সম্প্রতি ‘ইনিই সেই বেলা বোস। যে বেলাকে নিয়ে গান ” চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো!! পিছনে অঞ্জন দত্ত’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, অঞ্জন দত্তের গানের চরিত্র বেলা বোস দাবিতে প্রচারিত ছবিতে বিদ্যমান নারীটি বেলা বোস নয় বরং ছবির নারীটি তার স্ত্রী ছন্দা দত্ত। প্রকৃতপক্ষে বেলা বোস গানের বেলা চরিত্রটি ছিল কাল্পনিক।
ছবির নারীটি অঞ্জন দত্তের স্ত্রী ছন্দা দত্ত
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম Times of India তে ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ‘Chanda to usher in spring with Burmese Delicacies‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বেলা বোস দাবিতে প্রচারিত নারীটির ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Times of India
প্রতিবেদনটিতে নারীটির পরিচয় সম্পর্কে বলা হয়, ছবির নারীটি ছন্দা দত্ত। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা এবং অঞ্জন দত্তের স্ত্রী।
পাশাপাশি বাংলাদেশের মূলধারার জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ২৭ মার্চ ‘যা হতে চেয়েছি, পারিনি: অঞ্জন দত্ত‘ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদনেও বেলা বোস দাবিতে প্রচারিত নারীটিকে অঞ্জন দত্তের স্ত্রী ছন্দা দত্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
Screenshot: Daily Prothom Alo
এছাড়া প্রথম আলোর এই প্রতিবেদনটিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালে অঞ্জন দত্ত তাঁকে নিয়ে লেখা বই ‘অঞ্জনযাত্রা’র মোড়ক উন্মোচন করতে ঢাকায় এসেছিলেন। এসময় তিনি তার স্ত্রী ছন্দা দত্তকেও সঙ্গে নিয়ে এসেছেন।
Screenshot: Daily Prothom Alo
বেলা বোস কে ছিলেন?
অঞ্জন দত্তের বিখ্যাত ‘চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা সত্যি’ গানের চরিত্র বেলা বোসের পরিচয় নিয়ে অনুসন্ধানে ভারতীয় গণমাধ্যম Hindustan Times এর বাংলা ভার্সনে ২০২১ সালের ৩০ জুলাই ‘বেলা বোসকে এবার সিনেমায় আনছেন অঞ্জন!‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Hindustan Times
প্রতিবেদনটিতে অঞ্জন দত্তকে উদ্ধৃত করে এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয় যে, অঞ্জন দত্ত কাউকে ভেবে বা কারো প্রেমে পড়ে বেলা বোস গানটি লিখেননি। তিনি কেবল দুইটি মানুষের প্রেমের কথা ভেবেই এই গান তৈরি করেছিলেন।
Screenshot: Hindustan Times
এছাড়া গানে ব্যবহৃত ২৪৪১১৩৯ টেলিফোন নাম্বারটি প্রসঙ্গে অঞ্জন দত্ত বলেন, ২৪৪১১৩৯ নম্বরটা এক খবরের কাগজের অফিসের নম্বর ছিল। সেই কাগজের এডিটর রোজ এত ফোন পেতে লাগলেন বেলাকে একটিবার ডেকে দেওয়ার জন্য যে বাধ্য হয়ে রীতিমতো বিরক্ত হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা।
পাশাপাশি বাংলাদেশের মূলধারার অনলাইন পোর্টাল Dhaka Tribune এ ২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি ‘Story of Bela, Ranjana and Marian revealed‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Dhaka Tribune
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সেসময় ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের একটি পূণর্মিলনী অনুষ্ঠানে এসেছিলেন অঞ্জন দত্ত। সেখানে গানের পাশাপাশি দর্শকদের সঙ্গে ২০ মিনিটের একটি প্রশ্নোত্তর পর্বেও অংশগ্রহণ করেন অঞ্জন দত্ত।
এই প্রশ্নোত্তর পর্বে বেলা বোস কে এমন প্রশ্নের উত্তরে অঞ্জন দত্ত বলেন, বেলা বোসকে তিনি চিনেন না। এটি একটি কাল্পনিক চরিত্র এবং ২৪৪১১৩৯ নম্বরটি একটি সংবাদপত্র সম্পাদকের ছিল। যিনি অঞ্জন দত্তের বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত করেছিলেন।
Screenshot: Dhaka Tribune
প্রশ্নের উত্তরে অঞ্জন দত্ত আরও বলেন, তিনি এমন অনেক পুরুষের সাথে দেখা করেছেন, যারা গানে বেলার প্রেমিকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, যে প্রেমিক বারবার বেলাকে বলেছিল যে, সে চাকরি পেয়েছে এবং বেলা তাকে ত্যাগ করবে না।
তবে এই প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, অঞ্জন দত্তের আরেকটি জনপ্রিয় গান মেরী এ্যানের নারী চরিত্র ‘মেরী এ্যান’ ছিলেন বাস্তব চরিত্র। তিনি ছিলেন অঞ্জন দত্তের চতুর্থ প্রেম। অঞ্জন দত্ত যখন নবম শ্রেণির ছাত্র, তখন তিনি তার প্রেমে পড়েছিলেন।
Screenshot: Dhaka Tribune
এছাড়া বাংলাদেশের আরেকটি মূলধারার অনলাইন পোর্টাল Dhaka Times এ ২০২১ সালের ৩ জুন ‘‘বেলা বোস’ গানের জন্য মামলা খেয়েছিলেন অঞ্জন দত্ত, জানুন কারণ‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বেলা বোস বলে অঞ্জন দত্তের জীবনে কখনো কেউ ছিলেন না। কেবল কল্পনা শক্তি দিয়ে তৈরি হয়েছিল অনবদ্য এই গানের কথা এবং সুর। তবে গানে ব্যবহৃত ওই সাত সংখ্যার নম্বরটি বাস্তবেই ছিল। এটি ‘দৈনিক বিশ্বামিত্র’ নামে এক হিন্দি সংবাদপত্রের সম্পাদকের বাড়ির ফোন নম্বর ছিল। এ প্রসঙ্গে অঞ্জন দত্ত জানিয়েছিলেন, ‘গানটি লেখার জন্য দুর্ভাগ্যবশত ওই সম্পাদক আমার নামে মামলা করেন। এই অভিযোগে, আমি তার টেলিফোন নম্বর ব্যবহার করেছি গানে।
Screenshot: Dhaka Times
অর্থাৎ বেলা বোস গানের বেলা চরিত্রটি ছিল একটি কাল্পনিক চরিত্র।
মূলত, ১৯৯৪ সালে প্রকাশ হয়েছিল বাংলা গানের জনপ্রিয় গায়ক অঞ্জন দত্তের জনপ্রিয় গান ‘চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা সত্যি’। এই গানে তিনি বেলা নামে যে চরিত্রটিকে তুলে ধরেছিলেন তা কাল্পনিক চরিত্রটি ছিল বলে অঞ্জন দত্ত নিজেই বিভিন্ন সময়ে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন। এছাড়া তার এসব সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, বেলা বোসের নাম্বার হিসেবে গানে ব্যবহৃত টেলিফোন নাম্বারটি ছিল একটি সংবাদপত্রের সম্পাদকের। যা তিনি কাকতালীয়ভাবে ব্যবহার করেছিলেন এবং এজন্য তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল। তবে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই গানের বেলা বোসের ছবি দাবিতে একটি ছবি প্রচার করা হচ্ছে। এ নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ছবির নারীটি বেলা বোস নন, এটি প্রকৃতপক্ষে অঞ্জন দত্তের স্ত্রী ছন্দা দত্ত।
সুতরাং, অঞ্জন দত্তের গানের চরিত্র বেলা বোস উল্লেখ করে প্রচারিত ছবিতে বিদ্যমান নারীটির নাম বেলা বোস দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, কলম্বিয়ান সংগীত শিল্পী সাকিরার ওয়াকা ওয়াকা গানের লিরিক, “Some inner inner air air, waka waka air air. zangalewa this time for Africa.” শীর্ষক দাবিতে কিছু পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাকিরার ওয়াকা ওয়াকা গানের লিরিক, “Some inner inner air air, waka waka air air. zangalewa this time for Africa.” নয় বরং গানটির আসল লিরিক হলো, Tsamina mina, eh eh Waka waka, eh eh Tsamina mina zangalewa This time for Africa।”
কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, সাকিরার অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ‘Shakira’ তে গত ২০১০ সালের ৫ জুন “Shakira – Waka Waka (This Time for Africa) (The Official 2010 FIFA World Cup™ Song)” শীর্ষক শিরোনামে মূল গানের ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওর সাবটাইটেল/ক্যাপশন চালু করলে সেখানে গানের লিরিকগুলো আসতে থাকে। যা হলো, ”Tsamina mina, eh eh, Waka waka, eh eh, Tsamina mina zangalewa, This time for Africa।”
Screenshot: Youtube
উক্ত ভিডিওর বিবরণীতেও গানের লিরিক দেওয়া হয়েছে,
”Tsamina mina, eh eh Waka waka, eh eh Tsamina mina zangalewaThis time for Africa”
Screenshot: Youtube
মূলত, ২০১০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে কলম্বিয়ান গায়িকা সাকিরার ওয়াকা ওয়াকা গানটি প্রকাশিত হয়। সে গানের লিরিক দাবিতে ‘Some inner inner air air, waka waka air air’ শীর্ষক লাইনগুলো প্রচার করা হচ্ছে। তবে গানের উক্ত অংশের আসল লিরিক হলো “Tsamina mina, eh eh, Waka waka, eh eh.”
