সম্প্রতি, ‘ইয়েমেনের রাজধানী সানার প্রশাসনিক এলাকা জাবল হারজের পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত ‘আল হুতাইব’ নামক স্থানে কোনদিন বৃষ্টি হয়নি’ দাবিতে একটি পোস্টে(আর্কাইভ) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। উক্ত পোস্টে আরো দাবি করা হয়েছে, আকাশে মেঘ জমে সমতল থেকে ২০০০ মিটার উপরে কিন্তু ‘আল হুতাইব’ নামক স্থানটি মাটি থেকে ৩২০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত হওয়ায় সেখানে কোনো বৃষ্টি হয়না।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইয়েমনের ‘আল হুতাইব’ নামক স্থানটিতে কোনোদিন বৃষ্টিপাত না হওয়ার দাবিটি সত্য নয় বরং বিভিন্ন আবহাওয়া বিষয়ক ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী উক্ত স্থানটিতে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। তাছাড়া “ভূপৃষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ ২০০০ মিটারের মধ্যেই মেঘ জমা হয়” শীর্ষক দাবিটিও সত্য নয়।
পৃথিবীর যেসব স্থানে বৃষ্টিপাত খুবই কম হয় এমন জায়গার অনুসন্ধানে Sciencelive and Forbes এর ওয়েবসাইটে এই সংক্রান্ত ফলাফল পাওয়া যায়। তবে সেই তালিকায় আল-হুতাইবের নাম পাওয়া যায়নি।
পাকিস্তান ভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম Dawn এর ওয়েবসাইটে ২০১৫ সালে ফোটোসাংবাদিক Mehlum S Sadriwala কর্তৃক প্রকাশিত একটি ভ্রমণকাহিনী পাওয়া যায়। যেখানে তিনি ইয়েমেনে তার ভ্রমণ এবং আল-হুতাইবের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। ভ্রমণকাহিনীতে তিনি আল-হুতাইবের সৌন্দর্য বর্ণনা করে লিখেছেন সেখানে প্রতিদিন বৃষ্টি হয়েছিলো।
পরবর্তীতে Weather Atlas নামক একটি ওয়েবসাইটের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আল হুতাইবে বছরের দুইটি সময়ে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। উক্ত স্থানে এপ্রিল মাসের গড় বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হচ্ছে ১০৩ মিলিমিটার। অন্যদিকে আগস্ট মাসে উক্ত স্থানটিতে ১১১ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। উল্লেখ্য যে আল হুতাইবে বছরের সর্বনিম্ন (৫ মিলিমিটার) বৃষ্টিপাত ঘটে ডিসেম্বর মাসে।
তাছাড়া Accu Weather নামক ওয়েবসাইট থেকে আল হুতাইবের আবহাওয়ার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেখা যায় চলতি এপ্রিল মাসের বিভিন্ন তারিখেও উক্ত স্থানে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অর্থাৎ, ইয়েমেনের আল-হুতাইব নামক স্থানে কখনো বৃষ্টি না হওয়ার দাবিটি মিথ্যা।
মেঘের উপরে অবস্থিত স্থানে কি বৃষ্টি হয় না?
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন ধরণের মেঘ রয়েছে। আর এই মেঘগুলোকে মূলত এদের আকার এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে তাদের উচ্চতার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন নাম দেওয়া হয়।
“UCAR Center for Science Education” এর তথ্যমতে, যেসকল মেঘ ভূপৃষ্ঠ থেকে ২ কিলোমিটার উচ্চতার মধ্যে অবস্থান করে তাদের বলা হয় Low Clouds. অন্যদিকে, ভূপৃষ্ঠ থেকে ২-৭ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থানকারী মেঘকে বলা হয় Middle Clouds. আবার, পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ৫-১৩ কিলোমিটার উচ্চতার মেঘকে বলা হয় High Clouds. অন্যদিকে, Cumulonimbus নামক এক ধরণের মেঘ রয়েছে যারা পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ১৩ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত যেকোনো স্থানেই অবস্থান করতে পারে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের তথ্যমতে, Cumulonimbus নামের এই মেঘ বজ্রপাত এবং ভারী বৃষ্টিপাত ঘটাতে সক্ষম।
অর্থাৎ, ‘আল হুতাইব’ নামক স্থানটি মাটি থেকে ৩২০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত হওয়ায় সেখানে কোনো বৃষ্টি না হওয়ার দাবিটি ভিত্তিহীন।
মূলত, ইয়েমেনের ‘আল হুতাইব’ নামক স্থানে কখনো বৃষ্টি হয় না এমন দাবিটি বিগত কয়েক বছর ধরে সামাজিক মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে অনির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে প্রচার হয়ে আসছে। তবে, রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আল হুতাইব নামক স্থানটি মোটেও বৃষ্টিপাতহীন শুষ্ক এলাকা নয় বরং এপ্রিল এবং আগস্ট মাসে সেখানে গড়ে ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়।
পূর্বে একই বিষয়টি ভারতে ভুলভাবে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে India Today এবং Factly.
সুতরাং, ইয়েমনের আল হুতাইব নামক স্থানে কোনোদিন বৃষ্টিপাত না হওয়ার দাবিটি মিথ্যা।
হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে করা পোস্টগুলোতে যা দাবি করা হচ্ছে
“বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১৫ রমজান শুক্রবারে পৃথিবীতে আসতে পারে এক বিকট শব্দ। যার ফলে ৭০ হাজার মানুষ বধির, ৭০ হাজার মানুষ বাকরূদ্ধ ,৭০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করতে পারেন।”
এ প্রসঙ্গে যে হাদিসটি প্রচার করা হচ্ছে
ফিরোজ দায়লামি বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোন এক রমজানে আওয়াজ আসবে।’
সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! রমজানের শুরুতে? নাকি মাঝামাঝি সময়ে? নাকি শেষ দিকে’? নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “না, বরং রমজানের মাঝামাঝি সময়ে। ঠিক মধ্য রমজানের রাতে। শুক্রবার রাতে আকাশ থেকে একটি শব্দ আসবে। সেই শব্দের প্রচণ্ডতায় সত্তর হাজার মানুষ সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলবে আর সত্তর হাজার বধির হয়ে যাবে।”
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “যারা নিজ নিজ ঘরে অবস্থানরত থাকবে, সিজদায় লুটিয়ে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করবে এবং উচ্চ শব্দে আল্লাহু আকবর বলবে।
