Home Blog Page 600

এআই দিয়ে তৈরি ছবি পোপ ফ্রান্সিসের বাস্তব ছবি দাবিতে প্রচার

0

সম্প্রতি, দুই নারীর মাঝে পোপ ফ্রান্সিসের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে  ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে
আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পোপ ফ্রান্সিসের ছবিটি আসল নয়, বরং আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) সফটওয়্যার ব্যবহার করে ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, ‘Out of context’ নামের একটি টুইটার অ্যাকাউন্টে গত ০৮ এপ্রিল করা একটি টুইটে পোপ ফ্রান্সিসের আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। Out of context নামের সেই টুইটার অ্যাকাউন্ট ঘুরে দেখা যায় সেখানে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহার করে তৈরিকৃত বিভিন্ন ছবি পোস্ট করা হয়ে থাকে। পোপের ছবি ছাড়াও এআই জেনারেটেড একাধিক ছবি খুঁজে পাওয়া যায় সেই টুইটার অ্যাকাউন্টে।

Screenshot: Twitter 

এছাড়াও, কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে নিউ ইয়র্ক টাইমসে  গত ০৮ এপ্রিল “Why Pope Francis Is the Star of A.I.-Generated Photos” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে পোপ ফ্রান্সিসের অসংখ্য এআই জেনারেটেড ছবি তৈরি করা হয়েছে।

Source: New York Times 

পাশাপাশি, কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অনলাইন গণমাধ্যম ‘Buzz Feed News’ এ গত ০১ ফেব্রুয়ারি “Why Are AI-Generated Hands So Messed Up?” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরিকৃত ছবি সমূহে অসংলগ্ন হাতের আকার দেখা যায়। হাতের আঙুলের আকারও সঠিকভাবে চিত্রায়ণ করতে পারে না কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ফলে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরিকৃত ছবিসমূহে প্রায়শই দেখা মেলে অসংলগ্ন হাত কিংবা আঙুলের আকৃতি। 

Source: Buzz Feed News

Buzz Feed News এর প্রতিবেদনে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পোপ ফ্রান্সিসের ছবিটি বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। বিশ্লেষণে দেখা যায়, পোপের ডান পাশে থাকা মেয়েটির হাতের আঙুল মানুষের বাস্তব হাতের আঙুলের মত নয়। যা নির্দেশ করে যে ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি।

Screenshot:

মূলত, বাস্তব ছবি দাবিতে দুই নারীর মাঝে পোপ ফ্রান্সিসের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ছড়িয়ে পড়া ছবিটি বাস্তব কোনো ছবি নয় বরং, ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খ্রিষ্টান ক্যাথলিক চার্চের প্রধান পোপ ফ্রান্সিসকে কেন্দ্র করে একাধিক এআই জেনারেটেড ছবি ছড়ানোর ঘটনা ঘটেছে।

প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এআই জেনারেটেড ছবি বাস্তব দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।

সুতরাং, দুই নারীর সাথে বসে থাকা পোপ ফ্রান্সিসের ছবিটি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে

তথ্যসূত্র

Out Of Context Twitter Acoount – https://twitter.com/outofcontext_AI
Out of Context on Twitter – https://twitter.com/outofcontext_AI/status/1642909856829960199 
The New York Times: Why Pope Francis Is the Star of A.I.-Generated Photos
BuzzFeed News: Why Are AI-Generated Hands So Messed Up?
Reuters: Fact Check-Image of Pope Francis wearing oversized white puffer coat is AI-generated

লেবানন থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলার ঘটনায় গণমাধ্যমে পুরোনো ছবি প্রচার

সম্প্রতি, লেবানন থেকে ইসরায়েলে ৩০টির বেশি রকেট হামলার ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে রকেট হামলার একটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।

Screenshot: Banglanews24

উক্ত ছবি সংযুক্ত করে বাংলা নিউজ (আর্কাইভ) এবং ঢাকা মেইল (আর্কাইভ) প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, লেবানন থেকে ইসরায়েলে ৩০টির বেশি রকেট হামলার ঘটনায় গণমাধ্যমে ব্যবহৃত ছবিটি সাম্প্রতিক নয় বরং ছবিটি ২০২১ সালের।

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম ‘Daily Mail’ এ ২০২১ সালের ১৬ মে “Israeli police shoot dead Palestinian driver who rammed into Jerusalem checkpoint to injure four officers – as families are pulled from Gaza rubble after another night of airstrikes with children accounting for nearly a third of Palestine’s 174 dead” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে হুবহু একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from Daily Mail

উক্ত ছবির ক্যাপশনে লেখা হিয়েছে, ২০২১ সালের ১৫ মে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইসরায়েলি শহরগুলিকে লক্ষ্য করে গাজা থেকে রকেট ছোড়া হচ্ছে।

এছাড়া, ছবিটির নিচে বা দিকের অংশে ছবির সোর্স হিসেবে ‘@Anadolu Agency via Getty Images’ এর নাম দেওয়া হয়েছে। 

উক্ত সূত্র ধরে অনুসন্ধানের মাধ্যমে ‘Getty Images’ এর ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ১৬ মে “Rockets fired from Gaza Strip towards Israel” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত মূল ছবিটি পাওয়া যায়। এই ছবির ক্যাপশনেও একই তথ্য দেওয়া হয়েছে।

Screenshot from Getty Images

অর্থাৎ, সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচারিত ছবিটি ২০২১ সালের।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ইসরায়েলের দিকে অন্তত ৩০টি রকেট ছোড়া হয়েছে।


মূলত, ২০২১ সালের ১৫ মে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইসরায়েলি শহরগুলিকে লক্ষ্য করে গাজা থেকে রকেট ছোড়ার সময় ধারণকৃত একটি ছবি সাম্প্রতিক সময়ে লেবানন থেকে ইসরায়েলের দিকে ৩০টির বেশি রকেট ছোড়ার ঘটনার প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্যবহার করা হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, এর আগেও বিভিন্ন সময় ভুয়া ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে

