সম্প্রতি, ‘উইকেট কিপার সহ স্লিপ ও গালি পজিশনে ৯ জন ফিল্ডার ফিল্ডিংয়ে’ শিরোনামে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে দাবি করা হয়েছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট ম্যাচে ‘উইকেট কিপারসহ স্লিপ ও গালি পজিশনে মোট ৯ জন বাংলাদেশি ফিল্ডার ফিল্ডিং করেছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আফগানিস্তানের বিপক্ষে উইকেটকিপারসহ স্লিপ ও গালির ঐ পজিশনে বাংলাদেশের ৯ জন ফিল্ডার ফিল্ডিংয়ে থাকার বিষয়টি সঠিক নয় বরং উক্ত সময়ে উইকেটকিপারসহ ঐ পজিশনে প্রকৃতপক্ষে মোট ৭ জন ফিল্ডার ছিল। মূলত ফটোশপের সহায়তায় ছবি এডিট করে দুই জন ফিল্ডার বেশি বসিয়ে উক্ত পজিশনে ৯ জন ফিল্ডার থাকার ভুয়া এ দাবিটি করা হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে ছবিটি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, উইকেটকিপারসহ ছবিতে থাকা ৯ জন ফিল্ডারের মধ্যে ৭ জন ফিল্ডাররে ছায়া থাকলেও ২ জন ফিল্ডারের ছায়া নেই এবং ঐ দু’জন ফিল্ডারের অনুরূপ ভঙ্গির আরো দু’জন ফিল্ডার সেখানে রয়েছে। অর্থাৎ এ থেকে বোঝা যায় ঐ দুজন ফিল্ডারকে দুটি গ্যাপে এডিট করে বসিয়ে ৯ জন করা হয়েছে।
Photo analysis by Rumor Scanner
পরবর্তীতে আলোচিত ছবিটি খেলার যে সময়ের ফুটেজ থেকে নিয়ে এডিট করা হয়েছে আমাদের প্রথমিক অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়েছে অর্থাৎ টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলায় আফগানিস্তানের প্রথম ইনিংসে যখন খেলার স্কোরকার্ড ১৩ ওভারে ৫২-৪, সেই সময়কার ফুটেজ অনুসন্ধান করে সেখানে ৭ জন ফিল্ডার থাকার বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিত হওয়া গেছে। Rabitholebd Sports ইউটিউব চ্যানেলে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান টেস্টের দ্বিতীয় দিনের হাইলাইটসে ঐ সময়ের ফুটেজটি দেখুন– এখানে।
Screenshot from YouTube
ফুটেজে দেখা যায়, আফগানিস্তান যখন ৪ উইকেট হারিয়ে ১৩ ওভারে ৫২ রান করেছে তখন ঐ অংশে উইকেটকিপারসহ সর্বমোট ৭ জন ফিল্ডার ছিল।
মূলত, সম্প্রতি মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তানের একটি টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত টেস্ট ম্যাচের দ্বিতীয় দিনের খেলা চলাকালে মাঠে কিছুসময় উইকেটকিপারসহ গালি ও স্লিপ পজিশনে মোট সাত ফিল্ডার ফিল্ডিং করেন। তবে উক্ত ঘটনার মুহুর্তে ধারণ করা একটি ছবি ফটোশপের সাহায্যে এডিট করে ৭ জন ফিল্ডারের সাথে আরো ২ জন ফিল্ডারের ছবি যুক্ত করে প্রচার হচ্ছে যে, ঐ দিন মাঠে গালি-স্লিপ-কিপিং পজিশনে মোট ৯ জন ফিল্ডার ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১৪ জুন শুরু হওয়া এই টেস্ট ম্যাচের চতুর্থ দিনে অর্থাৎ গত ১৭ জুন এক দিন হাতে রেখেই ৫৪৬ রানের ব্যবধানে জয় লাভ করে বাংলাদেশ।
সুতরাং, আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে উইকেটকিপারসহ গালি ও স্লিপ পজিশনে বাংলাদেশের ৯ জন ফিল্ডার থাকার বিষয়টি মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি এডিটেড।