পরে আরও একটি শব্দ আসবে। প্রথম শব্দটি হবে জিবরাইল এর, দ্বিতীয়টি হবে শয়তানের।
(ঘটনার পরম্পরা এরূপ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত অর্থাৎ ১৫ রমজান শুক্রবারে পৃথিবীতে বিকট শব্দ আসার ফলে ৭০ হাজার মানুষ বধির, ৭০ হাজার মানুষ বাকরূদ্ধ এবং ৭০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করতে পারে শীর্ষক যে দাবিটি করা হচ্ছে তা সঠিক নয় বরং যে হাদিসটি প্রচার করার মাধ্যমে উক্ত দাবি করা হচ্ছে সেটি একটি জাল ও বানোয়াট হাদিস।
হাদিসটির বিশুদ্ধতা সম্পর্কে জানতে রিউমর স্ক্যানার টিম সৌদি আরবের মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লিসান্স ও জুবাইল দাওয়াহ সেন্টারের দাঈ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীলের সাথে যোগাযোগ করে। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে হাদিসটি জাল বলে নিশ্চিত করার পাশাপাশি উক্ত হাদিস নিয়ে ২০২০ সালের ২১ মার্চ তাঁর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি পোস্ট শেয়ার করেন। যেখানে তিনি হাদিসটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন।
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল তার পোস্টটিতে লিখেছেন, ইমাম মাহদির আগমনের পূর্বে কোন এক রমজান মাসের মাঝামাঝিতে আকাশ থেকে বিকট আওয়াজ আসা তারপর সত্তর হাজার মানুষ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, সত্তর হাজার মানুষ বধির হয়ে যাওয়ার হাদিস অত্যন্ত দুর্বল মতান্তরে বানোয়াট ও বাতিল।
হাদিসটি সম্পর্কে মুহাদ্দিস বা হাদিস বিশারদদের মতামত উল্লেখ করে তিনি লিখেন,
শাইখ আলবানী বলেন, উল্লেখিত হাদিসটি موضوع বা বানোয়াট।
ইবনুল জাওযী তার আল মাউযুআত বা বানোয়াট হাদিস সংকলন গ্রন্থে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন। (৩/১৯১) । তিনি বলেন: “هذا حديث لا يصح। অর্থাৎ এ হাদিসটি সহিহ নয়।
কারণ এর সনদে আব্দুল ওয়াহাব নামক একজন বর্ণনাকারী আছে, তার ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণ শক্ত আপত্তি করেছেন। যেমন:
ক. উকাইলী বলেন: عبد الوهاب ليس بشيء “আব্দুল ওয়াহাব কিছুই নয়।” (এ বাক্যটি দ্বারা বর্ণনাকারীর প্রতি কঠোর সমালোচনা বুঝায়।)
খ. ইবনে হিব্বান বলেন: كان يسرق الحديث ؛ لا يحل الاحتجاج به “সে হাদিস চুরি করত। তার বর্ণিত হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করা বৈধ নয়।”
গ. দারাকুতনী বলেন: منكر الحديث বা মুনকারুল হাদিস। এছাড়াও সনদে আরও সমস্যা আছে। (শাইখ আলবানী রহ. এর সিলসিলা যঈফার ৬০৭৮ ও ৬০৭৯ নং হাদিস পর্যালোচনা থেকে সংক্ষেপিত)।
এই হাদিসটিকে বাতিল উল্লেখ করে ইমাম যাহাবী বলেন, এ হাদিসটি বাতিল। (তারতীবুল মাউযুআত, ২৭৮)
হাইসামী বলেন, এই হাদিসের বর্ণনা সূত্রে আব্দুল ওহাব ইবনুয যাহহাক নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছে যে মুহাদ্দিসীনদের দৃষ্টিতে মাতরূক বা পরিত্যাজ্য। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৭/৩১৩
ইমাম ইবনুল কাইয়েম বলেন, “অগ্রিম তারিখ নির্ধারণ করে বিভিন্ন ঘটনার ঘটার বেশ কিছু হাদিস পাওয়া যায়। কিন্তু সেগুলো সহিহ নয়।” সে সব হাদিসের মধ্যে একটি হল, “অর্ধ রমজানের জুমার রাতে একটি আওয়াজ হবে। এতে সত্তর হাজার মানুষ বেহুশ হয়ে পড়ে যাবে….সত্তর হাজার মানুষ বোবা হয়ে যাবে…..।” [আল মানারুল মুনীফ, পৃষ্ঠা নম্বর ৯৬]
সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি বিশিষ্ট ফকিহ শাইখ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রহ. উক্ত হাদিসটি উল্লেখ করে বলেছেন,
“এই হাদিসের বিশুদ্ধতার কোন ভিত্তি নেই বরং তা মিথ্যা এবং বানোয়াট। মুসলিমরা বহু বছর দেখেছে যে, শুক্রবারের রাত মধ্য রমজানে পড়েছিল, কিন্তু উল্লেখিত বিকট আওয়াজ ইত্যাদি কোন কিছুই ঘটেনি আলহামদুলিল্লাহ।”
ভিডিওটিতে মুখতার আহমাদ উক্ত হাদিসটিকে বানোয়াট উল্লেখ করে যে দলিলগুলো তুলে ধরেছেন, সেগুলোর সঙ্গে আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীলের দলিলগুলোর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
এছাড়া মুখতার আহমাদ বলেন, হাদিসটিতে যে রমজান মাসের কথা বলা হচ্ছে, যেটি শুরু হবে শুক্রবারে ও মধ্য রমজান হবে শুক্রবারে। সেটি আসলে কোন দেশের, কোন সময়ের কথা বলা হচ্ছে? আমরা জানি, আরব বিশ্বে রমজান শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবারে। অর্থাৎ, বুধবার রাতে তারা সেহরি খেয়েছেন, তারাবি পড়েছেন। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে আমরা দেখি আমরা বৃহস্পতিবার রাতে সেহরি খেয়েছি, তারাবি পড়েছি এবং শুক্রবার থেকে রোজা রেখেছি৷ তাহলে আসলে কোন সময়ের কথা আমরা বলছি? সমগ্র বিশ্বে তো রোজা শুরু হয়েছে আরও আগে। তাহলে এখানে কোন সময়ের কথা বলা হচ্ছে?
আলোচিত হাদিসটিতে উল্লেখিত বিকট আওয়াজ ও ভূমিকম্প প্রসঙ্গে মুখতার আহমাদ রাসুল (সা.) এর একটি হাদিস উল্লেখ করে বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমার এই উম্মত একটি রহমতপ্রাপ্ত উম্মাত। আল্লাহ তায়ালা অন্যান্য জাতিগুলোকে যেভাবে ধ্বংস করে দিয়েছেন, বিকট আওয়াজের মাধ্যমে, ভূমিকম্পের মাধ্যমে, এদেরকে এভাবে ধ্বংস করে দিবেন না৷ তবে এই বিপদগুলো তাদের আসবে’৷ বিপরীতে আলোচিত হাদিসটিতে যে বিকট আওয়াজের কথা বলা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ বাতিল এবং বানোয়াট বক্তব্য। এগুলোর উপর আমাদের বিশ্বাস করা ঠিক হবে না।
