের প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে সিঙ্গাপুর যাওয়ার দাবিটি ভিত্তিহীন।
এছাড়া নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রেও ওবায়দুল কাদেরের প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় না।
এই বিজ্ঞপ্তিতে ব্যবহৃত চেকের ছবিটির সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া সংক্রান্ত ভাইরাল চেকটির অ্যাকাউন্ট নাম্বার, সিজি নাম্বার, স্বাক্ষরের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Analysis: Rumor Scanner
চেকটি যেভাবে ছড়ালো
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ২৪ আগস্ট বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান।
তাঁর এ সিঙ্গাপুর যাত্রাকে ঘিরে ২৭ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি চেকের ছবি প্রচার করে দাবি করা হতে থাকে যে, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৫০ লাখ টাকার চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে বিদেশ ভ্রমণে গিয়েছেন।
চেকটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে মির্জা ফখরুলের বিদেশ ভ্রমণ দাবিতে ভাইরাল এই চেকটি ভুয়া।
এ নিয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের বিস্তারিত অনুসন্ধান পড়ুন
পরবর্তীতে এই দাবির প্রেক্ষিতেই একই চেক সম্পাদনা করে সেখানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নাম বসিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। যেহেতু উক্ত চেকটি এডিটেড, তাই ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন দাবিটি এখানে অসাড় হয়ে যায়।
মূলত, গত ২৭ আগস্ট সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা চিকিৎসা সহায়তা বিদেশ ভ্রমণে গিয়েছেন এমন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি চেকের ছবি ছড়িয়ে পড়ে। যা অনুসন্ধানে ভুয়া হিসেবে প্রমাণিত হয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নামে একটি চেকের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে দাবি করা হয় যে, মির্জা ফখরুল নয়, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, মির্জা ফখরুলের দাবিতে প্রচারিত ভুয়া চেকটিই সম্পাদনা করে ওবায়দুল কাদেরের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসা নিতে সিঙ্গাপুর যাওয়ার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত চেকটি ভুয়া এবং উল্লিখিত দাবিটি মিথ্যা।
গত ২০ আগস্ট রাতে চট্টগ্রাম নগরীর আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। নিহতদের মধ্যে একজন তরুণ এবং অপরজন তরুণী। এ বিষয়ে জাতীয় এবং স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মৃত তরুণের সাথে মৃত তরুণীর ছবি দাবিতে ভিন্ন ভিন্ন ছয়টি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। একইসাথে নিহত দুই শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম সিটি কলেজের শিক্ষার্থী বলে দাবি করা হয়েছে।
তাছাড়া, ‘দৈনিক বাংলা’ ও ‘ডিবিসি নিউজ’ মৃত তরুণীর ভুল ছবি ব্যবহার করে ফটোকার্ড প্রকাশ করলেও পরবর্তীতে তা সংশোধন করে নেয়৷ তবে সংশোধনের পূর্বের ভার্সনের কোনো আর্কাইভ পাওয়া যায়নি।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রামে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় গণমাধ্যমে মৃত তরুণী নাহিন সুলতানার ছবি দাবিতে যে ছয়টি ছবি প্রচার করা হয়েছে তার মধ্যে পাঁচটি ছবি ভিন্ন তিন তরুণীর। তাছাড়া, নাহিনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারি সিটি কলেজের নাম প্রচার করা হলেও তিনি মূলত চট্টগ্রাম মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ছিলেন।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে চট্টগ্রামের স্থানীয় পত্রিকা ‘দৈনিক ইনফো বাংলা’ এর ফেসবুকে পেজে (আর্কাইভ) গত ২৩ আগস্টের প্রিন্ট সংস্করণের প্রথম পাতার একটি সংবাদ নজরে আসে রিউমর স্ক্যানার টিমের। “গণমাধ্যমের অপেশাদারিত্বে তরুণীর সামাজিক অবস্থান হুমকির মুখে” শীর্ষক শিরোনামের এই সংবাদে আলোচিত মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাটির বিষয়ে বলা হয়, গণমাধ্যমে নাহিদা দাবিতে ভিন্ন এক তরুণীর ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। রিতু বিশ্বাস নামে উক্ত তরুণী জীবিত এবং সুস্থ আছেন বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।