বিগত কয়েক বছর ধরেই ফেসবুকের অসংখ্য পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফেসবুকের কোনো পোস্টের কমেন্টে @[4:0] লিখলে সেটি যদি পরিবর্তন হয়ে ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের নাম প্রদর্শন করে তাহলে বুঝে নিতে হবে উক্ত ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট কখনো হ্যাক হয়নি।
একই দাবিতে ২০১৯ সালে প্রচারিত ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)
একই দাবিতে ২০১৮ সালে প্রচারিত ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে ইউটিউবের একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফেসবুক কর্তৃপক্ষের বক্তব্য দাবিতে প্রচার হয়ে আসা ফেসবুকের কোনো পোস্টের কমেন্টে @[4:0] লিখলে সেটি যদি পরিবর্তন হয়ে মার্ক জাকারবার্গের নাম প্রদর্শন করলে উক্ত ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট কখনো হ্যাক হয়নি বুঝে নিতে হবে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এমন কোনো বক্তব্য দেয়নি। তাছাড়া, @[4:0] জাকারবার্গের আইডি নাম্বার যার সাথে অন্যান্য ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকের সম্পর্ক নেই।
ফটোকার্ডের সূত্র ধরে অনুসন্ধান
এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে একটি ফটোকার্ড গেল কয়েক বছর ধরে ভাইরাল হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম, যেখানে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের ছবি ব্যবহার করে উক্ত দাবিটি প্রচার হতে দেখা যায়।
Screenshot source: Facebook
ফটোকার্ডে ‘Amazing নলেজ’ নামক দুই শব্দের একটি নাম দেখা যায়, যার সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে একই নামে ভারত থেকে পরিচালিত একটি ফেসবুক পেজ খুঁজে পাওয়া যায়। পেজটির ২০১৯ সালের এপ্রিল পূর্ব পোস্টগুলোর ফটোকার্ডের সাথে আলোচিত দাবিটির ফটোকার্ডের ডিজাইন এবং লোগোর মিল পাওয়া যায়।
Screenshot source: Facebook
তবে পেজটির ২০১৯ সাল পূর্ব সকল পোস্ট পর্যবেক্ষণ করেও আলোচিত ফটোকার্ডটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে ২০১৮ সালের ১২ নভেম্বর ফেসবুকে ‘The তথ্যgraph Media’ নামে একটি ফেসবুক পেজে একই ফটোকার্ড ব্যবহার করে প্রকাশিত একটি পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণের সংবাদের ক্লিপ সম্বলিত পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot source: Facebook
উক্ত সংবাদের ক্লিপ থেকে জানা যায়, ভারতের পূর্ব বর্ধমান পুলিশের ফেসবুক পেজে সে বছরের (২০১৮) ২৭ অক্টোবর আলোচিত ফটোকার্ডটি পোস্ট করে এই ট্রিকসকে সত্য বলে দাবি করা হয়৷
যদিও পূর্ব বর্ধমান পুলিশের ফেসবুক পেজে পোস্টটি খুঁজে পাইনি আমরা, তবে অনুসন্ধানে সংবাদটির মূল ক্লিপের অনলাইন সংস্করণ খুঁজে পাওয়া যায়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এই সময় ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর সংবাদটি প্রকাশ করে।
‘The তথ্যgraph Media’ এর পোস্টে সংবাদে দেওয়া তথ্যকে মিথ্যা আখ্যায়িত করে বলা হয়, “এই গুজবটি প্রথম ছড়ায় ২০১৫ সালে, তারপর আবার এখন ২০১৮ তে।”
