Home Blog Page 604

কিশোর রাকিবের প্রতারণার ফাঁদে গণমাধ্যম: বাদ যায়নি জেলা প্রশাসনও

0

গত মার্চের শেষদিকে রিউমর স্ক্যানারের ফেসবুক পেজ এবং গ্রুপে একটি সংবাদ যাচাইয়ের একাধিক অনুরোধ আসে।

সংবাদটি ছিল এরকম, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন হোয়াইট হাউসের উদ্যোগে একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের রংপুরের শাহ মুহাম্মদ রাকিব হাসান নামে এক স্কুল শিক্ষার্থী সেরা বিতার্কিক হয়েছেন। 

কিওয়ার্ড সার্চ করে আমরা দেখতে পাই, এই সংবাদটি দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমে ২৪ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ অবধি প্রকাশিত হয়েছে। 

এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, কালের কণ্ঠ, ভোরের কাগজ, আরটিভি, সমকাল, জনকণ্ঠ, সময় নিউজ, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, জাগো নিউজ, বাহান্ন নিউজ, এবি নিউজ২৪, The Financial Express (opinion), বাংলাদেশ টুডে, দৈনিক শিক্ষা, বি বার্তা২৪, ক্যাম্পাস টাইমস, দৈনিক করতোয়া, রাইজিং বিডি, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, কালবেলা, কালবেলা (২) যুগান্তর, যুগান্তর (২), চ্যানেল২৪, ডেইলি ক্যাম্পাস, ক্যাম্পাস লাইভ২৪।

Screenshot source: Prothom Alo

তাছাড়া একাধিক পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণে উক্ত দাবিতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। দেখুন যুগান্তর, কালবেলা, ভোরের কাগজ, কালের কণ্ঠ, ডেইলি স্টার, জনকণ্ঠ

Screenshot collage: Rumor Scanner 

গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া এবং একাধিক ফ্যাক্টচেক অনুরোধ পাওয়ার প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধান শুরু করে। 

কী পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার?

লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, এই বিষয়টিতে প্রায় সকল গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের ভাষা এবং তথ্যে মিল পেয়েছি আমরা। 

গণমাধ্যমগুলোর দাবি ছিল, হোয়াইট হাউসের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় ‘ফাইন্ডিং ওয়ার্ল্ড ফিউচার লিডার্স’ শিরোনামে আন্তর্জাতিক বিতর্ক প্রতিযোগিতা। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে প্রতিযোগিতাটি শেষ হয় ১৪ মার্চ। বিতর্ক হয় অনলাইনে। অংশ নেয় বিভিন্ন দেশের ৫৩৪ জন বিতার্কিক। হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার হল্যান্ড লোপ মিশিগান এবারের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সেরা বক্তা হয়েছে। আর বাংলাদেশি স্কুলছাত্র রাকিব ৫৩৪ জন প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে সেরা বিতার্কিক হয়েছে। রাকিব টানা ১৪৪টি বিতর্কে অংশ নিয়ে সব কটি জিতেছে। এর মধ্য দিয়ে হোয়াইট হাউসের রেকর্ডবুকে নাম উঠেছে রাকিবের। রাকিবের আগে লুইস অ্যান্ডারসন নামের একজন টানা ১৩৯টি বিতর্কে জিতে রেকর্ড গড়েছিলেন।” 

এই তথ্যগুলোর সূত্র ধরে রিউমর স্ক্যানার টিম দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে গত ০১ এপ্রিল বিষয়টিকে সম্পূর্ণ মিথ্যা জানিয়ে ফ্যাক্টচেক (ইংরেজি সংস্করণ) প্রতিবেদন প্রকাশ করে। 

Screenshot source: Rumor Scanner

রিউমর স্ক্যানার জানায়, হোয়াইট হাউস সম্প্রতি এমন কোনো প্রতিযোগিতার আয়োজন করেনি এবং এ বিষয়ে হোয়াইট হাউস বা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কোনো সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলেনি। হোয়াইট হাউসের ডোমেইনের সাথে মিল রেখে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে ভুয়া প্রতিযোগিতার বিষয়টি ছড়ানো হয়েছে। রাকিব তার ফেসবুক পোস্টে প্রতিযোগিতার লিগ্যাল ডকুমেন্টস দাবিতে যে ছবিগুলো দিয়েছেন তাতে দুইজন মার্কিন কর্মকর্তার জাল স্বাক্ষরের প্রমাণ মিলেছে। তাছাড়া, রাকিব দুইটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে জড়িয়ে ভুয়া খবরের স্ক্রিনশট পোস্ট করেছেন। এমনকি এই কথিত আয়োজনের পুরস্কার বিতরণীর প্রস্তুতি সভার একটি ছবি রয়েছে ভুয়া সাইটটিতে, যেটি মূলত ২০১৮ সালের বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক প্রতিযোগিতার ছবি।

পরবর্তীতে ০২ এপ্রিল প্রথম প্রহরে রিউমর স্ক্যানারের ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে একটি পোস্ট প্রকাশিত হওয়ার পর খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। 

Screenshot source: Facebook

আমাদের প্রভাব

রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন এবং ফেসবুক পোস্টের পর একাধিক গণমাধ্যম এ বিষয়ে তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদন সরিয়ে নেয়। এই তালিকায় আছে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, কালের কণ্ঠ, সময় টিভি, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (৩১ মার্চ সরিয়েছে), জাগো নিউজ, দৈনিক শিক্ষা, চ্যানেল২৪, ডেইলি ক্যাম্পাস। 

জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো তাদের প্রকাশিত আলোচিত প্রতিবেদনটির লিংকটি সরায়নি, তবে খবরটি সরিয়ে শুধু হেডলাইনে লিখেছে, “তথ্যসূত্র নিয়ে প্রশ্ন থাকায় সংবাদটি অপ্রকাশিত রাখা হয়েছে।”

Screenshot source: Prothom Alo 

তবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত কিছু গণমাধ্যমে এখনও উক্ত খবরটি প্রকাশিত অবস্থায় পেয়েছি আমরা। এই তালিকায় আছে ভোরের কাগজ, আরটিভি, জনকণ্ঠ, বাহান্ন নিউজ, এবিনিউজ২৪, The Financial Express (opinion), বাংলাদেশ টুডে, বি বার্তা২৪, দৈনিক করতোয়া, রাইজিং বিডি, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, কালবেলা (প্রিন্ট সংস্করণের ওয়েব লিংক), কালবেলা (২), যুগান্তর (প্রিন্ট সংস্করণের ওয়েব লিংক), যুগান্তর (২), ক্যাম্পাস লাইভ২৪। 

একই প্রতিবেদন এডিট করে ‘খবরটি সঠিক নয়’ বলে জানিয়েছে সমকাল, ক্যাম্পাস টাইমস। 

Screenshot source: Samakal 

রাকিবের লুকোচুরি 

রিউমর স্ক্যানারের ফেসবুক পোস্ট প্রকাশের আধঘন্টার মধ্যেই রাকিব তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভেট করে দেন। পরবর্তীতে সাড়ে চার ঘন্টা পর ০২ এপ্রিল ভোর রাতে অ্যাকাউন্ট পুনরায় চালু করে একটি পোস্ট করেন রাকিব। জানান, তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করলে সকলে চুপ হয়ে যাবেন।

Screenshot source: Facebook

মামলার হুমকি

রিউমর স্ক্যানারের ফেসবুক পোস্টের পর মোহাম্মদ মনির হোসেন নামে এক ব্যক্তি রিউমর স্ক্যানারের ফেসবুক পেজে রিউমর স্ক্যানারের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করবেন বলে হুমকি দেন। 

Screenshot source: Facebook

কিন্তু বর্তমানে আইসিটি আইনটি বিলুপ্ত থাকায় আমরা তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার পরামর্শ দেই।

বোকা বনেছে রংপুর জেলা প্রশাসন

এদিকে ০১ এপ্রিল রাতে রিউমর স্ক্যানার টিম জানতে পারে, হোয়াইট হাউসের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় রাকিবের সাফল্যের জন্য রাকিবের বর্তমান অবস্থানস্থল রংপুরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ০২ এপ্রিল তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এ বিষয়ে জানতে পেরে তৎক্ষণাতই উক্ত জেলার জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবহিত করে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনের লিংক পাঠানো হয়। 

কিন্তু ০২ এপ্রিল সকালে রাকিবকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় এবং এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেজেও পোস্ট প্রকাশ করা হয়৷ কিন্তু পোস্টের কমেন্টে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষিতে পোস্টটি সরিয়ে নেয়া হয়।

Screenshot collage: Rumor Scanner 

একই দিন সংবর্ধনা গ্রহণের পর রাকিব তার সর্বশেষ ফেসবুক পোস্টসহ (ব্যাখ্যা সম্পর্কিত) প্রতিযোগিতা সম্পর্কিত তার দেওয়া একাধিক পোস্ট সরিয়ে ফেলেন। সেদিন রাতের মধ্যে তার শেয়ার করা বিভিন্ন গণমাধ্যমের লিংকও সরিয়ে ফেলেন রাকিব। এখন তার অ্যাকাউন্টে উক্ত প্রতিযোগিতার বিষয়ে কোনো পোস্ট নেই। 

পোস্টগুলো সরিয়ে ফেলার আগে রাকিবের অ্যাকাউন্টের আর্কাইভ লিংক দেখুন এখানে। 
পোস্টগুলো সরিয়ে ফেলার পরে রাকিবের অ্যাকাউন্টের আর্কাইভ লিংক দেখুন এখানে।

কী বলছেন রংপুরের জেলা প্রশাসক?

রাকিবকে সংবর্ধনা দেওয়া এবং সে সম্পর্কিত পোস্ট ফেসবুকে দেওয়ার পর তা মুছে দেওয়ার প্রেক্ষিতে সার্বিক বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানার টিম রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীনের সাথে যোগাযোগ করেছিল। 

তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, “পুরস্কার দেওয়ার আগ পর্যন্ত বিষয়টা সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। বাচ্চাটা মেধাবী হতে পারে, তাকে অন্যান্য কারণে পুরস্কার দেওয়া যেতে পারে কিন্তু এই ব্যাপারে তাকে পুরস্কৃত করার কোনো সুযোগ নেই৷ তারপরও যেহেতু ঘটনা ঘটেছে, আমি তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি।” 

ড. নাজনীন বলছেন, তদন্তকারীদের এ বিষয়ে অতি দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। একই সাথে তদন্ত কাজের জন্য তার চাওয়ার প্রেক্ষিতে তাকে  রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়েছে। 

মার্কিন দূতাবাস কী বলেছে?