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দাবিটিকে মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সম্প্রতি, “আয়ারল্যান্ডে অবস্থিত এই জায়গা, যেখানে সবুজ মাঠ, হলুদ নদী, কালো সমুদ্র সৈকত এবং নীল সাগর মিলিত হয়।” শীর্ষক শিরোনামে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আয়ারল্যান্ডের একটি জায়গা দাবিতে প্রচারিত ছবিটিআয়ারল্যান্ডের (Ireland) নয় বরং এই ছবিটি আইসল্যান্ডে (Iceland) তোলা হয়েছে।
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘sebastianmzh’ নামের একটি ইনস্টাগ্রাম একাউন্টে ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তারিখে প্রকাশিত একটি পোস্টে একই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। মূল ফটোগ্রাফার ছবিটির বিবরণীতে লোকেশন হিসেবে ‘Southern Region (Iceland)’ স্থানের উল্লেখ করেছেন।
Screenshot from Instagram
এছাড়া পোস্টটিতে লোকেশন সম্পর্কে জানতে চাইলে ফটোগ্রাফার ছবিটিকে আইসল্যান্ডের দক্ষিণ সমুদ্রতটে তোলা হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেন।
Screenshot from Instagram
তাছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ইউটিউবে ‘RISE THETHIC’ নামের একটি চ্যানেলে “ICELAND EPIC DRONE 4K HIGHLANDS” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।। উক্ত ভিডিওটিতে আইসল্যান্ডের বিভিন্ন প্রাকৃতিক স্থানের দেখানো দৃশ্যের মধ্যে ১৭ সেকেন্ড থেকে ২১ সেকেন্ড সময়ে আইসল্যান্ডের ওই স্থানটিকেও দেখা যায়। অর্থাৎ, ভিডিওচিত্রটির মাধ্যমেও প্রতীয়মান হয় যে, ইন্টারনেটে প্রচারিত ছবিটি আইসল্যান্ডেই তোলা।
উল্লেখ্য যে, ইন্টারনেটে প্রচারিত ছবিটির মূল ফটোগ্রাফারের ইনস্টাগ্রাম একাউন্টে ঐ স্থানটির বেশ কিছু ছবি দেখতে পাওয়া যায়। পরবর্তীতে এই ছবিটি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহপূর্বক ভিন্ন ভিন্ন জায়গার ছবি দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার হতে থাকে। তেমনিভাবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে বেশ কিছু ফেসবুক পোস্টে ছবির স্থানটিকে আইসল্যান্ডের বদলে আয়ারল্যান্ড দাবি করা হচ্ছে, যা স্পষ্টতই মিথ্যা।
গুজবের সুত্রপাত অনুসন্ধানে, ‘মহাকাশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে ‘Science Idea – SI’ নামক একাউন্ট থেকে আলোচিত স্থানটিকে আইসল্যান্ডে অবস্থিত জায়গা দাবিতে প্রচার হতে দেখা যায়। পরবর্তীতে, পোস্টদাতা পোস্টটি এডিট করে আইসল্যান্ডের স্থলে আয়ারল্যান্ডের একটি জায়গা উল্লেখ করলেও পোস্টটি কপি ও শেয়ারের মাধ্যমে ইন্টারনেটে ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
Screenshot from Facebook
আইসল্যান্ডে তোলা ছবিকে আয়ারল্যান্ডের ছবি হিসেবে প্রচারিত এমন কিছু পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন নিম্নে:
Screenshot collage : Rumor Scanner
মূলত, ফটোগ্রাফার Sebastian Müller কর্তৃক আইসল্যান্ডে তোলা একটি ছবিকে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আয়ারল্যান্ডে অবস্থিত জায়গার ছবি দাবিতে ভিত্তিহীনভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, আইসল্যান্ডে তোলা একটি ছবিকে আয়ারল্যান্ডে অবস্থিত জায়গার ছবি দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি “This video is nominated for guinness book of world records. Amazing efforts by the videographer.. ” শিরোনামের সাথে বাংলায় আরো কিছু শিরোনাম জুড়ে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে; ভাল্লুক ও সিংহের একটি ভিডিও গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের জন্য মনোনীত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওটি গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এর জন্য মনোনীত হয়েছে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং ভিডিওটি একাধিক ভিন্ন পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলেও গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের জন্য মনোনীত হয় নি।
ভিডিওটির একটি স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে নিউজলেটার ম্যানেজমেন্ট সাইট সাবস্টাক-এ একজন ব্যবহারকারীর একটি কন্টেন্ট বা নিউজলেটার কন্টেন্ট খুঁজে পাওয়া যায়। এই কন্টেন্টের সাথে “The Movie “Bear” উল্লেখ করে সিনেমটির আইএমডিবি পেজ হাইপার লিংক (যুক্ত) করে দেওয়া হয়। আইএমডিবি পেজ এ প্রদর্শিত সিনেমটির ট্রেইলারে দাবিটির সমজাতীয় দৃশ্য বা ভিডিও দেখতে পাওয়া যায়।
Screenshot: substack
অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য থেকে (সিনেমার নাম) কি-ওয়ার্ড সার্চ প্রক্রিয়া ব্যবহার করে জানা যায় যে সিনামেটি মুলত একটি ফরাসি সিনেমা যার মূল শিরোনাম L’Ours (1988) এবং ইংরেজি নাম The Bear।
Screenshot: Youtube
ফরাসি এই শিরোনাম (সিনেমার নাম) অনুযায়ী কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবে ২০০৭ সালের ১লা নভেম্বর আপ্লোডকৃত “L’Ours (1988) – the cougar scene (আর্কাইভ)” শীর্ষক শিরোনামে আলোচিত (দাবি’র) ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিও চিত্রটি গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এর জন্য ‘মনোনীত’ হয়েছে বলে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে সে বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড- এ নমিনেশন বা মনোনয়ন সংক্রান্ত কোনো ব্যবস্থা নেই। গিনেজ বুক কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও প্রমাণ সাপেক্ষে কোনো রেকর্ড গৃহীত কিংবা প্রত্যাখ্যাত হয়ে থাকে। গিনেজ বুকের ওয়েবসাইট ও গাইডলাইন অনুসন্ধানে কোনো রেকর্ডের জন্য ‘মনোনয়ন’ প্রদান সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি। সুতরাং, ভিডিওটির গিনেজ বুক মনোনয়ন (নমিনেশন) পাওয়ার সুযোগ নেই।
