Home Blog Page 572

ডিবিসি নিউজের নকল ফটোকার্ডে লিটন দাসের নামে ভুয়া তথ্য প্রচার 

0

সম্প্রতি, ‘জিম্বাবুয়ের মতো ছোট দলগুলোকে টার্গেট করেন লিটন‘ শীর্ষক তথ্য বা শিরোনামে বাংলাদেশ জাতীয় দলের খেলোয়াড় লিটন দাসের ছবিসহ মূলধারার গণমাধ্যম ডিবিসি নিউজের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

লিটন দাস

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘জিম্বাবুয়ের মতো ছোট দলগুলোকে টার্গেট করেন লিটন’ শীর্ষক তথ্য বা শিরোনামে ডিবিসি নিউজ কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, আলোচিত ফটোকার্ড থাকা টেক্সটের ফন্ট ডিজাইনের সাথে ডিবিসি নিউজ কর্তৃক প্রকাশিত ফটোকার্ডের টেক্সট ফন্ট ডিজাইনের সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে।

Photocard Comparison By Rumor Scanner

ডিবিসি নিউজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও ডিবিসি নিউজের ওয়েবসাইটেও উক্ত দাবিতে প্রচারিত কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।

তবে, গত ১১ অক্টোবর “পুরুষ সদস্য থাকেন না এমন ফ্ল্যাট টার্গেট করেন লিটন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: DBC News Facebook Page

উক্ত ফটোকার্ডের থাকা ব্যক্তির ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডের ব্যাকগ্রাউন্ডের হুবহু মিল পাওয়া যায়। 

Photocard Comparison By Rumor Scanner

এছাড়া, আলোচিত ফটোকার্ডটি ভুয়া উল্লেখ করে ডিবিসি নিউজের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। 

Screenshot: DBC News Facebook Page

পোস্টের কমেন্টে থাকা প্রতিবেদন বলা হয়, ডিবিসি নিউজ এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। ভাইরাল এই ফটোকার্ডটি ভুয়া। 

মূলত, বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার লিটন দাস ‘জিম্বাবুয়ের মতো ছোট দলগুলোকে টার্গেট করেন’ শীর্ষক তথ্য বা শিরোনামে ডিবিসি নিউজের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার লিটন দাসকে নিয়ে ডিবিসি নিউজ এমন কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, গত ১১ অক্টোবর “পুরুষ সদস্য থাকেন না এমন ফ্ল্যাট টার্গেট করেন লিটন” শীর্ষক শিরোনামে ডিবিসি নিউজের অফিসিয়াল ফেসবুকে পেজে প্রকাশিত ফটোকার্ডকে ডিজিটাল প্রযুক্তি সহায়তায় এডিট বা বিকৃত করে উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, পূর্বে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার লিটন দাসকে নিয়ে ইন্টারনেটে প্রচারিত ভুয়া মন্তব্যকে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে। 

সুতরাং, ‘জিম্বাবুয়ের মতো ছোট দলগুলোকে টার্গেট করেন লিটন’ শীর্ষক তথ্য বা শিরোনামে ডিবিসি নিউজের ফটোকার্ডের আদলে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা বিকৃত।

তথ্যসূত্র

রুমিন ফারহানা এই কথাগুলো বিএনপিকে নিয়ে বলেননি

সম্প্রতি, ‘আবারও নির্দ্বিধায় সত্য কথা বললেন রুমিন ফারহানা‘ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ভিডিওটিতে রুমিন ফারহানাকে বলতে শোনা যায়, “বিএনপি বিরাট জব্দ হবে। এই ভিসানীতি বিএনপির ওপর আরোপ হবে৷ বিএনপির নেতাকর্মীরা কেউ আমেরিকায় যেতে পারবে না। তাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তারা কোনো আন্দোলনও করতে পারবে না। নির্বাচন বানচাল করাতো অনেক পরের কথা।”

রুমিন ফারহানা

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এখানে (আর্কাইভ) এখানে (আর্কাইভ) এখানে (আর্কাইভ) এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে উক্ত কথাগুলো বলেননি বরং তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপিকে নিয়ে কি বলেছেন তার বর্ণনা দিতে গিয়ে উক্ত কথাগুলো বলেছেন।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

পর্যবেক্ষণে উক্ত ভিডিওতে রুমিন ফারহানার বক্তব্যে কিছু অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া, ভিডিওটির সাথে কয়েকটি ফানি ক্লিপও যুক্ত করা হয়েছে। 

বিষয়টি যাচাইয়ে ভিডিওটির মূল উৎস অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Rumeen’s Voice নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৭ সেপ্টেম্বর “এই দুঃসময়ে ওবায়দুল কাদেরের বিনোদন চলুক” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আলোচিত ভিডিওটির অনুরূপ একটি ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Rumeen’s Voice YouTube

এই ভিডিওটির শুরুর অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল রয়েছে। ভিডিওটির ১০ সেকেন্ড থেকে ২৫ সেকেন্ড অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির রুমিন ফারহানার বক্তব্যের অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