হোয়াইট হাউস সম্প্রতি বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে কিনা এবং ওয়ার্ডপ্রেস সাইটটি হোয়াইট হাউসের অন্তর্গত কিনা জানতে চাইলে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের ‘ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র’ ব্রায়ান শিলার রিউমর স্ক্যানারকে গতকাল (০২ এপ্রিল) জানান, “আমি এই ইভেন্ট সম্পর্কে কথিত ঘোষণার সাথে দুটি ওয়েবসাইট লিঙ্ক দেখেছি, তবে, এটি খাঁটি বলে মনে হয়নি। এটি দুটি কারণে সত্য। প্রথমত, হোয়াইট হাউসের কোনো লোগো ছিল না। দ্বিতীয়ত, তারা “.com” ঠিকানা থেকে এসেছে এবং হোয়াইট হাউস একটি “.gov” ঠিকানা ব্যবহার করে: www.whitehouse.gov।” 

অর্থাৎ, মার্কিন দূতাবাসও বিষয়টিকে ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছে। 

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে রিউমর স্ক্যানার

আলোচিত ভুয়া বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিষয়ে গণমাধ্যম তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি এ বিষয়ে নতুন করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে পাঁচটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এই তালিকায় আছে ডেইলি স্টার, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ঢাকা ট্রিবিউন, ক্যাম্পাস টাইমস এবং বাংলা ট্রিবিউন। 

রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনের পর এ বিষয়ে গত ০২ এপ্রিল প্রথম ফলোআপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)। সংবাদমাধ্যমটি এ সংক্রান্ত বেশকিছু তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেছে যার অধিকাংশ রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল। পাশাপাশি টিবিএস মার্কিন দূতাবাস এবং রাকিবের পরিবারের সাথেও এ ব্যাপারে কথা বলেছে। 

Screenshot source: TBS

একইদিন আরেক গণমাধ্যম ‘The Daily Star’ ও একই বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। নিজেদের পূর্বের প্রতিবেদনের ভুল স্বীকার এবং রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনের বিষয়টি উল্লেখ করে পত্রিকাটি রংপুর জেলা প্রশাসনের রাকিবকে দেওয়া সংবর্ধনার প্রসঙ্গটিও এনেছে প্রতিবেদনে। 

Screenshot source: The Daily Star 

আজ ০৩ এপ্রিল একই বিষয়ে ফলোআপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ঢাকা ট্রিবিউন। 

সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, “সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের সত্যতা যাচাইকারী আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক “রিউমার স্কানার” প্রতিবেদেনটির তথ্য যাচাই করে। সংস্থাটি তথ্যে গড়মিল ও এমন প্রতিযোগিতার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি।”

ঢাকা ট্রিবিউন বলছে, “রিউমার স্কানার দেখেছে, জো বাইডেনের ওই দিনের অফিশিয়াল কর্মসূচি শুরু হয়েছিল স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টায়। দিনব্যপী নানান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিকেল ৫টায় বাইডেন হোয়াইট হাউসে ফিরে আসেন। ওই প্রতিযোগিতা নিয়েও তিনি কোনো বিবৃতি দেননি। এছাড়া আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের নামেও ভুয়া প্রতিবেদন তৈরি করে সংবাদটি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোরও সত্যতা পেয়েছে সত্যতা নিশ্চিত করা প্রতিষ্ঠানটি। হোয়াইট হাউসের নামে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।”

Screenshot source: Dhaka Tribune  

আরেক সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউন একইদিন রংপুর জেলা প্রশাসনের রাকিবকে দেওয়া সংবর্ধনার বিষয়টিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, “গণমাধ্যমের খবরের ফ্যাক্ট চেক করা ‘রিউমার স্ক্যানার’র অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, হোয়াইট হাউজ সম্প্রতি এমন কোনও প্রতিযোগিতার আয়োজন করেনি এবং এ বিষয়ে হোয়াইট হাউজ বা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কোনও সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলেনি। হোয়াইট হাউজের ডোমেইনের সঙ্গে মিল রেখে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে ভুয়া প্রতিযোগিতার বিষয়টি ছড়ানো হয়েছে। রাকিব তার ফেসবুক পোস্টে প্রতিযোগিতার লিগ্যাল ডকুমেন্টস হিসেবে যে ছবিগুলো দিয়েছেন তাতে দুজন মার্কিন কর্মকর্তার জাল স্বাক্ষরের প্রমাণ মিলেছে। তাছাড়া সেখানে দুটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে জড়িয়ে ভুয়া খবরের স্ক্রিনশটও দেওয়া হয়েছিল। এমনকি এই কথিত আয়োজনের পুরস্কার বিতরণীর সভার একটি ছবি রয়েছে ভুয়া সাইটটিতে, যেটি মূলত ২০১৮ সালের বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক প্রতিযোগিতার ছবি।”

এই বিষয়ে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সাফিউল আযমের সাক্ষাৎকার নিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। তিনি বলেছেন, “দেশের নামকরা গণমাধ্যমগুলো এত বড় খবর পরিবেশন করার আগে যাচাইবাছাই করলো না? বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে অনায়াসেই খবরটির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব ছিল- তা না করে তারা চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। তবে জনপ্রিয় কয়েকটি অনলাইন পত্রিকাসহ কয়েকটি গণমাধ্যম খবরটির সত্যতা নিশ্চিত না হওয়ায় পরিবেশন করেনি- এ জন্য তাদের ধন্যবাদ প্রাপ্য।”

 Screenshot source: Bangla Tribune

অনলাইন সংবাদমাধ্যম ক্যাম্পাস টাইমস একই বিষয়ে তাদের প্রকাশিত পূর্বের প্রতিবেদনটি সংশোধন করে রিউমর স্ক্যানারকে তথ্যের সূত্র হিসেবে উল্লেখ করে লিখেছে, “গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদটি সঠিক নয় বরং হোয়াইট হাউস সম্প্রতি এমন কোনো প্রতিযোগিতার আয়োজন করেনি। হোয়াইট হাউসের ডোমেইনের সাথে মিল রেখে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে ভুয়া একটি প্রতিযোগিতায় রাকিব সেরা বিতার্কিক হয়েছেন বলে দাবি করেছেন।”

Screenshot source: Campus Times

জাতীয় দৈনিক ‘সমকাল’ও হেঁটেছে একই পথে, পূর্বের প্রতিবেদনটি সংশোধন করেছে। 

রিউমর স্ক্যানারের বরাতে সংশোধিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “হোয়াইট হাউসের নাম ব্যবহার করে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি রাকিবের সাফল্যের যে খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা সঠিক নয়। হোয়াইট হাউস সম্প্রতি এমন কোনো প্রতিযোগিতার আয়োজন করেনি।”

Screenshot source: Samakal

একাত্তর জার্নালে রিউমর স্ক্যানার 

দেশজুড়ে আলোচিত এই বিষয়টিতে আলোচনার জন্য রিউমর স্ক্যানারের সদস্য ফ্যাক্ট চেকার তানভীর মাহতাব আবীরকে আমন্ত্রণ জানায় মূল ধারার গণমাধ্যম একাত্তর টেলিভিশন। সংবাদমাধ্যমটির নিয়মিত আয়োজন ‘একাত্তর জার্নাল‘ অনুষ্ঠানে গতকাল (০২ এপ্রিল) এ বিষয়ে আলোচনা হয়। 

Screenshot source: Ekattor

একই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন রাকিবের দাদা মুস্তাফিজুর রহমান বকুল, বৈশাখী টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক এবং দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক শ্যামল দত্ত। উল্লেখ্য, মুস্তাফিজুর রহমান বকুল ভোরের কাগজ পত্রিকারই দিনাজপুরের পার্বতীপুরের প্রতিনিধি। রাকিবের দাদা দাবি করেছেন, তার নাতি প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন। একইসাথে তিনি গণমাধ্যমকেও দায়ী করেন খবরটি যাচাই করে প্রকাশ না করায়। 

উপস্থাপক মিথিলা ফারজানার এক প্রশ্নের জবাবে শ্যামল দত্ত বলেন, “অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের কোনো ফ্যাক্টচেকিং ব্যবস্থাই নেই। আমরা যখন কোনো আন্তর্জাতিক মিডিয়া বা কোনো একটি সোর্স থেকে খবর আসে আমরা নির্বিবাদে সেটি প্রকাশ করে। এটা আমাদের দুর্বলতা বলুন আর যাই বলুন না কেন আমাদের একটা উইকনেস। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক খবরগুলোর ক্ষেত্রে আমাদের ওরকম কোনো ব্যবস্থাপনাই নেই যে আমরা একটু চেক করে দেখবো খবরটি সঠিক কিনা বা আদৌ এর ভিত্তি আছে কিনা। সেটিরই একটি অত্যন্ত বাজে স্বীকার হয়ে গেছি আমরা। আমাদের আরও সচেতন হবে।” 

অনুষ্ঠানে আরিফ জেবতিক জানান, “১৭ বছরের কিশোর গোটা বাংলাদেশের মিডিয়ার দুর্বলতাকে সবার কাছে তুলে ধরলো।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “আমেরিকার প্রেসিডেন্ট তাকে অ্যাওয়ার্ড দেবে আর দূতাবাস তাকে ভিসা দিচ্ছে না। এটাই দ্বিধার বিষয়।”

শ্যামল দত্ত এই ঘটনায় মিডিয়ার দায়ের প্রশ্নে বলেন, “যখন এই ধরনের খবরগুলো বাংলাদেশে আসে আমরা সেটা আনন্দের সংবাদ হিসেবে নেই। কিন্তু এটা যদি কেই প্রতারণার একটা ব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে আসে তাহলে বিষয়টি দুঃখজনক।”

শ্যামল দত্ত বলছিলেন, “আজ ফ্যাক্টচেকিং দিবস। এই ধরনের বিষয়গুলোর ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের কোনো গণমাধ্যমে নেই। যদি থাকতো তাহলে বাংলাদেশের শীর্ষ গণমাধ্যম বলে যাদেরকে আমরা চিনি… ফ্যাক্টচেকিং কিন্তু অনেক জায়গায় আছে। ইদানিং চালু হয়েছে। খবর পেলেই আপনি ছেপে দেবেন এটা ঠিক না।”

তবে শ্যামল দত্ত যে পত্রিকার সম্পাদক সেই ‘ভোরের কাগজ’ এর ওয়েবসাইটে এখনও তাদের পূর্বের প্রতিবেদনটি প্রকাশিত অবস্থায় রয়েছে। 

অনুষ্ঠানে ফ্যাক্টচেকের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। 

সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন হোয়াইট হাউসের উদ্যোগে একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে এবং উক্ত প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের রংপুরের শাহ মুহাম্মদ রাকিব হাসান নামে এক স্কুল শিক্ষার্থী সেরা বিতার্কিক হয়েছেন দাবির প্রেক্ষিতে বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে সনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার। তারই প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দেওয়া এই বিষয়ের পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে এই ফ্যাক্টস্টোরিতে যেখানে রাকিবের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের প্রতিযোগিতা বিষয়ক সকল পোস্ট সরিয়ে নেওয়া, রংপুরের জেলা প্রশাসন কর্তৃক রাকিবকে সংবর্ধনা দেওয়া, গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলো সরিয়ে নেওয়া এবং ফলোআপ প্রতিবেদন প্রকাশ, রিউমর স্ক্যানারকে মামলার হুমকি দেয়া এবং একাত্তর টেলিভিশনের টকশোতে রিউমর স্ক্যানারের অংশগ্রহণসহ প্রাসঙ্গিক নানা বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।  

তথ্যসূত্র

  • Statement from DC, Rangpur 
  • Rumor Scanner’s own analysis 
  • Shah Muhammad Rakib Hasan: Facebook Account 
  • Statement from Bryan Schiller, ‘Acting U.S. Embassy Spokesperson, The US Embassy in Dhaka

হলুদ রঙের বোয়াল মাছ দাবিতে ওয়েলস ক্যাটফিশের ছবি প্রচার

0

সম্প্রতি “হলুদ রঙের বোয়াল মাছ” দাবিতে একটি মাছের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 
পোস্টগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে,এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত মাছের ছবিটি বোয়াল মাছের নয় বরং ওয়েলস ক্যাটফিশের। ইউরোপের বিভিন্ন নদী এবং লেকে বসবাসকারী এই মাছ দেখতে সবুজাভ ধূসর হলেও লিউসিজম নামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে এদের দেহ হলুদ বর্ণ ধারণ করে। 

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, বিজ্ঞান বিষয়ক আন্তর্জাতিক নিউজ ওয়েবসাইট ‘Live Science’ এ ২০২১ সালের ২০ অক্টোবর ‘‘Extremely rare, bright-yellow catfish caught in the Netherlands’’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে হুবহু একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্টিন গ্ল্যাটজ (Martin Glatz) নামের একজন মৎস্য শিকারি তার যমজ ভাই অলিভারের (Oliver) সাথে নেদারল্যান্ডের একটি হ্রদে উক্ত মাছটি ধরেছিলেন।

তাছাড়া উক্ত প্রতিবেদনে মাছটি সম্পর্কে বলা হয়, এটির নাম ওয়েলস ক্যাটফিশ (বৈজ্ঞানিক নামঃ Silurus glanis), যা ইউরোপের বিভিন্ন লেক ও নদীতে পাওয়া যায়।

Screenshot from Live Science.