ভিডিওটির গিনেজ বুক ‘মনোনয়নের’ তথ্য সঠিক না হলেও, এটি (ভিডিওটি) কোনো গিনেজ রেকর্ডের মালিক কি না তা জানার জন্য অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার।
সিনেমা (ডাটাবেজ) বিষয়ক সাইট IMDB এর তথ্যমতে, ১৯৮৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘The Bear’ সিনেমাটির ঝুলিতে অস্কার মনোনয়নসহ একাধিক পুরষ্কার থাকলেও, গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান করে নেওয়ার কোনো তথ্য সেখানে পাওয়া যায় নি।
এছাড়াও, সিনেমার পরিচালক Jean-Jacques Annaud এর ওয়েবসাইট থেকেও The Bear সিনেমার প্রাপ্ত পুরষ্কার ও সম্মাননার একটি তালিকা পাওয়া যায়। সেখানেও, গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের কোনো স্বীকৃতির তথ্য পাওয়া যায় নি।
ভিডিও ক্লিপটির গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড টাইটেল প্রাপ্তির ব্যাপারে জানতে চাইলে গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড কর্তৃপক্ষ এর PR Executive, Alina Polianskaya রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “ভিডিওটির গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড-এ কোনো টাইটেল নেই।”
অর্থাৎ, গিনেজ বুকে ভিডিওটি কোনো ক্যাটাগরিতেই কোনো রেকর্ডের মালিক নয়। যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ভিডিওটির গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড সংক্রান্ত কোনো স্বীকৃতি নেই।
Source: Rumor Scanner
মূলত, ১৯৮৮ সালের ফরাসি সিনেমা L’Ours (1988) এর একটি দৃশ্য (ভিডিও) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে ভিডিওটি গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের জন্য মনোনীত হয়েছে। তবে ইন্টারনেটে ভিডিওটির গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের জন্য মনোনীত হওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়াও গিনেজ কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন যে ভিডিওটি কোনো ক্যাটাগরিতেই কোনো রেকর্ডের মালিক নয়।
উল্লেখ্য, L’Ours (1988) সিনেমাটি ১৯৯০ সালের একাডেমী অ্যাওয়ার্ডে বেস্ট ফিল্ম এডিটিং ক্যাটাগরিতে মনোনীত হয়। সে-বছরই সেরা সিনেমাটোগ্রাফি ক্যাটাগরিতে BAFTA পুরস্কারের জন্যও মনোনয়ন পেয়েছিল সিনেমাটি। এছাড়াও, ১৯৮৯ সালে ফ্রান্সের সিজার অ্যাওয়ার্ডের একাধিক ক্যাটাগরিতে পুরষ্কার অর্জন সহ বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু প্রতিযোগিতায় মনোনয়ন ও বিজয়ী হয় L’Ours (The Bear).
সুতরাং, সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফরাসি সিনেমা L’Ours (1988) বা The Bear এর দৃশ্য প্রচার করে ‘ভাল্লুক ও সিংহের ভিডিওটি গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের জন্য মনোনীত হয়েছে’ শীর্ষক দাবি করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ন মিথ্যা।
সম্প্রতি, “বায়োলজিক্যালি কুমিরের মৃত্যু ঘটেনা!! কুমির এমন এক প্রাণী যার বৃদ্ধি ঘটতেই থাকে এবং এর দেহ বৃদ্ধি পেতেই থাকে। অতিরিক্ত বড় হয়ে যাওয়ার কারণে অবশেষে কুমিরের মৃত্যু মৃত্যু ঘটে।” শীর্ষক ডিজিটাল ব্যানার সংবলিত একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কুমির জৈবিকভাবে অমর নয় বরং পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণিদের মতো কুমিরের জীবনকালও একটি নির্দিষ্ট সময়ে আবদ্ধ। তবে কুমির তার জীবনচক্রে সারাজীবন ধরেই বৃদ্ধি পেতে থাকার দাবিটি সত্য। কিন্তু এই বৃদ্ধির প্রক্রিয়া অসীম নয়, একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর কুমিরের দৈহিক বৃদ্ধির হার ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
প্রথমত, আমাদের সমাজের একটি বহুল প্রচারিত মিথ হচ্ছে বায়োলজিক্যালি কুমিরের কখনো মৃত্যু হয়না(Biologically Immortal)। তবে সত্য হচ্ছে যে,পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণিদের মতো কুমিরের জীবনকালও একটি নির্দিষ্ট সময়ে আবদ্ধ। অর্থাৎ এরা জৈবিকভাবে অমর নয়। তবে, মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীদের যেমন জীবনের একটা নির্দিষ্ট সময় পর বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যার কারণে মৃত্যু ঘটতে দেখা গেলেও কুমিরের বেলায় এরকমটি ঘটেনা।
সাধারণত একটি কুমির জৈবিক বার্ধক্যের (Biological Ageing) কারণে মৃত্যুবরণ করেনা বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খাদ্য এবং বাসস্থানের অভাব, শিকারির আক্রমণ, রোগ-বালাইসহ পরিবেশের আরো কিছু নেতিবাচক প্রভাবে কুমিরের মৃত্যু ঘটে।
দ্বিতীয়ত, একটি কুমির তার জীবনচক্রে সারাজীবন ধরেই বৃদ্ধি পেতে থাকে এই কথাটি সত্য হলেও কুমিরের দৈহিক বৃদ্ধির হার কিন্তু অসীম নয় বরং একাধিক বিশ্বস্ত তথ্যসূত্রের বরাতে জানা যায়, একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর কুমিরের দৈহিক বৃদ্ধির হার ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
প্রকৃতপক্ষে, একটি কুমির অতিরিক্ত বড় হয়ে যাওয়ার কারণে মারা যায়না বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে খাদ্য এবং বাসস্থানের অভাব, অসুখ, দুর্ঘটনা, শিকারির কবলে পড়া সহ নানা কারণে একটা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মৃত্যুবরণ করে। এখন পর্যন্ত কুমিরের বেঁচে থাকার সর্বোচ্চ রেকর্ড হচ্ছে ১৪০ বছর।
বার্ধক্য (Biological Ageing) বলতে কী বুঝায়?
