“পৃথিবীর প্রথম নবী ও মানব হযরত আদম (আ.) এর পায়ের ছাপ চিহ্ন” শীর্ষক দাবিতে একটি ছবি দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রচার হয়ে আসছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ইউটিউবে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ছবিটি হযরত আদম আঃ এর পায়ের ছাপের নয় বরং এটি ইন্দোনেশিয়ার তাপাক তুয়ান নামক স্থানে অবস্থিত দৈত্য সদৃশ একটি পায়ের ছাপ।
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘Steemit’ নামের একটি ব্লকচেইন-ভিত্তিক ব্লগিং এবং সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইটে ৭ বছর পূর্বে “the mystery of the giant footprint in southern Atjeh (Tapak Tuan)” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

ছবিটির বিস্তারিত বিবরণীতে ইন্দোনেশিয়ার ‘Aceh’ নামক প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে তাপাকতুয়ান নামের শহরে অবস্থিত জায়গাটির নাম ‘তাপাকতুয়ান’, যার বাংলা অর্থ হচ্ছে পায়ের ছাপ।
পরবর্তীতে, ‘তাপাকতুয়ান’ সম্পর্কে বিস্তারিত অনুসন্ধানে ইন্দোনেশিয়ান ভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘Good News From Indonesia’ এ ২০২১ সালের ০৭ জুনে “Legenda Tuan Tapa, Telapak Kaki Raksasa di Kota Naga Aceh Selatan” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় প্রকাশিত আলোচিত প্রতিবেদনটি বঙ্গানুবাদ করে জানা যায়, বিখ্যাত এই পায়ের ছাপ সদৃশ জায়গাটি প্রায় ২.৫ মিটার (৮.২ ফুট) প্রশস্ত এবং ৬ মিটার (১৯.৬ ফুট) লম্বা। ‘শেখ তুয়ান তাপা (Sheikh Tuan Tapa) নামে বিশালদেহী এক তপস্বীর পায়ের ছাপ থেকেই জায়গাটির নামকরণ করা হয়েছে’ এমন দাবি প্রচলিত থাকলেও তা শুধুমাত্র মানুষের বিশ্বাস বা স্থানীয় পুরাকথা। তবে, এর পিছনে বৈজ্ঞানিক কোনো তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
মূলত, ইন্দোনেশিয়ার ‘Aceh’ নামক প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে তাপাকতুয়ান নামের শহরে অবস্থিত সমুদ্রের তীরবর্তী একটি প্রাকৃতিক জায়গায় দৈত্য সদৃশ পায়ের ছাপের ছবিকে হযরত আদম আঃ এর পায়ের ছাপ দাবিতে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে প্রচার করা হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে এটিকে তুয়ান তাপা নামের এক তপস্বীর পায়ের ছাপ হিসেবে কথিত থাকলেও এর পক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ইরাকের প্রাচীন শহর উর থেকে সংগৃহীত মানুষের পায়ের ছাপ সদৃশ একটি ইটের ছবিকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর পায়ের ছাপের ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছিলো। সেসময়ে বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
অর্থাৎ, ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থিত সমুদ্রের তীরবর্তী একটি প্রাকৃতিক জায়গায় দৈত্য সদৃশ পায়ের ছাপের ছবিকে হযরত আদম আঃ এর পায়ের ছাপের ছবি দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Steemit website: the mystery of the giant footprint in southern Atjeh (Tapak Tuan)
- Good News From Indonesia: Legenda Tuan Tapa, Telapak Kaki Raksasa di Kota Naga Aceh Selatan
- Rumor Scanner’s own analysis