রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার থিয়াগো সিলভা এবং ডেভিড লুইসের ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি তাদের নয় বরং এটি লিয়ানা কেলভিনা এবং মুরিলো ভিনিসিয়াস নামের ভিন্ন দুই শিশুর ছবি।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালে কনফেডারেশন কাপের ফাইনালে ব্রাজিল ও স্পেন মুখোমুখি হওয়ার আধা ঘণ্টা পূর্বে লিয়ানা কেলভিনা এবং মুরিলো ভিনিসিয়াস নামে দুই শিশুকে গাড়ির উপরে বসিয়ে একটি ছবি তোলা হয়েছিল। পরবর্তীতে তাদের একজন প্রতিবেশী ছবিটি জাতীয় দলের তারকাদের সাথে উক্ত শিশুদ্বয়ের সাদৃশ্য নিয়ে মজা করতে ফেসবুকে পোস্ট করলে সেটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
এছাড়া প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ডেভিড লুইজ এবং থিয়াগো সিলভার সাথে সাদৃশ্যের জন্য ভাইরাল হওয়া ঐ শিশু দুইটির সাথে ডেভিড লুইজ এবং থিয়াগো সিলভার মেক্সিকোর সাথে ব্রাজিলের একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচ খেলার সময় দেখাও হয়েছিল।
এই প্রতিবেদনের সূত্রে ডেভিড লুইসের ভেরিফায়েড ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে লিয়ানা কেলভিনা এবং মুরিলো ভিনিসিয়াসের সাথে একইদিনে প্রকাশিত তাদের একটি ভিডিও পোস্টও খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টটি দেখুন এখানে।
Screenshot: David Luiz Instagram Post
এছাড়া ফুটবল ভিত্তিক ওয়েবসাইট মার্কাতে ২০১৫ সালেই ‘David Luiz and Thiago Silva meet their mini-mes‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও জানা যায়, এই শিশু দুইটির সাথে লুইস বা সিলভার দৈহিক সাদৃশ্য ছাড়া আর কোনো সম্পর্ক নেই।
মূলত, ২০১৩ সালে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত কনফেডারেশন কাপের ফাইনালে ব্রাজিল এবং স্পেনের মধ্যকার ম্যাচ শুরুর পূর্বে ব্রাজিলিয়ান তারকা ডেভিড লুইজ এবং থিয়াগো সিলভার চেহারার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ লিয়ানা কেলভিনা এবং মুরিলো ভিনিসিয়াস নামের দুইটি ব্রাজিলিয়ান শিশুর একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে, এই ছবিটিই ডেভিড লুইজ এবং থিয়াগো সিলভার শৈশবের ছবি দাবিতে ব্যাপকভাবে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে এবং দীর্ঘদিন ধরেই উক্ত দাবিতে প্রচার হয়ে আসছে।
সুতরাং, ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার ডেভিড লুইজ এবং থিয়াগো সিলভার শৈশবের ছবি দাবিতে ইন্টারনেটে একটি ছবি প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোড়ার পিঠে চড়ার ছবি দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।
সম্প্রতি ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে ২০১৬ সালে প্রচারিত একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে ২০১৭ সালে প্রচারিত একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে ২০১৯ সালে প্রচারিত একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, তারেক রহমানের ঘোড়ার পিঠে চড়ার এই ছবিটি আসল নয় বরং ইন্টারনেট থেকে বলিউড তারকা সালমান খানের ঘোড়ার পিঠে চড়ার একটি ছবি সংগ্রহ করে তা এডিটের মাধ্যমে সেখানে সালমান খানের মাথা কেটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মাথা বসিয়ে উক্ত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Dabang Salman Khan Pictures নামের একটি ব্লগ সাইটে ২০১২ সালের ১৪ মার্চ ‘Salman Khan with Cap’শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটো অ্যালবামে সালমান খানের কয়েকটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি ছবির সাথে আলোচিত ছবিটির মিল পাওয়া যায়।
তারেক রহমানের ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটির সাথে এই ছবিটিতে প্রদর্শিত ঘোড়া, পোশাক, হাত, ব্যাকগ্রাউন্ড সহ সবকিছুর হুবহু মিল পাওয়া যায়।
Image Comparison by Rumor Scanner
পরবর্তীতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে India Forums নামের একটি ওয়েবসাইটে বলিউড তারকা সালমান খানের একই পোশাক এবং ব্যাকগ্রাউন্ডের আরও একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot : India Forums
