সম্প্রতি, ‘নির্বাচনের দায়িত্ব পেলো সেনাবাহিনী। শেখ হাসিনার কথা শুনছে না সেনাবাহিনী’– শীর্ষক ক্যাপশনে এবং ‘সেনাবাহিনী কথা শুনছে না হাসিনার সুষ্ঠু নির্বাচনের দায়িত্ব নিলো আর্মি’ শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়ার তথ্যটি সঠিক নয় বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার একাধিক ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে আলোচিত দাবির ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ৯ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে দেখা যায়, ভিডিওটির শুরুতে কয়েকটি ভিডিওর খণ্ডাংশ দেখানো হয়। পরবর্তীতে 1A News এর সম্পাদন কাজী হেমায়েত উদ্দিন মিশন নামের একজন ও নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানার বক্তব্যের ভিডিও দেখানো হয়৷
ভিডিও যাচাই-১
আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা ভিডিওতে 1A News এর লোগো’র সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে 1A News ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৯ নভেম্বর “হাসিনা কি সেনাবিদ্রোহের ভয়ে ভীত?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর সাথে একটি অংশের আলোচিত ভিডিওর এই অংশের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
১৩ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওতে 1A News এর সম্পাদক কাজী হেমায়েত উদ্দিন মিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেনাবাহিনীর অবস্থান নিয়ে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেছেন।
ভিডিও যাচাই-২
আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা দ্বিতীয় ভিডিওটিতেও বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভি’র লোগো’র সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে এনটিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে গত ২০ নভেম্বর “প্রয়োজনে সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে : রাশেদা সুলতানা” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর সাথে একটি অংশের আলোচিত ভিডিওর এই অংশের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, সোমবার (২০ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রাশেদা সুলতানা সাংবাদিকদের একথা বলেন।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটিতে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার যে ভিডিও ক্লিপগুলো যুক্ত করা হয়েছে সেগুলোতে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়া হয়েছে বিষয়ক কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, বাংলাদেশের মূলধারার কোনো গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়া হয়েছে সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালুর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এরই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি “নির্বাচনের দায়িত্ব পেলো সেনাবাহিনী। শেখ হাসিনার কথা শুনছে না সেনাবাহিনী” শীর্ষক থাম্বনেইল এবং শিরোনামে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। অধিকতর ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে কোনোপ্রকার তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়। এছাড়া, নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রেও আলোচিত দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষনে এই ঘোষণা দেন তিনি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর পেয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।