সুতরাং, লেবানন থেকে ইসরায়েলে ৩০টির বেশি রকেট হামলার ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট প্রেক্ষাপট উল্লেখ ব্যতীত ২০২১ সালের একটি ছবি ব্যবহৃত হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

বঙ্গবাজারে বাইকে করে এসে আগুন লাগানোর দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পুরোনো 

সম্প্রতি রাজধানীর বঙ্গবাজারে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একটি ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে যে, বঙ্গবাজারের আগুনের সূত্রপাতের সাথে দুইজন ব্যক্তি জড়িত, যারা মোটরসাইকেলে করে এসে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানেএখানে
আর্কাইভ  দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানেএখানে। 

ইউটিউবে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে। 

টিকটকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানেএখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানেএখানে। 

উক্ত ভিডিওটি ব্যবহার করে গণমাধ্যম কালবেলায় প্রচারিত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত থাম্বনেইল দেখুন:

কালবেলায় এই ভিডিওয়ের ভিত্তিতে ভুক্তভোগীদের বক্তব্য দেখুন কালবেলা ফেসবুক (আর্কাইভ), কালবেলা ইউটিউব (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বঙ্গবাজারে দুইজন অজ্ঞাত ব্যক্তির বাইকে করে এসে আগুন লাগানোর দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সঙ্গে উক্ত ঘটনার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। প্রকৃতপক্ষে অন্তত এক বছর আগ থেকেই ইন্টারনেটে উক্ত ভিডিওটির অস্তিত্ব রয়েছে।

বাইকে এসে আগুন দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে 

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ২০২২ সালের ৯ এপ্রিল SKL-Oxotic নামের একটি ফেসবুক পেইজে উক্ত ভিডিওটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: SKL-Oxotic Facebook Page 

কিন্তু ভিডিওটিতে কোনো ধরনের তথ্যসূত্র বা শিরোনাম উল্লেখ করা হয়নি৷ অর্থাৎ ভিডিওটি কোন প্রসঙ্গে, কোন স্থান থেকে ধারণকৃত এমন কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি। তবে ভিডিওটিতে  Bhoot #bhoothakaalam #bhootboss #bhootni #bhoothakaalamreview #bhootakola #bhootaaiya ইত্যাদি শীর্ষক বেশকিছু হ্যাশট্যাগ খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: SKL-Oxotic Facebook Page 

এই ভিডিওটির সঙ্গে বঙ্গবাজারে আগুন লাগানোর ঘটনার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ উক্ত ভিডিওটির সঙ্গে বঙ্গবাজারে আগুন লাগার ঘটনার কোনো সম্পৃক্ততাই নেই।

বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি বলছে? 

অনুসন্ধানে দেখা যায়, বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করা হয়নি। বরং কীভাবে এই আগুন লাগল, সে বিষয়ে তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করেছে ফায়ার সার্ভিস। কমিটিকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

Screenshot: bdnews24 

ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

Screenshot: Jamuna TV 

এছাড়া অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়ন ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে মঙ্গলবার ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এ কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে৷ পাশাপাশি আগুন লাগার ঘটনায় কোনো সংস্থাই এখন পর্যন্ত স্পষ্ট কোনো মন্তব্য করেনি।

Screenshot: DW Bangla 
Screenshot: Prothom Alo 

একই বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)’র কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পেছনে ব্যবসায়ীদের দ্বন্দ্ব-বিরোধের কারণ আছে কি না পুলিশ খতিয়ে দেখছে। তিনি বলেন, বঙ্গবাজারে বহুতল ভবন নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরোধ ছিল। এই কারণে আগুন লেগেছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Screenshot: Dhaka Times24

অর্থাৎ বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনার প্রকৃত কারণ সম্পর্কে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা যায়নি। 

বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত আগুনের সূত্রপাতের একটি ভিডিও প্রতিবেদন দেখুন এখানে। 

Screenshot: Ekattor TV
এক বছর আগের এই ভিডিওটি যেভাবে গণমাধ্যম ও ভুক্তভোগীদের প্রভাবিত করেছে

বঙ্গবাজারে সংঘটিত এই আগুনের ঘটনায় গত ৫ এপ্রিল জাতীয় দৈনিক কালবেলা ‘বঙ্গবাজারে দুইজন বাইকে এসে আগুন লাগিয়েছে: বলছেন ব্যবসায়ীরা’ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। 

প্রতিবেদনটির ১ মিনিট ৩৩ সেকেন্ড সময়ে একজন ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমি একটু আগে দেখলাম নেটে, দুইজন বাইকে এসে আগুন লাগাই দিয়া গেল গা।’

Screenshot: Kalbela

একই প্রতিবেদনের ২ মিনিট ৫৫ সেকেন্ড সময়ে আরেকজন ভুক্তভোগী বলেন, ‘সকালবেলা নেটে দেখছি যে, একজন আসলো। আসার পর একজন নামছে, এরপর আগুন লাগাই দিয়া উধাও।’

Screenshot: Kalbela 

সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এই ভুক্তভোগী বলেন, ‘এটা কিভাবে বলবো? আমরা সন্দেহ করছি, তারাই কাজটা করছে।’

অর্থাৎ উক্ত ভুক্তভোগীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক বছর পূর্বের তথ্যসূত্রহীন ভিডিওটিকেই বঙ্গবাজারের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হিসেবে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, কেবল ভুক্তভোগীরাই নয়, কালবেলা পত্রিকাটিও তাদের প্রতিবেদনের থাম্বনেইলে আলোচিত ভিডিওটি ব্যবহার করে। তবে পরবর্তীতে গণমাধ্যমটি থাম্বনেইলটি সম্পাদনা করে আলোচিত ভিডিওয়ের অংশটি সরিয়ে ফেলে।