মূল ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে রুমিন ফারহানা আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলেন। শুরুতে তিনি বলেন, “প্রথমে যখন ভিসানীতি আসলো তখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বুঝে না বুঝে কিংবা একটু বেশি বুঝে বলা শুরু করেছিলেন, এইবার বিএনপি বিরাট জব্দ হবে। এই ভিসানীতি বিএনপির ওপর আরোপ হবে৷ বিএনপির নেতাকর্মীরা কেউ আমেরিকায় যেতে পারবে না। তাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তারা কোনো আন্দোলনও করতে পারবে না। নির্বাচন বানচাল করাতো অনেক পরের কথা….।”

অর্থাৎ, রুমিন ফারহানা এই কথাগুলো বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেননি বরং বিএনপিকে নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কী বলেছেন তা বর্ণনা  করতে গিয়ে তিনি উক্ত কথাগুলো বলেছিলেন।

মূলত,  গত ২৭ সেপ্টেম্বর Rumeen’s Voice নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা দেওয়া একটি বক্তব্য প্রচারিত হয়। পরবর্তীতে সেই বক্তব্য থেকে বিএনপিকে নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কী বলেছেন তা বর্ণনা  করার অংশ কেটে তাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ‘আবারও নির্দ্বিধায় সত্য কথা বললেন রুমিন ফারহানা’ শীর্ষক শিরোনাম যুক্ত করে ভিডিওর খণ্ডাংশ বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়।

উল্লেখ্য, পূর্বেও একই ঘটনার খণ্ডিত অংশের ভিডিওতে বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানার ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্যে করা বক্তব্যকে তারেক রহমানকে নিয়ে করা বক্তব্য দাবিতে প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, বিএনপিকে নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কী বলেছেন তা বর্ণনা দিয়ে বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানার বক্তব্যের খণ্ডিত অংশকে বিএনপির উদ্দেশ্যে তার (রুমিন) মন্তব্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ইসরায়েলি সৈন্য গাজায় নিয়োগ পাওয়ায় কান্না করার ভিডিওটি পুরোনো

সম্প্রতি, ইসরায়েলের একজন মহিলা সৈনিক গাজায় নিয়োগ পাওয়ায় কান্নাকাটি করছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ইসরায়েলি সৈন্য

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের নয় বরং ২০২২ সালের পুরোনো একটি ভিডিও উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ইরানি গণমাধ্যম ‘Press TV’ এর এক্স অ্যাকাউন্টে (সাবেক টুইটার) ২০২২ সালের ৩ জুনে প্রকাশিত একটি ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও থেকে জানা যায়, ইসরায়েলি সৈন্যকে ফিলিস্তিনের গাজা অঞ্চলের জন্য নিয়োগ দেওয়ায় তিনি ভয়ে কান্নাকাটি করছিলেন।

ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা Shehab News Agency এর এক্স অ্যাকাউন্টে (সাবেক টুইটার) ২০২২ সালের ২ জুনে প্রকাশিত একই ভিডিও থেকে একই তথ্য জানা যায়।

মূলত, ২০২২ সালে জুন মাসের শুরুর দিকে ইসরায়েলি একজন সৈন্যকে ফিলিস্তিনের গাজা স্ট্রিপের জন্য নিয়োগ দেওয়া হলে তিনি ভয়ে কান্নাকাটি করছিলেন। সে সময়ের ধারণকৃত একটি ভিডিওকেই সম্প্রতি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা করলে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়৷ 

উল্লেখ্য, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷

সুতরাং, ২০২২ সালের ইসরায়েলের একজন মহিলা সৈনিক গাজায় নিয়োগ পাওয়ায় কান্না করার একটি ভিডিও সাম্প্রতিক ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সময়ের দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নামে প্রচারিত মন্তব্যটি ভুয়া 

0

সম্প্রতি, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় “হাসিনার ছেলে ফেরারী, মেয়ে ডিভোর্সি এবং নিজে স্যাংশনী” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

গয়েশ্বর চন্দ্র

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে আলোচিত মন্তব্যটির ন্যায় কোনো মন্তব্য করেননি। বরং কোনো রকম তথ্যসূত্র  ছাড়াই সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে  তার নামে উক্ত মন্তব্যটি প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে উক্তিটি প্রথম কখন পাওয়া যায়?

দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে ফেসবুকের নিজস্ব মনিটরিং টুল এবং প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন  কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গত ১০ সেপ্টেম্বর বিএনপির সকল তাজা খবর (আর্কাইভ) নামের একটি ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়।  

Screenshot: Probable first claim post

পোস্টটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটিতে কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বরাতে বলা হয়, “বিএনপি’র বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচার চালিয়েছে আওয়ামী লীগ। অথচ আজকে জাতির কাছে একেবারেই স্পষ্ট যে হাসিনার ছেলে ফেরারী, মেয়ে ডিভোর্সি এবং নিজে হইলো স্যাংশনী।”

পরবর্তীতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর আনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তির ফেসবুক পেজে ‘ফেরারী, ডিভোর্সি, স্যাংশনী’  শব্দগুলো ব্যবহার করে একটি পোস্ট  (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। তবে এ পোস্টে কোনো ব্যক্তির নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

২৫ সেপ্টেম্বরের এই পোস্টের পর গত ২৮ সেপ্টেম্বর ও তার পরবর্তী সময়ে  গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের এরূপ মন্তব্য সংক্রান্ত ভাইরাল হওয়া বেশ কিছু পোস্ট খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

Screenshot: Facebook Claim Post

এসব পোস্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ১০ সেপ্টেম্বরের সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটির প্রথম অংশ অর্থাৎ ‘বিএনপি’র বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচার চালিয়েছে আওয়ামী লীগ’ অংশটি বাদ দিয়ে  গয়েশ্বর রায়ের নামে “হাসিনার ছেলে ফেরারী, মেয়ে ডিভোর্সি এবং নিজে হইলো স্যাংশনী” শীর্ষক অংশটুকু প্রচার করা হয়। তবে এই পোস্টগুলোতেও গয়েশ্বর রায় এমন মন্তব্য কোথায় করেছেন, সে সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে আরও অনুসন্ধানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নামে খোলা একটি ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ২ অক্টোবর গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে উদ্ধৃত করে  “হাসিনার ছেলে একজন ফেরারী আসামি, তার মেয়ে ডিভোর্সি স্বামী হারা এবং হাসিনা নিজে একজন স্যাংশনী ও ইন্ডিয়া থেকে ডিভোর্সি” শীর্ষক একটি পোস্ট (আর্কাইভ) করা হয়। 

Screenshot: Fake page of Mirza Fakhrul

এই পোস্টটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, উক্ত পোস্টটিতে উল্লিখিত মন্তব্যটি গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বলা হলেও এখানে কিছু অতিরিক্ত বাক্যাংশ ‘ফেরারী আসামি’, ‘ ডিভোর্সি স্বামী হারা’, ‘ইন্ডিয়া থেকে ডিভোর্সি’ যোগ করা হয়েছে। যা তার নামে প্রচারিত পূর্বের পোস্টগুলোতে পাওয়া যায়নি। 

এ পর্যন্ত অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয় যে,  বিভিন্ন সময়ে আংশিক পরিমার্জন ঘটিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নামে কোনো প্রকার তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত মন্তব্যটি প্রচার করা হচ্ছে। 

পরবর্তীতে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সত্যিই এরূপ কোনো মন্তব্য করেছেন কী না সে বিষয়ে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম। 

কিন্তু জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক কোনো সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে  বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের এমন কোনো মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

বিগত বিভিন্ন সময়ে বিএনপির ফেসবুক ভেরিফাইড পেজ, ইউটিউব চ্যানেল, দলটির মিডিয়া সেলের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত গয়েশ্বর রায়ের কিছু বক্তব্যের প্রতিবেদন দেখুন

পরবর্তীতে দাবিটি সম্পর্কে  অধিকতর সত্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে  বিএনপি চেয়ারপার্সনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবিরের  সাথে যোগাযোগ করা রিউমর স্ক্যানার টিম। 

তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এরূপ কোনো মন্তব্য করেননি। এছাড়াও বিষয়টিকে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার নামে চালানো অপপ্রচার বলে উল্লেখ করেছেন।

মূলত, সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র স্থায়ী কমিটির সদস্য  গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “হাসিনার ছেলে ফেরারী, মেয়ে ডিভোর্সি এবং নিজে হইলো স্যাংশনী” শীর্ষক একটি মন্তব্য প্রচার করা হচ্ছে। এ নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, অন্তত গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নামে মন্তব্যটি প্রচার করা হলেও তিনি এই মন্তব্য কবে কোথায় করেছেন তার কোনো উল্লেখ নেই। বরং দেখা যায়, মন্তব্যটি প্রচারের সময়কাল থেকে বিভিন্নভাবে পরিমার্জিত হয়ে তার নামে প্রচার হয়ে আসছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের সার্বিক বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয় যে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এমন কোনো মন্তব্য করেননি। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপার্সনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবিরও বিষয়টি অপপ্রচার বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন। 

সুতরাং,  বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মন্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ফিলিস্তিনি শিশুদের হত্যা করে ইসরায়েলিদের আনন্দ-উল্লাসের ভিডিওটি পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার 

সম্প্রতি ‘ফিলিস্তিনি শিশুদের জন্য গাজা একটি সমাধিক্ষেত্রতে পরিণত হয়ে উঠেছে। আর এজন্য ইসরায়েলিরা আনন্দ-উল্লাসে গান গেয়ে নাচানাচি করছে।‘ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। 

