Home Blog Page 603

সাকিবের সেঞ্চুরি না করতে পারা নিয়ে ব্যারিস্টার সুমনের নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার

0

সম্প্রতি ব্যারিস্টার সুমন “সাকিব আল হাসান সেঞ্চুরি করতে পারে নাই সেটা সাকিব আল হাসানের ব্যর্থতা না, এটা আমার বদ-দোয়া” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি তথ্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

Screenshot from Crowdtangle.  

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, “সাকিব আল হাসান সেঞ্চুরি করতে পারে নাই সেটা সাকিব আল হাসানের ব্যর্থতা না, এটা আমার বদ দোয়া” শীর্ষক মন্তব্য ব্যারিস্টার সুমন করেননি বরং তার নাম ব্যবহার করে ভুয়া মন্তব্যটি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

যেভাবে গুজবের সূত্রপাত

গত ১৬ই মার্চ ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমনের ফেসবুক পেজ থেকে ‘সাকিব আল হাসান একজন সেলিব্রেটি হওয়ায় তার অপরাধের কি বিচার হবে না?’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও (আর্কাইভ) আপলোড করা হয়। উক্ত ভিডিওতে ব্যারিস্টার সুমন দাবি করেন, “সম্প্রতি সোনারগাঁ হোটেলে সাকিব আল হাসানের সাথে তার দেখা হলে সাকিব তাকে সর্বসম্মুখে মারতে আসেন।”

Screenshot from Facebook.

পরবর্তীতে, গত ১৮ই মার্চ আয়ারল্যান্ড বনাম বাংলাদেশের ওয়ানডে ম্যাচে সাকিব আল হাসান দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলে ৯৩ রান করলেও সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৭ রান দূরে আউট হয়ে যান।

একই দিন রাত ১০টা ২৮ মিনিটে সর্বপ্রথম ‘Stage Of Sports’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ব্যারিস্টার সুমন “সাকিব আল হাসান সেঞ্চুরি করতে পারে নাই সেটা সাকিব আল হাসানের ব্যর্থতা না, এটা আমার বদ-দোয়া” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ডিজিটাল ব্যানার প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে, উক্ত ডিজিটাল ব্যানার এবং ব্যানারে থাকা বক্তব্যটি ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

Screenshot Source: Facebook.

ব্যারিস্টার সুমনের ফেসবুক অ্যাকাউন্টপেজের সাম্প্রতিক কার্যক্রম পর্যালোচনা করে “সাকিব আল হাসান সেঞ্চুরি করতে পারে নাই সেটা সাকিব আল হাসানের ব্যর্থতা না, এটা আমার বদদোয়া” শীর্ষক মন্তব্যের কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজে অনুসন্ধান চালিয়ে গত ১৬ই মার্চে প্রকাশিত ভিডিওর পর সাকিব আল হাসান ইস্যুতে তার আর কোনো বক্তব্য খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম।

এছাড়া, কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে দেশীয় প্রায় সকল মূলধারার গণমাধ্যমেই সাকিবকে নিয়ে ব্যারিস্টার সুমনের ১৬ই মার্চে প্রকাশিত ভিডিও সম্পর্কে প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। তবে সাকিবের সেঞ্চুরি করতে না পারা নিয়ে ব্যারিস্টার সুমনের আলোচিত মন্তব্যটি বিশ্বস্ত একটি সূত্রেও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া, উক্ত দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত সর্বপ্রথম পোস্টের ডিজিটাল ব্যানার লক্ষ্য করলে দেখা যায় ডিজিটাল ব্যানারটি খেলাধুলা বিষয়ক ওয়েবসাইট প্যাভিলিয়নের ব্যানার থিমের সাথে হুবহু মিলে যায়। তবে প্যাভিলিয়নের ওয়েবসাইটফেসবুক পেজে অনুসন্ধান চালিয়েও এমন কোনো ডিজিটাল ব্যানার খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম।

Source: Pavilion 

তবে, প্যাভিলিয়নের ফেসবুক পেজ থেকে প্রাপ্ত একই ডিজাইনের ভিন্ন একটি ব্যানারের সাথে আলোচ্য ব্যানারের তুলনামূলক পর্যালোচনা করে ব্যানারে ব্যবহৃত ফন্টের ভিন্নতা খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার। পরবর্তীতে, এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে প্যাভিলিয়নের সম্পাদক অম্লান মোসতাকিম হোসেন রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেন, আলোচ্য ব্যানারটি প্যাভিলিয়নের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়নি। যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে  ছড়িয়ে পড়া ব্যারিস্টার সুমনের উক্তি সম্বলিত ডিজিটাল ব্যানারটি ভুয়া।

Image Comparison: Rumor Scanner.

উক্ত বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিত করতে ব্যারিস্টার সুমনের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এ মন্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “না, এ ধরনের কোন বক্তব্য আমি কখনোই কোথাও দেই নি।” 

মূলত, গত ১৬ই মার্চ ‘সাকিব আমাকে মারতে এসেছিল’ দাবি করে ব্যারিস্টার সুমনের ফেসবুক পেজ থেকে একটি ভিডিও আপলোড করা হয়। এর দুইদিন পর ১৮ই মার্চ আয়ারল্যান্ড বনাম বাংলাদেশের ওয়ানডে ম্যাচে সাকিব সেঞ্চুরি থেকে সাত রান দূরে ৯৩ রানে আউট হয়ে যান।  সাকিবকে নিয়ে ব্যারিস্টার সুমনের উক্ত ভিডিও এবং সাকিবের ৭ রানের জন্য সেঞ্চুরি না করতে পারার জের ধরেই ব্যারিস্টার সুমন সাকিবকে নিয়ে “সাকিব আল হাসান সেঞ্চুরি করতে পারে নাই সেটা সাকিব আল হাসানের ব্যর্থতা না, এটা আমার বদদোয়া” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্যারিস্টার সুমন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে নিয়ে এরূপ কোনো মন্তব্য করেননি। খেলাধুলা বিষয়ক ওয়েবসাইট প্যাভিলিয়নের ডিজিটাল ব্যানারের ডিজাইন নকল করে ব্যারিস্টার সুমন এরূপ মন্তব্য করেছেন দাবি করে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। তাছাড়া, ব্যারিস্টার সুমনও রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেন তিনি এমন কোনো মন্তব্য করেননি।

সুতরাং, ব্যারিস্টার সুমন “সাকিব আল হাসান সেঞ্চুরি করতে পারে নাই সেটা সাকিব আল হাসানের ব্যর্থতা না, এটা আমার বদদোয়া” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র 

ডেথ সার্টিফিকেট সহ নম্বরপত্রটি বাংলাদেশের কোনো স্কুলের নয় 

0

সম্প্রতি “স্কুল পরীক্ষার মার্কশীটে ডেথ সার্টিফিকেইটও দিয়ে দেওয়া হয় আমার দেশে” শীর্ষক শিরোনামে একটি নম্বরপত্রের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

Screenshot from ‘Facebook’ 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘She has passed away’ লেখা সম্বলিত স্কুল পরীক্ষার নম্বরপত্রটি বাংলাদেশের কোনো স্কুলের নয় বরং এটি পূর্ব আফ্রিকার মালাউই দেশের একটি সেকেন্ডারি স্কুলের নম্বরপত্রের ছবি। 

Screenshot from ‘Facebook’

আলোচিত নম্বরপত্রে থাকা সাবজেক্ট গুলো বিশ্লেষণ করে ‘CHICHEWA’ নামের বিষয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। ন্যাশনাল আফ্রিকান ল্যাঙ্গুয়েজ রিসোর্স সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, পূর্ব আফ্রিকার দেশ মালাউই’তে এই ‘CHICHEWA’ ভাষা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। 

Source: ন্যাশনাল আফ্রিকান ল্যাঙ্গুয়েজ রিসোর্স সেন্টার

পরবর্তীতে মালাউই দেশের শিক্ষাগত পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহের তালিকা অনুসন্ধান করতে গিয়ে, জার্মানি ভিত্তিক বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের তথ্য সংক্রান্ত ওয়েবসাইট ‘RocApply’ এর একটি নিবন্ধে মালাউই এর সেকান্ডারি স্কুলের পাঠ্যক্রম খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও ফেসবুকে প্রচারিত ‘She has passed away’ শীর্ষক লেখা সম্বলিত স্কুল পরীক্ষার নম্বরপত্রের ছবি পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, আলোচিত নম্বরপত্রটি পূর্ব আফ্রিকার দেশ মালাউই এর একটি সেকেন্ডারি স্কুলের নম্বরপত্র।

Screenshot from RocApply 

নম্বরপত্রের ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমগুলো কি বলছে?