Thumbnail Comparison by Rumor Scanner

মূলত, গত ৪ এপ্রিল রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে মার্কেটটির প্রায় পাঁচ হাজার দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে দাবি করা হয় যে, দুইজন ব্যক্তি বাইকে করে এসে বঙ্গবাজারে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাইকে এসে বঙ্গবাজারে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি অন্তত এক বছরের পুরানো। এছাড়া আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ফায়ার সার্ভিস সহ তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।

সুতরাং, এক বছর পুরোনো ভিডিওকে বঙ্গবাজারে দুইজন অজ্ঞাত ব্যক্তির বাইকে করে এসে আগুন লাগানোর ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

পুলিশ কর্মকর্তা বহিষ্কার দাবিতে বিভ্রান্তিকর ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, “বড় পুলিশ প্রধান বহিষ্কার” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়েছে।

উক্ত দাবিতে ভিডিও প্লাটফর্ম ইউটিউবে প্রকাশিত ‘ভিডিওটি’ দেখুন ‘Faridpur TV’ (আর্কাইভ)।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়,পুলিশের প্রধান কর্মকর্তা বহিষ্কার হওয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশে ঘটেনি বরং গ্রিসে পুলিশের প্রধান কর্মকর্তার বহিষ্কার হওয়ার ঘটনা ঘটেছে এবং কোন দেশের পুলিশ তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ না করে এবং ভিডিও’র থাম্বনেইলে বাংলাদেশের পুলিশের ছবি ব্যবহার করার কারণে বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

অনুসন্ধানে শুরুতে “বড় পুলিশ প্রধান বহিষ্কার” শীর্ষক থাম্বনেইলে বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যের ছবি সহ গত ১৯ মার্চ, ২০২৩, ‘Faridpur TV’ তে প্রচারিত ভিডিওটি নজরে আসলে তা পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। কিন্তু ভিডিওর ভেতরে কোথাও বাংলাদেশের প্রধান পুলিশ অফিসার কিংবা অন্য কোনো পুলিশ সদস্য বহিষ্কার হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।

তবে একপর্যায়ে দেখা যায় ভিডিওটির ৮ঃ০৬ মিনিটে গ্রীসের পুলিশ প্রধান বহিষ্কার হওয়ার তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

Screenshot from Youtube

অনুসন্ধানে গত ১৮ মার্চ কালের কণ্ঠে “গ্রিসের পুলিশ প্রধান বরখাস্ত” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদনে গ্রিসের পুলিশ প্রধান বরখাস্ত হওয়ার ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়।

Screenshot from Kaler Kantho

ভিডিওটির স্থিরচিত্র থেকে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, ২২ মার্চ ২০২০ এ ‘Andrew Plant’ এর একটি ছবি সহ টুইট পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টে সংযুক্ত ব্যক্তির সাথে আলোচিত নিউজ বুলেটিনের প্রেজেন্টারের সাথে হুবহু মিলে যায়। ‘Faridpur TV’ তাদের ভিডিওতে যে নিউজ প্রেজেন্টারের দৃশ্য দেখিয়েছিলো সেটি বিবিসি নিউজ থেকে কপি করা।

Collage by Rumor Scanner

এছাড়া কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে গত ১৯ মার্চ বাংলাদেশে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা বহিষ্কার হওয়ার তথ্য খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম।

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিও’র বিস্তারিত প্রতিবেদন এবং এবিষয়ে গণমাধ্যমমের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, গ্রিসে পুলিশ কর্মকর্তা বহিষ্কার হওয়ার ঘটনাতে গ্রিসের নাম উল্লেখ না করে বড় পুলিশ কর্মকর্তা বহিষ্কার হয়েছে দাবি করে থাম্বনেইলে বাংলাদেশ পুলিশের ছবি ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার করা হয়েছে।

মূলত, ট্রেন দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে জনগণ বিক্ষোভ করলে গত ১৮ মার্চ গ্রিসের পুলিশ প্রধান বরখাস্ত হয়। সেই তথ্যটি উপস্থাপন করতে গিয়ে ‘Faridpur TV’ তাদের ইউটিউব চ্যানেলের একটি ভিডিওর থাম্বনেইলে বাংলাদেশের পুলিশের ছবি ব্যবহার করার কারণে বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।

প্রসঙ্গত, অসামাজিক কার্যকলাপ ও ঘুষ গ্রহণের দায়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মোহা. আবদুর রকিব খানকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। গত ২৭ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপন থেকে এই তথ্য জানা যায়।

উল্লেখ্য, থাম্বনেইলে চটকদার শিরোনাম ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এসব ঘটনা নিয়ে পূর্বেও ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, গ্রিসে পুলিশ কর্মকর্তা বহিষ্কার হওয়ার ঘটনাতে গ্রিসের নাম উল্লেখ না করে বড় পুলিশ কর্মকর্তা বহিষ্কার হয়েছে লিখে প্রচার করা হচ্ছে এবং থাম্বনেইলে বাংলাদেশের পুলিশের ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

ভিডিওর ঘটনাটিতে কেবল হিন্দু নয়, হিন্দু-মুসলিম উভয় ধর্মের দোকানিদেরই শাসানো হয়েছে

সম্প্রতি  ‘বাংলাদেশের তো শরিয়া শাষণ শুরু হয়ে গেছে। হিন্দু দোকানদারদেরকে উপর হুমকি’ শীর্ষক শিরোনামে ৮ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওতে বাংলাদেশে শরীয়া শাসন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রোজায় শুধুমাত্র হিন্দু দোকানদারদেরকে হুমকি দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং কয়েকজন ব্যক্তি নিজেদের উদ্যোগে খাবারের হোটেল এবং দোকানে গিয়ে রোজায় মুসলিমদের কাছে খাবার বিক্রি বন্ধের জন্য মালিকদের শাসিয়েছেন এবং সেখানে হোটেল ও দোকান মালিকদের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম উভয় ধর্মের মানুষই রয়েছেন।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ৮ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের ভিডিওটির শুরুতেই দেখা যায়, লাঠি হাতে নিয়ে কয়েকজন ব্যক্তি গলায় গামছা জড়ানো এক ব্যক্তিকে শাসায়। রোজা না রাখা ব্যক্তিদেরকে খাবার দেওয়ার জন্য লাঠি হাতে ভয় দেখিয়ে ওই ব্যক্তিকে কান ধরে ওঠবস করানো হয়।