পৃথিবীতে বিরাজমান প্রায় সমস্ত জীবন্ত প্রজাতিরই জীবনচক্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে বার্ধক্য। এটি হচ্ছে জীবদেহের স্বাভাবিক কার্যকারিতার ক্রমশ অবনতির অবস্থা। বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রায় প্রতিটি প্রাণীকেই সম্মুখীন হতে হয় পেশির দুর্বলতা, দেহের এবং মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা কমে যাওয়াসহ নানান ধরনের বার্ধক্যজনিত সমস্যার। মানুষসহ প্রায় সকল প্রাণীরই মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে এই বার্ধক্য। সাধারণত কোষীয় পর্যায়ে (Cellular Stages) বার্ধক্য বলেতে কোষগুলির বিভাজন বন্ধ হওয়া এবং শেষ পর্যন্ত কোষের মারা যাওয়াকে বোঝানো হয়ে থাকে।
Medical News Today এর একটি আর্টিকেলে বলা হয়, আমাদের ক্রোমোজোমের শেষ প্রান্তে DNA এবং প্রোটিনের যে প্রসারিত অংশ রয়েছে সেটিকে বলা হয় টেলোমেরেস (Telomeres)। প্রতিবার যখন আমাদের কোষ বিভাজিত হয় ততবারই এটির দৈর্ঘ্য ছোট হতে থাকে। এভাবে একটা সময় পর যখন টেলোমেরেস এর দৈর্ঘ্য একটি নির্দিষ্ট সীমার চেয়ে ছোট হয়ে যায় তখন সেই বিভাজিত কোষগুলোকে বয়স্ক হিসেবে ধরা হয়। অর্থাৎ এই কোষগুলো ভবিষ্যতে আর বিভাজিত হতে পারেনা এবং একটা সময় পর কোষের মৃত্যু ঘটে।
বিজ্ঞানীদের মতে, টেলোমেরেস দৈর্ঘ্য ছোট হয়ে যাওয়ার পেছনে শারীরিক ব্যায়াম, ঘুম, ডিপ্রেশন এবং নির্দিষ্ট কিছু জিনের মিউটেশনসহ আরো বেশ কিছু ফ্যাক্টর কাজ করে। যাইহোক, টেলোমেরেস এর দৈর্ঘ্য আমাদের আমাদের জৈবিক বার্ধক্যের প্রকৃত কারণ কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরো বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। তবে যেসকল ফ্যাক্টর টেলোমেরেস এর দৈর্ঘ্য কমার সাথে জড়িত সেগুলো সীমিত করা গেলে সেটি আমাদের তারুণ্য ধরে রাখার ক্ষেত্রে আরো কিছুর ভূমিকা রাখতে পারে।
কুমিরেরা কি বয়সজনিত কারণে মারা যায়?
যদিও পৃথিবীতে কোনো জীবই আজীবনের জন্য বেঁচে থাকতে পারেনা এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে একটা সময় পর প্রত্যেকেরই মৃত্যু অবধারিত; তবে পৃথিবীতে এমন কিছু জীব বিরাজমান রয়েছে যারা বার্ধক্যের দ্বারা খুব একটা প্রভাবিত হয়না। বলা হয়ে থাকে কুমির এমনই একটি প্রাণী যারা জৈবিক বার্ধক্যের জন্য মারা যায়না। প্রাণীবিষয়ক ওয়েবসাইট AZ Animal এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিম থেকে জন্ম নেয়া কুমিরদের মধ্য থেকে মাত্র ১% কুমিরই পরবর্তীতে বেঁচে থাকতে পারে। অর্থাৎ এদের বেঁচে থাকার হার খুবই কম। তবে অনুকূল পরিবেশে একটি কুমির সচরাচর ২৫ থেকে ৭৫ বছর বাঁচতে পারে। তবে এদের ১০০ বছর পর্যন্ত বছর পর্যন্ত বাঁচার সক্ষমতাও রয়েছে।
উক্ত প্রতিবেদনে আরো বলা হয় যে, কুমিরেরা সাধারণত তাদের জৈবিক বয়সের কারণে মারা যায়না। তার পরিবর্তে তারা দৈহিকভাবে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত বাহ্যিক কোনো নেতিবাচক প্রভাবে তারা মারা না যায়।
তাছাড়া কুমিরের দৈহিক বৃদ্ধির ব্যাপারে প্রাণী বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘The Reptile Guide’ এ বলা হয়েছে, একটু কুমির মারা যাওয়ার দিন পর্যন্ত বাড়তে থাকে। যদিও বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্রমবর্ধমান ধীর হয়ে যায়, তবে এটি কখনই পুরোপুরি বন্ধ হয় না। এর মানে হল যে তাত্ত্বিকভাবে, প্রজাতি যত বড়, তারা তত বেশি বয়সী।
তাছাড়া, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকায় বলা হয়েছে, জন্মের ৩-৪ বছর বয়সে একটি কুমির বছরে প্রায় ১ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পরবর্তীতে এদের বৃদ্ধির হার ধীরে ধীরে কমে আসলেও টা সারা জীবন ধরেই চলমান থাকে।
তবে, যেহুতু কুমিরের দৈহিক এই বৃদ্ধির হার একটা সময় পর কমতে থাকে তাই তাত্ত্বিকভাবে একটা কুমিরের বৃদ্ধি একটা নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর অবশ্যই থেমে যাবে। কিন্তু কুমিরের বৃদ্ধির হার একেবারেই শূন্যের কোটায় নেমে আসতে যে সময় লাগে সেই পর্যায়ে যাওয়ার পূর্বেই বেশিরভাগ কুমির অন্য কারণে মারা যাওয়ার ফলে সেটা আর পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়ে উঠেনা। অর্থাৎ কুমিরের দৈহিক বৃদ্ধি তাদের সারাজীবন ধরে চললেও দৈহিক বৃদ্ধির হার অসীম নয়।
কুমিরের দীর্ঘ জীবনকাল সম্পর্কে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থিত American University of Sharjah এর গবেষক রুকাইকা সিদ্দিকীর একটি গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, কীভাবে একটি কুমিরের অন্ত্রে থাকা এই Anti-aging ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। উক্ত গবেষণায় দেখা গেছে, যে কুমিরের কুমিরের রক্তরসে শক্তিশালী Anti-aging ক্ষমতার পাশাপাশি ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধেও কাজ করতে পারে। অনুমান করা হয় কুমিরের এই Anti-aging এবং ক্যান্সার প্রতিরোধী ক্ষমতার পেছনে তাদের অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়া দায়ী।
তবে, কুমিরের বার্ধক্যের ব্যাপারে প্রাণীবিষয়ক ওয়েবসাইট Animel Queries এর প্রতিবেদনে বলা হয়, যদিও বলা হয় যে কুমিরেরা বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যায়না তবে একটি কুমিরের মধ্যে নির্দিষ্ট সময়ের পর বার্ধক্যের দৃশ্যমান লক্ষণ দেখা যায় এবং তারা বয়সের সাথে তাদের জীবনীশক্তি হারায়, তবে তারা এখনও হিংস্র প্রাণী থেকে যায় যারা বেঁচে থাকা পর্যন্ত বড় হতে থাকে।
তাছাড়া উক্ত প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা বলা হয়, “এটি আবারও বলা গুরুত্বপূর্ণ যে কুমির অমর প্রাণী নয়, যদিও এটি একটি সাধারণ বিশ্বাস। প্রকৃতপক্ষে, যদিও তারা বয়সের সাথে সাথে সারাজীবন বৃদ্ধি পেতে থাকে তবে অন্য সমস্ত জীবন্ত প্রাণীর মতো, কুমিরের শরীরেও বয়সের সাথে সাথে অবনতি ঘটে।”
তাছাড়া প্রাণী বিষয়ক ওয়েবসাইট AZ Animal এ একই ধরনের বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তারা দাঁত হারাতে শুরু করে। দাঁত ছাড়া এরা শিকার ও খেতে অক্ষম তাই এটি শেষ পর্যন্ত তাদের মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। তাছাড়া এরা ছানি হওয়ার জন্যও সংবেদনশীল। এটি তাদের শিকারের ক্ষমতাকেও নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।