Image: Facebook
প্রতিবেদনটিতে আরটিভি এবং ডিবিসি নিউজের এ সংক্রান্ত সংবাদের ফটোকার্ড দেখা যাচ্ছে। তবে দুইটি ফটোকার্ডে থাকা তরুণীর চেহারার মিল নেই বলেই প্রতীয়মান হয়েছে রিউমর স্ক্যানারের কাছে।
তবে কি দুইজন ভিন্ন তরুণীর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে গণমাধ্যমে? এমন প্রশ্ন সামনে রেখে শুরুতে ইনফো বাংলা’র প্রতিবেদনটির লেখক মনজুরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি আমাদের জানান, ডিবিসি নিউজের ফটোকার্ডে থাকা তরুণীই রিতু বিশ্বাস। তবে আরটিভির ফটোকার্ডে থাকা তরুণীর পরিচয় জানাতে পারেননি তিনি।
এ বিষয়ে পরবর্তী অনুসন্ধানে দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী আল ইমরান ইফতির ফেসবুক আইডিতে (আর্কাইভ) গত ২৩ এপ্রিল প্রকাশিত এক পোস্টে (আর্কাইভ) গণমাধ্যমে প্রচারিত আলোচিত ছবিগুলোর হদিস পাওয়া যায়। তবে পোস্টের এডিট হিস্টোরি যাচাই করে দেখা যাচ্ছে, এই ছবিগুলো পোস্টে যুক্ত করা হয়েছে গত ১৬ মে।
Collage: Rumor Scanner
একই পোস্টে ইনফো বাংলা’র প্রতিবেদনে প্রচারিত দুইটি গণমাধ্যমের ফটোকার্ডে থাকা দুই তরুণীর আল ইমরান ইফতির সাথে তোলা একটি গ্রুপ ছবিও খুঁজে পেয়েছি আমরা, যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, এরা দুইজন ভিন্ন ব্যক্তি।
Screenshot: Facebook
অর্থাৎ, এই পর্যন্ত এটা বলা যাচ্ছে যে, গণমাধ্যমে মৃত তরুণী দাবিতে এই দুই তরুণীর ছবি প্রচার করা হয়েছে।
পরবর্তীতে এই দুই তরুণীর পরিচয় নিশ্চিতে অনুসন্ধান শুরু করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
হলুদ শাড়ি পরিহিত তরুণীর খোঁজে
ইনফো বাংলা’র সূত্রে ইতোমধ্যেই হলুদ শাড়ি পরিহিত তরুণীর নাম ঋতু বিশ্বাস বলে ধারণা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীর সহায়তায় কলেজটির ওয়েবসাইটের স্টুডেন্ট ডাটাবেজে ঋতু বিশ্বাসের প্রোফাইল খুঁজে পাওয়া যায়। গণমাধ্যমে মৃত তরুণী দাবিতে প্রচারিত হলুদ শাড়ি পরিহিত তরুণীর ছবির সাথে ঋতু বিশ্বাসের চেহারার মিল পাওয়া যায়। কলেজের ওয়েবসাইটে থাকা স্টুডেন্ট ইনফরমেশন সেকশন থেকে জানা যায়, ঋতু ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের বিএ প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করছেন।
Comparison: Rumor Scanner
আরো নিশ্চিত হতে অনুসন্ধানে ঋতু বিশ্বাসের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া তার বাড়ির ঠিকানার সাথে ওয়েবসাইটে দেওয়া ঠিকানার মিল খুঁজে পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম। ঋতু বেঁচে আছে দাবি করে ইনফো বাংলা যে তথ্য প্রচার করেছে তা সত্য বলে তার একাধিক সহপাঠী রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছে।
অর্থাৎ, ইফতির সাথে হলুদ শাড়ি পরিহিত যে তরুণীকে দেখা যাচ্ছে, তিনি ঋতু বিশ্বাস। তিনি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হননি।
লাল শাড়ি পরিহিত তরুণীর খোঁজে
পরবর্তীতে ইফতির সাথে থাকা লাল শাড়ি পরিহিত তরুণীর পরিচয় নিশ্চিত হতে ফেসবুক মনিটরিং টুলসের মাধ্যমে একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করে এক ব্যক্তির নিজ অ্যাকাউন্ট এবং একটি গ্রুপে দেওয়া পোস্ট নজরে আসে রিউমর স্ক্যানার টিমের।
