সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের বরাতে ‘জাপান হলো এমন একটি দেশ যেখানে আপনি অতিরিক্ত মোটা হলে ট্যাক্স গুনতে হবে।’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন ভিডিও (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নিউইয়র্ক টাইমসের বরাতে জাপানে অতিরিক্ত মোটা হলে ট্যাক্স দিতে হয় দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে জাপানে এমন কোনো আইন নেই এবং নিউইয়র্ক টাইমসেও এমন কোনো প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি।
অনুসন্ধানের শুরুতেই রিউমর স্ক্যানার টিম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলোর সূত্রে নিউইয়র্ক টাইমসে এমন কোনো প্রতিবেদন আছে কি না তা যাচাই করে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনটিতে যা আছে
এ নিয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চে নিউইয়র্ক টাইমসে ২০০৮ সালের ১৩ জুন ‘Japan, Seeking Trim Waists, Measures Millions‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে এতে জাপানে অতিরিক্ত মোটা হওয়ার জন্য ট্যাক্স প্রদানের বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বরং প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, জাপানে স্থূলতা দূরীকরণের লক্ষ্যে প্রণীত একটি আইনের অধীনে দেশটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সরকারকে প্রতি বছর বাৎসরিক চেকআপের অংশ হিসেবে ৪০ থেকে ৭৪ বয়সী জাপানিজ নাগরিকদের কোমরের মাপ নিতে হবে। তবে উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো যদি তাদের আওতায় থাকা নাগরিকদের অতিরিক্ত ওজন কমানোর ব্যাপারে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়, তাহলে জাপান সরকার সেসব প্রতিষ্ঠান বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক জরিমানা করবে।

নিউইয়র্ক টাইমসের এই প্রতিবেদন বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয় যে, গণমাধ্যমটিতে জাপানে অতিরিক্ত মোটা হলে ট্যাক্স দিতে হয় এমন কোনো তথ্যের উল্লেখ ছিল না। বরং বিষয়টি ছিল জাপানি নাগরিকদের অতিরিক্ত ওজন কমানোর ব্যাপারে সেখানকার প্রতিষ্ঠানগুলো লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হলে তাদেরকে জরিমানা করা হবে।
জাপানের আইনটি দেখে নেওয়া যাক
অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান Snopes এ ২০১৫ সালের পহেলা জানুয়ারি ‘Is It Illegal to be Fat in Japan?‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২০০৮ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে দেশটি অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা কমাতে ‘মেটাবো আইন’ নামে একটি আইন পাশ করে। এই আইন অনুযায়ী, দেশটিতে একটি নির্দিষ্ট বয়সী নাগরিকদের বছরে একবার তাদের কোমরের পরিমাপ করতে হবে এবং সম্ভাব্য চিকিৎসা সেবা নিতে হবে। তবে আইনটিতে স্থূলকায় বা অতিরিক্ত ওজনকে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। অর্থাৎ স্থূলকায় বা অতিরিক্ত ওজনের জন্য জাপানি নাগরিকদের জরিমানা বা কারাগারে পাঠানোর দাবিটি মিথ্যা।

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয়, নিউইয়র্ক টাইমসে জাপানে অতিরিক্ত মোটা হলে ট্যাক্স দিতে হয় এমন কোনো তথ্যের উল্লেখ ছিল না। পাশাপাশি দেশটিতেও অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলকায় হওয়া কোনো অপরাধ নয়।
মূলত, ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে জাপান অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা কমাতে ‘মেটাবো আইন’ নামে একটি আইন পাশ করে। এই আইনে দেশটির নাগরিকদের কোমরের একটি নির্দিষ্ট মাপ ঠিক করে দেওয়া হয় এবং ৪০-৭৪ বয়সী নাগরিকদের বছরে একবার কোমর মাপা এবং সে অনুযায়ী সম্ভাব্য চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এছাড়া অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা কমাতে দেশটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সরকারকে একটি লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। যদি এই প্রতিষ্ঠানগুলো সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়, তবে তাদেরকে জরিমানা করার বিধানও রাখা হয়। উক্ত বিষয়গুলো নিয়ে একই বছর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস। অনুসন্ধানে দেখা যায়, নিউ ইয়র্ক টাইমসে উল্লিখিত এই তথ্যগুলোই বিকৃত হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘জাপানে অতিরিক্ত মোটা হলে ট্যাক্স দিতে হয়’ শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, জাপানে অতিরিক্ত মোটা হলে ট্যাক্স দিতে হয় দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- New York Times: Japan, Seeking Trim Waists, Measures Millions
- Snopes: Is It Illegal to be Fat in Japan?