সম্প্রতি, অস্ট্রেলিয়ার ওডিআই ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩ জয়ের পর বিশ্বকাপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার টিমের দেশে ফেরার দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিমের বিশ্বকাপ নিয়ে দেশে ফেরার কোনো ঘটনার নয় বরং এটি কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ এ মরক্কো ফুটবল দল চতুর্থ স্থান অর্জন করে দেশে ফিরলে দেশটির মানুষের ফুটবল টিমকে স্বাগত জানানোর ভিডিও।
দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটির কয়েকটি স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘Voice of America’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ২১ ডিসেম্বর “Morocco’s National Football Team Receives Homecoming Welcome”শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison : Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওটির একটি অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটির বিস্তারিত বর্ণনা থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর মরোক্কোর জাতীয় ফুটবল দলকে স্বাগত জানাতে মরোক্কোর রাজধানী রাবাতে হাজার হাজার ভক্ত জড়ো হওয়ার সময়কার ভিডিও এটি।
পরবর্তীতে ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘Al Jazeera’ এর ওয়েবসাইটে “Morocco’s Atlas Lions receive hero’s welcome on return home” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে বেলজিয়াম, পর্তুগাল এবং স্পেনকে হারিয়ে চতুর্থ স্থান অর্জন করে দলটি। উক্ত অর্জনে জাতীয় ফুটবল দলের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কুচকাওয়াজের সময় রাজধানী রাবাতে দলটিকে স্বাগত জানায় ভক্তরা।
অর্থাৎ, ভিডিওটি সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বিশ্বকাপ নিয়ে দেশে ফেরার সময়ের নয়।
মূলত, কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ এ মরক্কো ফুটবল দল চতুর্থ স্থান অর্জন করে দেশে ফিরলে দেশটির মানুষ মরক্কো ফুটবল টিমকে স্বাগত জানান। সেই ঘটনায় ধারণকৃত একটি ভিডিওকে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিমের বিশ্বকাপ নিয়ে সাম্প্রতিক দেশে ফেরার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, ভিন্ন দেশের পুরোনো ঘটনার ভিডিওকে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিমের বিশ্বকাপ নিয়ে দেশে ফেরার সাম্প্রতিক ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে ;যা মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি হামাস কর্তৃক ইসরায়েলের জাহাজ জব্দ করার কোনো ঘটনার নয় বরং ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের ইসরায়েলি ধনকুবের আব্রাহাম আনজারের মালাকানাধীন জাহাজ জব্দ করার দৃশ্য উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা Reuters এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২১ নভেম্বর “Houthis release video showing Red Sea ship hijacking” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে একটি পণ্যবাহী জাহাজ জব্দ করার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। হুথি বিদ্রোহীরা দাবি করছে যে জাহাজটির সাথে ইসরায়েলের সম্পর্ক রয়েছে। তবে ইসরায়েল জানায়, জব্দ করা জাহাজটি ব্রিটিশ মালিকানাধীন এবং জাপানিদের দ্বারা পরিচালিত।
কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম Al Jazeera এর ওয়েবসাইটে গত ১৯ নভেম্বর “Yemen’s Houthi rebels seize cargo ship in Red Sea” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পাবলিক শিপিং ডাটাবেসে উক্ত জাহাজের মালিকানার বিস্তারিত বিবরণীতে জাহাজের মালিকানার তথ্যে ইসরায়েলি ধনকুবের এবং রে কার ক্যারিয়ার লিমিটেড কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা আব্রাহাম আনজার এর নাম পাওয়া যায়।
Screenshot from Al Jazeera
এছাড়া, ইসরায়েলের সংবাদ মাধ্যম Times of Israel এ গত ২১ নভেম্বরে “Iran-backed Yemen rebels’ attack on Israel-linked ship raises risks in vital Red Sea” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও জব্দ হওয়া জাহাজে আব্রাহাম আনজার এর অংশীদার থাকার তথ্য পাওয়া যায়।
Screenshot from Times of Israel
মূলত, গত ১৯ নভেম্বর ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলের ধনকুবের আব্রাহাম আনজারের মালিকানাধীন একটি কার্গো জাহাজ জব্দ করে। এই ঘটনা নিয়ে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংবাদ এবং ভিডিও প্রচারিত হয়। সম্প্রতি এই ভিডিওকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস কর্তৃক ইসরায়েলের জাহাজ জব্দ করার দৃশ্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷
সুতরাং, ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের ইসরায়েলি নাগরিকের একটি কার্গো জাহাজ জব্দ করার ভিডিও হামাস ইসরায়েলের জাহাজ জব্দ করেছে দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মোহাম্মদ রিজওয়ানের পাকিস্তান ওডিআই ক্রিকেট দলের (পুরুষ) নতুন অধিনায়ক হওয়ার দাবিটি সত্য নয় বরং কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিটি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ক্রিকেট বিষয়ক গণমাধ্যম ‘ESPNCricInfo’ এর ওয়েবসাইটে গত ১৫ নভেম্বরে “Babar Azam resigns as Pakistan captain in all formats” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Espncricinfo
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পাকিস্তানের ক্রিকেটার বাবর আজম ক্রিকেটের তিন ফরমেট (টি-টোয়েন্টি, ওডিআই, টেস্ট) এর অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
সেদিনই পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে “Shan Masood appointed Test and Shaheen Shah Afridi T20I captain” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রেস রিলিজ খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: pcb.com.pk
প্রেস রিলিজ থেকে জানা যায়, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড পাকিস্তানি ক্রিকেটার শান মাসুদকে পাকিস্তান পুরুষ ক্রিকেট দলের টেস্ট অধিনায়ক এবং শাহীন শাহ আফ্রিদিকে টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করেছে। তবে উক্ত প্রেস রিলিজে পাকিস্তান ওডিআই দলের (পুরুষ) অধিনায়ক কে হবেন এই ব্যাপারে পিসিবি থেকে কিছু বলা হয়নি।
এছাড়া, এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত মোহাম্মদ রিজওয়ানের পাকিস্তান ওডিআই ক্রিকেট দলের (পুরুষ) নতুন অধিনায়ক হওয়া নিয়ে দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে গ্রহণযোগ্য কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, মোহাম্মদ রিজওয়ান পাকিস্তান ওডিআই ক্রিকেট দলের (পুরুষ) নতুন অধিনায়ক শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাবর আজম তিন ফরমেট থেকে অবসর নেওয়ার পর পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড সম্প্রতি টি২০ এবং টেস্ট ফরমেটের জন্য ভিন্ন দুই পাকিস্তানি ক্রিকেটারকে নিয়োগ দিয়েছে। তবে ওডিআই ফরমেটে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড এখন পর্যন্ত কোনো ক্রিকেটারকে নিয়োগ দেয়নি। এছাড়া, গ্রহণযোগ্য গণমাধ্যমে সূত্রেও মোহাম্মদ রিজওয়ানের পাকিস্তান ওডিআই ক্রিকেট দলের (পুরুষ) নতুন অধিনায়ক হওয়া নিয়ে কোনো তথ্য ইন্টারনেটে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, পূর্বে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের নিয়ে ইন্টারনেটে ভুল তথ্য প্রচার করা হলে সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে:
সুতরাং, মোহাম্মদ রিজওয়ানকে পাকিস্তান ওডিআই ক্রিকেট দলের (পুরুষ) নতুন অধিনায়ক ঘোষণা করা হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত সুড়ঙ্গের ভিডিওটি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের তৈরি নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরের অদূরে নির্মিত সেনাবাহিনীদের একটি সুড়ঙ্গের ভিডিও। এছাড়াও সুড়ঙ্গটির সাথে হামাস কিংবা ফিলিস্তিনের কোনো প্রকার সম্পর্কও নেই।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে ভিডিওটিতে @urbexkev ইউজারনেমের একটি টিকটক ওয়াটারমার্ক দেখা যায়। ওয়াটারমার্কটির সূত্র ধরে উক্ত টিকটক আইডিতে #bunker #war #ww2 #history #underground শীর্ষক হ্যাসট্যাগে গত ৩১ অক্টোবর প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
ভিডিওরটির হ্যাশট্যাগ এবং লোকেশন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওটির লোকেশনের জায়গায় যুক্তরাজ্যে ব্যবহার করা হয়েছে এবং ভিডিওটিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার বাঙ্কার বলেও দাবি করা হয়েছে।
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটির সুড়ঙ্গের সাথে উক্ত ভিডিওর সুড়ঙ্গের হুবহু মিল রয়েছে। তবে ভিডিওটিতে সুড়ঙ্গটির নাম অথবা এর অবস্থানের বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। কিন্তু ভিডিওরটির বিস্তারিত বিবরণীতে beyondthepoint নামের একটি ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ৮ জুলাই REIGATE ARMY BATTLE HEADQUARTERS শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদনের লিংক পাওয়া যায়।
Screenshot: beyondthepoint