জানা যায়, এই ছবিটি বলিউড তারকা সালমান খানের Veer মুভি প্রোমোশন ইভেন্টের সময়ে তোলা হয়েছিল।
অর্থাৎ, তারেক রহমান ঘোড়ার পিঠে চড়ার ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি আসল নয়।
মূলত, বলিউড তারকা সামলান খানের Veer মুভির প্রোমোশন ইভেন্টে ঘোড়ার পিঠে চড়ার একটি ছবি তোলা হয়েছিল। তবে সালমান খানের সেই ছবিটি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট করে সেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মুখমণ্ডলের ছবি বসিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ছবি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট করে প্রচার করা হলে সেসময় সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোড়ার পিঠে চড়ার ছবি দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত এই ছবিটি এডিটেড বা বিকৃত।
সম্প্রতি, একটি কোলাজ ছবি যুক্ত করে “ISRO কে যখন টাকার অভাবে রকেট সাইকেলে আনতে হচ্ছিলো, তখন সরকার দেশের প্লেনে রাহুল গান্ধির জন্মদিন পালনে ব্যস্ত ছিল” শীর্ষক দাবিতে ফেসবুকে একটি তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) সাইকেলে করে রকেট আনার সময়ে প্লেনে রাহুল গান্ধির জন্মদিন পালনের দাবিটি সত্য নয় বরং উক্ত দাবিতে প্রচারিত কোলাজ ছবিতে থাকা দুইটি দৃশ্য ভিন্ন ঘটনার।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ১৯৬৩ সালের ২১ নভেম্বর প্রথম সাউন্ডিং রকেট থুম্বার লঞ্চ ফ্যাসিলিটিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো। সে সময় রকেটটিকে উৎক্ষেপণস্থলে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনো বড় যানবাহন ছিল না। তাই রকেট বহনের জন্য প্রথমে গরুর গাড়িতে করে এবং পরে সাইকেল ব্যবহার করে নিয়ে যাওয়া হয়।
অধিকতর অনুসন্ধানে ভারতীয় সরকারি সংবাদ মাধ্যম ‘Prasar Bharati’ এর এক্স অ্যাকাউন্টে (সাবেক টুইটার) ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি টুইটে উক্ত ছবিটি পাওয়া যায়।
Screenshot from ‘X’
উক্ত টুইটে থেকেও আলোচিত ছবির বিষয়ে একই তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ১৯৭৭ সালে ইন্দিরা গান্ধী তার মা সোনিয়া গান্ধী এবং বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সাথে একটি বিমানে রাহুলের জন্মদিন উদযাপন করেছিলেন।
অর্থাৎ, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবি দুটির প্রথমটি ১৯৬৩ সালের এবং দ্বিতীয়টি ১৯৭৭ সালের। পাশাপাশি ছবি দুটির প্রেক্ষাপটের ঘটনাও আলাদা।
মূলত, ১৯৬৩ সালের ২১ নভেম্বরে ভারতের তৈরি প্রথম সাউন্ডিং রকেটটি কোনো ধরনের বড় যানবাহন না থাকায় প্রথমে গরুর গাড়িতে এবং পরে বাইসাইকেলে করে উৎক্ষেপণস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়। অপরদিকে ১৯৭৭ সালে একটি বিমানে ইন্দিরা গান্ধী, তার মা সোনিয়া গান্ধী এবং বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সাথে রাহুল গান্ধীর জন্মদিন পালন করেন। সম্প্রতি, ঐ দুইটি ভিন্ন ঘটনার দুইটি ছবি কোলাজ করে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) টাকার অভাবে যখন রকেট সাইকেলে এনেছিল তখন ভারত সরকার দেশের প্লেনে রাহুল গান্ধির জন্মদিন পালনে ব্যস্ত থাকার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ আগস্ট চাঁদের বুকে ভারতের মহাকাশযান চন্দ্রযান-৩ সফলভাবে অবতরণ করেছে।
প্রসঙ্গত, পূর্বে চন্দ্রযান-৩ এর মিশন ডিরেক্টর ঋতু করিধাল দাবিতে ইন্টারনেটে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ইসরো যখন টাকার অভাবে রকেট সাইকেলে এনেছিল, তখন ভারত সরকার দেশের প্লেনে রাহুল গান্ধির জন্মদিন পালন করছিল দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি বেইজিং-এর ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের দৃশ্যের নয় বরং যুক্তরাষ্ট্রের টেলিযোগাযোগ কোম্পানি AT&T এর নেটওয়ার্ক সেন্টারের ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ইউটিউবে AT&T নামক একটি চ্যানেলে ২০১৪ সালে AT&T Global Network Operations Center | AT&T শিরোনামে একটি ভিডিওর দৃশ্যের সাথে আলোচিত দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ছবিটির দৃশ্যমান মিল পরিলক্ষিত হয়।
Image Comparison by Rumor Scanner