‘চট্টগ্রাম’ নামে একটি গ্রুপে দেওয়া পোস্টে ঋতু এবং লাল শাড়ি পরিহিত তরুণীর ছবি সম্বলিত ফটোকার্ড পোস্ট করে লিখেছেন, দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া তরুণী দাবিতে তার বান্ধবী সুমাইয়া সুলতানার ছবি প্রচার করা হচ্ছে গণমাধ্যমে। তিনি তার অ্যাকাউন্টেও লাল শাড়ি পরিহিত তরুণীর ছবি সম্বলিত ফটোকার্ডটি পোস্ট করে প্রথম বিষয়টি সত্যি কিনা জানতে চেয়ে পোস্ট করেন। পরে পোস্টের ক্যাপশন এডিট করে জানান, সুমাইয়া সুস্থ আছেন।
Collage: Rumor Scanner
অর্থাৎ, উক্ত ব্যক্তির দেওয়া তথ্যমতে, লাল শাড়ি পরা তরুণীর নাম সুমাইয়া সুলতানা।
রিউমর স্ক্যানার টিম পরবর্তীতে পোস্টদাতা ব্যক্তির সাথে কথা বলেছে। তিনি জানান, লাল শাড়ি পরিহিত উক্ত তরুণীর নাম সুমাইয়া। আমরা তার মাধ্যমে সুমাইয়ার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। এ বিষয়ে শুরুতে তিনি আমাদের সহায়তার আশ্বাস দিলেও পরবর্তীতে সুমাইয়ার বিষয়ে দেওয়া দুইটি পোস্ট ডিলিট করে দিয়ে জানান, তিনি এ বিষয়ে আর কথা বলতে চান না। (সঙ্গত কারণে তাই আমরা তার অ্যাকাউন্টের নাম ও ছবি ব্লার করে দিয়েছি।)
লাল শাড়ি পরা তরুণীর নাম ‘সুমাইয়া সুলতানা’ জানার পর এ বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান এগোতে থাকে আমাদের। রিউমর স্ক্যানার টিম এ বিষয়ে জানতে সরকারি সিটি কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলেছে। তাদের মধ্যে থাকা কয়েকজন জানিয়েছেন, ঋতু এবং সুমাইয়া তাদের ব্যাচমেট। অর্থাৎ, সুমাইয়াও ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের বিএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।
তাদের সহায়তায় কলেজটির ওয়েবসাইটে স্টুডেন্ট ডাটাবেজে সুমাইয়া সুলতানার প্রোফাইল খুঁজে পাওয়া যায়। তবে গণমাধ্যমে মৃত তরুণী দাবিতে লাল শাড়ি পরিহিত যে তরুণীর ছবি প্রচারিত হয়েছে তার সাথে সুমাইয়ার চেহারার দৃশ্যমান মিল পাইনি আমরা।
Comparison: Rumor Scanner
এ বিষয়ে আরো নিশ্চিত হতে পরবর্তীতে সুমাইয়ার সাথে রিউমর স্ক্যানার টিমের কথা হয়। তিনি নিজেও বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং স্বীকার করেন যে, গণমাধ্যমে মৃত দাবিতে তার ছবি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া লাল পরিহিত তরুণীর ছবিগুলো সুমাইয়া সুলতানার বলে তার একাধিক সহপাঠীও রিউমর স্ক্যানার টিমকে নিশ্চিত করেছেন।
অর্থাৎ, আল ইমরান ইফতির সাথে লাল শাড়ি পরিহিত যে তরুণীকে দেখা যাচ্ছে, তিনি সুমাইয়া সুলতানা এবং তিনি জীবিত আছেন।
এবার তৃতীয় আরেক ব্যক্তির আবির্ভাব
গণমাধ্যমে প্রচারিত ভুল চারটি ছবি প্রচারের বিষয়ে অনুসন্ধানের মধ্যেই ফেসবুকে একটি ভিডিও (আর্কাইভ) নজরে আসে রিউমর স্ক্যানার টিমের। এ্যানি নামে এক তরুণীকে উক্ত ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, ‘আনোয়ারার সংবাদ’ নামে সংবাদভিত্তিক একটি ফেসবুকে পেজে দাবি করা হয়েছে, ইফতির সাথে দুর্ঘটনায় তিনি (এ্যানি) মারা গেছেন। এজন্য তিনি ভিডিওর মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করছেন যে, তিনি জীবিত আছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিম আনোয়ারার সংবাদ নামক পেজটিতে এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ না পেয়ে এ্যানির সাথে যোগাযোগ করে। তিনি আমাদের জানান, তার ভিডিও করার পর পেজটি থেকে এ সংক্রান্ত ভিডিওটি ডিলিট করা হয়েছে। তিনি আমাদের কাছে ভিডিওটির একটি স্ক্রিনশট পাঠিয়েছেন।
Collage: Rumor Scanner
এ্যানি রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, আল ইমরান ইফতি তার বন্ধু ছিল। তারা বাইক রাইডার ছিলেন। তবে মারা যাওয়া তরুণী বাইকার ছিলেন না। তার নাম নাহিন সুলতানা।
অর্থাৎ, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আল ইমরান ইফতির সাথে লাল ও হলুদ শাড়ি পরিহিত দুই তরুণী কিংবা এক বাইকার তরুণীর যে ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার হয়েছে তাদের কেউই মারা যাননি।
আল ইমরান ইফতির সাথে বাইক দুর্ঘটনায় নিহত তরুণীর পরিচয় কী?