ইমাম মাহদীর আগমন সম্পর্কে মুখতার আহমাদ বলেন, আলোচিত হাদিসটি দিয়ে ইমাম মাহদীর আগমন সম্পর্কে বলা হচ্ছে। কিন্তু ইমাম মাহদী হচ্ছে কিয়ামতের আলামতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ছোট এবং সর্বশেষ আলামত। এরপর আর ছোট আলামত ঘটবে না। বড় আলামত প্রকাশ পাবে। যেটি ঈসা (আ.) এর আগমনের মাধ্যমে আমরা শুরু হবে বলে জানি৷ এখনই তো ছোট আলামত সব শেষ হয়নি। ৫০ টি ছোট আলামত আছে। বড় আলামত তাহলে কখন আসবে? কিভাবে আসবে? ইমাম মাহদীর আগমনের পূর্বে পৃথিবীর যেমন থাকবে বলে হাদিসে উল্লেখ আছে, পৃথিবী কি এখন তেমন আছে? পাশাপাশি ইমাম মাহদী নিজেও জানবেন না যে তিনি ইমাম মাহদী হবেন! অন্যরা তাকে নেতা বানাবেন তারপর প্রমাণিত ও প্রকাশিত হবে যে তিনি ইমাম মাহদী। এখন যা প্রচার হচ্ছে, এগুলো সবই কি বানোয়াট কথা নয়? আসলে এগুলো সবই বানোয়াট কথা।
এছাড়া আলোচিত হাদিসটির বিশুদ্ধতা সম্পর্কে জানতে রিউমর স্ক্যানার টিম হাদিস বিষয়ক বাংলা ভাষার ওয়েবসাইট Hadith BD তে যোগাযোগ করলে তাদের পক্ষ থেকেও উক্ত হাদিসটি জাল বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করা হয়।
উল্লেখ্য, আলোচিত এ হাদিসটির বিশুদ্ধতার বিষয়ে অন্যান্য আলেম যেমন, ঢাকার মারকাযুল কুরআন মাদ্রাসার শিক্ষক ইউসুফ আল ওবায়দীর পোস্ট দেখুন এখানে, ইসলামিক স্কলার আরিফ বিন হাবিবের পোস্ট দেখুন এখানে।
এছাড়া ইতোপূর্বে একটি ওয়াজে ঢাকার মুগদা মদিনাবাগের বাইতুল ওয়াদুদ জামে মসজিদের খতিব সাদিকুর রহমান আজহারী ১৫ রমজান শুক্রবারে বিকট আওয়াজ হবে শীর্ষক আলোচনা করেন। তবে পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাদিসটি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে তিনি তার ফেসবুক পেইজে লিখেন, “যে হাদিসগুলো আমার আলোচনায় বলা হয়ে থাকে সেগুলোর ব্যাপারে অবশ্যই আরো ভালো তাহকিক করে বলা উচিত। কিয়ামতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কিতাবুল ফিতানের একটি হাদিস খুব ভালোভাবে তাহকিক করা ছাড়াই আমার আলোচনায় অনেকে শুনেছেন। এই হাদিসের ব্যাপারে সর্বোপরি কথা হলো: ১৫ ই রমাদান শুক্রবার বিকট আওয়াজ হওয়া সংক্রান্ত হাদিসটি গ্রহণযোগ্যতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ নয়। ইতিপূর্বে বহু রমজান শুক্রবার দ্বারা শুরু এবং ১৫ রমজান শুক্রবার হয়েছে। অথচ বিকট শব্দ হয়নি। হাদিসটির বর্ণনাকারীদের কেউ মুনকার, দুর্বল (১)ইবনে লাহিয়াহ,(২)মুহাম্মাদ ইবনে সাবেত আল বুনানি, কেউ অত্যন্ত দুর্বল(৩)হারেস আল হামদানি, কেউ আবার একেবারেই পরিত্যাজ্য,(৪) আব্দুল ওয়াহাব ইবনে জাহহাক। তাই সনদের মানদণ্ডে উক্ত হাদিসটি ‘যয়িফ জিদ্দান’ তথা নিতান্তই দুর্বল। যা গ্রহণযোগ্য নয়। তাছাড়া যুগ শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসগণ উক্ত হাদিসকে জাল/বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলেছেন। যেমন, ইমাম উকাইলী রহ: বলেছেন, এই হাদীসটির নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী হতে কোনো ভিত্তি নেই। অনুরূপ কোনভাবেই এটি টিকে না। (আয যোআফা আল কাবীর ৫২/৩)।…সুতরাং উক্ত ভিত্তিহীন হাদিসে বিশ্বাসী না হয়ে তা প্রচার থেকে বিরত থেকে বরাবরের ন্যায় বেশি বেশি আল্লাহর আনুগত্যতার চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফিক দান করুন।”
মূলত, সম্প্রতি একটি হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে যে, ‘১৫ রমজান শুক্রবার(বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত) রাতে পৃথিবীতে আসতে পারে এক বিকট শব্দ। যার ফলে ৭০ হাজার মানুষ বধির, ৭০ হাজার মানুষ বাকরূদ্ধ ,৭০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করতে পারেন। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, যে হাদিসটিকে উদ্ধৃত করে আলোচ্য দাবিটি করা হচ্ছে সে হাদিসটি কোনো বিশুদ্ধ হাদিস নয়। এ হাদিসটি সম্পর্কে হাদিস বিশারদগণ বলছেন, এটি একটি মিথ্যা, বানোয়াট হাদিস। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এই হাদিসটির কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নাই।অর্থাৎ, ১৫ রমজান বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে (শুক্রবার) পৃথিবীতে বিকট শব্দ হওয়ার দাবিতে যে হাদিসটি প্রচার করা হচ্ছে; সেটির গ্রহণযোগ্যতা নেই।
সুতরাং, ১৫ রমজান (৭ এপ্রিল) শুক্রবার পৃথিবীতে বিকট শব্দ হবে দাবিতে প্রচারিত দাবিটি মিথ্যা।
সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে “3 idiots 2 is coming” শীর্ষক শিরোনামে একটি ডিজিটাল ব্যানার প্রচারিত হচ্ছে। অর্থাৎ, দাবি করা হচ্ছে বলিউড সিনেমা “থ্রি ইডিয়টস” এর সিকুয়্যাল আসছে।
Facebook Screenshot
যা দাবি করা হচ্ছে
থ্রি ইডিয়টস সিনেমার মূল চরিত্র আমির খান, আর. মাধবন ও শারমান যোশির প্রেস কনফারেন্সের ছবি সম্বলিত একটি ডিজিটাল ব্যানারের মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে যে রাজকুমার হিরানি পরিচালিত জনপ্রিয় বলিউড সিনেমা থ্রি ইডিয়টস এর সিক্যুয়াল থ্রি ইডিয়টস ২ আসছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, উক্ত ব্যানারের সাথে থ্রি ইডিয়টস ২ সিনেমার কোনো সম্পর্ক নেই বরং, ব্যানারটি ড্রিম ইলেভেন নামক একটি ফ্যান্টাসি ক্রিকেট অ্যাপের প্রমোশনাল ভিডিওর দৃশ্য থেকে সংগৃহীত হয়েছে।
যেভাবে গুজবের সূত্রপাত
গত ৩রা ফেব্রুয়ারি থ্রি ইডিয়টস সিনেমার অভিনেতা শারমান জোশির সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ‘Congratulations’ সিনেমার প্রমোশনের উদ্দেশ্যে তার ভেরিফাইড টুইটার একাউন্ট থেকে একটি ভিডিও ক্লিপ আপলোড করেন তিনি। সেই প্রমোশনাল ভিডিওতে থ্রি ইডিয়টস সিনেমার মুখ্য
তিন কলাকুশলীর পুনর্মিলনীর সূত্র ধরে থ্রি ইডিয়টস সিনেমার সিক্যুয়াল আলোচনা শুরু হয়।
Screenshot: www.bollywoodlife
এরপরে, সিনেমাটির প্রধান তিন অভিনেতার প্রেস কনফারেন্সের দৃশ্যায়ন এর একটি ছবি (আলোচিত ছবিটি) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হয়। এই ছবিকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করা হয় “থ্রি ইডিয়টস” সিনেমার সিকুয়্যাল আসছে।।
