সিইসির পদত্যাগ এবং সেনাবাহিনীকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব দেওয়ার গুজব

সম্প্রতি, “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য ক্ষমাচেয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিলো প্রধান নির্বাচন কমিশনার, ভয়ে শেখ হাসিনা শীর্ষক শিরোনাম” ও “ক্ষমা চেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্বে সেনাবাহিনী” শীর্ষক থাম্বনেইলে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। 

সিইসির পদত্যাগ

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণা করে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া বিষয়ক কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার একাধিক ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটিতে আলোচিত দাবিটি প্রসঙ্গে শুরুতেই কয়েকটি ভিডিওর খণ্ডাংশ দেখানো হয়। এছাড়া ভিডিওতে চ্যানেলটির উপস্থাপক কোনো প্রকার তথ্যসূত্র ছাড়া দাবিটি প্রসঙ্গে বলেন, ‘এবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য ক্ষমা চেয়ে পদত্যগের ঘোষণা দিলো প্রধান নির্বাচন কমিশনার। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন,সরকারকে অবশ্যই সমঝোতার মাধ্যমে সকল রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের মাধ্যমেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে নইলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ থেকেই যাবে। এজন্য সরকার অবিলম্বে সংবিধান সংশোধন করে নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিশেষ আহ্বান জানান।’

অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে যুক্ত প্রথম চারটি ভিডিও ক্লিপই ২০২২ সালে ‘ভোটের মাঠে তলোয়ারের বিপরীতে রাইফেল নিয়ে দাঁড়ান’ এমন বক্তব্যের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের ক্ষমা চাওয়ার ঘটনায় মূলধারার গণমাধ্যম যমুনা টিভি, মাছরাঙা টিভি(, ) এবং ডিবিসি নিউজ এ প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদন থেকে নেওয়া।

Video Comparison : Rumor Scanner 
Video Comparison : Rumor Scanner 
Video Comparison : Rumor Scanner 
Video Comparison : Rumor Scanner 

উল্লেখ্য, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০২২ সালের ১৭ জুলাই নির্বাচন ভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে ভোটের সময় সহিংসতা করতে কেউ তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ালে তা প্রতিরোধ করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে রাইফেল নিয়ে প্রতিরোধ করার কথা বলেন সিইসি। 

অর্থাৎ, উক্ত বক্তব্যের সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই উক্ত ভিডিও ক্লিপগুলো আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাথে যুক্ত করা হয়েছে।  

আলোচিত ভিডিওটির সর্বশেষ অংশে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল এর দুইটি ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করা হয়। ভিডিওগুলোর অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০২২ সালের ১৮ জুলাই চ্যানেলে ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে “সংসদ নির্বাচনে বিএনপির না আসার ঘোষণায় সংকটে নির্বাচন কমিশন BNP। Election Commission। Channel 24” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনের ১মিনিট ৩৬ সেকেন্ড এবং ২ মিনিট ৪০ সেকেন্ড থেকে ৩ মিনিট ২১ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটুকু আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত প্রতিবেদনের বিস্তারিত বর্ণনা থেকে জানা যায়, সংসদ নির্বাচনে বিএনপির না আসার ঘোষণায় কমিশন বলছে, এ অবস্থায় নির্বাচন হলেও, তা গ্রহণযোগ্য হবে না। রাজনৈতিক দলের সাথে ধারাবাহিক সংলাপে তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংকটের সমাধান হতে পারে আলোচনা কিংবা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে আবারও সমঝোতার তাগিদ দেন সিইসি।

অর্থাৎ, এই দুইটি ভিডিও ক্লিপও কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওতে যুক্ত করা হয়েছে। 

এছাড়া, মূলধারার গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণা করে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব দেওয়ার সম্পর্কিত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে বাংলাদেশে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে। পরবর্তীতে এই ব্যবস্থা আর পুর্ণবহাল করা হয়নি। 

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি “প্রধান নির্বাচন কমিশনার ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষনা করে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া  হয়েছে” শীর্ষক দাবি যুক্ত করে ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে যে, দাবিটি সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিক তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি  প্রচার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষনে এই ঘোষণা দেন তিনি।

সুতরাং, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ,  তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণা করে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দাবিতে ইন্টারনেট প্রচারিত বিষয়টি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img