Screenshot: Facebook

পরবর্তীতে এমন আরও এক ব্যক্তিকে একই কাজের জন্য একই শাস্তি দিতে দেখা যায়।

Screenshot: Facebook 

পরবর্তীতে, ভিডিওটির ৫৯ সেকেন্ডের অংশে দেখা যায়, একজন হিন্দু মালিকের হোটেলে গিয়ে পূর্বের ব্যক্তিরা রমজানে কোনো মুসলমানকে খাবার দিলে দোকান বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেন। উক্ত হোটেল মালিকের গায়ে পরিহিত টি-শার্টে ‘শারদীয় শুভেচ্ছা’ লেখা দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় তিনি একজন হিন্দু।

Screenshot: Facebook

এরপর ভিডিওতে দেখা যায়, অন্য খাবারের দোকানগুলোতে গিয়েও তারা একই কথা বলছেন। তাদের মূল কথা হল, রোজার মধ্যে কোনো মুসলিম হোটেলে গিয়ে খাবার খেতে পারবে না এবং কোনো মালিক তাদের কাছে খাবার বিক্রি করতে পারবে না। অসুস্থ বা অন্যদের খাবারের প্রয়োজন হলে খাবার কিনে নিয়ে যেতে পারবে। ৪ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে তাদের কথোপকথন থেকে বোঝা যায়, হোটেল মালিকদের একজনের নাম জাহাঙ্গীর।

Screenshot: Facebook

পরবর্তীতে অভিযান পরিচালনাকারী ব্যক্তিদের একইভাবে আরও কয়েকটি দোকানে গিয়ে দোকানদারদেরকে একইভাবে শাসাতে দেখা যায়।

Screenshot: Facebook 

অর্থাৎ, ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে এটা স্পষ্ট যে, শুধুমাত্র ধর্মীয়ভাবে নির্দিষ্ট কোনো সম্প্রদায়ের মানুষকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে না বরং ওখানকার সকল খাবার হোটেলের মালিকদের রোজায় খাবার বিক্রি করা নিয়ে একই কথা বলা হয়েছে এবং সেখানে হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই ছিল। পাশাপাশি, বাংলাদেশে শরীয়া আইন চালু হবার কোনো তথ্য মূল ধারার গণমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য অন্যকোনো সূত্রে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, সম্প্রতি ফেসবুকে প্রচার হওয়া ৮ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে একদল লোককে উত্তেজিত হয়ে বিভিন্ন খাবারের দোকানে গিয়ে রোজায় খাবার বিক্রি করা নিয়ে মালিকদেরকে শাসাতে দেখা যায়। প্রচারিত ভিডিওতে দাবি করা হয় দেশে শরীয়া আইন শুরু হওয়ার ফলে হিন্দু রমজান মাসে দোকানদারদেরকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের বিশ্লেড়ণে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওতে শুধুমাত্র হিন্দু দোকানদারদেরকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে না বরং ওখানকার খাবার হোটেলের সকল মালিককে রোজায় খাবার বিক্রি নিয়ে শাসানো হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে শরীয়া আইন চালু হওয়ার কোনো তথ্য কোথাও পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, রোজায় মুসলমানদের কাছে খাবার বিক্রি না করতে হিন্দু-মুসলিম উভয় ধর্মের দোকানদারদেরকে শাসানোর ঘটনার ভিডিওকে শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মের দোকানদারদেরকে শাসানোর ঘটনা দাবিতে প্রচারিত হয়; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner Own Analysis

গাড়িতে বসা চার নারীর ভাইরাল ছবির কেউ মুক্তিযোদ্ধা নয়

0

সম্প্রতি, “চার বাংলাদেশী নারী মুক্তিযোদ্ধা ১৯৭১ সালে তাদের তোলা ছবিটি পুননির্মাণ করেছেন” শীর্ষক শিরোনামে দুটি ছবির কোলাজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে বন্দুক ও গাড়ির স্টিয়ারিং হুইল ধরে একটি গাড়িতে বসা চার নারীর দুটি ছবির একটি কোলাজ ছবির চার নারীকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করা হয়েছে। 

Screenshot : Facebook

ফেসবুকে প্রচারিত এমন দাবির কিছু সাম্প্রতিক পোস্ট এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে
আর্কাইভ এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

একই দাবিতে ২০২১ সালে প্রচারিত কিছু পোস্ট এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গাড়ীতে বসা চার নারীর ভাইরাল কোলাজ ছবিতে থাকা নারীরা মুক্তিযোদ্ধা নন এবং কোলাজ ছবিতে থাকা সাদাকালো ছবিটি ১৯৭১ এবং রঙিন ছবিটি ২০২১ সালে তোলা নয় বরং সাদাকালো ছবিটি ১৯৬১ এবং ওই ছবির অনুরুপভাবে রঙিন ছবিটি ২০১৭ সালে তোলা।

সাদাকালো প্রথম ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করার মাধ্যমে Bangladesh Old Photo Archive নামের একটি ফেসবুক পেজে ২০১৩ সালের ১৯ জুলাই দেওয়া একটি পোস্টে অনুরূপ ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।  উক্ত পোস্টে ছবিটির ক্যাপশন দেয়া হয়, “Women are posing with gun in a village trip. Bangladesh (1965). Photo courtesy- Renan Ahmed.”