এই তথ্যের সাথে আন্তর্জাতিক ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা Snopes এর একটি প্রতিবেদনের তথ্যের মিল পাওয়া যায়। স্নোপস ২০১৫ সালে একই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ প্রতিষ্ঠানটি বলছে, সে বছরের সেপ্টেম্বরে আলোচিত দাবিটি ছড়িয়ে পড়তে দেখে তারা।
স্নোপস বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছে এভাবে, পোস্টের কমেন্টে @[4:0] লিখলে মার্ক জাকারবার্গের নাম ভেসে আসে যা সিকিউরিটির সাথে সম্পর্কিত না। তাছাড়া, কমেন্টে @[4:0] লিখলে সকলের কমেন্টে মার্ক জাকারবার্গ প্রদর্শিত হয় না। অপারেটিং সিস্টেম ভেদে এটির ভিন্ন ভিন্ন ফল আসে।
রিউমর স্ক্যানার টিম এ বিষয়ে এক্সপেরিমেন্ট করে দেখতে পায়, অ্যান্ড্রয়েড ফোন দিয়ে পোস্টের কমেন্টে @[4:0] লিখলে মার্ক জাকারবার্গ প্রদর্শিত হয়। কিন্তু অ্যাপলের ম্যাকবুক দিয়ে লিখলে জাকারবার্গের নাম প্রদর্শিত হয় না। @[4:0]’ই কমেন্ট হিসেবে প্রদর্শিত হয়।
Screenshot collage: Rumor Scanner
রিউমর স্ক্যানার টিম পরবর্তীতে এমন এক ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে, যার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট সাম্প্রতিক সময়ে হ্যাক হওয়ার পর তিনি সেটি উদ্ধার বা ফিরে পেতে সক্ষম হয়েছেন। আলোচিত পোস্টগুলোর দাবি অনুযায়ী, পোস্টের কমেন্টে @[4:0] লিখলে মার্ক জাকারবার্গ এর নাম প্রদর্শন না করে তাহলে বুঝে নিতে হবে উক্ত ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট পূর্বে কখনো হ্যাক হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে আমাদের অনুরোধে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উক্ত ব্যক্তি তার একটি পোস্টের কমেন্টে @[4:0] লিখে সাবমিট করার পর দেখতে পান, কমেন্ট হিসেবে মার্ক জাকারবার্গ এর নামই প্রদর্শিত হচ্ছে।
Screenshot source: Rumor Scanner
অর্থাৎ, এ থেকেই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়।
তাছাড়া, আলোচিত দাবিটিকে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের বক্তব্য বলে দাবি করা হলেও ফেসবুকের এমন কোনো বক্তব্য অনুসন্ধানে পাওয়া যায়নি।
@[4:0] দিয়ে কেন জাকারবার্গের নাম কমেন্টে প্রদর্শিত হচ্ছে?
মার্কিন সংবাদমাধ্যম Business Insider এর এক প্রতিবেদনে এসেছে, ফেসবুকের প্রথমদিকের অ্যাকাউন্টগুলোর একটি করে আইডি কোড থাকতো যা শুরু হয়েছিল 1 দিয়ে। 1, 2, 3 এই তিন আইডি কোড ধারী অ্যাকাউন্ট মার্ক জাকারবার্গেরই ছিল যা পরীক্ষা এবং ট্রায়ালের জন্য খোলা হয়। 4 আইডি কোডধারী অ্যাকাউন্টটিও মার্ক জাকারবার্গের এবং এটিই তার অফিশিয়াল অ্যাকাউন্ট। সংখ্যাভিত্তিক এই ধরনের কোড কমেন্টে পোস্ট করা হলে “@” ও ব্র্যাকেটের চিহ্নগুলি ফেসবুকের সিস্টেমকে নির্দিষ্ট সেই অ্যাকাউন্টের নামটি লেখার নির্দেশ দেয়।
এই কোডে থাকা কোলন ও শূন্যটি ফেসবুকের অ্যাকাউন্টের নামটিকে হাইপারলিংকে পরিবর্তিত হতে বাধা দেয়।
সকল অ্যাকাউন্টেরই কি জাকারবার্গের মতো এমন কোড আছে?
