হলুদ রঙের বোয়াল মাছ দাবিতে ওয়েলস ক্যাটফিশের ছবি প্রচার

সম্প্রতি “হলুদ রঙের বোয়াল মাছ” দাবিতে একটি মাছের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 
পোস্টগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে,এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত মাছের ছবিটি বোয়াল মাছের নয় বরং ওয়েলস ক্যাটফিশের। ইউরোপের বিভিন্ন নদী এবং লেকে বসবাসকারী এই মাছ দেখতে সবুজাভ ধূসর হলেও লিউসিজম নামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে এদের দেহ হলুদ বর্ণ ধারণ করে। 

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, বিজ্ঞান বিষয়ক আন্তর্জাতিক নিউজ ওয়েবসাইট ‘Live Science’ এ ২০২১ সালের ২০ অক্টোবর ‘‘Extremely rare, bright-yellow catfish caught in the Netherlands’’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে হুবহু একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্টিন গ্ল্যাটজ (Martin Glatz) নামের একজন মৎস্য শিকারি তার যমজ ভাই অলিভারের (Oliver) সাথে নেদারল্যান্ডের একটি হ্রদে উক্ত মাছটি ধরেছিলেন।

তাছাড়া উক্ত প্রতিবেদনে মাছটি সম্পর্কে বলা হয়, এটির নাম ওয়েলস ক্যাটফিশ (বৈজ্ঞানিক নামঃ Silurus glanis), যা ইউরোপের বিভিন্ন লেক ও নদীতে পাওয়া যায়।

Screenshot from Live Science.

ওয়েলস ক্যাটফিশ নিয়ে National Oceanic and Atmospheric Administration (NOAA) তে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ উদ্ধৃত করে লাইভ সায়েন্সের উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশাল আকৃতির ওয়েলস ক্যাটফিশ গুলো লম্বায় সর্বোচ্চ ৯ ফুট (২.৭ মিটার) এবং ওজনে প্রায় ১৩০ কেজির মতো হয়ে থাকে। এদের গায়ের রং বেশিরভাগ গাঢ় সবুজাভ-কালো রঙের হয়ে থাকে যার মধ্যে কিছু হলুদ বিন্দু লক্ষ্য করা যায়।

Screenshot Source: NOAA

লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদনে ওয়েলস ক্যাটফিশের গায়ের রং হলুদ হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে লিউসিজম (Leucism) নামের নামের একটি বিরল জেনেটিক রোগকে দায়ী করা হয়। লিউসিজম এমন একটি অবস্থা যখন কোনো প্রাণীর ত্বক, চুল, পালক অথবা আঁশের মধ্য কোনো নির্দিষ্ট রঙ্গকের (পিগমেন্ট) পরিমাণ কমে যায়। তবে এই রোগের কারণে চোখের স্বাভাবিক রঙের উপর কোনো প্রভাব পড়েনা।

উল্লেখ্য যে, ওয়েলস ক্যাটফিশ ছাড়াও অন্যান্য মাছ, সরীসৃপ, পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে লিউসিজম দেখা দিতে পারে।

ওয়েলস ক্যাটফিশ এবং বোয়ালমাছের পার্থক্য

জীবের শ্রেণীবিন্যাস, বাসস্থান, আকার, আকৃতির দিক থেকে বোয়াল মাছ এবং ওয়েলস ক্যাটফিশের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। 

মৎস বিষয়ক বাংলাদেশী ওয়েবসাইট BdFISH থেকে জানা যায়, আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে যে মাছটি বোয়াল হিসেবে পরিচিত সেটির বৈজ্ঞানিক নাম Wallago attu.

Screenshot from BdFISH
বোয়াল মাছ (Image from Jugantor)

গায়ের রঙের দিক থেকে এই মাছটির উপরের অংশ ধূসর-হলদেটে এবং নিচের অংশ শ্বেতবর্ণের হয়ে থাকে। তবে এই মাছটির পাখনা ধূসর বর্ণের। ১৯৮৯ সালের তথ্য অনুযায়ী এই মাছের সর্বোচ্চ উচ্চতা ১.৮৬ মিটার। বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিন এশিয়ার অন্যান্য দেশেও এ ধরণেরবোয়াল মাছ পাওয়া যায়। 

অপরদিকে, ওয়েলস ক্যাটফিশ ক্যাটফিশ ইউরোপের কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চল, পশ্চিম এশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার নদী ও জলাশয়ে পাওয়া যায়।

Screenshot from invadingspecies

জীবের শ্রেণীবিন্যাদের দিক থেকে বোয়াল এবং ওয়েলস ক্যাটফিশ Siluridae পরিবারের অন্তর্ভূক্ত হলেও এরা ভিন্ন গণের (Genus) প্রাণী। বোয়ালমাছ মূলত Wallago গণের প্রাণী আর ওয়েলস ক্যাটফিশ Silurus গণের অন্তর্ভূক্ত। তাছাড়া আকারের দিকে থেকেও এরা বোয়ালের (হেলিকপ্টার ক্যাটফিশ) থেকে কিছুটা বড়। NOAA এর আর্টিকেল থেকে জানা যায় এই প্রজাতিটির ২.৭৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হওয়ার রেকর্ড রয়েছে।

মূলত, মার্টিন গ্ল্যাটজ নামের একজন মৎস্য শিকারি তার যমজ ভাইকে নিয়ে নেদারল্যান্ডের একটি হ্রদ থেকে ওয়েলস ক্যাটফিশ নামের একটি বিশাল আকৃতির মাছ ধরেছিলেন। উক্ত ক্যাটফিশের গায়ের রং সাধারণত গাঢ় সবুজাভ-কালো রঙের হয়ে থাক। তবে লিউসিজম নামের নামের একটি বিরল জেনেটিক রোগের কারণে এদের দেহ হলুদ বর্ণ ধারণ করে। মার্টিন গ্ল্যাটজের শিকার করা উক্ত মাছের ছবিকেই সম্প্রতি ফেসবুকে ‘হলুদ রঙের বোয়াল মাছ’ দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

সুতরাং, ওয়েলস ক্যাটফিশের ছবিকে হলুদ রঙের বোয়াল মাছ দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসুত্র

আরও পড়ুন

spot_img