রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফিলিস্তিনে শহীদ বড় ভাইকে আহত ছোট ভাই বিদায় জানানোর ভিডিও শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং অন্তত ২০১৬ সাল থেকেই ভিডিওটি ইন্টারনেটে রয়েছে, যা পরবর্তীতে ইয়েমেনের দাবিতেও ছড়াতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ২০২০ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি Bitul atiq media নামের ফেসবুক পেজে আলোচিত ভিডিওটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। ছবিটির ক্যাপশনে ভিডিওটিকে ইয়েমেনের বলে উল্লেখ করা হয়।
Screenshot: Facebook
আমরা আরও অনুসন্ধান করে একই ক্যাপশনে ২০২০ সালে প্রচারিত এই ভিডিওটি নিয়ে আরও কিছু পোস্ট খুঁজে পাই। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
পরবর্তীতে, আরও অনুসন্ধান করে Aparat নামের ইরানের ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত আলোচিত ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Aparat
ভিডিওটির ক্যাপশনে থাকা Persian ভাষা ইংরেজিতে অনুবাদ করে জানা যায়, এটি এক ইয়েমেনি শহীদ ছেলেকে তার ভাইয়ের বিদায় জানানোর সময়ের ভিডিও।
তাছাড়া, আমরা আরও অনুসন্ধান করে তেহরানভিত্তিক বেসরকারি সংবাদমাধ্যম MASHREGH NEWS এর ওয়েবসাইটে ২০১৬ সালের ০৮ই মার্চ ‘Yemeni boy’s painful farewell to his martyred brother’ শীর্ষক শিরোনামে (অনূদিত) প্রকাশিত ভিডিওটি খুঁজে পাই। তবে সেখানে ভিডিওটি সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
Screenshot: MASHREGH NEWS
অর্থাৎ, এই ভিডিওটি অন্তত ২০১৬ সাল থেকেই ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছে।
মূলত, সম্প্রতি ফিলিস্তিনে শহীদ বড় ভাইকে আহত ছোট ভাই বিদায় জানাচ্ছে দাবিতে একটি ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এটির সাথে চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুরও কোনো সম্পর্ক নেই। অন্তত ২০১৬ সাল থেকেই ভিডিওটি ইন্টারনেটে রয়েছে। পূর্বের বিভিন্ন সময়েই এটিকে ইয়েমেনের ঘটনার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷
সুতরাং, অন্তত সাড়ে সাত বছরের পুরোনো এবং ভিন্ন ঘটনার একটি ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিনে শহীদ বড় ভাইকে আহত ছোট ভাই বিদায় জানানোর দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, “মোয়ে মোয়ে করা নিয়ে ঝগড়ার সূত্রপাত অতঃপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রেমিকাকে খুন করলো প্রেমিক” শীর্ষক শিরোনামে সময় টিভির ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত একটি ছবি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘মোয়ে মোয়ে করা নিয়ে ঝগড়ার সূত্রপাত অতঃপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রেমিকাকে খুন করলো প্রেমিক’ শীর্ষক তথ্য বা শিরোনামে মূলধারার গণমাধ্যম সময় টিভি কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি এবং সম্প্রতি এমন কোনো ঘটনাও ঘটেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে সময় টিভি’র ফটোকার্ডের ডিজাইন নকল করে উক্ত ভুয়া ফটোকার্ডটি তৈরি করে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে সময় টিভির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও সময় টিভির ওয়েবসাইটেও উক্ত দাবিতে প্রচারিত কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে আলোচিত সময় টিভির ফটোকার্ডে থাকা ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে অনলাইন গণমাধ্যম নিউজ বাংলা২৪ এ গতবছরের ৩১ ডিসেম্বর “ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে বিরোধের জেরে অটোচালক খুন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর মাগুরায় ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে বিরোধের জেরে জনাব আলী বিশ্বাস নামের এক অটোচালককে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। রাঘবদাইড় ইউনিয়নের পাকা-কাঞ্চনপুর গ্রামে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। ৫০ বছর বয়সী নিহত জনাব আলী বিশ্বাস পাকা-কাঞ্চনপুর গ্রামের গোলাম আকবর বিশ্বাসের ছেলে।
উক্ত প্রতিবেদনে থাকা ছবি এবং আলোচিত সময় টিভির ফটোকার্ডে থাকা ছবির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison: Rumor Scanner
এছাড়া, আলোচিত সময় টিভির ফটোকার্ডে প্রচারিত বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
মূলত, সম্প্রতি সার্বিয়ার সুরকার ও গায়িকা তেয়া দোরা গাওয়া ‘মোয়ে মোয়ে’ গানটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ ভাইরাল। এরই প্রেক্ষিতে সময় টিভির ফটোকার্ডের আদলে ‘মোয়ে মোয়ে করা নিয়ে ঝগড়ার পর প্রেমিকাকে খুন করেছে প্রেমিক’ শীর্ষক তথ্য সম্বলিত একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং সময় টিভিও এমন কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি। গতবছরের ভিন্ন একটি ঘটনার ছবি ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সময় টিভির ফটোকার্ডের আদলে তৈরি ভুয়া ফটোকার্ডে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও সময় টিভির ফটোকার্ডে ভুল তথ্য প্রচার করা হলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলো রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ‘মোয়ে মোয়ে’ করায় প্রেমিক কর্তৃক প্রেমিকাকে খুন করার তথ্যটি ভুয়া এবং সময় টিভির ফটোকার্ডের আদলে প্রচারিত ফটোকার্ডটিও বানোয়াট।