অধিকাংশ গণমাধ্যমে আল ইমরান ইফতির এই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মৃত তরুণীর নাম নাহিদা সুলতানা এবং তিনি চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী বলে দাবি করা হয়েছে।
এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে শুরুতে সরকারি সিটি কলেজের ওয়েবসাইটে স্টুডেন্ট ডাটাবেজে নাহিন সুলতানা নামে কোনো শিক্ষার্থীর নাম খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম।
পরবর্তীতে চট্টগ্রাম মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অফিস সেকশনের রেজিস্ট্রার (ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী) মো: গোলাম কিবরিয়ার সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি জানান, তিনি এখন এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন না৷ তবে তিনি খোঁজ নিয়ে রিউমর স্ক্যানারকে জানান, এই প্রতিষ্ঠানেরই এক শিক্ষার্থী মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত হতে মৃত তরুণীর বাবা রাসেল চৌধুরীর সাথে কথা বলেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, জন্মসনদ এবং একাডেমিক সনদ অনুযায়ী তার মেয়ের নাম নাহিন সুলতানা। তার মেয়ে চট্টগ্রাম মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করতেন। তিনি সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী নয়।
অর্থাৎ, ইফতির সাথে যে তরুণী মারা গেছেন তার নাম নাহিদা সুলতানা নয় এবং তিনি চট্টগ্রাম সিটি কলেজের শিক্ষার্থীও নয়। তার প্রকৃত নাম নাহিন সুলতানা এবং তিনি চট্টগ্রাম মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ছিলেন।
নাহিনের প্রকৃত ছবির খোঁজে
একই ঘটনার বিষয়ে শোক জানিয়ে ফেসবুকে প্রকাশিত এক ব্যক্তির একটি পোস্টে ইফতির সাথে থাকা এক তরুণীর ছবিকে (গোল চিহ্নিত) নাহিদা (মূলত নাহিন) বলে দাবি করতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
Screenshot: Facebook
এ বিষয়টি নিশ্চিত হতে আমরা শরণাপন্ন হই এ্যানির। ঘটনার দিন ঘটনাস্থল এবং পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে উপস্থিত ছিলেন বাইকার আরকে এ্যানি। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন, ছবির এই ব্যক্তিই মৃত নাহিন সুলতানা। একই ছবিতে তিনিও রয়েছেন। উক্ত ছবিতে ডান থেকে তৃতীয় ব্যক্তিই এ্যানি।
এ্যানিকে আমরা গণমাধ্যম থেকে সংগ্রহ করা আরো একটি ছবি দেখাই, যার সাথে নাহিনের ছবিটির মিল পেয়েছি আমরা। এ্যানি রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন, এটিও নাহিনেরই ছবি।
Image: Facebook
ভুল শোধরাতে গিয়েও ভুল!