আমরা প্রত্যেকেই জানি, প্রকৃতপক্ষে কোনো প্রাণীই অমর না। তবে কুমিরেরা স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য জীবনের মতো বার্ধক্যে মারা যায় না। বয়সের হিসেবে অন্যান্য প্রাণীরা যেই হারে বার্ধক্যে পৌঁছায় কুমিরের ক্ষেত্রে সেটা খুবই নগণ্য। Negligible Senescence হচ্ছে এমন একটি টার্ম যা কেবল ঐসকল জীবের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয় যারা সচরাচর জৈবিক বার্ধক্য প্রকাশ করেনা।
কুমির (Both crocodiles and alligators) অমর কিনা তা নিয়ে বিজ্ঞানী এবং গবেষকরা বিভক্ত রয়েছেন। কেউ কেউ যুক্তি দেন যে বাইরের পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত না হলে তারা চিরকাল বেঁচে থাকতে পারে, অন্যরা যুক্তি দেয় যে তারা সমস্ত জীবন্ত প্রাণীর মতো বার্ধক্যের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। এই বিষয়ে এখনও কোন সমন্বিত প্রমাণ নেই, এবং সেইজন্য, এটি শুধুমাত্র অনুমান অনুমান করা হয় যে এই প্রাণীগুলির কোনটিরই সীমাবদ্ধ জীবনকাল নেই।
অন্যদিকে, কুমিরের বার্ধক্যের হার খুবই কম হলেও একাধিক বিশ্বস্ত ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে বার্ধক্যের দৃশ্যমান লক্ষণ উপলব্ধি করা যায় এবং তারা বয়সের সাথে তাদের জীবনীশক্তি হারায়, তবে তারা এখনও হিংস্র প্রাণী থেকে যায় যারা বেঁচে থাকা পর্যন্ত বড় হতে থাকে।
সাধারণত কুমির তার জীবদ্দশায় অনেকবার নিজেদের দাঁত হারায়। তবে যখনই কোনো কুমিরের দাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন সেটি নতুন দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় একটি নির্দিষ্ট সময় পর কুমিরের নতুন দাঁত গজানোর ক্ষমতা কমে আসে। AZ Animal এর তথ্যমতে বয়স বাড়ার সাথে সাথে তারা দাঁত হারাতে শুরু করে। দাঁত ছাড়া এরা শিকার করা এবং খেতে অক্ষম বলে এটি শেষ পর্যন্ত তাদের মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।
পরিশেষে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় কুমির জীবনকালের মধ্যেই আবদ্ধ। তবে এদের প্রকৃত জীবনকাল নির্দিষ্ট না। সচরাচর এরা ৭০ বছরের কাছাকাছি সময় বাঁচলেও বাহ্যিক কোনো রোগবালাই, খাবারের অভাবে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন না হলে এরা এরচাইতে বেশি সময় ও বাঁচতে পারে।
পৃথিবীর কোনো প্রাণীকে কি বায়োলজিক্যালি অমর বলা যায়?
Australian Academy of Science এর মতে,আজ অবধি, শুধুমাত্র একটি প্রজাতি আছে যাকে জৈবিকভাবে অমর(Biologically Immortal) বলা হয়েছে। কারণ Turritopsis dohrnii নামের এই ছোট, স্বচ্ছ জেলিফিশ প্রজাতির প্রাণীরা সারা বিশ্বের মহাসাগরেই বিচরণ করে থাকে এবং প্রয়োজনে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় নিজেদেরকে তাদের জীবনচক্রের আগের পর্যায়ে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে এবং বাহ্যিক কোনো কারণ দ্বারা প্রভাবিত না হলে সারাজীবন বেঁচে থাকতে পারে।
সাধারণত যদি কোনো জেলিফিশের শরীরের কোনো অংশে আঘাত লাগে, তবে এরা সঙ্গে সঙ্গে ‘পলিপ দশা’য় চলে যায় এবং চারপাশে মিউকাস মেমব্রেন তৈরি করে গুটি বাঁধে পলিপের আকারে। এই পলিপ অবস্থায় এরা তিন দিন পর্যন্ত থাকে। আর এভাবেই এরা বয়স কমিয়ে ফেলে।
কিন্তু, একটা কথা হচ্ছে জেলিফিশ কিন্তু একেবারেই অমর নয়। অন্য কোনো বড় মাছ এদের খেয়ে ফেললে কিংবা বড় কোনো রোগে আক্রান্ত হলে কিংবা সৈকতে আটকে যাওয়ার মতো কোনো দুর্ঘটনার কবলে পরে প্রায় সময়েই এদেরকে মৃত অবস্থায় সমুদ্র উপকূলে খুঁজে পাওয়া যায়।
তবে, বাহ্যিক কোনো কারণ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হলে তাত্ত্বিকভাবে এরা চিরকাল বেঁচে থাকতে পারে বিধায় বিভিন্ন বিজ্ঞানীগণ Turritopsis dohrnii জেলিফিশ প্রজাতিকে অমর প্রাণী (biologically immortal) বলে থাকে।
তবে জেলিফিশ ছাড়াও পৃথিবীতে আরো একটি প্রাণী রয়েছে যাদেরকে জৈবিকভাবে অমর বলা হয়। আর এরা হচ্ছে Hydra। জেলিফিশ এর মতো এই প্রাণীরাও নিজেদেরকে পলিপ দশায় নিয়ে যেতে পারে। তাছাড়া পৃথিবীতে আরো এমন কিছু জীব রয়েছে যারা একটা দীর্ঘ সময় ধরে বেঁচে থাকতে পারে। তবে এদেরকে জৈবিকভাবে অমর হিসাবে গণ্য করা হয় না। এদের মধ্যে Lobster, Ming, Bristlecone pines বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
মূলত, কুমির জৈবিকভাবে অমর নয়। কুমির তার জীবনচক্রে সারাজীবন ধরেই বৃদ্ধি পেতে থাকে এই কথাটি সত্য হলেও কুমিরের দৈহিক বৃদ্ধির হার সারাজীবন একরকম থাকেনা। আর একটি কুমির অতিরিক্ত বড় হয়ে যাওয়ার কারণে মারা যায়না বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খাদ্য এবং বাসস্থানের অভাব, শিকারির আক্রমণ, রোগ-বালাইসহ পরিবেশের আরো অন্যান্য কিছু নেতিবাচক প্রভাবে কুমিরের মৃত্যু ঘটে। তবে ফেসবুকে ডিজিটাল ব্যানারের মাধ্যমে প্রচারিত দাবিগুলোতে কুমির জৈবিকভাবে অমর এবং জীবনচক্রে কুমির অতিরিক্ত বড় হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের মৃত্যু ঘটে বলে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, বায়োলজিক্যালি কুমিরের মৃত্যু ঘটেনা দাবিতে কুমিরের জীবনচক্র নিয়ে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে; তা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি ‘মুরিদের বউ নিয়ে হোটেলে চরমোনাই পীর ! তারপর পুলিশকে ঘুষ দিয়ে মুক্তি।‘’ শীর্ষক শিরোনামে জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের স্ক্রিনশট সম্বলিত একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চরমোনাই পীরের মুরিদের বউ নিয়ে হোটেলে যাওয়া ও তারপর পুলিশকে ঘুষ দিয়ে মুক্তির দাবিতে প্রচারিত জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের স্ক্রিনশট সম্বলিত ছবিটি এডিটেড। প্রকৃতপক্ষে গণমাধ্যমটিতে এমন কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি এবং চরমোনাই পীরের নামে প্রচারিত তথ্যটিও ভিত্তিহীন।
দাবিটির সত্যতা অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম প্রথমেই দৈনিক যুগান্তরের স্ক্রিনশটটি যাচাই করে। স্ক্রিনশটে উল্লেখিত তারিখ, ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট অনুযায়ী যুগান্তরের ওয়েবসাইটে অনুসন্ধানে চরমোনাই পীর নিয়ে করা এমন কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং একইদিনে ‘প্রেমিকার জন্মদিনের উপহার দিতে জামায়াত নেতার বাড়ি গিয়ে ধরা শিবির নেতা‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Daily Jugantor