শিশুদের হত্যা

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফিলিস্তিনি শিশুদের হত্যার ঘটনায় ইসরায়েলিদের আনন্দ-উল্লাস ও নাচানাচি করার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পুরানো। প্রকৃতপক্ষে ২০১৪ সালের ভিন্ন ঘটনার একটি ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে  Disregarding Gaza নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৫ সালের ১৬ মার্চ ‘Disregarding Gaza (আর্কাইভ)’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Disregarding Gaza

এই ভিডিওটির সূত্রে সাম্প্রতিক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওয়ের অংশটি নিয়ে অনুসন্ধান করে। 

৯ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের পুরো ভিডিওটির ২ মিনিট ৪০ সেকেন্ড অংশে উপস্থাপিকা বর্ণনা করছিলেন, তিনি ইসরায়েলের একজন আরব মুসলিম পুরুষ ও ইহুদি থেকে ইসলামে ধর্মান্তরিত একজন নারীর বিয়েতে উপস্থিত হয়েছেন। তবে এই বিয়েটি ঘিরে লেহাভা নামে একটি কট্টর ডানপন্থী ইহুদি গোষ্ঠীর প্রতিবাদ করছে।

ভিডিওটিতে বর্ণনাসহ দেখানো এই অংশের সাথে ফিলিস্তিনের শিশুদের হত্যার ঘটনায় ইসরায়েলিদের আনন্দ-উল্লাস ও নাচানাচি করার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির ৩ মিনিট ৩৬ সেকেন্ড থেকে প্রচারিত অংশের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Collage: Rumor Scanner 

প্রসঙ্গত, লেহাভা হচ্ছে একটি কট্টর ডানপন্থী ইহুদি আধিপত্যবাদী গোষ্ঠী, যারা ইহুদি এবং আরবদের মধ্যে আত্তীকরণের কঠোরভাবে বিরোধিতা করে।

পরবর্তীতে লেহাভা বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে বিবিসিতে ২০১৪ সালের ১৮ আগস্ট “Arrests at protests against Israeli mixed wedding” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী ইহুদি বংশোদ্ভূত নারী এবং ইসরায়েলে একজন আরব মুসলিম পুরুষের বিয়ে নিয়ে আরব মুসলমান এবং ইহুদিদের আন্তঃবিবাহের বিরোধিতাকারী কট্টর ডানপন্থী ইহুদি লেহাভা গোষ্ঠীর সমর্থকেরা বিক্ষোভ মিছিল করে।

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটি ফিলিস্তিনের শিশুদের হত্যার ঘটনায় ইসরায়েলিদের আনন্দ-উল্লাস ও নাচানাচির নয়। বরং এটি আরব মুসলিম ও ইহুদি থেকে ধর্মান্তরিত মুসলিম নারীর বিয়ের প্রতিবাদে লেহাভা নামক একটি কট্টর ডানপন্থী ইহুদি গোষ্ঠীর বিক্ষোভ মিছিলের। 

মূলত, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা করলে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়৷এরই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি ফিলিস্তিনের শিশুদের হত্যার ঘটনায় ইসরায়েলিদের আনন্দ-উল্লাস ও নাচানাচি করার দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি ২০১৪ সালে আরব মুসলিম ও ইহুদী ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত একজন নারীর মধ্যে বিয়ে নিয়ে লেহাভা নামক একটি কট্টর ডানপন্থী গোষ্ঠীর বিক্ষোভ মিছিলের। 

উল্লেখ্য, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷

সুতরাং, আরব মুসলিম ও ইহুদি থেকে ধর্মান্তরিত মুসলিম নারীর বিয়ের প্রতিবাদে একটি বিক্ষোভের পুরানো ভিডিওকে ফিলিস্তিনের শিশুদের হত্যা করে ইসরায়েলিদের আনন্দ উল্লাসের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

টেবিলে মদের বোতল সম্বলিত তারেক রহমানের এই ছবিটি এডিটেড

0

সম্প্রতি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বসারত অবস্থার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। উক্ত ছবিতে তার সামনে থাকা টেবিলে একটি মদের বোতল দেখা যাচ্ছে। 

মদের বোতল
Screenshot: Facebook

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ) এবং পোস্ট (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এই ছবিটি এডিটেড। আসলে ছবিতে থাকা টেবিলে মদের বোতল এডিট এর মাধ্যমে যুক্ত করে এই ছবিটি তৈরী করা হয়েছে। তাছাড়া মূল ছবিতে টেবিলে সাদা রঙের চায়ের কাপ এবং কেটলি ছিল।

ছবিটির সত্যতা অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, Abu Rushd নামের একটি ফেসবুক আইডিতে গত ০৮ অক্টোবর প্রকাশিত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Facebook

আলোচিত ছবিটির তারেক রহমানের বসার ঢং, পোশাক এবং পরিবেশের সাথে উক্ত ছবির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তবে উক্ত ছবিতে টেবিলে কোনো মদের বোতলের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং মদের বোতলের স্থানে সাদা রঙের চায়ের কাপ এবং কেটলি দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও ছবিটির অপর প্রান্তে মূল ছবি পোস্টকারী ব্যক্তি আবু রূশদকেও দেখতে পাওয়া যায়।