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নতুন ও গোপন একটি সেনা সদরদপ্তর নির্মাণের জন্যে ইংল্যান্ডের সারে’র রিগেট শহরকে বেছে নেন। যার কারণে তিনি রিগেট শহরে আলোচিত এই সুড়ঙ্গটি তৈরি করেন। উক্ত সুড়ঙ্গটিকেই তিনি তার নতুন ও গোপন সেনা সদরদপ্তরে পরিণত করেন। যার দায়িত্ব বার্নার্ড মন্টগোমারি নামের একজন সিনিয়র ব্রিটিশ আর্মি অফিসারকে দেওয়া হয়। যিনি প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযু্দ্ধে ব্রিটিশ সেনা সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। যার কারণে উক্ত সুড়ঙ্গটি Monty’s Hideout নামেও জনপ্রিয় ছিল।
Screenshot: beyondthepoint
এছাড়াও উক্ত প্রতিবেদনটিতে সুড়ঙ্গটির বেশকিছু ছবিও দেখতে পাওয়া যায়। যার সাথে আলোচিত সুড়ঙ্গটির মিল রয়েছে।
Screenshot: beyondthepoint
পরবর্তী অনুসন্ধানে TheSecretVault নামের ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিওর শুরুতে দেখতে পাওয়া কাঠের দরজা, বাদামী রঙের ভবন এবং ভবনের বাইরে ‘The National Trust’ শীর্ষক ফলকটি গুগল স্ট্রিট ভিউ এ খুঁজে পাওয়া যায়।
Location Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওর সুড়ঙ্গটি ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের তৈরি নয়।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে “দ্য ডেইলি মেইল” এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় , দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যে ছয়শোর বেশি গুপ্ত বাঙ্কার নির্মিত হয়। এই বাঙ্কারগুলো সৈন্যদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মিলিটারি বেইস হিসেবে কাজ করতো, যেগুলো সৈন্যদের মৌলিক চাহিদা অনুযায়ী কাঠের বিছানা, রান্নার উপকরণ ও কেমিক্যাল টয়লেটে সুসজ্জিত ছিল। সেসময়ের অনেক বাঙ্কার খুঁজে পাওয়া গেলেও তাদের সিংহভাগের অবস্থানই এখনো অজানা।
মূলত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভিন্ন ও নতুন ধরনের গোপন সেনা সদরদপ্তর নিমার্ণের জন্যে ব্রিটেনের সেসময়ের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল ইংল্যান্ডের সারে’র রিগেট শহরে একটি সুড়ঙ্গ তৈরি করেন। যেটিকে তিনি তার ভিন্নধর্মী সেনা সদরদপ্তরে পরিণত করেন। বিধ্বস্ত সেই সুড়ঙ্গটি বর্তমানে উৎসুক তরুণদের আর্কষণের কেন্দ্র বিন্দু হওয়ায় প্রায়শই বিভিন্ন ইউটিউবার, টিকটকাররা সেখানে গিয়ে সুড়ঙ্গটির ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছে। সাম্প্রতিক সময়ে উক্ত সুড়ঙ্গেরই একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গাজা উপত্যকায় মাটির নিচে হামাসের তৈরি সুড়ঙ্গের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, হামাসের তৈরি গোপন সুড়ঙ্গ দাবিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যে নির্মিত একটি সুড়ঙ্গের ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য ক্ষমাচেয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিলো প্রধান নির্বাচন কমিশনার, ভয়ে শেখ হাসিনা শীর্ষক শিরোনাম” ও “ক্ষমা চেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্বে সেনাবাহিনী” শীর্ষক থাম্বনেইলে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণা করে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া বিষয়ক কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার একাধিক ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটিতে আলোচিত দাবিটি প্রসঙ্গে শুরুতেই কয়েকটি ভিডিওর খণ্ডাংশ দেখানো হয়। এছাড়া ভিডিওতে চ্যানেলটির উপস্থাপক কোনো প্রকার তথ্যসূত্র ছাড়া দাবিটি প্রসঙ্গে বলেন, ‘এবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য ক্ষমা চেয়ে পদত্যগের ঘোষণা দিলো প্রধান নির্বাচন কমিশনার। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন,সরকারকে অবশ্যই সমঝোতার মাধ্যমে সকল রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের মাধ্যমেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে নইলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ থেকেই যাবে। এজন্য সরকার অবিলম্বে সংবিধান সংশোধন করে নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিশেষ আহ্বান জানান।’
অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে যুক্ত প্রথম চারটি ভিডিও ক্লিপই ২০২২ সালে ‘ভোটের মাঠে তলোয়ারের বিপরীতে রাইফেল নিয়ে দাঁড়ান’ এমন বক্তব্যের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের ক্ষমা চাওয়ার ঘটনায় মূলধারার গণমাধ্যম যমুনা টিভি, মাছরাঙা টিভি(১, ২) এবং ডিবিসি নিউজ এ প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদন থেকে নেওয়া।
Video Comparison : Rumor Scanner Video Comparison : Rumor Scanner Video Comparison : Rumor Scanner Video Comparison : Rumor Scanner
