Home Blog Page 602

আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হওয়া ব্যক্তিটি পিকে হালদার নন

0

সম্প্রতি ‘সাংবাদিকদেরকে উদ্দেশ্য করে পিকে হালদার… বেডা আমার ছবি না তুলে এস আলমের ছবি তোল।’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

পিকে হালদার

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট  (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের মামলায় অভিযুক্ত পিকে হালদারের সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে থাকা ব্যক্তিটি পিকে হালদার নন। বরং তিনি পিকে হালদারের সহযোগী ইনকাম ট্যাক্সের অ্যাডভোকেট সুকুমার মৃধা। এছাড়া পিকে হালদার বর্তমানে পালাতক রয়েছেন।

দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে বেসরকারি টিভি চ্যানেল ডিবিসি নিউজের  ইউটিউব চ্যানেলে গত ৫ সেপ্টেম্বর ‘সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হলেন পিকে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটির প্রথম দশ সেকেন্ডের ফুটেজের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Image Analysis: Rumor Scanner

এ ভিডিও থেকে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা ব্যক্তিটির নাম সুকুমার মৃধা। তিনি পিকে হালদারের সহযোগী।

পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে আরও অধিকতর নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার টিম আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা ব্যক্তিটির সঙ্গে ওপেন সোর্সে পাওয়া পিকে হালদারের ছবি মিলিয়ে দেখে।

এতে নিশ্চিত হওয়া যায়, পিকে হালদারের দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে থাকা ব্যক্তিটি তিনি নন বরং উক্ত ব্যক্তিটি হলেন সুকুমার মৃধা।

Image Analysis: Rumor Scanner

এছাড়া অনুসন্ধানে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজ২৪ এ গত ৫ সেপ্টেম্বর ‘পি কে হালদারের মামলায় যুক্তিতর্ক ১৩ সেপ্টেম্বর’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের মামলায় পি কে হালদার পলাতক রয়েছেন।

মূলত, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের মামলায় গ্লোবাল ইসলামী (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারসহ ১৪ জনের মামলায় আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে। গত মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য ছিল। এদিন এ মামলায় কারাগারে থাকা আসামি সুকুমার মৃধাকে আদালতে হাজির করা হয়৷ এ সময় তার ভিডিও ধারণরত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘বেডা আমার ছবি না তুলে এস আলমের ছবি তোল।’ পরবর্তীতে তার এই ভিডিও ফুটেজটিই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পিকে হালদারের দাবিতে ছড়িয়ে পড়ে। 

প্রসঙ্গত, দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ নিয়ে গত ৪ আগস্ট ‘এস আলমের আলাদিনের চেরাগ‘ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইংরেজি দৈনিক দ্যা ডেইলি স্টার। প্রতিবেদনটিতে দৈনিকটি এস আলম গ্রুপের দেশের বাইরে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের বিষয় তুলে আনে। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত ৬ আগস্ট গণমাধ্যমটিতে উঠে আসা অভিযোগের তদন্ত করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পরবর্তীতে একই মাসের ২৩ তারিখ এই অভিযোগ অনুসন্ধানে আগামী বছরের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত স্তিতাবস্থা জারি করা হয়।

সুতরা, পিকে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধার সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হওয়ার ভিডিওটিতে তাকে পিকে হালদার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

রাজনীতিবিদদের নিয়ে মার্ক টোয়েনের নামে ভুয়া উক্তি প্রচার

0

সম্প্রতি, “রাজনীতিবিদ এবং ডায়াপার দুটোই একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর পরিবর্তন করা আবশ্যক এবং একই কারণে” শীর্ষক একটি উক্তিকে বিখ্যাত মার্কিন লেখক মার্ক টোয়েনের উক্তি দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।

মার্ক টোয়েন

ফেসবুকে প্রচারিত এরূপ কিছু পোস্ট দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাজনীতিবিদদের নিয়ে আলোচ্য এই উক্তিটি মার্কিন লেখক মার্ক টোয়েনের নয় বরং কোন নির্ভরযোগ্য সূত্র ছাড়াই আলোচ্য উক্তিটিকে মার্ক টোয়েনের নামে প্রচার করা হচ্ছে।

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, গুগল বুকস এর ওয়েবসাইটে “Mark Twain at Your Fingertips: A Book of Quotations” শীর্ষক শিরোনামের একটি বই খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত বইটিতে মার্ক টোয়েনের বিভিন্ন উক্তি সংকলিত রয়েছে।

কিন্তু, বইটির কোথাও আলোচ্য উক্তিটি কিংবা এর সমধর্মী কোনো উক্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Source: Google Books

পাশাপাশি, মার্ক টোয়েনের শিল্পকর্ম বিষয়ক রিসার্চ আর্কাইভ ‘মার্ক টোয়েন প্রজেক্ট অনলাইন’ এর ওয়েবসাইটেও আলোচ্য উক্তিটির কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে, অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ের স্বার্থে উক্তিটির উৎপত্তি সম্পর্কে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, দ্য সান ফ্রান্সিসকো এক্সমিনারের ওয়েবসাইটে ১৯৬৬ সালের ১০ নভেম্বরের একটি নিবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত নিবন্ধে আলোচ্য উক্তিটির সমধর্মী একটি উক্তি খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়, “In a sound democracy, our rulers ought to be changed routinely, like diapers for the same reason.” কিন্তু, ডিক নোলানের লেখা উক্ত নিবন্ধের সাথে মার্কিন লেখক মার্ক টোয়েনের কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি।

