সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের বরাতে “যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন করাতে ব্যর্থ হলে দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে ভারতের মতো সাম্প্রদায়িক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে” শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়,নিউইয়র্ক টাইমসে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন করাতে ব্যর্থ হলে দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়া ও বাংলাদেশে ভারতের মতো সাম্প্রদায়িক সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি। প্রকৃতপক্ষে পত্রিকাটির বরাতে ভিত্তিহীনভাবে উক্ত তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ফেসবুকের মনিটরিং টুল ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গত ২৯ আগস্ট Mo Rahman Masum নামের একটি পেজে নিউইয়র্ক টাইমসের বরাতে প্রচারিত ‘Breaking News: যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন করাতে ব্যর্থ হলে দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে ভারতের মতো সাম্প্রদায়িক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে’ শীর্ষক সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

পোস্টটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পোস্টটিতে নিউইয়র্ক টাইমসকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হলেও এই সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়নি।
পরবর্তীতে নিউইয়র্ক টাইমসে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে কি না তা নিয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
এতে দেখা যায়, গণমাধ্যমটিতে বাংলাদেশ নিয়ে গত ১৭ আগস্ট ‘Billion Dollar Heist’ Review: How to Rob a Bank, Digitally’ শীর্ষক শিরোনামে সবশেষ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।
এই প্রতিবেদনের পর গণমাধ্যমটিতে বাংলাদেশ নিয়ে আর কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া এর পূর্বেও গণমাধ্যমটিতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এমন কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া এটি অনুমেয় যে, নিউইয়র্ক টাইমসের মতো একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশ, ভারত ও দক্ষিণ এশিয়াকে জড়িয়ে এমন কোনো প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বাংলাদেশি বা ভারতীয় গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হতো।
যেমন, গত ৩১ আগস্ট দৈনিক মানবজমিনে ‘ড. ইউনূসের জন্য বিশ্বনেতাদের খোলা চিঠিটি নিউইয়র্ক টাইমসে পূর্ণ-পৃষ্ঠায় ছাপা হয়েছে’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
একই বিষয়ে অন্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন ‘ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা স্থগিত করতে প্রধানমন্ত্রীকে শতাধিক নোবেলজয়ীর চিঠি’।
এসব বিশ্লেষণ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, নিউইয়র্ক টাইমসে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতকে জড়িয়ে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি।
মূলত, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের বরাতে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি তথ্য প্রচার করে দাবি করা হয় যে, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন করাতে ব্যর্থ হলে দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে ভারতের মতো সাম্প্রদায়িক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।’ তবে এ নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, নিউইয়র্ক টাইমসে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এমন কোনো প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি। গণমাধ্যমটিতে বাংলাদেশ নিয়ে সবশেষ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে গত ১৭ আগস্ট, যেটি ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার চুরি নিয়ে নির্মিত একটি ডকুমেন্টারির পর্যালোচনা।
উল্লেখ্য, পূর্বেও গণমাধ্যম সূত্রে ভুয়া তথ্য প্রচার নিয়ে এবং একই অ্যাকাউন্ট থেকে ছড়ানো গুজব নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
এমন কিছু প্রতিবেদন পড়ুন-
সুতরাং, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নিউইয়র্ক টাইমসের বরাতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- The New York Times Website
- Mo Rahman Masum Facebook Post
- Rumor Scanner’s Own Analysis
- Manabzamin: ড. ইউনূসের জন্য বিশ্বনেতাদের খোলা চিঠিটি নিউইয়র্ক টাইমসে পূর্ণ-পৃষ্ঠায় ছাপা হয়েছে
- The Business Standard: ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা স্থগিত করতে প্রধানমন্ত্রীকে শতাধিক নোবেলজয়ীর চিঠি