বঙ্গবাজারে আগুনে অক্ষত দাবিকৃত গ্রন্থটি কোরআন নয়, বুখারী শরিফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ

সম্প্রতি, “বঙ্গবাজারের সবকিছু পুড়ে ছাই হলেও ২৪ ঘণ্টায়ও অক্ষত পবিত্র কোরআন শরীফ” শীর্ষক শিরোনাম সহ বিভিন্ন শিরোনামে “বঙ্গবাজারে আগুনে কোরআন পুড়ে যায়নি” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও এবং ভিডিওর স্থিরচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।

Image Collage by Rumor Scanner

ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলো দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

গণমাধ্যমে

আলোচিত দাবিতে গণমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিও প্রতিবেদন দেখুন; বাংলাভিশন, বিজয় টিভি, বায়ান্ন টিভি, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস, সংবাদ প্রকাশ এবং সোনালী নিউজ

Image Collage by Rumor Scanner

উল্লিখিত দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুকে পেজে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

Image Collage by Rumor Scanner

একই দাবিতে গণমাধ্যমের ওয়েবসাইটে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন; বায়ান্ন টিভি, ডেইলি মিরর অব বাংলাদেশ(পোর্টাল)।

যদিও পরবর্তিতে “বায়ান্ন টিভি” সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের পোস্টকার্ড হালনাগাদ করে তবে সে-সময়েও ক্যাপশন অপরিবর্তিত ছিল।

Image Collage by Rumor Scanner 

পাশাপাশি, দৈনিক কালবেলা (ভিডিও) তাদের ভিডিও প্রতিবেদনটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে পোস্টের ক্যাপশনে “দাবি” শব্দ উল্লেখ করলেও ভিডিওর থাম্বনেইলের ক্যাপশনে সরাসরি সিদ্ধান্তমূলকভাবেই উপস্থাপন করেছে।

Screenshot: Facebook

এছাড়াও, মূলধারার গণমাধ্যম সময় টেলিভিশনআরটিভি এর ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদনের শিরোনামে দাবি করা হয়েছে গ্রন্থটি বুখারী শরীফ। 

Image Collage by Rumor Scanner 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বঙ্গবাজারে আগুনের ছাই থেকে উদ্ধার দাবিতে প্রচারিত গ্রন্থটি কোরআন শরীফ নয় বরং এটি হাদিস গ্রন্থ সহীহ বুখারী শরীফ এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ “উমদাতুল কারী শারহু সহীহুল বুখারী” এর ১০ নং ভলিউম। গ্রন্থটির রচয়িতা আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী।

অনুসন্ধান

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলোর মতামত পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় অধিকাংশ ব্যবহারকারী দাবিটিকে সত্য ভেবে মন্তব্য করলেও কয়েকজন ব্যবহারকারী তাদের মন্তব্যে গ্রন্থটিকে “উমদাতুল কারী শরহে সহীহিল বোখারী” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

Screenshot: Facebook/Comment

পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে সৌদি আরবের মার্কেটিং কম্পানির বুকস্টোর ওয়েবসাইট “jarir.com”-এ “Umdat Al-Qari Explanation of Sahih Al-Bukhari 20 vols” শিরোনামে আলোচিত গ্রন্থটির ন্যায় হবহু একই রকম কভার পেজ এর ছবি পাওয়া যায়।

Image Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, “উমদাতুল কারী শারহু সহীহুল বুখারী ব্যাখ্যাগ্রন্থ (অনূদিত)” ( ২০ ভলিউম একসাথে) গ্রন্থটি মূলত বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ “বুখারী শরিফ” এর ব্যখ্যাগ্রন্থ। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, দেশীয় সংবাদমাধ্যম “সময় টেলিভিশন” আলোচিত গ্রন্থটিকে সরাসরি “বুখারী শরীফ” হিসেবে উল্লেখ করেছে, কিন্তু আলোচিত গ্রন্থটি “বুখারী শরীফ” এর ব্যখাগ্রন্থ। 

Screenshot: jarir.com

এছাড়াও, গুগল লেন্স ব্যবহার করেও গ্রন্থটির শিরোনাম ইংরেজি ও আরবি ভাষায় দেখা যায় “উমাদাত আল কারী” বা “উমাদাতুল কারী” (সংযুক্ত উচ্চারণে)।

Screenshot: Google Lens

এখানে গ্রন্থটির রচয়িতা হিসেবে “Badr -al-Din-ai-Ayni” নামটি পাওয়া যায়। একই নাম পাওয়া যায় (সংক্ষিপ্ত) দেশীয় অনলাইন বুকশপ রকমারিতে-ও।

অনুসন্ধানে উন্মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ায় আল্লাম আইনী এর পূর্ণনাম ও তার রচনা (আলোচিত গ্রন্থটির) সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়।

Collage by Rumorscaner

যদিও দাবির ভিডিওগুলোর মধ্যে অনেকগুলোতে গ্রন্থটিকে উল্টো অবস্থায় দেখা যায়। 

Collage by Rumorscanner

মূলত, গত ৪ এপ্রিল (মঙ্গলবার) রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবাজার এর কাপড়ের মার্কেটে ভয়াবহ আগুনে কয়েক হাজার দোকান পুড়ে যায়। পরবর্তীতে ০৫ এপ্রিল ধ্বংসস্তূপে আগুনের ছাই থেকে অক্ষত অবস্থায় একটি কোরআন শরীফ উদ্ধারের দাবি করেন এক ব্যক্তি। পরবর্তীতে বিষয়টি যাচাই-বাছাই ব্যতীত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পাশপাশি কয়েকটি গণমাধ্যমে-ও বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, বঙ্গবাজারে আগুনের ছাই থেকে উদ্ধারের দাবিকৃত গ্রন্থটি কোরআন শরীক নয়, বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ।

উল্লেখ্য, দাবির আলোচিত গ্রন্থটি “উমদাতুল কারী শারহু সহীহুল বুখারী” এর ১০ নম্বর ভলিউম। ভিডিওতে গ্রন্থটির গায়ে আরবি ভাষায় ১০ সংখ্যা উল্লেখ রয়েছে।

Screenshot: Facebook/SonaliNews

প্রসঙ্গত, ইতোপূর্বে ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বেশকিছু ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে “বঙ্গবাজারে ধবংসস্তূপের মধ্য থেকে অক্ষত কোরআন উদ্ধার” শীর্ষক দাবি প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img