উল্লেখ্য, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০২২ সালের ১৭ জুলাই নির্বাচন ভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে ভোটের সময় সহিংসতা করতে কেউ তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ালে তা প্রতিরোধ করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে রাইফেল নিয়ে প্রতিরোধ করার কথা বলেন সিইসি।
অর্থাৎ, উক্ত বক্তব্যের সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই উক্ত ভিডিও ক্লিপগুলো আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাথে যুক্ত করা হয়েছে।
আলোচিত ভিডিওটির সর্বশেষ অংশে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল এর দুইটি ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করা হয়। ভিডিওগুলোর অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০২২ সালের ১৮ জুলাই চ্যানেলে ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে “সংসদ নির্বাচনে বিএনপির না আসার ঘোষণায় সংকটে নির্বাচন কমিশন BNP। Election Commission। Channel 24” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনের ১মিনিট ৩৬ সেকেন্ড এবং ২ মিনিট ৪০ সেকেন্ড থেকে ৩ মিনিট ২১ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটুকু আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে।
Video Comparison : Rumor Scanner
উক্ত প্রতিবেদনের বিস্তারিত বর্ণনা থেকে জানা যায়, সংসদ নির্বাচনে বিএনপির না আসার ঘোষণায় কমিশন বলছে, এ অবস্থায় নির্বাচন হলেও, তা গ্রহণযোগ্য হবে না। রাজনৈতিক দলের সাথে ধারাবাহিক সংলাপে তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংকটের সমাধান হতে পারে আলোচনা কিংবা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে আবারও সমঝোতার তাগিদ দেন সিইসি।
অর্থাৎ, এই দুইটি ভিডিও ক্লিপও কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওতে যুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া, মূলধারার গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণা করে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব দেওয়ার সম্পর্কিত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে বাংলাদেশে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে। পরবর্তীতে এই ব্যবস্থা আর পুর্ণবহাল করা হয়নি।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি “প্রধান নির্বাচন কমিশনার ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষনা করে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে” শীর্ষক দাবি যুক্ত করে ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে যে, দাবিটি সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিক তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষনে এই ঘোষণা দেন তিনি।
সুতরাং, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণা করে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দাবিতে ইন্টারনেট প্রচারিত বিষয়টি মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘নির্বাচনের দায়িত্ব পেলো সেনাবাহিনী। শেখ হাসিনার কথা শুনছে না সেনাবাহিনী’– শীর্ষক ক্যাপশনে এবং ‘সেনাবাহিনী কথা শুনছে না হাসিনার সুষ্ঠু নির্বাচনের দায়িত্ব নিলো আর্মি’ শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়ার তথ্যটি সঠিক নয় বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার একাধিক ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে আলোচিত দাবির ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ৯ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে দেখা যায়, ভিডিওটির শুরুতে কয়েকটি ভিডিওর খণ্ডাংশ দেখানো হয়। পরবর্তীতে 1A News এর সম্পাদন কাজী হেমায়েত উদ্দিন মিশন নামের একজন ও নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানার বক্তব্যের ভিডিও দেখানো হয়৷
ভিডিও যাচাই-১
আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা ভিডিওতে 1A News এর লোগো’র সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে 1A News ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৯ নভেম্বর “হাসিনা কি সেনাবিদ্রোহের ভয়ে ভীত?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওর সাথে একটি অংশের আলোচিত ভিডিওর এই অংশের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
১৩ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওতে 1A News এর সম্পাদক কাজী হেমায়েত উদ্দিন মিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেনাবাহিনীর অবস্থান নিয়ে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেছেন।
ভিডিও যাচাই-২
আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা দ্বিতীয় ভিডিওটিতেও বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভি’র লোগো’র সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে এনটিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে গত ২০ নভেম্বর “প্রয়োজনে সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে : রাশেদা সুলতানা” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওর সাথে একটি অংশের আলোচিত ভিডিওর এই অংশের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, সোমবার (২০ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রাশেদা সুলতানা সাংবাদিকদের একথা বলেন।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটিতে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার যে ভিডিও ক্লিপগুলো যুক্ত করা হয়েছে সেগুলোতে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়া হয়েছে বিষয়ক কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, বাংলাদেশের মূলধারার কোনো গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়া হয়েছে সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালুর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এরই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি “নির্বাচনের দায়িত্ব পেলো সেনাবাহিনী। শেখ হাসিনার কথা শুনছে না সেনাবাহিনী” শীর্ষক থাম্বনেইল এবং শিরোনামে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। অধিকতর ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে কোনোপ্রকার তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়। এছাড়া, নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রেও আলোচিত দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষনে এই ঘোষণা দেন তিনি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর পেয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
গত ১৯ নভেম্বর আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের (পুরুষ) ফাইনাল ম্যাচে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া দল মুখোমুখি হয়। এরই প্রেক্ষিতে “সেদিন ১৪২ কোটি মানুষের হয়ে ১১টা ছেলে লড়ছে। হনুমান চল্লিশায় প্রার্থনা জানাচ্ছে ভারতীয় দর্শক” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
একই ভিডিওটি গত ১৪ অক্টোবর আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপে (পুরুষ) ভারত বনাম পাকিস্তানের ম্যাচেও হনুমান চল্লিশায় ভারতীয় দর্শকদের প্রার্থনা জানানোর দাবিতে ইউটিউবে প্রচার করা যায় হয়। ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের (পুরুষ) – ২০২৩ এর ফাইনাল ম্যাচে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে কিংবা এর আগে ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচের সময় ভারতীয় দর্শক হনুমান চল্লিশায় প্রার্থনা জানানোর দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি এডিটেড। প্রকৃতপক্ষে, গত ১৪ অক্টোবরে বিশ্বকাপে ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচে ভারতীয় সংগীত শিল্পী দর্শন রাওয়াল সংগীত পরিবেশনের সময় ধারণকৃত এই ভিডিওতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিডিওর আসল ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় বাদ দিয়ে তাতে হনুমান চল্লিশায় প্রার্থনা জানানোর ভিন্ন একটি ভিডিওর অডিও যুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই
ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আলোচিত ভিডিওর কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Sadashiv52815 শীর্ষক ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৬ অক্টোবরে “Darshan Raval at Narendra Modi Stadium” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর সাথে উক্ত আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওর শিরোনামে থাকা তথ্য থেকে জানা যায় গত ১৪ অক্টোবরে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপে (পুরুষ) ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচে ভারতীয় সংগীত শিল্পী দর্শন রাওয়াল সংগীত পরিবেশন করেন।
পরবর্তীতে অনুসন্ধানে গত ১৫ অক্টোবরে দর্শন রাওয়ালের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ভিডিও থেকে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপে (পুরুষ) – ২০২৩ এ গত ১৪ অক্টোবরে ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচে সংগীত পরিবেশন করার তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
অডিও যাচাই