রিউমর স্ক্যানার টিম চট্টগ্রামের আলোচিত এই ঘটনায় দীর্ঘ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেশের প্রায় সকল গণমাধ্যমেরই এ সংক্রান্ত সংবাদগুলো পর্যালোচনা করেছে, পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে সংবাদমাধ্যমগুলোর ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত সংবাদগুলোও। এই কাজটি করতে গিয়ে দেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যম বাংলাভিশনের একটি ফেসবুক পোস্ট নজরে আসে আমাদের।
গত ২০ আগস্ট সকাল ৯ টা ৫৫ মিনিটে আলোচিত মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার বিষয়ে একটি ফটোকার্ড নিজেদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশ করে বাংলাভিশন। এই ফটোকার্ডে ইফতির সাথে নাহিন দাবিতে সুমাইয়ার ছবি প্রচার করা হয়েছে। এ নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষিতে পোস্ট এডিট করে আগের ফটোকার্ডটি সরিয়ে একইদিন সকাল ১১ টা ৩৮ মিনিট নতুন আরেকটি ফটোকার্ড যুক্ত করা হয়। এই ফটোকার্ডে ইফতির সাথে নাহিন দাবিতে যে তরুণীকে দেখা যাচ্ছে, তিনিও নাহিন নয়। তার নাম ঋতু বিশ্বাস।
Comparison: Rumor Scanner
অর্থাৎ, বাংলাভিশন এ বিষয়ে প্রকাশিত তাদের পোস্টের প্রথম ফটোকার্ডে ভুল ছবি প্রকাশ করে পরবর্তীতে আরেকটি ফটোকার্ড প্রকাশ করলেও সেটিও নাহিনের ছবি ছিল না।
মূলত, গত ২০ আগস্ট চট্টগ্রামে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী ও কলেজ ছাত্রলীগের নেতা আল ইমরান ইফতি ও তার একই মোটরসাইকেলে থাকা নাহিদা নামে এক তরুণী মারা যান বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মৃত তরুণীর ছবি দাবিতে গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন ছয়টি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। একইসাথে মৃত তরুণীকে সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা যায়, মারা যাওয়া তরুণীর প্রকৃত নাম নাহিন সুলতানা এবং তিনি চট্টগ্রাম মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাছাড়া, গণমাধ্যমে যে ছয়টি ছবিকে নাহিনের বলে দাবি করা হয়েছে তার মধ্যে মাত্র একটি ছবি নাহিন সুলতানার, বাকি পাঁচটি ছবি ভিন্ন তিন তরুণীর। প্রকৃতপক্ষে, সুমাইয়া সুলতানা, ঋতু বিশ্বাস এবং এ্যানি নামের ভিন্ন এবং জীবিত তিন তরুণীর ছবি মৃত নাহিন সুলতানার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, চট্টগ্রামে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় গণমাধ্যমে মৃত তরুণীর ছবি দাবিতে জীবিত ভিন্ন তিন তরুণীর পাঁচটি ছবি এবং তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারি সিটি কলেজের নাম প্রচার করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “একটা অসাধারন ক্যামেরায় তোলা ফটো! ভালো করে ফটো টি লক্ষ্য করুন পরে লার্জ করুন -আর বলুন কি দেখতে পেলেন?” শীর্ষক দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ক্যামেরায় তোলা ছবি দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত আলোচিত ছবিটি বাস্তব নয় বরং উক্ত ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, ছবিতে যে মুখমণ্ডলের অবয়ব দৃশ্যমান তা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনসিও লুলা দা সিলভার একটি ছবির আকৃতি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘Reddit’ এ ‘r/brasilivre’ নামক গ্রুপে ‘u/raney93’ নামক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১২ আগস্ট “Ó o meninão passando no seu feed.” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত পোস্টের ছবির সাথে উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison by Rumor Scanner
তবে এই ছবিটির লোকেশন কোথায় বা কে তুলেছেন এমন কোনো তথ্য এই পোস্টে পাওয়া যায়নি।
পোস্টটির কমেন্ট বক্সে ‘u/raney93’ অ্যাকাউন্ট থেকে একটি কমেন্ট করে নিশ্চিত করেছেন যে তিনি এটি কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্যে ছবি তৈরির টুলস Stable Diffusion এবং Control Net এর সাহায্যে তৈরি করেছেন।
Screenshot from ‘Reddit’
বিষয়টি আরও অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি ছবি শনাক্তকারী ওয়েবসাইট ‘aiornot.com’ এ উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি আপলোড করলে ওয়েবসাইটি ছবিটিকে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হিসেবে শনাক্ত করে।
Screenshot from aiornot.com
এছাড়া, ক্যামেরায় তোলা অসাধারণ ছবি দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ছবির পোস্টের অনেকেই কমেন্টে জানান যে তারা ছবিটিতে একটি মুখমণ্ডলের অবয়ব দেখতে পাচ্ছে।
