সম্প্রতি প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ তার নারী সহকর্মীদের যেভাবে উত্ত্যক্ত করেন এমন দাবিতে পত্রিকাটির একজন নারী সাংবাদিককে উদ্ধৃত করে ‘সুন্দরী সহকর্মীদের গাল রগড়ে আদর করে দেন প্রথম আলো নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরীফ।’ শীর্ষক একটি তথ্য ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ কর্তৃক নারী সহকর্মীদের উত্ত্যক্ত করার দাবিতে পত্রিকাটির নারী সাংবাদিক নাজনীন আখতার তন্বীর নামে প্রচারিত বক্তব্যটি মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে ঐ নারী সাংবাদিককে উদ্ধৃত করে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে উক্ত বক্তব্যটি প্রচার করা হচ্ছে।
প্রথম আলোতে ঐ নামে কি কোনো নারী সাংবাদিক আছে?
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম প্রথমেই উল্লিখিত নাজনীন আখতার তন্বীর পরিচয় জানার চেষ্টা করে। আমরা অনুসন্ধানে নিশ্চিত হই যে, উক্ত নামে একজন নারী সাংবাদিক প্রথম আলোতে জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত আছেন।
নাজনীন আখতার তন্বী কি এমন কোনো মন্তব্য করেছেন?
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ কর্তৃক নারী সহকর্মীদের উত্ত্যক্ত করার দাবিতে নারী সাংবাদিক নাজনীন আখতার তন্বীকে উদ্ধৃত করে যে বক্তব্যটি প্রচার করা হচ্ছে তার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি।
পরবর্তীতে বিষয়টির অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম নারী সাংবাদিক নাজনীন আখতার তন্বীর সঙ্গে যোগাযোগ করে।
এসময় তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, “এটা পুরোপুরি মিথ্যা৷ আমি এমন মন্তব্য কখনোই করিনি৷ আমি অবাক হচ্ছি, মানুষ এত ঘৃণ্য কাজ কিভাবে করে?”
এছাড়া একই বিষয়ে প্রথম আলোর হেড অব রিপোর্টিং টিপু সুলতান রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “এটা তো ভুয়া অবশ্যই। কদিন আগে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে আমাদের নামে একটি মামলা দিলো, আমরা সেসব মামলায় জামিনও পেলাম। এখন এটা আমাদের বিরুদ্ধে একরকম চরিত্রহননের চেষ্টা করছে, কেউ না কেউ এটা তো বুঝা যাচ্ছে। কারণ এটা প্রথম না, গত এক সপ্তাহে আমাদের আরও কলিগের নামে এমন প্রচারণা চালানো হয়েছে।”
প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদকের নামে পূর্বেও গুজব প্রচার করা হয়
উল্লেখ্য, গত ২৯ মার্চ প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের নামে স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের দায় ঐ প্রতিবেদকের উপর দিয়ে ‘এই দায় প্রথম আলোর নয়, এই দায় শামসুজ্জামানের’ শীর্ষক একটি উক্তি ফেসবুকে প্রচার করা হয়৷
তবে পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোতে প্রকাশিত আলোচিত প্রতিবেদনের দায় প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের বলে কোনো মন্তব্য করেননি পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বরং কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়া ভিত্তিহীনভাবে উক্ত তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানটি পড়ুন এখানে।
মূলত, প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নারী সাংবাদিক নাজনীন আখতার তন্বীকে উদ্ধৃত করে সম্প্রতি ফেসবুকে ‘সুন্দরী সহকর্মীদের গাল রগড়ে আদর করে দেন প্রথম আলো নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরীফ।’ শীর্ষক একটি বক্তব্য প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে যে, সাজ্জাদ শরিফ কর্মক্ষেত্রে তার নারী সহকর্মীদের এভাবে উত্ত্যক্ত করে থাকেন। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, নারী সাংবাদিক নাজনীন আখতার তন্বীর নামে উক্ত দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, যা নাজনীন আখতার তন্বী নিজেই রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।
সুতরাং, প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ কর্তৃক নারী সহকর্মীদের উত্ত্যক্ত করার দাবিতে পত্রিকাটির নারী সাংবাদিক নাজনীন আখতার তন্বীর নামে প্রচারিত বক্তব্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Contact with Nazneen Akther Ronny, Senior Reporter, Prothom Alo
- Contact with Tipu Sultan, Head of Reporting, Prothom Alo