রিভার্স ইমেজে সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ‘নিউজ ২৪’ এর ওয়েবসাইটে “African English teacher gives hilarious remark on student’s marksheet; SEE PIC” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নম্বরপত্রের হুবহু একই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ‘নিউজ ২৪’ এর  প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করেও দেখা যায়, আলোচ্য নম্বরপত্রটি পূর্ব আফ্রিকার একটি স্কুলের নম্বরপত্র, বাংলাদেশের নয়। 

Source: News 24

পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে,  ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘Times of India’ এর ওয়েবসাইটে ২৭ মার্চ তারিখে ““She has passed away”: Teacher’s remark on student’s report card strikes a nostalgic chord for many” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot from ‘Times of India’ website

‘Times of India’ এর প্রতিবেদনটিতেও একটি টুইটার একাউন্টে প্রচারিত টুইটের ভিত্তিতে আলোচিত নম্বরপত্রটিকে দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার মালাউই দেশের একটি স্কুলের নম্বরপত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 

মূলত, পূর্ব আফ্রিকার দেশ মালাউই এর একটি সেকেন্ডারি স্কুলে ‘She has passed away’ শীর্ষক লেখা সম্বলিত নম্বরপত্রটি কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রমাণ ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে বাংলাদেশের একটি স্কুলের নম্বরপত্র দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

অর্থাৎ, ‘She has passed away’ লেখা সম্বলিত নম্বরপত্রটি বাংলাদেশের স্কুলের নম্বরপত্র দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় হিন্দু দেবতা ‘রাম’ এর প্রদর্শিত ছবিটি এডিটেড

0

সম্প্রতি, “দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় হিন্দু দেবতা ‘রাম’ এর ছবি প্রদর্শিত হয়েছে” শীর্ষক দাবিতে ছবিসহ একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে ছড়িয়ে পড়েছে।

Screenshot from Twitter

টুইটারে প্রচারিত পোস্ট গুলো দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে
টুইটারে প্রচারিত পোস্ট গুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন, এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় হিন্দু দেবতা ‘রাম’ এর ছবি প্রদর্শিত হওয়ার ঘটনাটি সত্য নয় বরং প্রযুক্তিগত উপায় ব্যবহার করে হিন্দু দেবতা ‘রাম’ এর ছবি দুবাইয়ের বুর্জ খলিফার ছবির সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫ সালে স্টক ছবির সাইট ‘Istockphoto.com’ -এ “Night view of Burj Khalifa tower in Dubai stock photo” শীর্ষক শিরোনামে একটি ছবি পাওয়া যায় যা আলোচিত দাবি ও সংযুক্ত   ছবির সাথে হুবহু মিলে যায়। 

Screenshot from istockphoto.com

দাবির সাথে প্রচারিত ছবি ও স্টক ফটো’র সাইটে পাওয়া ছবির মিল দেখুন নিচেঃ

Collage by RSB

পাশাপাশি, গত ১ এপ্রিল ২০২৩ এ ভারতের প্রপাগান্ডা এবং ভুয়া খবর শনাক্তকারী প্রতিষ্ঠান ‘D-Intent Data’ তাদের টুইটার অ্যাকাউন্টে একটি টুইট  করে। সেই টুইটে তারা জানায় দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় হিন্দু দেবতা ‘রাম’ এর যে ছবিটি প্রদর্শিত হচ্ছে সেটি আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে যা মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

Screenshot from Twitter

এছাড়াও, অনুসন্ধানে ইন্টারনেটে কোনো গ্রহণযোগ্য সূএ এবং ভারতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।

মূলত, গত ৩০ মার্চ ২০২৩ এ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘রাম নবমি’ কে কেন্দ্র করে প্রযুক্তির সহায়তায় দুবাইয়ের বিখ্যাত বুর্জ খলিফার ছবির সাথে হিন্দু ধর্মের দেবতা রাম এর ছবি যুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রচার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন দিবস বা উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দেশের পতাকা বা তারকার ছবি বুর্জ খলিফায় প্রদর্শিত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়।

প্রসঙ্গত, ইতোপূর্বেও বুর্জ খলিফা থেকে ধারণকৃত হারিকেনের দৃশ্য শীর্ষক মিথ্যা তথ্য শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় হিন্দু দেবতা রাম’ দাবিতে প্রচারিত ছবিটি এডিটেড।

তথ্যসূত্র

হিরো আলমের নামে ফেসবুকে ভুয়া বক্তব্য প্রচার

0

সম্প্রতি, “রুচির দুর্ভিক্ষ তো সেদিনই শুরু হয়েছে যেদিন ৮ম শ্রেণী পাশ মহিলা প্রধানমন্ত্রী হয়েছে।” শীর্ষক একটি বক্তব্য অভিনেতা হিরো আলমের নামে প্রচারিত হয়েছে।

Screenshot from Facebook

ফেসবুকে প্রচারিত এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং, এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানেএখানে এবং, এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রুচির দুর্ভিক্ষ নিয়ে ফেসবুকে প্রচারিত এই বক্তব্যটি হিরো আলম দেননি বরং কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই উক্ত মন্তব্যকে হিরো আলমের বক্তব্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে, কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, গণমাধ্যম, অভিনেতা হিরো আলমের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ এবং তার ইউটিউব অ্যাকাউন্টে উক্ত দাবিতে সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Screenshot from Facebook.

উক্ত দাবিতে ইন্টারনেটে কোনো তথ্য না পাওয়ায় পরবর্তীতে বিষয়টির অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে অভিনেতা হিরো আলমের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।

হিরো আলম রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “না, না, এ ধরনের কোনো মন্তব্য কেন, আমি কারো বিরুদ্ধে রুচি নিয়ে কোনো মন্তব্যই করিনি, মানুষ আমার রুচি নিয়ে কথা-বার্তা বলছে। আমি নাকি রুচি নষ্ট করছি। এই বক্তব্য আমি দেইনি। এটা গুজব। গুজব ছড়ানো হচ্ছে।”

অর্থাৎ, রুচির দুর্ভিক্ষ নিয়ে আলোচিত এই মন্তব্যটি হিরো আলম করেননি। 

মূলত, “রুচির দুর্ভিক্ষ তো সেদিনই শুরু হয়েছে যেদিন ৮ম শ্রেণী পাশ মহিলা প্রধানমন্ত্রী হয়েছে।” শীর্ষক একটি বক্তব্য সম্প্রতি হিরো আলমের নামে ফেসবুকে প্রচার করা হয়। তবে, রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে এরূপ বক্তব্যের কোনো তথ্যসূত্র পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, বিষয়টি নিয়ে হিরো আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এটিকে গুজব বলে নিশ্চিত করেছেন।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি নাট্যকার ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ একটি অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন, “এখন রুচির দুর্ভিক্ষ চলছে। এর মধ্য দিয়েই হিরো আলমের উত্থান হয়েছে।” মামুনুর রশিদের সেই মন্তব্যের কিছুদিন পরেই হিরো আলম উক্ত ভুয়া বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও হিরো আলমকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক তথ্যের সত্যতা যাচাই করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে। 

সুতরাং, রুচির দুর্ভিক্ষ নিয়ে হিরো আলমের নামে ফেসবুকে প্রচারিত এই বক্তব্যটি ভুয়া।

তথ্যসূত্র

সেফুদার একাত্তর টিভির টকশোতে যাওয়ার দাবিটি মিথ্যা 

সম্প্রতি ‘নতুন করে চটে গেলেন সেফুদা। ৭১ টিভিতে সেফুদার সাক্ষাৎকার’ শীর্ষক শিরোনামে ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