এমনকি পরবর্তীতে কারিনা কাপুর ও বোমান ইরানি এই প্রেস কনফারেন্সের দৃশ্যায়ন এর একটি ছবিকে কেন্দ্র করে “থ্রি ইডিয়টস” এর সিকুয়্যাল আসছে কিনা এরকম কন্টেন্টের একটি ভিডিও তৈরি করে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন। যদিও উভয়েই ভিডিওতে তিনি হ্যাশট্যাগ হিসেবে “Ad” শব্দটা উল্লেখ করেছেন। তাদের (বিশেষ করে কারিনা কাপুর এর) ইনস্টাগ্রাম পোস্টকে কেন্দ্র করে ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবিটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
Screenshot: Instagram/Kareena Kapoor
অনুসন্ধান
রিসার্ভ ইমেজ সার্চের মাধ্যমে প্রেস কনফারেন্সের দৃশ্যায়ন এর স্থিরচিত্রটি ড্রিম ইলেভেন নামক ভারতীয় ফ্যান্টাসি স্পোর্টস প্ল্যাটফর্ম এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৬শে মার্চ আপলোডকৃত একটি ভিডিওতে খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় এটি ড্রিম ইলেভেন তথা ফ্যান্টাসি ক্রিকেট প্ল্যাটফর্ম এর প্রমোশনাল ভিডিও। ভিডিওটিতে থ্রি ইডিয়টস এর সিক্যুয়াল সম্পর্কিত কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয় নি।
পাশাপাশি, থ্রি ইডিয়টস সিনেমার পরিচালক রাজকুমার হিরানির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ ও টুইটার প্রোফাইল পর্যবেক্ষণ রিউমর স্ক্যানার। সেখানেও, থ্রি ইডিয়টস সিনেমার সিক্যুয়াল মুক্তির ব্যাপারে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি।
তবে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া থ্রি ইডিয়টস সিনেমার সিক্যুয়াল তৈরির গুঞ্জন নিয়ে ভারতের মূলধারার কয়েকটি গণমাধ্যম প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। থ্রি ইডিয়টসের সিক্যুয়াল নির্মাণ বিষয়ক এসব প্রতিবেদন দেখুন The Economic Times (আর্কাইভ), Times Now (আর্কাইভ) , Hindustan Times (আর্কাইভ)।
কিন্তু মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব প্রতিবেদনে থ্রি ইডিয়টসের সিক্যুয়াল নির্মাণের কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এসকল প্রতিবেদনে থ্রি ইডিয়টস মুভির সিক্যুয়াল নির্মাণের সম্ভাবনার বিষয়েই আলোকপাত করা হয়েছে মাত্র।
মূলত, থ্রি ইডিয়টস সিনেমার অভিনেতা শারমান যোশি এর সিনেমার প্রমোশনের ভিডিও এবং ফ্যান্টাসি ক্রিকেট প্ল্যাটফর্ম “ড্রিম১১” এর প্রোমোশনাল ভিডিওতে থ্রি ইডিয়টস সিনেমার প্রধান তিন অভিনেতা পারফর্ম করার কারণে এই ভিডিওর স্থিরচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “থ্রি ইডিয়টস আসছে” দাবিতে প্রচার হয়েছে। এছাড়াও, থ্রি ইডিয়টস সিনেমার অভিনেত্রী কারিনা কাপুর ও অন্যতম প্রধান অভিনেতা বোমান ইরানি এই প্রেস কনফারেন্সের দৃশ্যায়ন এর একটি ছবিকে কেন্দ্র করে “থ্রি ইডিয়টস” এর সিকুয়্যাল আসছে কিনা এরকম কন্টেন্টের একটি ভিডিও তৈরি করে ইনস্টাগ্রামে হ্যাশট্যাগে “Ad” শব্দটা উল্লেখ পোস্ট করেন। তাদের (বিশেষ করে কারিনা কাপুর এর) ইনস্টাগ্রামএই পোস্টকে কেন্দ্র করে ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবিটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
উল্লেখ্য, বলিউডের জনপ্রিয় এই সিনেমার সিক্যুয়াল নির্মাণের ব্যাপারে অতীতেও বহুবার গুঞ্জন উঠেছে। ২০১৮ সালের ২০ জুন ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে পরিচালক রাজু হিরানির বরাত দিয়ে জানায়, থ্রি ইডিয়সের সিক্যুয়াল তৈরির কাজ স্ক্রিপ্টিং এর পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু, সম্প্রতি থ্রি ইডিয়টস এর কলাকুশলী কিংবা পরিচালক কোনো পক্ষ থেকেই সিক্যুয়াল নির্মাণের ব্যাপারে কোনো নিশ্চিত তথ্য জানানো হয় নি।
প্রসঙ্গত, ইতোপূর্বে বিনোদন ক্ষেত্রের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বেশকিছু ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “থ্রি ইডিয়টস সিনেমার সিক্যুয়াল নির্মাণ হচ্ছে” বা “থ্রি ইডিয়টস আসছে” শীর্ষক দাবি প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন মাত্র ৭ দিনের জন্য বৌদ্ধ ধর্মের শ্রামন হয়েছিলেন এবং বৌদ্ধধর্ম চর্চা করেছিলেন” শীর্ষক দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ৭ দিনের জন্য বৌদ্ধ ধর্মের শ্রামন হননি এবং বৌদ্ধধর্ম চর্চা করননি বরং মিডজার্নি আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি বৌদ্ধ ভিক্ষুর পোশাক পরিহিত অবস্থায় প্রেসিডেন্ট পুতিনের একটি ছবিকে কেন্দ্র করে উক্ত দাবিটি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, গত ১৮ মার্চ “ต๋องสุเกะ สุวรรณกิจ (Tongsuke Suwannakit)” নামের একজন ব্যক্তি কর্তৃক ‘AI CREATIVES THAILAND’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে “When 2 escape leaders come to ordain, All photos are not real. Created by AI Midjourney” (স্বয়ংকৃত অনূদিত) শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফেসবুক পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ফেসবুক পোস্টে সংযুক্ত ছবির সাথে পুতিন ৭ দিনের জন্য বৌদ্ধ ধর্মের শ্রমণ হয়ে বৌদ্ধধর্ম চর্চা করেছেন দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ছবির হুবহু মিল লক্ষ্য করা যায়। একই পোস্টে বৌদ্ধ ভিক্ষুর পোশাক পরিহিত অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছবিও লক্ষ্য করা যায়।
Screenshot from FacebookCollage by Rumor Scanner
উক্ত ফেসবুক পোস্টের স্বয়ংকৃত অনূদিত ক্যাপশনে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সেখানে স্পষ্টভাবেই লেখা রয়েছে, ছবিগুলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স বা এআই টুল ‘মিডজার্নি’ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
Screenshot from Facebook
পরবর্তীতে উক্ত ছবি সম্পর্কে জানতে “ต๋องสุเกะ สุวรรณกิจ (Tongsuke Suwannakit)” নামের ফেসবুক ব্যবহারকারীর সাথে রিউমর স্ক্যানার টিমের তরফ থেকে যোগাযোগ করলে, তিনি নিশ্চিত করেন ছবিগুলো মিডজার্নি দ্বারা তৈরি। ছবিটি যে মিডজার্নি দিয়ে তৈরি তার প্রমাণ হিসেবে রিউমর স্ক্যানার টিমকে একটি স্ক্রিনশটও দেন তিনি।
Screenshot from MidJourney Bot.
