Home Blog Page 601

মাশরাফির সম্পদ ৫১০ কোটি টাকা শীর্ষক দাবিটি ভিত্তিহীন

সম্প্রতি, “২০২২ সালে মাশরাফি বিন মোর্তজার সম্পত্তির পরিমাণ ৫১০ কোটি টাকা” শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলোতে দাবি করা হচ্ছে, “২০১৮ সালে নির্বাচনী হলফনামায় মাশরাফি বিন মোর্তজার উল্লেখিত সম্পত্তির পরিমাণ ৯ কোটি ১৫ লাখ। ২০২২ সালে সম্পত্তির পরিমাণ ৫১০ কোটি।”

মাশরাফির সম্পদ

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মাশরাফি বিন মোর্তজার সম্পদের পরিমাণ ৫১০ কোটি টাকা শীর্ষক তথ্যটি সঠিক নয় বরং কতিপয় অনির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রচারিত পুরোনো ভিত্তিহীন তথ্যটি নতুন করে প্রচার করা হচ্ছে। 

মূলত, কিছু অনির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইটের দেওয়া ভিত্তিহীন তথ্যের ওপর ভারতীয় ক্রিকেট ভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকট্র্যাকারে ২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশর শীর্ষ ১০ ধনী ক্রিকেটারের তালিকা এবং সম্পদের পরিমাণ প্রকাশ করে। সেখানে তারা মাশরাফি মোর্তজার সম্পদের পরিমাণ ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ভিত্তিহীন কিছু ওয়েবসাইটের বরাতে উল্লেখ করার পর সেসময় তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দেশীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। তবে পরবর্তীতে মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর সংবাদের সূত্রের গ্রহণযোগ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তারা দুঃখপ্রকাশ করে সংবাদটি প্রত্যাহার করে নিয়ে।

প্রকৃতপক্ষে মাশরাফি বিন মোর্তজার বর্তমান প্রকৃত সম্পদের পরিমাণ কত তা যাচাই করা সম্ভব নয়। তবে মাশরাফি মোর্তজার সম্পদের পরিমাণ ৫১০ কোটি শীর্ষক দাবিটি যে সূত্র থেকে এসেছে সেটি যে অনির্ভরযোগ্য এবং ভিত্তিহীন তা ২০২২ সালে ইন্টারনেটে একই দাবিটি ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া যায়। 

আলোচিত এই দাবি নিয়ে সেসময় রিউমর স্ক্যানারে প্রকাশিত বিস্তারিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন দেখুন এখানে। 

হালনাগাদ/ Update

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটকে একই দাবি সম্বলিত পোস্ট আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে একটি টিকটক পোস্টকে প্রতিবেদনে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।

আল আকসা মসজিদের জুমার নামাজের দৃশ্য দাবিতে কারবালার আশুরার ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, ‘আল আকসা মসজিদের জুমার নামাজের দৃশ্য’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

আল আকসা

ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদের জুমার নামাজের দৃশ্যের নয় বরং এটি আশুরা উপলক্ষে ইরাকের কারবালায় অবস্থিত ইমাম হোসাইন ইবনে আলীর মাজারে হাজারো মানুষদের প্রবেশের ঘটনার ভিডিও। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটির কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে SIPAH-E -ABBAS নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট MILLIONS OF PEOPLE GATHERED IN KARBALA ❤️#karbala #iraq #iran #viralvideo #abbas #karbalastatus শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ইউটিউব শর্টস ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Youtube

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাথে উক্ত ভিডিওর হুবহু মিল রয়েছে। এছাড়াও ভিডিওটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, ভিডিওটি ইরাকের কারবালা শহরে ধারণ করা। 

Video Comparison by Rumor Scanner

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে KARRAR_ABBAS নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট شاهد اقوى مشهد مرعب لدخول ركضة طويريج للأمام الحسين(ع) #اشتركو_بالقناة_ليصلكم_الجديد_ودعماً_لنا_للاس শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একই ঘটনার আরেকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Youtube

উক্ত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভিডিওটির ১৬ সেকেন্ড থেকে ৩২ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটুকুর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। এছাড়াও ভিডিওটির শিরোনাম ইংরেজিতে অনুবাদ করে ভিডিওটি সম্পর্কে কারবেলার একই তথ্য জানা যায়।

Screenshot: Youtube

পরবর্তী অনুসন্ধানে Tuwairij’s run এবং Hussein শব্দ দুটির সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ইরানের সংবাদ সংস্থা Iran Press এর ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর  ‘Tuwairij run’ takes place in Holy city of Karbala, Iraq শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Iran Press

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, প্রতিবছর মহররমের ১০ম দিনে ইরাকের কারবালা শহরে ইমাম হোসাইন (আ.) এর পরিবার এবং সঙ্গীদের দুঃখ ও কষ্টের কথা স্মরণ করে কালো পোশাকধারী শোকার্ত তীর্থযাত্রীরা তুওয়াইরিজ দৌঁড় পালন করে থাকেন। এটি মূলত হাঁটা এবং দৌড়ের মধ্যবর্তী পর্যায়কে নির্দেশ করে যা উদ্বেগ, ভয় ও উত্তেজনা থেকে বেরিয়ে আসে।