একই দাবিতে প্রচারিত ইউটিউব ভিডিও দেখুন এখানে এবং এখানে
আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে এবং এখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেফাত উল্লাহ ওরফে সেফুদা কখনো একাত্তর টিভির টকশোতে যাননি বরং একাত্তর টিভিতে প্রচারিত একটি অনুষ্ঠানের ভিডিওতে সিফাত উল্লাহ’র অন্য একটি ভিডিও সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করে একাত্তর টিভিতে সেফুদার সাক্ষাৎকারের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Sefat Ullah Sefuda নামের সেফুদার ইউটিউব চ্যানেলে ‘আরাভ এত বড় হলো কিভাবে’ শীর্ষক শিরোনামে গত ২৭ মার্চ প্রকাশিত ১ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও(আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot source: YouTube

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় সেখানে সেফুদা দুবাইয়ে অবস্থানকারী আলোচিত স্বর্ণব্যবসায়ী আরাভ খানের বিষয়ে বলছেন। ভিডিওতে তাকে উত্তেজিত হয়ে কিছু অশালীন বাক্য ব্যবহার করতে শোনা যায়। ভিডিওটির ফ্রেম পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায় এটি একটি ফেসবুক লাইভ ভিডিও। 

রিউমর স্ক্যানারের পর্যবেক্ষণে একাত্তর টিভিতে সেফুদার সাক্ষাৎকার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাথে উক্ত ভিডিওতে সেফুদার কথোপকথনের হুবহু মিল পাওয়া যায়। এছাড়াও ভিডিও দুটির ডিউরেশনও প্রায় একই (১ মিনিট ১৪ সেকেন্ড এবং ১ মিনিট ১৬ সেকেন্ড)। এমনকি ভিডিও দুটি প্রচারের সময়ও একদিন আগে পরে। সেফুদার লাইভ ভিডিওটি ২৭ মার্চ ইউটিউবে প্রচারিত হয়েছিল এবং দাবিকৃত ভিডিওটি তার একদিন পর অর্থাৎ ২৮ মার্চ প্রচার করা হয়েছে। এতে বোঝা যায়, সেফুদার ভিডিওটি ইউটিউব থেকে সংগ্রহ করে সেখানে একাত্তর টিভির অন্য একটি অনুষ্ঠানের ভিডিও’র সাথে যুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে। 

পরবর্তীতে একাত্তর জার্নালের ফেসবুক পেজে গত ২২ মার্চ প্রকাশিত একটি ভিডিওর ফুটেজের সাথে আলোচিত ভিডিওতে মিথিলা ফারজানার অংশের ফুটেজটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot source: Facebook 

অর্থাৎ, গত ২২ মার্চের একাত্তর জার্নালের একটি অংশের ফুটেজের সাথে সেফুদার ২৭ মার্চের একটি ভিডিও জুড়ে দিয়ে আলোচিত ভিডিওটি ছড়ানো হয়েছে। 

এছাড়াও একাত্তর জার্নাল তাদের ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও‘র মাধ্যমে জানান, একাত্তর জার্নালের একটি ভিডিও’র কিছু অংশ এডিট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘সেফু দা’ নামে পরিচিতি এক ব্যক্তিকে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ ভুয়া। একাত্তর জার্নাল এই নামে কোনও ব্যক্তিকে কখনও আমন্ত্রণ জানায়নি। সেখানে দর্শকদের ভিডিওটির ব্যাপারে সতর্ক থাকারও অনুরোধ জানানো হয়।

Screenshot source: Facebook

এছাড়াও একাত্তর জার্নালের সঞ্চালক মিথিলা ফারজানা তার ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও আলোচিত ভিডিওটি নিয়ে একটি পোস্ট দেন।

Screenshot source: Facebook

পোস্টে বলা হয়, ‘সকলের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে এই ভদ্রলোকের সাথে ৭১ টিভির বা অন্য কোথাও কোন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি বা বাস্তবে কখনো আমার কোনো আলাপ হয়নি। এটি একটি ফেইক/ এডিট করা ভিডিও। দয়া করে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না।’

অর্থাৎ, উপরোক্ত ভিডিও যাচাই, তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা এবং এ বিষয়ে একাত্তর জার্নাল এবং সঞ্চালক মিথিলা ফারজানার সতর্কতামূলক পোস্ট পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, প্রচারিত ভিডিওটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। 

মূলত, বিভিন্ন ঘটনায় আলোচিত ও বিতর্কিত সেফাত উল্লাহ ওরফে সেফুদা নামের এক ব্যক্তি সম্প্রতি একাত্তর টিভি’র টকশোতে গিয়েছে এমন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ওই নামের ব্যক্তিকে একাত্তর টিভি কখনো তাদের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানায়নি। গত ২২ মার্চের একাত্তর জার্নালের একটি অংশের ফুটেজের সাথে সেফুদার ২৭ মার্চের একটি ভিডিও জুড়ে দিয়ে আলোচিত ভিডিওটি প্রচারিত হয়।

সুতরাং, সিফাত উল্লাহ ওরফে সেফুদা একাত্তর টিভি’র অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন দাবি করে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

কিশোর রাকিবের প্রতারণার ফাঁদে গণমাধ্যম: বাদ যায়নি জেলা প্রশাসনও

0

গত মার্চের শেষদিকে রিউমর স্ক্যানারের ফেসবুক পেজ এবং গ্রুপে একটি সংবাদ যাচাইয়ের একাধিক অনুরোধ আসে।

সংবাদটি ছিল এরকম, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন হোয়াইট হাউসের উদ্যোগে একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের রংপুরের শাহ মুহাম্মদ রাকিব হাসান নামে এক স্কুল শিক্ষার্থী সেরা বিতার্কিক হয়েছেন। 

কিওয়ার্ড সার্চ করে আমরা দেখতে পাই, এই সংবাদটি দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমে ২৪ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ অবধি প্রকাশিত হয়েছে। 

এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, কালের কণ্ঠ, ভোরের কাগজ, আরটিভি, সমকাল, জনকণ্ঠ, সময় নিউজ, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, জাগো নিউজ, বাহান্ন নিউজ, এবি নিউজ২৪, The Financial Express (opinion), বাংলাদেশ টুডে, দৈনিক শিক্ষা, বি বার্তা২৪, ক্যাম্পাস টাইমস, দৈনিক করতোয়া, রাইজিং বিডি, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, কালবেলা, কালবেলা (২) যুগান্তর, যুগান্তর (২), চ্যানেল২৪, ডেইলি ক্যাম্পাস, ক্যাম্পাস লাইভ২৪।

Screenshot source: Prothom Alo

তাছাড়া একাধিক পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণে উক্ত দাবিতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। দেখুন যুগান্তর, কালবেলা, ভোরের কাগজ, কালের কণ্ঠ, ডেইলি স্টার, জনকণ্ঠ

Screenshot collage: Rumor Scanner 

গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া এবং একাধিক ফ্যাক্টচেক অনুরোধ পাওয়ার প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধান শুরু করে। 

কী পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার?

লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, এই বিষয়টিতে প্রায় সকল গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের ভাষা এবং তথ্যে মিল পেয়েছি আমরা। 

গণমাধ্যমগুলোর দাবি ছিল, হোয়াইট হাউসের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় ‘ফাইন্ডিং ওয়ার্ল্ড ফিউচার লিডার্স’ শিরোনামে আন্তর্জাতিক বিতর্ক প্রতিযোগিতা। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে প্রতিযোগিতাটি শেষ হয় ১৪ মার্চ। বিতর্ক হয় অনলাইনে। অংশ নেয় বিভিন্ন দেশের ৫৩৪ জন বিতার্কিক। হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার হল্যান্ড লোপ মিশিগান এবারের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সেরা বক্তা হয়েছে। আর বাংলাদেশি স্কুলছাত্র রাকিব ৫৩৪ জন প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে সেরা বিতার্কিক হয়েছে। রাকিব টানা ১৪৪টি বিতর্কে অংশ নিয়ে সব কটি জিতেছে। এর মধ্য দিয়ে হোয়াইট হাউসের রেকর্ডবুকে নাম উঠেছে রাকিবের। রাকিবের আগে লুইস অ্যান্ডারসন নামের একজন টানা ১৩৯টি বিতর্কে জিতে রেকর্ড গড়েছিলেন।” 

এই তথ্যগুলোর সূত্র ধরে রিউমর স্ক্যানার টিম দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে গত ০১ এপ্রিল বিষয়টিকে সম্পূর্ণ মিথ্যা জানিয়ে ফ্যাক্টচেক (ইংরেজি সংস্করণ) প্রতিবেদন প্রকাশ করে। 

Screenshot source: Rumor Scanner

রিউমর স্ক্যানার জানায়, হোয়াইট হাউস সম্প্রতি এমন কোনো প্রতিযোগিতার আয়োজন করেনি এবং এ বিষয়ে হোয়াইট হাউস বা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কোনো সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলেনি। হোয়াইট হাউসের ডোমেইনের সাথে মিল রেখে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে ভুয়া প্রতিযোগিতার বিষয়টি ছড়ানো হয়েছে। রাকিব তার ফেসবুক পোস্টে প্রতিযোগিতার লিগ্যাল ডকুমেন্টস দাবিতে যে ছবিগুলো দিয়েছেন তাতে দুইজন মার্কিন কর্মকর্তার জাল স্বাক্ষরের প্রমাণ মিলেছে। তাছাড়া, রাকিব দুইটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে জড়িয়ে ভুয়া খবরের স্ক্রিনশট পোস্ট করেছেন। এমনকি এই কথিত আয়োজনের পুরস্কার বিতরণীর প্রস্তুতি সভার একটি ছবি রয়েছে ভুয়া সাইটটিতে, যেটি মূলত ২০১৮ সালের বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক প্রতিযোগিতার ছবি।

পরবর্তীতে ০২ এপ্রিল প্রথম প্রহরে রিউমর স্ক্যানারের ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে একটি পোস্ট প্রকাশিত হওয়ার পর খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। 

Screenshot source: Facebook

আমাদের প্রভাব

রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন এবং ফেসবুক পোস্টের পর একাধিক গণমাধ্যম এ বিষয়ে তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদন সরিয়ে নেয়। এই তালিকায় আছে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, কালের কণ্ঠ, সময় টিভি, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (৩১ মার্চ সরিয়েছে), জাগো নিউজ, দৈনিক শিক্ষা, চ্যানেল২৪, ডেইলি ক্যাম্পাস। 

জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো তাদের প্রকাশিত আলোচিত প্রতিবেদনটির লিংকটি সরায়নি, তবে খবরটি সরিয়ে শুধু হেডলাইনে লিখেছে, “তথ্যসূত্র নিয়ে প্রশ্ন থাকায় সংবাদটি অপ্রকাশিত রাখা হয়েছে।”

Screenshot source: Prothom Alo 

তবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত কিছু গণমাধ্যমে এখনও উক্ত খবরটি প্রকাশিত অবস্থায় পেয়েছি আমরা। এই তালিকায় আছে ভোরের কাগজ, আরটিভি, জনকণ্ঠ, বাহান্ন নিউজ, এবিনিউজ২৪, The Financial Express (opinion), বাংলাদেশ টুডে, বি বার্তা২৪, দৈনিক করতোয়া, রাইজিং বিডি, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, কালবেলা (প্রিন্ট সংস্করণের ওয়েব লিংক), কালবেলা (২), যুগান্তর (প্রিন্ট সংস্করণের ওয়েব লিংক), যুগান্তর (২), ক্যাম্পাস লাইভ২৪। 

একই প্রতিবেদন এডিট করে ‘খবরটি সঠিক নয়’ বলে জানিয়েছে সমকাল, ক্যাম্পাস টাইমস। 

Screenshot source: Samakal 

রাকিবের লুকোচুরি 

রিউমর স্ক্যানারের ফেসবুক পোস্ট প্রকাশের আধঘন্টার মধ্যেই রাকিব তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভেট করে দেন। পরবর্তীতে সাড়ে চার ঘন্টা পর ০২ এপ্রিল ভোর রাতে অ্যাকাউন্ট পুনরায় চালু করে একটি পোস্ট করেন রাকিব। জানান, তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করলে সকলে চুপ হয়ে যাবেন।

Screenshot source: Facebook

মামলার হুমকি

রিউমর স্ক্যানারের ফেসবুক পোস্টের পর মোহাম্মদ মনির হোসেন নামে এক ব্যক্তি রিউমর স্ক্যানারের ফেসবুক পেজে রিউমর স্ক্যানারের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করবেন বলে হুমকি দেন। 

Screenshot source: Facebook

কিন্তু বর্তমানে আইসিটি আইনটি বিলুপ্ত থাকায় আমরা তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার পরামর্শ দেই।

বোকা বনেছে রংপুর জেলা প্রশাসন

এদিকে ০১ এপ্রিল রাতে রিউমর স্ক্যানার টিম জানতে পারে, হোয়াইট হাউসের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় রাকিবের সাফল্যের জন্য রাকিবের বর্তমান অবস্থানস্থল রংপুরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ০২ এপ্রিল তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এ বিষয়ে জানতে পেরে তৎক্ষণাতই উক্ত জেলার জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবহিত করে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনের লিংক পাঠানো হয়। 

কিন্তু ০২ এপ্রিল সকালে রাকিবকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় এবং এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেজেও পোস্ট প্রকাশ করা হয়৷ কিন্তু পোস্টের কমেন্টে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষিতে পোস্টটি সরিয়ে নেয়া হয়।

Screenshot collage: Rumor Scanner 

একই দিন সংবর্ধনা গ্রহণের পর রাকিব তার সর্বশেষ ফেসবুক পোস্টসহ (ব্যাখ্যা সম্পর্কিত) প্রতিযোগিতা সম্পর্কিত তার দেওয়া একাধিক পোস্ট সরিয়ে ফেলেন। সেদিন রাতের মধ্যে তার শেয়ার করা বিভিন্ন গণমাধ্যমের লিংকও সরিয়ে ফেলেন রাকিব। এখন তার অ্যাকাউন্টে উক্ত প্রতিযোগিতার বিষয়ে কোনো পোস্ট নেই। 

পোস্টগুলো সরিয়ে ফেলার আগে রাকিবের অ্যাকাউন্টের আর্কাইভ লিংক দেখুন এখানে। 
পোস্টগুলো সরিয়ে ফেলার পরে রাকিবের অ্যাকাউন্টের আর্কাইভ লিংক দেখুন এখানে।

কী বলছেন রংপুরের জেলা প্রশাসক?

রাকিবকে সংবর্ধনা দেওয়া এবং সে সম্পর্কিত পোস্ট ফেসবুকে দেওয়ার পর তা মুছে দেওয়ার প্রেক্ষিতে সার্বিক বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানার টিম রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীনের সাথে যোগাযোগ করেছিল। 

তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, “পুরস্কার দেওয়ার আগ পর্যন্ত বিষয়টা সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। বাচ্চাটা মেধাবী হতে পারে, তাকে অন্যান্য কারণে পুরস্কার দেওয়া যেতে পারে কিন্তু এই ব্যাপারে তাকে পুরস্কৃত করার কোনো সুযোগ নেই৷ তারপরও যেহেতু ঘটনা ঘটেছে, আমি তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি।” 

ড. নাজনীন বলছেন, তদন্তকারীদের এ বিষয়ে অতি দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। একই সাথে তদন্ত কাজের জন্য তার চাওয়ার প্রেক্ষিতে তাকে  রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়েছে। 

মার্কিন দূতাবাস কী বলেছে?

হোয়াইট হাউস সম্প্রতি বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে কিনা এবং ওয়ার্ডপ্রেস সাইটটি হোয়াইট হাউসের অন্তর্গত কিনা জানতে চাইলে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের ‘ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র’ ব্রায়ান শিলার রিউমর স্ক্যানারকে গতকাল (০২ এপ্রিল) জানান, “আমি এই ইভেন্ট সম্পর্কে কথিত ঘোষণার সাথে দুটি ওয়েবসাইট লিঙ্ক দেখেছি, তবে, এটি খাঁটি বলে মনে হয়নি। এটি দুটি কারণে সত্য। প্রথমত, হোয়াইট হাউসের কোনো লোগো ছিল না। দ্বিতীয়ত, তারা “.com” ঠিকানা থেকে এসেছে এবং হোয়াইট হাউস একটি “.gov” ঠিকানা ব্যবহার করে: www.whitehouse.gov।” 

অর্থাৎ, মার্কিন দূতাবাসও বিষয়টিকে ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছে। 

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে রিউমর স্ক্যানার

আলোচিত ভুয়া বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিষয়ে গণমাধ্যম তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি এ বিষয়ে নতুন করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে পাঁচটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এই তালিকায় আছে ডেইলি স্টার, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ঢাকা ট্রিবিউন, ক্যাম্পাস টাইমস এবং বাংলা ট্রিবিউন। 

রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনের পর এ বিষয়ে গত ০২ এপ্রিল প্রথম ফলোআপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)। সংবাদমাধ্যমটি এ সংক্রান্ত বেশকিছু তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেছে যার অধিকাংশ রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল। পাশাপাশি টিবিএস মার্কিন দূতাবাস এবং রাকিবের পরিবারের সাথেও এ ব্যাপারে কথা বলেছে। 

Screenshot source: TBS

একইদিন আরেক গণমাধ্যম ‘The Daily Star’ ও একই বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। নিজেদের পূর্বের প্রতিবেদনের ভুল স্বীকার এবং রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনের বিষয়টি উল্লেখ করে পত্রিকাটি রংপুর জেলা প্রশাসনের রাকিবকে দেওয়া সংবর্ধনার প্রসঙ্গটিও এনেছে প্রতিবেদনে। 

Screenshot source: The Daily Star 

আজ ০৩ এপ্রিল একই বিষয়ে ফলোআপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ঢাকা ট্রিবিউন। 

সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, “সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের সত্যতা যাচাইকারী আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক “রিউমার স্কানার” প্রতিবেদেনটির তথ্য যাচাই করে। সংস্থাটি তথ্যে গড়মিল ও এমন প্রতিযোগিতার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি।”

ঢাকা ট্রিবিউন বলছে, “রিউমার স্কানার দেখেছে, জো বাইডেনের ওই দিনের অফিশিয়াল কর্মসূচি শুরু হয়েছিল স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টায়। দিনব্যপী নানান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিকেল ৫টায় বাইডেন হোয়াইট হাউসে ফিরে আসেন। ওই প্রতিযোগিতা নিয়েও তিনি কোনো বিবৃতি দেননি। এছাড়া আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের নামেও ভুয়া প্রতিবেদন তৈরি করে সংবাদটি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোরও সত্যতা পেয়েছে সত্যতা নিশ্চিত করা প্রতিষ্ঠানটি। হোয়াইট হাউসের নামে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।”

Screenshot source: Dhaka Tribune  

আরেক সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউন একইদিন রংপুর জেলা প্রশাসনের রাকিবকে দেওয়া সংবর্ধনার বিষয়টিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, “গণমাধ্যমের খবরের ফ্যাক্ট চেক করা ‘রিউমার স্ক্যানার’র অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, হোয়াইট হাউজ সম্প্রতি এমন কোনও প্রতিযোগিতার আয়োজন করেনি এবং এ বিষয়ে হোয়াইট হাউজ বা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কোনও সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলেনি। হোয়াইট হাউজের ডোমেইনের সঙ্গে মিল রেখে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে ভুয়া প্রতিযোগিতার বিষয়টি ছড়ানো হয়েছে। রাকিব তার ফেসবুক পোস্টে প্রতিযোগিতার লিগ্যাল ডকুমেন্টস হিসেবে যে ছবিগুলো দিয়েছেন তাতে দুজন মার্কিন কর্মকর্তার জাল স্বাক্ষরের প্রমাণ মিলেছে। তাছাড়া সেখানে দুটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে জড়িয়ে ভুয়া খবরের স্ক্রিনশটও দেওয়া হয়েছিল। এমনকি এই কথিত আয়োজনের পুরস্কার বিতরণীর সভার একটি ছবি রয়েছে ভুয়া সাইটটিতে, যেটি মূলত ২০১৮ সালের বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক প্রতিযোগিতার ছবি।”

এই বিষয়ে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সাফিউল আযমের সাক্ষাৎকার নিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। তিনি বলেছেন, “দেশের নামকরা গণমাধ্যমগুলো এত বড় খবর পরিবেশন করার আগে যাচাইবাছাই করলো না? বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে অনায়াসেই খবরটির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব ছিল- তা না করে তারা চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। তবে জনপ্রিয় কয়েকটি অনলাইন পত্রিকাসহ কয়েকটি গণমাধ্যম খবরটির সত্যতা নিশ্চিত না হওয়ায় পরিবেশন করেনি- এ জন্য তাদের ধন্যবাদ প্রাপ্য।”

 Screenshot source: Bangla Tribune

অনলাইন সংবাদমাধ্যম ক্যাম্পাস টাইমস একই বিষয়ে তাদের প্রকাশিত পূর্বের প্রতিবেদনটি সংশোধন করে রিউমর স্ক্যানারকে তথ্যের সূত্র হিসেবে উল্লেখ করে লিখেছে, “গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদটি সঠিক নয় বরং হোয়াইট হাউস সম্প্রতি এমন কোনো প্রতিযোগিতার আয়োজন করেনি। হোয়াইট হাউসের ডোমেইনের সাথে মিল রেখে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে ভুয়া একটি প্রতিযোগিতায় রাকিব সেরা বিতার্কিক হয়েছেন বলে দাবি করেছেন।”

Screenshot source: Campus Times

জাতীয় দৈনিক ‘সমকাল’ও হেঁটেছে একই পথে, পূর্বের প্রতিবেদনটি সংশোধন করেছে। 

রিউমর স্ক্যানারের বরাতে সংশোধিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “হোয়াইট হাউসের নাম ব্যবহার করে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি রাকিবের সাফল্যের যে খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা সঠিক নয়। হোয়াইট হাউস সম্প্রতি এমন কোনো প্রতিযোগিতার আয়োজন করেনি।”

Screenshot source: Samakal

একাত্তর জার্নালে রিউমর স্ক্যানার 

দেশজুড়ে আলোচিত এই বিষয়টিতে আলোচনার জন্য রিউমর স্ক্যানারের সদস্য ফ্যাক্ট চেকার তানভীর মাহতাব আবীরকে আমন্ত্রণ জানায় মূল ধারার গণমাধ্যম একাত্তর টেলিভিশন। সংবাদমাধ্যমটির নিয়মিত আয়োজন ‘একাত্তর জার্নাল‘ অনুষ্ঠানে গতকাল (০২ এপ্রিল) এ বিষয়ে আলোচনা হয়। 

Screenshot source: Ekattor

একই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন রাকিবের দাদা মুস্তাফিজুর রহমান বকুল, বৈশাখী টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক এবং দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক শ্যামল দত্ত। উল্লেখ্য, মুস্তাফিজুর রহমান বকুল ভোরের কাগজ পত্রিকারই দিনাজপুরের পার্বতীপুরের প্রতিনিধি। রাকিবের দাদা দাবি করেছেন, তার নাতি প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন। একইসাথে তিনি গণমাধ্যমকেও দায়ী করেন খবরটি যাচাই করে প্রকাশ না করায়। 

উপস্থাপক মিথিলা ফারজানার এক প্রশ্নের জবাবে শ্যামল দত্ত বলেন, “অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের কোনো ফ্যাক্টচেকিং ব্যবস্থাই নেই। আমরা যখন কোনো আন্তর্জাতিক মিডিয়া বা কোনো একটি সোর্স থেকে খবর আসে আমরা নির্বিবাদে সেটি প্রকাশ করে। এটা আমাদের দুর্বলতা বলুন আর যাই বলুন না কেন আমাদের একটা উইকনেস। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক খবরগুলোর ক্ষেত্রে আমাদের ওরকম কোনো ব্যবস্থাপনাই নেই যে আমরা একটু চেক করে দেখবো খবরটি সঠিক কিনা বা আদৌ এর ভিত্তি আছে কিনা। সেটিরই একটি অত্যন্ত বাজে স্বীকার হয়ে গেছি আমরা। আমাদের আরও সচেতন হবে।” 

অনুষ্ঠানে আরিফ জেবতিক জানান, “১৭ বছরের কিশোর গোটা বাংলাদেশের মিডিয়ার দুর্বলতাকে সবার কাছে তুলে ধরলো।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “আমেরিকার প্রেসিডেন্ট তাকে অ্যাওয়ার্ড দেবে আর দূতাবাস তাকে ভিসা দিচ্ছে না। এটাই দ্বিধার বিষয়।”

শ্যামল দত্ত এই ঘটনায় মিডিয়ার দায়ের প্রশ্নে বলেন, “যখন এই ধরনের খবরগুলো বাংলাদেশে আসে আমরা সেটা আনন্দের সংবাদ হিসেবে নেই। কিন্তু এটা যদি কেই প্রতারণার একটা ব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে আসে তাহলে বিষয়টি দুঃখজনক।”