AT&T এর ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত ইন্টারনেটের বিভিন্ন সেবা প্রদান করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের সান অ্যান্তনিওতে। ছবিটিও প্রতিষ্ঠানটির গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অপারেশনস সেন্টারের।
পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটির ২০০৫ সালের একটি বার্ষিক প্রতিবেদনে একই সেন্টারের আরেকটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison by Rumor Scanner
মূলত, সম্প্রতি চীনের বেইজিং-এর ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের দৃশ্য দাবিতে একটি ছবি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিটির সাথে বেইজিং-এর ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে, যুক্তরাষ্ট্রের টেলিযোগাযোগ কোম্পানি AT&T এর একটি নেটওয়ার্ক সেন্টারের ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, চীনের বেইজিং-এর ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের দৃশ্য দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি টেলিযোগাযোগ কোম্পানির নেটওয়ার্ক সেন্টারের ছবি প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের বরাতে ‘জাপান হলো এমন একটি দেশ যেখানে আপনি অতিরিক্ত মোটা হলে ট্যাক্স গুনতে হবে।’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
ইউটিউবে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন ভিডিও (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নিউইয়র্ক টাইমসের বরাতে জাপানে অতিরিক্ত মোটা হলে ট্যাক্স দিতে হয় দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে জাপানে এমন কোনো আইন নেই এবং নিউইয়র্ক টাইমসেও এমন কোনো প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি।
অনুসন্ধানের শুরুতেই রিউমর স্ক্যানার টিম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলোর সূত্রে নিউইয়র্ক টাইমসে এমন কোনো প্রতিবেদন আছে কি না তা যাচাই করে।
প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে এতে জাপানে অতিরিক্ত মোটা হওয়ার জন্য ট্যাক্স প্রদানের বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বরং প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, জাপানে স্থূলতা দূরীকরণের লক্ষ্যে প্রণীত একটি আইনের অধীনে দেশটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সরকারকে প্রতি বছর বাৎসরিক চেকআপের অংশ হিসেবে ৪০ থেকে ৭৪ বয়সী জাপানিজ নাগরিকদের কোমরের মাপ নিতে হবে। তবে উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো যদি তাদের আওতায় থাকা নাগরিকদের অতিরিক্ত ওজন কমানোর ব্যাপারে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়, তাহলে জাপান সরকার সেসব প্রতিষ্ঠান বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক জরিমানা করবে।
Screenshot: New York Times
নিউইয়র্ক টাইমসের এই প্রতিবেদন বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয় যে, গণমাধ্যমটিতে জাপানে অতিরিক্ত মোটা হলে ট্যাক্স দিতে হয় এমন কোনো তথ্যের উল্লেখ ছিল না। বরং বিষয়টি ছিল জাপানি নাগরিকদের অতিরিক্ত ওজন কমানোর ব্যাপারে সেখানকার প্রতিষ্ঠানগুলো লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হলে তাদেরকে জরিমানা করা হবে।
জাপানের আইনটি দেখে নেওয়া যাক
অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান Snopes এ ২০১৫ সালের পহেলা জানুয়ারি ‘Is It Illegal to be Fat in Japan?‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২০০৮ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে দেশটি অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা কমাতে ‘মেটাবো আইন’ নামে একটি আইন পাশ করে। এই আইন অনুযায়ী, দেশটিতে একটি নির্দিষ্ট বয়সী নাগরিকদের বছরে একবার তাদের কোমরের পরিমাপ করতে হবে এবং সম্ভাব্য চিকিৎসা সেবা নিতে হবে। তবে আইনটিতে স্থূলকায় বা অতিরিক্ত ওজনকে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। অর্থাৎ স্থূলকায় বা অতিরিক্ত ওজনের জন্য জাপানি নাগরিকদের জরিমানা বা কারাগারে পাঠানোর দাবিটি মিথ্যা।
Screenshot: Snopes
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয়, নিউইয়র্ক টাইমসে জাপানে অতিরিক্ত মোটা হলে ট্যাক্স দিতে হয় এমন কোনো তথ্যের উল্লেখ ছিল না। পাশাপাশি দেশটিতেও অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলকায় হওয়া কোনো অপরাধ নয়।