স্ক্রিনশটটি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, গত ১৮ মার্চ কিছু কমান্ড ব্যবহার করে মিডজার্নি এআইয়ের মাধ্যমে উক্ত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৌদ্ধ ধর্ম পালন সংক্রান্ত কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ১৮ মার্চ “ต๋องสุเกะ สุวรรณกิจ (Tongsuke Suwannakit)” নামের একজন থাইল্যান্ডের ফেসবুক ব্যবহারকারী একটি ফেসবুক গ্রুপে মিডজার্নি এআই দ্বারা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৌদ্ধ ভিক্ষুর পোশাক পরিহিত ছবি তৈরি করে একটি ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করে। পরবর্তীতে, উক্ত ছবির সূত্র ধরেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ৭ দিনের জন্য বৌদ্ধ ধর্মের শ্রামন হয়ে বৌদ্ধ ধর্ম চর্চা করেছেন দাবিতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
উল্লেখ্য, মিডজার্নি হলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন একটি ছবি প্রস্তুতকরক টুল। এটি ব্যবহার করে কিছু কমান্ডের সাহায্যে নিখুঁত ছবি তৈরি করা সম্ভব। মেসেজিং প্লাটফর্ম ডিস্কর্ডে মিডজার্নির সার্ভারে থাকা বট ব্যবহার করে ছবি প্রস্তুত করা যায়।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও “ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গ্রেফতার করা হয়েছে” দাবিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স বা এআই দিয়ে তৈরি অবাস্তব ছবি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ালে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ৭ দিনের জন্য বৌদ্ধ ধর্মের শ্রামন হয়ে বৌদ্ধধর্ম চর্চা করার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গতকাল (০৫ এপ্রিল) ইংল্যান্ডের মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) সম্মানসূচক আজীবন সদস্যপদ পেয়েছেন বাংলাদেশের মাশরাফি বিন মুর্তজা। কিন্তু এই খবর দেশীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর সুনির্দিষ্ট দুইটি দাবি দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
প্রথম দাবি
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এমসিসির আজীবন সদস্যপদ লাভের সম্মান অর্জন করেছেন মাশরাফি।
উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমের একটি প্রতিবেদন দেখুন চ্যানেল আই।
Screenshot source: Channel I
দ্বিতীয় দাবি
দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে এমসিসির আজীবন সদস্যপদ লাভের সম্মান অর্জন করেছেন মাশরাফি। এর আগে আরও একজন (সাবের হোসেন চৌধুরী) এই সম্মান লাভ করেছিলেন।
একই দাবিতে ইউটিউবের একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রথম বা দ্বিতীয় বাংলাদেশি নয়, তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে মাশরাফি এমসিসির আজীবন সদস্যপদ লাভ করেছেন। রাইসউদ্দিন আহমেদ ও সাবের হোসেন চৌধুরী যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে এই সম্মাননা লাভ করেছেন। তবে মাশরাফি এই সম্মান পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার। অন্য দুইজন ছিলেন ক্রিকেট সংগঠক।
মাশরাফি প্রথম বাংলাদেশি নয়
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে টুইটারে মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) অ্যাকাউন্টে গতকাল ০৫ এপ্রিল প্রকাশিত একটি টুইট খুঁজে পাওয়া যায়।
এমসিসি লিখেছে, “এমসিসি বিশ্বের সেরা কিছু ক্রিকেটারকে ক্লাবের সম্মানসূচক আজীবন সদস্যপদ প্রদান করে। আমরা এখন এই বিশেষাধিকারের সাথে প্রাপ্ত সর্বশেষতম পুরুষ এবং মহিলাদের নাম প্রকাশ করতে যাচ্ছি।”
Screenshot source: Twitter
এমসিসির টুইটে দেওয়া লিংকের সূত্র ধরে ক্লাবটির ওয়েবসাইটে (Lords) এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৮টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের মোট ১৭ জন নারী ও পুরুষ ক্রিকেটারকে এবার আজীবন সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে আছেন মাশরাফি।
এছাড়া ক্রিকেটে অবদান রাখার জন্য নন প্লেয়িং ক্যাটাগরিতে পেয়েছেন আরও দুইজন।
মাশরাফি ছাড়া ভারত ও ইংল্যান্ড থেকে পাঁচ জন করে, নিউ জিল্যান্ড থেকে দুই জন এবং অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে রয়েছেন এক জন করে।
Screenshot source: Lords
এমসিসির এমন সম্মাননা বাংলাদেশি হিসেবে মাশরাফিই একমাত্র পেয়েছেন কিনা সে বিষয়ে জানতে গিয়ে ‘Lords’ এর ওয়েবসাইটে “MCC HONORARY LIFE MEMBERS” শিরোনামে আরেকটি পাতা খুঁজে পাওয়া যায়।
এই পাতায় আজীবন সদস্যদের তালিকা রয়েছে। এই পাতার বাংলাদেশ অংশে মাশরাফির সাথে এস এইচ চৌধুরী (S.H. Chowdhury) নামে আরও একজনের নাম রয়েছে, যিনি ২০০৩ সালে উক্ত সম্মাননা পেয়েছিলেন।
Screenshot source: Lords
অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত ব্যক্তি সাবের হোসেন চৌধুরী, যিনি বাংলাদেশের একজন ক্রীড়া সংগঠক। তিনি ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে তিনি ক্রিকেটার ছিলেন না।
অর্থাৎ, মাশরাফি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এমসিসির আজীবন সদস্য পদ পাননি।
দ্বিতীয় বাংলাদেশিও নয়
মাশরাফি এমসিসির আজীবন সদস্যপদ পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি নয় শীর্ষক তথ্যটি নিশ্চিত হওয়ার পর অধিকতর অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’র একই বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
প্রথম আলো লিখেছে, “এর আগে বাংলাদেশ থেকে এমসিসির সম্মানসূচক এই সদস্যপদ পেয়েছিলেন ক্রিকেট প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত দুজন। বিসিবির সাবেক সহ–সভাপতি প্রয়াত রাইসউদ্দিন আহমেদ ছিলেন এমসিসির সদস্যপদ পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি। এরপর সদস্যপদ পান সাবেক বিসিবি সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী।”
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে গতকাল (০৫ এপ্রিল) টুইটারের একটি টুইটে রাইসউদ্দিন আহমেদকে এমসিসির পক্ষ থেকে পাঠানো আজীবন সদস্য পদ সংক্রান্ত একটি চিঠির ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবিটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৯৮১ সালের ১৯ আগস্ট পাঠানো এই চিঠিতে রাইসউদ্দিন আহমেদকে এমসিসির আজীবন সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানায় ক্লাবটি।
Screenshot source: Twitter
কিন্তু এমসিসির ওয়েবসাইটে কিওয়ার্ড সার্চ করেও রাইসউদ্দিন আহমেদের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
রিউমর স্ক্যানার টিম পরবর্তীতে এমসিসির ওয়েবসাইটে আজীবন সদস্যদের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখেছে যে তালিকার সকলেই বেঁচে আছেন। মৃত ব্যক্তির নাম সাইট থেকে মুছে ফেলা হতে পারে এমন সম্ভাবনা থেকে রিউমর স্ক্যানার টিম অধিকতর অনুসন্ধানে এমসিসির টুইটার অ্যাকাউন্টে ২০২২ সালের ০৯ আগস্ট রুডি কোয়ের্টজেন এবং ২০২১ সালের ০২ ফেব্রুয়ারি ক্যাপ্টেন স্যার টম মোরে নামে দুই ব্যক্তির মৃত্যুর বিষয়ে টুইট খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে দুই ব্যক্তিকেই এমসিসির আজীবন সদস্য পদ লাভকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
Screenshot source: Twitter
কিন্তু এমসিসির ওয়েবসাইটের আজীবন সদস্যদের তালিকায় উক্ত দুই ব্যক্তির নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ফলে, মৃত ব্যক্তির নাম এমসিসির ওয়েবসাইটের আজীবন সদস্যদের তালিকা থেকে মুছে ফেলা শীর্ষক সম্ভাবনাটি জোরালো হয় বলে প্রতীয়মান হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাইসউদ্দিন আহমেদ ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি মারা যান।
এই তথ্যের সূত্র ধরে উক্ত তারিখের (২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি) পূর্বের এমসিসির ওয়েবসাইটের আজীবন সদস্যদের তালিকা বিষয়ক পেজটির আর্কাইভ ভার্সন (২০২০ সালের ০৯ আগস্ট) খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
আর্কাইভ ভার্সন থেকে দেখা যায়, উক্ত পেজে রাইসউদ্দিন আহমেদের নাম রয়েছে।
Screenshot source: Lords/archive
একইসাথে এমসিসি টুইট করে যে দুজনের (রুডি কোয়ের্টজেন এবং ক্যাপ্টেন স্যার টম মোরে) মৃত্যুর বিষয়ে জানিয়েছে তাদের নামও খুঁজে পাওয়া যায় একই আর্কাইভ ভার্সনে।
অর্থাৎ, এমসিসির আজীবন সদস্য পদ পাওয়া কেউ যদি মারা যায় তবে তার নাম এমসিসির ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। এক্ষেত্রে তাই রাইসউদ্দিন আহমেদের নামও সরিয়ে নিয়েছে এমসিসি।
তবে রাইসউদ্দিন আহমেদের প্রসঙ্গ না এনে “২০০৩ সালে এই ক্যাটাগরিতেই সম্মানসূচক আজীবন সদস্যপদ পান সাবেক বিসিবি সভাপতি ও ক্রিকেট সংগঠক সাবের হোসেন চৌধুরী।” শীর্ষক তথ্য দিয়েছে জনকণ্ঠ, এনটিভি, নিউজ নাউ২৪, বিজনেস পোস্ট বিডি, নিউজ২৪।