প্রাসিঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে jaipur.waley_ নামক ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ৩ জুনে প্রকাশিত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ডের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
ভিডিও থেকে জানা যায়, সেদিন ভারতীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হনুমান চল্লিশায় প্রার্থনা করছিলেন।
অর্থাৎ, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয়।
মূলত, গত ১৪ অক্টোবরে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপে (পুরুষ) – ২০২৩ ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচে ভারতীয় সংগীত শিল্পী দর্শন রাওয়াল সংগীত পরিবেশন করেন। সেই মূহুর্তে দর্শকসারি থেকে ধারণকৃত একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচারিত হয়। তবে সম্প্রতি সেই ভিডিও ডাউনলোড করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড বাদ দিয়ে তাতে ভারতীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান হনুমান চল্লিশায় প্রার্থনা করার সময়ে ধারণকৃত ভিন্ন ভিডিওর অডিও যুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতীয় দর্শকরা হনুমান চল্লিশায় প্রার্থনা জানাচ্ছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত ভিডিওটি এডিটেড বা বিকৃত।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভারতের একটি রিয়েলিটি শো’তে দুই বছরের এক শিশুর কোরআন তেলাওয়াতের দৃশ্য শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং ভারতের একাধিক রিয়েলিটি শো এর দৃশ্য এবং ভিন্ন দেশের এক শিশুর ভিডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় যুক্ত করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে বিচারকের আসনে ভারতের নায়ক অক্ষয় কুমার, গায়িকা নেহা কক্কর এবং হিমেশ রেশামমিয়াকে দেখা যাচ্ছে। এছাড়া, একই ভিডিওতে ভারতের আরেক নায়ক সালমান খানকেও দেখা গেছে।
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সুপারস্টার সিঙ্গার নামের রিয়েলিটি শো’র দ্বিতীয় সিজনের একটি পর্বে অক্ষয় কুমার গেস্ট হিসেবে গেলে সেখানে রাখি দিবস উপলক্ষে তাকে একটি সারপ্রাইজ দেওয়া হয়। সারপ্রাইজটি হল তাকে নিয়ে তার বোনের লেখা আবেগঘন চিঠির আবৃত্তির পাশাপাশি তাদের পুরোনো নানা ছবি বড় পর্দায় দেখানো। এসব দেখে অক্ষয় কুমার আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তার এই আবেগাপ্লুত অবস্থায় কান্না করার দৃশ্যের সাথে আলোচিত ভিডিওতে থাকা তার ফুটেজের হুবহু মিল পাওয়া যায়।
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ইন্ডিয়ান আইডলে উক্ত আসরের প্রতিযোগী আদ্রিজের গাওয়া গান শুনে নেহা কক্কর আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এছাড়াও দেখা যায়, তার এই কান্নার অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওতে থাকা নেহার ক্লিপের হুবহু মিল রয়েছে।
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সালমান খানের হোস্ট করা শো বিগ বসের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তাকে উৎসর্গ করে তৈরি করা একটি ভিডিও দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। তার এই আবেগঘন মুহূর্তের দৃশ্যের সাথে আলোচিত ভিডিওতে দেখানো দৃশ্যের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল পাওয়া যায়। তবে ভিডিওটির শুরুতে দর্শকশ্রোতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে, যেখানে লেখা রয়েছে, এটি একটি প্যারোডি ভিডিও এবং ভিডিওটি শুধুমাত্র বিনোদনের ও দর্শকদের কোরআন পাঠের প্রতি অনুপ্রাণিত করতে তৈরি করা হয়েছে।
Screenshot: YouTube
পরবর্তীতে উক্ত ইউটিউব চ্যানেলটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, Andri Sundaisme নামের ইউটিউব চ্যানেলটি জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো’র আবেগঘন মুহূর্তের অংশগুলোর সাথে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে বাচ্চাদের ভিডিও এবং কোরআন তেলাওয়াতের অডিও যুক্ত করার মাধ্যমে ভিডিও তৈরি করে তা প্রচার করে থাকে।
মূলত, Andri Sundaisme নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে বিভিন্ন রিয়েলিটি শোর ক্লিপ নিয়ে তার সাথে বাচ্চাদের ভিডিও এবং কোরআন তেলাওয়াতের অডিও যুক্ত করে সম্পাদনার মাধ্যমে ভিডিও তৈরি করে প্রচার করা হয়। উক্ত চ্যানেলের একটি ভিডিওর কিছু অংশ সম্প্রতি, ‘ইন্ডিয়ার টকশোতে দুই বছরের বাচ্চা কোরআন তেলাওয়াত করে’ শীর্ষক শিরোনামে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, ভারতীয় রিয়েলিটি শো এর কিছু দৃশ্যের সাথে এক শিশুর কোরআন তেলাওয়াতের ভিন্ন একটি ভিডিও যুক্ত করে ইন্ডিয়ার টকশোতে দুই বছরের বাচ্চা কোরআন তেলাওয়াত করছে শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা এডিটেড বা বিকৃত।