দ্য সান ফ্রান্সিসকো এক্সমিনারে প্রকাশের পর থেকেই উক্তিটির সমধর্মী একাধিক ভার্সনে বিভিন্ন সময়ে প্রচারিত হয়ে আসছে। সমধর্মী এরূপ কিছু উক্তি দেখুন এখানে, এখানে

এছাড়াও, ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত Man of the Year সিনেমার একটি দৃশ্যেও আলোচ্য উক্তিটি খুঁজে পাওয়া যায়। সেই দৃশ্যে বলতে শোনা যায়, “Remember this ladies and gentlemen: It’s an old phrase, basically anonymous, politicians are a lot like diapers, they should be changed frequently, and for the same reasons. Keep that in mind the next time you vote.”

Source: Youtube

কিন্তু, উক্ত ভিডিওটির সাথে মার্কিন লেখক মার্ক টোয়েনের কোন সর্ম্পক খুঁজে পাওয়া যায়নি।

উক্তিটির বিষয়ে অধিকতর সত্যতা নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে মার্ক টোয়েন পেপারস এর কিউরেটর এবং মার্ক টোয়েন প্রজেক্টের সম্পাদক Robert H. Hirst এর সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেন যে আলোচ্য উক্তিটি মার্ক টোয়েনের এমন কোনো প্রমাণ নেই। এছাড়াও তিনি জানান যে, উক্তিটিতে যে ভাষার প্রয়োগ করা হয়েছে তা টোয়েনের ব্যবহৃত ভাষার মত নয় বরং আরও আধুনিক সময়ের।

মূলত, ১৯৬৬ সালে দ্য সান ফ্রান্সিসকো এক্সমিনারে ডিক নোলান একটি নিবন্ধে “In a sound democracy, our rulers ought to be changed routinely, like diapers for the same reason.”(“রাজনীতিবিদ এবং ডায়াপার দুটোই একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর পরিবর্তন করা আবশ্যক এবং একই কারণে”) উক্তিটি ব্যবহার করেন। এরপর থেকেই উক্তিটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন পরিমার্জনে ছড়িয়ে পড়ে। যার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি আলোচ্য উক্তিটি মার্কিন লেখক মার্ক টোয়েনের দাবিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।  

প্রসঙ্গত, পূর্বেও মার্ক টোয়েনের নামে ভুয়া উক্তি ছড়িয়ে পড়লে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, “রাজনীতিবিদ এবং ডায়াপার দুটোই একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর পরিবর্তন করা আবশ্যক এবং একই কারণে” শীর্ষক উক্তিটি মার্ক টোয়েনের দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

নবম গ্রেডের সরকারি চাকরির আবেদন ফি নিয়ে গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার

0

সম্প্রতি, সরকারের অর্থ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে নবম গ্রেডের সরকারি চাকরিতে আবেদনের ফি ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হয়েছে দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

আবেদন ফি

গণমাধ্যমে উক্ত দাবিতে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন সারাবাংলা

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারের অর্থ বিভাগের সাম্প্রতিক প্রজ্ঞাপনে নবম গ্রেডের সরকারি চাকরিতে আবেদনের ফি ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হয়েছে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং ২০২২ সালে প্রকাশিত পূর্বের প্রজ্ঞাপনেই নবম গ্রেডের সরকারি চাকরির আবেদনের ফি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা সাম্প্রতিক প্রজ্ঞাপনে একই রয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইটে গত ১৭ আগস্ট এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from ‘mof.gov.bd’

প্রজ্ঞাপন থেকে জানা যায়, নবম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব গ্রেড (নন কেডার) চাকরিপ্রত্যাশীদের আবেদন ফি ৬০০ টাকা। প্রার্থীরা টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন ও পরীক্ষা ফি জমা নেওয়া যাবে। পরীক্ষার ফি বাবদ সংগ্রহ করা অর্থের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কমিশন হিসেবে টেলিটককে দিতে হবে এবং টেলিটকের এই কমিশনের সাথে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ হবে।

যার মানে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা মোতাবেক নবম গ্রেডে চাকরিপ্রত্যাশীদের আবেদন ফি ৬০০ টাকার সাথে টেলিটকের ১০ শতাংশ কমিশন বা ৬০ টাকা যোগ হবে। টেলিটকের এই কমিশনের ওপর ভ্যাট প্রযোজ্য হবে ১৫ শতাংশ বা ৯ টাকা। ফলে নবম গ্রেডের চাকরিপ্রার্থীদের আবেদনের মোট খরচ হবে ৬৬৯ টাকা।

পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরে এ সংক্রান্ত পূর্বের প্রজ্ঞাপনটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from ‘mof.gov.bd’

প্রজ্ঞাপন থেকে জানা যায়, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরবর্তী সময় থেকে নবম গ্রেডের চাকরিপ্রত্যাশীদের আবেদন ফি হবে ৬০০ টাকা। যা এর পূর্বে ছিল ৫০০ টাকা।