Screenshot: Iran Press

এছাড়াও কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ইমাম হোসাইনের মাজারের প্রবেশদারের একটি ছবি পাওয়া যায়। যার সাথে আলোচিত ভিডিওটির দরজার মিল পাওয়া যায়।

Place Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটি আল আকসা মসজিদের জুমার নামাজের ভিডিও নয়।

মূলত, প্রতিবছর মহররমের সময় ইরাকের কারবালায় তীর্থযাত্রীরা ইমাম হোসাইন (আ.) এর পরিবার এবং সঙ্গীদের দুঃখ কষ্টের কথা স্মরণ করে তুওয়াইরিজ দৌড় পালন করে থাকেন। এসময় তীর্থযাত্রীরা ২-৩ কিলোমিটার রাস্তা দৌড়ে ইমাম হোসাইনের মাজারে যান। উক্ত ঘটনার একটি ভিডিও সম্প্রতি আল আকসা মসজিদের জুমার নামাজের দৃশ্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, ইরাকের কারবালায় আশুরা উদযাপনের ভিডিওকে আল আকসা মসজিদের জুমার নামাজের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

সেনাবাহিনী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো ঘোষণা দেয়নি 

গত ২৩ নভেম্বর ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে Sabai Sikhi নামের একটি চ্যানেল থেকে ‘হাসিনাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিলো সেনাবাহিনী, ভয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীর্ষক থাম্বনেইল ও ‘হাসিনাকে গ্রেফতারের নির্দেশ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন জানালেন সেনাপ্রধান’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

জাতীয় নির্বাচন

উক্ত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি ১ লক্ষ ৯৭ হাজার বার দেখা হয়েছে। এছাড়া ভিডিওটিতে প্রায় ২ হাজার তিনশত লাইক এবং ১১২টি মন্তব্য করা হয়েছে।

পরবর্তীতে একই ভিডিও বেশ কিছু ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রচার করা হয়। পোস্টগুলো দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত ভিডিওটি লিংক শেয়ার করে ফেসবুকে প্রচারিত একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সেনাবাহিনী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের নির্দেশ কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন গ্রহণের ঘোষণা দেয়নি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার পুরোনো ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদন, যেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যদের পুরোনো কিছু কার্যক্রমের দৃশ্য দেখানো হয়।

ভিডিওটি’র সংবাদপাঠ অংশে বলা হয়, “এবার সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এদিকে কমিশনের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই নির্দেশনা প্রদান করা হয়। নির্বাচন কমিশনের এই প্রধান কর্মকর্তা বলেন, প্রয়োজনে পুনরায় তফসিল গ্রহণ করে সকল রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের মাধ্যমে এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”

উক্ত বিষয়গুলো নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, ভিডিওটি’র শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে উল্লেখিত তথ্যের সাথে বিস্তারিত সংবাদপাঠ অংশের অমিল রয়েছে। শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতারের নির্দেশ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন গ্রহণের বিষয়টি উল্লেখ করা হলেও সেবিষয়ে বিস্তারিত সংবাদপাঠ অংশে কিছুই বলা হয়নি। এমনকি সেখানে সেনাপ্রধান কিংবা সেনাবাহিনীর অন্যকোনো সদস্যের এসংক্রান্ত কোনো ঘোষণার ভিডিও ক্লিপও দেখানো হয়নি।

তবে চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম আর টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে ‘বেসামরিক প্রশাসনের সঙ্গে আন্তরিকভাবে কাজ করতে চায় সেনাবাহিনী’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: RTV

এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র সেনাপ্রধানের বক্তব্যের অংশের মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এর সাথে আলোচিত দাবির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

এছাড়াও, ২০১১ সালে বাংলাদেশে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে। পরবর্তীতে এই ব্যবস্থা আর পুর্ণবহাল করা হয়নি। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন গ্রহণের বিষয়টি সেনাবাহিনীর আওতার বাইরে।

পাশাপাশি, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের নির্দেশ কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন গ্রহণের দাবির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সঠিক নয়।

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ নভেম্বর Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘হাসিনাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিলো সেনাবাহিনী, ভয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীর্ষক থাম্বনেইল ও ‘হাসিনাকে গ্রেফতারের নির্দেশ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন জানালেন সেনাপ্রধান’ শীর্ষক শিরোনামে ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওটি বেশ কয়েকটি ইউটিউব চ্যানেলেও প্রচার করা হয়। ভিডিওটির দাবির বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি পুরোনো ভিডিও ক্লিপ ও ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে বিষয়টির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষনে এই ঘোষণা দেন তিনি।

উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের নির্দেশ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন গ্রহণের ঘোষণা দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আওয়ামী লীগের ভোট চুরির ভিডিও দাবিতে টিকটকে ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, ‘আওয়ামী লীগের ভোট চোরির কি যোগ্যতা জীবনে প্রথম দেখলাম’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হচ্ছে।

ভোট চুরির

ভিডিওটির বাম পাশে ঢাকা-১৭ আসনে ভোট সুষ্ঠু না হলে ডিএমপি কমিশনারের নাকে খত দিয়ে পদত্যাগের ঘোষণার একটি তথ্য দেখা যাচ্ছে এবং অপরপাশে একজন ব্যক্তিকে দ্রুত কাগজে সিল মারতে দেখা যাচ্ছে।  

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে ভোট সুষ্ঠু না হলে ডিএমপি কমিশনারের নাকে খত দিয়ে পদত্যাগের ঘোষণার বিষয়টি সত্য হলেও উক্ত দাবির সাথে প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের নির্বাচনে ভোটের অনিয়মের ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, এক ব্যক্তি কর্তৃক অফিশিয়াল নথিপত্রে দ্রুত সিল মারার পুরোনো ভাইরাল একটি ভিডিওতে উক্ত শিরোনাম যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

মূলত, গত ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহম্মদ আলী আরাফাত জয় লাভ করেন। এর আগে গত ৪ জুলাই ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের ভোট সুষ্ঠু না হলে নাকে খত দিয়ে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার-ই প্রেক্ষিতে ডিএমপি কমিশনারের নাকে খত দেওয়ার বক্তব্যের অংশ এবং এক ব্যক্তির কাগজে দ্রুত সিল মারার  একটি ভিডিও একত্রিত করে এটিকে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোট চুরির ভিডিও বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। তবে অনুসন্ধান দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিও ২০১৭ সাল থেকে ভারত ও পাকিস্তানের ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে বিদ্যমান রয়েছে। উক্ত ভিডিওটির সাথে বাংলাদেশের নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। 

প্রসঙ্গত, গত ০৫ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনে উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণের সময় চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আজাদ হোসেন কর্তৃক প্রকাশ্যে ৫৭ সেকেন্ডে ৪৩টি ব্যালটে নৌকা প্রতীকে সিল মারার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে উক্ত ঘটনায় অভিযুক্ত আজাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এছাড়া একই দিনে অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে অবৈধভাবে ব্যালটে নৌকা প্রতীকে সিল মারার একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এসব ঘটনায় গত ০৭ নভেম্বর এই দুই আসনে উপনির্বাচনের ফল স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।

উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবিতে ভিডিওটি ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সারাদেশে নয়, বরগুনার একটি কলেজে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে 

0

সম্প্রতি, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ! শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

স্মার্টফোন ব্যবহার

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

পোস্ট গুলোর মন্তব্য ঘরে করা বিভিন্ন মানুষের মন্তব্য পড়ে দেখা যায়, আদেশটি সারাদেশের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ভেবে মানুষ বিষয়টি নিয়ে নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছে।

Collage: Rumor Scanner

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়ার আদেশটি সারাদেশের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য নয় বরং বরগুনা সরকারি কলেজে ক্লাস চলাকালীন একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার তথ্যটি দেশের সকল একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য দাবিতে প্রচারিত হচ্ছে।

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দেশিয় অনলাইন পোর্টাল ঢাকা পোস্ট’র ফেসবুক পেজে গত ২৩ নভেম্বরে “একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ” শীর্ষক তথ্যে আলোচিত দাবিতে প্রকাশিত সম্ভাব্য প্রথম ফেসবুক পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook

ঢাকা পোস্ট’র উক্ত ফেসবুক পোস্টের কমেন্টে একই শিরোনামে গত ২৩ নভেম্বর ঢাকা পোস্ট’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বরগুনা সরকারি কলেজে ক্লাস চলাকালীন একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। গত ২২ নভেম্বর বরগুনা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মতিউর রহমান স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে উক্ত নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

অর্থাৎ, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন ব্যবহারের নিষেথাজ্ঞা শুধুমাত্র বরগুনা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য।

এছাড়া, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার ব্যপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট এবং দেশিয় গণমাধ্যমে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, গত ২২ নভেম্বর বরগুনা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মতিউর রহমান স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে উক্ত কলেজে ক্লাস চলাকালীন একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে উক্ত নিষেধাজ্ঞার বিজ্ঞপ্তি নিয়ে অনলাইন পোর্টাল ঢাকা পোস্ট তাদের ফেসবুক পেজে ‘একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ’ শীর্ষক তথ্যে একটি ফেসবুক পোস্ট করে এবং একই শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে। তবে উক্ত সংবাদ শিরোনাম এবং ফেসবুক পোস্টে বরগুনা সরকারি কলেজের কথা  উল্লেখ না থাকায় নেটিজেনরা বিষয়টি সারাদেশের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য আদেশ ভেবে বিভ্রান্ত হয়েছে এ বিষয়ে নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন এবং উক্ত পোস্টটিকে কপি পেস্ট করে বরগুনার বিষয় উল্লেখ না করে প্রচার করেছেন। 