Screenshot : Facebook

উপরোক্ত পোস্টে থাকা ফটো কর্টেসির ব্যক্তি রেনান আহমেদ এর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট অনুসন্ধানে ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট দেওয়া একটি ফেসবুক পোস্টেও ঐ ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবিটির ক্যাপশনে সময়কাল ১৯৬১ দেখা যায়। 

Screenshot : Facebook

২০২০ সালের ২৫ আগস্ট ছবিতে থাকা রোকেয়া আহমেদ নামের নারীর মৃত্যুর সংবাদ প্রচারের সাথে উক্ত পোস্টে বেশকিছু ছবি যুক্ত করা হয়, যার মধ্যে ভাইরাল কোলাজ ছবির সাদাকালো ছবিটি ‘১৯৬১’ ক্যাপশনে রয়েছে।

উক্ত ছবির কমেন্ট বক্সে করা এক ব্যক্তির কমেন্টের রিপ্লাইয়ে রেনান আহমেদ এর একটি কমেন্ট পাওয়া যায়। যেখানে তিনি লিখেছেন, সাদকালো ছবিটি ১৯৬১ সালের এবং ছবিটি তোলেন তার দাদা। 

Screenshot : Facebook

রেনান আহমেদ এর উপরোক্ত কমেন্ট এবং অন্য আরেকটি কমেন্ট থেকে জানা যায় ১৯৬১ সালে তোলা ঐ ছবিটি ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে রেনান আহমেদ এর পিতা আমিন উদ্দিন আহমেদ পুননির্মাণ করেন। 

Screenshot : Facebook

অর্থাৎ, কোলাজ ছবিটির মধ্যে সাদাকালো ছবিটি ১৯৬১ সালে তোলা হয় এবং ২০১৭ সালে সেই ছবির অনুরূপ রঙিন ছবিটি তোলা হয়

অনুসন্ধানে দেখা যায় ২০২১ সালে প্রথম ভাইরাল এ কোলাজ ছবির চার নারীকে মুক্তিযোদ্ধা এবং ছবি দুটির সময়কাল ১৯৭১ এবং ২০২১ দাবি করা হয়।

Screenshot : Facebook

তাদের মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে প্রচারিত কোলাজ ছবিটি ভাইরাল হলে ছবির নারীদের পরিবারের সদস্যরা তা মিথ্যা হিসেবে উল্লেখ করে পোস্ট করেন। 

অনুসন্ধানে Afrina Haque নামের একটি ফেসবুক আইডিতে ২০২১ সালের ২৪ মার্চ দেওয়া তেমনি একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে আফরিনা হক ছবির তিন নারীকে তার চাচী এবং একজনকে ফুফু উল্লেখ করে তাদের ছবিকে চার নারী মুক্তিযোদ্ধার ছবি দাবি করার বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে উল্লেখ করে পোস্টটি করেছেন। 

Screenshot : Facebook

বিষয়টি নিয়ে সেসময় ২০২১ সালের ৩১ মার্চ প্রথম আলোতে “ভাইরাল দুই ছবি, নেপথ্যে ভিন্ন গল্প শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।  

Screenshot : Prothom Alo

উক্ত প্রতিবেদন থেকে রেনান আহমেদ এর পিতা আমিন উদ্দিন আহমেদ এর বক্তব্য পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মা-চাচিদের ছবি ফেসবুকে যেভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে, তা নিয়ে বিব্রত ব্যবসায়ী আমিন উদ্দিন বলেন, 

কোনোভাবেই এটি মুক্তিযুদ্ধের ছবি নয়। পারিবারিক একটি ছবি। প্রথম ছবির মতো করে দ্বিতীয়বার ছবি তুলতে গিয়ে বন্দুক নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়। আমার লাইসেন্স করা বন্দুক একজনের হাতে দিই। আর একজনের হাতে একটি স্টিক ধরিয়ে দিই।”

উক্ত প্রতিবেদনে একই গাড়ীতে বসা আমিন উদ্দিন আহমেদ এর একটি ছবিও পাওয়া যায়। 

 Screenshot : Prothom Alo

এছাড়াও আমিন উদ্দিন আহমেদ এর স্ত্রী রিফাত আহমেদ এর হাতে ষাটের দশকে তোলা চার নারীর সেই ছবির বাঁধাই করা একটি ছবিও প্রতিবেদন থেকে পাওয়া যায়।

Screenshot : Prothom Alo

প্রতিবেদনে রিফাত আহমেদ এর বক্তব্যও পাওয়া যায়। যেখানে তিনি বলেছেন,

 “ফেসবুকে ছবিটি নিয়ে ঝড় বইছে তা দেখছি। প্রতিবাদও করছি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। কেউ ইচ্ছে করে ছবিটি নিয়ে বিতর্ক করছেন তা নয়, তবে এর পেছনে অশিক্ষা অবশ্যই বড় কারণ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি শেয়ার করার আগে কেউ তার সঠিক ইতিহাস জানার চেষ্টা করছে না। আর আমার দাদাশ্বশুর ছিলেন সেই সময়ের ধনাঢ্য ব্যক্তি। তাঁর পরিবার মুক্তিযুদ্ধের সময় নানাভাবে সহায়তাও করেছে। তবে ছবির এই চারজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নন।”

প্রথম আলোর এই প্রতিবেদনের ভিডিও সংস্করণও রয়েছে। ভিডিও সংস্করণ দেখুন এখানে

Screenshot : Facebook

একই দাবিটি ২০২১ সালে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সেসময় দাবিটিকে মিথ্যা হিসেবে সনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলো।

মূলত, ষাটের দশকে একটি পরিবারের চার নারীর গাড়ীতে বসে তোলা একটি ছবি এবং ২০১৭ সালে ঐ ছবির অনুরূপভাবে তোলা ছবি কোলাজ করে ঐ চার নারীকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে ছবি দুটি তোলার সময়কাল ১৯৭১ এবং ২০২১ বলে দাবি করে প্রচার করা হয়। তবে ঐ ছবিতে থাকা নারীদের পরিবার তাদের মুক্তিযোদ্ধা দাবির বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে নিশ্চিত করেছেন। 

সুতরাং, ষাটের দশকে তোলা চার নারীর একটি ছবিকে ১৯৭১ সালে তোলা নারী মুক্তিযোদ্ধার ছবি দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  1. Bangladesh Old Photo Archive’s Post
  2. Renan Ahmed Post & Comments 
  3. ভাইরাল দুই ছবি, নেপথ্যে ভিন্ন গল্প – Prothom Alo

