সম্প্রতি, “মিশরে কুরআন প্রতিযোগিতায় ২৬০ দেশকে পিছনে ফেলে ১ম হয়েছে বাংলাদেশের হাফেজ মুতাসিম বিল্লাহ মুজাহিদ” শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হাফেজ মুহাম্মদ মুতাসিম বিল্লাহ মিশরের আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হননি বরং বাংলাদেশে আয়োজিত বাছাই পরীক্ষায় দেশের হাফেজদের মধ্যে প্রথম হয়ে আগামী ডিসেম্বরে মিশরের উক্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন তিনি।
আলোচিত দাবির সত্যতা যাচাইয়ের শুরুতেই মিশরের আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতার বিষয়ে অনুসন্ধানে গত ১৫ নভেম্বর দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার প্রিন্ট ভার্সনের ১৪ নম্বর পাতায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একটি বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দীনী দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক মো. আনিছুর রহমান সরকার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিটি থেকে জানা যায়, চলতি বছরের ২২ থেকে ২৮ ডিসেম্বর মিশরের রাজধানী কায়রোতে ৩০তম আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে আগ্রহী বাংলাদেশী হাফেজগণের আবেদনপত্র আহ্বান করা হয় উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে। ২০ নভেম্বর আগ্রহী প্রতিযোগীদের নির্বাচনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা জানা যায় বিজ্ঞপ্তি থেকে।
অর্থাৎ, বাংলাদেশি হাফেজ মুহাম্মদ মুতাসিম বিল্লাহ মিশরের হিফজুল কুরআন নামের যে প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে তা আগামী ২২-২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।
পরবর্তীতে, দাবিটির সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে গত ২০ নভেম্বর প্রকাশিত ফেসবুকের একাধিক পোস্ট (১, ২, ৩) থেকে জানা যায়, নেত্রকোনা জামালুল কোরআন মাদরাসার ছাত্র হাফেজ মুতাসিম বিল্লাহ মুজাহিদ মিশরে আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত হয়েছে।
মাসুম বিল্লাহ নামে এক ব্যক্তি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, আমার ভাই মুতাসিম বিল্লাহ মুজাহিদ, “৩০ তম আন্তর্জাতিক মিশর কুরআন প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ!! সবাই দোয়া করবেন আমার ভাই যেন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বিশ্ব জয় করে প্রথম স্থান অর্জন করে বাংলাদেশের সুনাম বয়ে আনতে পারে।”
অর্থাৎ, মিশরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কোরআন প্রতিযোগিতা নয়, উক্ত কোরআন প্রতিযোগিতার জন্য দেশে আয়োজিত বাছাই পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন হাফেজ মুহাম্মদ মুতাসিম বিল্লাহ।
কিন্তু ২১ নভেম্বর কতিপয় ফেসবুক পোস্টে আলোচিত দাবিটি অর্থাৎ মিশরে কোরআন প্রতিযোগিতায় ২৬০ দেশকে পিছনে ফেলে ১ম হয়েছে বাংলাদেশের হাফেজ মুতাসিম বিল্লাহ মুজাহিদ শীর্ষক তথ্যটি প্রচার হতে দেখে রিউমর স্ক্যানার।
আবার, একইদিন আরো কিছু পোস্টে কতিপয় শব্দ বদলে দিয়ে প্রচার করা হয়, “মিশরে কুরআন প্রতিযোগিতায় ২৬০ জনকে পিছনে ফেলে ১ম হয়েছে বাংলাদেশের হাফেজ মুতাসিম বিল্লাহ মুজাহিদ।”
অর্থাৎ, একদিনের ব্যবধানে একটি তথ্য বদলে গিয়ে দুইটি ভিন্ন দাবিতে ছড়িয়েছে।
পরবর্তীতে, বিষয়টির অধিকতর সত্যতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দীনী দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক মো. আনিছুর রহমান সরকারের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি জানান, হাফেজ মুহাম্মদ মুতাসিম বিল্লাহ কোরআন প্রতিযোগিতার জন্য দেশে আয়োজিত বাছাই পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন।
তাছাড়া, বিষয়টি হাফেজ মুহাম্মদ মুতাসিম বিল্লাহর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেত্রকোনা জামালুল কোরআন মাদ্রাসা’র সিনিয়র শিক্ষক মো: জুবায়েরুল হাসানও রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।
জনাব জুবায়েরুল রিউমর স্ক্যানারকে জানান, উক্ত প্রতিযোগিতায় হাফেজ মুহতাসিম বিল্লাহ্ মুজাহিদ হিফজুল কুরআন ৩০ পারা বিভাগে অংশগ্রহণ করবেন।
মূলত, আগামী ২২-২৮ ডিসেম্বর মিশরে ৩০তম আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশী হাফেজগণের নির্বাচনী পরীক্ষায় হাফেজ মুহাম্মদ মুতাসিম বিল্লাহ প্রথম স্থান অধিকার করে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছেন। উক্ত ঘটনাকেই হাফেজ মুহাম্মদ মুতাসিম বিল্লাহ মিশরের আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা সঠিক নয়।
উল্লেখ্য, পূর্বে হাফেজ তাকরিমের নামে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়লে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সুতরাং, মিশরের আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতার বাছাই পরীক্ষায় দেশের হাফেজদের মধ্যে হাফেজ মুহাম্মদ মুতাসিম বিল্লাহ প্রথম হওয়ার ঘটনাকে তিনি মিশরের কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়ার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Jugantor: ই-পেপার
- Masum Billah: Facebook Post
- Statement from Jobayedul Hasan, Senior Teacher, Netrokona Jamalul Quran
- Statement from Anisur Rahman, Islamic Foundation
- Rumor Scanner’s own investigation