ওয়েলস ক্যাটফিশ নিয়ে National Oceanic and Atmospheric Administration (NOAA) তে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ উদ্ধৃত করে লাইভ সায়েন্সের উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশাল আকৃতির ওয়েলস ক্যাটফিশ গুলো লম্বায় সর্বোচ্চ ৯ ফুট (২.৭ মিটার) এবং ওজনে প্রায় ১৩০ কেজির মতো হয়ে থাকে। এদের গায়ের রং বেশিরভাগ গাঢ় সবুজাভ-কালো রঙের হয়ে থাকে যার মধ্যে কিছু হলুদ বিন্দু লক্ষ্য করা যায়।

Screenshot Source: NOAA

লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদনে ওয়েলস ক্যাটফিশের গায়ের রং হলুদ হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে লিউসিজম (Leucism) নামের নামের একটি বিরল জেনেটিক রোগকে দায়ী করা হয়। লিউসিজম এমন একটি অবস্থা যখন কোনো প্রাণীর ত্বক, চুল, পালক অথবা আঁশের মধ্য কোনো নির্দিষ্ট রঙ্গকের (পিগমেন্ট) পরিমাণ কমে যায়। তবে এই রোগের কারণে চোখের স্বাভাবিক রঙের উপর কোনো প্রভাব পড়েনা।

উল্লেখ্য যে, ওয়েলস ক্যাটফিশ ছাড়াও অন্যান্য মাছ, সরীসৃপ, পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে লিউসিজম দেখা দিতে পারে।

ওয়েলস ক্যাটফিশ এবং বোয়ালমাছের পার্থক্য

জীবের শ্রেণীবিন্যাস, বাসস্থান, আকার, আকৃতির দিক থেকে বোয়াল মাছ এবং ওয়েলস ক্যাটফিশের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। 

মৎস বিষয়ক বাংলাদেশী ওয়েবসাইট BdFISH থেকে জানা যায়, আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে যে মাছটি বোয়াল হিসেবে পরিচিত সেটির বৈজ্ঞানিক নাম Wallago attu.

Screenshot from BdFISH
বোয়াল মাছ (Image from Jugantor)

গায়ের রঙের দিক থেকে এই মাছটির উপরের অংশ ধূসর-হলদেটে এবং নিচের অংশ শ্বেতবর্ণের হয়ে থাকে। তবে এই মাছটির পাখনা ধূসর বর্ণের। ১৯৮৯ সালের তথ্য অনুযায়ী এই মাছের সর্বোচ্চ উচ্চতা ১.৮৬ মিটার। বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিন এশিয়ার অন্যান্য দেশেও এ ধরণেরবোয়াল মাছ পাওয়া যায়। 

অপরদিকে, ওয়েলস ক্যাটফিশ ক্যাটফিশ ইউরোপের কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চল, পশ্চিম এশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার নদী ও জলাশয়ে পাওয়া যায়।

Screenshot from invadingspecies

জীবের শ্রেণীবিন্যাদের দিক থেকে বোয়াল এবং ওয়েলস ক্যাটফিশ Siluridae পরিবারের অন্তর্ভূক্ত হলেও এরা ভিন্ন গণের (Genus) প্রাণী। বোয়ালমাছ মূলত Wallago গণের প্রাণী আর ওয়েলস ক্যাটফিশ Silurus গণের অন্তর্ভূক্ত। তাছাড়া আকারের দিকে থেকেও এরা বোয়ালের (হেলিকপ্টার ক্যাটফিশ) থেকে কিছুটা বড়। NOAA এর আর্টিকেল থেকে জানা যায় এই প্রজাতিটির ২.৭৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হওয়ার রেকর্ড রয়েছে।

মূলত, মার্টিন গ্ল্যাটজ নামের একজন মৎস্য শিকারি তার যমজ ভাইকে নিয়ে নেদারল্যান্ডের একটি হ্রদ থেকে ওয়েলস ক্যাটফিশ নামের একটি বিশাল আকৃতির মাছ ধরেছিলেন। উক্ত ক্যাটফিশের গায়ের রং সাধারণত গাঢ় সবুজাভ-কালো রঙের হয়ে থাক। তবে লিউসিজম নামের নামের একটি বিরল জেনেটিক রোগের কারণে এদের দেহ হলুদ বর্ণ ধারণ করে। মার্টিন গ্ল্যাটজের শিকার করা উক্ত মাছের ছবিকেই সম্প্রতি ফেসবুকে ‘হলুদ রঙের বোয়াল মাছ’ দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

সুতরাং, ওয়েলস ক্যাটফিশের ছবিকে হলুদ রঙের বোয়াল মাছ দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসুত্র

সব ধরনের লেবু নয়, শুধু বিশেষ প্রজাতির কলম্বিয়া লেবুর হালি ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে

0

সম্প্রতি, “রাজধানীতে হালি লেবুর দাম ৪০০ টাকা” শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে  ছড়িয়ে পড়েছে।

Screenshot from Facebook

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে
উক্ত পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাজধানী ঢাকার সকল স্থানে এক হালি লেবুর দাম ৪০০ টাকা নয় বরং কিছু গণমাধ্যম কর্তৃক মিরপুর ৬ নম্বর কাঁচাবাজারের একটি দোকানে বিশেষ প্রজাতির লেবু হালি প্রতি ৪০০ টাকায় বিক্রির খবরকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। 

কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, গত ২৭ মার্চ  দৈনিক যুগান্তরের ফেসবুক পেইজে “মূলত খোসা আর ঘ্রাণের জন্য এই লেবুর চাহিদা অনেক বেশি” ক্যাপশনে একটি সংবাদ প্রচারিত হতে দেখা যায়।

Screenshot from Daily Jugantor

পরবর্তীতে, দৈনিক যুগান্তরের বিস্তারিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “রাজধানীর মিরপুরের ৬ নম্বর কাঁচাবাজারের একটি দোকানে আশরাফ নামের এক বিক্রেতা ‘কলম্বিয়া লেবু’ নামের বিশেষ জাতের কিছু লেবু প্রতি হালি ৪০০ টাকায় বিক্রি করেন।” 

দৈনিক যুগান্তরের উক্ত প্রতিবেদনে ব্যবসায়ী আশরাফের বক্তব্য পাওয়া যায়। আশরাফ জানান, বড় সাইজের এই লেবুর নাম কলম্বিয়া লেবু। একেকটা লেবুর ওজনে ৩৫০ থেকে ৪০০ গ্রাম। এই লেবুতে রস কম হলেও ঘ্রান অনেক বেশি। আর লেবুর খোসা অনেক মোটা হওয়ায় এই খোসা সহজে খাওয়া যায়। মূলত খোসা আর ঘ্রাণের জন্য এই লেবুর চাহিদা অনেক বেশি। 

তিনি বলেন, মিরপুরে এই লেবুর ক্রেতা কম। গুলশানের দুইজন ক্রেতা রয়েছেন, যারা এই লেবু কিনতে তার দোকানে আসেন। বর্তমানে বাজারে কলম্বিয়া লেবুর সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। রোজা শুরু হওয়ার  কয়েক দিন আগেও তিনি  এ লেবুর হালি ২০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। 

আশরাফ জানান, সোমবার সকালে তিনি এক পিস লেবু ১০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। কেউ এক হালি নিতে চাইলেও  ফিক্সড ৪০০ টাকাই দিতে হবে।

Screenshot from jugantor

উল্লেখ্য যে, দৈনিক যুগান্তরের ফেসবুক পোস্টের কমেন্টে থাকা সংবাদের লিংকে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ থাকলেও “রাজধানীতে এক হালি লেবুর দাম ৪০০ টাকা!” শীর্ষক ক্লিকবেইট শিরোনাম ব্যবহার করায় মূল নিউজ না পড়ে সমস্ত রাজধানীতেই সব ধরণের লেবু এক হালি ৪০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে ভেবে বিভ্রান্ত ছড়িয়ে পড়ে। আর এই বিভ্রান্তি দৈনিক যুগান্তরের ফেসবুক পোস্টের কমেন্ট সেকশনেও লক্ষ্য করা হয়। 

Image Collage: Rumor Scanner

তাছাড়া, Zoombangla.com নামের একটি অনলাইন পোর্টালের ফেসবুক পেইজেও ক্লিকবেইট শিরোনামে ব্যাবহার করে একই সংবাদ প্রচার করলে উক্ত পোস্টের কমেন্ট সেকশনেও অনেক মানুষকে রাজধানীতে সব ধরণের লেবুর হালি ৪০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে ভেবে বিভ্রান্ত হতে দেখা যায়। 

Image Collage: Rumor Scanner

তাছাড়া বেশ কিছু ফেসবুক আইডি এবং পেজ থেকে কোনোরূপ বিস্তারিত সংবাদ উল্লেখ না করে সরাসরি “রাজধানীতে এক হালি লেবুর দাম ৪০০ টাকা!” ক্যাপশন ব্যবহার করে পোস্ট করা হয়, এর ফলেও মানুষ বিভ্রান্ত হয়।

Image Collage: Rumor Scanner

যেদিন এই বিভ্রান্তির সূত্রপাত ঘটে সেদিন দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেদিন খুচরা বাজারে হালি প্রতি লেবু ২০ থেকে ৪০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। 

Screenshot Source: Prothom Alo

প্রথম আলোর উক্ত প্রতিবেদনে রাজধানীর শেওড়াপাড়া বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. রাসেল এর বক্তব্য পাওয়া যায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, “রোজার শুরুতে লেবুর সরবরাহ কম ছিল। তখন ৫০ থেকে ৬০ টাকা হালি বিক্রি করেছি। এখন সেই একই লেবু ৪০ টাকা হালিতেও অনেকে নিতে চাইছে না।”

মূলত, রাজধানীর মিরপুরের ৬ নম্বর কাঁচাবাজারের একটি দোকানে আশরাফ নামের এক বিক্রেতা কর্তৃক শুধুমাত্র বিশেষ জাতের কলাম্বিয়া লেবুর প্রতি হালি ৪০০ টাকায় বিক্রির ব্যাপারটিকে কিছু গণমাধ্যম এবং ফেসবুক পেইজ থেকে ক্লিকবেইট শিরোনামে প্রচার করায় মানুষ সমস্ত রাজধানীতে সব ধরণের লেবুর হালি ৪০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে ভেবে বিভ্রান্ত হচ্ছে। 

সুতরাং, রাজধানীতে এক হালি লেবুর দাম ৪০০ টাকায় বিক্রি হওয়ার সংবাদটি বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

‘বিএনপির পক্ষে মাঠে সেনাবাহিনী’ শীর্ষক সূত্রবিহীন ক্লিকবেট শিরোনামে ভুয়া খবর প্রচার

সম্প্রতি ‘বিএনপির পক্ষে মাঠে সেনাবাহিনী এবং র‍্যাব প্রধান শেষ‘ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইলে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে
আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশে বিএনপির পক্ষে মাঠে সেনাবাহিনী নামার কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং র‍্যাব প্রধান শেষ হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং ভিডিওটির থাম্বনেইলে বাংলাদেশের পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং সাবেক র‍্যাব প্রধান বেনজির আহমেদের ছবি ব্যবহার করে অধিক ভিউ পাবার আশায় উক্ত ক্যাপশন এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

গত ৩১ মার্চ News Plus নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘বিএনপির পক্ষে মাঠে সেনাবাহিনী, র‍্যাব প্রধান শেষ’ শীর্ষক ক্যাপশন এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়।

Screenshot: Facebook

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এটি কয়েকটি প্রতিবেদন নিয়ে তৈরি একটি নিউজ বুলেটিন। ৮ মিনিট ৩১ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুনেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। আমরা যাচাই করে দেখেছি, ৮ মিনিট ৩১ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মোট ৬টি বিষয়ের ওপর সংবাদ পাঠ করা হয়ঃ

  • গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বিএনপির আন্দোলন, বলছে মির্জা ফখরুল 
  • আমিনুলের অভিযোগঃআওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ওপর চেপে বসেছে
  • রাজনৈতিক সংকট সমাধানে জাতিসংঘের সহায়তা চায় বিএনপি 
  • এবার শেখ হাসিনা সক্রিয় হচ্ছে নির্বাচনী কুটনীতিতে 
  • গণ অধিকার পরিষদের অভিযোগ সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদদের কণ্ঠ রুদ্ধ করা হচ্ছে এবং
  • বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের মধ্যে দূরত্ব 

প্রচারিত নিউজ বুলেটিন ভিডিও’র কোথাও বিএনপির পক্ষে মাঠে সেনাবাহিনী এবং র‍্যাব প্রধানের বিষয়ে কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো সূত্রে এমনকোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া থাম্বনেইলে ব্যবহৃত ছবিটি বর্তমান র‍্যাব প্রধানের নয়। এটি সাবেক র‍্যাব প্রধান বেনজির আহমেদের ছবি। যিনি কয়েক বছর আগেই সংস্থাটির প্রধানের দায়িত্ব থেকে সাবেক হয়েছেন।