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল আগামীকাল ২৬ নভেম্বর প্রকাশিত হবে।

সুতরাং, একটি কলেজের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধের আদেশকে সারাদেশের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য আদেশ ভেবে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

সম্প্রতি ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের গাড়িবহরে হামলা হয়নি

সম্প্রতি, দেশের একাধিক গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছে, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের গাড়িবহরে হামলা করে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে এবং এই ঘটনায় তার এক দেহরক্ষী নিহত হয়েছেন। গত ০৭ নভেম্বর অধিকৃত পশ্চিম তীর এলাকায় এই হামলা হয় বলে দাবি করা হয়েছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলোতে। 

ফিলিস্তিনের

উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন- সময় টিভি, কালবেলা, নিউজ২৪, ভোরের কাগজ, দেশ রূপান্তর, বাংলাদেশ জার্নাল, ডেইলি বাংলাদেশ, আজকের দর্পণ, বাংলাদেশ মোমেন্টস, ঢাকা টুডে, বিবার্তা২৪, বার্তা২৪

একই দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজের পোস্টসহ আরও কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মাহমুদ আব্বাসের উপর সাম্প্রতিক সময়ে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি বরং দেশটির একটি শরণার্থী শিবিরে মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের ঘটনার ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

আলোচিত দাবিটি নিয়ে যেসকল গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে, সেসব খবরগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, খবরটির সূত্র হিসেবে রাশিয়ার বার্তা সংস্থা তাস, সিএনএন তুর্ক, দ্য গার্ডিয়ান এবং হুররিয়াত এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। 

সূত্রগুলো যাচাই করতে গিয়ে TASS এর ওয়েবসাইটে গত ০৭ নভেম্বর প্রকাশিত আলোচিত প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়। ‘তাস’ও খবরটির সূত্র হিসেবে সিএনএন তুর্ক এবং হুররিয়াত এর নাম উল্লেখ করেছে।

Screenshot: TASS

তবে সিএনএন তুর্ক এর ওয়েবসাইটে সংশ্লিষ্ট সংবাদটি খুঁজে পাওয়া না গেলেও ইন্টারনেট আর্কাইভে সংবাদটি খুঁজে পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম। অর্থাৎ, সংবাদমাধ্যমটি এ সংক্রান্ত খবরটি প্রকাশ করে পরবর্তীতে তা সরিয়ে নিয়েছে। 

তুরস্কের সংবাদমাধ্যম Hurriyet এর ওয়েবসাইটে অবশ্য এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি এখনও পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, Sons of Abu Jandal নামক একটি গ্রুপ হামলার দায় স্বীকার করেছে। 

হুররিয়াত এর প্রতিবেদনটি পাওয়া গেলেও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম The Guardian এর ওয়েবসাইটে মাহমুদ আব্বাসের বিষয়ে এ সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

Hurriyet এর দাবিকৃত Sons of Abu Jandal নামক গ্রুপের হামলার দায় স্বীকার সংক্রান্ত তথ্যের বিষয়ে অনুসন্ধানে নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিটির পক্ষে কোনো তথ্য মেলেনি। 

তবে ফিলিস্তিনের সংবাদমাধ্যম Palestine Chronicle এর ওয়েবসাইটে গত ০৬ নভেম্বর গ্রুপটির বিষয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়৷ এতে বলা হয়, গত ০৫ নভেম্বর গ্রুপটির পক্ষ থেকে পাঠানো এক বার্তায় মাহমুদ আব্বাসকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বিবৃতির বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে নিজের অবস্থান পরিস্কার করার জন্য ২৪ ঘন্টার সময় বেঁধে দিয়েছে গ্রুপটি। গ্রুপটির বার্তায় মাহমুদ আব্বাসকে আবু মাজেন (মাহমুদ আব্বাস এই নামেও পরিচিত) বলে অভিহিত করা হয়েছে। 

প্যালেস্টাইন ক্রনিকল আরেক প্রতিবেদনে জানাচ্ছে, ‘সন্স অফ আবু জান্দাল’ গ্রুপের হুমকির খবর প্রকাশ্যে আসার (০৬ নভেম্বর) পরদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে, ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের একটি গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, এক্সের (সাবেক টুইটার) কিছু অ্যাকাউন্ট থেকে এই ঘটনাকে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের উপর একটি ‘হত্যার প্রচেষ্টা’ বলে অভিহিত করা হয়, যেখানে আব্বাসের একজন দেহরক্ষী যুদ্ধে নিহত হয়েছেন বলেও দাবি করা হয়। 