অর্থাৎ, ২০২২ সালেই নবম গ্রেডের আবেদন ফি ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা হয়।

মূলত, গত ১৭ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ কর্তৃক জনবল নিয়োগ ফি সংক্রান্ত বিষয়ে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, এখন থেকে চাকরির আবেদনে টেলিটকের ১০ শতাংশ কমিশনের সাথে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করা হবে। তবে পূর্বের অর্থাৎ, ২০২২ সালের সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত আবেদন ফি এর কোনো পরিবর্তন সাম্প্রতিক প্রজ্ঞাপনে করা হয়নি। কিন্তু, কতিপয় গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে  দাবি করা হয়েছে, নবম গ্রেডের সরকারি চাকরির আবেদনের জন্য ফি ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা করা হয়েছে।

সুতরাং, ২০২২ সালে নবম গ্রেডের সরকারি চাকরির জন্য আবেদন ফি বাড়িয়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করার তথ্যকে সম্প্রতি অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনের তথ্য দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

দেশের ৮০ ভাগ মানুষের তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাওয়া প্রসঙ্গে ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনটি পুরোনো

সম্প্রতি বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পত্রিকায় প্রকাশিত দুইটি সংবাদের ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে

  • ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন দেশের ৮০ ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়
  • বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান
তত্ত্বাবধায়ক সরকার

উক্ত দুই সংবাদের ছবি সম্বলিত ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)।

সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন সময়ে কেবল ইকোনমিস্টের সূত্রে দেশের ৮০ ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় এমন দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)।

২০২২ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্যা ইকোনমিস্টের বরাতে দেশে ৮০ শতাংশ মানুষের তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাওয়া ও বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানের দাবিতে প্রচারিত সংবাদের ছবি দুইটিই পুরোনো। এর মধ্যে দ্যা ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে ২০১৩ সালের ২০ নভেম্বর। অপরদিকে বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানের সংবাদটি চলতি বছরের ৫ জানুয়ারির।

দাবি ১: ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন দেশের ৮০ ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্যা ইকোনমিস্টের বরাতে দেশের ৮০ ভাগ মানুষের তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই সংক্রান্ত দাবির সূত্র হিসেবে একটি সংবাদের প্রতিবেদনের ছবি প্রচার হচ্ছে। কিন্তু এই প্রতিবেদনটি কবে, কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এমন কোনো তথ্য পোস্টগুলো থেকে জানা যায় না।

তবে এ নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে ফেসবুকের মনিটরিং টুল ব্যবহার করে  দেখা যায়, এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৩ সালের ২৩ নভেম্বর, তৎকালীন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায়।

অনুসন্ধানে ২০১৩ সালের ২৩ নভেম্বর ফেসবুকে Qawmi Online Movement/কওমী অনলাইন আন্দোলন নামের একটি ফেসবুক পেজে ‘দৈনিক আমার দেশের আজকের শিরোনাম, আজঃঢাকা, শনিবার, ২৩নভেম্বর ২০১৩, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪২০, ১৮ মহররম ১৪৩৫ হিজরী‘ শীর্ষক একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।

পোস্টটিতে আলোচিত দাবিটির ন্যায় হুবহু একটি শিরোনাম খুঁজে পাওয়া যায়। এই পোস্টটি ছাড়াও আরও একাধিক ফেসবুক পোস্টে একইদিনে আমার দেশ পত্রিকার ওয়েবসাইট প্রিভিউতে আলোচিত শিরোনামটি খুঁজে পাওয়া যায়। এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে

Image Collage: Rumor Scanner

উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে আমার দেশ পত্রিকাটি বন্ধ থাকায় ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করা যায়নি। তবে সার্বিক অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়, আলোচিত সংবাদটি ২০১৩ সালের ২৩ নভেম্বর প্রকাশিত হয়েছিল।

দ্যা ইকোনমিস্ট এমন কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল?

এ নিয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত সংবাদটিতে বিদ্যমান প্রতিবেদনের অংশটুকু পড়ে দেখা যায়, প্রতিবেদনটিতে ব্রিটিশ সংবাদপত্র ইকোনমিস্টের অনলাইন সংস্করণে ‘বাংলাদেশি পলিটিক্স;ট্রেঞ্চ ওয়ারফেয়ার’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, জনমত জরিপ অনুসারে বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ মানুষ নির্দলীয় সরকারের পক্ষে।

পরবর্তীতে এসব সূত্রে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে দ্যা ইকোনমিস্টে ২০১৩ সালের ২০ নভেম্বর প্রকাশিত আলোচিত প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নিয়ে করা এই প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিবেদনটিতে বিভিন্ন জনমত জরিপের ভিত্তিতে বলা হয়েছে দেশের চার-পঞ্চমাংশ মানুষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। এছাড়া এই জনমত জরিপ কারা করেছে এ সংক্রান্তও কোনো তথ্যও প্রতিবেদনটিতে নেই।

অর্থাৎ ২০১৩ সালের ২০ নভেম্বর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে তৎকালীন রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইংরেজি সংবাদপত্র দ্যা ইকোনমিস্ট। 