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিও’র বিস্তারিত প্রতিবেদন, থাম্বনেইলে ভুল তথ্য উপস্থাপন এবং এবিষয়ে গণমাধ্যমে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়ায় এটা স্পষ্ট যে, বিএনপির পক্ষে মাঠে সেনাবাহিনী এবং র‍্যাব প্রধান শেষ হওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়। 

মূলত, গত ৩১ মার্চ একটি ভূঁইফোড় পেজ থেকে বিএনপির পক্ষে মাঠে সেনাবাহিনী এবং র‍্যাব প্রধান শেষ শীর্ষক চটকদার ক্যাপশন ও থাম্বনেইলে একটি নিউট বুলেটিন ভিডিও প্রচারিত হয়। রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে উক্ত ভিডিওতে বিএনপির পক্ষে সেনাবাহিনীর মাঠে নামা এবং র‍্যাব প্রধান সংক্রান্ত কোনো খবর পাওয়া যায়নি। বর্তমানে র‍্যাবের প্রধান এম খুরশীদ হোসেন হলেও থাম্বনেইলে সাবেক র‍্যাব প্রধান বেনজির আহমেদ এর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে প্রচারিত তথ্যের সাথে ভিডিও প্রতিবেদনের মূল সংবাদের কোথাও উল্লেখ না করে অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় দীর্ঘদিন ধরে একই কাজ করে আসছে উক্ত ফেসবুক পেজটি। এরকম বেশকয়েকটি তথ্যের সত্যতা যাচাই করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এরকম কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে এবং এখানে

সুতরাং, কোনোপ্রকার তথ্যসূত্র ছাড়া একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিওর ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে বিএনপির পক্ষে মাঠে সেনাবাহিনী এবং র‍্যাব প্রধান শেষ বলে দাবি করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

থাম্বনেইলে বাংলাদেশের পুলিশের ছবি ব্যবহার করে বোমা হামলায় ৭ পুলিশ নিহত হওয়ার বিভ্রান্তিকর সংবাদ

0

সম্প্রতি ‘তারাবি শেষেই ভয়াবহ বোমা হামলা ৭ পুলিশ নিহত’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক  যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে
আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে এবং এখানে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশে বাংলাদেশে ভয়াবহ বোমা হামলায় ৭ পুলিশ সদস্য নিহতের ঘটনা ঘটেনি বরং পাকিস্তানে বোমা হামলায় ৪ পুলিশ সদস্য নিহতের ঘটনা ঘটেছে এবং কোন দেশের পুলিশ তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ না করা এবং ভিডিও’র থাম্বনেইলে বাংলাদেশের পুলিশের ছবি ব্যবহার করার কারণে বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। 

গত ৩০ মার্চ News Plus নামের একটি পেজ থেকে ‘তারাবি শেষেই ভয়াবহ বোমা হামলা ৭ পুলিশ নিহত’ শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে বাংলাদেশের পুলিশের ছবি ব্যবহার ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়।

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এটি কয়েকটি প্রতিবেদন নিয়ে তৈরি একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিও। ৮ মিনিট ১২ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে ৭ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডের সময় ভয়াবহ বোমা হামলায় পুলিশ নিহতের ব্যাপারে বলা হয়। এবিষয়ে সংবাদ পাঠ ৭ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড থেকে শুরু হয়ে ৮ মিনিট ১২ সেকেন্ড পর্যন্ত চলে। তবে ভিডিও’র ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে ৭ পুলিশ সদস্যের কথা লেখা হলেও বিস্তারিত প্রতিবেদনে ৪ পুলিশ সদস্য নিহতের কথা বলা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানে বোমা হামলায় নিহত ৪ পুলিশ। পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বুধবার (২৯ মার্চ) রাতে বোমা হামলায় চার পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। রেডিও ফ্রী এশিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। জেলা পুলিশের মুখপাত্র শাহিদ খান জানান, বন্দুকধারীরা ওয়াজিরিস্তান উপজাতীয় অঞ্চলের নিকটবর্তী লাক্কি মারওয়াত জেলার একটি পুলিশ স্টেশনে হামলা চালায়। সিনিয়র অফিসার ইকবাল মোহমান্দের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তাদের সহকর্মীদের সহায়তায় ছুটে যায়।

উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূল ধারার গণমাধ্যম ইত্তেফাকের অনলাইন সংস্করণে ‘পাকিস্তানে বোমা হামলায় নিহত ৪ পুলিশ’ শীর্ষক শিরোনামে গত ৩০ মার্চ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন(আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Ittefaq 

প্রতিবেদনে রেডিও ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম রেডিও ফ্রি এশিয়ার বরাতে জানানো হয়, পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বুধবার (২৯ মার্চ) রাতে বোমা হামলায় চার পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। জেলা পুলিশের মুখপাত্র শাহিদ খান জানান, বন্দুকধারীরা ওয়াজিরিস্তান উপজাতীয় অঞ্চলের নিকটবর্তী লাক্কি মারওয়াত জেলার একটি পুলিশ স্টেশনে হামলা চালায়। সিনিয়র অফিসার ইকবাল মোহমান্দের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তাদের সহকর্মীদের সহায়তায় ছুটে যায়। কিন্তু তাদের গাড়িটি রিমোট নিয়ন্ত্রিত বোমার আঘাতে বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণে মোহমান্দসহ চার পুলিশ কর্মকর্তা নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন।  তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।

পরবর্তীতে Radio Free Europe এ ‘Pakistani Taliban Kills Four Police Officers In Bomb Attack’ শিরোনাম  গত ৩০ মার্চ প্রকাশিত মূল প্রতিবেদনটি(আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: rferl.org

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে ইত্তেফাকের প্রতিবেদনটি দাবিকৃত ভিডিওতে প্রতিবেদনের শেষ পর্যন্ত হুবহু পাঠ করা হয়েছে। তাছাড়া দাবিকৃত ভিডিও’র শিরোনামে বোমা হামলায় ৭ পুলিশ নিহতের কথা লেখা হলেও বিস্তারিত সংবাদ পাঠের সময়ে ইত্তেফাকের প্রতিবেদন অনুযায়ী পাকিস্তানের বোমা হামলায় ৪ পুলিশ সদস্য নিহতের কথা বলা হয়।

Image Collage: Rumor Scanner

পাশাপাশি দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো সূত্রে  ভয়াবহ বোমা হামলায় বাংলাদেশের পুলিশ নিহতের কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিও’র বিস্তারিত প্রতিবেদন এবং এবিষয়ে গণমাধ্যমমের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, পাকিস্থানে বোমা হামলায় বোমা হামলায় ৪ পুলিশ নিহত হওয়ার ঘটনাকে পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করে ভয়াবহ বোমা হামলায় ৭ পুলিশ নিহত হয়েছে দাবি করে থাম্বনেইলে বাংলাদেশ পুলিশের ছবি ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার করা হয়েছে।

মূলত, সম্প্রতি পাকিস্তানে তালেবানের বোমা হামলায় ৪ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে বাংলাদেশে একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিওতে দেশটির নাম উল্লেখ না করে ‘তারাবি শেষেই ভয়াবহ বোমা হামলা ৭ পুলিশ নিহত’ শীর্ষক শিরোনাম এবং ভিডিও’র থাম্বনেইলে বাংলাদেশের পুলিশের ছবি ব্যবহার করার কারণে বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।

উল্লেখ্য, ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে চটকদার শিরোনাম ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এসব ঘটনা নিয়ে পূর্বেও ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, পাকিস্তানে বোমা হামলায় পুলিশ নিহতের ঘটনার সংবাদের ভিডিও’র ক্যাপশনে শুধুমাত্র ”তারাবি শেষেই ভয়াবহ বোমা হামলা ৭ পুলিশ নিহত’ লিখে প্রচার করা হচ্ছে এবং থাম্বনেইলে বাংলাদেশের পুলিশের ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

রমজান উপলক্ষে 50 GB ফ্রি ইন্টারনেট শীর্ষক অফারটি ভুয়া 

0

সম্প্রতি, “রমজান উদযাপনে বিনামূল্যে 50 GB ইন্টারনেট” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়েছে।

Screenshot from What’s App

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায় যে, রমজান উপলক্ষে ৫০ জিবি ফ্রি ইন্টারনেট অফার লিংকটি ভুয়া এবং উক্ত পদ্ধতি ব্যবহার করে ৫০ জিবি ইন্টারনেট পাওয়ার বিষয়টিও মিথ্যা। 

লিংকটিতে ঢুকলে প্রথমেই বিনামূল্যে ইন্টারনেট নেওয়ার জন্য একটি অপশন আসে এবং তারপর মোবাইল নাম্বর দিতে হয়। মোবাইল নম্বর দেওয়ার পর তারা আরও কিছু ধাপ অনুসরণ করার নির্দেশ দেয়। ওই ধাপগুলো অনুসরণ করলে ৫ মিনিটের মধ্যে ৫০ জিবি ফ্রি ইন্টারনেট অফারের কনফার্মেশন মেসেজ পাওয়া যাবে বলে ওয়েবসাইটটি জানান দেয়। 

Screenshot from rh7y4.top

মোবাইল নম্বর দেওয়ার পর ৫০ জিবি ইন্টারনেট ফ্রি পেতে হলে এই লিংকটি হোয়াটস অ্যাপে এবং ফেসবুক মেসেঞ্জারে ১২ জন বন্ধুকে পাঠাতে বলা হয়। 

Screenshot from rh7y4.top

অনুসন্ধানের স্বার্থে রিউমর স্ক্যানার তাদের সকল নির্দেশনা অনুসরণ করেছে। কিন্তু কোনো ধরণের ইন্টারনেট অফার পাওয়া যায়নি। শেয়ারকৃত ১২ জনও সকল নির্দেশনা অনুসরণ করেছে, তবে সেই ১২ জনের কেউই ৫০ জিবির ইন্টারনেটের এই ফ্রি অফারটি পায়নি।

মূলত, ওয়েবসাইটটি নিজেদের প্রচারণার স্বার্থে রমজান উপলক্ষে ৫০ জিবি ইন্টারনেটের প্রলোভন দেখিয়ে এই লিংকটি ছড়াচ্ছে।

উল্লেখ্য, এ ধরণের স্ক্যাম লিংকের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া আইডি হ্যাক, ব্যক্তিগত তথ্য চুরি ও ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে অনলাইন নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করার নজির রয়েছে। 

প্রসঙ্গত, পূর্বেও নববর্ষ উপলক্ষ্যে বিনামূল্যে ৫০ জিবি ইন্টারনেটের অফার, দারাজের নাম ব্যবহারে ৩০ জিবি ফ্রি ইন্টারনেট এবং হোয়াটসঅ্যাপের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ৫০ জিবি ফ্রি ইন্টারনেট শীর্ষক একাধিক মিথ্যা তথ্য শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।

সুতরাং, রমজান উপলক্ষে ৫০ জিবি ফ্রি ইন্টারনেট শীর্ষক ক্যাম্পেইন লিংকটি সম্পূর্ণ ভূয়া এবং উক্ত পদ্ধতি ব্যবহারে ৫০ জিবি ইন্টারনেট পাওয়ার তথ্যটিও মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • রিউমর স্ক্যানার টিমের নিজস্ব অনুসন্ধান 

নওগাঁয় জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় র‍্যাব সদস্যদের ক্লোজড করার সংবাদটি মিথ্যা

0

সম্প্রতি নওগাঁ সদর উপজেলার ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের র‌্যাবের হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় র‌্যাবের ১১ সদস্যকে ‘ক্লোজড’ করা হয়েছে শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন প্রতিবেদন দেখুন-

ডেইলি স্টার, দেশ রূপান্তর, বাংলানিউজ২৪, ভোরের কাগজ, এনটিভি, বিবার্তা২৪, যুগান্তর, ডয়েচে ভেলে বাংলা, দৈনিক পূর্বকোণ, সাম্প্রতিক দেশকাল, বিডি২৪লাইভ, বাংলাদেশ জার্নাল, বাংলাদেশ টুডে, রিদমিক নিউজ, সংবাদ প্রকাশ, প্রতিদিনের সংবাদ, বাংলাদেশ পোস্ট, দৈনিক শিক্ষা, বাংলাদেশ মোমেন্টস, আজ কালের খবর, বিজনেস জার্নাল২৪, বিজনেস পোস্ট