প্যালেস্টাইন ক্রনিকল লিখেছে, ইসরায়েলি সাংবাদিক এলিয়র লেভি অভিযোগ করেছেন যে একটি ফিলিস্তিনি সূত্র তাকে বলেছিল যে “ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা বাহিনী একজন মাদক ব্যবসায়ীকে বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান চালানোর সময় গুলি বিনিময় হয় এবং মাহমুদ আব্বাসের গাড়িবহর সে সময় কাছাকাছি ছিল। 

এই তথ্যগুলো ছড়িয়ে পড়েছিল মূলত এ সংক্রান্ত একাধিক ভিডিওকে ব্যবহার করে৷ এসব ভিডিও মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানেরই।  

Screenshot: X

ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যম ‘France24′ এই ভিডিও এবং প্রাসঙ্গিক দাবি নিয়ে গত ৯ নভেম্বর একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রচারিত ভিডিওটি শরণার্থী শিবিরে মাদক পাচারকারীদের উপর নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের ঘটনার৷ এর সাথে মাহমুদ আব্বাসের উপর হামলার ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। এই ঘটনায় সেসময় ফিলিস্তিন নিরাপত্তা বাহিনীর সাতজন সদস্য আহত হন। 

ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের একাধিক গণমাধ্যম সূত্রও (, ) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। 

তাছাড়া, গ্রীসের ফিলিস্তিন দূতাবাসও জানিয়েছে, মাহমুদ আব্বাসের উপর সেদিন (০৬ নভেম্বর) কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। 

মূলত, সম্প্রতি দেশের একাধিক গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছে, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে হত্যার চেষ্টা করা হলে তার এক দেহরক্ষী নিহত হয়েছেন। গত ০৭ নভেম্বর অধিকৃত পশ্চিম তীর এলাকায় তার গাড়িবহরে হামলার এই ঘটনা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। একইসাথে একই ঘটনার দাবিতে একাধিক ভিডিও-ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে জেনেছে, মাহমুদ আব্বাসের উপর সেদিন কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, পশ্চিম তীরের রামাল্লার কাছে অবস্থিত জালাজোন শরণার্থী শিবিরে মাদক পাচারকারীদের উপর পুলিশি অভিযানের ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের গাড়িবহরে হামলা হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আইপিএলে বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের নিষিদ্ধের গুজব

সম্প্রতি, ‘আইপিএলে পাকিস্তানের সাথে সাথে বাংলাদেশী প্লেয়ারদের ও নিষিদ্ধ করলেন BCCI’ শীর্ষক শিরোনামে ভারতীয় গণমাধ্যম ABP আনন্দ-এর ডিজাইন সম্বলিত একটি ভিডিও থাম্বনেইল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

বাংলাদেশী

উক্ত থাম্বনেইল দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাদের নিজের আইডিতে উক্ত তথ্যটি স্ট্যাটাস আকারে পোস্ট করেন।

এমন কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে ( আর্কাইভ)।    

এছাড়াও উক্ত দাবির প্রেক্ষিতে অনেকে তাদের আইডি ও পেজে ভিডিওও প্রচার করেন। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (বিসিসিআই) বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের আইপিএলে নিষিদ্ধ করেনি। এছাড়াও, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় গণমাধ্যম ABP আনন্দও তাদের ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত শিরোনামের থাম্বনেইল যুক্ত কোনো ভিডিও প্রচার করেনি। প্রকৃতপক্ষে, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে  ABP আনন্দ-এর থাম্বনেইলের ডিজাইন নকল করে উক্ত ভুয়া থাম্বনেইলটি তৈরি করা হয়েছে।অনুসন্ধানের শুরুতে ABP আনন্দ-এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে সাম্প্রতিক সময়ে প্রচারিত ভিডিওসমূহের থাম্বনেইলগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত কোনো থাম্বনেইলযুক্ত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও ABP আনন্দ-এর ওয়েবসাইটেও উক্ত দাবিতে প্রচারিত কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া, ABP আনন্দ-এর ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিওসমূহের থাম্বনেইলগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত থাম্বনেইলে শিরোনাম লেখার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ফন্টের সাথে ABP আনন্দ-এর ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত থাম্বনেইলগুলোর ফন্টের মিল নেই। 

Thumbnail Comparison by Rumor Scanner 

পরবর্তীতে আলোচিত দাবির সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দেশীয় ও ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (বিসিসিআই)-এর ওয়েবসাইটেও উক্ত দাবির বিষয়ে  কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

তবে জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক-এর ওয়েবসাইটে গত ২৬ মার্চ ‘আইপিএলে ‘ছায়া নিষেধাজ্ঞার’ কবলে পড়তে পারে বাংলাদেশ!’ শীর্ষক শিরোনামে আইপিএল-এর ২০২৩ এর আসরে বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ নিয়ে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Ittefaq