ফেসবুকের সকল অ্যাকাউন্টের Url এ একটি নাম্বার বা কোড রয়েছে যা দিয়ে জাকারবার্গের আইডির কোডের মতো একই পন্থায় কমেন্ট করলে নিজেদের আইডির নামই কমেন্টে প্রদর্শিত হবে।
যেমন, রিউমর স্ক্যানারের পেজের url এর নাম্বার 100063242680226। এটি যদি একইভাবে @[100063242680226:0] এভাবে কমেন্টে লেখা হয়, তাহলে রিউমর স্ক্যানারের নাম প্রদর্শিত হতে দেখা যায়।
Screenshot source: Rumor Scanner
যে কেউ এভাবে তার অ্যাকাউন্টের url থেকে এই কোডটি পেয়ে যেতে পারেন। কিছু থার্ড পার্টি সাইটে অ্যাকাউন্টের লিংক বসিয়েও নাম্বারটি পাওয়া সম্ভব।
‘বিজনেস ইনসাইডার’ বলছে, কম অংকের সংখ্যাগুলো সাধারণত ফেসবুকে প্রথমদিকের খোলা অ্যাকাউন্টগুলোর হওয়ায় জাকারবার্গের পেজটির আইডি এক সংখ্যার নম্বর।
মূলত, গেল কয়েক বছর ধরেই ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফেসবুকের কোনো পোস্টের কমেন্টে @[4:0] লিখলে সেটি যদি পরিবর্তন হয়ে ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের নাম প্রদর্শন করে তাহলে বুঝে নিতে হবে উক্ত ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট কখনো হ্যাক হয়নি। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এমন কোনো বক্তব্যই দেয়নি। তাছাড়া, @[4:0] জাকারবার্গের আইডি নাম্বার যার সাথে অন্যান্য ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকের কোনো সম্পর্ক নেই। এমন নাম্বার ফেসবুকের সকল অ্যাকাউন্টেরই রয়েছে। এমনকি হ্যাক হওয়ার পর ফিরে পেয়েছে এমন একটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেও বিষয়টি যাচাই করে উক্ত দাবিটি মিথ্যা বলে প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ফেসবুকের কমেন্টে @[4:0] কোড লিখে অ্যাকাউন্টের সুরক্ষা যাচাই করা যায় শীর্ষক একটি দাবি গেল কয়েক বছর ধরেই ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, পাঠ্য বইয়ে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়া সম্পর্কিত পাঠে এক যুবক ও যুবতীর চুম্বনরত অবস্থার দৃশ্য রয়েছে দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়া সম্পর্কিত পাঠে যুবক যুবতীর চুম্বনরত অবস্থার ছবি থাকার বিষয়টি সত্য নয় বরং মূল বইয়ে থাকা ছবিকে এডিট করে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া উক্ত দাবির সত্যতা যাচাইয়ে বিভিন্নভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম। এর অংশ হিসেবে দাবিকৃত ভাইরাল ফেসবুক পোস্টগুলোর কমেন্ট সেকশন পর্যালোচনা করা হয়।
দাবিকৃত একটি পোস্টের কমেন্টে ইসরাত জাহান নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী জানিয়েছেন, বইটি এইচএসসির জীববিজ্ঞান দ্বিতীয়পত্রের, যার লেখক গাজী আজমল।
ফেসবুক কমেন্টের স্ক্রিনশট।
দাবির প্রেক্ষিতে প্রমাণ হিসেবে কমেন্টে বইয়ের একটি ছবিও সংযুক্ত করেছেন ইসরাত। কমেন্টে সংযুক্ত ছবিতে বইয়ের উপরের অংশ দেখে বোঝা যায় বইটি জীববিজ্ঞান দ্বিতীয়পত্র বইয়ের ১৮০ পৃষ্ঠা।
সংযুক্ত করা উক্ত ছবির সাথে দাবিকৃত ছবির অমিলও লক্ষ করা যায়। এ ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন যুবক এক শিশুকে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় শ্বাস দিচ্ছেন।
সামাজিক যোগাযোগ বইয়ের পৃষ্ঠা দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ছবি এবং ভাইরাল পোস্টের কমেন্ট থেকে প্রাপ্ত বইয়ের বৈসাদৃশ্যতা।
সামাজিক যোগাযোগ বইয়ের পৃষ্ঠা দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ছবি এবং ভাইরাল পোস্টের কমেন্ট থেকে প্রাপ্ত বইয়ের বৈসাদৃশ্যতা।
পরবর্তীতে নিজ সূত্রের মাধ্যম লেখক গাজী আজমল এর একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জীববিজ্ঞান দ্বিতীয়পত্রের ২০২১ সালে মুদ্রিত অষ্টম সংস্করনের প্রয়োজনীয় কিছু ছবি সংগ্রহ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তবে এই বইয়ের ১৮০ পৃষ্ঠায় কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়া সম্পর্কিত পাঠ নেই।
বইটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে ২৪৭ পৃষ্ঠায় কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়া সম্পর্কিত পাঠ পাওয়া যায়, তবে সেখানে থাকা ছবির সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবির কোনো মিল পাওয়া যায়নি।
লেখক গাজী আজমল এর একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জীববিজ্ঞান দ্বিতীয়পত্র বইয়ের অষ্টম সংস্করণের ছবি।
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ছবিটি সাথে বইয়ে থাকা ছবির অমিল দেখা যায়। দুইটি ছবি পাশাপাশি রেখে পার্থক্য করলে দেখা যায় মূল বইয়ে থাকা ছবির শিশুকে এডিট করে নারী বানানো হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বইয়ের দৃশ্য দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ছবি এবং মূল বইয়ের পার্থক্য।
মূলত, ‘কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়া সম্পর্কিত পাঠে এক যুবক ও যুবতীর চুম্বনরত অবস্থার ছবি রয়েছে’ শীর্ষক দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। উক্ত দাবির প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি লেখক গাজী আজমল এর একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জীববিজ্ঞান দ্বিতীয়পত্রের ২০২০ সালে মুদ্রিত সপ্তম সংস্করণের। মূল বইয়ে একজন যুবক কর্তৃক কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় এক শিশুকে শ্বাস দেওয়ার দৃশ্য রয়েছে। সে ছবিকেই ফটোশপের সহায়তায় এডিট করে যুবক ও যুবতীর চুম্বনরত অবস্থার ছবি বানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে নবম-দশম শ্রেণির পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের একটি ছবি ও ক্যাপশন এডিট করে ‘কাগজ দিয়ে ভোকাল কর্ড বানিয়ে সিগারেট পান করা যায়’ শীর্ষক তথ্য পদার্থবিজ্ঞানের পাঠ্যবইয়ে রয়েছে দাবি করা হলে তা বিষয় নিয়ে ফ্যাক্টচেক করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সুতরাং, পাঠ্য বইয়ে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়া সম্পর্কিত পাঠে এক যুবক ও যুবতীর চুম্বনরত অবস্থার দৃশ্য রয়েছে দাবিতে প্রচারিত ছবিটি এডিটেড বা বিকৃত।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ের বন্যার দৃশ্য দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি এডিটেড বা সম্পাদনাকৃত। প্রকৃতপক্ষে ২০২২ সালে সিলেটে হয়ে যাওয়া বন্যার খণ্ড খণ্ড পুরানো ভিডিও ক্লিপ সংযুক্ত করে সিলেটের বর্তমান বন্যার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধান যেভাবে
অনুসন্ধানের শুরুতেই রিউমর স্ক্যানার টীম সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ের বন্যার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটিতে একটি গণমাধ্যমের লোগো ঝাপসা করে দেওয়া লোগো ও সময় টিভির একটি মাইক্রোফোন দেখতে পায়।
এই লোগো ও মাইক্রোফোনের সূত্রে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালে সিলেটে বন্যা নিয়ে প্রচারিত তিনটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওগুলোর সঙ্গে সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ের বন্যার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে থাকা একাধিক দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
এর মধ্যে ২০২২ সালের ২২ মে সময় টিভিতে ‘ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির ২৪ সেকেন্ড থেকে ৩৪ সেকেন্ড সময় পর্যন্ত দৃশ্যের সঙ্গে সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ের বন্যার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল দেখা যায়।
Image Collage: Rumor Scanner