এছাড়া স্ক্রিনশটটি যাচাই করে দেখা যায়, স্ক্রিনশটটিতে ব্যবহৃত শিরোনামটি হলো, ‘মুরিদের বউ নিয়ে হোটেলে চরমোনাই পীর! তারপর পুলিশকে ঘুষ দিয়ে মুক্তি।’ অর্থাৎ শিরোনামের শেষে যতিচিহ্ন দাঁড়ি ব্যবহার করা হয়েছে।
Screenshot: Facebook
কিন্তু যুগান্তরের বিভিন্ন প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে শিরোনামে এমন দাঁড়ির ব্যবহার পাওয়া যায়নি। এছাড়া স্ক্রিনশটটির সঙ্গে যুগান্তরের ওয়েবসাইটে ব্যবহৃত ফন্ট, প্রকাশিত সংবাদের সময় এসব ক্ষেত্রেও পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায়।
পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানেও দৈনিক যুগান্তরে চরমোনাই পীরকে নিয়ে যেসব প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়, সেখানেও চরমোনাই পীরের মুরিদের বউ নিয়ে হোটেলে যাওয়া ও তারপর পুলিশকে ঘুষ দিয়ে মুক্তির দাবিতে কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot: Web Search
পাশাপাশি মূলধারার অন্যান্য কোনো গণমাধ্যমেও চরমোনাই পীর ও মুরিদের বউ সংশ্লিষ্ট এমন কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot: Web Search
অর্থাৎ চরমোনাই পীর ও মুরিদের বউ নিয়ে দৈনিক যুগান্তরের স্ক্রিনশট সম্বলিত প্রতিবেদনের ছবিটি ভিত্তিহীন ও প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে তৈরী।
মূলত, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রতি চরমোনাই পীরের মুরিদের বউ নিয়ে হোটেলে যাওয়া ও তারপর পুলিশকে ঘুষ দিয়ে মুক্তির দাবিতে জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের ২০২১ সালের ৩১ আগস্টের স্ক্রিনশট সম্বলিত একটি প্রতিবেদনের ছবি প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চরমোনাই পীরকে নিয়ে দৈনিক যুগান্তরে সেদিন এমন কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি৷ এছাড়া যুগান্তর সহ অন্যান্য মূলধারার কোনো গণমাধ্যমেও এমন কোনো প্রতিবেদন ও তথ্যের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, চরমোনাই পীরের মুরিদের বউ নিয়ে হোটেলে যাওয়া ও তারপর পুলিশকে ঘুষ দিয়ে মুক্তির দাবিতে যুগান্তরের সংবাদ উল্লেখ করে প্রচারিত স্ক্রিনশট সম্বলিত ছবিটি এডিটেড।
গত ২৪ মার্চ, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আকাশে চাঁদের নিচে শুক্র গ্রহ দেখা যাওয়াকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যম ও ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে বেশকিছু বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়তে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এর মধ্যে একটি দাবি ছিল, আলোচিত এই দৃশ্য ৬০ হাজার বছর পর পর দেখা যায়। কেউ কেউ এই দৃশ্য ৬০ বছর পর দেখা যাবে বলেও দাবি করেছেন।
অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকা পোস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমানের বক্তব্য নিয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, “পৃথিবীর সব কিছুরই কোনো না কোনো কারণ আছে। আজকে যে চাঁদের নিচে তারা দেখা গেছে, এটার পেছনে অবশ্যই সায়েন্স কাজ করছে। তবে ঠিক কী কারণে এ রকম দেখা যাচ্ছে সেটা বিজ্ঞানীরা আজও খুঁজে পাইনি।”
Screenshot source: Dhaka Post
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘news18’, দাবি করেছে, চাঁদ ও শুক্রের অবস্থানে এমন দৃশ্য আকাশে ১০০ বছরে আর দেখা যাবে না।
Screenshot source: news18
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ৬০ হাজার বছর পর চাঁদ তারা একসাথে দেখা যাওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং চাঁদের সাথে মূলত শুক্র গ্রহকে দেখা গেছে এবং উক্ত দৃশ্য বিরল নয়, চাঁদ ও শুক্র গ্রহের দ্বারা তৈরি হওয়া এমন দৃশ্য কয়েক মাস পর পরই দেখা যায়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে মহাকাশ বিষয়ক ওয়েবসাইট Space এ গত ২৩ মার্চ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চাঁদ এবং শুক্রগ্রহ সেদিন (২৩ মার্চ) সূর্যাস্ত পরবর্তী সময়ে চোখ জুড়ানো দৃশ্যের জন্ম দেবে। পরদিন (২৪ মার্চ) সন্ধ্যায় এরা অবস্থান পরিবর্তন করবে। সেই রাতে, সামান্য প্রশস্ত চাঁদ শুক্রের উপরে এবং সামান্য বাম দিকে ভালভাবে ঘোরাফেরা করবে।
Screenshot source: Space
স্পেসের প্রতিবেদনে বলা নয়, অবশ্যই আমরা যা দেখতে পাব তা একটি দৃষ্টিভঙ্গির বিভ্রম। চাঁদ পৃথিবী থেকে ২৩৩,৪০০ মাইল (৩৭৫,৭০০ কিমি) দূরে, যেখানে শুক্র গ্রহের দূরত্ব ১১৫ মিলিয়ন মাইল (১৮৫ মিলিয়ন কিমি)। অর্থাৎ, চাঁদের তুলনায় শুক্র গ্রহ পৃথিবী থেকে ৪৯২ গুণ বেশি দূরে।
স্পেস লিখেছে, ২৩ মার্চ চাঁদ শুক্র এর প্রায় সরাসরি নীচে এবং ২৪ মার্চ প্রায় সরাসরি উপরে দেখাবে। পরে গোধূলিতে শুক্র স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়।
এটি কোনো বিরল কোনো দৃশ্য কিনা এমন কোনো তথ্য উল্লেখ না থাকলেও স্পেস এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাঁদ এবং শুক্র গ্রহকে আবার একসাথে দেখার পরবর্তী সুযোগ মিলবে ২৩ এপ্রিল।
Screenshot source: Space
স্পেস এর প্রতিবেদনটি লিখেছেন জো রাও (Joe Rao), যিনি একাধারে আবহাওয়াবিদ এবং স্কাইওয়াচিং কলামিস্ট হিসেবে বেশ পরিচিত।
রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম জো রাও এর সাথে। তিনি বলছিলেন, “শুক্র গ্রহ মাসিক ভিত্তিতে চাঁদের সাথে একত্রিত হয়। কানাডার রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির ২০২৩ অবজারভারস হ্যান্ডবুক অনুসারে, পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যে ২৩ এপ্রিল, ২৩ মে এবং ২১ জুন এদের ফের একত্রিত হতে দেখা যাবে।”
জো রাও রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “গড়ে প্রতি ৩১ বছরে চাঁদের অর্ধাংশ শুক্রকে পুরোপুরি ঢেকে দেয়। চাঁদ এবং শুক্র সাধারণত মাসিক ভিত্তিতে একে অপরের সাথে মিলিত হবে। এর মধ্যে কয়েকটি ঘটনায় এরা অতটা কাছাকাছি আসে না, তবে সেটিও এই ধরনের (২৪ মার্চের ঘটনা) ঘটনার মতো দৃষ্টিনন্দন হয়।”
জো রাও বলছিলেন, আলোচিত দৃশ্যটি দেখার জন্য ৬০ হাজার বছর অপেক্ষা করার যে বিষয়টি আলোচনা হচ্ছে তা একেবারেই বানোয়াট।
নাসা কী বলছে?