১৯৭৪ এর আলোচিত বাসন্তী মারা যাননি

১৯৭৪ সালে মাছ ধরার জাল পরিয়ে লজ্জা নিবারণের সেই আলোচিত ঘটনার প্রধান চরিত্র বাসন্তী। সম্প্রতি, সেই বাসন্তীকে নিয়ে মূলধারার গণমাধ্যম বাংলাদেশ প্রতিদিনে লেখা এক সম্পাদকীয় কলামে পত্রিকারটির সম্পাদক নঈম নিজাম দাবি করেছেন “বাসন্তী মারা গেছেন।

Screenshot from Bangladesh Pratidin

‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ এ প্রকাশিত সম্পাদকীয় কলমটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৭৪ এর আলোচিত বাসন্তী মারা যাননি বরং তিনি বেঁচে আছেন এবং বর্তমানে তিনি সরকারের থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া  বাড়িতে অবস্থান করছেন।

কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, গত ৩ মার্চ, ২০২৩ এ গণমাধ্যম ‘সমকাল’ এ “৭৪-এর আলোচিত বাসন্তী পাবেন আজীবন আর্থিক সহায়তা” এই শীর্ষক একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘১৯৭৪ সালের সেই আলোচিত বাসন্তীকে আজীবন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা প্রশাসন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে প্রতি মাসে বাসন্তীকে ভরণপোষণের জন্য ৪ হাজার ৫০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

বাসন্তীর বসবাসের জন্য সরকারিভাবে একটি পাকা ঘর দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিনোদনের জন্য দেওয়া হয়েছে একটি টেলিভিশন। জেলেকন্যা বাসন্তী দাস বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী হওয়ায় অনেক আগে থেকেই প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়ে আসছেন।’

Screenshot From Samakal
Screenshot From Jagonews

এছাড়া, গত ৫ মার্চ ২০২৩ এ ‘Jagonews’ এর ইউটিউব চ্যানেলে “উপহারের ঘরে বাসন্তী, ভরণপোষণ দিচ্ছে সরকার” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও প্রতিবেদনও প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। এছাড়া ভিডিও প্রতিবেদনে বাসন্তীর বর্তমান অবস্থান দেখানো হয়। 

Screenshot from Youtube.

অনুসন্ধানের মাধমে গত ৩ এপ্রিল ২০২৩ এ ‘Maydul Islam’ নামক এক ব্যাক্তির একটি ফেসবুক পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। সেই পোস্টে তিনি বাসন্তির একটি ভিডিও প্রকাশ করে জানান বাসন্তী বেঁচে আছেন।

Screenshot from Facebook.

মূলত, ১৯৭৪ সালে মাছ ধরার জাল পরিয়ে লজ্জা নিবারণের সেই আলোচিত ঘটনার প্রধান চরিত্র বাসন্তীকে নিয়ে সম্প্রতি ‘ বাংলাদেশ প্রতিদিন’ প্রত্রিকায় লেখা এক সম্পাদকীয় কলামে পত্রিকারটির সম্পাদক নঈম নিজাম দাবি করেন “বাসন্তী মারা গেছেন।” কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। বাসন্তী বেঁচে আছেন এবং বর্তমানে তিনি সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া বাড়িতে অবস্থান করছেন

প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের কাছ জয় লাভের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুর্নগঠনের কাজ এগিয়ে চলছিলো ঠিক তখনই (১৯৭৪) দেশে আকস্মিকভাবে বড় ধরনের বন্যায়  দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। সেসময় দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের দুর্দশা তুলে ধরতে কুড়িগ্রামের চিলমারীর বাসন্তী নামের এক যুবতীর সংবেদনশীল ছবি প্রকাশ করেছিলো দৈনিক ইত্তেফাক। ছবিটি তুলেছিলেন ইত্তেফাকের ফটো সাংবাদিক আফতাব উদ্দিন। সেসময় ছবিটি দেশ বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো। তবে পরবর্তী সময়ে ওই ছবির নেপথ্যের গল্প নিয়ে বের হয়ে আসে নানা তথ্য। ফটো সাংবাদিক ছবিটি পরিকল্পিতভাবে তুলেছিলেন বলে খোদ গণমাধ্যম সূত্রেই দাবি করা হয়। 

উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন ব্যক্তিদের মৃত্যু নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচারের ঘটনায় একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন  দেখুন এখানে, এখানে, এখানে

সুতরাং, ১৯৭৪ এর আলোচিত বাসন্তীর মৃত্যুর সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

রমজানকে কেন্দ্র করে এমিরেটস এর নামে ভুয়া ক্যাম্পেইন প্রচার

0

সম্প্রতি ‘Emirates Ramadan gift’ শীর্ষক  একটি ক্যাম্পেইন লিংক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং মেসেজ শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম মেসেঞ্জার এবং হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়েছে। 

Screenshot: Facebook

ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি লিংক দেখুন এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে। 

মেসেঞ্জার এবং হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়ার স্ক্রিনশট দেখুন।

Screenshot: WhatsApp and Messenger

উক্ত ভুয়া ক্যাম্পেইনের কয়েকটি ওয়েবসাইট লিংক দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে
আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে। 

Screenshot: Fake Campaign Website

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দুবাই ভিত্তিক এয়ারলাইন্স কোম্পানি এমিরেটস এর পক্ষ থেকে রমজান উপলক্ষে ৩০ হাজার টাকা উপহার দেওয়া হচ্ছে না বরং প্রতারণার উদ্দেশ্যে এমিরেটস এর লোগো ব্যবহার করে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে উপহার প্রদানের প্রলোভন দেখানো হচ্ছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে ক্যাম্পেইনটির সত্যতা যাচাইয়ে ক্যাম্পেইন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে প্রথমেই অভিনন্দন জানিয়ে বলা হয়, এমিরেটস এর পক্ষ থেকে রমজান উপহারে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ৩০ হাজার টাকা জেতার সুযোগ রয়েছে।