Image Comparison by Rumor Scanner

আবু রূশদের পোস্টের ক্যাপশন থেকে জানা যায়, সম্প্রতি আবু রূশদ যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে গিয়েছিলেন। সেখানে ইউকে বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক কায়সার এর মাধ্যমে শহরের বাইরে একটি গল্ফ ক্লাবের রেষ্টুরেন্টে তার সাথে তারেক রহমানের সাক্ষাত হয়। দীর্ঘ আলাপচারিতার শেষে বিদায় বেলায় তাদের দুজনের উক্ত ছবিটি ধারণ করা হয়। 

অর্থাৎ, তারেক রহমানের এই ছবিতে তার সামনে থাকা টেবিলের চায়ের কাপ এবং কেটলি ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে অপসারণ করে সেখানে মদের বোতল যুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে।

মূলত, আবু রূশদ নামক এক সাংবাদিক যুক্তরাজ্যের একটি গলফ ক্লাবের রেষ্টুরেন্টে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর সাথে সাক্ষাত করেন। সেই সাক্ষাতের একটি ছবি আবু রূশদ তার ফেসবুক আইডিতে প্রকাশ করেন। সাম্প্রতিক সময়ে সেই ছবিটি সংগ্রহ করে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সেখানে মদের বোতল এর ছবি যুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও মদের বোতল সম্বলিত তারেক রহমানের এডিটেড ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হলে সেমসয় ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে

সুতরাং, মদের বোতল সম্বলিত তারেক রহমানের আলোচিত ছবিটি বিকৃত।

তথ্যসূত্র

আরটিভি’র ফটোকার্ড নকল করে বলিউড তারকা নোরা ফাতেহিকে জড়িয়ে জবির নামে ভুয়া তথ্য প্রচার 

0

সম্প্রতি, “জগন্নাথ মাতাতে অবশেষে সব জল্পনা- কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ঢাকায় আসছেন বলিউড তারকা নোরা ফাতেহি!” শীর্ষক একটি তথ্য আরটিভি’র আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

নোরা ফাতেহি

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জগন্নাথ মাতাতে ঢাকায় আসছেন বলিউড তারকা নোরা ফাতেহি শীর্ষক দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয় এবং আরটিভিও এ ধরনের কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রচার করেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে মূলধারার টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভি’র ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে এই সংবাদটি প্রচারের কোনো নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। তাছাড়া আলোচিত এই ফটোকার্ডের টেক্সট ফন্টগুলোর মধ্যে অসংগতি লক্ষ্য করা যায়। 

Screenshot: Facebook (Claim post)

অনুসন্ধানে কি ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে আরটিভি’র ওয়েবসাইট, ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ এবং আরটিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া অন্য কোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবিতে প্রচারিত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায় নি। 

তবে ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর আরটিভি’র ফেসবুক পেজে ‘অবশেষে ঢাকা আসছেন নোরা ফাতেহি’ শীর্ষক শিরোনামে “অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ঢাকায় আসছেন বলিউড তারকা নোরা ফাতেহি!” শীর্ষক তথ্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায় এবং এর কমেন্টেেও একই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।  

Screenshot: Facebook

অর্থাৎ, ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর আরটিভি’র ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ফটোকার্ডটির শিরোনাম ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে তাতে ‘জগন্নাথ মাতাতে’ শীর্ষক শব্দটি যুক্ত করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে। 

 Photocard Comparison : Rumor Scanner 

ফটোকার্ডটির উৎসের খোঁজে 

অনুসন্ধানে গত ১৬ অক্টোবর বিকেল ৫ টা ৪ মিনিটে জবি সার্কাজম পেজে একটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot : Facebook

উক্ত পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি একটি সার্কাজম পেজ। বিভিন্ন সময়ে এই পোজটি থেকে সার্কাজমধর্মী বিভিন্ন পোস্ট প্রচার করতে দেখা যায়। 

Screenshot : Facebook

অর্থাৎ, এই পেজটি থেকে আলোচিত ফটোকার্ডটি প্রথমে সার্কাজম হিসেবে প্রচার হয় এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন ফেসবুক আইডি থেকে  এই ফটোকার্ডটি আসল দাবিতে প্রচার করা হয়।

ফটোকার্ডটি তৈরির প্রেক্ষাপট

গত ৫ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রতিদিনের ওয়েবসাইটে “বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে জগন্নাথ মাতাতে পারেন জেমস” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ এর বরাত দিয়ে জানানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কনসার্টে মঞ্চ মাতাতে পারেন নগরবাউল খ্যাত জেমস।

তবে গত ১৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রার মোঃ ওহিদুজ্জামানের সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান সূচি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

Source: jnu.ac.bd

উক্ত অনুষ্ঠান সূচিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যান্ডদলগুলোর অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের কথা বলা হলেও নগরবাউল খ্যাত জেমস এর অংশগ্রহণ সম্পর্কিত কোনো তথ্য জানানো হয়নি।