মূলত, ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে জাপান অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা কমাতে ‘মেটাবো আইন’ নামে একটি আইন পাশ করে। এই আইনে দেশটির নাগরিকদের কোমরের একটি নির্দিষ্ট মাপ ঠিক করে দেওয়া হয় এবং ৪০-৭৪ বয়সী নাগরিকদের বছরে একবার কোমর মাপা এবং সে অনুযায়ী সম্ভাব্য চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এছাড়া অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা কমাতে দেশটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সরকারকে একটি লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। যদি এই প্রতিষ্ঠানগুলো সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়, তবে তাদেরকে জরিমানা করার বিধানও রাখা হয়। উক্ত বিষয়গুলো নিয়ে একই বছর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস। অনুসন্ধানে দেখা যায়, নিউ ইয়র্ক টাইমসে উল্লিখিত এই তথ্যগুলোই বিকৃত হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘জাপানে অতিরিক্ত মোটা হলে ট্যাক্স দিতে হয়’ শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, জাপানে অতিরিক্ত মোটা হলে ট্যাক্স দিতে হয় দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের বরাতে “যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন করাতে ব্যর্থ হলে দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে ভারতের মতো সাম্প্রদায়িক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে” শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়,নিউইয়র্ক টাইমসে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন করাতে ব্যর্থ হলে দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়া ও বাংলাদেশে ভারতের মতো সাম্প্রদায়িক সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি। প্রকৃতপক্ষে পত্রিকাটির বরাতে ভিত্তিহীনভাবে উক্ত তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে।
এই প্রতিবেদনের পর গণমাধ্যমটিতে বাংলাদেশ নিয়ে আর কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া এর পূর্বেও গণমাধ্যমটিতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এমন কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া এটি অনুমেয় যে, নিউইয়র্ক টাইমসের মতো একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশ, ভারত ও দক্ষিণ এশিয়াকে জড়িয়ে এমন কোনো প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বাংলাদেশি বা ভারতীয় গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হতো।
এসব বিশ্লেষণ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, নিউইয়র্ক টাইমসে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতকে জড়িয়ে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি।
মূলত, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের বরাতে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি তথ্য প্রচার করে দাবি করা হয় যে, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন করাতে ব্যর্থ হলে দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে ভারতের মতো সাম্প্রদায়িক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।’ তবে এ নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, নিউইয়র্ক টাইমসে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এমন কোনো প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি। গণমাধ্যমটিতে বাংলাদেশ নিয়ে সবশেষ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে গত ১৭ আগস্ট, যেটি ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার চুরি নিয়ে নির্মিত একটি ডকুমেন্টারির পর্যালোচনা।
উল্লেখ্য, পূর্বেও গণমাধ্যম সূত্রে ভুয়া তথ্য প্রচার নিয়ে এবং একই অ্যাকাউন্ট থেকে ছড়ানো গুজব নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের আঁকা ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি তাঁর নয় বরং নিপুন দেব নাথ নামের ভিন্ন একজন ব্যক্তি ২০১৫ সালে এই ছবিটি এঁকেছিলেন।
সত্যজিৎ রায়ের আঁকা এমন কোনো ছবি আছে?
ছবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম প্রথমেই সত্যজিৎ রায়ের আঁকা এমন কোনো ছবি আছে কি না তা যাচাই করে। এ নিয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ‘সত্যজিৎ রায় সম্পাদিত সেরা সন্দেশ ১৩৬৮-১৩৮৭‘ নামের একটি বই খুঁজে পাওয়া যায়। বইটিতে সত্যজিৎ রায়ের আঁকা অনেকগুলো ছবি খুঁজে পাওয়া গেলেও আলোচিত ছবিটির ন্যায় এমন কোনো ছবি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও ‘Dhulokhela’ নামের একটি ব্লগ ওয়েবসাইটেও সন্দেশ পত্রিকার কিছু পুরোনো সংখ্যার সন্ধান পাওয়া যায়। যেখানে সত্যজিৎ রায়ের আঁকা কিছু চিত্রকর্ম রয়েছে। তবে এখানেও সত্যজিৎ রায়ের আঁকা দাবিতে প্রচারিত আলোচিত ছবিটির ন্যায় এমন কোনো চিত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Image collected from Dhulokhela blog website
এ পর্যন্ত সত্যজিৎ রায়ের বিভিন্ন কাজ সম্পর্কে অনুসন্ধান করে আলোচিত ছবিটির ন্যায় সত্যজিৎ রায়ের কোনো ছবি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ১৯১৩ সালে উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর হাত ধরে মাসিক ‘সন্দেশ’ পত্রিকার যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৬১ সালে সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে পত্রিকাটি নতুনভাবে পথচলা শুরু করে।
ছবিটি আসলে কার?
ছবিটির মূল স্রষ্টা সম্পর্কে অনুসন্ধানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘Nipun Deb Nath’ নামক এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ‘গ্রাম বাংলা’ (আর্কাইভ) শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
এই ছবিটির সাথে সত্যজিৎ রায়ের আঁকা ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison by Rumor Scanner
একই অ্যকাউন্টে গত ৩১ আগস্ট আরও একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত পোস্টে (আর্কাইভ) নিপুন দেব নাথ লিখেন, কয়দিন পর পরই এই ছবিটা “সত্যজিৎ রায়ের আঁকা” বলে বিভিন্ন জায়গায় শেয়ার হয়। আমি ফেসবুকে খুব একটা আসি না বলে অনেকসময় টের পাই না। টের পেলেও সব জায়গায় গিয়ে গিয়ে প্রতিবাদ করতে পারি না। আমার হয়ে অনেকেই প্রতিবাদ করেন, সত্যটাকে তুলে ধরেন। তাদের কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ!
হ্যাঁ, ছবিটা আমার আঁকা। এখানে আমার স্বাক্ষর নেই। মনের ভুলে স্বাক্ষর না দিয়েই এইটা “চিত্রলেখা” এলবামে শেয়ার করি। প্রথম প্রথম এইটা নিয়ে একটা অনুশোচনা ছিল। কিন্তু এখন নেই। আমার মূল লক্ষ্য ছিল অন্যরকম কিছু একটা করার এবং বাংলা শব্দগুলো যে ছবির মত সুন্দর তা তুলে ধরার। আমার “চিত্রলেখা” এলবামে এই ধাঁচের আরও কিছু কাজ পাবেন। আমি মনে করি যে আমার কাজের ধরণগুলোর মধ্যেই আমার স্বাক্ষর লুকিয়ে আছে।’
পরবর্তী অনুসন্ধানে নিপুন দেব নাথের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বিশ্লেষণ করে তার আঁকা একই ধরনের আরও বেশ কিছু ছবিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Collage by Rumor Scanner
মূলত, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের আঁকা ছবি দাবিতে একটি লেখাচিত্র প্রচার করা হচ্ছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত ছবিটি সত্যজিৎ রায়ের আঁকা নয়। এছাড়া রিউমর স্ক্যানার টিমের বিস্তারিত অনুসন্ধানেও সত্যজিৎ রায়ের এমন কোনো ছবির সন্ধান পাওয়া যায়নি। বরং অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত ছবিটি এঁকেছেন নিপুন দেব নাথ নামক একজন ব্যক্তি। তিনি ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আলোচিত ছবিটি প্রকাশ করেছিলেন।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও এক ব্যক্তির আঁকা ছবিকে ভিন্ন আরেক ব্যক্তির আঁকা ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হলে তা নিয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এমন একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন দেখুন পুরান ঢাকার প্রেক্ষাপটে আঁকা ছবিটি ঢাবি শিক্ষক কামালুদ্দিনের আঁকা নয়।
সুতরাং, নিপুণ দেবনাথ নামের এক ব্যক্তির আঁকা ছবিকে চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের আঁকা ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, “মুজিব আমার চেতনা, মুজিব আমার বিশ্বাস। কে বলে রে মুজিব নাই, মুজিব সারা বাংলায়” শীর্ষক স্লোগান যুক্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, “মুজিব আমার চেতনা, মুজিব আমার বিশ্বাস। কে বলে রে মুজিব নাই, মুজিব সারা বাংলায়।” শীর্ষক স্লোগান যুক্ত এই ভিডিওটি আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে, ইরাকের সামাওয়া শহরে অনুষ্ঠিত মহররমের শোক মিছিলের একটি ভিডিওতে ছাত্রলীগের স্লোগান যুক্ত করে উক্ত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটির কিছু স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে matozargo22 নামক একটি টিকটক অ্যাকাউন্টে ‘mubarak manzoor jan’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শেখ মুজিবের নামে স্লোগান সম্বলিত আলোচিত ভিডিওটির সাথে এই ভিডিওর হুবহু মিল রয়েছে। তবে ভিডিওটিতে কোথাও আলোচিত ভিডিওটির স্লোগান শুনতে পাওয়া যায়নি। বরং ভিন্ন একটি ভাষার স্লোগান শুনতে পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে, প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে Shia Kahani شیعہ کہانی নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট Hilla, Iraq Main Juloos e Aza Ka Manzar!! শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত আরেকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