একই বছরের ১৭ জুন সময় টিভিতে ‘সিলেটের হাওড়াঞ্চলে আবারও ভয়াবহ বন্যা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি ভিডিও প্রতিবেদনের ৩৬ সেকেন্ড থেকে ৪৬ সেকেন্ড সময় পর্যন্ত দৃশ্যের সঙ্গে আলোচিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।
Image Collage: Rumor Scanner
এছাড়া ২০ জুন ‘সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি এখনও অপরিবর্তিত!’ শীর্ষক শিরোনামে সময় টিভিতে প্রকাশিত আরেকটি ভিডিও প্রতিবেদনের ৫ সেকেন্ড থেকে ৩৪ সেকেন্ড সময় পর্যন্ত দৃশ্যের সঙ্গেও আলোচিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।
Image Collage: Rumor Scanner
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ের বন্যার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির বৃহৎ অংশই সময় টিভির ২০২২ সালের সিলেটের বন্যার সময়ের বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে নেওয়া।
রিউমর স্ক্যানার টিম পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা অন্যান্য অংশগুলো নিয়ে অনুসন্ধান চালায়। এতে আলোচিত ভিডিওটির শুরুতেই থাকা অংশটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টিভি চ্যানেল এখন টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ১৭ জুন ‘ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে সিলেটের বন্যা, চারদিকে হাহাকার’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনের প্রথম ১৫ সেকেন্ড অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।
Image Collage: Rumor Scanner
একই ভিডিও প্রতিবেদনের ১ মিনিট ১২ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ১৫ সেকেন্ড সময়ে প্রদর্শিত দৃশ্যের সঙ্গেও আলোচিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।
মূলত, ২০২২ সালের মে মাসে আসাম ও অরুণাচল প্রদেশে অধিক বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদী, কুশিয়ারা নদী ও অনান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। সেই সময়ে এ নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তবে সম্প্রতি সেসব ভিডিও থেকেই বিভিন্ন অংশ কেটে নিয়ে সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ের বন্যার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে, ফলে বাড়ছে নদ-নদীর পানি। আগামী ৭২ ঘণ্টায় বাংলাদেশের উজানে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে এবং এর ফলে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার কিছু নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
সুতরাং, ২০২২ সালের সিলেটের বন্যার দৃশ্যকে সাম্প্রতিক সময়ের সিলেটের বন্যার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।
বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে “সৌদির স্কুলে পড়ানো হবে রামায়ণ-মহাভারত” শীর্ষক শিরোনাম সহ সমজাতীয় শিরোনামে একটি দাবি প্রচার হয়ে আসছে।
অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো ও যুগান্তর এর ছাপা পত্রিকায় দাবিটি প্রকাশের প্রমাণ পাওয়া যায়।
Collage by Rumorscanner
এ ছাড়াও ভারতীয় একটি ছাপা পত্রিকার অংশবিশেষ এর ছবি পাওয়া গেছে। যদিও ছবি থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি এটি কোন পত্রিকায় ছাপানো হয়েছিল। তবে একটি নিউজ পোর্টালের প্রতিবেদনের ফিচার ইমেজ হিসেবে ছবিটি পেয়েছি এবং একইসাথে প্রতিবেদনের শেষে “23 এপ্রিল যুগশঙ্খ” উল্লেখ করা হয়েছে। ছাপা পত্রিকার অংশবিশেষ এর ছবিটিতেও ২৩ এপ্রিল উল্লেখ করা রয়েছে।
অনসুন্ধানে যুগশঙ্খ নামের একটি পত্রিকা ও এর ই-পেপার সাইট পাওয়া গেছে। যদিও ই-পেপারটি সাবস্ক্রিপশন মডেলের হওয়ায় ক্রসচেক করা হয়নি।
Screenshot: ritambangla
দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে
টুইটারের প্রচারিত এমন কিছু পোস্টের আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
এর মধ্য একটি টুইট (দাবি) করা হয়েছে রামানন্দ সাগর পরিচালিত “রামায়ণ” টেলিভিশন সিরিজে লক্ষ্মণ চরিত্রে অভিনয় করা সুনীল লাহরী’র টুইটার থেকে। বিষয়টি নিয়েও সংবাদ প্রকাশ করেছে রিপাবলিক ওয়ার্ল্ড।
এছাড়াও, “Amrita Bhinder” এর ভেরিফাইড টুইটার প্রোফাইল থেকে দাবিটি টুইট করা হলেও পরে টুইটটি মুছে ফেলা হয়েছে।
দাবির সূত্রপাত
গত ২০২১ সালের ১৬ই এপ্রিল ন্যাশন ওয়ার্ল্ড নিউজ এবংওপি-ইন্ডিয়া হিন্দি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে যে, সৌদি আরবের ‘ভিশন-২০৩০’ এর অধীনে শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক কোর্সের অংশ হিসাবে রামায়ণ এবং মহাভারত সহ অন্যান্য দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি শেখানো হচ্ছে। উভয় প্রতিবেদনে-ই কোর্সের অংশ (চিত্র) হিসেবে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটের ‘ফিল ইন দ্য ব্ল্যাংকস’ বা শূন্যস্থান পূরণ সম্বলিত প্রশ্নপত্রের কয়েকটি স্ক্রিনশটও যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রশ্ন (Q21) -এ উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতের দুটি সর্বশ্রেষ্ঠ মহা ‘কাব্য’ হলো রামায়ণ এবং মহাভারত (উত্তর সহ)।
প্রতিবেদনে উল্লিখিত স্ক্রিনশট বা চিত্রসমূহের ক্ষেত্রে “Nouf Almarwaai” নামের একজন সৌদি ইয়োগা প্রশিক্ষক ও পদ্মশ্রী বিজয়ী’র ভেরিফাইড একাউন্টের টুইট’কে সোর্স হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
Screenshot: Twitter/Nouf Almarwaai
বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে দাবিটি ছড়িয়ে পড়ে।
কেন বিভ্রান্তি
“Nouf Almarwaai” তার টুইটের ক্যাপশনে হ্যাশট্যাগসহ Vision2030 উল্লেখ করার ফলে এবং ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট স্কুলের কারিকুলামের বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ না রাখার ফলে ব্যবহারকারীগণ এবং গণমাধ্যম দাবিটিকে সৌদির জাতীয় পাঠ্যক্রম (কারিকুলাম) ভেবে বিভ্রান্ত হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিশন ২০৩০ এর অধীনে “সৌদির স্কুলে পড়ানো হবে রামায়ণ-মহাভারত” শীর্ষক দাবিটি সত্য নয় বরং সৌদি আরবের প্রাইভেট বিদেশী স্কুলগুলোতে বিদেশী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে নিজ নিজ দেশের পাঠ্যক্রম রয়েছে এবং তা সৌদি আরবের জাতীয় পাঠ্যক্রমের অংশ নয়। এছাড়াও, ভিশন ২০৩০ এর আগে থেকেই প্রাইভেট বিদেশী স্কুলগুলোতে এই পাঠ্যক্রম রয়েছে।
অনুসন্ধান
অনুসন্ধানে সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০ সম্পর্কে সৌদি সরকারের অফিশিয়াল সাইটে পাওয়া যায়; প্রাণবন্ত সমাজ, সমৃদ্ধ অর্থনীতি, একটি উচ্চাভিলাষী জাতি, সৌদি আরবের উন্নয়ন কৌশলগত পরিকল্পনা সহ বেশকিছু পরিকল্পনা নিয়ে এই ভিশন ২০৩০।
Screenshot: my.gov.sa
তবে আলোচিত প্রতিবেদন দুটিতে (উপরে উল্লিখিত) এবং “Nouf Almarwaai” এর টুইটে “ভিশন ২০৩০” এর সাথে আলোচিত দাবিটি যেভাবে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, সেভাবে “ভিশন ২০৩০” এর উদ্দেশ্য এর দাবিটি সরাসরি কোথাও উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
এডভান্স গুগল অনুসন্ধান পদ্ধতি ব্যবহার করে “ভিশন ২০৩০” এর অফিশিয়াল সাইট এবং এই সংক্রান্ত তথ্য উল্লেখ আছে এমন আরো একটি অফিশিয়াল সাইটেও সরাসরি এ জাতীয় (দাবির) কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
Collage by Rumorscanner
এছাড়াও, অনুসন্ধানে আরব নিউজ পাকিস্তানের সাংবাদিক “Naimat Khan” এর একটি টুইট খুঁজে পাওয়া যায়। টুইটে আলোচিত দাবিটি একটি ভিডিও প্রতিবেদন সংযুক্ত করে তিনি লিখেন, “@WIONews সহ অনেক ভারতীয় মিডিয়া আউটলেট এই #ফেকনিউজটি ছড়িয়ে দিচ্ছে যে শীঘ্রই সৌদি আরবের স্কুলগুলোতে রাজ্যের নতুন #ভিশন 2030 এর অংশ হিসাবে রামায়ণ এবং মহাভারত পড়ানো হবে।” অর্থাৎ, তিনি দাবিটিকে ফেইক নিউজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