সম্প্রতি, “মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষায় শিক্ষকের বেতন ৫,০০০ আর মন্দিরভিত্তিক গনশিক্ষায় শিক্ষকের বেতন ১৪,৫০০ টাকা!” শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়াও প্রচারিত দাবির সাথে ও আলাদাভাবে ‘মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্প শিক্ষক নিয়োগ- ২০২৩’ শীর্ষক একটি চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ছবিও প্রচারিত হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের চলতি প্রকল্পে কেন্দ্র শিক্ষকদের বেতন ১৪,৫০০ টাকা হওয়ার বিষয়টি সঠিক নয় বরং তাদের বেতন ৫,০০০ টাকা এবং উক্ত পদের বেতন ১৪,৫০০ টাকা উল্লেখ করে প্রচারিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি বানোয়াট।
গুজবের সূত্রপাত
অনুসন্ধানে দেখা যায়, একটি কথিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেই মন্দিরভিত্তিক গণশিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষকদের বেতন ১৪,৫০০ টাকা শীর্ষক দাবিটির সূত্রপাত হয়েছে। ‘মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্প শিক্ষক নিয়োগ- ২০২৩’ শীর্ষক ফেসবুকে প্রকাশিত কথিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে মন্দিরভিত্তিক গণশিক্ষা প্রকল্পের শিক্ষকদের বেতন ১৪,৫০০ টাকা উল্লেখ করা হয়।
Screenshot from Facebook
আলোচিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি ছড়িয়ে পড়ার পর তা মসজিদভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের দৃষ্টিগোচর হলে তাদের সংশ্লিষ্ট ফেসবুক গ্রুপে মন্দির ভিত্তিক গণশিক্ষার শিক্ষকদের বেতন ১৪,৫০০ এবং মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষার শিক্ষকদের বেতন মাত্র ৫,০০০ টাকার বিষয়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়। ফলে পরবর্তীতে এই বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে ‘মন্দিরভিত্তিক শিক্ষকদের বেতন ১৪,৫০০ টাকা’ দাবিটি ছড়িয়ে পড়ে।
Screenshots from Facebook
মন্দিরভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের ভুয়া বিজ্ঞপ্তি
অনুসন্ধানে গত সেপ্টেম্বর মাসে ‘মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গনশিক্ষা প্রকল্প শিক্ষক নিয়োগ- ২০২৩’ শিরোনামের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রচার হতে দেখা যায়। যেটি চলতি মাসেও ফেসবুকে পোস্ট হয়েছে।
Screenshot from Facebook
‘মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গনশিক্ষা প্রকল্প শিক্ষক নিয়োগ- ২০২৩’ শীর্ষক শিক্ষক নিয়োগের এ বিজ্ঞপ্তিটির সত্যতা অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে ‘মন্দির ভিত্তিক শিক্ষা পঞ্চগড়’ এর ফেসবুক আইডির গত ৩০ সেপ্টেম্বরের পোস্টসহ বেশকিছু পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে চাকরির বিজ্ঞপ্তিটিকে ভুয়া বলে উল্লেখ করা হয়।
Screenshot from Facebook
পরবর্তীতে বিজ্ঞপ্তিটির সত্যতা জানতে চেয়ে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম ৬ষ্ঠ পর্যায় এর প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নিত্য প্রকাশ বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া নিশ্চিত করেন এবং উক্ত পদে শিক্ষকদের বেতন ১৪,৫০০ টাকা দাবিটি সঠিক নয় বলে জানান। পাশাপাশি জনাব নিত্য প্রকাশ বিশ্বাস উক্ত চাকরির বিজ্ঞপ্তি নিয়ে গত ১ অক্টোবর হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তির পিডিএফ পাঠান। হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটেও গত ১ অক্টোবর প্রকাশিত সতর্কীকরণ সে বিজ্ঞপ্তিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Warning Notice on the viral fake job circular By Hindu Trust
ভাইরাল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে দেওয়া এ সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এতদ্বারা সকলের উদ্দেশ্যে জানানো যাচ্ছে যে, একটি প্রতারক চক্র “মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পে” শিক্ষক নিয়োগ করা হবে মর্মে আনলাইনে নিম্নে বর্ণিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এ বিজ্ঞপ্তিটি অত্র প্রকল্পের নয়। মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম-৬ষ্ঠ পর্যায় শীর্ষক প্রকল্পে বর্তমানে শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে না। তাছাড়া বর্তমানে প্রকল্পের ৬ষ্ঠ পর্যায় চলমান। মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম ৯ম পর্যায় প্রকল্প নামে কোন প্রকল্প নেই। একটি কুচক্রী দল জনসাধারণের নিকট অর্থ আত্নসাতের লক্ষ্য এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এতদভিন্ন মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম-৬ষ্ঠ পর্যায় শীর্ষক প্রকল্পের সম্মানী মাসিক ৫,০০০/- (পাঁচ হাজার) টাকা। এ বিজ্ঞপ্তি থেকে সকলকে বিরত থাকা এবং কোন প্রকার আর্থিক লেনদেন না করার জন্য অনুরোধ করা হলো।”