মূলত, ১৯৮২ সালে রাইসউদ্দিন আহমেদ এবং ২০০৩ সালে সাবের হোসেন চৌধুরী যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ইংল্যান্ডের মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) সম্মানসূচক আজীবন সদস্যপদ পান। তাদের পর তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে (প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার) মাশরাফি অতি সম্প্রতি এই সম্মাননা পেলেও দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যমগুলো “মাশরাফিই প্রথম বা দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে এই সম্মাননা পেয়েছেন” বলে তাদের প্রতিবেদনে প্রচার করেছে।
সুতরাং, প্রথম বা দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে মাশরাফির এমসিসির আজীবন সদস্যপদ পাওয়ার দাবিটি মিথ্যা।
সম্প্রতি, “বঙ্গবাজার পুড়লেও আওয়ামী ধর্মের ইজ্জত রক্ষা পাইছে! মুজিব সাপের ছবি পুড়ে নাই, কত্ত বড় মোজেজা – তা খেয়াল করছেন? কেউ আমিন, না সরি কেউ জয়-বাংলা না লিখে যাবেন না।” সহ ভিন্ন ভিন্ন শিরোনাম সম্বলিত একটি ছবি রাজধানীর বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার নয় বরং এটি ২০২১ সাল থেকে ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে।
এছাড়া, ‘Sadman Sakif’ নামের অন্য আরেকটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে একইদিনে অর্থাৎ ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে “স্বপ্ন পুড়ে ছাই, কৃষি কাজ ও অন্যের জমিতে দিন মজুরি করে একটু একটু করে স্বপ্ন গড়ার লক্ষে এগিয়ে গেলেও আগুনের হাত থেকে রক্ষা পায় নি কিছুই।” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
তবে, উভয় পোস্টে আগুনে পোড়া টাকার এই ছবিটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ নেই। আলোচিত ছবিটির প্রকৃত স্থান, ঘটনা এবং প্রেক্ষাপট সম্পর্কিত বিস্তারিত কোনো তথ্য ইন্টারনেটে খুঁজে না পাওয়া গেলেও এটি নিশ্চিত যে ছবিটি রাজধানীর বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার বা সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
মূলত, চলতি বছরে গত ০৪ এপ্রিল (মঙ্গলবার) তারিখে রাজধানীর বঙ্গবাজার কাপড়ের মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে মার্কেটটির প্রায় পাঁচ হাজার দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে দোকানে তোলা মালামালের পাশাপাশি নগদ টাকাও আগুনে পুড়ে যায়। আলোচিত এ অগ্নিকাণ্ডের সময়ে পুরোনো এবং ভিন্ন একটি ঘটনায় পুড়ে যাওয়া টাকার ছবিকে সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, একই ছবিটি ২০২১ সালে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে আগুনের ঘটনায় ও প্রচার করা হয়েছিলো। সে সময়ে দগ্ধ টাকার ছবিটি নিয়ে বিস্তারিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বেশ কয়েকটি ভুয়া তথ্য ও বিকৃত ছবি প্রচারের প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সুতরাং, পুরোনো এবং ভিন্ন একটি অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পুড়ে যাওয়া টাকার ছবিকে সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি ‘পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলেন হাসিনা সরকার, বিএনপির রূপরেখায় সরকারের পরিণতি’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
Screenshot source: Facebook
ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে। পোস্টটির আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা তার সরকারের কেউ পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়নি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার ক্যাপশন ব্যবহার করে বিভ্রান্তির উদ্দেশ্যে ভিডিওটি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধ্যানের শুরুতে Trand News Bangla নামের ফেসবুক পেজটিতে গত ৪ এপ্রিল প্রচারিত ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
Screenshot Source: Facebook
৮ মিনিট ২ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে ক্যাপশনের সাথে ভেতরের তথ্যের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভিডিও’র শিরোনামে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা বলা হলেও বিস্তারিত প্রতিবেদনে এমনকিছু বলা হয়নি। সেখানে শ্রীলঙ্কার মাহিন্দা রাজাপাক্ষের পদত্যাগের সাথে তুলনা করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও এমন পরিণতি হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হয়।
এছাড়া দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বা সরকার সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা তার সরকারের পদত্যাগের সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা তার সরকারের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং আলোচিত ভিডিওটিতে শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের পদত্যাগের বিষয়টি সাথে শেখ হাসিনা সরকারের তুলনা করা হয়েছে।
মূলত, গত ৪ এপ্রিল একটি ভুঁইফোড় পেজ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগের সিদ্ধান্তের দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, অধিক ভিউ পাবার আশায় ক্লিকবেইট শিরোনামে সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করে সংবাদের বিস্তারিত অংশে শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের পদত্যাগের বিষয়টির সাথে তুলনা করে শেখ হাসিনা সরকারের এমন পরিণতির সম্ভাবনার কথা বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা তার সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত পদত্যাগের সিদ্ধান্ত সম্পর্কিত কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
উল্লেখ্য, ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে চটকদার শিরোনাম ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এসব ঘটনা নিয়ে পূর্বেও ফ্যাক্টচেকপ্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে ‘আগুন লাগলে দোয়া পড়ুন’ শীর্ষক লেখাটি বাস্তব নয় বরং এডিটেড। প্রকৃতপক্ষে সংস্থাটির কোনো অগ্নি নির্বাপক গাড়িতে এমন লেখা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম ওপেন সোর্স অনুসন্ধানের মাধ্যমে অগ্নিকান্ড সহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় দেখা যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন গাড়ির ছবি ও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে।
যেমন, Md Rejuanul Haque নামের একজন ফায়ার সার্ভিস কর্মীর ফেসবুক একাউন্টে রাজধানীর বঙ্গবাজারে লাগা আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহৃত একটি গাড়ির ছবি পাওয়া যায়। তবে এই গাড়িটির কোথাও ‘আগুন লাগলে দোয়া পড়ুন’ শীর্ষক লেখাটি দেখা যায়নি।
Screenshot: Facebook Post
একই ধরনের গাড়ির আরেকটি ছবি পাওয়া যায় Akash Bhuyian নামের একটি ফেসবুক একাউন্টে।
Screenshot: Facebook Post
২০১৯ সালের ৯ জুন একাউন্টটিতে প্রচার করা এই গাড়িটির সঙ্গেও ‘আগুন লাগলে দোয়া পড়ুন’ শীর্ষক লেখা সম্বলিত গাড়িটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। পাশাপাশি Imran Hosain নামের একটি ফেসবুক একাউন্টে ২০২০ সালের ১৯ মার্চ ও একই বছরের ১৫ জুলাই Ashik Mridha Niloy নামের একটি একাউন্টে প্রদত্ত দুইটি ফেসবুক পোস্টে ফায়ার সার্ভিসের অনুরূপ গাড়ির ছবি পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook Post
তবে এসব গাড়িতে ‘আগুন লাগলে দোয়া পড়ুন’ শীর্ষ এমন কোনো লেখা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot: Facebook Post
এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রেও ফায়ার সার্ভিসের যেসব গাড়ির ছবি পাওয়া যায় সেখানেও এমন কোনো লেখা দেখা যায়নি।
Image Collage: Rumor Scanner
পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে আরও অধিকতর অনুসন্ধানে ছবিটিতে থাকা স্বাক্ষরের সূত্রে এই ছবিটির প্রথম প্রচারকারী সাজু সেলিম হোসাইন নামের এক আর্টিস্ট এর ফেসবুক একাউন্ট খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। ফেসবুক একাউন্টটিতে গত ৪ এপ্রিল ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে ‘আগুন লাগলে দোয়া পড়ুন’ শীর্ষক লেখা সম্বলিত আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook Post
ছবিটির ক্যাপশনে তিনি লিখেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন ঝড়, বন্যা কিংবা কোনো অগ্নিকাণ্ড ঘটামাত্র আমাদের তথাকথিত মিডিয়াগুলো দুআ পড়তে বলে মানে সেই দুআটি পড়লে মানুষ সমূহ বিপদ কিংবা ক্ষতির হাত থেকে মুক্তি পাবে যার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। যদি তাই হতো তাইলে ফায়ার সার্ভিস, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়, পুলিশ কিংবা সেনাবাহিনীসহ রাষ্ট্রের অন্যান্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কোনো কাজই থাকে না! সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের অনুভূতিকে ব্যবহার করে সস্তা জনপ্রিয়তা লাভের জন্য এইসব মিডিয়াগুলোর বিপরীতে আমার অবস্থান- এই ছবি!’