সে প্রতিবেদনের একটি অংশে বিভিন্ন জনমত জরিপের ফলাফল উল্লেখ করে সংবাদপত্রটি জানায়, বাংলাদেশের চার-পঞ্চমাংশ মানুষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। ইকোনমিস্টে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২৩ নভেম্বর তৎকালীন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় ‘ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন দেশের ৮০ ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বর্তমানে প্রায় ১০ বছর পুরোনো এই প্রতিবেদনটিই নতুন করে আবার প্রচার করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি নিয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে চলতি বছরের গত ৫ জানুয়ারি জাতীয় দৈনিক ইনকিলাবে ‘বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

এই প্রতিবেদনটির সাথে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদনটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Image Collage: Rumor Scanner

অর্থাৎ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ২০১৩ সালের প্রায় দশ বছরের পুরোনো একটি প্রতিবেদনের সাথে চলতি বছরের জানুয়ারির একটি প্রতিবেদন অপ্রাসঙ্গিকভাবে মিলিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। 

মূলত, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে ২০১৩ সালের ২০ নভেম্বর বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্যা ইকোনমিস্ট। প্রতিবেদনটিতে বিভিন্ন জনমত জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে সংবাদপত্রটি জানায়, বাংলাদেশের তৎকালীন চার-পঞ্চমাংশ মানুষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। ইকোনমিস্টের এই প্রতিবেদনের সূত্রে একই বছরের ২৩ নভেম্বর ‘ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন দেশের ৮০ ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়’ শীর্ষক শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে তৎকালীন দৈনিক আমার দেশ। বর্তমানে এই প্রতিবেদনটিই ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি দৈনিক ইনকিলাবে ‘বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনের সাথে মিলিয়ে আবার কখনো না মিলিয়েই কেবল এককভাবে নতুনভাবে প্রচার করা হচ্ছে।

সুতরাং, ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্যা ইকোনমিস্টে দেশের ৮০ ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় দাবিতে প্রায় দশ বছরের পুরোনো একটি তথ্যকে সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিবেদনটির সময় উল্লেখ না করেই প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হওয়ার দাবিটি গুজব

0

সম্প্রতি ‘বিশ্ব শান্তির প্রতীক “নোবেল” পুরুষ্কারের জন্য গণতন্ত্রের মা আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মনোনীত’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

খালেদা

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট  (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদুর মন্তব্যের বরাতে জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের তথ্যকে বিকৃত করে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।

দাবিটির সূত্রপাত

দাবিটি সম্পর্কে অনুসন্ধানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত পোস্টগুলোর সূত্রে গত ৩১ আগস্ট জাতীয় দৈনিক যুগান্তরে ‘বাংলাদেশে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে নোবেল পাওয়ার যোগ্য খালেদা জিয়া’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত ৩১ আগস্ট জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের উদ্যোগে বিএনপি ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন উপলক্ষ্যে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও শহীদ জিয়াউর রহমান’ শীর্ষক আলোচনা সভায়  বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বক্তব্য প্রসঙ্গে বলেন,  ‘বাংলাদেশে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে যদি কেউ নোবেল পায় সেটা খালেদা জিয়া পাওয়ার যোগ্য।’ 

এই প্রতিবেদনটি থেকে শামসুজ্জামান দুদুর এই বক্তব্যটি ছাড়া খালেদা জিয়ার নোবেল পাওয়া প্রসঙ্গে অন্য কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া না যাওয়ায় রিউমর স্ক্যানার টিম পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধান করে।

খালেদা জিয়ার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হওয়ার দাবিটি ভিত্তিহীন

অনুসন্ধানে দেখা যায়,  নোবেল শান্তি পুরস্কার নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়াটি একটি দীর্ঘ মেয়াদী প্রক্রিয়া। যেটি শুরু হয় মূলত প্রতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে। এই সময় নরওয়ের নোবেল কমিটি অনুমোদিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে মনোনয়ন চায়। যা পহেলা ফেব্রুয়ারির আগে নরওয়ের অসলোতে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটিতে পাঠানো হয়। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত মনোনয়নের জন্য পাঠানো ব্যক্তিদের মধ্য থেকে প্রার্থীদের কাজের মূল্যায়ন করে এবং একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করে।

Image Source: Nobelprize

তারপর মার্চ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত তালিকার উপর উপদেষ্টা পর্যায়ে পর্যালোচনা হয় এবং অক্টোবরে এসে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের বেছে নেওয়া হয়। এই মাসের শুরুতে, নোবেল কমিটি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের মাধ্যমে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীদের নির্বাচন করে। এরপর নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয় এবং বিজয়ীদের হাতে ডিসেম্বরের ১০ তারিখ নরওয়ের অসলোতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

তবে, এ দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় কখনোই নোবেল কর্তৃপক্ষ মনোনীত প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করে না। যেমন, নোবেল পুরস্কারের ওয়েবসাইটে গিয়ে জানা যায়, এ বছর শান্তিতে মোট ৩০৫  জনকে মনোনয়নের জন্যে বাছাই করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ২১২ জন ব্যক্তি ও ৯৩ টি সংস্থা রয়েছে। কিন্তু কারো নাম নেই।