এছাড়াও আলাদাভাবে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের বর্তমান ৬ষ্ঠ পর্যায় চলমান থাকার বিষয়টি এবং ভুয়া চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে থাকা ৯ম পর্যায় শীর্ষক প্রকল্পের অস্তিত্ব না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে রিউমর স্ক্যানার। একনেকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের একটি বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৪ জুন একনেক কর্তৃক “মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৬ষ্ঠ পর্যায়)” শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। সেখান থেকে প্রকল্পটির অনুমোদিত মেয়াদ ০১ জুলাই ২০২১ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত বলে নিশ্চিত হওয়া যায়।
‘মন্দিরভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম কিশোরগঞ্জ’ এর প্রকাশিত গত ফেব্রুয়ারির একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্র শিক্ষকের বেতন সর্বসাকুল্যে ৫,০০০ টাকা বলে উল্লেখ করা হয়।
Temple based teacher requirement notice, Kishoreganj
মূলত, মন্দিরভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমের কেন্দ্র শিক্ষকের বেতন ১৪,৫০০ টাকা উল্লেখ করে ‘মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্প শিক্ষক নিয়োগ- ২০২৩’ শিরোনামের একটি চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গত সেপ্টেম্বর থেকে ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে। এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষায় বেতন ৫,০০০ টাকা আর মন্দিরভিত্তিক গণশিক্ষায় বেতন ১৪,৫০০ টাকা শীর্ষক দাবি ছড়িয়ে পড়ে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত এ চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া এবং উক্ত পদে ১৪,৫০০ টাকা বেতন থাকার দাবিটি মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে, মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষকদের মতো মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষকদের বেতনও ৫,০০০ টাকাই।
সুতরাং, মন্দিরভিত্তিক শিক্ষা প্রকল্পে শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে প্রচারিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া এবং উক্ত পদের বেতন ১৪,৫০০ টাকা দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
Statement of the project director of temple-based children and mass education program.
সম্প্রতি, গাজা সীমান্তে ফিলিস্তিনের পতাকায় লুকিয়ে রাখা একটি বোমা বিস্ফোরণের একটিভিডিওকে সাম্প্রতিক ঘটনা দাবিতে দেশের কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
কী দাবি করা হচ্ছে?
চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশের একাধিক গণমাধ্যমের সংবাদে আলোচিত ভিডিওটির প্রসঙ্গ এসেছে। দাবি করা হচ্ছে, দখলদারদের ঘায়েল করতে হামাস যোদ্ধাদের নানা কৌশল হিসেবে সীমান্তজুড়ে পুঁতে রাখা বোমা, মাইন ও বিস্ফোরকের ফাঁদে কুপোকাত হচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। এমনই এক ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এতে দেখা যায়, সীমান্তের কাঁটাতারের কাছে পুঁতে রাখা হয়েছে ফিলিস্তিনের একটি পতাকা। যা দেখতে পেয়ে পতাকাটি ফেলে দিতে দখলদার এক সেনা এগিয়ে যায় সেটির দিকে। বেশ কিছু সময় পর্যবেক্ষণের পর সেটি তুলে নিয়ে সহকর্মীদের কাছে এগিয়ে যান তিনি। পরে লাঠিসহ পতাকাটি মাটিতে রাখার সাথেই ব্যাপক বিস্ফোরণ হয়।
গণমাধ্যমগুলোর দাবি, পতাকার স্ট্যান্ডটিই ছিল একটি আস্ত বোমা। অবশ্য সেখানে থাকা পাঁচ সেনাদের সবাই নিহত হয়েছেন কি না তা এখনও জানা যায়নি।
একই দাবিতে গণমাধ্যমসহ ফেসবুকের একাধিক ব্যবহারকারীর প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজা সীমান্তে ফিলিস্তিনের পতাকায় লুকানো বোমার বিস্ফোরণে ইসরায়েলি সৈন্য হতাহতের ঘটনাটি চলমান হামাস-ইসরায়েল সংঘাতের নয় বরং ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গাজা সীমান্তে বিস্ফোরণের ভিডিওকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
আলোচ্য ভিডিওটির কী ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, ইসরায়েল ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম Times of Israel এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর “Video emerges of February attack on soldiers along Gaza border” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