এছাড়া ছবিটি সম্পর্কে কমেন্টবক্সে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, ‘যে কোন রকম অগ্নিকাণ্ড হওয়ামাত্রই আমাদের মিডিয়াগুলো আগুন নেভাতে/ আগুনে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে “কোন দুআ পড়তে হবে”-র জানান দেয়! মানে, দুআ পড়লেই আগুন নিভে যাবে! তাইলে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের কোনো প্রয়োজন নাই? এই চিন্তা থেকেই এই ছবিটা বানিয়েছি! আর মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার এইসব অযৌক্তিক, অবৈজ্ঞানিক “ইনফরমেশন”গুলোর ফ্যাক্টচেকিংটা বোধয় বেশি জরুরী!’
Screenshot: Facebook Comment
অর্থাৎ ছবিটি তিনি নিজেই সম্পাদনা করে তৈরি করেছেন।
আর্টিস্ট সাজু সেলিম যে ছবিটিতে সম্পাদনা করেছেন
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Soa Maps নামের একটি ওয়েবসাইটে ‘Beanibazar Fire Service & Civil Defence‘ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে সাজু সেলিম যে ছবিটি সম্পাদনা করেছিলেন, সেটি খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রসঙ্গত, গত ৪ এপ্রিল রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে মার্কেটটির প্রায়প্রায় পাঁচ হাজার দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই অগ্নিকাণ্ডের সময় দেশীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেইজে আগুন লাগলে যে দোয়া পড়বেন সহ সমজাতীয় শিরোনামে একাধিক প্রতিবেদন ও ব্যানার প্রচার করা হয়।
মূলত, গত ৪ এপ্রিল রাজধানীর গত ৪ এপ্রিল রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে মার্কেটটির প্রায়প্রায় পাঁচ হাজার দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই অগ্নিকাণ্ডের সময় দেশীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম আগুন লাগলে যে দোয়া পড়বেন সহ সমজাতীয় বিভিন্ন শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ এরই প্রেক্ষিতে সাজু সেলিম হোসাইন নামের একজন আর্টিস্ট তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ির ছবি সম্পাদনার মাধ্যমে ‘আগুন লাগলে দোয়া পড়ুন’ শীর্ষক লেখা সম্বলিত ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির একটি ছবি পোস্ট করেন৷ উক্ত ছবিটিই পরবর্তীতে আসল ছবি দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
সুতরাং, ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে ‘আগুন লাগলে দোয়া পড়ুন’ শীর্ষক লেখা সম্বলিত ছবিটি সম্পূর্ণ এডিটেড।
সম্প্রতি, বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যক্তির পুড়ে যাওয়া দোকান থেকে অক্ষত গীতা উদ্ধার করা হয়েছে দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
উক্ত দাবিতে প্রচারিত একটি টুইট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যক্তির পুড়ে যাওয়া দোকান থেকে অক্ষত গীতা উদ্ধারের দাবিটি সত্য নয় বরং উক্ত দাবিতে প্রচারিত গীতার ছবিটি বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ২ দিন আগে থেকেই ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।
গত ০৪ এপ্রিল ভোর ছয়টার কিছু পর ঢাকার বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ব্যবসায়ীদের প্রাথমিক হিসাবে, আগুনে পাঁচ হাজারের মতো দোকান পুড়েছে এবং ১ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উক্ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যক্তির পুড়ে যাওয়া দোকান থেকে অক্ষত গীতা উদ্ধার করা হয়েছে দাবিতে একটি ছবি সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
উল্লিখিত দাবির প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানের মাধ্যমে, গত ০২ এপ্রিল অর্থাৎ বঙ্গবাজারে আগুন লাগার দুই দিন পূর্বে ‘Sowrov Mohonto Hira’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ‘হিন্দু_প্রেম_ক্যানভাস_গ্রুপ’ নামের ফেসবুক গ্রুপে করা একটি পোস্টে হুবহু একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টের ক্যাপশনে সৌরভ মহন্ত হীরা লিখেছেন, “নিজের সাথে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা শেয়ার করছি। আমাদের বাড়িতে একবার আগুন লেগেছিল,, সেই আগুনে পুরো ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও পুরে যায়নি গীতা টি।”
একই গ্রুপে গতকাল ০৫ এপ্রিল সৌরভ মহন্ত হীরার এই বিষয়ে করা আরো একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অক্ষত গীতা উদ্ধার দাবিতে ছড়িয়ে পড়া কিছু ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট সংযুক্ত করে তিনি দ্বিতীয় পোস্টে লিখেছেন, “একটু ভাইরাল হওয়ার জন্য গুজব ছড়িয়ে কি লাভ ভাই। আপনাদের এরকম কাজের জন্য আমাদের মাথা নিচু। কথা বলার জবাব খুজে পাওয়া যায় না। ধীক্কার জানাচ্ছি আপনাদের এরকম কাজের জন্য।”
পরবর্তীতে, ছবিটি সম্পর্কে জানতে রিউমর স্ক্যানার টিমের তরফ থেকে সৌরভ মহন্ত হীরার সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, “ছবিটি প্রায় একছর আগের। ল্যাপটপের পুরোনো অ্যালবাম ঘাটতে গিয়ে চোখে পড়ায় নিজেদের গ্রুপে ছবিটি শেয়ার করি।”
সৌরভ মহন্ত হীরা নিজের ধারণকৃত মূল ছবিটি রিউমর স্ক্যানারকে ই-মেইলের মাধ্যমে সরবরাহ করেন। পরবর্তীতে মূল ছবির মেডাটা যাচাই করে দেখা যায়, ছবিটি ২০২১ সালের ০৩ মে তারিখে ধারণ করা হয়েছে।
মূলত, গত ০৪ এপ্রিল ঢাকার বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। উক্ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যক্তির পুড়ে যাওয়া দোকান থেকে অক্ষত গীতা উদ্ধার করা হয়েছে দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গীতার ছবিটি বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ২ দিন আগে থেকেই ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে। এছাড়া ছড়িয়ে পড়া ছবিটির চিত্রগ্রাহকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ছবিটি ২০২১ সালে চিত্রগ্রাহকের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের সময় ধারণকৃত।
প্রসঙ্গত, বঙ্গবাজারে আগুনের ছাই থেকে অক্ষত অবস্থায় কোরআন শরীফ উদ্ধার করা হয়েছে দাবিতে একটি তথ্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে, উক্ত দাবির প্রেক্ষিত রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, অক্ষত অবস্থায় কোরআন শরীফ উদ্ধার দাবিতে প্রচারিত গ্রন্থটি হাদিস গ্রন্থ সহিহ বুখারী শরীফ এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ “উমদাতুল কারী শারহু সহীহুল বুখারী” এর ১০ নং ভলিউম। এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন পড়ুন এখানে।
সুতরাং, বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যক্তির পুড়ে যাওয়া দোকান থেকে অক্ষত গীতা উদ্ধারের দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিমানের আকারের গ্রহাণু পৃথিবীতে ধেয়ে আসছে শীর্ষক একটি দাবি ছড়িয়ে পড়েছে। কিছু পোস্টে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বরাত দিয়ে দাবি করা হয়েছে, উক্ত গ্রহাণুটি ০৬ এপ্রিল পৃথিবীতে আঘাত হানবে বা আছড়ে পড়বে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নাসা ০৬ এপ্রিল বিশাল গ্রহাণু পৃথিবীতে সরাসরি আঘাত হানবে শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেনি বরং একটি গ্রহাণু সম্পর্কে ফেসবুকে এবং গণমাধ্যমে অতিরঞ্জিত তথ্য উপস্থাপন করার ফলে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
গুজবের সূত্রপাত
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ০৪ এপ্রিল দেশীয় গণমাধ্যম বাংলাভিশন এর ফেসবুক পেজে “বিমানের আকারের গ্রহাণু ধেয়ে আসছে পৃথিবীতে, ৬ এপ্রিল বড় ঘটনার ইঙ্গিত নাসা’র” শীর্ষক শিরোনামে একটি পোস্ট (আর্কাইভ) করার পর থেকেই তা মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
Screenshot source: Facebook
বাংলাভিশনের এ সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রতিবেদনের (আর্কাইভ) শুরুতে দাবি করা হয়, “সম্প্রতি ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NASA) এর জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি জানিয়েছে, আগামী দিনে পৃথিবীতে এক বিশাল গ্রহাণু আছড়ে পড়বে।” কিন্তু বিস্তর অনুসন্ধান করেও নাসা এই ধরনের কথা বলেছে কিনা তার কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে বাংলাভিশনের প্রতিবেদনের শেষ অংশে দাবি করা হয় “তবে নাসার বিজ্ঞানীরা আশ্বস্ত করেছেন, দেড়শ ফুটের এই গ্রহাণুর দ্বারা পৃথিবীর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই।”
Screenshot source: Facebook
অর্থাৎ, বাংলাভিশন তাদের ফেসবুক পেজের পোস্টে আলোচিত গ্রহাণুর আছড়ে পড়াকে বড় ঘটনার ইঙ্গিত বলে দাবি করলেও বিস্তারিত প্রতিবেদনে গণমাধ্যমটি এই গ্রহাণুর দ্বারা পৃথিবীর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
পৃথিবীতে গ্রহাণু আছড়ে পড়বে দাবিতে উক্ত সংবাদটি পরিবেশনের কারণে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি এবং আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। আর এই বিভ্রান্তি এবং আতঙ্কের নমুনা উক্ত পোস্টের কমেন্ট সেকশনেই লক্ষ্য করা যায়।
Screenshot collage: Rumor Scanner
গ্রহাণুটির বিষয়ে কী জানা গেছে?