কারণ, নোবেল ফাউন্ডেশনের বিধি অনুযায়ী মনোনয়ন সম্পর্কিত কোনো তথ্য জনসম্মুখে বা ব্যক্তিগতভাবে ৫০ বছরের আগে কখনো প্রকাশ করা হয় না। এ বিধির আওতায় পুরস্কারের জন্য মনোনীত ব্যক্তি, মনোনয়ন বাছাইকারী ও মনোনয়নকারী, পাশাপাশি এ পুরস্কার সম্পর্কিত তদন্ত এবং মতামত সবই অন্তর্ভুক্ত।

এ বিধিতে বলা হয়েছে, নোবেল কমিটি গণমাধ্যম বা প্রার্থীদের কাছে কখনোই তাদের নাম প্রকাশ করে না। প্রদত্ত পুরস্কার কাকে দেওয়া হবে এ নিয়ে আগাম জল্পনা-কল্পনা করা হয়। এটি করা হয় নিছক অনুমান থেকে অথবা মনোনয়নের পিছনে থাকা ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে।

নোবেল কমিটি নাম না প্রকাশ করলেও কখনো কখনো সুপারিশকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বরাতে তাদের সুপারিশকৃত ব্যক্তির বিষয়ে সংবাদ হয়ে থাকে। এমন সম্ভাবনা থেকে প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন কি-ওয়ার্ডের মাধ্যমে অনুসন্ধান করেও নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এছাড়া অনুসন্ধানে বিএনপির কোনো দায়িত্বশীল নেতার পক্ষ থেকেও দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন এমন কোনো দাবি পাওয়া যায়নি।

পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবিরও দাবিটিকে গুজব বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।  

মূলত, গত ৩১ আগস্ট জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায়  বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বক্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে যদি কেউ নোবেল পায় সেটা খালেদা জিয়া পাওয়ার যোগ্য। তার এ বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে দেশীয় কতিপয় গণমাধ্যম সংবাদ শিরোনাম করে। পরবর্তীতে এই প্রতিবেদনের সূত্রেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খালেদা জিয়া নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন দাবিতে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, খালেদা জিয়ার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পাওয়ার দাবির পক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র পাওয়া যায়নি। এছাড়া নোবেল কমিটিও পুরস্কারের জন্য মনোনীত কারো নাম প্রকাশ করে না। 

প্রসঙ্গত, যুগান্তরের উক্ত প্রতিবেদনের সূত্রেই পত্রিকাটিকে উদ্ধৃত করে সম্প্রতি ‘বাংলাদেশে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে নোবেল পাওয়ার যোগ্য খালেদা জিয়া‘ শীর্ষক একটি দাবি প্রচার  হলে সেটিকে বিভ্রান্তিকর উল্লেখ করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।

প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানেঃ খালেদা জিয়া নোবেল পাওয়ার যোগ্য শীর্ষক মন্তব্যটি যুগান্তরের নয়, বিএনপি নেতার 

সুতরাং, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হওয়ার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

ছবিটি নরওয়েতে কোরআনে আগুন দেওয়া ব্যক্তির নয়

0

সম্প্রতি, ‘নরওয়েতে কোরআনে আগুন দেওয়া ব্যক্তির দুই হাতে পঁচন ধরেছে’ দাবিতে দুটি ছবি সম্বলিত পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

কোরআনে আগুন

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু সাম্প্রতিক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে ২০২১ সালে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে ২০১৯ সালে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, হাসপাতালের বিছানায় হাতে পচন ধরা ব্যক্তিটি কোরআন পোড়ানো সেই ব্যক্তি নন বরং তিনি আমেরিকার নাগরিক Paul Gaylord এবং ২০১২ সালে বিড়ালের কামড়ে তার দুই হাতের আঙ্গুল এক বিশেষ ধরণের রোগে আক্রান্ত হয়।

অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম The Guardian এর ওয়েবসাইটে ২০১২ সালে ‘Oregon man recovering from rare case of the plague’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে নরওয়েতে কোরআনে আগুন দেয়া যুবকের হাতে পচন ধরেছে দাবিতে প্রচারিত ছবিটির অনুরূপ একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: The Guardian

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, হাসপাতালের বিছানায় থাকা এই ব্যক্তি একজন আমেরিকান নাগরিক। Paul Gaylord নামের এই ব্যক্তির বিড়ালের কামড়ে দুই হাতের আঙুল এক বিশেষ ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়েছিল।

পরবর্তীতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম Daily Mail এর ওয়েবসাইটে ২০১২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ‘I’m very happy to be alive’: Plague victim has fingers and toes amputated in painful 2.5 hour surgery’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনেও আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Daily Mail

এই প্রতিবেদন থেকেও আলোচিত ছবিটির বিষয়ে একই তথ্য জানা যায়।

অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, এই ব্যক্তি নরওয়েতে কোরআনে আগুন দেওয়া ব্যক্তি নন এবং তার হাতের রোগটি বিড়ালে কামড়ের ফলে হয়েছে।