উক্ত প্রতিবেদনের সাথে সংযুক্ত গাজা সীমান্তে ফিলিস্তিনের পতাকায় লুকানো বোমা বিস্ফোরণের একটি ভিডিও দেখতে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় গাজা সীমান্তে ফিলিস্তিনের পতাকায় রাখা গুপ্ত বোমার বিস্ফোরণে ইসরায়েলি সৈন্য হতাহতের ঘটনা ঘটে। একই বছরের নভেম্বর মাসে লেবাননভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল ‘আল মায়াদ্বীন নেটওয়ার্কে’ ফেব্রুয়ারিতে ঘটা উক্ত বিস্ফোরণের ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ সম্প্রচারিত হয়।
উক্ত প্রতিবেদনে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর বরাত দিয়ে জানানো হয়, ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত বিস্ফোরণের ঘটনায় চার ইসরায়েলি সৈন্য আহত হয় যাদের মধ্যে দুজন সেনার অবস্থা ছিল গুরুতর।
পরবর্তীতে, টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনের সূত্র ধরে লেবাননের আল মায়াদ্বীন নেটওয়ার্কের ইউটিউব চ্যানেলে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার।
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর Al Mayadeen Channel – قناة الميادين ইউটিউব চ্যানেলে আপলোডকৃত ২৬ মিনিট ৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার।
উক্ত ভিডিও বিশ্লেষণ করে, ৮.৫০ মিনিট থেকে ১০.২ মিনিট অংশে আলোচ্য ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, আলোচ্য ভিডিওটি ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে গাজা সীমান্তে বিস্ফোরণের দৃশ্য।
মূলত, ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি গাজা সীমান্তে ফিলিস্তিনের পতাকায় রাখা গুপ্ত বোমার বিস্ফোরণে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর চার সদস্য আহত হন। একই বছরের নভেম্বরে উক্ত ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ লেবাননভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল মায়াদ্বীন চ্যানেলে সম্প্রচার করা হয়। উক্ত ভিডিওকেই সম্প্রতি হামাস-ইসরায়েলের চলমান সংঘাতে গাজা সীমান্তের ভিডিও ফুটেজ দাবিতে সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও হামাস-ইসরায়েলের সাম্প্রতিক যুদ্ধের ঘটনায় হামাসের বিশ্ব শাসন নিয়ে বাহিনীটির কমান্ডারের বক্তব্যের পুরোনো ভিডিও প্রচার করা হলে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, গাজা সীমান্তে ফিলিস্তিনের পতাকায় রাখা গুপ্ত বোমা বিস্ফোরণের একটি ভিডিওকে চলমান হামাস-ইসরায়েল সংঘাতের ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজায় অবস্থিত সেইন্ট পরফাইরিয়স চার্চ ইজরায়েলি হামলায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়নি বরং প্রাচীন খ্রিস্টান অর্থোডক্স এই চার্চটি অক্ষত আছে বলে চার্চের ফেসবুক পেজ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে চার্চ কর্তৃপক্ষ।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইসরায়েলি আকাশ হামলায় প্রাচীন অর্থোডক্স চার্চটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার যে খবর প্রচার করা হচ্ছে তা সঠিক নয়। চার্চটি এখনও পর্যন্ত অক্ষত রয়েছে।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গাজায় অবস্থিত মধ্যযুগীও চার্চটির কর্তৃপক্ষ AP কে নিশ্চিত করেছে যে, চার্চটি এখনও অক্ষত ও নিরাপদ রয়েছে। সেই সাথে চার্চের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার খবরও নিশ্চিত করেছে চার্চ কর্তৃপক্ষ।
উক্ত পোস্ট থেকে জানা যায়, সেন্ট পরফেরিয়াস চার্চটি অক্ষত রয়েছে এবং নিজেদের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। চার্চটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার যে খবর প্রচারিত হচ্ছে সেটি মিথ্যা বলে উক্ত ফেসবুক পোস্টে নিশ্চিত করেছে চার্চ কর্তৃপক্ষ।
মূলত, সম্প্রতি হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে হামাসের ছোড়া রকেটের পাল্টা জবাবে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় রকেট হামলা চালায়। পরবর্তীতে, গাজায় ইসরায়েলি রকেট হামলায় পৃথিবীর প্রাচীন খ্রিস্টান অর্থোডক্স চার্চ সেন্ট পরফেরিয়স গির্জা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, গাজায় অবস্থিত প্রাচীন চার্চটি অক্ষত রয়েছে এবং নিজেদের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে নিশ্চিত করেছে চার্চ কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস আকাশপথে ইসরায়েলে রকেট হামলা চালায়। পরবর্তীতে হামাসের আক্রমণের পাল্টা জবাব হিসেবে ইসরায়েলেও অবরুদ্ধ গাজা তীরে রকেট হামলা চালায়।