প্রতিনিয়তই ছোট-বড় গ্রহাণু পৃথিবীর কক্ষপথের খুব কাছ দিয়ে ঘেঁষে যায় আর বিভিন্ন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা পৃথিবীর কক্ষপথের কাছ দিয়ে যায় এমন গ্রহাণুগুলোকে প্রতিনিয়তই ট্র্যাক করে থাকে।
এদের মধ্যে নাসার অ্যাসটেরয়েড ওয়াচ ড্যাশবোর্ড (NASA’s Asteroid Watch Dashboard) ভবিষ্যতে যে পাঁচটা গ্রহাণু এবং ধূমকেতু পৃথিবী থেকে ৭.৫ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরত্বের মধ্য দিয়ে যাবে, সেসব ধুমকেতু এবং গ্রহাণুর তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। এভাবে একটি গ্রহাণু পৃথিবী থেকে নূন্যতম দূরত্ব পার করে ফেললে সেখানে আরো একটি গ্রহাণুর তথ্য সংযুক্ত হয়। এভাবে ওয়েবসাইটের ডাটা প্রতিনিয়ত আপডেট হয়ে থাকে।
নাসার অ্যাসটেরয়েড ওয়াচ ড্যাশবোর্ডে সাধারণত যেসব তথ্য প্রকাশ করা হয় তা হলো পরবর্তীতে পৃথিবীর পাশ দিয়ে যাবে এমন গ্রহানুগুলোর নাম, কত তারিখে পৃথিবী থেকে নূন্যতম কত দূরত্বে থাকবে এবং উক্ত গ্রহাণুর ডায়ামিটার।
উক্ত ড্যাশবোর্ডে দেখা যায়, ০৬ এপ্রিল যে পাঁচটি গ্রহাণু পৃথিবীর পাশ দিয়ে যাবে তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে Asteroid 2023 FZ3। এটি আকারে প্রায় ১৫০ ফুট যা একটি বিমানের সমান। ৪,১৯০,০০০ কিলোমিটার দূরত্বে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে থাকবে।
এদিকে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ০৬ এপ্রিল Coordinated Universal Time (UTC) অনুযায়ী দুপুর ২:৫৬ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত ৮:৫৬ মিনিটে) 2023 FZ3 নামক গ্রহাণুটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৪১ লক্ষ ৯০ হাজার কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থান করবে। এরপর এটি স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাবে।
Screenshot source: ESA
তাছাড়া উক্ত ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় প্রতিনিয়তই ছোট বড় অনেক গ্রহাণু পৃথিবীর কাছাকাছি আসে। অর্থাৎ এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা।
Asteroid 2023 FZ3 কি পৃথিবীর জন্য হুমকি হতে পারে?
নাসার অ্যাসটেরয়েড ওয়াচ ড্যাশবোর্ড (NASA’s Asteroid Watch dashboard) এর ওয়েবসাইটে বলা হয়, পৃথিবী থেকে ৭.৫ মিলিয়ন দূরত্বের মধ্যে যে সকল অবজেক্ট (গ্রহাণু) এর দৈর্ঘ্যের ১৫০ মিটারের বেশি, সেসব গ্রহাণুকেই সম্ভাব্য ক্ষতিকর অবজেক্ট হিসেবে ধরা হয়।
Screenshot source: NASA
সেক্ষেত্রে 2023 FZ3 এর দৈর্ঘ্য মাত্র ৪৬ মিটার (১৫০ ফুট)। তাছাড়া উক্ত গ্রহাণুটির সম্পর্কে নাসার ওয়েবসাইটে কোনো জরুরী সতর্কতা মূলক বিবৃতি খুজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম।
তবে নাসার অন্য একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২৫ মিটার থেকে বড় কিন্তু ১ কিলোমিটার থেকে ছোট পাথর খন্ড যদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে আঘাত করে তাহলে সেই ক্ষতির পরিমান একটি নির্দিষ্ট এলাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
Screenshot source: NASA
অর্থাৎ, 2023 FZ3 গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত আনলেও সেটির ক্ষতির পরিমাণ হবে খুবই কম। তবে পৃথিবীতে এই গ্রহাণু পতিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
মূলত, বেশ কিছু ফেসবুক পোস্টে ০৬ এপ্রিল একটি গ্রহাণু তুলনামূলক পৃথিবীর কাছ দিয়ে যাওয়ার খবরটিকে “৬ এপ্রিল পৃথিবীতে গ্রহাণু আছড়ে পড়বে” দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহাণুর পৃথিবীর নিকটবর্তী হওয়ার ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। তবে বেশিরভাগ গ্রহাণু পৃথিবীর পাশ কাটিয়েই চলে যায়। ফলে বড় আকারের এসব গ্রহাণু দ্বারা পৃথিবীর আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ।
উল্লেখ্য, ভবিষ্যতে পৃথিবীতে বড় কোনো গ্রহাণুর আঘাত আনার সম্ভাবনা সৃষ্টি হলে পৃথিবী থেকে মিসাইলের মাধ্যমে সেটির কক্ষপথ পরিবর্তন করে দেওয়ার এক্সপেরিমেন্ট ২০২২ সালেই সফলভাবে সম্পন্ন করেছে নাসা। অর্থাৎ বাইরের কোনো গ্রহাণু কিংবা আঘাত থেকে বাঁচার জন্য প্রতিরক্ষামূলক প্রযুক্তি এখন মানুষের কাছে রয়েছে।
সুতরাং, ০৬ এপ্রিল বিমান সদৃশ একটি গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত হানার খবর অতিরঞ্জিতভাবে গণমাধ্যম ও ফেসবুকে উপস্থাপণ করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর।