সেনাবাহিনী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো ঘোষণা দেয়নি 

গত ২৩ নভেম্বর ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে Sabai Sikhi নামের একটি চ্যানেল থেকে ‘হাসিনাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিলো সেনাবাহিনী, ভয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীর্ষক থাম্বনেইল ও ‘হাসিনাকে গ্রেফতারের নির্দেশ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন জানালেন সেনাপ্রধান’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

জাতীয় নির্বাচন

উক্ত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি ১ লক্ষ ৯৭ হাজার বার দেখা হয়েছে। এছাড়া ভিডিওটিতে প্রায় ২ হাজার তিনশত লাইক এবং ১১২টি মন্তব্য করা হয়েছে।

পরবর্তীতে একই ভিডিও বেশ কিছু ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রচার করা হয়। পোস্টগুলো দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত ভিডিওটি লিংক শেয়ার করে ফেসবুকে প্রচারিত একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সেনাবাহিনী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের নির্দেশ কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন গ্রহণের ঘোষণা দেয়নি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার পুরোনো ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদন, যেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যদের পুরোনো কিছু কার্যক্রমের দৃশ্য দেখানো হয়।

ভিডিওটি’র সংবাদপাঠ অংশে বলা হয়, “এবার সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এদিকে কমিশনের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই নির্দেশনা প্রদান করা হয়। নির্বাচন কমিশনের এই প্রধান কর্মকর্তা বলেন, প্রয়োজনে পুনরায় তফসিল গ্রহণ করে সকল রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের মাধ্যমে এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”

উক্ত বিষয়গুলো নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, ভিডিওটি’র শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে উল্লেখিত তথ্যের সাথে বিস্তারিত সংবাদপাঠ অংশের অমিল রয়েছে। শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতারের নির্দেশ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন গ্রহণের বিষয়টি উল্লেখ করা হলেও সেবিষয়ে বিস্তারিত সংবাদপাঠ অংশে কিছুই বলা হয়নি। এমনকি সেখানে সেনাপ্রধান কিংবা সেনাবাহিনীর অন্যকোনো সদস্যের এসংক্রান্ত কোনো ঘোষণার ভিডিও ক্লিপও দেখানো হয়নি।

তবে চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম আর টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে ‘বেসামরিক প্রশাসনের সঙ্গে আন্তরিকভাবে কাজ করতে চায় সেনাবাহিনী’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: RTV

এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র সেনাপ্রধানের বক্তব্যের অংশের মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এর সাথে আলোচিত দাবির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

এছাড়াও, ২০১১ সালে বাংলাদেশে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে। পরবর্তীতে এই ব্যবস্থা আর পুর্ণবহাল করা হয়নি। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন গ্রহণের বিষয়টি সেনাবাহিনীর আওতার বাইরে।

পাশাপাশি, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের নির্দেশ কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন গ্রহণের দাবির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সঠিক নয়।

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ নভেম্বর Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘হাসিনাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিলো সেনাবাহিনী, ভয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীর্ষক থাম্বনেইল ও ‘হাসিনাকে গ্রেফতারের নির্দেশ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন জানালেন সেনাপ্রধান’ শীর্ষক শিরোনামে ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওটি বেশ কয়েকটি ইউটিউব চ্যানেলেও প্রচার করা হয়। ভিডিওটির দাবির বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি পুরোনো ভিডিও ক্লিপ ও ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে বিষয়টির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষনে এই ঘোষণা দেন তিনি।

উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের নির্দেশ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন গ্রহণের ঘোষণা দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img