পাশাপাশি, নরওয়েতে কোরআনে আগুন দেওয়া ব্যক্তির হাতে পচন ধরার বিষয়ে গণমাধ্যম কিংবা অন্য কোনো সূত্রে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, ২০১২ সালে আমেরিকার নাগরিক Paul Gaylord বিড়ালের কামড়ে দুই হাতের আঙ্গুল এক বিশেষ ধরণের রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। পরবর্তীতে ইন্টারনেট থেকে তার হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকার একটি ছবি সংগ্রহ করে নরওয়েতে কোরআনে আগুন দেয়া যুবকের হাতে পচন ধরার ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে নরওয়েতে SIAN (Stopp Islamiseringen av Norge) নামক মুসলিম বিদ্বেষী গ্রুপের বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে গ্রুপটির নেতা Lars Thorsen কোরআনে আগুন ধরিয়ে দেন।

উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন ধর্মীয় গুজব প্রচার নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে এবং এখানে

সুতরাং, নরওয়েতে কোরআনে আগুন দেওয়া ব্যক্তির হাতে পঁচন ধরেছে দাবিতে বিড়ালের কামড়ে দুই হাতের আঙ্গুল এক বিশেষ ধরণের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

অভিনেতা আফজাল হোসেনের মৃত্যুর ভুয়া খবর প্রচার

0

গত ০৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে মূলধারার গণমাধ্যম যমুনা টিভির এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বরেণ্য অভিনেতা আফজাল হোসেন মারা গেছেন।

আফজাল হোসেন

যমুনা টিভির ফেসবুক পেজে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ)  

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, অভিনেতা আফজাল হোসেন মারা যাননি বরং তিনি অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে রয়েছে।  

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে গত ০৫ সেপ্টেম্বর দুপুর ২ টা ৫০ মিনিটে অভিনেতা এবং আফজাল হোসেনের বন্ধু ফখরুল বাশার মাসুম এর ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আফজাল হোসেনের শারীরিক অবস্থা নিয়ে একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot : Fakhrul Bashaer Masum’s Facebook page

উক্ত পোস্টে বাশার বলেন, প্রাথমিক বিপদ কাটিয়ে তিনি (আফজাল হোসেন) এখন ভালো আছেন। 

পরবর্তীতে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম নিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে একইদিন (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল তিনটা উনপঞ্চাশ মিনিটে ‘আফজাল হোসেনের সর্বশেষ শারিরীক অবস্থার কথা জানালেন ফরিদুর রেজা সাগর‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot : News24 online’s website

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, হার্ট অ্যাটাক ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত আফজাল হোসেন ০৪ সেপ্টেম্বর রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শে আফজালকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি এখন ভালো আছেন। তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আফজাল হোসেনের ঘনিষ্ট বন্ধু ফরিদুর রেজা সাগর গণমাধ্যমে এ কথা জানিয়েছেন।

এছাড়াও, ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার এর বাংলা সংস্করণে আজ ০৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে ‘দুএকদিনের মধ্যে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরতে পারেন আফজাল হোসেন ‘ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot : The Daily Star Bangla

উক্ত প্রতিবেদনেও আফজাল হোসেনের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয় এবং তাকে এখন হাসপাতালের সিসিইউতে থেকে ০৫ সেপ্টেম্বর রাতে কেবিনে নেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।  

মূলত, গত ০৪ সেপ্টেম্বর (সোমবার) হার্ট অ্যাটাক ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অভিনেতা আফজাল হোসেন অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর প্রেক্ষিতে যমুনা টিভিতে অভিনেতা আফজাল হোসেনের মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, তিনি এখন সুস্থ আছেন। 

সুতরাং, অভিনেতা আফজাল হোসেনের মৃত্যুতে যমুনা টিভিতে মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করা হয়েছে ; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ড. ইউনূসের পক্ষে নীল ছবির নায়িকা মিয়া খলিফা বিবৃতি দেননি

0

সম্প্রতি, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে নীল ছবির নায়িকা মিয়া খলিফা ও শ্যারোন স্টোন শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

ড. ইউনূস

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে নীল ছবির অভিনেত্রী মিয়া খলিফার বিবৃতি দেওয়ার বিষয়টি মিথ্যা এবং বিবৃতি দাতার তালিকায় শ্যারন স্টোন নামের এক নারীর নাম থাকলেও তিনি নীল ছবির নায়িকা বা পর্নো তারকা নন বরং তিনি একজন মার্কিন অভিনেত্রী। 

কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে জার্মান ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে বাংলা তে “ড. ইউনূস প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি” শিরোনামে চলতি বছরের ৮ মার্চ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, “শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের আচরণ নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা৷ 

এ বিষয়ে বিশ্বের ৪০ জন নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। ৪০ বিশ্বনেতার মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, দেশটির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, প্রয়াত মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডির ছেলে টেড কেনেডি জুনিয়রের মতো আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব৷”

Screenshot : DW

একই তারিখে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনেও একই তথ্য পাওয়া যায় এবং উক্ত প্রতিবেদনে বিবৃতিতে সই করা সবার নামের তালিকা পাওয়া যায়। উক্ত নামের তালিকায় নীল ছবির তারকা বা পর্নো তারকা মিয়া খলিফার নাম পাওয়া যায়নি। তবে শ্যারন স্টোন নামের একজন মার্কিন অভিনেত্রীর নাম পাওয়া যায়। 

পরবর্তীতে অনুসন্ধানের PROTECT YUNUS নামের ব্লগ ওয়েবসাইটে গত ২৭ আগস্ট “Global Leaders and Nobel Laureates Call for Ending the Persecution of Muhammad Yunus” শীর্ষক শিরোনামে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে দেওয়া বিবৃতিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

