সম্প্রতি, সিলেটে জৈন্তাপুর-গোয়াইনহাট এলাকায় ১০ নম্বর কূপে তেলের ওখনির সন্ধান মিলেছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। এটি বাংলাদেশে প্রথম তেলের খনির সন্ধানের ঘটনা দাবি করেবেশ কয়েকটি গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করে। পরবর্তীতে একই দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে।
উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন জুম বাংলা, বাংলা ইনসাইডার, বার্তা বাজার, বাংলাদেশ মোমেন্টস্, দৈনিক করতোয়া, আজকের দর্পণ, বাহান্ন নিউজ এবং দ্য রিপোর্ট.লাইভ।
এছাড়া মূলধারার গণমাধ্যম কালবেলা উক্ত দাবিতে সংবাদ প্রকাশ করলেও পরবর্তীতে সংবাদটি সংশোধন করে নেয়।
ফেসবুকে গণমাধ্যমের পেজসহ অন্যান্য অ্যাকাউন্ট হতে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি সিলেটে জৈন্তাপুর-গোয়াইনহাট এলাকায় ১০ নম্বর কূপে জ্বালানি তেলের সন্ধানের ঘটনাটি বাংলাদেশের প্রথম জ্বালানি তেলের খনি পাওয়ার ঘটনা নয় বরং এর আগে ১৯৮৬ সালে দেশে প্রথম সিলেটের হরিপুরে জ্বালানি তেলের খনির সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল।
আলোচিত দাবির বিষয়ে সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে রিউমর স্ক্যানার টিম সিলেটে তেলের খনি সন্ধান পাওয়ার বিষয়ে গত রোববার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের করা প্রেস ব্রিফিংয়ের লাইভ ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে।
৮ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের লাইভ ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ৩ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এর আগে ১৯৮৬ সালে দেশে প্রথম তেলের সন্ধান পাওয়ার কথা বলছেন। তিনি বলেন, এর আগে তেলের উপস্থিতি ১৯৮৬ সালে আমরা পেয়েছিলাম হরিপুরে। সেটা সাসটেইন করেছিল পাঁচ বছর।
পরবর্তীতে, এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ দিলে গত ১০ ডিসেম্বর বিবিসি বাংলা এর ওয়েবসাইটে “সিলেটে তেলের সন্ধান, কতটা সম্ভাবনাময়?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে ৩৭ বছর পর আবারও ভূগর্ভে তেলের সন্ধান মিলেছে। সিলেটে একটি গ্যাসক্ষেত্রে কূপ খননের সময় সেখান তেল পাওয়া যায়।
এছাড়া, একই দিনে দৈনিক প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে “সিলেটের গ্যাসক্ষেত্রে তেলের সন্ধান” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৯৮৬ সালে দেশে প্রথম তেলের সন্ধান পাওয়া যায় হরিপুরে। এটি পাঁচ বছর স্থায়ী হয়েছিল। ওই সময় এপিআই গ্র্যাভিটি ২৭ ডিগ্রি।
এছাড়া, ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি বণিক বার্তা’র ওয়েবসাইটে “গ্যাস মিলেছে, তেল পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি বাপেক্স” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বণিক বার্তার প্রতিবেদনটি প্রকাশ অবধি হরিপুরই ছিল দেশের একমাত্র অঞ্চল, যেখানে তেলের সন্ধান মিলেছে। ১৯৮৬ সালে হরিপুর গ্যাস ক্ষেত্রের ৭ নম্বর কূপ খনন করা হয়। ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর কূপটিতে তেল পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, সম্প্রতি সিলেট পাওয়া তেলের খনিটি দেশের প্রথম নয়। এর আগে ১৯৮৬ সালে সিলেটের হরিপুরে আরেকটি তেল খনির সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল।
মূলত, গত ১০ ডিসেম্বর সিলেটের জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট এলাকায় ১০ নম্বর কূপ খনন করে প্রথম স্তরে তেলের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। পরবর্তীতে কতিপয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটিই দেশে সন্ধান পাওয়া প্রথম তেলের খনির বলে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এটি দেশে সন্ধান পাওয়া প্রথম তেলের খনি নয়। প্রকৃতপক্ষে ১৯৮৬ সালে সিলেটের হরিপুরে দেশের প্রথম তেলের খনির সন্ধান পায় বাংলাদেশ তেল গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা)।
সুতরাং, ১৯৮৬ সালে সিলেটের হরিপুরে দেশের প্রথম তেলের খনি পাওয়া গেলেও সম্প্রতি সিলেটের জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট এলাকায় সন্ধান পাওয়া তেলের খনিকে দেশের প্রথম সন্ধান পাওয়া তেলের খনি বলে দাবি করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Ministry of Power, Energy & Mineral Resources, Bangladesh Facebook Live
- BBC Bangla- সিলেটে তেলের সন্ধান, কতটা সম্ভাবনাময়?
- Prothom Alo- সিলেটের গ্যাসক্ষেত্রে তেলের সন্ধান
- BBC Bangla- তেল পাওয়া গেছে দুটি গ্যাসক্ষেত্রে
- Bonik Barta- গ্যাস মিলেছে, তেল পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি বাপেক্স
- Rumor Scanner’s Own Analysis