উল্লেখ্য, পূর্বেও হামাস-ইসরায়েল সাম্প্রতিক যুদ্ধকে জড়িয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়লে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ইসরায়েলি হামলায় গাজার প্রাচীন গির্জা সেন্ট পরফেরিয়স চার্চ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘এই বিশ্বকাপে যখন টিম ইন্ডিয়া পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ জিতেছিল, তখন একজন পাকিস্তানি ভক্ত তার টিভি ভেঙে ফেলেন’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতে চলমান ওয়ান ডে বিশ্বকাপ ২০২৩ এর ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের জয়ে পাকিস্তানি ভক্তের টিভি ভাঙার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পুরানো ও ভিন্ন ঘটনার। প্রকৃতপক্ষে, ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপে সৌদি আরবের সাথে ২-১ গোলে জেতার পরও বাদ পড়ে মেক্সিকো ফুটবল দল। সে সময় একজন উত্তেজিত মেক্সিকান সমর্থকের টিভি ভেঙে ফেলার ভাইরাল ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওর শুরু থেকে ১৫ সেকেন্ড পর্যন্ত আলোচিত ভিডিওটির সাথে হুবহু মিল রয়েছে।
Video Comparison by Rumor Scanner
ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, সৌদি আরবের বিপক্ষে ২-১ গোলে জয়ের পরেও বিশ্বকাপের রাউন্ড অফ সিক্সটিনে মেক্সিকোর যেতে না পারার কারণে মেক্সিকান এক ভক্ত তার টিভি ভেঙে ফেলছেন।
এই প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, আগের দুই ম্যাচের একটিতে পোল্যান্ডের সাথে ০-০ তে ড্র এবং আর্জেন্টিনার সাথে ২-০ তে হারের পর জটিল সমীকরণ নিয়ে সৌদি আরবের বিপরীতে এক নাটকীয় ম্যাচে মাঠে নামে মেক্সিকো দল। হেনরি মার্টিন এবং লুইস শ্যাভেজের দুর্দান্ত দুই গোলের পর নক আউট পর্বে উঠতে আর মাত্র একটি গোলের দরকার ছিল মেক্সিকোর। কিন্তু ম্যাচের শেষ মুহূর্তে সৌদি আরবের গোলে গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়তে হয় দলটিকে। যার প্রেক্ষিতে এই ভক্ত তার টিভি ভেঙে ফেলেন।
মূলত, গত ১৪ অক্টোবর চলমান ওয়ান ডে বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে মাঠে নামে পাকিস্তান ক্রিকেট দল। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর এই দ্বৈরথে ৩০ ওভারেই পাকিস্তানের দেওয়া ১৯২ রানের টার্গেট ভেদ করে ৭ উইকেটে জয় লাভ করে স্বাগতিক দল ভারত। এরই প্রেক্ষিতে পাকিস্তানি ভক্তের টিভি ভাঙার দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাথে পাকিস্তানের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে, ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপে সৌদি আরবের বিপক্ষে ২-১ গোলে জয় লাভ করার পরও মেক্সিকো রাউন্ড অফ সিক্সটিনে প্রবেশ করতে না পারায় দলটির উত্তেজিত এক ভক্ত তার টিভি সেটটি ভেঙে ফেলেন।
সুতরাং, ২০২২ সালে মেক্সিকান ভক্তের টিভি ভাঙার পুরোনো একটি ভিডিওকে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের জয়ে পাকিস্তানি ভক্তের টিভি ভাঙার ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, ফিলিস্তিনে ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো নিয়ে একাধিক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে দুইটি ছবি প্রচার করা হচ্ছে।
যা দাবি করা হচ্ছে
দাবি ০১
ফিলিস্তিনের জন্য বিশ মিলিয়ন ডলারের জরুরী ত্রাণ সহায়তা ঘোষণা করেছেন আরব আমিরাতের আমির মুহাম্মদ বিন যায়েদ আল নাহিয়ান। মিশরের ত্রাণবাহি গাড়িগুলো সীমান্তে পৌঁছে গেছে। তুরস্কে বৃহদাকারে ত্রাণ সংগ্রহ চলমান।
ইজরায়েল হুমকি দিয়েছে, ত্রাণ নিয়ে যদি মিশরের কোন ট্রাক গাজায় প্রবেশ তাহলে তাতে বোমা নিক্ষেপ করা হবে। হুমকি উপেক্ষা করেই মিশরের ট্রাককে ত্রাণ নিয়ে গাজা সীমান্ত অতিক্রম করতে দেখা গেছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবি দুটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ২০২১ সালের মে মাসে মিশর থেকে গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ পাঠানোর দুইটি ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছ।
দাবি যাচাই ০১
ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা ‘Reuters’ এ ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সংযুক্ত একটি ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison: Rumor Scanner
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের মে মাসে মিশরের লং লাইভ তহবিল থেকে পাঠানো ত্রাণবাহী ট্রাক মিশর এবং গাজা স্ট্রিপের মধ্যে রাফাহ বর্ডার অতিক্রম করছিলো।
সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা Khaleej Times এর ওয়েবসাইটে গত ১০ অক্টোবর “UAE President orders $20 million aid to Palestinian people” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মহামান্য রাষ্ট্রপতি শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মানবিক সহায়তা প্রদান করেছেন।
অর্থাৎ, ফিলিস্তিনের জন্য আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ বিন যায়েদ আল নাহিয়ানের বিশ মিলিয়ন ডলারের জরুরী ত্রাণ সহায়তা ঘোষণা করার দাবিটি সত্য।
দাবি যাচাই ০২
উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে মিশর ভিত্তিক গণমাধ্যম ‘The Egyptian Gazette’ এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison: Rumor Scanner
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ২২ মে মাসে গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের জন্য ১৩০ টি ত্রাণ বোঝাই ট্রাক পাঠিয়েছে মিশর।