বিবৃতিটি পর্যবেক্ষণ করে বিবৃতি দাতাদের নামের তালিকায় সেখানে পর্নো তারকা মিয়া খলিফার নাম পাওয়া যায়নি। তবে, শ্যারন স্টোন নামের একজনের নাম পাওয়া যায়, যার পরিচয় হিসেবে ‘মা’ উল্লেখ করা হয়েছে।

Screenshot: PROTECT YUNUS 

এছাড়াও, গত ২৭ আগস্ট শ্যারন স্টোনের পরিচয় অনুসন্ধানে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর সাথে সম্পর্কিত এমন একই নামের একজন মার্কিন অভিনেত্রী পাওয়া যায়। ছবি স্টোরেজ প্রতিষ্ঠান Gettyimages এর ওয়েবসাইটে ২০০৬ সালে নোবেল পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে শ্যারন স্টোনকে মঞ্চে দেখা যায়। এছাড়াও আরও একাধিক অনুষ্ঠানে মার্কিন অভিনেত্রী শ্যারন স্টোনের সাথে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর ছবি পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে উক্ত চিঠিতে মা পরিচয়ে উদ্ধৃত শ্যারন স্টোন নামের ব্যক্তি মার্কিন অভিনেত্রী হিসেবে প্রতীয়মান হয়। 

Screenshot: Gettyimages 

শ্যারন স্টোন সাইকো সেক্সুয়াল থ্রিলার ‘বেসিক ইনস্টিনক্ট’ এ অভিনয় করেছিলেন। লাভলেস ছবিতে তিনি একজন পর্নো তারকার মা এর চরিত্রে অভিনয় করেন। বায়োগ্রাফি ওয়েবসাইটে শ্যারন স্টোন সম্পর্কে জানা যায়, শ্যারন স্টোন হলেন একজন অস্কার-মনোনীত অভিনেত্রী যিনি টোটাল রিকল, বেসিক ইনস্টিনক্ট, স্লিভার, ক্যাসিনো এবং লাভেলেস সহ বিভিন্ন চলচ্চিত্রে তার ভূমিকার জন্য পরিচিত৷

Screenshot : Biography 

অর্থাৎ, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে বিবৃতি দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে নীল ছবির নায়িকা মিয়া খলিফার নাম নেই। শ্যারন স্টোন নামের একজন অভিনেত্রীর নাম রয়েছে, যিনি কিছু সাহসী ছবিতে অভিনয় করেছেন, তবে তিনি পর্নো তারকা নন বরং একজন সমাদৃত মার্কিন অভিনেত্রী। 

মূলত, গত মার্চ ও আগস্ট মাসে শান্তিতে নোবেলজয়ী বাংলাদেশী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে বিশ্বের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিশিষ্ট ব্যক্তি দুইটি পৃথক বিবৃতি প্রকাশ করেন। যাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, উইকিপিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলস, মেক্সিকোর সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিসেন্ট ফক্স রয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ড. ইউনূসের পক্ষে নীল ছবির নায়িকা মিয়া খলিফা ও শ্যারন স্টোনের বিবৃতি দেওয়ার কথা প্রচার করা হয়। তবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে দুই দফায় বিবৃতি দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে মিয়া খলিফা নামের কেউ ছিলেন না এবং শ্যারন স্টোনের নাম থাকলেও তিনি নীল ছবির নায়িকা বা পর্নো তারকা নন। তিনি একজন অভিনেত্রী। তবে দুই পৃথক বিবৃতিতেই হিসেবে ‘মা’ উল্লেখ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগেও ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে গুজব ছড়ানো হলে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন পড়ুন এখানে, এখানে এবং এখানে

এছাড়াও ৪০ বৈশ্বিক ব্যক্তিত্বের দেওয়া বিবৃতির ওপর ‘ড. ইউনূস প্রসঙ্গে ৪০ বৈশ্বিক ব্যক্তির খোলা চিঠি : আসলে কী ঘটেছে?’ শিরোনামে রিউমর স্ক্যানার এর একটি ফ্যাক্ট স্টোরি দেখুন এখানে

সুতরাং, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে নীল ছবির অভিনেত্রী মিয়া খলিফার বিবৃতি দিয়েছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা এবং শ্যারন স্টোন নামের একজন বিবৃতি দিলেও তিনি পর্নো তারকা নন। 

তথ্যসূত্র

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষক ভুয়া তথ্য কালবেলার সূত্রে প্রচার 

সম্প্রতি, জাতীয় দৈনিক কালবেলা আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষক সংবাদ প্রকাশ করেছে দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

তত্ত্বাবধায়ক

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ) এবং পোস্ট (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কালবেলা’তে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষক কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়নি বরং গত মাসে ভুয়া এই তথ্যটি সূত্রহীনভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর সম্প্রতি কালবেলার সূত্রে ফের প্রচার করা হচ্ছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কালবেলা’র ওয়েবসাইট, গেল কয়েকদিনের প্রিন্ট সংস্করণ এবং ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা রেখা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মন্তব্য সংক্রান্ত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায় নি। 