অর্থাৎ উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে কনসার্টে নগরবাউল খ্যাত জেমস আসতে পারে বলে জানানো হলেও পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত অনুষ্ঠান সূচিতে তা অনুপস্থিত থাকার বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই আলোচ্য দাবির সূত্রপাত ঘটেছে। 

মূলত, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত কনসার্টে মঞ্চ মাতাতে পারেন নগরবাউল খ্যাত জেমস- এমন একটি তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বরাতে গত ০৫ অক্টোবর মূলধারার একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। তবে গত ১৫ অক্টোবর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান সূচির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার মোঃ ওহিদুজ্জামানের সাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জেমস এর উপস্থিতি নিয়ে কোনো তথ্য জানানো হয়নি। এরই প্রেক্ষিতে মূলধারার গণমাধ্যম আরটিভি’র ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের ১৮ নভেম্বর “অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ঢাকায় আসছেন বলিউড তারকা নোরা ফাতেহি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ফটোকার্ডটিকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে তাতে জগন্নাথ মাতাতে’ শব্দদ্বয় যুক্ত করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

সুতরাং, ‘জগন্নাথ মাতাতে ঢাকায় আসছেন বলিউড তারকা নোরা ফাতেহি’ শীর্ষক দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা বিকৃত। 

তথ্যসূত্র

হামাস কর্তৃক ইসরায়েলের পরমাণুকেন্দ্র দখল হওয়ার দাবিটি সত্য নয়

সম্প্রতি, “এইমাত্র হামাসের দখলে ইসরায়েলের পরমানু কেন্দ্র” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

পরমাণুকেন্দ্র দখল

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস কর্তৃক ইসরায়েলের পরমাণুকেন্দ্র দখল হওয়ার দাবিটি সত্য নয় বরং কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য তথসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিটি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে উক্ত দাবিতে সম্ভাব্য সর্বপ্রথম প্রচারিত ভিডিওটি International News 24 নামের ফেসবুক পেইজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটিতে বলা হচ্ছে, ‘ইসরায়েলের পরমাণু কেন্দ্র ঘেরাও করার পরিকল্পনা করেছে হামাস। জলে,  International News 24স্থলে, আকাশে- সব পথেই ইসরাইলে হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এখন এরই সাথে নতুন করে যোগ হচ্ছে ইসরাইলের পরমানু কেন্দ্র। বিশেষজ্ঞরা ধারনা করেছেন যেকোনো মুহুর্তে ইসরাইলের পরমাণু কেন্দ্রে ঢুকে যেতে পারে হামাসের যোদ্ধারা। হামাসের যোদ্ধাদের এখন যে পরিমান শক্তি রয়েছে, সেই শক্তি দিয়ে ইসরাইলের পরমাণু কেন্দ্রে ঢুকে যাওয়া হামাসের আর কিছুই নয়। যেভাবে ইসরাইলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে হামাস ধোকা দিয়েছে, এতে পরমাণু কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও ধোকা দেওয়া হামাসের কাছে কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার মাত্র। আপনারা যদি হামাসের সমর্থক থাকেন তাহলে অবশ্যই আমাদের ভিডিওটি শেয়ার করে দিন।’

অর্থাৎ, ভিডিওর শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে হামাস কর্তৃক ইসরায়েলের পরমাণুকেন্দ্র দখল হওয়ার কথা থাকলেও ভেতরে হামাস, ইসরায়েলের পরমাণু কেন্দ্র ঘেরাও করার পরিকল্পনা করার কথা বলা হচ্ছে।

এছাড়া, হামাস ইসরায়েলের পরমাণু কেন্দ্র দখল করেছে এমন দাবিতে ইসরায়েলি এবং আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরবর্তী অনুসন্ধানে Nuclear Threat Initiative এর ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ইসরায়েলের তিনটি পরমাণু বিষয়ক প্রতিষ্ঠান আছে। সেগুলো হচ্ছে:

  • ইসরায়েল এটোমিক এনার্জি কমিশন। এটি ইসরায়েলের ডিমোনা (নেগেভ মরুভূমি) এবং ইয়াভনে অবস্থিত।
  • সোরেক নিউক্লিয়ার রিসার্চ সেন্টার। এটি ইসরায়েলের ইয়াভনেতে অবস্থিত।
  • তিরোশ। এটি ইসরায়েলের পরমাণু বিষয়ক সংরক্ষণাগার যা টেল নফ এয়ার বেসের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত।

ফ্রান্স ভিত্তিক সংবাদ মধ্যেম ‘Le Monde’ এর ওয়েবসাইটে গত ৯ অক্টোবর “One map to understand how Hamas attacked Israel” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from Le Monde

প্রতিবেদন থেকে হামাসের ইসরায়েলে হামলা করার জায়গা গুলো সম্পর্কে জানা যায়। তবে সেখানে ইসরায়েলের তিনটি পরমাণু বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের একটিতেও হামলা না হওয়ার তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