জেসমিন মৃত্যুর ঘটনায় আইনমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে র‍্যাব সদস্যদের ক্লোজড করার দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন বিডিনিউজ২৪, ডেইলি নিউ ন্যাশন, যায়যায়দিন, কুমিল্লার কাগজ, বার্তা বাজার, নিউজজি২৪, বাংলা রিপোর্ট, বায়ান্ন নিউজ, পূর্ব-পশ্চিম বিডি, অবজারভার, আরটিভি, ঢাকা প্রকাশ২৪, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস, সংবাদডটনেট, আমার সংবাদ, ডেল্টা টাইমস, বাংলাদেশ টাইমস, জনকণ্ঠ, আলোকিত বাংলাদেশ, রেডিওটুডে নিউজ, ইত্তেফাক, মানবজমিন

গণমাধ্যমের ফেসবুক পেইজে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন বাংলাদেশ টুডে, জনকণ্ঠ, ডয়েচে ভেলে বাংলা, বিডিনিউজ২৪, সাম্প্রতিক দেশকাল, বায়ান্ন নিউজ, ঢাকা প্রকাশবাংলাদেশ মোমেন্টস, আরটিভি, পূর্বকোণ। অন্যান্য পেইজে এমন পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের র‌্যাবের হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় র‌্যাবের ১১ সদস্যকে ‘ক্লোজড’ করার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে তাদেরকে ক্লোজড বা প্রত্যাহার করা হয়নি বরং এই ঘটনায় তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতার অংশ হিসেবেই ঐ ১১ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাজশাহীতে আনা হয়েছে।

কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে বেসরকারি টিভি চ্যানেল আইয়ের ওয়েবসাইটে গত ৩১ মার্চ ‘সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু : ১১ র‍্যাব সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Channel I

প্রতিবেদনটিতে র‍্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ারকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, জেসমিনকে আটকে অভিযান চালানো র‍্যাব-৫ এর জয়পুরহাট ক্যাম্পের ঐ দলের প্রত্যেককেই জয়পুরহাট থেকে রাজশাহীতে র‌্যাবের ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে নিয়ে আসা হয়েছে। তদন্ত কমিটি এখন রাজশাহীতেই অবস্থান করছে। মূলত তদন্ত কমিটি এই সদস্যদের কাছ থেকে নানা প্রশ্নের উত্তর জানছেন। তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতার অংশ হিসেবেই তাদের রাজশাহীতে আনা হয়েছে। এটি ‘প্রত্যাহার’ কিংবা ‘ক্লোজড’ পর্যায়ের বিষয় নয়।

একই বিষয়ে মূলধারার অনলাইন পোর্টাল Dhaka Times এ ৩০ মার্চ ‘জেসমিনের মৃত্যুতে কর্মকর্তাদের ‘ক্লোজের খবর’ সম্পূর্ণ মিথ্যা: র‌্যাব‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘জেসমিন মৃত্যুর ঘটনায় র‌্যাব সদর দপ্তরের যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তারা বর্তমানে রাজশাহীতে অবস্থান করছেন। র‌্যাব-৫ এর ব্যাটেলিয়ন সদরদপ্তরে তদন্ত দল ওই দিনের অভিযানে অংশ নেওয়া ১১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এখানে ক্লোজের কোনো বিষয় নেই। যাদেরকে ডাকা হয়ে তারা সবাই জয়পুরহাট ক্যাম্পের সদস্য।’

Screenshot: Dhaka Times 

প্রতিবেদনটিতে তাকে উদ্ধৃত করে আরও বলা হয়, তদন্ত শেষে ক্যাম্পের সদস্যরা পুনরায় তাদের কর্মস্থলে যোগদান করবেন। মূলত জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই তাদেরকে ডাকা হয়েছে।

পাশাপাশি জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে গত ৩০ মার্চ ‘হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যু: র‌্যাবের ১১ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদ শেষে র‍্যাবের ১১ সদস্য নওগাঁয় আবার তাঁদের কর্মস্থলে ফিরে যাবেন। জিজ্ঞাসাবাদের তালিকায় একজন মেজর, পুলিশের এএসপিসহ অন্যান্য সদস্য ও গাড়িচালক রয়েছেন।’

Screenshot: Daily Prothom Alo 

আরেকটি জাতীয় দৈনিক কালবেলার ‘জেসমিনের মৃত্যু : জিজ্ঞাসাবাদের মুখে র‍্যাবের সেই ১১ সদস্য‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘নওগাঁয় সুলতানা জেসমিনকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদে জড়িত র‌্যাব সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে বাহিনীটির সদর দপ্তর থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি। গত ২২ মার্চের ওই অভিযানে থাকা র‌্যাব-৫ এর ১১ জনকে জয়পুরহাট ক্যাম্প থেকে র‍্যাব-৫ এর সদর দপ্তরে তলব করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তারা তাদের কর্মস্থলে ফিরে যাবেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে ক্লোজড করা হয়নি।’

Screenshot: Kalbela

পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে আরও নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার টিম র‍্যাব-৫ অপারেশনস কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার সনজয় কুমার সরকারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে। 

এই সময়ে তিনি বলেন, আমি এ ধরনের কোনো চিঠি বা অফিসিয়ালি কোনো আদেশ আমি পাইনি। আমার জানা মতে, ক্লোজের এমন কোনো ঘটনাও ঘটেনি। 

জেসমিন মৃত্যুর ঘটনায় র‍্যাবের সম্পৃক্ততা নিয়ে আইনমন্ত্রী কি বলেছেন? 

জেসমিন মৃত্যুর ঘটনায় আইনমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে র‍্যাব সদস্যদের ক্লোজড করার দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অধিকাংশ গণমাধ্যম এই সংক্রান্ত তথ্যের উৎস হিসেবে বিডিনিউজ২৪ কে ব্যবহার করেছে৷ 

তবে এই ঘটনায় বিডিনিউজ২৪ বাদে অন্য গণমাধ্যমগুলোর সূত্রে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের যেসব বক্তব্য পাওয়া যায়, সেসবে জেসমিন মৃত্যুর ঘটনায় র‍্যাব সদস্যদের ক্লোজড করার বিষয়ে তার কোনো মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে তিনি নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী জেসমিনকে র‍্যাবের হাতে আটক এ মারা যাওয়ার ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।

Screenshot: Prothom Alo 

এই ঘটনায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্য নিয়ে করা প্রতিবেদন দেখুন ‘নওগাঁর ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার হয়েছে: আইনমন্ত্রী (প্রথম আলো), র‍্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যুর পর মামলা আইনের অপব্যবহার: আইনমন্ত্রী (ভিডিও) (আজকের পত্রিকা) , সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নয়, যেটা হচ্ছে তা অন্যায়ের বিরুদ্ধে: আইনমন্ত্রী (বাংলা ট্রিবিউন)

এসব বক্তব্যের কোথাও এই ঘটনায় র‍্যাব সদস্যদের ক্লোজড করার বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কোনো মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। অপরদিকে জার্মান গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলে র‍্যাব সদস্যদের ক্লোজড করার বিষয়ে বিডিনিউজ২৪ এর সূত্রে সংবাদ প্রচার করলেও তাদের প্রতিবেদনেও এই প্রসঙ্গে

Screenshot: DW Bangla

মূলত, গত ২২ মার্চ নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী জেসমিনকে আটক করে র‍্যাব। পরে ২৪ মার্চ সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় তাকে আটকের সাথে জড়িত র‍্যাব সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বাহিনীটির সদর দপ্তর থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি। এই উদ্দেশ্যে ওই অভিযানে থাকা র‌্যাব-৫ এর ১১ জনকে জয়পুরহাট ক্যাম্প থেকে র‍্যাব-৫ এর সদর দপ্তরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়। তলবের এই ঘটনাটিকেই পরবর্তীতে র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈনের উদ্ধৃতিতে আবার কোথাও আঈনমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে র‍্যাব সদস্যদের ক্লোজড করা হয়েছে দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়। 

সুতরাং, নওগাঁর ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের র‌্যাবের হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় র‌্যাবের ১১ সদস্যকে ‘ক্লোজড’ করা হয়েছে দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

হোয়াইট হাউসের নাম ব্যবহার করে ভুয়া বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি রাকিবের সাফল্যের খবর গণমাধ্যমে 

সম্প্রতি, দেশের গণমাধ্যমগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন হোয়াইট হাউসের উদ্যোগে একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। উক্ত প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের রংপুরের শাহ মুহাম্মদ রাকিব হাসান নামে এক স্কুল শিক্ষার্থী সেরা বিতার্কিক হয়েছেন বলেও দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনগুলোতে। 

গণমাধ্যমে যা দাবি করা হয়েছে 

জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো‘ দাবি করেছে, “হোয়াইট হাউসের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় ‘ফাইন্ডিং ওয়ার্ল্ড ফিউচার লিডার্স’ শিরোনামে আন্তর্জাতিক বিতর্ক প্রতিযোগিতা। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে প্রতিযোগিতাটি শেষ হয় ১৪ মার্চ। বিতর্ক হয় অনলাইনে। অংশ নেয় বিভিন্ন দেশের ৫৩৪ জন বিতার্কিক। হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।”

রাকিব
Screenshot source: Prothom Alo 

পত্রিকাটির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ‘ভবিষ্যতের নেতা খুঁজতে’ প্রতিবছর দুটি ক্যাটাগরিতে সংসদীয় বিতর্ক আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। একটি ব্রিটিশ সংসদীয় বিতর্ক, অন্যটি এশিয়ান সংসদীয় বিতর্ক। এবারের আয়োজনে চ্যাম্পিয়ন দেশ রাশিয়া। এর পরের অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাষ্ট্র।

প্রতিবেদনে বলা হয়, “হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার হল্যান্ড লোপ মিশিগান এবারের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সেরা বক্তা হয়েছে। আর বাংলাদেশি স্কুলছাত্র রাকিব ৫৩৪ জন প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে সেরা বিতার্কিক হয়েছে। রাকিব টানা ১৪৪টি বিতর্কে অংশ নিয়ে সব কটি জিতেছে। এর মধ্য দিয়ে হোয়াইট হাউসের রেকর্ডবুকে নাম উঠেছে রাকিবের। রাকিবের আগে লুইস অ্যান্ডারসন নামের একজন টানা ১৩৯টি বিতর্কে জিতে রেকর্ড গড়েছিলেন। ” 

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এর এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশি স্কুলছাত্র শাহ মুহাম্মদ রাকিব হাসানের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। রাকিব সেখানে দাবি করেন, গত ২৮ মার্চ স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮ টায় ওয়াশিংটন হোয়াইট হাউস সাউথ কোর্ট অডিটোরিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেফ জায়েন্টস। ভিসা পাইনি বলে সরাসরি পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারিনি।

Screenshot source: TBS

আবেদন এবং নিবন্ধনে তার কোনো খরচ লাগেনি বলেও প্রতিবেদনে দাবি করেন রাকিব। 

উক্ত দাবিগুলোতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, কালের কণ্ঠ, ভোরের কাগজ, আরটিভি, সমকাল, জনকণ্ঠ, সময় নিউজ, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, জাগো নিউজ, বাহান্ন নিউজ, এবি নিউজ২৪, The Financial Express (opinion), বাংলাদেশ টুডে, দৈনিক শিক্ষা, বি বার্তা২৪, ক্যাম্পাস টাইমস, দৈনিক করতোয়া, রাইজিং বিডি, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, কালবেলা, ভোরের ডাক, কালবেলা (২) যুগান্তর, যুগান্তর (২), চ্যানেল২৪, ডেইলি ক্যাম্পাস, ক্যাম্পাস লাইভ২৪।

Screenshot source: Somoy Tv 

তাছাড়া একাধিক পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণে উক্ত দাবিতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। দেখুন যুগান্তর (২৬ মার্চ), কালবেলা (৩০ মার্চ), ভোরের কাগজ (২৬ মার্চ), কালের কণ্ঠ (৩০ মার্চ), ডেইলি স্টার (২৯ মার্চ), জনকণ্ঠ (২৭ মার্চ)।

Collage: Rumor Scanner
Collage: Rumor Scanner

একই দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে ইউটিউবের কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হোয়াইট হাউসের নাম ব্যবহার করে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি রাকিবের সাফল্যের যে খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা সঠিক নয় বরং হোয়াইট হাউস সম্প্রতি এমন কোনো প্রতিযোগিতার আয়োজন করেনি। হোয়াইট হাউসের ডোমেইনের সাথে মিল রেখে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে ভুয়া একটি প্রতিযোগিতায় রাকিব সেরা বিতার্কিক হয়েছেন বলে দাবি করেছেন। 

প্রতিযোগিতাটির অস্তিত্বই নেই 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে রিউমর স্ক্যানার টিম গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর তথ্য যাচাই করে দেখার চেষ্টা করেছে।  

গণমাধ্যমের তথ্যের সূত্র ধরে প্রতিযোগিতাটির শিরোনামটি (Finding World Future Leaders) কিওয়ার্ড সার্চ করে এই ধরনের কোনো প্রতিযোগিতার অস্তিত্ব ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

প্রতিযোগিতাটি হোয়াইট হাউসের উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছে দাবির প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানার টিম হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে কিওয়ার্ড এবং ম্যানুয়াল সার্চ করে এমন কোনো প্রতিযোগিতার বিষয়ে তথ্য পায়নি। 

বাইডেন ২৮ মার্চ কথিত প্রতিযোগিতাটিতে উপস্থিত ছিলেন?

