সম্প্রতি, চাঁদপুর শহরের একটি মসজিদের ইমাম কর্তৃক মোবাইল দেখে নামাজ পড়ানোর ছবি দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে এখানে এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মোবাইল দেখে ইমাম কর্তৃক নামাজ পড়ানোর ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং এটি গত রমজানে অর্থাৎ ২০২২ সালে চাঁদপুরে মুসআব বিন উমাইর নামক একটি মসজিদে তারাবী নামাজ পড়ানোর দৃশ্য থেকে প্রাপ্ত ছবি।
অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘Mamunur Rashid’ নামের ফেসবুক একাউন্টে গত বছরে অর্থাৎ ২০২২ সালের ০৫ এপ্রিল তারিখে “মোবাইল দেখে নামাজ পড়া কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি পোস্টে একই ছবির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।

এছাড়া, ফেসবুকে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ‘Junayed Faruk’ নামের আরেকটি ফেসবুক একাউন্টে একই তারিখে অর্থাৎ ২০২২ সালের ০৫ এপ্রিলে “নাউজুবিল্লাহ, মোবাইল দেখে দেখে নামাজ পড়া, এরা নামাজ পড়তেছে নাকি নামাজের সাথে মসকরা করতেছে” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

পাশাপাশি, কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে চলতি বছরের ০৩ এপ্রিল ‘Bangla Tribune’ এর ওয়েবসাইটে “মোবাইল দেখে তারাবি নামাজ পড়ানোর ভাইরাল ছবিটি গত রমজানের” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

বাংলা ট্রিবিউনের উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়,
“চাঁদপুর শহরের একটি মসজিদের ইমাম মোবাইলে সুরা দেখে তারাবির নামাজ পড়াচ্ছেন—এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। তবে ভাইরাল ছবিটি গত রমজান মাসের। এ বছর এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর চাঁদপুর শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের মুসআব বিন উমাইর মসজিদে আহলে হাদিসপন্থিদের তারাবির নামাজ পড়ানোর একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। চলতি রমজানে ওই ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। বিষয়টি দেখে বেশিরভাগ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সেইসঙ্গে অনেকে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। ওই মসজিদের দায়িত্বশীলরা বলছেন, এ বছর অন্যান্য মসজিদের মতোই তারাবির নামাজ পড়ানো হচ্ছে। এবার মোবাইল দেখে তারাবির নামাজ পড়ানোর ঘটনা ঘটেনি। ভাইরাল হওয়া ছবি গত বছরের। এটি আমাদের এই মসজিদে ঘটেছিল।”
আলোচিত বিষয়টি নিয়ে চাঁদপুর মুসআব বিন উমাইর জামে মসজিদ এবং মাদ্রাসা কমপ্লেক্স এর ফেসবুক পেইজে প্রদত্ত মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে মসজিদ কর্তৃপক্ষ রিউমর স্ক্যানারকে জানায়, ২০২২ সালের রমজান মাসেই কেবল মোবাইলে সূরা দেখে তারাবী নামাজ পড়ানো হয়েছিলো। সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকে যেসব ভিডিও এবং ছবি প্রচারিত হচ্ছে মূলত তাদের পেইজ থেকেই সর্বপ্রথম এটি প্রচার করা হয়েছিলো। যদিও ভিডিওটি পরবর্তীতে ডিলিট করে দেয়া হয়েছে।
তবে, গত বছরে অর্থাৎ ২০২২ সালের রমজান মাসে মোবাইল দেখে নামাজ পড়ানোর ভিডিওটি থেকে প্রাপ্ত স্ক্রিনশট সাম্প্রতিক সময়ে পূর্বের তারিখ উল্লেখ ব্যতীত প্রচার করার ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলোর কমেন্টবক্সে কিছু বিভ্রান্তির নমুনা উল্লেখ করা হলো;

মূলত, গত বছরে অর্থাৎ ২০২২ সালের রমজান মাসে চাঁদপুর শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক সংলগ্ন “মুসআব বিন উমাইর” নামক একটি মসজিদে ইমাম কর্তৃক মোবাইলে সূরা দেখে নামাজ পড়ানো হয়েছিলো। সে সময়ে মসজিদ কর্তৃপক্ষ তাদের ফেসবুক পেজে ভিডিওটি প্রচার করেছিলো। গত রমজানে ইমাম কর্তৃক মোবাইল দেখে নামাজ পড়ানোর ঘটনায় ধারণকৃত ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকে পূর্বের তারিখ উল্লেখ ব্যতীত তা পুনরায় প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ন্যায় এ বছরেও অর্থাৎ ২০২৩ সালে বরিশাল নগরের ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোডের ‘বায়তুল আনোয়ার’ জামে মসজিদে মোবাইল দেখে তারাবি নামাজ পড়ানোর ঘটনা ঘটেছে বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়। এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ ‘BanglaNews24‘ এর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
সুতরাং, ২০২২ সালের রমজানে মসজিদের ইমাম কর্তৃক মোবাইলে দেখে নামাজ পড়ানোর দৃশ্যটি সাম্প্রতিক সময়ে পূর্বের তারিখ উল্লেখ ব্যতীত ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Facebook Post by Mamunur Rashid.
- Facebook Post by Junayed Faruk.
- Bangla Tribune: মোবাইল দেখে তারাবি নামাজ পড়ানোর ভাইরাল ছবিটি গত রমজানের
- Statement from মুসআব বিন উমাইর জামে মসজিদ এবং মাদ্রাসা কমপ্লেক্স
- BanglaNews24: মোবাইল ফোন দেখে তারাবি নামাজ পড়লেন হাফেজ