প্রথম আলোর সাংবাদিক গ্রেফতারের ঘটনায় পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদকের নামে ভুয়া উক্তি প্রচার

সম্প্রতি স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের দায় ঐ প্রতিবেদকের উপর দিয়ে পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের ‘এই দায় প্রথম আলোর নয়, এই দায় শামসুজ্জামানের’ শীর্ষক একটি উক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে
আর্কাইভ  দেখুন এখানে, এখানে, এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোতে প্রকাশিত আলোচিত প্রতিবেদনের দায় প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের বলে কোনো মন্তব্য করেননি পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বরং কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়া ভিত্তিহীনভাবে উক্ত তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে।

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম বিভিন্ন গণমাধ্যমে উক্ত ঘটনায় প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের মন্তব্য খুঁজে দেখে৷ তবে এসব প্রতিবেদনের কোথাও সাজ্জাদ শরিফের এমন কোনো বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

এই ঘটনায় ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে গত ২৯ মার্চ ‘প্রতিবেদনের শিরোনাম এবং ছবির মধ্যে অসঙ্গতির জেরে সাংবাদিক আটক‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘’আমাদের সাভার প্রতিনিধিকে গতকাল মধ্যরাতে সিআইডি পরিচয় দিয়ে সাদা পোশাকে ধরে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে এখনো আমরা তার কোন খোঁজ পাইনি। এ বিষয়ে আমরা আইনানুগভাবে যেসব পদক্ষেপ নেয়ার সেভাবেই পদক্ষেপ নেবো।‘’

দৈনিক নয়া দিগন্তে ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে প্রথম আলোর সাংবাদিককে তুলে নেয়ার অভিযোগ‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিবিসিকে দেওয়া সাজ্জাদ শরিফের উক্ত বক্তব্যটিই ব্যবহার করে। 

মূলধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল abnews24 এ ‘প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে বাসা থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সাজ্জাদ শরিফ বলেন, , ‘আজ ভোর ৪টায় শামসুজ্জামানকে তাঁর সাভারের বাসা থেকে সিআইডির পরিচয়ে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়। সিআইডি নামধারী লোকজন তাঁর মুঠোফোন, ক্যামেরা ও কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক জব্দ করে নিয়ে যায়। এ সময় সেখানে ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়য়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন। আমরা এ ঘটনায় রাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছি।’

অনলাইন বিজনেস নিউজ পোর্টাল অর্থসূচকে ‘প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও সাজ্জাদ শরিফের একই বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়।

এছাড়া স্টার সংবাদ নামে আরেকটি অনলাইন পোর্টালে ‘সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের একটি বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়। 

সেখানে তিনি বলেন, রাতের বেলা একজন সাংবাদিককে এভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া, ১০ ঘণ্টাতেও কোনো সংস্থা কর্তৃক স্বীকার না করা খুবই দুঃখজনক। শামসকে যে সিআইডি পরিচয়ে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার বক্তব্যে স্পষ্ট। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত জানতে পারিনি শামস আসলে কোথায়? কাদের হেফাজতে! আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহ আইনগতভাবে দেখছি।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর অনলাইনে ‘আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো‘ শীর্ষক শিরোনামে একটি ব্যানার প্রকাশ করা হলে এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়৷ পরবর্তীতে উক্ত প্রতিবেদনটিকে ‘ভুয়া’ দাবি করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে একাত্তর টিভি। 

সেই প্রতিবেদনেও সাজ্জাদ শরিফ কাউকে দায়ী না করে বলেন, ‘১৭ মিনিট পরেই নিউজটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হবার বিষয়টি তাদের জানার কথা নয়।’

পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে আরও নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার টিম সাজ্জাদ শরিফের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এসময় তিনি জানান, ‘এটা হতেই পারে না৷ এটা কোনো জায়গা থেকে তৈরি করা হয়েছে দূরভিসন্ধি করে। এটা ঠিক না৷ আমরা শামসের (শামসুজ্জামান) পক্ষে আছি, শামসের পাশে আছি।’

অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাজ্জাদ শরিফের নামে প্রচারিত ‘এই দায় প্রথম আলোর নয়, এই দায় শামসুজ্জামানের’ শীর্ষক উক্তিটি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।

উল্লেখ্য, গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলো তাদের ফেসবুক পেইজে ‘আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো’ শীর্ষক উক্তি সম্বলিত একটি ব্যানার প্রকাশ করে৷ তবে এরপরই ব্যানারে থাকা শিশুর ছবি ও উক্তিটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। পরবর্তীতে গণমাধ্যমটি  নিউজটি সরিয়ে নিয়ে সংশোধনী পূর্বক পুনরায় প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে৷ প্রথম আলোর  প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে। 

সংশোধনীতে গণমাধ্যমটি জানায়, ‘প্রথমে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের শিরোনাম এবং ব্যবহার করা ছবির মধ্যে অসঙ্গতি থাকায় ছবিটি তুলে নেওয়া হয়েছে এবং শিরোনাম সংশোধন করা হয়েছে। শিরোনামে উদ্ধৃত বক্তব্য ছবিতে থাকা সবুজ মিয়ার ছিল না, ছিল দিনমজুর জাকির হোসেনের। একই কারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া পোস্টও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।’

মূলত, গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলো তাদের ফেসবুক পেইজে ‘আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরবর্তীতে প্রতিবেদনটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলে প্রথম আলো প্রতিবেদনটি সরিয়ে নেয় এবং সংশোধনী পূর্বক পুনরায় প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে৷ তবে গত ২৯ মার্চ এই প্রতিবেদনটির প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে নিজ বাসা থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির বিরুদ্ধে। এর মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের নামে ‘এই দায় প্রথম আলোর নয়, এই দায় শামসুজ্জামানের’ শীর্ষক একটি উক্তি ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ এমন কোনো মন্তব্য করেননি।

সুতরাং, স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনের দায় প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের বলে পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের মন্তব্য দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img