পরবর্তীতে সেখানে পর্যায়ক্রমে চারটি প্রশ্ন সামনে আসে। যেখানে বয়স, লিঙ্গ এবং এমিরেটস সম্পর্কে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়।

Screenshot: Fake Campaign Website 

সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পর এই ধাপটি পার হয়। এরপর অভিনন্দন জানিয়ে এই ধাপটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে পরের ধাপে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ৯টি গিফট বক্স দেখা যায়। সেখানে জানানো হয়, বক্সের ভেতরে থাকা গিফট পেতে হলে সঠিক গিফট বক্স সিলেক্ট করতে হবে এবং এর জন্য ৩ বার সুযোগ দেওয়া হবে।

Screenshot: Fake Campaign Website

এই ধাপটি যাচাই করার জন্য প্রদর্শিত গিফটবক্স থেকে অনুমানের ভিত্তিতে একটি বক্স সিলেক্ট করা হয়। সেখানে দুঃখপ্রকাশ করে জানানো হয় বাছাইকৃত বক্সটি খালি এবং এখনো দুইবার সুযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে অন্য একটি বক্স সিলেক্ট করলে সেখানে বাছাইকৃত বক্সটি থেকে টাকা বের হতে দেখা যায়। এরপর অভিনন্দন জানিয়ে ৩০ হাজার টাকা জেতার কথা বলা হয়।

Screenshot: Fake Campaign Website

পরের ধাপে ৫ টি ফেসবুক গ্রুপ অথবা ২০ জন বন্ধুকে এই ক্যাম্পেইন সম্পর্কে জানাতে বলা হয়। ক্যাম্পেইন সম্পর্কে জানাতে মেসেজিং প্লাটফর্ম মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের অপশন দেওয়া হয়। সেগুলোয় ক্লিক করলে উক্ত অ্যাপগুলোতে একটি লিংক পাঠানোর অপশন সামনে আসে।

Screenshot: Fake Campaign Website
এমিরেটস কি এমন কোনো অফার দিচ্ছে?

যে ওয়েবসাইট থেকে এই উপহার দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হচ্ছে সেটি একটি ভুয়া ওয়েবসাইট। পাশাপাশি দুবাই ভিত্তিক এয়ারলাইন্স কোম্পানি এমিরেটস এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট এবং ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ কিংবা নির্ভরযোগ্য অন্যকোনো সূত্র থেকেও উক্ত অফারের সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, উক্ত ক্যাম্পেইনটি এমিরেটস এর পক্ষ থেকে এমন কোনো অফার দেওয়া হয়নি। 

মূলত, দুবাই ভিত্তিক এয়ারলাইন্স কোম্পানি এমিরেটস এর পক্ষ থেকে রমজান গিফট অফারের দাবিতে সম্প্রতি একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও মেসেজ শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম মেসেঞ্জার এবং হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এমিরেটস এর নাম এবং লোগো ব্যবহার করে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে একাধিকবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট নকল করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে প্রলোভন দেখানো হয়। সেসময় উক্ত বিষয়গুলোকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, ভুয়া ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এমিরেটস এর নাম ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে রমজান উপলক্ষে ৩০ হাজার টাকা উপহার দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুর তথ্যটি গুজব

0

সম্প্রতি ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, ডা. জাফর উল্লাহ আমাদের মাঝে আর নেই সবাই তার রূহের মাগফেরাত কামনা করবেন। ওপারে ভালো থাকবেন ভাই।‘ শীর্ষক শিরোনামে ড. জাফর উল্লাহ চৌধুরীর ছবি শেয়ার করে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মারা যাওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয় বরং তিনি বর্তমানে নিজ প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং কোনো প্রকার তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে তার মৃত্যুর দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গত ০৭ এপ্রিল ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নিজ প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে তার অসুস্থতার বার্তা সম্বলিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook/Gonoshasthaya Kendra – GK

উল্লিখিত পোস্টে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গুরুতর অসুস্থ জানিয়ে তার সুস্থতার জন্য সকলের দোয়া কামনা করা হয়।

পরবর্তীতে তার অসুস্থতার তথ্য নিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের বরাতে মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন; বিডিনিউজ২৪, প্রথম আলো, ডেইলি স্টার

Screenshot: Daily Star Website

গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের সমন্বয়ক ডা. মহিবুল্লাহ খন্দকার গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রথম আলোকে জানান,

“ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গুরুতর অসুস্থ। তিনি ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। দুই দিন আগে গুরুতর অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।”

Screenshot: Prothom Alo Website

ডা. মহিবুল্লাহ বলেন, “তাঁর (ডা. জাফরুল্লাহ) শারীরিক অবস্থা মাঝেমধ্যেই খারাপ হয়ে যায়। আবার ইম্প্রুভ করে। তাঁর শরীর এমনিতেই খারাপ। বয়সও বেশি। দুই দিন ধরে তাঁর অবস্থা একটু ক্রিটিক্যাল।”

এছাড়া, গতকাল ০৭ এপ্রিল শুক্রবার সন্ধ্যায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকেও একই তথ্য জানা যায়।

অর্থাৎ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ এবং মূলধারার গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গুরুতর অসুস্থ এবং তিনি তার নিজ প্রতিষ্ঠানেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।

পরবর্তীতে বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করা হলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ রিউমর স্ক্যানারকে জানায়, ‘ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে।’

মূলত, গত ০৫ এপ্রিল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী অসুস্থ হয়ে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ভর্তি হন। পরবর্তীতে গতকাল ০৭ এপ্রিল তার শারীরিক অবস্থা গুরুতর বলে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হতে জানানো হয়। তবে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর গুরুতর অসুস্থতার খবরকেই তিনি মারা গেছেন দাবি করে ফেসবুকে প্রচার করা হয়।