পরবর্তীতে এ বিষয়ে জানতে কালবেলা’র অনলাইন বিভাগের প্রধান পলাশ মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি জানান, কালবেলা এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি। এটি একটি ভুয়া পোস্ট।  

অর্থাৎ, আলোচিত দাবিটির সূত্র হিসেবে কালবেলা’র নাম ব্যবহার করা হলেও সংবাদমাধ্যমটিতে এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়নি। 

এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান করে গত ২৫ আগস্ট একই তথ্য সম্বলিত পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি। 

Screenshot source: Facebook 

অর্থাৎ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষক তথ্যটি সূত্রহীনভাবে আগস্ট থেকেই অনলাইনে প্রচারিত হচ্ছে।  

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান প্রসঙ্গে জানতে অনুসন্ধান করে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিনিধির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণের বিষয়ে কোনো মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, ‘আওয়ামী লীগ সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ডেডলাইন জানিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র’ শীর্ষক সমজাতীয় আরেকটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।  

মূলত, সম্প্রতি “জাতীয় দৈনিক কালবেলা ‘আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক  সরকারের রূপরেখা চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে” দাবিতে একটি তথ্য ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে, কালবেলা’য় এমন কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়নি। তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও এমন কোনো মন্তব্যের বিষয়ে গণমাধ্যমে কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। তবে, একই তথ্য সূত্রহীনভাবে গত আগস্ট থেকেই প্রচার হয়ে আসতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার৷ 

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ড. ইউনূস তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হচ্ছেন দাবিতে কালবেলার সূত্রে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হলে এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

সুতরাং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষক একটি ভুয়া তথ্য কালবেলার সূত্রে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

  • Kalbela: Website 
  • Statement from Palash Mahmud, Kalbela 
  • Rumor Scanner’s Own Analysis 

ফ্লুরোসেন্ট বাল্বের দীর্ঘ এক্সপোজার ছবিকে হোয়াইট অরোরা দাবি

0

সম্প্রতি ‘White Aurorae,Finland‘ শীর্ষক শিরোনামে কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

হোয়াইট অরোরা

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফিনল্যান্ডের হোয়াইট অরোরা দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো আসলে হোয়াইট অরোরার নয় বরং ছবিগুলো ফ্লুরোসেন্ট ল্যাম্প ব্যবহার করে দীর্ঘ এক্সপোজারের মাধ্যমে তোলা।

অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ২০১০ সালের ১৬ জুলাই রাশিয়ান ওয়েব ফোরামে ‘Fluorescent lamb and electromagnetic field’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত পোস্টে থাকা ছবিগুলোর সাথে আলোচ্য দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলোর হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। একই পোস্টে আরও কিছু ছবি রয়েছে যেগুলোতে রাতের আকাশের বিপরীতে সাদা আলো দেখা যাচ্ছে।

Photo collage by Rumor Scanner

পোস্টের লেখকের ছবিগুলোর বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ছবিগুলো ফ্লুরোসেন্ট লাইট ব্যবহার করে দীর্ঘ এক্সপোজারের মাধ্যমে তোলা। পোস্টের বিবরণীতে কোথাও হোয়াইট অরোরার কথা উল্লেখ করা হয়নি। 

এছাড়াও, এক সাক্ষাৎকারে ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা ‘চেক ইউর ফ্যাক্ট’ কে নর্দান লাইটস বিষয়ক ছবিতে বিশেষজ্ঞ একজন ফরাসি ফটোগ্রাফার ভার্জিল রেগলিওনি বলেন, ‘আমি বেশ নিশ্চিত যে এই ছবিটি বিভিন্ন কারণে অরোরা বোরিয়ালিস নয়। রঙের এই বর্ণালি অরোরাল কার্যকলাপের সাথে খাপ খায় না, এছাড়াও ক্যামেরাগুলি আরও বেশি রঙের আলোর ফ্রিকোয়েন্সি ক্যাপচার করতে সক্ষম হয়।’

White Aurora কী?

National Geographic Society নামক একটি ওয়েবসাইটে ‘Aurora‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অরোরা হলো একটি প্রাকৃতিক আলোর প্রদর্শন যা নীল, লাল, হলুদ, সবুজ, কমলা রঙের হয়ে থাকে এবং এগুলো কেবল রাতেই দেখা যায়। পাশাপাশি এগুলো সাধারণত নিম্ন মেরু অঞ্চলে দেখা যায়।

Photo collage by Rumor Scanner

আলোচ্য দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলোর সাথে উক্ত ওয়েবসাইটে প্রকাশিত অরোরার ছবির কোনো প্রকার মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, ফ্লুরোসেন্ট ল্যাম্প ব্যবহার করে দীর্ঘ এক্সপোজারের মাধ্যমে তোলা ছবিকে ফিনল্যান্ডের প্রাকৃতিক আলোর বিশেষ প্রদর্শন বা হোয়াইট অরোরা এর ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। 

উল্লেখ্য, একই দাবিতে গত বছরে হোয়াইট অরোরার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হলে সেটিকে মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আফ্রিকান ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ‘Africa Check

সুতরাং, ফ্লুরোসেন্ট ল্যাম্পের ছবিকে ফিনল্যান্ডের হোয়াইট অরোরার বাস্তব ছবি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • National Geographic Society : Aurora

Statement : Virgil Reglioni