মহাকাশ গবেষণা বিষয়ে বিশ্বের অন্যতম নির্ভরযোগ্য মার্কিন সংস্থা নাসার ওয়েবসাইটে গত ২৫ মার্চ প্রকাশিত একটি ছবিতে আকাশে চাঁদের উপরে শুক্র গ্রহ দেখা যায়। ২৩ মার্চ ইতালি থেকে ছবিটি তোলা হয়। নাসা লিখেছে, ২৪ মার্চ কিছু স্থান থেকে চাঁদকে শুক্র গ্রহের নিকট দিয়ে যেতে দেখা যাবে। এ সময় শুক্র চাঁদের আড়ালেও পড়ে যেতে পারে।
Screenshot source: Nasa
তবে নাসার সাইটে এটি বিরল দৃশ্য কিনা বা এই ঘটনা ৬০ হাজার বছর পর পর ঘটে কিনা সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে তাই রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে আমরা নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের (NASA Goddard Space Flight Center) সোলার সিস্টেম এক্সপ্লোরেশন ডিভিশনের ডিজিটাল মিডিয়া লিড ‘মলি এল ওয়াসের’ (Molly L. Wasser) এর সাথে যোগাযোগ করেছিলাম।
মলি এল ওয়াসের রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন, “চাঁদের সাথে তারা দেখা যাওয়ার যে দাবির কথা বলা হচ্ছে সেটি মূলত শুক্র গ্রহ এবং এটি কোনো বিরল ঘটনা নয়।”
মলি জানালেন, “চাঁদ এবং শুক্র নিয়মিত আকাশে মিলিত হয় যখন শুক্র সকাল বা সন্ধ্যার আকাশে দিগন্তের উপরে থাকে। চাঁদের কক্ষপথ বরাবর শুক্র দৃশ্যমান হলে প্রতি মাসে কয়েক দিনের মধ্যে চাঁদকে শুক্রকে অতিক্রম করতে দেখা যায়। তাই শুক্র যদি দিগন্তের উপরে দৃশ্যমান হয়, চাঁদ মাসিক ভিত্তিতে এর কাছাকাছি দৃশ্যমান হয়। কিছু পন্থা অবশ্যই অন্যদের তুলনায় কাছাকাছি এবং পর্যবেক্ষণ করা আরও উত্তেজনাপূর্ণ।”
অর্থাৎ, চাঁদ ও শুক্র গ্রহের এক সাথে দেখা যাওয়াটা বিরল কোনো ঘটনা নয় এবং ৬০ হাজার বছর পর পর এই দৃশ্য দেখা যাওয়ার দাবিটিও সঠিক নয়।
মূলত, গত ২৪ মার্চ বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আকাশে চাঁদের নিচে শুক্র গ্রহ দেখা যাওয়াকে কেন্দ্র করে আলোচিত দৃশ্যটিকে বিরল, শুক্র গ্রহকে তারা এবং আবার ৬০ হাজার বছর পর এই দৃশ্য দেখা যাবে শীর্ষক একটি দাবি ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, দৃশ্যটি মোটেও বিরল কোনো ঘটনা নয়। নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের এক কর্মকর্তা রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন, চাঁদের সাথে যাকে দেখা গিয়েছে তা শুক্র গ্রহ এবং চাঁদ ও শুক্র গ্রহের দ্বারা তৈরি হওয়া এমন দৃশ্য কয়েক মাস পর পরই দেখা যায়। কিছু দৃশ্য দৃষ্টিনন্দন বলে এগুলো নিয়ে আলোচনা বেশি হয়।
উল্লেখ্য, একই ঘটনায় রাসূলের (সাঃ) নাম উদ্ধৃত করে কিয়ামত বিষয়ে দুইটি হাদিস ফেসবুকে প্রচার করা হলে উক্ত বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, সম্প্রতি চাঁদ শুক্র গ্রহ একসাথে দেখা যাওয়ার প্রেক্ষিতে উক্ত দৃশ্য ৬০ হাজার বছর পর আবার দেখা যাবে শীর্ষক একটি দাবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “Big breaking. জাকির নায়েক কে ওমান সরকার আজ গ্রেফতার করে। ইসলাম প্রচারণার আড়ালে দূর্নীতি ও অবৈধভাবে অর্থ আয় এবং সমগ্র বিশ্বে মৌলবাদ সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ভারত সরকার তাকে ভারতের আদালতে এনে শাস্তির উপযুক্ত চেষ্টা চালাচ্ছে” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ড. জাকির নায়েককে ওমানে গ্রেপ্তার করা হননি বরং তিনি ওমানে নিরাপদেই আছেন।
কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, ওমানের প্রতিভা এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১৫ মার্চ “The Ministry of Endowments and Religious Affairs, represented by the Department of Introducing Islam and Cultural Exchange in the Iftaa Office, is organizing a lecture by the preacher Dr. Zakir Naik, entitled “The Holy Qur’an is a Global Necessity,” on the evening of Thursday, Ramadan 1, 1444 AH, corresponding to March 23, 2023 AD, at the Oman Convention and Exhibition Center (Madinat Al-Irfan Theatre)” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত একটি টুইট পাওয়া যায়।
সেই টুইটে বলা হয়, আগামী ১ রমজান, ১৪৪৪ হিজরি (২৩ মার্চ, ২০২৩) এ পবিত্র কোরআনের বৈশ্বিক প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ড. জাকির নায়েক ওমান কনভেনশন এন্ড এক্সিভিশন সেন্টার (মদিনাত আল-ইরফান থিয়েটর) এ আলোচনা করবেন।
Screenshot from Twitter
গত ২৩ মার্চ ড. জাকির নায়েক “Zakir Naik’s Oman Tour – 2023” শীর্ষক শিরোনামে তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে ওমান যাওয়া নিয়ে একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন। সেই ভিডিওতে তিনি তার ওমানে নিরাপদে পৌঁছানো এবং ওমান সরকার তাকে প্রটোকল দিয়ে স্বাগত জানানোর কথা জানান।
Screenshot from Facebook
গত ২৪ মার্চ মালয়শিয়ান গণমাধ্যম ‘New Straits Times’ এ “Zakir Naik’s lawyer denies reports of his looming arrest in Oman” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ওমানে ড. জাকির নায়েকের গ্রেপ্তার না হওয়ার সত্যতা পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদনে ড. জাকির নায়েকের আইনজীবী আকবরদিন আবদুল কাদের জানান যে তিনি ওমানে নিরাপদে আছেন।
সেই ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান ‘২৪ মার্চ ওমানের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭.৫০ টায় মদিনাত আল-ইরফান থিয়েটরে ইসলামের দিক দিয়ে ‘বিশ্ব এবং মানবজাতির গুরুত্ব’ নিয়ে লেকচার দিবেন।
এছাড়া, ভারত সরকার তাকে ওমান থেকে ভারতের আদালতে এনে শাস্তির উপযুক্ত চেষ্টা চালাচ্ছে শীর্ষক দাবিরও কোনো তথ্যপ্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ২৩ মার্চ ২০২৩ এ ড. জাকির নায়েকের ওমান যাত্রাকে কেন্দ্র করে ‘দূর্নীতি ও অবৈধভাবে অর্থ আয় এবং সমগ্র বিশ্বে মৌলবাদ সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, ড. জাকির নায়েককে ওমানে গ্রেপ্তার করা হননি। তিনি ওমানে নিরাপদেই আছেন। ওমানের প্রতিভা এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে গিয়ে সেখানে ‘কোরআনের বৈশ্বিক প্রয়োজনীয়তা’ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
সুতরাং, ওমান সরকার ড. জাকির নায়েককে গ্রেপ্তার করেছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
Ministry of Endowments and Religious Affairs, Oman – Twitter
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মানুষের পায়ের মতো দেখতে মুলাগুলো আসল মুলা নয় বরং কেনঝি সুয়েটসুগু নামের একজন জাপানি শিল্পীর তৈরি একটি আর্টওয়ার্ক বা শিল্পকর্ম এটি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ফেসবুকে গত ১৭ মার্চ Japan moments নামক একটি পেজ থেকে ‘Strange radish in Japan’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি পোস্টে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত পোস্টের ক্যাপশন থেকে জানা যায় উক্ত ছবিটি মূলত কেনঝি সুয়েটসুগু (Kenji Suetsugu) নামক একজন জাপানি আর্টিস্টের তৈরি। তাছাড়া সেই পোস্টের ক্যাপশনে মূল আর্টিস্টের ইনস্টাগ্রাম আইডির লিংক ম্যানশন করা ছিল।