মিশর গাজায় ত্রাণ পাঠাবে কিনা এমন তথ্যের অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘Al Jazeera’ এর ওয়েবসাইটে গত ১২ অক্টোবর “Egypt says Israel seeks to empty Gaza, rejects corridors for civilians” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ফিলিস্তিন গাজা স্ট্রিপে মানবিক সহায়তা বা ত্রাণ পাঠানোর জন্য মিশর যুক্তরাষ্ট্র সহ অন্যান্য কয়েকটি দেশের সাথে আলোচনা করেছে।
মিশর গাজায় ত্রাণ পাঠালে ইসরায়েল বোমা হামলা করবে এমন দাবির অনুসন্ধানে তুরষ্ক ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা Anadolu Agency এর ওয়েবসাইটে গত ১০ অক্টোবর “Israel threatens Egypt on Gaza aid delivery” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইসরায়েল মিশরকে হুমকি দিয়েছে যে তারা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে চলমান ইসরায়েলি বিমান হামলার মধ্যে গাজা উপত্যকায় যে কোনও ত্রাণবাহী গাড়িতে বোমা ফেলবে।
অর্থাৎ, ফিলিস্তিনের জজ্য মিশরের ত্রান পাঠানো এবং মিশর গাজায় ত্রাণ পাঠালে ইসরায়েল বোমা হামলা করবে এই দাবিটিও সত্য।
মূলত, ২০২১ সালের মে মাসে ফিলিস্তিনকে মানবিক সাহায্যের জন্য মিশর গাজা উপত্যকায় ১৩০ ট্রাক ত্রাণ পাঠায়। সেই সময় এই ঘটনা নিয়ে মিশরের স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়। তবে সম্প্রতি ফিলিস্তিনের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতি শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মানবিক সহায়তার ঘোষণা দেওয়া এবং মিশর ফিলিস্তিনকে সাহায্য করলে ইসরায়েল ত্রাণবাহী গাড়িতে বোমা ফেলবে এমন তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ২০২১ সালের মে মাসে ফিলিস্তিনকে মানবিক সাহায্যের জন্য মিশর গাজা উপত্যকায় ১৩০ ট্রাক ত্রাণ পাঠানোর ছবি প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা করলে ফিলিস্তিন- ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়৷
উল্লেখ্য, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷
সুতরাং, ফিলিস্তিনে আরব আমিরাতের ত্রাণ পাঠানোর ঘোষণা এবং মিশর ফিলিস্তিনকে সাহায্য করলে ত্রাণবাহী গাড়িতে ইসরায়েল বোমা ফেলার হুমকির ঘটনায় ফেসবুকে পুরোনো ছবি প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে উদ্ধৃত করে “বাংলাদেশের জনগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় আর জনগণ যা চায় আমরাও তা চাই।” শীর্ষক একটি মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের জনগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় আর জনগণ যা চায় আমরাও তা চাই শীর্ষক কোনো মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস করেননি বরং বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের করা একটি মন্তব্যকে বিকৃত করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নামে ছড়ানো মন্তব্যটির সূত্রের খোঁজ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তবে অনুসন্ধানে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পিটার হাসের এমন মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ওয়েবসাইটেও পিটার হাসের এমন মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক যুগান্তর এর ওয়েবসাইটে সর্বশেষ গত ৩০ সেপ্টেম্বর “সম্পাদক পরিষদের চিঠির জবাবে যা বললেন পিটার হাস” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে পিটার হাসের বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ওপর মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগ নিয়ে দেওয়া মন্তব্যের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম একটি চিঠি দিয়েছিল। সেই চিঠির জবাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দৃঢ়ভাবে রক্ষা করার জন্য আমেরিকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
পিটার হাস আরো বলেন, ‘এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ যেকোনো সরকারের সমালোচনামূলক মতামত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, আমরা আমাদের নীতির যেকোনো উপাদানে জনসাধারণের প্রতিফলনকে স্বাগত জানাই’।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৩ অক্টোবর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির আওতায় গণমাধ্যমও আসতে পারে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের এ মন্তব্য সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলাকে প্রশ্ন করা হলে এর জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনভাবে তাদের নেতা নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করে ভিসা নীতি ঘোষণা করে হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ যা চায় যুক্তরাষ্ট্রও তা চায়, তা হলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, যা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সরকার, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যম সবাই আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার পক্ষে তাদের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, যেমনটি আমরাও চাই।’