উল্লেখ্য, এর আগেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে সেসব বিষয় নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুর দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ গুজব।

তথ্যসূত্র

ইয়েমেনের ‘আল হুতাইব’ নামক স্থানে কোনোদিন বৃষ্টি না হওয়ার তথ্যটি মিথ্যা

সম্প্রতি, ‘ইয়েমেনের রাজধানী সানার প্রশাসনিক এলাকা জাবল হারজের পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত ‘আল হুতাইব’ নামক স্থানে কোনদিন বৃষ্টি হয়নি’ দাবিতে একটি পোস্টে(আর্কাইভ) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। উক্ত পোস্টে আরো দাবি করা হয়েছে, আকাশে মেঘ জমে সমতল থেকে ২০০০ মিটার উপরে কিন্তু ‘আল হুতাইব’ নামক স্থানটি মাটি থেকে ৩২০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত হওয়ায় সেখানে কোনো বৃষ্টি হয়না। 

Screenshot from Facebook 

একই দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে প্রচার হয়ে আসছে। পূর্বে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 
উক্ত পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

Screenshot from Facebook 

বিভিন্ন সময় একই দাবিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন জাগো নিউজ (আর্কাইভ), সময় টিভি (আর্কাইভ),একুশে টিভি (আর্কাইভ), রাইজিং বিডি (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইয়েমনের ‘আল হুতাইব’ নামক স্থানটিতে কোনোদিন বৃষ্টিপাত না হওয়ার দাবিটি সত্য নয় বরং বিভিন্ন আবহাওয়া বিষয়ক ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী উক্ত স্থানটিতে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। তাছাড়া “ভূপৃষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ ২০০০ মিটারের মধ্যেই মেঘ জমা হয়” শীর্ষক দাবিটিও সত্য নয়।

পৃথিবীর যেসব স্থানে বৃষ্টিপাত খুবই কম হয় এমন জায়গার অনুসন্ধানে Sciencelive and Forbes এর ওয়েবসাইটে এই সংক্রান্ত ফলাফল পাওয়া যায়। তবে সেই তালিকায় আল-হুতাইবের নাম পাওয়া যায়নি।

Screenshot from Forbes

পাকিস্তান ভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম Dawn এর ওয়েবসাইটে ২০১৫ সালে ফোটোসাংবাদিক Mehlum S Sadriwala কর্তৃক প্রকাশিত একটি ভ্রমণকাহিনী পাওয়া যায়। যেখানে তিনি ইয়েমেনে তার ভ্রমণ এবং আল-হুতাইবের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। ভ্রমণকাহিনীতে তিনি আল-হুতাইবের সৌন্দর্য বর্ণনা করে লিখেছেন সেখানে প্রতিদিন বৃষ্টি হয়েছিলো।

Screenshot from Dawn

পরবর্তীতে Weather Atlas নামক একটি ওয়েবসাইটের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আল হুতাইবে বছরের দুইটি সময়ে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। উক্ত স্থানে এপ্রিল মাসের গড় বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হচ্ছে ১০৩ মিলিমিটার। অন্যদিকে আগস্ট মাসে উক্ত স্থানটিতে ১১১ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। উল্লেখ্য যে আল হুতাইবে বছরের সর্বনিম্ন (৫ মিলিমিটার) বৃষ্টিপাত ঘটে ডিসেম্বর মাসে। 

Screenshot from Weather Atlas

তাছাড়া Accu Weather নামক ওয়েবসাইট থেকে আল হুতাইবের আবহাওয়ার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেখা যায় চলতি এপ্রিল মাসের বিভিন্ন তারিখেও উক্ত স্থানে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

Screenshot from Accu Weather

অর্থাৎ, ইয়েমেনের আল-হুতাইব নামক স্থানে কখনো বৃষ্টি না হওয়ার দাবিটি মিথ্যা।

মেঘের উপরে অবস্থিত স্থানে কি বৃষ্টি হয় না?

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন ধরণের মেঘ রয়েছে। আর এই মেঘগুলোকে মূলত এদের আকার এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে তাদের উচ্চতার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন নাম দেওয়া হয়। 

UCAR Center for Science Education” এর তথ্যমতে, যেসকল মেঘ ভূপৃষ্ঠ থেকে ২ কিলোমিটার উচ্চতার মধ্যে অবস্থান করে তাদের বলা হয় Low Clouds. অন্যদিকে, ভূপৃষ্ঠ থেকে ২-৭ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থানকারী মেঘকে বলা হয় Middle Clouds. আবার, পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ৫-১৩ কিলোমিটার উচ্চতার মেঘকে বলা হয় High Clouds. অন্যদিকে, Cumulonimbus নামক এক ধরণের মেঘ রয়েছে যারা পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ১৩ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত যেকোনো স্থানেই অবস্থান করতে পারে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের তথ্যমতে, Cumulonimbus নামের এই মেঘ বজ্রপাত এবং ভারী বৃষ্টিপাত ঘটাতে সক্ষম।

Screenshot from National Geographic

অর্থাৎ, ‘আল হুতাইব’ নামক স্থানটি মাটি থেকে ৩২০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত হওয়ায় সেখানে  কোনো বৃষ্টি না হওয়ার দাবিটি ভিত্তিহীন।

মূলত, ইয়েমেনের ‘আল হুতাইব’ নামক স্থানে কখনো বৃষ্টি হয় না এমন দাবিটি বিগত কয়েক বছর ধরে সামাজিক মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে অনির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে প্রচার হয়ে আসছে। তবে, রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আল হুতাইব নামক স্থানটি মোটেও বৃষ্টিপাতহীন শুষ্ক এলাকা নয় বরং এপ্রিল এবং আগস্ট মাসে সেখানে গড়ে ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়। 

পূর্বে একই বিষয়টি ভারতে ভুলভাবে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে India Today এবং Factly.

সুতরাং, ইয়েমনের আল হুতাইব নামক স্থানে কোনোদিন বৃষ্টিপাত না হওয়ার দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র