সম্প্রতি, ‘তারেক জিয়া বিদেশে বসে থাকায় রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কে লালমনিরহাট জেলার বড়বাড়ি ইউনিয়ন মহিলাদলের ঝাড়ু মিছিল’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে বসে থাকায় রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কে লালমনিরহাট জেলার বড়বাড়ি ইউনিয়ন মহিলাদলের ঝাড়ু মিছিলের নয় বরং ভিডিওটি গত ১৯ নভেম্বর বিএনপির ডাকা দেশব্যাপী সর্বাত্মক হরতাল সমর্থনে রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কে লালমনিরহাট জেলার বড়বাড়ি ইউনিয়ন মহিলাদলের ঝাড়ু মিছিলের। উক্ত মিছিলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোনো স্লোগান দেওয়া হয়নি। ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিন্ন ঘটনার অডিও যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
গুজবের সূত্রপাত
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটিতে ‘তারেকের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’ শীর্ষক স্লোগান শোনা যায়।
ভিডিওটি’র ওপরের দিকে বাম পাশে ‘বাংলা পলিটিক্স’ শীর্ষক লোগোর সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Bangla Politix নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ১৯ নভেম্বর আলোচিত ভিডিও (আর্কাইভ) সম্বলিত প্রথম পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Bangla Politix Facebook
পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি একটি কমেডি পেজ। বিভিন্ন সময়ে এই পেজটি থেকে কমেডিধর্মী বিভিন্ন পোস্ট প্রচার করতে দেখা যায়।
Screenshot: Facebook
অর্থাৎ, এই পেজটি থেকে আলোচিত ভিডিওটি প্রথমে প্রচার হয় এবং পরবর্তীতে তা আসল ভেবে বিভিন্ন জায়গায় তা ছড়িয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিএনপি’র মিডিয়া সেলের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ১৯ নভেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: BNP Media Cell Facebook
এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র দৃশ্যের হুবহু মিল পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
ভিডিওতে উল্লেখিত তথ্য থেকে জানা যায়, ভিডিওটি গত ১৯ নভেম্বর সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবি ও নির্বাচনী তফসিল বাতিলের দাবিতে ১৯ ও ২০ নভেম্বর ডাকা ৪৮ ঘন্টার দেশব্যাপী সর্বাত্মক হরতাল সমর্থনে রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কে লালমনিরহাট জেলার বড়বাড়ি ইউনিয়ন মহিলাদলের ঝাড়ু মিছিলের সময়ে ধারণকৃত।
ভিডিওটিতে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার করায় সিইসির বিরুদ্ধে আপত্তিকর স্লোগান দিতে শোনা যায়। তবে উক্ত ভিডিওটি’র কোথাও বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের স্লোগান শোনা যায়নি।
এছাড়াও বিএনপি’র অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৯ নভেম্বর ‘গণবিরোধী নির্বাচনী তফসিল বাতিলের দাবিতে লালমনিরহাটে মহিলাদের ঝাড়ু মিছিল’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত উক্ত ভিডিওটি’র দীর্ঘ সংস্করণ খুঁজে পাওয়া যায়। সেখান থেকেও ভিডিওটি’র বিষয়ে একই তথ্য জানা যায়।
Screenshot: BNP YouTube
অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটি বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে বসে থাকায় রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কে লালমনিরহাট জেলার বড়বাড়ি ইউনিয়ন মহিলাদলের ঝাড়ু মিছিলের নয়।
মূলত, গত ১৯ নভেম্বর সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবি ও নির্বাচনী তফসিল বাতিলের দাবিতে ১৯ ও ২০ নভেম্বর ডাকা ৪৮ ঘন্টার দেশব্যাপী সর্বাত্মক হরতাল সমর্থনে রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কে লালমনিরহাট জেলার বড়বাড়ি ইউনিয়ন মহিলাদলের পক্ষ থেকে ঝাড়ু মিছিল করা হয়। পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওটি’তে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ‘তারেকের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’ শীর্ষক স্লোগানের একটি অডিও এবং ‘তারেক জিয়া বিদেশে বসে থাকায় রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কে লালমনিরহাট জেলার বড়বাড়ি ইউনিয়ন মহিলাদলের ঝাড়ু মিছিল’ শীর্ষক বাক্য যুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে বিভিন্ন ভুল তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, বিএনপির হরতালের সমর্থনে রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কে লালমনিরহাট জেলার বড়বাড়ি ইউনিয়ন মহিলাদলের ঝাড়ু মিছিলের ভিডিওকে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে বসে থাকায় মহিলাদলের উক্ত শাখার ঝাড়ু মিছিলের ভিডিও দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