উক্ত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ক্যাপশনে ভিডিওটিকে ইরাকের ভিডিও বলে দাবি করা হয়েছে এবং আলোচিত ভিডিওটির সাথে এই ভিডিওটির মিল রয়েছে। তবে দুইটি ভিডিও একই স্থানের হলেও ভিডিও দুইটি ভিন্নকোণ থেকে ধারণ করা। আলোচিত ভিডিওতে দেখতে পাওয়া বিল্ডিংটিকে উক্ত ভিডিওটিতেও দেখা যাচ্ছে কিন্তু এখানে বিল্ডিংটিকে কিছুটা দূরে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটি ইরাকের কিনা তা নিশ্চিত হতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ প্রক্রিয়ায় অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে ازهر নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৭ আগস্টرفعت راس اهل السماوه موكب الاحزان শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: YouTube
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর হুবহু মিল রয়েছে। এছাড়া, ভিডিওটির ১৯ সেকেন্ড থেকে পরবর্তী সময় পর্যন্ত ‘ইয়া আব্বাস, ইয়া আব্বাস’ স্লোগান দিতে শোনা যায়।
পরবর্তীতে, ভিডিওটির শিরোনাম ইংরেজিতে অনুবাদ করে You raised the head of the people of Samawa procession of sorrows পাওয়া যায়। অর্থাৎ, ‘ইয়া আব্বাস, ইয়া আব্বাস’ বলে স্লোগান দেওয়া শোকের মিছিলের ভিডিওটি ইরাকের Samawah শহরের। যা কারবালা থেকে ২৪০ কিলোমিটার দূরে এবং ইউফ্রেটিস নদীর তীরে অবস্থিত।
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওর স্লোগানের সাথে উক্ত ভিডিওর শুরু থেকে ১৪ সেকেন্ড পর্যন্ত স্লোগানের হুবহু মিল রয়েছে।
অর্থাৎ, ইরাকের মহররমের ভিডিওর সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রলীগের স্লোগান ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
মূলত, ইরাকের সামাওয়া শহরে অনুষ্ঠিত মহররমের শোক মিছিলের একটি ভিডিও দীর্ঘদিন ধরে ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে। সম্প্রতি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে মহররমের সেই শোক মিছিলের ভিডিওতে থাকা ‘ইয়া আব্বাস, ইয়া আব্বাস’ শীর্ষক স্লোগান কাট করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রলীগের দেওয়া “মুজিব আমার চেতনা, মুজিব আমার বিশ্বাস। কে বলে রে মুজিব নাই, মুজিব সারা বাংলায়।” শীর্ষক স্লোগান যুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক কর্মসূচির ভিডিওতে ভিন্ন ঘটনার অডিও এডিট করে প্রচারের বিষয়ে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, “মুজিব আমার চেতনা, মুজিব আমার বিশ্বাস। কে বলে রে মুজিব নাই, মুজিব সারা বাংলায়” শীর্ষক স্লোগানযুক্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত এই ভিডিওটি বিকৃত বা এডিটেড।
সম্প্রতি,‘আওয়ামী লীগ সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ডেডলাইন জানিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনো মন্তব্য করেনি বরং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো অবস্থান নেই বলে জানিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। গত ১৯ আগস্ট shershanews24.com নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়।
এতে দাবি করা হয়-
‘আওয়ামী লীগ সরকারকে নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ডেডলাইন জানিয়ে দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে গত দুই টার্মে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হওয়া এবং এবারও সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়ার আশঙ্কা থেকে এবাবের নির্বাচন সুষ্ঠু করতে একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে এর জন্য যা যা করা দরকার যুক্তরাষ্ট্র তা অবশ্যই করবে। যত কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তা তারা নেবে।’
ভিডিওটিতে যুক্তরাষ্ট্র ১৫ সেপ্টেম্বরের পর চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেবে বলেও জানানো হয়। তবে সেখানে এসব তথ্যের সূত্র হিসেবে নির্দিষ্ট কোনো সোর্স উল্লেখ না করে সংশ্লিষ্ট কুটনৈতিক সূত্রের কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া উক্ত ভিডিওতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটাস হাসের সাথে আওয়ালীগ সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের দুইটি বৈঠকের কথা উল্লেখ করা হয়। একটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সাথে। অন্যটি প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম ভয়েস অফ আমেরিকার বাংলা সংস্করণে গত ০৩ আগস্ট ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো অবস্থান নেই—আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর বললেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৩ অগাস্ট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। তবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে। যার মাধ্যমেই বাংলাদেশের জনগণ তাদের পরবর্তী সরকার নির্বাচন করবে।