Image Collage by Rumor Scanner
উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবিটিতে কার মুখমণ্ডলের অবয়ব ছিলো তা অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার দেখে যে ছবিটি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনসিও লুলা দা সিলভার একটি ছবিকে অনুকরণ করে তৈরি করা হয়েছে।
Image Comparison by Rumor Scanner
মূলত, ঘরবাড়ি এবং ছোট খালের উপস্থিতিতে মানুষের মুখের অবয়বযুক্ত একটি ছবি সাধারণ ক্যামেরায় তোলা দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায় উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এর সাহায্যে তৈরি করা। গত ১২ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘Reddit’ এ ‘r/brasilivre’ নামক গ্রুপে ‘u/raney93’ নামক অ্যাকাউন্ট থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে ছবি তৈরির টুলস Stable Diffusion এবং ControlNet এর সাহায্যে তৈরি পোস্ট করলে তা ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে যায়। এছাড়া, ছবিতে থাকা মুখমণ্ডলের অবয়বটি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনসিও লুলা দা সিলভার একটি ছবির আকৃতি দিয়ে তৈরি করা।
উল্লেখ্য, Stable Diffusion হচ্ছে একটি লুকানো লেখা থেকে ছবি তৈরির ডিফিউশন মডেল। যেখানে যেকোনো অর্থবোধক লেখা ইনপুট দেওয়া হলে তা বাস্তববাদী ছবি তৈরি করতে সক্ষম। আর Control Net হচ্ছে একটি নিউরাল নেটওয়ার্ক কাঠামো যা অতিরিক্ত শর্ত যোগ করে ডিফিউশন মডেলগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে, এআই ইমেজ জেনারেশনে এটি নতুন মাত্রা যোগ করে।
প্রসঙ্গত, পূর্বে বিভিন্ন সময় এআই দিয়ে তৈরিকৃত ছবি বাস্তব দাবিতে প্রচার করা হলে সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। প্রতিবেদনগুলো দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের আকৃতি দিয়ে তৈরি ছবিকে ক্যামেরায় তোলা বাস্তব ছবি দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান প্রফেসর ড.ইউনূস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা ‘ শীর্ষক শিরোনাম সম্বলিত জাতীয় দৈনিক কালবেলার আদলে তৈরি একটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান প্রফেসর ড.ইউনূস।। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা ‘শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত স্ক্রিনশটটি এডিটেড। প্রকৃতপক্ষে জাতীয় দৈনিক কালবেলার অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত ‘ড.ইউনূসকে চিঠিতে যা লিখলেন ওবামা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম এডিট করে উক্ত স্ক্রিনশটটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে শুরুতে কালবেলার নামে প্রচারিত স্ক্রিনশটটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে এই সংবাদটি প্রচারের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২৭ আগস্ট ২০২৩।
Screenshot : Facebook Claim Post
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে আলোচ্য স্ক্রিনশটটিতে দেওয়া তারিখ অনুযায়ী জাতীয় দৈনিক কালবেলার অনলাইন সংস্করণে গত ২৭ আগস্ট ‘ড.ইউনূসকে চিঠিতে যা লিখেছেন ওবামা‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot : kalbela’s Website
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গত ১৭ আগস্ট অর্থনীতিবিদ, শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড.মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ড.ইউনূস সেন্টার ২৭ আগস্ট বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।’
রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, জাতীয় দৈনিক কালবেলার শিরোনাম এডিট করে উক্ত স্ক্রিনশটটি তৈরি করা হয়েছে।
Image comparison by Rumor Scanner
পরবর্তীতে অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লিখিত তথ্যের সূত্র ধরে ড.ইউনূস সেন্টারের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গত ২৭ আগস্ট ‘President Obama’s letter to Professor Yunus‘ শিরোনাম সম্বলিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot : Yunus Centre’s Facebook Page