তবে, পিটাস হাস কিংবা ম্যাথু মিলার কেউই বাংলাদেশের জনগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় এমন কোনো মন্তব্য করেননি।
মূলত, গত ৩ অক্টোবর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির আওতায় গণমাধ্যমও আসতে পারে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের এ মন্তব্য সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারকে প্রশ্ন করা হলে এর জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনভাবে তাদের নেতা নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করে ভিসা নীতি ঘোষণা করে হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ যা চায় যুক্তরাষ্ট্রও তা চায়, তা হলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, যা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশের জনগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় আর জনগণ যা চায় আমরাও তা চাই।” শীর্ষক একটি মন্তব্য ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস করেছেন দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, পিটার হাস এমন কোনো মন্তব্য করেননি। প্রকৃতপক্ষে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের “বাংলাদেশের জনগণ যা চায় যুক্তরাষ্ট্রও তা চায়, তা হলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, যা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে।” শীর্ষক মন্তব্যকে বিকৃত করে তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা যুক্ত করে সেটিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বক্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে বাংলাদেশে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে। পরবর্তীতে এই ব্যবস্থা আর পূর্ণবহাল করা হয়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও পিটার হাসের নামে ইন্টারনেটে একাধিক ভুল তথ্য প্রচার করা হলে সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন দুইটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে:
সুতরাং, বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশের জনগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় আর জনগণ যা চায় আমরাও তা চাই শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
সম্প্রতি, “ফিলিস্তিনে বোমা হামলা বন্ধ না হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করে দেবে বলে হুমকি দিয়েছে কাতার।” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সম্বলিত তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফিলিস্তিনে বোমা হামলা বন্ধ না হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারে কাতার কোনো হুমকি দেয়নি। বরং কাতারের আমিরের ২০১৭ সালে দেওয়া পুরানো একটি বক্তব্যের ভিডিওকে উক্ত দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Aljazeera Mubasher এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৭ সালের ১৪ মে ‘أمير قطر: قضية فلسطين هي قضية شعب اقتلع من أرضه وشرد من وطنه’ (Emir of Qatar: The Palestinian issue is the issue of a people uprooted from their land and displaced from their homeland) শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটির শিরোনাম এবং বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, সেই সময় কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি ১৭তম দোহা ফোরামে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের বিষয়ে কথা বলছিলেন। এসময় তিনি ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
পরবর্তীতে, দোহা ফোরামের ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৭ সালের ১৮ মে তারিখে প্রকাশিত ভিডিও থেকেও একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ ২০১৭ সালে কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত ১৭ তম দোহা সম্মেলনে দেওয়া কাতারের আমিরের একটি বক্তব্যকেই তার সাম্প্রতিক বক্তব্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
এছাড়া, ফিলিস্তিনে বোমা হামলা না বন্ধ করলে কাতার বিভিন্ন দেশে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে এমন দাবিতে কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোনো ধরণের তথ্য বা সংবাদ প্রতিবেদনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, কাতার ভিত্তিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘Doha News’ গত ১২ অক্টোবর উক্ত দাবিতে প্রচারিত তথ্যটিকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে একটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