শ্যামল দত্ত বলছিলেন, “আজ ফ্যাক্টচেকিং দিবস। এই ধরনের বিষয়গুলোর ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের কোনো গণমাধ্যমে নেই। যদি থাকতো তাহলে বাংলাদেশের শীর্ষ গণমাধ্যম বলে যাদেরকে আমরা চিনি… ফ্যাক্টচেকিং কিন্তু অনেক জায়গায় আছে। ইদানিং চালু হয়েছে। খবর পেলেই আপনি ছেপে দেবেন এটা ঠিক না।”

তবে শ্যামল দত্ত যে পত্রিকার সম্পাদক সেই ‘ভোরের কাগজ’ এর ওয়েবসাইটে এখনও তাদের পূর্বের প্রতিবেদনটি প্রকাশিত অবস্থায় রয়েছে। 

অনুষ্ঠানে ফ্যাক্টচেকের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। 

সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন হোয়াইট হাউসের উদ্যোগে একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে এবং উক্ত প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের রংপুরের শাহ মুহাম্মদ রাকিব হাসান নামে এক স্কুল শিক্ষার্থী সেরা বিতার্কিক হয়েছেন দাবির প্রেক্ষিতে বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে সনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার। তারই প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দেওয়া এই বিষয়ের পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে এই ফ্যাক্টস্টোরিতে যেখানে রাকিবের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের প্রতিযোগিতা বিষয়ক সকল পোস্ট সরিয়ে নেওয়া, রংপুরের জেলা প্রশাসন কর্তৃক রাকিবকে সংবর্ধনা দেওয়া, গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলো সরিয়ে নেওয়া এবং ফলোআপ প্রতিবেদন প্রকাশ, রিউমর স্ক্যানারকে মামলার হুমকি দেয়া এবং একাত্তর টেলিভিশনের টকশোতে রিউমর স্ক্যানারের অংশগ্রহণসহ প্রাসঙ্গিক নানা বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।  

তথ্যসূত্র

  • Statement from DC, Rangpur 
  • Rumor Scanner’s own analysis 
  • Shah Muhammad Rakib Hasan: Facebook Account 
  • Statement from Bryan Schiller, ‘Acting U.S. Embassy Spokesperson, The US Embassy in Dhaka

হলুদ রঙের বোয়াল মাছ দাবিতে ওয়েলস ক্যাটফিশের ছবি প্রচার

0

সম্প্রতি “হলুদ রঙের বোয়াল মাছ” দাবিতে একটি মাছের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 
পোস্টগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে,এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত মাছের ছবিটি বোয়াল মাছের নয় বরং ওয়েলস ক্যাটফিশের। ইউরোপের বিভিন্ন নদী এবং লেকে বসবাসকারী এই মাছ দেখতে সবুজাভ ধূসর হলেও লিউসিজম নামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে এদের দেহ হলুদ বর্ণ ধারণ করে। 

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, বিজ্ঞান বিষয়ক আন্তর্জাতিক নিউজ ওয়েবসাইট ‘Live Science’ এ ২০২১ সালের ২০ অক্টোবর ‘‘Extremely rare, bright-yellow catfish caught in the Netherlands’’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে হুবহু একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্টিন গ্ল্যাটজ (Martin Glatz) নামের একজন মৎস্য শিকারি তার যমজ ভাই অলিভারের (Oliver) সাথে নেদারল্যান্ডের একটি হ্রদে উক্ত মাছটি ধরেছিলেন।

তাছাড়া উক্ত প্রতিবেদনে মাছটি সম্পর্কে বলা হয়, এটির নাম ওয়েলস ক্যাটফিশ (বৈজ্ঞানিক নামঃ Silurus glanis), যা ইউরোপের বিভিন্ন লেক ও নদীতে পাওয়া যায়।

Screenshot from Live Science.

ওয়েলস ক্যাটফিশ নিয়ে National Oceanic and Atmospheric Administration (NOAA) তে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ উদ্ধৃত করে লাইভ সায়েন্সের উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশাল আকৃতির ওয়েলস ক্যাটফিশ গুলো লম্বায় সর্বোচ্চ ৯ ফুট (২.৭ মিটার) এবং ওজনে প্রায় ১৩০ কেজির মতো হয়ে থাকে। এদের গায়ের রং বেশিরভাগ গাঢ় সবুজাভ-কালো রঙের হয়ে থাকে যার মধ্যে কিছু হলুদ বিন্দু লক্ষ্য করা যায়।

Screenshot Source: NOAA

লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদনে ওয়েলস ক্যাটফিশের গায়ের রং হলুদ হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে লিউসিজম (Leucism) নামের নামের একটি বিরল জেনেটিক রোগকে দায়ী করা হয়। লিউসিজম এমন একটি অবস্থা যখন কোনো প্রাণীর ত্বক, চুল, পালক অথবা আঁশের মধ্য কোনো নির্দিষ্ট রঙ্গকের (পিগমেন্ট) পরিমাণ কমে যায়। তবে এই রোগের কারণে চোখের স্বাভাবিক রঙের উপর কোনো প্রভাব পড়েনা।

উল্লেখ্য যে, ওয়েলস ক্যাটফিশ ছাড়াও অন্যান্য মাছ, সরীসৃপ, পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে লিউসিজম দেখা দিতে পারে।

ওয়েলস ক্যাটফিশ এবং বোয়ালমাছের পার্থক্য

জীবের শ্রেণীবিন্যাস, বাসস্থান, আকার, আকৃতির দিক থেকে বোয়াল মাছ এবং ওয়েলস ক্যাটফিশের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। 

মৎস বিষয়ক বাংলাদেশী ওয়েবসাইট BdFISH থেকে জানা যায়, আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে যে মাছটি বোয়াল হিসেবে পরিচিত সেটির বৈজ্ঞানিক নাম Wallago attu.

Screenshot from BdFISH
বোয়াল মাছ (Image from Jugantor)

গায়ের রঙের দিক থেকে এই মাছটির উপরের অংশ ধূসর-হলদেটে এবং নিচের অংশ শ্বেতবর্ণের হয়ে থাকে। তবে এই মাছটির পাখনা ধূসর বর্ণের। ১৯৮৯ সালের তথ্য অনুযায়ী এই মাছের সর্বোচ্চ উচ্চতা ১.৮৬ মিটার। বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিন এশিয়ার অন্যান্য দেশেও এ ধরণেরবোয়াল মাছ পাওয়া যায়। 

অপরদিকে, ওয়েলস ক্যাটফিশ ক্যাটফিশ ইউরোপের কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চল, পশ্চিম এশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার নদী ও জলাশয়ে পাওয়া যায়।

Screenshot from invadingspecies

জীবের শ্রেণীবিন্যাদের দিক থেকে বোয়াল এবং ওয়েলস ক্যাটফিশ Siluridae পরিবারের অন্তর্ভূক্ত হলেও এরা ভিন্ন গণের (Genus) প্রাণী। বোয়ালমাছ মূলত Wallago গণের প্রাণী আর ওয়েলস ক্যাটফিশ Silurus গণের অন্তর্ভূক্ত। তাছাড়া আকারের দিকে থেকেও এরা বোয়ালের (হেলিকপ্টার ক্যাটফিশ) থেকে কিছুটা বড়। NOAA এর আর্টিকেল থেকে জানা যায় এই প্রজাতিটির ২.৭৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হওয়ার রেকর্ড রয়েছে।

মূলত, মার্টিন গ্ল্যাটজ নামের একজন মৎস্য শিকারি তার যমজ ভাইকে নিয়ে নেদারল্যান্ডের একটি হ্রদ থেকে ওয়েলস ক্যাটফিশ নামের একটি বিশাল আকৃতির মাছ ধরেছিলেন। উক্ত ক্যাটফিশের গায়ের রং সাধারণত গাঢ় সবুজাভ-কালো রঙের হয়ে থাক। তবে লিউসিজম নামের নামের একটি বিরল জেনেটিক রোগের কারণে এদের দেহ হলুদ বর্ণ ধারণ করে। মার্টিন গ্ল্যাটজের শিকার করা উক্ত মাছের ছবিকেই সম্প্রতি ফেসবুকে ‘হলুদ রঙের বোয়াল মাছ’ দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