পরবর্তীতে উক্ত সাইটেও আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। সাইটে ছবিটির ক্যাপশনে ছবিটিকে Daikonashi (2005) নামে অভিহিত করে এটি তৈরি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এটির মূল অংশ ইউরেথেন এবং পাতার অংশটি আসল মুলার পাতা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
এই ছবির বিষয়ে জানতে পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে কেনঝি সুয়েটসুগু এর সাথে
যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “শিল্পকর্মটি জাপানি অভিব্যক্তি ‘ডাইকোন-আশি’ এর উপর ভিত্তি করে ২০০৫ সালে আমি তৈরি করেছিলাম। ‘ডাইকোনাশি’ নারীর মোটা পা অর্থে ব্যবহৃত হয়। আমি ভেবেছিলাম আসল পায়ের মতো একটি মূলা তৈরি করা আকর্ষণীয় হবে, তাই এটি তৈরি করেছিলাম।”
মূলত, জাপানি এক্সপ্রেশন “daikon-ashi’ এর উপর ভিত্তি করে ২০০৫ সালে জাপানি শিল্পী কেনঝি সুয়েটসুগু মুলা দিয়ে মানুষের পা সদৃশ একটি আর্টওয়ার্ক তৈরি করেন। তবে এই আর্টওয়ার্কটিকেই আসল মুলা দাবি করে ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি একই ছবিকে মুলা দিয়ে তৈরি শ্রীকৃষ্ণের পায়ের প্রতিকৃতি দাবি করে ফেসবুকে প্রচার করা হলে বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, জাপানি এক শিল্পীর তৈরি শিল্পকর্মকে বাস্তব মুলা দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, “মুরগির দাম বেশি? No Tension! এখন মাংসের পরিবর্তে কাঁঠাল” শীর্ষক শিরোনামে মুরগির মাংসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মাংসের পরিবর্তে কাঁঠাল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী এমন দাবিতে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে প্রধানমন্ত্রী মাংসের পরিবর্তে কাঁঠাল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কারের প্রেক্ষাপটে ২০২২ সালে কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিতে মাংসের পরিবর্তে কাঁঠাল ব্যবহারের পরামর্শ শীর্ষক প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার করা হচ্ছে।
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেশীয় গণমাধ্যম RTV এর ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও(আর্কাইভ) খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বারোমাসি কাঠালের জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে অভিনন্দন জানান। সেইসাথে কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহারের উপর জোর দেন তিনি।
গত বছরের (২০২২) ১৯ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যটির প্রাসঙ্গিক অংশটুকু হুবহু তুলে দেওয়া হলো-
“অনেকেই কিন্তু মাংস খেতে চায় না। মাংসের পরিবর্তে এখন কাঁঠাল। এবং এই কাঁচা কাঁঠাল, এই কাঁঠালের কাবাব হয়, বার্গার হয়। কাঁঠাল নানাভাবে কিন্তু বিদেশে এখন ব্যবহার করছে, খাচ্ছে। এবং তাঁর দাম কিন্তু অনেক বেশি। মানে আপনি কাঁচা কাঁঠালের একটা বার্গার যদি কিনতে যান তাহলে তার দাম কিন্তু মাংস দিয়ে যে বার্গার করে, রোল তৈরি করে সেগুলির থেকে কিন্তু দাম অনেক বেশি। এবং তার কিন্তু ব্যাপক চাহিদা। তো আমরা যদি এই বারোমাসি কাঁঠাল উৎপাদন করতে পারি এবং সেইসাথে সাথে কাঁঠালের বিভিন্ন পণ্য যেগুলি, বর্তমান যুগে তো আমাদের দেশেও ছেলেমেয়েরা এখন বার্গার, রোল এটা-সেটা খেতেই বেশি পছন্দ করে। তো সেখানে মাংসের পরিবর্তে কাঁঠালটা, কাঁঠালটাকে কিন্তু মাংসেরই পরিবর্তে একটা ই হিসেবে ধরা হয়। মানে মাংসের পরিবর্তে এই কাঁঠালটি এখন সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি বিশেষভাবে আপনাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ২৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আপনাদের বিশেভাবে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাই যে আপনারা কাঁঠাল গবেষণা করে বারোমাসি কাঁঠালের জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কার করতে পেরেছেন। এখন এর বহুমুখী ব্যবহার করতে হবে।”
বক্তব্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী মাংসের পরিবর্তে কাঁঠাল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু, সেটি মাংসের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে নয় বরং, সম্পূর্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে তিনি মন্তব্যটি করেছেন। মাংসের পরিবর্তে কাঁঠাল ব্যবহারের মাধ্যমে কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করার উপরে জোড় দিতে গিয়ে এবং বহির্বিশ্বে কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহারের উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লিখিত মন্তব্য করেন।
পরবর্তীতে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, মূলধারার একাধিক গণমাধ্যমে প্রচারিত সেদিনের (১৯ ডিসেম্বর, ২০২২) ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। এসব ভিডিও প্রতিবেদন দেখুন যমুনা টিভি(আর্কাইভ), মাছরাঙা নিউজ(আর্কাইভ), সময় টিভি(আর্কাইভ)। এসব প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করেও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের কোনো ভিন্ন প্রেক্ষাপট খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও, দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার ওয়েবসাইটে ১৯ ডিসেম্বর, ২০২২ এর একটি প্রতিবেদনেও দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী বহির্বিশ্বে মাংসের পরিবর্তে কাঁঠাল ব্যবহারের উদাহরণ দিয়েছেন।
এছাড়াও, কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের ১৯ ডিসেম্বরের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি দেখুন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস। সেখানেও দেখা যায়, কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহারের উদাহরণ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী মাংসের পরিবর্তে কাঁঠাল খাওয়ার কথা বলেছেন।
মূলত, ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারোমাসি কাঁঠালের জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কারের প্রেক্ষাপটে কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে মাংসের পরিবর্তে কাঁঠাল ব্যবহারের পরামর্শ দেন। বর্তমানে মাংসের বাজারমূল্যে ঊর্ধ্বগতি উল্লেখপূর্বক তার সাথে প্রধানমন্ত্রীর সেই বক্তব্য জুড়ে দিয়ে ‘মূল্যবৃদ্ধির কারণে মাংসের পরিবর্তে কাঁঠাল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক যে দাবিটি করা হচ্ছে তা সঠিক নয়।
উল্লেখ্য, পশ্চিমা দেশগুলোতে মাংসের পরিবর্তে দ্রুতই বাড়ছে কাঁঠালের জনপ্রিয়তা। রোল, কাটলেট এমনকি পিৎজার টপিংয়ের জন্যও ব্যবহৃত হচ্ছে কাঁঠালের ঝুরি। একদিকে যেমন বাহারি খাবারের রান্না করা সম্ভব হচ্ছে অন্যদিকে, তেমনি নানারকমের পুষ্টিগুন সম্পন্ন হওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্রুতই বাড়ছে কাঁঠালের চাহিদা।
সুতরাং, জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কারের প্রেক্ষাপটে কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিতে মাংসের পরিবর্তে কাঁঠাল ব্যবহারের পরামর্শকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে প্রধানমন্ত্রী মাংসের পরিবর্তে কাঁঠাল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।