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার পর গত ৪ এপ্রিল থেকে টেস্ট সিরিজ অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল। তবে আইপিএলে দল পাওয়া তিন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, লিটন দাস এবং মুস্তাফিজুর রহমান টেস্ট না খেলেই টুর্নামেন্টটিতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেসময় খেলোয়াড়দের টেস্ট না খেলে আইপিএলে যাওয়ার জন্য ছাড়পত্র দিতে রাজি ছিলনা বিসিবি। যার ফলে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের টুর্নামেন্ট থেকে ‘ছায়া নিষেধাজ্ঞার’ কবলেও পড়তে হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো। 

অর্থাৎ, বিসিসিআই কর্তৃক বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের আইপিএলে নিষিদ্ধ করার মত কোনো ঘটনা ঘটেনি।

মূলত, রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে ২০০৮ সালের পর থেকে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)-এ পাকিস্তানি ক্রিকেটার নিষিদ্ধ করেছিল ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (বিসিসিআই)। এরপর আর কোনো পাকিস্তানি ক্রিকেটারকে আইপিএলে খেলতে দেখা যায়নি। পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার পর এবছর আইপিএলে অংশগ্রহণের জন্যে এনওসি না পাওয়ায় বাংলাদেশী ও শ্রীলঙ্কান খেলোয়াড় উপর ছায়া নিষেধাজ্ঞা আরোপের একটি গুঞ্জন শোনা যায়। কিন্তু বিসিসিআই এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি উক্ত গুঞ্জনের বিষয়ে কোনো তথ্য জানায়নি। তবে সম্প্রতি আইসিসি ওডিআই বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের হারের পর বাংলাদেশি ক্রিকেট ভক্তদের প্রতিক্রিয়াকে কেন্দ্র করে ‘আইপিএলে পাকিস্তানের সাথে সাথে বাংলাদেশী প্লেয়ারদের ও নিষিদ্ধ করলেন BCCI’ শীর্ষক শিরোনামে ভারতীয় গণমাধ্যম ABP আনন্দ-এর ডিজাইন সম্বলিত একটি ভিডিও থাম্বনেইল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভারতীয় গণমাধ্যম ABP আনন্দ এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে  ABP আনন্দ-এর থাম্বনেইলের ডিজাইন নকলের মাধ্যমে উক্ত থাম্বনেইলটি তৈরি করে আইপিএলে বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের নিষেধাজ্ঞার মিথ্যা তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে।

সুতরাং, ‘আইপিএলে পাকিস্তানের সাথে সাথে বাংলাদেশী প্লেয়ারদের ও নিষিদ্ধ করলেন BCCI’ শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যম ABP আনন্দ-এর নামে প্রচারিত ভিডিও থাম্বনেইলটি ভুয়া ও বানোয়াট।

তথ্যসূত্র

আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সবার আগে কে অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ খুলেছিল?

0

‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজনীতি: বাংলাদেশে ফেসবুকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ব্যবহারকারীদের যোগাযোগের প্রবণতা অন্বেষণ’ শীর্ষক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সাঈদ আল-জামানের প্রকাশিত একটি গবেষণার বরাতে গত ২০ নভেম্বর দেশীয় গণমাধ্যম আজকের পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন  প্রকাশিত হয়েছে। আজকের পত্রিকা তাদের প্রতিবেদনে ঐ গবেষণার সূত্রে উল্লেখ করেছে, “আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী—এই তিন দলের মধ্যে সবার আগে ফেসবুক পেজ খুলেছিল আওয়ামী লীগ, ২০১৩ সালের ৩০ আগস্ট। জামায়াতের পেজটি খোলা হয় ২০১৪ সালের ২০ জুন এবং বিএনপি ফেসবুকে পেজ খোলে ২০১৯ সালের ১৩ জুন। বিএনপি সবার পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় হলেও দলটির পেজ জনপ্রিয় হয়েছে খুব দ্রুত।”

আওয়ামী লীগ

আজকের পত্রিকার ই-পেপারে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে। 

পরবর্তীতে অনুসন্ধানে “Social media politics uncovered: exploring user engagement with political parties on Facebook in Bangladesh” শিরোনামে প্রকাশিত গবেষণাপত্রটি খুঁজে পাওয়া যায় এবং সেখানে উপরোক্ত তথ্যটি যেভাবে লেখা হয় তা নিম্নরূপ, 

“Among the three parties mentioned, the oldest Jamaat page was established on 20 June 2014. Conversely, BAL’s Facebook page was created more recently on 30 August 2013. However, BNP’s page  is relatively new, launched on  13  June 2019.”