সুতরাং, ওয়েলস ক্যাটফিশের ছবিকে হলুদ রঙের বোয়াল মাছ দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসুত্র

সব ধরনের লেবু নয়, শুধু বিশেষ প্রজাতির কলম্বিয়া লেবুর হালি ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে

0

সম্প্রতি, “রাজধানীতে হালি লেবুর দাম ৪০০ টাকা” শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে  ছড়িয়ে পড়েছে।

Screenshot from Facebook

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে
উক্ত পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাজধানী ঢাকার সকল স্থানে এক হালি লেবুর দাম ৪০০ টাকা নয় বরং কিছু গণমাধ্যম কর্তৃক মিরপুর ৬ নম্বর কাঁচাবাজারের একটি দোকানে বিশেষ প্রজাতির লেবু হালি প্রতি ৪০০ টাকায় বিক্রির খবরকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। 

কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, গত ২৭ মার্চ  দৈনিক যুগান্তরের ফেসবুক পেইজে “মূলত খোসা আর ঘ্রাণের জন্য এই লেবুর চাহিদা অনেক বেশি” ক্যাপশনে একটি সংবাদ প্রচারিত হতে দেখা যায়।

Screenshot from Daily Jugantor

পরবর্তীতে, দৈনিক যুগান্তরের বিস্তারিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “রাজধানীর মিরপুরের ৬ নম্বর কাঁচাবাজারের একটি দোকানে আশরাফ নামের এক বিক্রেতা ‘কলম্বিয়া লেবু’ নামের বিশেষ জাতের কিছু লেবু প্রতি হালি ৪০০ টাকায় বিক্রি করেন।” 

দৈনিক যুগান্তরের উক্ত প্রতিবেদনে ব্যবসায়ী আশরাফের বক্তব্য পাওয়া যায়। আশরাফ জানান, বড় সাইজের এই লেবুর নাম কলম্বিয়া লেবু। একেকটা লেবুর ওজনে ৩৫০ থেকে ৪০০ গ্রাম। এই লেবুতে রস কম হলেও ঘ্রান অনেক বেশি। আর লেবুর খোসা অনেক মোটা হওয়ায় এই খোসা সহজে খাওয়া যায়। মূলত খোসা আর ঘ্রাণের জন্য এই লেবুর চাহিদা অনেক বেশি। 

তিনি বলেন, মিরপুরে এই লেবুর ক্রেতা কম। গুলশানের দুইজন ক্রেতা রয়েছেন, যারা এই লেবু কিনতে তার দোকানে আসেন। বর্তমানে বাজারে কলম্বিয়া লেবুর সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। রোজা শুরু হওয়ার  কয়েক দিন আগেও তিনি  এ লেবুর হালি ২০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। 

আশরাফ জানান, সোমবার সকালে তিনি এক পিস লেবু ১০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। কেউ এক হালি নিতে চাইলেও  ফিক্সড ৪০০ টাকাই দিতে হবে।

Screenshot from jugantor

উল্লেখ্য যে, দৈনিক যুগান্তরের ফেসবুক পোস্টের কমেন্টে থাকা সংবাদের লিংকে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ থাকলেও “রাজধানীতে এক হালি লেবুর দাম ৪০০ টাকা!” শীর্ষক ক্লিকবেইট শিরোনাম ব্যবহার করায় মূল নিউজ না পড়ে সমস্ত রাজধানীতেই সব ধরণের লেবু এক হালি ৪০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে ভেবে বিভ্রান্ত ছড়িয়ে পড়ে। আর এই বিভ্রান্তি দৈনিক যুগান্তরের ফেসবুক পোস্টের কমেন্ট সেকশনেও লক্ষ্য করা হয়। 

Image Collage: Rumor Scanner

তাছাড়া, Zoombangla.com নামের একটি অনলাইন পোর্টালের ফেসবুক পেইজেও ক্লিকবেইট শিরোনামে ব্যাবহার করে একই সংবাদ প্রচার করলে উক্ত পোস্টের কমেন্ট সেকশনেও অনেক মানুষকে রাজধানীতে সব ধরণের লেবুর হালি ৪০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে ভেবে বিভ্রান্ত হতে দেখা যায়। 

Image Collage: Rumor Scanner

তাছাড়া বেশ কিছু ফেসবুক আইডি এবং পেজ থেকে কোনোরূপ বিস্তারিত সংবাদ উল্লেখ না করে সরাসরি “রাজধানীতে এক হালি লেবুর দাম ৪০০ টাকা!” ক্যাপশন ব্যবহার করে পোস্ট করা হয়, এর ফলেও মানুষ বিভ্রান্ত হয়।

Image Collage: Rumor Scanner

যেদিন এই বিভ্রান্তির সূত্রপাত ঘটে সেদিন দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেদিন খুচরা বাজারে হালি প্রতি লেবু ২০ থেকে ৪০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। 

Screenshot Source: Prothom Alo

প্রথম আলোর উক্ত প্রতিবেদনে রাজধানীর শেওড়াপাড়া বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. রাসেল এর বক্তব্য পাওয়া যায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, “রোজার শুরুতে লেবুর সরবরাহ কম ছিল। তখন ৫০ থেকে ৬০ টাকা হালি বিক্রি করেছি। এখন সেই একই লেবু ৪০ টাকা হালিতেও অনেকে নিতে চাইছে না।”

মূলত, রাজধানীর মিরপুরের ৬ নম্বর কাঁচাবাজারের একটি দোকানে আশরাফ নামের এক বিক্রেতা কর্তৃক শুধুমাত্র বিশেষ জাতের কলাম্বিয়া লেবুর প্রতি হালি ৪০০ টাকায় বিক্রির ব্যাপারটিকে কিছু গণমাধ্যম এবং ফেসবুক পেইজ থেকে ক্লিকবেইট শিরোনামে প্রচার করায় মানুষ সমস্ত রাজধানীতে সব ধরণের লেবুর হালি ৪০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে ভেবে বিভ্রান্ত হচ্ছে। 

সুতরাং, রাজধানীতে এক হালি লেবুর দাম ৪০০ টাকায় বিক্রি হওয়ার সংবাদটি বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

‘বিএনপির পক্ষে মাঠে সেনাবাহিনী’ শীর্ষক সূত্রবিহীন ক্লিকবেট শিরোনামে ভুয়া খবর প্রচার

সম্প্রতি ‘বিএনপির পক্ষে মাঠে সেনাবাহিনী এবং র‍্যাব প্রধান শেষ‘ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইলে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে
আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশে বিএনপির পক্ষে মাঠে সেনাবাহিনী নামার কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং র‍্যাব প্রধান শেষ হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং ভিডিওটির থাম্বনেইলে বাংলাদেশের পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং সাবেক র‍্যাব প্রধান বেনজির আহমেদের ছবি ব্যবহার করে অধিক ভিউ পাবার আশায় উক্ত ক্যাপশন এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

গত ৩১ মার্চ News Plus নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘বিএনপির পক্ষে মাঠে সেনাবাহিনী, র‍্যাব প্রধান শেষ’ শীর্ষক ক্যাপশন এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়।

Screenshot: Facebook

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এটি কয়েকটি প্রতিবেদন নিয়ে তৈরি একটি নিউজ বুলেটিন। ৮ মিনিট ৩১ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুনেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। আমরা যাচাই করে দেখেছি, ৮ মিনিট ৩১ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মোট ৬টি বিষয়ের ওপর সংবাদ পাঠ করা হয়ঃ

  • গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বিএনপির আন্দোলন, বলছে মির্জা ফখরুল 
  • আমিনুলের অভিযোগঃআওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ওপর চেপে বসেছে
  • রাজনৈতিক সংকট সমাধানে জাতিসংঘের সহায়তা চায় বিএনপি 
  • এবার শেখ হাসিনা সক্রিয় হচ্ছে নির্বাচনী কুটনীতিতে 
  • গণ অধিকার পরিষদের অভিযোগ সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদদের কণ্ঠ রুদ্ধ করা হচ্ছে এবং
  • বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের মধ্যে দূরত্ব 