চিঠিতে বলা হয়, প্রিয় প্রফেসর ইউনূস, মানুষের পরিবার এবং সমাজকে দারিদ্র্যমুক্ত করে তাদের ক্ষমতায়নের জন্য আপনার প্রচেষ্টা আমাকে দীর্ঘকাল অনুপ্রাণিত করছে। ২০০৯ সালে হোয়াইট হাউসে আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পেয়ে আমি বলেছিলাম, আপনার কর্মকাণ্ড লাখ লাখ মানুষকে তাদের নিজস্ব সম্ভাবনার কথা ভাবতে অনুপ্রাণিত করেছে।’ চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘ আমি আশা করি এটা আপনাকে শক্তি জোগাবে যে, যাদের অনেকের সম্ভাবনাকে আপনি বিনিয়োগ করেছেন এবং আমরা যারা সবার জন্য অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করছি, আপনি তাদের ভাবনায় রয়েছেন। আমি আশা আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার স্বাধীনতা অব্যাহত থাকবে।’
অর্থাৎ ড. ইউনূসকে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে কথা বলেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। জাতীয় দৈনিক কালবেলার অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনামকে এডিট করে উক্ত দাবিতে স্ক্রিনশটটি প্রচার করা হচ্ছে।
এছাড়া,আলোচ্য বিষয়ে বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায় নি।
মূলত, অর্থনীতিবিদ, শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গত ১৭ আগস্ট একটি চিঠি পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এই বিষয়ে দেশের জাতীয় দৈনিক কালবেলার অনলাইন সংস্করণে গত ২৭ আগস্ট ‘ড.ইউনূসকে চিঠিতে যা লিখেছেন বারাক ওবামা’ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে উক্ত প্রতিবেদনের শিরোনাম এডিট করে ‘অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান প্রফেসর ড.ইউনূস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা ‘শীর্ষক শিরোনামে একটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ড.ইউনূস তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হচ্ছেন দাবিতে কালবেলার সূত্রে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হলে সেটিকে মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ‘অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান প্রফেসর ড.ইউনূস।। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা ‘ শীর্ষক শিরোনামে দৈনিক কালবেলার আদলে প্রচারিত স্ক্রিনশটটি এডিটেড।
ভিডিও ক্লিপটিতে গিয়াস উদ্দিন তাহেরীকে বলতে শোনা যায়, আজকে এই লোকটা কবরে থাকবে আমি কল্পনাও করি নাই। আল্লাহ যেন তার কবরটাকে জান্নাতের গোলজার বানিয়ে দেয়। আমিন কন!… উনি আদমওয়ালা মানুষ ছিলেন, নম্র প্রকৃতির মানুষ ছিলেন৷ বেশী কথা বলতেন না, কিন্তু হক কথা বলতেন। আকিদার ক্ষেত্রে তিনি কাউকে ছাড় দিতেন না।…”
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর, জন্য আফসোস করে কি বললেন স্টেজে তাহেরী হুজুর” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত ভিডিও ক্লিপটিতে কথাগুলো গিয়াস উদ্দিন তাহেরী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে উদ্দেশ্য করে বলেননি বরং মুজিব এবং মতিউর রহমান নামের দুই ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে এক ওয়াজ-মাহফিলে তিনি কথাগুলো বলেছিলেন।
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে Md. Gias Uddin নামের একটি ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
পোস্টটিতে দাবিটি মিথ্যা বলে ক্যাপশনে লিখা হয়, বিরামপুর মিডিয়া কে ধন্যবাদ সত্য ভিডিও তুলে ধরে নষ্ট ভ্রষ্ট শি*য়াদের দুই গালে জুতা মারার জন্যে।
১ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, মূল ভিডিওটির আগের ও পরেট অংশ কেটে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলেছেন বলে প্রচার করা হচ্ছে।
Screenshot: Facebook
পরবর্তীতে মূল ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ইসলামিক ওয়াজ-মাহফিল ভিত্তিক Birampur HD Media নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে গিয়াস উদ্দিন তাহেরীর পুরো ওয়াজটি খুঁজে (আর্কাইভ) পাওয়া যায়।
১ ঘন্টা ২২ সেকেন্ডের ওয়াজ ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় ভিডিও শুরুর ৭ মিনিটে গিয়াস উদ্দিন তাহেরী বলেন, আমার মুজিব ভাই খুব মহব্বতের মানুষ আছিলেন। লোকটা আমারে দাওয়াত কইরা লোকটার নাম্বারটা আমারে দিয়া আইছে। আজকে এই লোকটা কবরে থাকবে আমি কল্পনাও করি নাই। আল্লাহ যেন তার কবরটাকে জান্নাতের গোলজার বানিয়ে দেয়। আমিন কন!…।
Screenshot: YouTube
পরবর্তীতে ওয়াজটির ১১ মিনিট ১১ সেকেন্ডে গিয়াস উদ্দিন তাহেরীকে বলতে শোনা যায়, আল্লাহর অলি মতিউর রহমান সাহেবের খেলার কথা। উনি আদমওয়ালা মানুষ ছিলেন, নম্র প্রকৃতির মানুষ ছিলেন৷ বেশী কথা বলতেন না, কিন্তু হক কথা বলতেন। আকিদার ক্ষেত্রে তিনি কাউকে ছাড় দিতেন না।…”
Screenshot: YouTube
অর্থাৎ, গিয়াস উদ্দিন তাহেরী কথাগুলো দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে উল্লেখ করে নয় বরং মুজিব ও মতিউর রহমান নামের দুই ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন।