অর্থাৎ, হামাস কর্তৃক ইসরায়েলের পরমাণুকেন্দ্র হামলা বা দখল হয়নি।

মূলত, সম্প্রতি হামাস কর্তৃক ইসরায়েলের পরমাণুকেন্দ্র দখল হওয়ার দাবিতে ফেসবুকে একাধিক ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, ইসরায়েলের পরমাণু বিষয়ক প্রতিষ্ঠান গুলো এখনো ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে এবং সুরক্ষিত আছে।

প্রসঙ্গত, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা করলে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়৷

উল্লেখ্য, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷

সুতরাং, হামাস কর্তৃক ইসরায়েলের পরমাণুকেন্দ্র দখল করার দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

প্রথম আলো’র ফটোকার্ড বিকৃত করে মির্জা ফখরুলের নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার

সম্প্রতি, ‘আগামী ১৮ অক্টোবরের সমাবেশে সরকারের পতন ঘটাতে না পারলে হাতে চুড়ি পরবো‘ শীর্ষক মন্তব্যকে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্য দাবিতে দেশের মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো’র ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

 মির্জা ফখরুলের

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘আগামী ১৮ অক্টোবরের সমাবেশে সরকারের পতন ঘটাতে না পারলে হাতে চুড়ি পরবো’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি এবং প্রথম আলোও উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং আলোচিত এই ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট করে তৈরি করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রথম আলো’র ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে এই সংবাদটি প্রচারের তারিখ হিসেবে ১৭ অক্টোবরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

Screenshot: Facebook Claim Post

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফটোকার্ডটিতে থাকা লোগো ও তারিখের সূত্র ধরে প্রথম আলো’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ১৭ অক্টোবর বা তার আগে পরে উক্ত শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, প্রথম আলো’র ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল বা অন্যকোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তবে, গত ১৭ অক্টোবর প্রথম আলো’র ফেসবুক পেজে ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিন ঘণ্টার মিটিং জাদুর মত কাজে লেগেছে তিশার’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ডের ডিজাইনের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির ডিজাইনের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ধারণা করা যায়, এই ফটোকার্ডটি এডিট করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া, আলোচিত ফটোকার্ডটির টেক্সট ফন্টের সাথে প্রথম আলো’র ফেসবুক পেজে প্রচারিত অন্যান্য ফটোকার্ডের টেক্সট ফন্টের ভিন্নতা রয়েছে।

Photocard Comparison by Rumor Scanner 

অনুসন্ধান চলাকালে উক্ত দাবির প্রেক্ষিতে  প্রথম আলো’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ১৭ অক্টোবর রাতে একটি পোস্ট হতে দেখে রিউমর স্ক্যানার টিম।

Screenshot: Prothom Alo Facebook 

উক্ত পোস্টে আলোচিত এই ফটোকার্ডটিকে ভুয়া হিসেবে উল্লেখ করে জানানো হয়, “প্রথম আলো’র নামে ছড়ানো এই ছবি ও তথ্য নকল, আমাদের তৈরি নয়। বিভ্রান্তি এড়াতে আমাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ ও অনলাইনের সঙ্গে থাকুন।”

অর্থাৎ, ‘আগামী ১৮ অক্টোবরের সমাবেশে সরকারের পতন ঘটাতে না পারলে হাতে চুড়ি পরবো’ শীর্ষক মির্জা ফখরুলের নামে প্রচারিত এই মন্তব্যটি নিয়ে প্রথম আলো কোনো ফটোকার্ড কিংবা সংবাদ প্রকাশ করেনি।

মির্জা ফখরুল কি এমন কোনো মন্তব্য করেছেন?

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উক্ত মন্তব্যটি করেছেন কিনা জানতে চেয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “চরম বাটপারি কাজ, যেই এরকম কাজটি করেছেন খুবই অন্যায় করেছেন। আমি নিজে মহাসচিবের সাথে এই বিষয়ে কথা বলেছি তিনি অনেক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আমি সবার কাছে আহবান জানাচ্ছি এ ধরণের কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য। ধন্যবাদ।”

অর্থাৎ, ‘আগামী ১৮ অক্টোবরের সমাবেশে সরকারের পতন ঘটাতে না পারলে হাতে চুড়ি পরবো’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য মির্জা ফখরুল ইসলাম করেননি।

মূলত, সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আজ ১৮ অক্টোবর বিএনপির পক্ষ থেকে রাজধানী ঢাকায় পূর্বঘোষিত সমাবেশ করার কথা রয়েছে। এই সমাবেশের বিষয়টি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ‘আগামী ১৮ অক্টোবরের সমাবেশে সরকারের পতন ঘটাতে না পারলে হাতে চুড়ি পরবো’ শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্য দাবিতে দেশের মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো’র ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে প্রথম আলো’র ফেসবুক পেজ কিংবা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, প্রথম আলো’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকেও উক্ত ফটোকার্ডটি ভুয়া এবং তাদের তৈরি নয় বলে জানানো হয়। এছাড়া, বিএনপি’রমহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এমন কোনো মন্তব্য করেননি বলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ফটোকার্ড ব্যবহার করে অপপ্রচারের বিষয়ে গত ০৫ সেপ্টেম্বর বিস্তারিত ফ্যাক্ট ফাইল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘আগামী ১৮ অক্টোবরের সমাবেশে সরকারের পতন ঘটাতে না পারলে হাতে চুড়ি পরবো’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন ফেসবুকে প্রচারিত সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা বিকৃত।