প্রচারিত নিউজ বুলেটিন ভিডিও’র কোথাও বিএনপির পক্ষে মাঠে সেনাবাহিনী এবং র‍্যাব প্রধানের বিষয়ে কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো সূত্রে এমনকোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া থাম্বনেইলে ব্যবহৃত ছবিটি বর্তমান র‍্যাব প্রধানের নয়। এটি সাবেক র‍্যাব প্রধান বেনজির আহমেদের ছবি। যিনি কয়েক বছর আগেই সংস্থাটির প্রধানের দায়িত্ব থেকে সাবেক হয়েছেন।

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিও’র বিস্তারিত প্রতিবেদন, থাম্বনেইলে ভুল তথ্য উপস্থাপন এবং এবিষয়ে গণমাধ্যমে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়ায় এটা স্পষ্ট যে, বিএনপির পক্ষে মাঠে সেনাবাহিনী এবং র‍্যাব প্রধান শেষ হওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়। 

মূলত, গত ৩১ মার্চ একটি ভূঁইফোড় পেজ থেকে বিএনপির পক্ষে মাঠে সেনাবাহিনী এবং র‍্যাব প্রধান শেষ শীর্ষক চটকদার ক্যাপশন ও থাম্বনেইলে একটি নিউট বুলেটিন ভিডিও প্রচারিত হয়। রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে উক্ত ভিডিওতে বিএনপির পক্ষে সেনাবাহিনীর মাঠে নামা এবং র‍্যাব প্রধান সংক্রান্ত কোনো খবর পাওয়া যায়নি। বর্তমানে র‍্যাবের প্রধান এম খুরশীদ হোসেন হলেও থাম্বনেইলে সাবেক র‍্যাব প্রধান বেনজির আহমেদ এর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে প্রচারিত তথ্যের সাথে ভিডিও প্রতিবেদনের মূল সংবাদের কোথাও উল্লেখ না করে অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় দীর্ঘদিন ধরে একই কাজ করে আসছে উক্ত ফেসবুক পেজটি। এরকম বেশকয়েকটি তথ্যের সত্যতা যাচাই করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এরকম কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে এবং এখানে

সুতরাং, কোনোপ্রকার তথ্যসূত্র ছাড়া একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিওর ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে বিএনপির পক্ষে মাঠে সেনাবাহিনী এবং র‍্যাব প্রধান শেষ বলে দাবি করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

থাম্বনেইলে বাংলাদেশের পুলিশের ছবি ব্যবহার করে বোমা হামলায় ৭ পুলিশ নিহত হওয়ার বিভ্রান্তিকর সংবাদ

0

সম্প্রতি ‘তারাবি শেষেই ভয়াবহ বোমা হামলা ৭ পুলিশ নিহত’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক  যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে
আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে এবং এখানে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশে বাংলাদেশে ভয়াবহ বোমা হামলায় ৭ পুলিশ সদস্য নিহতের ঘটনা ঘটেনি বরং পাকিস্তানে বোমা হামলায় ৪ পুলিশ সদস্য নিহতের ঘটনা ঘটেছে এবং কোন দেশের পুলিশ তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ না করা এবং ভিডিও’র থাম্বনেইলে বাংলাদেশের পুলিশের ছবি ব্যবহার করার কারণে বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। 

গত ৩০ মার্চ News Plus নামের একটি পেজ থেকে ‘তারাবি শেষেই ভয়াবহ বোমা হামলা ৭ পুলিশ নিহত’ শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে বাংলাদেশের পুলিশের ছবি ব্যবহার ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়।

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এটি কয়েকটি প্রতিবেদন নিয়ে তৈরি একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিও। ৮ মিনিট ১২ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে ৭ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডের সময় ভয়াবহ বোমা হামলায় পুলিশ নিহতের ব্যাপারে বলা হয়। এবিষয়ে সংবাদ পাঠ ৭ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড থেকে শুরু হয়ে ৮ মিনিট ১২ সেকেন্ড পর্যন্ত চলে। তবে ভিডিও’র ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে ৭ পুলিশ সদস্যের কথা লেখা হলেও বিস্তারিত প্রতিবেদনে ৪ পুলিশ সদস্য নিহতের কথা বলা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানে বোমা হামলায় নিহত ৪ পুলিশ। পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বুধবার (২৯ মার্চ) রাতে বোমা হামলায় চার পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। রেডিও ফ্রী এশিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। জেলা পুলিশের মুখপাত্র শাহিদ খান জানান, বন্দুকধারীরা ওয়াজিরিস্তান উপজাতীয় অঞ্চলের নিকটবর্তী লাক্কি মারওয়াত জেলার একটি পুলিশ স্টেশনে হামলা চালায়। সিনিয়র অফিসার ইকবাল মোহমান্দের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তাদের সহকর্মীদের সহায়তায় ছুটে যায়।

উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূল ধারার গণমাধ্যম ইত্তেফাকের অনলাইন সংস্করণে ‘পাকিস্তানে বোমা হামলায় নিহত ৪ পুলিশ’ শীর্ষক শিরোনামে গত ৩০ মার্চ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন(আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Ittefaq 

প্রতিবেদনে রেডিও ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম রেডিও ফ্রি এশিয়ার বরাতে জানানো হয়, পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বুধবার (২৯ মার্চ) রাতে বোমা হামলায় চার পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। জেলা পুলিশের মুখপাত্র শাহিদ খান জানান, বন্দুকধারীরা ওয়াজিরিস্তান উপজাতীয় অঞ্চলের নিকটবর্তী লাক্কি মারওয়াত জেলার একটি পুলিশ স্টেশনে হামলা চালায়। সিনিয়র অফিসার ইকবাল মোহমান্দের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তাদের সহকর্মীদের সহায়তায় ছুটে যায়। কিন্তু তাদের গাড়িটি রিমোট নিয়ন্ত্রিত বোমার আঘাতে বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণে মোহমান্দসহ চার পুলিশ কর্মকর্তা নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন।  তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।

পরবর্তীতে Radio Free Europe এ ‘Pakistani Taliban Kills Four Police Officers In Bomb Attack’ শিরোনাম  গত ৩০ মার্চ প্রকাশিত মূল প্রতিবেদনটি(আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: rferl.org

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে ইত্তেফাকের প্রতিবেদনটি দাবিকৃত ভিডিওতে প্রতিবেদনের শেষ পর্যন্ত হুবহু পাঠ করা হয়েছে। তাছাড়া দাবিকৃত ভিডিও’র শিরোনামে বোমা হামলায় ৭ পুলিশ নিহতের কথা লেখা হলেও বিস্তারিত সংবাদ পাঠের সময়ে ইত্তেফাকের প্রতিবেদন অনুযায়ী পাকিস্তানের বোমা হামলায় ৪ পুলিশ সদস্য নিহতের কথা বলা হয়।

Image Collage: Rumor Scanner

পাশাপাশি দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো সূত্রে  ভয়াবহ বোমা হামলায় বাংলাদেশের পুলিশ নিহতের কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিও’র বিস্তারিত প্রতিবেদন এবং এবিষয়ে গণমাধ্যমমের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, পাকিস্থানে বোমা হামলায় বোমা হামলায় ৪ পুলিশ নিহত হওয়ার ঘটনাকে পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করে ভয়াবহ বোমা হামলায় ৭ পুলিশ নিহত হয়েছে দাবি করে থাম্বনেইলে বাংলাদেশ পুলিশের ছবি ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার করা হয়েছে।

মূলত, সম্প্রতি পাকিস্তানে তালেবানের বোমা হামলায় ৪ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে বাংলাদেশে একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিওতে দেশটির নাম উল্লেখ না করে ‘তারাবি শেষেই ভয়াবহ বোমা হামলা ৭ পুলিশ নিহত’ শীর্ষক শিরোনাম এবং ভিডিও’র থাম্বনেইলে বাংলাদেশের পুলিশের ছবি ব্যবহার করার কারণে বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।

উল্লেখ্য, ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে চটকদার শিরোনাম ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এসব ঘটনা নিয়ে পূর্বেও ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, পাকিস্তানে বোমা হামলায় পুলিশ নিহতের ঘটনার সংবাদের ভিডিও’র ক্যাপশনে শুধুমাত্র ”তারাবি শেষেই ভয়াবহ বোমা হামলা ৭ পুলিশ নিহত’ লিখে প্রচার করা হচ্ছে এবং থাম্বনেইলে বাংলাদেশের পুলিশের ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র