ভারতের হারে বাংলাদেশিদের উল্লাসের কারণে আইপিএল থেকে তিন বাংলাদেশি ক্রিকেটারকে বাদ দেয়া হয়নি 

২০২৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারতের হারের পর বাংলাদেশিদের উল্লাসের কারণে আসন্ন আইপিএল সিজন থেকে তিন বাংলাদেশি ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়া হয়েছে শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ভারতের হারে

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

এছাড়া, একই দাবিতে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারতের হারের পর বাংলাদেশিদের উল্লাসের কারণে আইপিএল থেকে তিন বাংলাদেশি ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়া হয়নি বরং আইপিএল রিটেইনেশনে বিভিন্ন দেশের ক্রিকেটারদের মতো বাংলাদেশি তিন ক্রিকেটারকেও ছেড়ে দিয়েছে তাদের ফ্রাঞ্চাইজি। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘Hindustan Times’ এর ওয়েবসাইটে গত ২৬ নভেম্বর ‘IPL 2024 Player Retention: বাদ পড়লেন শাকিব-লিটন, কাদের ধরে রাখল KKR, ছেড়ে দিল কোন কোন তারকাকে’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot from ‘Hindustan Times’ website 

উক্ত প্রতিবেদনটিতে আসন্ন আইপিএল এ ‘কলকাতা নাইট রাইডার্স’ এবং ‘দিল্লি ক্যাপিটালস’ এর স্কোয়াড থেকে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান, লিটন দাস এবং মুস্তাফিজুর রহমানকে বাদ দেওয়া হয়েছে এবং আইপিএল ২০২৪-এর নিলামের আগে বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার কোনো দলে নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 

বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের আইপিএল এর স্কোয়াড থেকে বাদ দেওয়ার কারণ অনুসন্ধানে ২৭ নভেম্বর দেশীয় সংবাদমাধ্যম দৈনিক ভোরের কাগজের ওয়েবসাইটে ‘আইপিএল থেকে বাদ পড়ল বাংলাদেশি ক্রিকেটারা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot from ‘Bhorer Kagoj’ website  

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, আইপিএলে বাংলাদেশের হয়ে নিয়মিত মুখ ছিলেন সাকিব আল হাসান। তবে, গত আসরে দলে থেকেও তিনি খেলতে পারেননি। এছাড়া, লিটন দাস এক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলেও হাস্যকর ভুলে নিজের জায়গা হারিয়ে ফেলেছিলেন। আর দিল্লি ক্যাপিটালস এর হয়ে মুস্তাফিজুর রহমানের অবস্থাও ছিল বেশ নাজুক। 

সঙ্গত কারণে এবং ২০২৩ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে এই তিন খেলোয়ারের বাজে পারফর্মেন্সের কারণ হিসেবে আইপিএল এর এবারের প্লেয়ার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন তারা। 

পরবর্তীতে গত ২৬ নভেম্বর আইপিএলের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ‘IPL 2024 Player retentions’ এর একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ আইপিএলের ২০২৪ মৌসুমের খেলোয়াড় রিটেনশনের সময়সীমার শেষ দিনে ১০টি ফ্র্যাঞ্চাইজি একত্রে ১৭৩ জন খেলোয়াড়কে ধরে রেখেছে এবং ৯০ জন খেলোয়াড়কে ছেড়ে দিয়েছে। কলকাতা নাইট রাইডার্স সাকিব ও লিটনসহ মোট ১২ জন, দিল্লি ক্যাপিটালস মোস্তাফিজুর রহমানসহ ১১ জন, মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ১১ জন, পাঞ্জাব কিংস ৭ জন, রাজস্থান রয়েলস ৯ জন, রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর ১১ জন, সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ ৬ জন, লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টস ৮ জন, গুজরাট টাইটান্স ৮ জন এবং চেন্নাই সুপার কিংস ৮ জন খেলোয়াড় রিলিজড করেছে বা ছেড়ে দিয়েছে।  

আইপিএল রিটেনশনে মূলত দলগুলো নিলামের আগে তাদের কোন খেলোয়াড়দের ধরে রাখতে চায় এবং কোন খেলোয়াড়দের ছেড়ে দিতে চায় বা অন্য দলের কাছে বিক্রি করতে চায় তা চূড়ান্ত করে এবং তালিকা প্রকাশ করে। ছেড়ে দেওয়া খেলোয়াড়রা আইপিএলে খেলতে আগ্রহী হলে তাদের নাম পরবর্তীতে নিলামে আবার উঠবে এবং সেখান থেকে দলগুলো চাইলে তাদের দলে ভেড়াতে পারবে।

সাধারণত একটি আইপিএল দল মেগা এবং মিনি নিলামের আগে যেকোনো সংখ্যক খেলোয়াড়কে ছেড়ে দিতে পারে। দলগুলো তাদের পরিকল্পনা বা গেম প্ল্যান, অর্থনৈতিক হিসাব না পার্স, খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স এবং তাদের প্রাইস ট্যাগ ইত্যাদিসহ নানা কারণ বিবেচনা করে খেলোয়াড় রেখে দেয় কিংবা ছেড়ে দেয়। নিলামের আগে তারা যত মূল্যের খেলোয়াড় ছেড়ে দেয় তা তাদের পার্সে যুক্ত হয় এবং সেই অর্থ তারা নিলামে নতুন খেলোয়াড় কিনতে ব্যবহার করতে পারে।

আগামী ১৯ ডিসেম্বর দুবাইয়ে আইপিএলের মিনি নিলাম অনুষ্ঠিত হবে এবং এই নিলামকে ঘিরে দলগুলো ইতিমধ্যে প্লেয়াররা রিটেনশনের মাধ্যমে কিছু খেলোয়াড় ছেড়ে দিয়েছে, কিছু ধরে রেখেছে। সাকিব আল হাসান, লিটন কুমার দাস কিংবা মোস্তাফিজুর রহমানকে ঠিক একই কারণে তাদের ফ্রাঞ্চাইজি ছেড়ে দিয়েছে।

এছাড়া, সাকিব-লিটন-মোস্তাফিজের বাদ পড়ার বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আলোচিত দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

ইতোপূর্বেও একাধিকবার সাকিবমোস্তাফিজকে তাদের পূর্বের ফ্রাঞ্চাইজি নিলামের আগে ছেড়ে দিয়েছে বা রিলিজড করেছিল।

মূলত, আইপিএল ২০২৪ মৌসুম এর মিনি নিলামকে সামনে রেখে দলগুলো তাদের খেলোয়াড় রিটেইন এবং রিলিজ করেছে। দেশি-বিদেশি মিলে প্রতিটি দল তাদের বেশকিছু সংখ্যক খেলোয়াড় ছেড়ে দিয়েছে। একইভাবে সাকিব আল হাসান, লিটন দাস এবং মোস্তাফিজির রহমানকেও দলগুলো ছেড়ে দিয়েছে। তাদের ছেড়ে দেওয়ার এই বিষয়টিকে ভারতের হারে উল্লাসের কারণে আইপিএল থেকে তিন বাংলাদেশি ক্রিকেটারকে বাদ দেয়ার সাথে মিলিয়ে প্রচার করা হয়েছে, যা সঠিক নয়।

প্রসঙ্গত, ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (বিসিসিআই) আইপিএলে পাকিস্তানের সাথে সাথে বাংলাদেশি প্লেয়ারদের ও নিষিদ্ধ করেছে শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছিল। উক্ত বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে  ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারতের হারের পর বাংলাদেশিদের উল্লাসের কারণে আইপিএল থেকে তিন বাংলাদেশি ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়া হয়েছে শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img