মূলত, গিয়াস উদ্দিন তাহেরী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে উদ্দেশ্য করে ওয়াজ-মাহফিলের কথা বল আফসোস করেছেন শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে হওয়া একটি ওয়াজ-মাহফিলে গিয়াস উদ্দিন তাহেরী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলেননি বরং মুজিব এবং মতিউর রহমান নামের দুই ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে তিনি কথাগুলো বলেছিলেন।
প্রসঙ্গত, জামায়াতে ইসলামীর হয়ে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে পর পর দুইবার বাংলাদেশের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। ২০১০ সালের ২৯শে জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগের একটি মামলায় তিনি গ্রেফতার হন। পরে ২ আগস্ট এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর থেকেই কারাগারে ছিলেন জামায়াতের এই নেতা। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে আনা মোট বিশটি অভিযোগের মধ্যে আটটিতে তিনি আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর দুটো অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে আদালত ২০১৩ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয়। তবে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে ২০১৪ সালে আপীল বিভাগ সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়। দণ্ডাদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও সাঈদীর পৃথক রিভিউ আবেদন খারিজ করে ২০১৭ সালের ১৫ মে আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়। এরপর থেকে কারাগারে থেকেই সাজা ভোগ করছিলেন তিনি। গত ১৪ আগস্ট রাতে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।
সুতরাং, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে নিয়ে গিয়াস উদ্দিন তাহেরী বক্তব্য দিয়েছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “সাকিব আল হাসান এর স্ত্রীর ছবি এখন সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল” শিরোনামে তিনটি ছবির কোলাজ ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। যেখানে সাকিব আল হাসানের জার্সি পরিহিত একটি ছবি এবং তার বিয়ের সময়ের একটি কাপল ছবির সাথে বিকিনি পরিহিত একটি ছবি যুক্ত করে সেই ছবিটিকেও সাকিব আল হাসানের স্ত্রীর ছবি হিসেবে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাকিব আল হাসান এর স্ত্রীর ভাইরাল ছবি দাবিতে প্রচারিত তিন ছবির কোলাজে থাকা বিকিনি পরিহিত ছবিটি সাকিব আল হাসান এর স্ত্রীর ছবি নয় বরং সেটি ভারতীয় অভিনেত্রী ও মডেল শামা সিকান্দারের একটি ছবি। ভারতীয় অভিনেত্রী শামা সিকান্দারের একটি ছবি সংগ্রহ করে সেটি সাকিব আল হাসান ও তার স্ত্রীর ছবির সাথে কোলাজ করে ছবিটিকে সাকিব আল হাসানের স্ত্রীর ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম India.com এ “Shama Sikander Bikini And Swimwear Pictures” শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটো স্টোরিতে বিকিনি পরিহিত হুবুহু একই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায় এটি শামা সিকান্দার নামের একজন ভারতীয় অভিনেত্রীর ছবি।
Screenshot: india.com
INDIAHERALD.COM নামের অপর একটি ভারতীয় পোর্টালেও “Shama Sikander Hot Sizzling Stills” শিরোনামে ২০২০ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ঐ একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। সেখান থেকেও ছবিটি শামা সিকান্দার নামের একজন ভারতীয় অভিনেত্রীর বলে জানা যায়।
Screenshot: INDIAHERALD.COM
পরবর্তীতে শামা সিকান্দারের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে অনুসন্ধানে একই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ২০১৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ঐ ছবিটি তিনি নিজ ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে প্রকাশ করেছিলেন।
Screenshot : Shama Sikander/Instagram
মূলত, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের একটি ছবি এবং তার স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশিরের সাথে তার বিয়ের সময়ের একটি ছবির সাথে শামা সিকান্দার নামের একজন ভারতীয় অভিনেত্রীর বিকিনি পরিহিত অপর একটি ছবি কোলাজ করে সেই ছবিটিকে সাকিব আল হাসানের স্ত্রীর ভাইরাল ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, ভারতীয় মডেল শামা সিকান্দারের একটি ছবিকে সাকিব আল হাসানের স্ত্রী ভাইরাল ছবি হিসেবে প্রচার করার বিষয়টি মিথ্যা।