গবেষণাপত্র এবং এর ওপর প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর বর্তমানের যে তিনটি ভেরিফাইড অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ রয়েছে সেই তিনটি পেজ বিশ্লেষণ করে এ গবেষণাটি করা হয়েছে। উল্লেখিত তিন দলের বর্তমান অফিশিয়াল ফেসবুক পেজগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের পেজ সবার আগে খোলা হয়েছে। তবে এখানে কেবল দলগুলোর বর্তমান পেজ বিবেচনা করা হয়েছে, কোনো দলের পূর্বে আরও কোনো অফিশিয়াল পেজ থাকতে পারে কিনা সে বিষয়টি বিবেচনা করা হয়নি এবং সেটির উল্লেখও করা হয়নি। এটি বিবেচনায় না আনার ফলে দল তিনটির মধ্যে সবার আগে আওয়ামী লীগ ফেসবুক পেজ খুলেছে এবং বিএনপি সবার পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় হয়েছে শীর্ষক ভুল তথ্য প্রতিবেদনে থেকে গেছে।

বিএনপি কবে প্রথম অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ খুলে?

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) বর্তমান যে অফিশিয়াল ফেসবুক পেজটি রয়েছে সেটি ২০১৯ সালের ১৩ জুন খোলা হয়, যা গবেষণাপত্র এবং সংবাদ প্রতিবেদনেও লেখা হয়েছে। তবে এটি তাদের প্রথম অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ নয়। তাই এটির ভিত্তিতে প্রতিবেদনে বিএনপি সবার শেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় হয়েছে এমনটা বলার সুযোগ নেই।

অনুসন্ধানে ২০১৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর ভোরের কাগজে “বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ হ্যাকড” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে বিএনপির সেসময়কার অফিশিয়াল ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ হ্যাক হওয়ার বিষয়ে জানা যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়,  “বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ www.facebook.com/bnpbd.org হ্যাক হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে দলটির সহ-দফতর সম্পাদক মনির হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এ কথা জানান।”

যেহেতু বিএনপির বর্তমান ভেরিফাইড ফেসবুক পেজটি ২০১৯ সালের ১৩ জুন চালু করা হয়, সেহেতু ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিএনপির যে ভেরিফাইড পেজটি হ্যাক হয়, সেটি বর্তমান পেজের আগে তাদের অফিশিয়াল ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ ছিল তা সহজেই অনুমেয়।

Screenshot : Creation date of BNP’s current official page

তবে, ভোরের কাগজে বিএনপির হ্যাক হওয়া সেই ফেসবুক পেজের যে লিংক যুক্ত করা হয়েছে সেটি ব্রাউজ করলে বিএনপির বর্তমান ফেসবুক পেজ প্রদর্শিত হয়। বিএনপির পূর্বের পেজ এবং বর্তমান পেজের ইউজারনেম একই সেট করার কারণে মূলত এমনটা হয়েছে। 

২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর দিবাগত রাত অর্থাৎ ২৭ ডিসেম্বর রাত ৩টার দিকে হ্যাক হওয়ার প্রায় ৪৪ ঘন্টার মধ্যে বিএনপির তখনকার ভেরিফাইড পেজটি উদ্ধার হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ১৩ জুন পুরোনো পেজটি বাদ দিয়ে একটি নতুন ভেরিফাইড পেজ খোলা হয় এবং পূর্বের পেজটির নাম ও ইউজারনেম পরিবর্তন করে পূর্বের পেজের ইউজারনেম (bnpbd.org) নতুন পেজের জন্য সেট করা হয়। 

পরবর্তী অনুসন্ধানে, বিএনপির সেই পুরোনো ফেসবুক পেজটি খুঁজে পাওয়া যায়, যার বর্তমান নাম Bangladesh National Media, যার ইউজারনেম bangladeshnationalmedia এবং পেজ লিংক www.facebook.com/bangladeshnationalmedia। পেজটি ২০১৯ সালের জুনের পর আর বিএনপির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। পেজের ট্রান্সপারেন্সি সেকশন থেকে দেখা যায়, পেজটি ২০১১ সালের ৩০ এপ্রিল  Bangladesh Nationalist Party – BNP নামে প্রথম তৈরি করা হয়। ২০১৯ সালের ২৩ জুন নতুন পেজ চালু করার পর ২০১৯ সালের ২১ জুন পেজটির নাম প্রথম পরিবর্তন করা হয় এবং পরবর্তীতে একাধিকবার নাম পরিবর্তনের পর পেজটি বর্তমানে Bangladesh National Media নামে রয়েছে। 

Screenshot : Page transparency of BNP’s old page

যেভাবে নিশ্চিত হওয়া গেল এটিই সেই পেজ

এটিই যে বিএনপির পূর্বের সেই ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ তা একাধিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়াও, পূর্বের ঐ পেজের ইউজারনেমও যে bnpbd.org ছিল, যা পরবর্তীতে পরিবর্তন করা হয়েছে, সেটিও নিশ্চিত হওয়া গেছে। 

অনুসন্ধানে ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বরের একটি ফেসবুক পোস্ট পাওয়া যায়, যেখানে ঐ পেজে ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে তরুণ ভোটারদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের একটি ভিডিওর পোস্ট লিংক সমেত শেয়ার করা হয়। ঐ লিংকে ক্লিক করলে তা ঐ পেজেই নিয়ে যায় এবং এখানে ঐ পেজের পূর্বের ইউজারনেমও bnpbd.org থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।
ঐ পোস্টটির লিংক : https://www.facebook.com/bnpbd.org/videos/2267567969944829/