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের দাবি অনুযায়ী, গত ২৮ মার্চ স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮ টায় ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউস সাউথ কোর্ট অডিটোরিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিযোগিতাটির বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম জো বাইডেনের ২৮ মার্চের পুরো দিনের সিডিউল (,) বিশ্লেষণ করে দেখেছে। উক্ত সিডিউল অনুযায়ী তাঁর দিনের অফিসিয়াল কর্মসূচী শুরু হয়েছিল স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে নয়টায় ডেইলি ব্রিফিং গ্রহণ করার মাধ্যমে। পরবর্তীতে দিনব্যপী নানান কর্মসূচীতে যোগদান শেষে বিকেল পাঁচটায় বাইডেন হোয়াইট হাউসে ফিরে আসেন।

Screenshot source: Factbase

সিডিউলটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেদিন বাইডেনের হোয়াইট হাউস সাউথ কোর্ট অডিটোরিয়ামে কোনো কর্মসূচী ছিল না। তিনি সকাল সাড়ে আটটায় সেখানে উপস্থিত ছিলেন দাবি করা হলেও প্রকৃতপক্ষে তাঁর দিনের কর্মসূচী শুরুই হয়েছিল সকাল সাড়ে নয়টায়।  

বাইডেন অবশ্য পরদিন অর্থাৎ ২৯ মার্চ সাউথ কোর্ট অডিটোরিয়ামে একটি ডেমোক্রেসি সামিটে অংশ নিয়েছিলেন। এই কর্মসূচীর তথ্য তাঁর ২৯ মার্চের সিডিউলে উল্লেখ ছিল। 

Screenshot source: Factbase

বাইডেন এবং হোয়াইট হাউস সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিয়মিতই আপডেট দেওয়া হয় হোয়াইট হাউসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের Briefing Room এবং Press Briefing নামক দুইটি সেকশনে।

প্রতিযোগিতাটির বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়েছে কিনা বা বাইডেন এমন কোনো প্রতিযোগিতায় সম্প্রতি উপস্থিত ছিলেন কিনা সে বিষয়ে জানতে উক্ত দুই সেকশনের গেল এক মাসের (১ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ) বিবৃতিগুলো বিশ্লেষণ করে এ বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি। 

অর্থাৎ, আলোচিত বিতর্ক প্রতিযোগিতাটির বিষয়ে হোয়াইট হাউস বা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কোনো সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলেনি। 

‘সেরা বিতার্কিক’ রাকিবের খোঁজে 

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে রংপুরের স্কুলছাত্র শাহ মুহাম্মদ রাকিব হাসানের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি খুঁজে পাওয়া যায়।  

অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, রাকিব নিয়মিতই তার ‘সাম্প্রতিক সাফল্যের’ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো শেয়ার করছেন। 

Screenshot source: Facebook

লিগ্যাল ডকুমেন্টসে ভুয়া স্বাক্ষর

রাকিব তার অ্যাকাউন্টে গত ২৯ মার্চ প্রকাশিত একটি পোস্টে (আর্কাইভ) আলোচিত প্রতিযোগিতার লিগ্যাল ডকুমেন্টস দাবিতে চারটি ছবি যুক্ত করেন। 

Screenshot source: Facebook

রিউমর স্ক্যানার টিম ছবিগুলো বিশ্লেষণ এবং যাচাই করে দেখেছে। ১ম ছবিতে ‘Whitehouse International Debate Competition 2023’ শিরোনামের একটি সার্টিফিকেট দেখা যায়। যেখানে লেখা রয়েছে, শাহ মুহাম্মদ রাকিব হাসানকে White House International Debate 2023 প্রতিযোগিতায় Debator of the Tournament হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। 

খেয়াল করলে দেখবেন, সার্টিফিকেটের শিরোনামে দেওয়া প্রতিযোগিতার নাম আর মূল লেখায় উল্লিখিত প্রতিযোগিতার নামে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। শিরোনামে Whitehouse শীর্ষক দুইটি শব্দ একসাথে থাকলেও ভেতরের মূল লেখায় আলাদা রয়েছে। শিরোনামে Debate এর পর Competition শব্দটি থাকলেও মূল লেখায় তা নেই। 

তাছাড়া, মূল লেখায় একটি নতুন বিশ্ব রেকর্ড করার বিষয়ে উল্লেখ থাকলেও কী সেই রেকর্ড সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। 

সার্টিফিকেটে মোট তিনটি স্বাক্ষর রয়েছে। প্রথম স্বাক্ষরটি হোয়াইট হাউসের Head Counsel বলে দাবি করা হয়েছে।   

Screenshot collage: Rumor Scanner

কিওয়ার্ড সার্চ করে রিউমর স্ক্যানার টিম দেখেছে, হোয়াইট হাউসের কাউন্সেল হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন স্টুয়ার্ট ডেলেরি (Stuart Delery)। তার স্বাক্ষরের সাথে আলোচিত সার্টিফিকেটের স্বাক্ষরের মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

দ্বিতীয় স্বাক্ষরটি (ডানে উপরে) মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। তার স্বাক্ষরের সাথে অবশ্য আলোচিত সার্টিফিকেটের স্বাক্ষরের মিল রয়েছে। অবশ্য তাঁর স্বাক্ষর কিওয়ার্ড সার্চ করে তার নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টসহ একাধিক ওপেন সোর্সেই (,) পাওয়া যায়। 

Image collage: Rumor Scanner

এই দুইজনের স্বাক্ষর রয়েছে পরের অর্থাৎ দ্বিতীয় ছবিতেও। এই ছবিতে আরেকটি সার্টিফিকেট রয়েছে যেটি রাকিবকে উক্ত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। 

তৃতীয় ছবিতে রাকিবের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার (030829723105), রেজিস্ট্রেশন কোড (AB07) উল্লেখ করে দাবি করা হচ্ছে, তিনি ১৪৪ টি ডিবেট জয় লাভ করায় হোয়াইট হাউসের রেকর্ড বুকে নাম লিখিয়েছেন। ছবিতে আরও লেখা রয়েছে, এই ফলাফল ১৭ মার্চ তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হলেও ব্রিটিশ রুল এবং রেগুলেশনের কারণে এখন সেটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এরপর এই ফলাফল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। অফিসিয়াল কোন ওয়েবসাইটটে ফলাফল প্রকাশ হয়েছিল সে বিষয়ে উল্লেখ নেই ছবিতে। মার্কিন একটি প্রতিযোগিতা ব্রিটিশ নিয়ম মেনে কেন ওয়েবসাইট থেকে ফলাফল সরিয়ে ফেলতে হল সেটিও প্রশ্নের জন্ম দেয়।  

এই ছবির নিচে জেফরি জিয়ান্টস (Jeffrey Zients) নামে এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ রয়েছে যিনি উপরের বিবৃতির বিষয়টি স্বীকৃতি দিয়েছেন। তার একটি স্বাক্ষরও রয়েছে যা অন্য তিন ছবিতেও ছিল। 

অর্থাৎ, চারটি ছবিতে (১ম ও ২য় ছবির তৃতীয় স্বাক্ষর) যে স্বাক্ষর রয়েছে সেটি জেফরি জিয়ান্টস নামে এক ব্যক্তির। তার পদবি উল্লেখ নেই ছবিতে। 

Image collage: Rumor Scanner

রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে, জেফরি জিয়ান্টস হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার স্বাক্ষরের সাথে আলোচিত সার্টিফিকেটের স্বাক্ষরের মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

অর্থাৎ, সার্টিফিকেটসহ রাকিবের পোস্ট করা চারটি ছবিতে যে তিনজনের স্বাক্ষর রয়েছে তাদের মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ব্যতিত বাকি দুইজনের স্বাক্ষর জাল বা ভুয়া। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের যে স্বাক্ষর ছবিতে দেখা যাচ্ছে সেটি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা বলেই প্রতীয়মান হয়। কারণ এই স্বাক্ষরটি বাইডেনের টুইটার অ্যাকাউন্টসহ একাধিক ওপেন সোর্সের ডকুমেন্টে সহজেই পাওয়া যায়। 

Image collage: Rumor Scanner

চতুর্থ ছবিতে রাকিবের উক্ত প্রতিযোগিতার স্ক্রিনশট দেখা যাচ্ছে, যেখানে তার নাম, ঠিকানা, জিমেইল, রেজিষ্ট্রেশন নম্বরসহ আনুষঙ্গিক তথ্যাদি রয়েছে। কার্ডে উল্লেখ রয়েছে, তিনি রেজিষ্ট্রেশন করেন গত ২৫ ফেব্রুয়ারি। 

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে জড়িয়ে ভুয়া খবরের স্ক্রিনশট 

রাকিবের অ্যাকাউন্টে আরো স্ক্রল করে দেখা যায়, গত ২০ মার্চ ‘The Real Goat is Here’ ক্যাপশনে  একটি পোস্টে (আর্কাইভ) দুইটি পত্রিকার ছাপা সংস্করণের খবরের স্ক্রিনশট শেয়ার করেন রাকিব। 

Screenshot source: Facebook

বামদিকের ছবিতে থাকা পত্রিকার নাম পুরোটা দেখা যাচ্ছে না। তবে The New শীর্ষক দুইটি শব্দ দেখা যাচ্ছে। অনুসন্ধানে আমরা দেখেছি, পত্রিকাটির নামের শুরুর দুই শব্দ এবং ফন্ট মার্কিন সংবাদমাধ্যম The New York Times এর সাথে মিল পাওয়া যায়। 

দেখুন ছবিতে – 

Image collage: Rumor Scanner

নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় এ সংক্রান্ত খবরটি ১৯ মার্চ প্রকাশিত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। খবরটির স্ক্রিনশটে এই তারিখটি উল্লেখ দেখা যাচ্ছে।  

এই তথ্যের সূত্র ধরে ১৯ মার্চের নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার সকল পাতা বিশ্লেষণ করে এ সংক্রান্ত কোনো খবর পাওয়া যায়নি। 

রাকিবের পোস্টের ডানদিকের ছবিতে থাকা পত্রিকার নামও পুরোটা দেখা যাচ্ছে না। তবে BBC New এই দুই শব্দ দেখা যাচ্ছে। অনুসন্ধানে আমরা দেখেছি, এই নামে পৃথিবীতে একটি সংবাদমাধ্যমই রয়েছে, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম BBC। কিন্তু সংবাদমাধ্যমটির লোগোর ফন্টের সাথে রাকিবের ছবিতে থাকা bbc news এর ফন্টের মিল নেই।  

দেখুন ছবিতে – 

 Image collage: Rumor Scanner 

তাছাড়া, বিবিসি কোনো দেশেই পত্রিকা প্রকাশ করে না। 

অর্থাৎ, রাকিব যে দুই সংবাদমাধ্যমের খবরের স্ক্রিনশট শেয়ার করেছেন সেগুলো আদতে ভুয়া। 

দুইটি স্ক্রিনশট এডিট করে বানানো এমন সন্দেহ থেকে রিউমর স্ক্যানার টিম সার্চ ইন্জিন গুগলে প্রাসঙ্গিক একাধিক ভিন্ন কিওয়ার্ড সার্চ করার পর fodey নামে একটি ওয়েবসাইটের সন্ধান পায়। 