মূলত, ২০১৭ সালে দোহা ফোরামের ১৭তম অধিবেশনে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শরণার্থীদের বিষয়ে কথা বলার পাশাপাশি ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সেই সময় উক্ত ঘটনা নিয়ে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। তবে সম্প্রতি সেই অধিবেশনে দেওয়া তার একটি বক্তব্যের খন্ডিত অংশকেই ‘ফিলিস্তিনে বোমা হামলা বন্ধ না হলে কাতার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করে দেবে বলে হুমকি দিয়েছে’ শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা করলে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়৷ এ পর্যন্ত ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের সংঘাতের কারণে গাজায় ২৩২৯ জন মারা গেছেন এবং ৯০৪২ জন আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
উল্লেখ্য, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷
সুতরাং, ফিলিস্তিনে বোমা হামলা বন্ধ না হলে কাতার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে দাবিতে কাতারের আমিরের ২০১৭ সালের পুরোনো একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘মানুষ যখন হাঁচে তখন সেই মুহূর্তের জন্য তার শারীরিক কার্যকরীতা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায় এমনকী তার হৃৎস্পন্দনটিও’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, হাঁচি দেওয়ার সময় মানুষের হৃৎস্পন্দন কিংবা শারীরিক কার্যকারিতা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো কোনো ঘটনাই ঘটে না। প্রকৃতপক্ষে, হাঁচি দেওয়ার মুহূর্তে কিছু সময়ের জন্যে মানুষের হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যায়। যার কারণে কয়েক মুহূর্তের জন্য হৃৎযন্ত্রের নিয়মিত ছন্দ ব্যাহত হয়। তবে তার জন্যে হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ কখনো বন্ধ হয় না।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, হাঁচি দেওয়ার সময় হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়ার দাবিটি একটি জনশ্রুতি। কারণ, মানুষের হাঁচি দেওয়ার সময় তার যে শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটে তা দ্বারা মানুষের হৃস্পন্দন নিয়ন্ত্রণকারী বৈদ্যুতিক সংকেতগুলো প্রভাবিত হয় না। তবে এ সময় হৃৎযন্ত্রের পুনরায় নিয়মিত ছন্দে ফেরার ক্ষেত্রে কিছুক্ষণ বিলম্ব হতে পারে।
Screenshot: Healthline
উক্ত প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, মানুষের শরীরে ভ্যাগাস স্নায়ু নামক একটি স্নায়ু রয়েছে। যেটি আমাদের মস্তিষ্ক থেকে বৃহৎ অন্ত্র পর্যন্ত বিস্তৃত। যার প্রধান কাজগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে হৃৎস্পন্দন হ্রাস করা। যখন আমরা হাঁচি দেই, তখন এটি তাৎক্ষণিকভাবে হৃৎস্পন্দন কমিয়ে দেয়। তাই হাঁচি দেওয়ার সময় রক্তচাপ বৃদ্ধি ও হৃৎস্পন্দন হ্রাসের কারণে হৃৎযন্ত্রের নিয়মিত ছন্দ কয়েক মুহূর্তের জন্য ব্যাহত হয়।
Screenshot: Healthline
এছাড়াও প্রতিবেদনটি থেকে Sneeze Syncope নামক একটি বিরল পরিস্থিতির কথা জানা যায়। যে সময় হাঁচির ফলে ঘটা হৃৎস্পন্দন হ্রাস অথবা রক্তচাপ বৃদ্ধির কারণে ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যান। সর্বশেষ ২০১৪ সালে এমন ঘটনার তথ্য পাওয়া যায় বলেও উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়।
Screenshot: Healthline
পরবর্তীতে 11Alive নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের ২২ মে Does you heart stop when you sneeze? শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Youtube
উক্ত ভিডিওটিতে ডাক্তার সুজাতা রেড্ডি নামের একজন ডাক্তার জানান, হাঁচি দেওয়ার সময় মানুষের হৃৎযন্ত্র বন্ধ হয়ে যায় না। হাঁচির কারণে শরীরে বাতাসের যে উর্ধ্বমুখী চাপ সৃষ্টি হয়, তার ফলে কয়েক মুহূর্তের জন্যে হৃৎস্পন্দন কমে যায়। সেটিও কয়েক মিলি সেকেন্ডের জন্যে হয়ে থাকে। তার মানে এই নয় যে, হাঁচির জন্যে হৃৎযন্ত্রের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ বন্ধ হয়ে যাবে।
অর্থাৎ, হাঁচি দেওয়ার মুহূর্তে মানুষের হৃৎস্পন্দন কিংবা শারীরিক কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে যায় না।
মূলত, হাঁচি দেওয়াকে কেন্দ্র করে দেশে বিদেশে নানা ধরনের জনশ্রুতি বা দাবির প্রচলন রয়েছে। এমনই একটি দাবি হচ্ছে, ‘মানুষ যখন হাঁচে তখন সেই মুহূর্তের জন্য তার শারীরিক কার্যকরীতা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায় এমনকী তার হৃৎস্পন্দনটিও’। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, এটি একটি জনশ্রুতি। প্রকৃতপক্ষে ভ্যাগাস নামক একটি স্নায়ুর কারণে হাঁচি দেওয়ার মুহূর্তে সাময়িক সময়ের জন্যে মানুষের হৃৎস্পন্দন হ্রাস পায়। যার কারণে হৃৎযন্ত্রের নিয়মিত ছন্দ কয়েক মুহূর্তের জন্য ব্যাহত হয়। তবে মানুষের হৃৎযন্ত্রের কার্যকলাপ তখনও সচল থাকে।
সুতরাং, মানুষের হাঁচি দেওয়ার মুহূর্তে তার শারীরিক কার্যকারিতা ও হৃৎস্পন্দন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।