তথ্যসূত্র

সীমান্ত পার হয়ে জর্ডানের নাগরিকদের ফিলিস্তিনে প্রবেশ করার দাবিটি মিথ্যা 

সম্প্রতি, বর্ডার পার হয়ে ফিলিস্তিনে যাওয়ার চেষ্টা করছেন অনেক জর্ডান যুবক শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও এবং একই ভিডিওর স্থিরচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

সীমান্ত পার

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এছাড়া একই দৃশ্য সাম্প্রতিক সময়ে লেবাননের দাবিতেও ছড়াতে দেখা গেছে। 

উক্ত দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জর্ডান নাগরিকদের বর্ডার পার হয়ে ফিলিস্তিনে প্রবেশ করার দাবিটি সঠিক নয় বরং আলোচিত দৃশ্যটি ২০২১ সালের। সেসময় ইসরায়েল সীমান্তে লেবাননের বিক্ষোভকারীদের পতাকা হাতে প্রতিবাদ করার পুরোনো একটি ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ২০২১ সালের ১৬ মে ‘Hargeisawi’ নামক একটি এক্স অ্যাকাউন্টে (সাবেক টুইটার) রিউমর স্ক্যানার টিম আলোচিত ভিডিওটির খোঁজ পায়।  

Video Comparison : Rumor Scanner

উক্ত টুইটের ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়, ফিলিস্তিন বর্ডারে লেবাননের লোকদের দেখা যাচ্ছে। 

দাবিটি নিয়ে আরও অনুসন্ধানে একইদিন Quds News Network নামক একটি ফিলিস্তিনি সংবাদ আউটলেটের ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্টের (সাবেক টুইটার) একটি পোস্টে একই ঘটনার কিছু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ছবিগুলোর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে থাকা দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot : Quds News Network 

উক্ত পোস্টের ক্যাপশনের ভাবানুবাদ থেকে জানা যায়, ‘শত শত লেবানন বিক্ষোভকারী লেবানন-অধিকৃত ফিলিস্তিন সীমান্ত বরাবর ইসরায়েলের কংক্রিটের দেয়ালে আরোহণ করে এবং গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ইসরায়েলি দখলদার সেনাবাহিনীর সাথে সংঘর্ষের জন্য ফিলিস্তিনে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে।’

এছাড়া, অনুসন্ধানে ২০২১ সালের ১৫ মে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে অনুরূপ কিছু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot : Reuters 

উক্ত প্রতিবেদনে প্রকাশিত ছবিগুলোর প্রসঙ্গে জানা যায়, দক্ষিন লেবাননের লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তের কাছে আদাইসেহ গ্রামে ফিলিস্তিন জনগনের সাথে সংহতি প্রকাশের জন্য বিক্ষোভের সময় বিক্ষোভকারীরা একটি সীমান্ত প্রাচীরের উপরে উঠে এবং পতাকা ধরে প্রতিবাদ করেছিলো। 

অর্থাৎ, ভিডিওটি ২০২১ সালের মে মাস থেকেই ইন্টারনেটে বিদ্যমান। অপরদিকে চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত শুরু হয় গত ৭ অক্টোবর থেকে।

মূলত, সম্প্রতি, সীমান্ত পার হয়ে ফিলিস্তিনে যাওয়ার চেষ্টা করছেন অনেক জর্ডান যুবক শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও এবং একই ভিডিওর স্থিরচিত্র ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তাছাড়া একই দৃশ্য সাম্প্রতিক সময়ে লেবাননের দাবিতেও ছড়াতে দেখা গেছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এর সাথে চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাতেরও কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে, ২০২১ সালের মে মাসে গাজায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টির কয়েক সপ্তাহ পর লেবাননের বিক্ষোভকারীরা লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে সংহতি প্রকাশ করার জন্য বিক্ষোভের সময় ইসরায়েল সীমান্ত প্রাচীরের উপর উঠে পতাকা হাতে প্রতিবাদ জানায়। উক্ত ভিডিওটিকেই সাম্প্রতিক সময়ে ভিন্ন দাবিতে প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

সুতরাং, ২০২১ সালে লেবাননের বিক্ষোভকারীদের ইসরায়েল সীমান্তে প্রতিবাদ জানানোর একটি ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্ত পার হয়ে জর্ডান নাগরিকদের ফিলিস্তিনে প্রবেশ করার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা 

তথ্যসূত্র