আ’লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে এমপি হেনস্তা দাবিতে ভুয়া ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি ‘আ’লীগ বিএনপির সংঘর্ষে এমপি শেষ‘ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে
আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত নিউজ বুলেটিনের বিস্তারিত অংশে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে এমপি হেনস্তা সম্পর্কিত কোনো তথ্য পাঠ করা হয়নি এবং এ সংক্রান্ত কোনো দৃশ্যও দেখানো হয়নি বরং নিউজ বুলেটিনের বিস্তারিত অংশে ভারতের এক এমপি গ্রেফতার হওয়া এবং বাংলাদেশের একটি মসজিদে ইমামের আলোচনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষের খবর পাঠ করা হলেও অধিক ভিউ পাবার আশায় উক্ত ক্যাপশন এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

গত ২৮ মার্চ News Plus নামের ফেসবুক পেজ থেকে আ’লীগ বিএনপির সংঘর্ষে এমপি শেষ!’ শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়।

অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এটি কয়েকটি প্রতিবেদন নিয়ে তৈরি একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিও। ৮ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে ভারতে বিজেপির এমপি গ্রেফতারের বিষয়ে বলা হয়।  এবিষয়ে সংবাদ পাঠ ৪ মিনিট ২৫ সেকেন্ড থেকে শুরু হয়ে ৫ মিনিট ২৫ সেকেন্ড পর্যন্ত চলে। সেখানে বলা হয়, ‘ভারতের কর্নাটকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে বিজেপি বিধায়ক মাদল বিরূপাক্ষকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। চুক্তি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ঘুষ নিয়েছিলেন সরকারি কর্মকর্তার ছেলে। এবার সেই ঘটনায় তার বাবাকে সোমবার গ্রেফতার করা হলো। খবর ইন্ডিয়া টুডের। সম্প্রতি মাদলের ছেলে প্রশান্ত কুমার ৪০ লাখ রুপি ঘুস নেওয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন। ওই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন মাদল। ঘটনার ২০ দিনের বেশি সময় পর তাকে গ্রেফতার করা হলো।’

উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে  দেশে বিদেশে নামের একটি অনলাইন পোর্টালে ‘ভারতে বিজেপির এমপি গ্রেপ্তার’ শীর্ষক শিরোনামে গত ২৮ মার্চ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন(আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: deshebideshe.com

প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে’র বরাতে জানানো হয়, ‘ভারতের কর্নাটকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে বিজেপি বিধায়ক মাদল বিরূপাক্ষকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। চুক্তি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ঘুষ নিয়েছিলেন সরকারি কর্মকর্তার ছেলে। এবার সেই ঘটনায় তার বাবাকে সোমবার গ্রেফতার করা হলো। সম্প্রতি মাদলের ছেলে প্রশান্ত কুমার ৪০ লাখ রুপি ঘুষ নেওয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন। ওই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন মাদল। ঘটনার ২০ দিনের বেশি সময় পর তাকে গ্রেফতার করা হলো।’

পরবর্তীতে India Today তে গত ৬ মার্চ ‘Karnataka BJP MLA, booked for corruption, absconds as party calls for his arrest’ শিরোনামে প্রকাশিত মূল প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: India Today

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, অনলাইন পোর্টাল দেশে বিদেশের প্রতিবেদনটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হুবহু আলোচিত নিউজ বুলেটিন ভিডিওতে পাঠ করা হয়েছে। 

অন্যদিকে ভিডিওটির বিস্তারিত অংশে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষের বিষয়ে কিছু বলা না হলেও সেখানে বুড়িচংয়ে মসজিদে সংঘর্ষের বিষয়ে বলা হয়। এবিষয়ে সংবাদ পাঠ ৫ মিনিট ২৭ সেকেন্ড থেকে শুরু হয়ে ৭ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড পর্যন্ত চলে। সেখানে বলা হয়, বুড়িচংয়ে মসজিদের ইমামের আলোচনাকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। বুড়িচংয়ে ষোলনলে বায়তুল আমান জামে মসজিদে তারাবির নামাজের সময় ইমামের আলোচনাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নয়জন আহত হয়েছেন। সোমবার (২৭ মার্চ) ইউনিয়নের খাড়াতাইয়া পূর্বপাড়ায় এ সংঘর্ষ হয়।

উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূল ধারার গণমাধ্যম নয়াদিগন্ত’র অনলাইন সংস্করণে গত ২৭ মার্চ ‘বুড়িচংয়ে মসজিদের ইমামের আলোচনাকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন(আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Naya Diganta

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, উক্ত প্রতিবেদনটিও শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হুবহু আলোচিত নিউজ বুলেটিন ভিডিওতে পাঠ করা হয়েছে। প্রচারিত ভিডিওতে ব্যবহৃত এই সংবাদের অংশের ছবিও উক্ত প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে। 

পাশাপাশি, দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সম্প্রতি আ’লীগ বিএনপির সংঘর্ষে এমপি হেনস্তা সম্পর্কিত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিও’র বিস্তারিত প্রতিবেদন এবং এবিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশে আ’লীগ বিএনপির সংঘর্ষে কোনো এমপি হেনস্তা হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। 

মূলত, সম্প্রতি ভারতে দূর্নীতির অভিযোগে বিজেপির এক এমপি গ্রেফতার হয়েছেন এবং বাংলাদেশে বুড়িচংয়ে মসজিদের ইমামের আলোচনাকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তবে উক্ত ঘটনা দুইটিকে পাশাপাশি প্রচার করতে গিয়ে একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিওতে ‘আ’লীগ বিএনপির সংঘর্ষে এমপি শেষ!’ শীর্ষক অপ্রাসঙ্গিক শিরোনাম এবং চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করা হয়।

উল্লেখ্য, ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে চটকদার শিরোনাম ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এসব ঘটনা নিয়ে পূর্বেও ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, ভারতের এমপি গ্রেফতার হওয়া এবং বাংলাদেশের একটি মসজিদে সংঘর্ষের দুটো আলাদা ঘটনাকে পাশাপাশি রেখে ‘আ’লীগ বিএনপির সংঘর্ষে এমপি শেষ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img