Screenshot from Facebook 

২০১৮ সালের ২৫ ডিসেম্বরের দ্য ডেইলি স্টারের একটি পোস্টে বিএনপির ফেসবুক পেজ মেনশন পাওয়া যায়, ঐ মেনশনে Bangladesh Nationalist Party -BNP এর ওপর ক্লিক করলে তা Bangladesh National Media পেজে নিয়ে যায়। 

Screenshot : The Daily Star 

২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিএনপির ফেসবুক পেজ হ্যাক হওয়ার পর গণমাধ্যমগুলোর সংবাদে ঐ ফেসবুক পেজের যে স্ক্রিনশট পাওয়া যায়, সেই স্ক্রিনশটের ছবিটি Bangladesh National Media পেজে এখনও রয়েছে,  যা ২০১৮ সালের নির্বাচন উপলক্ষে ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর ঐ পেজে আপলোড করা হয়েছিল।

Collage by Rumor Scanner 

এছাড়াও আরো বিভিন্নভাবে Bangladesh National Media নামের এই পেজটি বিএনপির পূর্বের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ ছিল সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। 

অর্থাৎ,  বিএনপি প্রথম তাদের ফেসবুক পেজ খুলেছে ২০১১ সালের ৩০ এপ্রিল। 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অফিশিয়াল ফেসবুক পেজটি খোলা হয় ২০১৪ সালের ২০ জুন। অপরদিকে আওয়ামী লীগ তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ Bangladesh Awami League খুলেছে ২০১৩ সালের ৩০ আগস্ট। এর পূর্বে আওয়ামী লীগের Bangladesh Awami League নামে অফিশিয়াল কোনো ফেসবুক পেজ পাওয়া যায়নি। এর পূর্ব থেকে আওয়ামী লীগের নামে কিছু ফ্যানপেজ থাকলেও সেগুলো অফিশিয়াল ছিল না। ২০১৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে পোস্ট করা একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকেও এমনটাই জানা যায়।

Screenshot : Bangladesh Awami League FB post

সুতরাং, আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী এই তিন দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপি সবার আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় হয়েছে। 

তথ্যসূত্র

  1. Rumor Scanner’s Analysis 
  2. বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ হ্যাকড 

অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিমের বিশ্বকাপ নিয়ে দেশে ফেরার ভিডিও দাবিতে ভিন্ন দেশের পুরোনো ভিডিও প্রচার 

সম্প্রতি, অস্ট্রেলিয়ার ওডিআই ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩ জয়ের পর বিশ্বকাপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার টিমের দেশে ফেরার দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। 

অস্ট্রেলিয়া

ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিমের বিশ্বকাপ নিয়ে দেশে ফেরার কোনো ঘটনার নয় বরং এটি কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ এ মরক্কো ফুটবল দল চতুর্থ স্থান অর্জন করে দেশে ফিরলে দেশটির মানুষের ফুটবল টিমকে স্বাগত জানানোর ভিডিও। 

দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটির কয়েকটি স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘Voice of America’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ২১ ডিসেম্বর “Morocco’s National Football Team Receives Homecoming Welcome”শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও  খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওটির একটি অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটির বিস্তারিত বর্ণনা থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর মরোক্কোর জাতীয় ফুটবল দলকে স্বাগত জানাতে মরোক্কোর রাজধানী রাবাতে হাজার হাজার ভক্ত জড়ো হওয়ার সময়কার ভিডিও এটি। 

পরবর্তীতে ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘Al Jazeera’ এর ওয়েবসাইটে “Morocco’s Atlas Lions receive hero’s welcome on return home” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে বেলজিয়াম, পর্তুগাল এবং স্পেনকে হারিয়ে চতুর্থ স্থান অর্জন করে দলটি। উক্ত অর্জনে জাতীয় ফুটবল দলের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কুচকাওয়াজের সময় রাজধানী রাবাতে দলটিকে স্বাগত জানায় ভক্তরা।  

অর্থাৎ, ভিডিওটি সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বিশ্বকাপ নিয়ে দেশে ফেরার সময়ের নয়।

মূলত, কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ এ মরক্কো ফুটবল দল চতুর্থ স্থান অর্জন করে দেশে ফিরলে দেশটির মানুষ মরক্কো ফুটবল টিমকে স্বাগত জানান। সেই ঘটনায় ধারণকৃত একটি ভিডিওকে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিমের বিশ্বকাপ নিয়ে সাম্প্রতিক দেশে ফেরার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

সুতরাং, ভিন্ন দেশের পুরোনো ঘটনার ভিডিওকে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিমের বিশ্বকাপ নিয়ে দেশে ফেরার সাম্প্রতিক ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে ;যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র