ওয়েবসাইটটির হোমপেজে একটি পত্রিকার স্ক্রিনশট দেখা যাচ্ছে যার ফরমেট এবং লেখার ধরণের সাথে রাকিব যে দুই সংবাদমাধ্যমের খবরের স্ক্রিনশট শেয়ার করেছেন সেগুলোর মিল পাওয়া যায়। 

Screenshot source: Fodey

এই সাইটটির মাধ্যমে মূলত বিনোদনের উদ্দেশ্যে পত্রিকার নাম, তারিখ, শিরোনাম এবং খবর বসিয়ে স্ক্রিনশট তৈরি করে নেওয়া যায়। 

রিউমর স্ক্যানার টিম বিষয়টি পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে অনুরূপ একটি স্ক্রিনশট তৈরি করেছে। 

দেখুন ছবিতে – 

 Screenshot source: fodey

অর্থাৎ, একইভাবে রাকিবের পোস্টে উল্লিখিত দুইটি সংবাদমাধ্যমের স্ক্রিনশটও তৈরি করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। 

প্রতিযোগিতার বিষয়ে ১৯ মার্চের আগে কোনো পোস্ট দেননি রাকিব

রাকিব আলোচিত এই প্রতিযোগিতার বিষয়ে প্রথম পোস্ট (আর্কাইভ) দেন ১৯ মার্চ। নিজের ছবি এবং সেরা বিতার্কিক শীর্ষক তথ্য সম্বলিত ছবির সাথে পোস্টের ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, “বাংলাদেশের একজন বিতার্কিক হিসেবে একটি আন্তর্জাতিক বড় প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণ করা আমার জন্য দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল। আমি অন্যদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। তারা কেবল দুর্দান্ত ছিল, বিশেষত ফ্রেডরিক উইলিয়ামস! সেসব স্মৃতি আমি কখনো ভুলব না। আমার জন্য প্রার্থনা করবেন। (অনূদিত)”

Screenshot source: Facebook 

গণমাধ্যম ও তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিযোগিতার সময়কাল ছিল ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ মার্চ। ফলাফল প্রকাশ ১৭ মার্চ। এই পুরো সময়টায় রাকিব আলোচিত প্রতিযোগিতার বিষয়ে কোনো পোস্ট করেননি তার অ্যাকাউন্টে। 

ওয়ার্ডপ্রেসে ভুয়া ওয়েবসাইটে তৈরি করে আয়োজনের আপডেট

রাকিবের পোস্টে একটি অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই আমরা হোয়াইট হাউসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে খুঁজে দেখেছি যেখানে এমন কোনো প্রতিযোগিতার উল্লেখ পাওয়া যায়নি। যেহেতু দাবি করা হয়েছে, ওয়েবসাইট থেকে ফলাফল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে সেহেতু রিউমর স্ক্যানার টিম হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটের গেল এক মাসের আর্কাইভ পেজগুলো বিশ্লেষণ করে দেখেছে। কিন্তু আর্কাইভেও এমন কোনো প্রতিযোগিতার তথ্য মেলেনি।  

পরবর্তীতে বিভিন্ন কি ওয়ার্ড এবং প্রাসঙ্গিক ম্যানুয়াল সার্চের মাধ্যমে http://whitehouse.gov.unaux.com (আর্কাইভ) নামে একটি সাইটের খোঁজ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

একইসময়ে রাকিবের সাথে যোগাযোগ করলে তিনিও আমাদের একই ওয়েবসাইটের লিংক পাঠান। 

সাইটটতে প্রবেশের শুরুতেই একটি সতর্কীকরণ বার্তা দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এটি হয়ত একটি ভুয়া সাইট। আক্রমণকারীরা হুবহু একই রকম সাইট তৈরির জন্য url পরিবর্তন করে থাকতে পারে।  

Screenshot source: http://whitehouse.gov.unaux.com

Ignore অপশনটি ক্লিক করে (০১ এপ্রিল) সাইটটিতে প্রবেশ করে দেখা যায়, এটি ওয়ার্ডপ্রেসের মাধ্যমে তৈরিকৃত একটি সাইট। সাইটে দুইটি পোস্ট এবং একটি Sample Page রয়েছে।

Screenshot source: http://whitehouse.gov.unaux.com

১৭ মার্চ করা প্রথম পোস্টের শিরোনাম White House International Debate Competition 2023 Results। অর্থাৎ, আলোচিত প্রতিযোগিতাটির ফলাফল এখনও এই সাইটে রয়েছে। যদিও রাকিবের পোস্টের ছবিতে দাবি করা হয়েছিল, ফলাফলটি সাইট থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।  

পোস্টে গণমাধ্যমে উল্লিখিত তথ্যগুলোই পাওয়া যায়। পোস্টে রাকিব ছাড়াও আরও দুই ব্যক্তির (এর বাইরে আরও দুইজনের নাম ছিল। ২৮ মার্চের ফলাফল বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জো বাইডেন, এবং বিশেষ অতিথি জেফ জিয়ান্টস হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে দাবি করা হয়েছে) নাম উল্লেখ পাওয়া যায়। একজন রাশিয়ার হলান্ড লোপ মিশিগান (Holland Lop Michigan), যিনি ফাইনালের সেরা বক্তা নির্বাচিত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু কিওয়ার্ড সার্চ এমন কোনো ব্যক্তির নাম পাওয়া না গেলেও ফেসবুকে Holland Lop of Michigan নামে একটি প্রাইভেট গ্রুপের সন্ধান পাওয়া যায়। 

অন্য ব্যক্তি লুই আন্ডারসন (Louie Anderson)। এই ব্যক্তির রেকর্ডই রাকিব ভেঙেছেন বলে দাবি করা হয়েছে। এই ব্যক্তির নাম কি ওয়ার্ড সার্চ করে আমরা একই নামে মার্কিন একজন কৌতুক অভিনেতা (যিনি ২০২২ সালে মারা যান) ভিন্ন আর কারো তথ্য খুঁজে পাইনি।

Screenshot source: http://whitehouse.gov.unaux.com

পরবর্তীতে, ২২ মার্চ ‘Preparing for Prize Ceremony’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত দ্বিতীয় পোস্টটির লিংকে প্রবেশ করার পর একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায় যেটি প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণীর জন্য প্রস্তুতিমূলক বিশেষ বোর্ড মিটিংয়ের ছবি বলে দাবি করা হয়েছে

Screenshot source: http://whitehouse.gov.unaux.com

কিন্তু রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায়, ছবিটি ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বরের। যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় University American College Skopje এর সপ্তম বার্ষিক বিতর্ক প্রতিযোগিতার ছবি এটি। 

Image collage: Rumor Scanner 

একই পোস্টে ২৮ মার্চ ৬ টি ক্যাটাগরিতে অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। 

একইসাথে ঐ দিনের বোর্ড মিটিংয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। সিদ্ধান্তগুলো বিশ্লেষণ করে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

১ম সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, ইভেন্টের খবরগুলো অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (হোয়াইট হাউসের অফিসিয়াল সাইট www.whitehouse.gov উল্লেখ) ছাড়া অনলাইনে পাওয়া যাবে না। কিন্তু যেকোনো ওয়েবসাইটে থাকা মানেই সেটি অনলাইনেই থাকা বোঝায়। তাছাড়া এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে কোনো তথ্যই নেই। 

২য় সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, এই ওয়েবসাইটটি সাময়িক সময়ের প্রয়োজনে এই বছরের ইভেন্টের জন্য খোলা হয়েছে। কিন্তু হোয়াইট হাউস কর্তৃক এমন টেম্পোরারি ওয়েবসাইট খোলার নজির নেই যেটি কিনা ওয়ার্ডপ্রেসে তৈরি এবং সাইটে প্রবেশের সময়ই ভুয়ার সম্ভাবনা সংক্রান্ত সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। 

৩য় সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, সাইটটি ২৮ মার্চের পর মুছে দেওয়া হবে। যদিও আজ ০১ এপ্রিল এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত সাইট সক্রিয় রয়েছে। 

৪র্থ সিদ্ধান্তে এসেছে, শুধু প্রতিযোগিতার বিতার্কিকরাই সাউথ কোর্ট অডিটরিয়ামের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবে। কিন্তু অনুসন্ধানে আগেই পেয়েছি, এমন কোনো আয়োজন ২৮ মার্চ সাউথ কোর্ট অডিটরিয়ামেরল হয়নি যেখানে বাইডেন উপস্থিত ছিলেন। 

৫ম এবং সর্বশেষ সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে কেউ কোনো ছবি বা ভিডিও ধারণ করতে পারবেন না। ধারণ করলে বিতার্কিকরা সমস্যায় পড়বেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সচরাচর রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে আয়োজিত কোনো প্রতিযোগিতায় ছবি বা ভিডিও ধারণের এমন কড়াকড়ি নজরে আসে না। 

পোস্টের শেষে একটি ইমেইল দেওয়া হয়েছে যা হোয়াইট হাউস ওয়েবসাইটের ডোমেইন থেকে তৈরি নয় বরং এটি জিমেইল পরিষেবার মাধ্যমে তৈরি।

অর্থাৎ, একটি ওয়ার্ডপ্রেস সাইটে আলোচিত বিতর্ক প্রতিযোগিতার বিষয়ে আপডেট দেওয়া হয়েছে। প্রতিযোগিতার বিস্তারিত বিবরণ বা নিয়মিত কোনো আপডেট ছাড়াই ১৭ মার্চ প্রতিযোগিতার ফলাফল এবং ২২ মার্চ পুরস্কার বিতরণীর প্রস্তুতি বিষয়ক দুইটি পোস্ট রয়েছে সাইটটিতে। পুরস্কার বিতরণীর প্রস্তুতি সভার যে ছবি রয়েছে একটি পোস্টে সেটি মূলত ২০১৮ সালের বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক প্রতিযোগিতার ছবি। তাছাড়া, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ছবি/ভিডিও ধারণ করা যাবে না, অনলাইনে এ বিষয়ে নিউজ পাওয়া যাবে না শীর্ষক নানা সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে যা স্পষ্টই প্রমাণ করে এটি একটি ভুয়া প্রতিযোগিতা। 

মূলত, সম্প্রতি দেশের একাধিক গণমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসের উদ্যোগে আয়োজিত একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় রংপুরের শাহ মুহাম্মদ রাকিব হাসান নামে এক স্কুল শিক্ষার্থী সেরা বিতার্কিক হয়েছেন শীর্ষক দাবির প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, হোয়াইট হাউস সম্প্রতি এমন কোনো প্রতিযোগিতার আয়োজন করেনি এবং এ বিষয়ে হোয়াইট হাউস বা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কোনো সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলেনি। হোয়াইট হাউসের ডোমেইনের সাথে মিল রেখে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে ভুয়া প্রতিযোগিতার বিষয়টি ছড়ানো হয়েছে। রাকিব তার ফেসবুক পোস্টে প্রতিযোগিতার লিগ্যাল ডকুমেন্টস দাবিতে যে ছবিগুলো দিয়েছেন তাতে দুইজন মার্কিন কর্মকর্তার জাল স্বাক্ষরের প্রমাণ মিলেছে। তাছাড়া, রাকিব দুইটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে জড়িয়ে ভুয়া খবরের স্ক্রিনশট পোস্ট করেছেন। এমনকি এই কথিত আয়োজনের পুরস্কার বিতরণীর প্রস্তুতি সভার একটি ছবি রয়েছে ভুয়া সাইটটিতে, যেটি মূলত ২০১৮ সালের বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক প্রতিযোগিতার ছবি।

সুতরাং, হোয়াইট হাউসের নাম ব্যবহার করে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি রাকিবের সাফল্যের যে খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে; তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

ক্রিস গেইল সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেননি 

সম্প্রতি ‘আন্তর্জাতিক সহ সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন দ্যা ইউনিভার্স বস ক্রিস গেইল’ শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

screenshot: Facebook

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ক্রিস গেইল সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সহ সব ধরনের ক্রিকেট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরোপুরি অবসরের ঘোষণা দেননি বরং নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

গুজবটির উৎস কী

সম্প্রতি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল) এর অন্যতম দল রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু কর্তৃক সম্মান স্বরূপ তাদের সাবেক দুই খেলোয়াড় ওয়েস্ট ইন্ডিজ তারকা ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা ব্যাটসম্যান এবিডি ভিলিয়ার্সের জার্সিকে অবসরে পাঠানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এবিষয়ে একাধিক দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। 

গত ১৮ মার্চ সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘ডি ভিলিয়ার্স ও গেইলের জার্সি অবসরে‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

screenshot: Prothom Alo

প্রতিবেদনে বলা হয়, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুতে (আরসিবি) এবি ডি ভিলিয়ার্স ১৭, আর ক্রিস গেইল ৩৩৩ নম্বর জার্সি পরতেন। দুজনের কেউই আর আইপিএলে নেই। আরসিবি কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, টি–টোয়েন্টির দুই মহাতারকাকে সম্মান জানাতে তাঁদের জার্সি নম্বর আর কাউকে দেওয়া হবে না। ডি ভিলিয়ার্স ও গেইলের জার্সিকে অবসরে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে আরো প্রতিবেদন দেখুন দেশীয় সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ২৪, এনটিভি অনলাইন, ঢাকা পোস্ট এবং ভোরের কাগজ এর অনলাইন সংস্করণে।

বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম “Times of India” এর অনলাইন সংস্করণে ‘RCB to retire jersey numbers worn by AB de Villiers, Chris Gayle‘ শীর্ষক শিরোনামে গত ১৮ মার্চ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

screenshot: Times of India

প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে আইপিএল এর টিম রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর টুইটার অ্যাকাউন্টে ১৭ মার্চ প্রকাশিত এক টুইটে  এই দুই তারকা খেলোয়াডের জার্সিকে অবসরে পাঠানোর ঘোষণাটি খুঁজে পাওয়া যায়।

screenshot: Twitter

অর্থাৎ ১৭ মার্চ উক্ত টুইটটি প্রকাশ হওয়ার পরই দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

গেইল কি আসলেই অবসর নিয়েছেন?

অনুসন্ধানে সব ধরণের ক্রিকেট থেকে ক্রিস গেইল এর অবসরের বিষয়ে কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্য গণমাধ্যমে পাওয়া যায়নি। তবে ক্রিস গেইল অবসর নিলে কি করবেন কিংবা সতীর্থদের অবসর বিষয়ে তার মন্তব্য পাওয়া যায় গণমাধ্যমে।

কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে, ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম “Hindustan Times” এর অনলাইন সংস্করণে ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর ‘Chris Gayle makes a three-word statement on retirement plans‘ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

screenshot: Hindustan Times 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউনিভার্স বস’ নামে পরিচিত গেইল এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরের ঘোষণা দেননি এবং সীমিত ওভারের ফরম্যাটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন।  তিনি সর্বশেষ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে পাঞ্জাব কিংসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

অর্থাৎ, উক্ত প্রতিবেদন থেকে এটা বোঝা যায় যে, গেইল এখনো সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেননি।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম India Today এর অনলাইন সংস্করণে ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল প্রকাশিত ‘Can’t believe you retired before me: Chris Gayle reacts to Kieron Pollard retirement‘ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

screenshot: India Today

প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্রিস গেইল সতীর্থ কাইরন পোলার্ডের অবসর নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মজার ছলে বলেছিলেন যে তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে পোলার্ড তার আগে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ক্রিস গেইল আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেননি।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম Zee News এর অনলাইন সংস্করণে  ‘Chris Gayle wants to return to IPL next year, win title for either RCB or PBKS‘ শীর্ষক শিরোনামে গত বছরের ৭ মে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

screenshot: Zee News

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ক্রিস গেইল ২০২২ আইপিএলে অংশ না নিলেও তিনি পরের বছর আসরটিতে ফিরে আসতে চান। যদিও তিনি এখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেননি তবে তার সমসাময়িক পোলার্ড এবং ব্রাভো ইতিমধ্যে অবসরে গেছেন।

কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ক্রিস গেইলের অবসর বিষয়ক তথ্যের ক্ষেত্রে জানা যায়, ৬ নভেম্বর ২০২১-এ, গেইল শেখ জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তার শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিলেন তবে তিনি এখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেননি।  জ্যামাইকায় তার নিজ অঞ্চলের জনতার সামনে তিনি অবসর নিতে চেয়েছিলেন।

অর্থাৎ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ তারকা ক্রিকেটার ক্রিস গেইল সব ধরনের ক্রিকেট থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরের ঘোষণা দেননি।  

মূলত, রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১৭ মার্চ ফ্যাঞ্চাইজিটির সাবেক ক্রিকেটার ক্রিস গেইল এবং এবিডি ভিলিয়ার্সকে সম্মান জানিয়ে তাদের জার্সি অবসরে পাঠানোর ঘোষণা দেয়। এরপরই বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে গেইলের আন্তর্জাতিক এবং সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরের দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ওয়েস্ট ইন্ডিজ তারকা ক্রিকেটার ক্রিস গেইলের অবসরের ঘোষণা দেওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে তিনি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে পুরোপুরি অবসরের ঘোষণা দেননি।

উল্লেখ্য, প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন অনুয়ায়ী ২০২১ সালেও ক্রিস গেইলের এই ফরম্যাটে অবসরের বিষয়টি আলোচনায় আসলে গেইল নিজে তখন সংবাদ সম্মলনে জানান, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে এখনই পুরোপুরি অবসরে যাচ্ছেন না তিনি। নিজেকে নাকি ‘সেমিরিটায়ার্ড’ বলেই ভাবছেন, এ প্রসঙ্গে বলেছেন  “আমি পুরোপুরি অবসরে যাইনি। আমাকে আপনারা সেমিরিটায়ার্ড বলতে পারেন। প্যাভিলিয়নে ফেরার পথে আমি দর্শক ও ভক্তদের সঙ্গে একটু মজা করতে চেয়েছিলাম, তাই ওভাবে ব্যাট উঁচিয়ে ধরা।”

প্রসঙ্গত, ইতোপূর্বে বিনোদন ক্ষেত্রের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বেশকিছু ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “আন্তর্জাতিক এবং সব ধরনের ক্রিকেট থেকে ক্রিস গেইল অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন” শীর্ষক দাবি প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

মোবাইল ফোনের কি কোনো ব্যক্তিগত নাম রয়েছে?

0

সম্প্রতি,‘প্রত্যেকের ব্যাবহৃত মোবাইল ফোনের একটি আলাদা ব্যক্তিগণ নাম রয়েছে’ দাবিতে বেশকিছু পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

উক্ত পোস্টগুলোতে বলা হচ্ছে যে, কেউ যদি তার মোবাইল নম্বরের শেষ তিন ডিজিট (উদাহরণস্বরূপ: ৩৩৩) কে কমেন্ট সেকশনে @[333:0] শীর্ষক ফরমেটে লিখে তাহলে সেখানে যে নামটি চলে আসবে তাই হচ্ছে আপনার মোবাইল ফোনের ব্যক্তিগত নাম। 

Screenshot from Facebook 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। উক্ত পোস্টগুলোর আর্কাইভ এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা খায়, কোনো ব্যক্তির মোবাইল নম্বরের শেষ তিন ডিজিট ফেসবুকে কমেন্ট করলে যদি কোনো নাম আসে তাহলে সেটি ওই ব্যক্তির মোবাইল ফোনের ব্যক্তিগত নাম নয় বরং এটি একজন ফেসবুক ব্যবহারকারীর ইউজার আইডি নাম্বার।

সাধারণত আমরা কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, পেজ কিংবা গ্রুপকে কমেন্টে ম্যানশন করতে চাইলে @ লিখে তারপর ওই গ্রুপ/পেজ/আইডি এর নাম লিখি। যেমন: রিউমর স্ক্যানারের ফেসবুক পেজকে ম্যানশন করতে চাইলেন @Rumor Scanner টাইপ করে কাঙ্ক্ষিত পেজকে ম্যানশন করা হয়।

Screenshot source: Facebook

তবে, এই পদ্ধতিটি ছাড়াও ফেসবুকে কাউকে ম্যানশন করার ক্ষেত্রে অন্য আরেকটি পদ্ধতি রয়েছে আর সেটি হচ্ছে ইউজার আইডি নম্বর দিয়ে ম্যানশন করা (যদিও অনেক মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমে এই পদ্ধতি কাজ করে না)।

প্রতিটি ফেসবুক একাউন্ট, গ্রুপ এবং পেজের একটি ইউনিক ‘User ID Number’ রয়েছে যা অন্য যেকোনো ফেসবুক একাউন্ট, পেজ এবং গ্রুপ হতে সম্পূর্ন আলাদা এবং কোনো ব্যাক্তি চাইলেই সেই ইউজার আইডি নম্বর দিয়ে কাঙ্ক্ষিত ফেসবুক একাউন্ট, গ্রুপ অথবা পেজকে কমেন্ট বক্সে ম্যানশন করতে পারবে। 

উদাহরণস্বরূপ: ফেসবুকের CEO মার্ক জাকারবার্গ এর যে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে সেটির ইউজার আইডি নম্বর হচ্ছে 4। এখন আপনি কমেন্ট সেকশনে @[4:0] লিখে কমেন্ট করেন তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মার্ক জাকারবার্গের নাম প্রদর্শিত হবে। 

আবার, রিউমর স্ক্যানারের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের ইউজার আইডি হচ্ছে ‘100063242680226’। এখন কেউ যদি কমেন্ট সেকশনে @[100063242680226:0] লিখে কমেন্ট করে তাহলে রিউমর স্ক্যানার পেজের নাম প্রদর্শিত হবে। 

Image: Scanner পেজের লিংকে user ID number দেখা যাচ্ছে। 

তবে, অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারীই ইউজার আইডি নম্বর দিয়ে যে কাউকে ম্যানশন করা যায় এই ব্যাপারটি সম্পর্কে অবগত নয়। ফলে, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সময় ব্যাপারটিকে নিয়ে নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হয়েছে। 

যেমন: বেশ কয়েকবছর আগে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভাইরাল হওয়া কিছু পোস্টে দাবি করা হচ্ছিলো, “যদি আপনি কমেন্ট সেকশনে @[4:0] কমেন্ট করার পর মার্ক জাকারবার্গের নাম প্রদর্শিত হতে দেখেন তাহলে বুঝে নিবেন আপনার আইডি হ্যাক হয়নি। আর যদি মার্ক জাকারবার্গের আইডি প্রদর্শিত না হয় তাহলে ধরে নিবেন আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট  হ্যাক হয়েছে।” 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

Screenshot from Facebook 

যেহেতু কিছু মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমে ইউজার আইডি নম্বর ব্যবহার করে  কাউকে ম্যানশন করার পদ্ধতিটি কাজ করেনা তাই অনেকের ক্ষেত্রেই @[4:0] কমেন্ট করার পর মার্ক জাকারবার্গের নাম প্রদর্শিত হচ্ছিল না। এতে করে অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী ধরে নিয়েছিল তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি হ্যাক হয়েছে। 

পরবর্তীতে এই দাবিটিকে Snopes, Africa Check সহ আরো অনেক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান মিথ্যা সাব্যস্ত করে। 

মূলত, সম্প্রতি কিছু ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হয়, কেউ যদি তার মোবাইল নম্বরের শেষ তিন ডিজিট @[333:0] শীর্ষক ফরমেটে লিখে কমেন্ট করে তাহলে সেখানে যে নামটি চলে আসবে তাই হচ্ছে আপনার মোবাইল ফোনের ব্যক্তিগত নাম। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবির সাথে মোবাইলের ব্যক্তিগত নাম থাকার কোনো সম্পর্ক নেই। ফেসবুকের কমেন্ট সেকশনে @[User ID number:0] লিখে কমেন্ট করলে কোনো ব্যক্তির নাম প্রদর্শন করার মানে হচ্ছে সেই ফেসবুক ব্যবহারকারীকে তার ইউজার আইডি নম্বর দিয়ে ম্যানশন করা হয়েছে। 

সুতরাং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের মোবাইল নম্বরের শেষ তিন ডিজিট কে কমেন্ট সেকশনে নির্দিষ্ট ফরম্যাটে লেখার মাধ্যমে মোবাইল ফোনের ব্যক্তিগত নাম প্রদর্শিত হওয়ার দাবিটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র