সম্প্রতি, “তেলেঙ্গানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আত্মীয় ডঃ মহঃ সাইফকে বিয়ে করেছিল ২৬ বছর বয়সী ডঃ ধর্মাবতী প্রীতি। হিসাব মতন বিয়ের পর হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম কবুল করেছিল ধর্মাবতী। কিছুদিন ধর্মাবতীর দেহ ভোগের পর ভিন্ন নারীতে আসক্ত হয় মহঃ সাইফ! প্রীতির উপর শুরু করে মানসিক নির্যাতন! দিনের পর দিন অত্যাচার সহ্য করতে করতে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় প্রীতি; এখন হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায় দিন কাটছে প্রীতির।” শীর্ষক শিরোনাম সম্বলিত একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যে ডাঃ প্রীতির সাথে ডাঃ সাইফের বিয়ের খবর এবং পরবর্তীতে প্রীতির ধর্মান্তরিত হওয়ার দাবিটি সত্য নয় বরং কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘LatestLY’ এর ওয়েবসাইটে চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে “Dr Dharavathi Preethi Dies: Warangal Medico Succumbs at Hyderabad Hospital Five Days After Suicide Attempt Over Harassment by Seniors” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের ওয়ারঙ্গল শহরের কাকাতিয়া মেডিকেল কলেজের স্নাতকোত্তর বিভাগের শিক্ষার্থী আত্নহত্যার চেষ্টা করেছিলেন এবং আলোচিত এই ঘটনায় একই প্রতিষ্ঠানের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ডাঃ সাইফের নামে প্রীতিকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে ডাঃ সাইফকে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে গ্রেফতার করা হয়।
এছাড়া বিষয়টি নিয়ে বিস্তর অনুসন্ধানে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘The Times of India’ এর ওয়েবসাইটে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে “Dharavath Preethi buried in native Jangaon hamlet, Kin say Kakatiya Medical College doctors killed her” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, প্রীতি মারা গিয়েছেন এবং প্রীতির মৃত্যুর পেছনে তার কলেজের সিনিয়ররা দ্বায়ী বলে অভিযোগ করেছেন প্রীতির বাবা।
পরবর্তীতে, গত ০২ মার্চ তারিখে ‘The Hindu’ এবং ০৭ মার্চ তারিখে ‘The Times of India’ এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত আলাদা দুইটি প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে ডাঃ সাইফের রিমান্ড রিপোর্টে থাকা তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়।
প্রতিবেদন দুইটিতে পাওয়া তথ্যমতে, “ডাঃ সাইফ তার জুনিয়র প্রীতিকে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে অপমান করে এবং এর প্রেক্ষিতে প্রীতি অভিযোগ করলে হয়রানির মাত্রা বাড়তে থাকে। ডাঃ সাইফের মোবাইল থেকে ১৭ টি হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট এবং একটি গ্রুপচ্যাট পর্যবেক্ষণ করে সেই রিপোর্টে বলা হয়, প্রীতির সামাজিক অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন মানহানিকর মন্তব্য এবং ইমোজির প্রমাণ পায় পুলিশ।”
উক্ত রিপোর্ট নিয়ে এই প্রতিবেদনগুলোতে আরো বলা হয়, “প্রীতিকে ১৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে একটি প্রি-অ্যানেস্থেসিয়া চেক-আপ (PAC) রিপোর্ট ফাইল করতে বলা হয়েছিল। প্রীতির সিনিয়র ডাঃ সাইফ এই রিপোর্টটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রচার করেছিলেন এবং প্রীতিকে অপমানও করেছিলেন। এরপর প্রীতি তাকে এমন আচরণের কারণ জিজ্ঞাসা করে একটি ব্যক্তিগত বার্তা পাঠিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে, যদি তার কাজ সম্পর্কে কোনও সমস্যা হয় তবে তিনি এইচওডির (হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট) কাছে অভিযোগ করতে পারেন। ডাঃ সাইফের এমন আচরণ অব্যাহত থাকলে, প্রীতি বিষয়টি এইচওডি নাগার্জুনকে জানায়। আত্মহত্যার চেষ্টা করার একদিন আগে ডাঃ সাইফ প্রীতিকে তার সাথে ডিউটতে না যেতেও নির্দেশ দেন।”
এছাড়া, ডাঃ সাইফের সাথে ডাঃ প্রীতির ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক আছে কি না সেই তথ্যের অনুসন্ধানে ডাঃ সাইফের রিমান্ড রিপোর্ট এবং মূলধারার কোনো সংবাদমাধ্যমে এমন তথ্যের স্বপক্ষে কোনো প্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। সংবাদমাধ্যমগুলোতে ডাঃ সাইফকে প্রীতির সিনিয়র এবং ডাঃ প্রীতিকে জুনিয়র হিসেবে সম্বোধনের উল্লেখ পাওয়া যায়।
মূলত, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের কাকাতিয়া মেডিকেল কলেজের স্নাতকোত্তর বিভাগের শিক্ষার্থী প্রীতি আত্নহত্যার চেষ্টা করেন এবং পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আলোচিত এ ঘটনায় প্রীতির পরিবারের পক্ষ থেকে কলেজের সিনিয়দের প্রতি অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডাঃ সাইফ নামের একজনকে আটক করেছে পুলিশ এবং বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে। এছাড়া, ডাঃ সাইফের সাথে ডাঃ প্রীতির বিয়ের খবর এবং পরবর্তীতে ধর্মান্তরিত হওয়ার বিষয়টিও পুরোপুরি ভিত্তিহীনভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও সাম্প্রদায়িক ভিন্ন ভিন্ন ঘটনায় ভূয়া ও পুরোনো ছবি-তথ্য ব্যবহারে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে বিস্তারিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সুতরাং, ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের কাকাতিয়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ডাঃ প্রীতির মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে একই কলেজের ডাঃ সাইফের সাথে তার বিয়ের খবর এবং পরবর্তীতে ধর্মান্তরিত হওয়ার একটি সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- LatestLY: Dr Dharavathi Preethi Dies: Warangal Medico Succumbs at Hyderabad Hospital Five Days After Suicide Attempt Over Harassment by Seniors
- The Times of India: Dharavath Preethi buried in native Jangaon hamlet, Kin say Kakatiya Medical College doctors killed her
- The Hindu: Saif ‘maligned and humiliated’ Preethi, says remand report
- The Times of India: Dr Preethi suicide case: Caste slurs on WhatsApp to bolster police case