অপারেশনের পূর্বে হাসপাতালের বেডে শুয়ে ডাক্তারদের নিয়ে একটি মেয়ের গান গাওয়ার ভিডিও ২০১৯ সাল থেকে ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে। সম্প্রতি, একই ভিডিও “ডাক্তারকে নিয়ে গান গেয়ে হাসতে হাসতে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে মেয়েটি” শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে টিকটিকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হাসপাতালের বেডে শুয়ে ডাক্তারদের নিয়ে গান গাওয়া মেয়েটি মারা যাওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং রাপূর্ণা ভট্টাচার্য নামে ভারতের এই মেয়েটি ২০১৯ সালে অপারেশনের সপ্তাহখানেক পরই সুস্থ হয়ে ওঠেন। বর্তমানে তিনি দেশটির পুনেতে পড়াশোনা করছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিম এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কিওয়ার্ড সার্চ করে ২০১৯ সালে ফেসবুকে একাধিক অ্যাকাউন্ট এবং পেজ থেকে প্রচারিত একই ভিডিও খুঁজে পেয়েছে। পোস্টগুলো দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
এর মধ্যে ১৩ নভেম্বর প্রকাশ হওয়া একটি ভিডিওতেই প্রায় ১৭ মিলিয়ন ভিউ হয়েছে। তবে সেসময়ের ভিডিওগুলোতে মেয়েটির মৃত্যুর দাবি ছিল না।

Screenshot : Facebook Post
পরবর্তীতে অনুসন্ধানে আমরা ২০২১ সালে Sukanti Roy নামে একটি অ্যাকাউন্টে একই ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাই। উক্ত পোস্টের কমেন্ট সেকশনে ‘Rapurna Bhattacharya’ নামক এক নারী মন্তব্য করেন, ভিডিওতে থাকা মেয়েটি হচ্ছেন তিনি।

Screenshot : Facebook Post
উক্ত কমেন্টের সূত্র ধরে আমরা পরবর্তীতে রাপূর্ণা ভট্টাচার্যের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করি। তার অ্যাকাউন্ট থেকে জানা যাচ্ছে, তিনি ভারতের কলকাতায় বসবাস করেন এবং বর্তমানে পুনের সিমবায়োসিস সেন্টার ফর মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশনে পড়াশোনা করছেন।
রাপূর্ণা ভট্টাচার্যকে নিয়মিতই তার অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন পোস্ট করতে দেখা যাচ্ছে। গতকালও (২৬ নভেম্বর) তিনি একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
যেহেতু ভিডিওটি ২০১৯ সাল থেকেই ফেসবুকে বিদ্যমান, সেই সূত্রে মেয়েটি আসলেই রাপূর্ণা ভট্টাচার্য কিনা তা নিশ্চিত হতে আমরা ফেসবুক অ্যাকাউন্টে থাকা ২০১৮ এবং ২০১৯ সালের ছবিগুলোর (১, ২, ৩) সাথে ভিডিওর মেয়েটির চেহারার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দৃশ্যমান মিল খুঁজে পেয়েছি।

Image Comparison : Rumor Scanner
অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওতে থাকা মেয়েটিই রাপূর্ণা ভট্টাচার্য এবং তার ফেসবুক এক্টিভিটি জানাচ্ছে, তিনি দিব্যি সুস্থ আছেন।
এ বিষয়ে আরও জানতে রাপূর্ণা ভট্টাচার্যের মা বিতস্তা ঘোষালের সাথে কথা বলেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। বিতস্তা ঘোষাল বলছিলেন, ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে তার মেয়ে রাপূর্ণা বাড়িতে পড়ে গিয়ে আঘাত পাওয়ার পর একটি অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে। সে বছরের ০৪ নভেম্বর অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশের আগে সে এই গানটি গায়। ভাইরাল ভিডিওটি বিতস্তাই ধারণ করেছিলেন। সপ্তাহখানেক পরই রাপূর্ণা সুস্থ হয়ে ওঠেন।
বিতস্তা রিউমর স্ক্যানার টিমের কাছে অনুরোধ করেন “আপনারা অনুগ্রহ করে বিষয়টি দেখবেন। নিজের সন্তানের মৃত্যুর ভুল খবর প্রচারিত হলে মন খারাপ হয়ে যায়। নিশ্চয়ই এটা বুঝবেন।”
মূলত, ২০১৯ সালে রাপূর্ণা ভট্টাচার্য নামে ভারতের এক কিশোরী মেয়ের একটি অপারেশনের পূর্বে হাসপাতালের বেডে শুয়ে ডাক্তারদের নিয়ে তার গলায় গাওয়া একটি গান গাওয়ার পর সেটি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। সম্প্রতি, একই ভিডিও প্রচার করে একাধিক পোস্টে দাবি করা হয়, ডাক্তারকে নিয়ে গান গেয়ে হাসতে হাসতে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে মেয়েটি। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে জেনেছে, রাপূর্ণা অপারেশনের পর মারা যাননি। ২০১৯ সালে অপারেশনের সপ্তাহখানেক পরই তিনি সুস্থ হয়ে যান। বর্তমানে তিনি পুনের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গ্র্যাজুয়েশন করছেন।
সুতরাং, অপারেশনের পূর্বে হাসপাতালের বেডে শুয়ে ডাক্তারদের নিয়ে ভারতের একটি মেয়ের গান গাওয়ার ভিডিও ব্যবহার করে তিনি মারা গেছেন শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Rapurna Bhattacharya: Facebook Account
- Statement of Rapurna’s Mother
- Rumor Scanner’s own investigation