একই দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতের অর্থনীতি চার ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়ার সংবাদটি সঠিক নয় বরং ইউটিউবের একটি ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট ব্যবহার করে গণমাধ্যমে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। তবে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের অর্থনীতি উক্ত মাইলফলক স্পর্শ করতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে গণমাধ্যমে প্রচারিত এ সংক্রান্ত সংবাদগুলোয় ভারতীয় নিউজ ওয়েব পোর্টাল আলজেবরা নামক একটি সূত্রকে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এই নামে ভারতের মূলধারার কোনো সংবাদমাধ্যমের নাম না পাওয়া গেলেও এক্সে (সাবেক টুইটার) Times Algebra নামে ভারতীয় একটি নিউজ পোর্টালের অ্যাকাউন্ট পাওয়া গেছে।
এই অ্যাকাউন্টে গত ১৯ নভেম্বর এক টুইটে উক্ত দাবিটি করা হয়।
Screenshot: X
টুইটে একটি ছবি যুক্ত করা হয়েছে যাতে GDP Live এবং ১৮ নভেম্বর লেখা রয়েছে। এতে বিভিন্ন দেশের নাম এবং পতাকা রয়েছে। পাঁচ নং অবস্থানে ভারতের নামের সাথে ৪০০১১৯১৩৮৯৬০ সংখ্যা দেখা যাচ্ছে।
এই ছবিটির সূত্র অনুসন্ধানে ইউটিউবে Livestream07 নামক একটি চ্যানেলে একই ধরণের ইন্টারফেস সম্বলিত একটি লাইভ স্ট্রিমিং ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
গত ০৬ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই লাইভে যে ডাটাগুলো দেখানো হচ্ছে তার সূত্র হিসেবে ভিডিওটির ডেসক্রিপশন অংশে IMF (international monetary fund) এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
Screenshot: YouTube
কিন্তু আইএমএফ বলছে, তারা এভাবে রিয়েল টাইম ডাটা একত্র করে প্রকাশ করে না৷
আলোচিত দাবির বিষয়ে ভারতের Bank of Baroda এর প্রধান অর্থনীতিবিদ Madan Sabnavis দেশটির ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুমকে বলেছেন, আইএমএফ নিজেরা স্বাধীনভাবে জিডিপি হিসাব করে, এমনটা তিনি মনে করেন না। সংস্থাটি এসব তথ্য সংশ্লিষ্ট সরকার থেকেই সংগ্রহ করে বলেই দাবি তার।
ভারতের জিডিপি’র হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ এবং প্রকাশের দায়িত্বে রয়েছে দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান অফিস (এনএসও)। পরিসংখ্যান ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা এই অফিস বছরে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে এই তথ্য প্রকাশ করে। এই অফিসের মাধ্যমে প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর ওয়েবসাইটে সর্বশেষ জিডিপির তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে গত ৩১ আগস্ট। দেখুন এখানে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ভারতের ব্যাঙ্গালোর ভিত্তিক বিনিয়োগ, গবেষণা এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক স্টার্টআপ Capitalmind এর প্রধান নির্বাহী Deepak Shenoy এর এক্স অ্যাকাউন্টে করা একটি টুইট খুঁজে পাওয়া যায়। গত ১৯ নভেম্বরের টুইটে তিনি লিখেছেন, জুন পর্যন্ত ভারতের জিডিপি ছিল ৩.৩৮ ট্রিলিয়ন ডলার, যা বর্তমানে সর্বোচ্চ ৩.৪৫ ট্রিলিয়ন ডলার হতে পারে।
ভারতের সংবাদমাধ্যম Business Standard এর এডিটোরিয়াল ডিরেক্টর Ashok Bhattacharya বলছেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের অর্থনীতি ৪ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে পারে৷
মূলত, গত ১৯ নভেম্বর দেশের কতিপয় গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়, প্রথমবারের মতো ৪ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে ভারতের অর্থনীতি। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ইউটিউবের একটি লাইভ স্ট্রিমিং ভিডিও থেকে আইএমএফের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের জিডিপির রিয়েল টাইম ডাটা দাবিতে ভুল তথ্য প্রচার করা হচ্ছিল। সেই ভিডিওরই একটি স্ক্রিনশট নিয়ে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট কোনো সূত্র এ বিষয়টি প্রকাশ করেনি। সরকার কর্তৃক এ বিষয়ে সর্বশেষ গত আগস্টে প্রকাশিত তথ্যে সেসময়ের জিডিপি ছিল ৩.৩৮ ট্রিলিয়ন ডলার। তবে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের অর্থনীতি উক্ত মাইলফলক স্পর্শ করতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
সুতরাং, ইউটিউবের একটি ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশটকে ব্যবহার করে ভারতের অর্থনীতি চার ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়ার একটি সংবাদ গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।