এছাড়া, মূলধারার গণমাধ্যম বিডিনিউজ ২৪ এর ওয়েবসাইটে গত ০৩ আগস্ট ‘নির্বাচন কীভাবে সেটা রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয়: পিটার হাস’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে নির্বাচন দলীয় সরকার না তত্ত্বাবধায়কের অধীনে হবে, প্রধান দুই দলের এই বিরোধের জায়গায় নিজেকে জড়াতে রাজি নন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছেন, “এটা রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয়। আমাদের আগ্রহ শুধু সহিংসতামুক্ত, অবাধ, সুষ্ঠু, নির্বাচন।”
মতবিনিময় শেষে পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেন, “আওয়ামী লীগের সঙ্গে এ বৈঠক, বাংলাদেশে সব দলের সঙ্গে যে সিরিজ বৈঠক করেছি তারই অংশ। আমি অন্য রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ, পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় করেছি, এটা আমি করেছি আমেরিকান রাষ্ট্রদূত হিসেবে। “প্রতিটি মিটিংয়ে আমি একই বার্তার পুনরাবৃত্তি করেছি। এটা আমেরিকার পলিসি- আমরা অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সমর্থন করি। কারো দ্বারা কোনো সহিংসতা চাই না।”
তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, অবাধ-সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে প্রত্যেকের ভূমিকা পালন করার আছে। সরকারের ভূমিকা আছে, গণমাধ্যমে ভূমিকা আছে, বিচার বিভাগ, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, নিরাপত্তা বাহিনী; অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রত্যেকেরই ভূমিকা পালন করার আছে।
“আমি আবারও বলছি, যুক্তরাষ্ট্র কোনো নির্দিষ্ট দলছীলকে সমর্থন করে না। আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করি, যে পদ্ধতিতে বাংলাদেশের জনগণ তাদের পরবর্তী সরকার বেছে নেবে।”
পরবর্তীতে সালমান এফ রহমানের সাথে বৈঠকের বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার সংবাদমাধ্যম মানবজমিন এর ওয়েবসাইটে গত ১০ আগস্ট ‘সালমান এফ রহমানের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ০৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। ৯ আগস্ট সালমান এফ রহমানের বাসায় যান পিটার হাস। প্রায় দুই ঘণ্টা তিনি সেখানে অবস্থান করেন। তবে বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা জানা যায়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া উক্ত বৈঠকের বিষয়ে দেশীয় মূলধারার অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন বাংলা ট্রিবিউন, যুগান্তর, ঢাকা পোস্ট।
এছাড়াও, গত ২০ আগস্ট মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম একাত্তর টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ‘যুক্তরাষ্ট্র, ভারত বা ইইউ কেউই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কথা বলেনি’ শীর্ষক শিরোনামে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য নিয়ে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
সেখানে ওবায়দুল কাদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন কেউই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্বাচন কমিশন নিয়ে কথা বলেনি।
পাশাপাশি ‘আওয়ামী লীগ সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ডেডলাইন জানিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র’ শীর্ষক দাবিতে ভিডিওটি প্রচারের আগেপরে বা সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিনিধির এমন কোনো মন্তব্য গণমাধ্যম বা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো সূত্রে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কোনো ডেডলাইন দেয়নি।
মূলত, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে আলোচিত বিষয়টির কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিনিধি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণের বিষয়ে কোনো মন্তব্যও করেনি।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ মে এক টুইট বার্তায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেন। টুইট বার্তায় বলা হয়, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন নীতির আওতায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।
Today, I announced a new visa policy to promote free and fair elections. Under this policy, we can impose visa restrictions on individuals and their immediate family members if they are responsible for, or complicit in, undermining the democratic election process in Bangladesh.
— Secretary Antony Blinken (@SecBlinken) May 24, 2023
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে বাংলাদেশে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে। পরবর্তীতে এই ব্যবস্থা আর পূর্ণবহাল করা হয়নি।
সুতরাং, বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সরকারকে ডেডলাইন দিয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ড. ইউনূসের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এখন অবধি কোনো চিঠি দেয়নি তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রকৃতপক্ষে তুরস্কের একটি এনজিওর প্রতিষ্ঠাতা ড. আজিজ আকগুল ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে চলা বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছেন।
এ নিয়ে অনুসন্ধানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ Muhammad Yunus এ গত ৩১ আগস্ট ‘Letter from Turkey to Professor Muhammad Yunus’ শীর্ষক শিরোনামে আলোচিত চিঠিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Muhammad Yunus Facebook Post
চিঠিটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চিঠিটি লিখেছেন তুরস্কের ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির সদস্য এবং Türkiye Grameen Mikrofinans Programi নামের একটি এনজিওর প্রতিষ্ঠাতা ড. আজিজ আকগুল। তিনি চিঠিটি লিখেছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানকে উদ্দেশ্য করে।
এই চিঠিটিতে ড. আজিজ আকগুল তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানকে উদ্দেশ্য করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে লিখেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকার মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও বাংলাদেশের আইন লঙ্ঘন করে শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অন্যায় ও ভিত্তিহীন তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।’
পাশাপাশি চিঠিটিতে ড. আজিজ আকগুল তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অবগতির জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নোবেল বিজয়ী সাবেক রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামাসহ ১০৩ জন নোবেল বিজয়ী ও ৭০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির স্বাক্ষরিত একটি বলে বিবৃতিও যুক্ত করে দেন। এছাড়া চিঠির শেষ অংশে তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সমর্থনের বিষয়েও অনুরোধ করেন।
ড. ইউনূসকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে তুরস্কের চিঠি দাবিতে প্রচারিত উক্ত চিঠিটি নিয়ে সার্বিক বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয় যে, এই চিঠিটি তুরস্ক থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাঠানো হয়নি। প্রকৃতপক্ষে চিঠিটি তুরস্কের একটি এনজিওর প্রতিষ্ঠাতা ড. আজিজ আকগুল ড. ইউনূসের ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর পাঠিয়েছেন।
মূলত, গত ২৯ আগস্ট তুরস্কের ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির সদস্য এবং Türkiye Grameen Mikrofinans Programi নামের একটি এনজিওর প্রতিষ্ঠাতা ড. আজিজ আকগুল একই এনজিও’র আরেক প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের চলমান বিচার কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত করে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর একটি চিঠি লিখেন, যা গত ৩১ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকেও প্রচার করা হয়। তবে পরবর্তীতে এই চিঠিটিকেই দেশীয় কতিপয় গণমাধ্যমে ড. ইউনূসকে নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে তুরস্কের চিঠি দাবিতে প্রচার করা হয়।