Screenshot: Naimat Khan’s Twitter Thread
তার এই টুইটের থ্রেডেও (একই টুইটে সিরিজ পোস্ট বা কমেন্ট) বেশকিছু তথ্য উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে, ইন্ডিপেন্ডেন্ট সৌদি পলিটিক্যাল এনালিস্ট “Omar Al Ghamdi” এর একটি টুইটের (রি-টুইট) স্ক্রিনশট উল্লেখ করা হয়েছে।
এই সূত্র অনুযায়ী তার টুইটটি (রি-টুইট) খুঁজে পাওয়া যায়। টুইটে (রি-টুইট) তিনি দাবিটি প্রথম টুইটকারী “Nouf Almarwaai”কে উদ্দেশ্য করে উল্লেখ করেছেন, “আপনার ছেলে সৌদি আরবের একটি আন্তর্জাতিক ভারতীয় স্কুলে অধ্যয়ন করছে। এই স্কুলগুলোতে #Vision2030 এর আগে থেকেই এই পাঠ্যক্রম ব্যবহার করে আসছে, সুতরাং বিদেশী পাঠ্যক্রমের সাথে Vision2030 সম্পৃক্তকরণের বিষয়টি মিথ্যা (ভাবানুবাদ)”। অর্থাৎ, Vision2030 এর আগে থেকেই সৌদি আরবের প্রাইভেট বিদেশী স্কুলগুলোতে বিদেশী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে নিজ নিজ দেশের পাঠ্যক্রম রয়েছে তবে তা সৌদি আরবের জাতীয় পাঠ্যক্রমের অংশ নয়।
Screenshot: Twitter/Omar Al Ghamdi
এছাড়াও, সৌদি কলামিস্ট Ibrahim Al-Sulaiman এর একটি টুইট (রিটুইট) খুঁজে পাওয়া যায়। তিনি উল্লেখ করেন, “মিসেস নউফ, নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের জন্য তাদের প্রাইভেট ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে শিক্ষার বিষয়ে স্বাধীনতা রয়েছে, যা সম্প্রদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, এবং এই বিষয়টি (সৌদিতে) নতুন নয়। এ জাতীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাদের নিজস্ব কাঠামো এবং পাঠ্যক্রম রয়েছে যা বেসরকারি পাঠ্যক্রম। বিষয়টিকে সৌদির স্থানীয় পাবলিক শিক্ষা পাঠ্যক্রমের সাথে মিশ্রিত করা যাবে না।”
দাবি খন্ডন করে আপ্লোড করা আরো দুটি টুইট দেখুন এখানে এবং এখানে (রিপ্লাই)।
পাশাপাশি, অনুসন্ধানে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম “The Milli Chronicle” এ ২০২১ সালের ২৯ এপ্রিল “এখন পর্যন্ত সৌদি আরবের জাতীয় পাঠ্যক্রমে রামায়ণ এবং মহাভারত নেই (অনূদিত)” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, “রিয়াদ-ভিত্তিক ডেন্টাল স্পেশালিস্ট ডঃ সামিনা খান দাবিটি তদন্ত করে বলেন, ‘জাতীয় পুরো পাঠ্যক্রমের পাঠ্য আরবি ভাষায় (দাবির অনুযায়ী ইঙ্গরেজিতে নয়) এবং সমগ্র সামাজিক শিক্ষা পাঠ্য বইয়ে মহাভারত বা রামায়ণের কোনো উল্লেখ নেই। ডঃ খান সৌদির পাবলিক কারিকুলামের সোশ্যাল স্টাডিজ বইয়ের পিডিএফ ডকুমেন্টও শেয়ার করেছেন, যাতে বিদেশী অধ্যয়নের কোনো নতুন প্রবর্তন নেই।”
এছাড়াও আরো উল্লেখ করা হয়, “অবশেষে, আলমারওয়াই বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন যে তার আগের টুইটটি সৌদি আরবের আন্তর্জাতিক পাঠ্যক্রমের বিষয়ে ছিল জাতীয় পাঠ্যক্রম নয়, এবং এর মানে এই নয় যে এটি শিক্ষার্থীদের হিন্দু ধর্ম শেখায় (ভাবানুবাদ)।”
এ বিষয়ে Nouf Almarwaai কী বলেছেন
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে অল্টারনেটিভ নিউজ’কে Nouf Almarwaai এর টুইট প্রসঙ্গ ব্যতীত ব্যবহার করা হয়েছে জানিয়ে বলেছেন, “আমি স্বাভাবিকভাবে টুইট করেছিলাম যে আমি আমার ছেলেকে ভারতীয় উপমহাদেশের বিষয়গুলি শেখানো আমি উপভোগ করেছি। আমার ছেলে একটি বেসরকারি স্কুলে পড়াশোনা করে এবং এর পাঠ্যক্রম শিক্ষা মন্ত্রণালয় দ্বারা অনুমোদিত। আমি নিশ্চিত করতে পারি যে আমার ছেলের স্কুলে রামায়ণ ও মহাভারত পড়ানো হচ্ছে না। এটি শুধুমাত্র দক্ষিণ এশিয়ান শিল্প বিভাগের সাহিত্য উপশিরোনামের অধীনে ভারতের একটি ঐতিহাসিক মহাকাব্য হিসাবে (একক তথ্য) উল্লেখ করা হয়েছিল। ‘শূন্যস্থান পূরণ করুন’ শীর্ষক প্রশ্নপত্রের স্ক্রিনশটগুলি আমার ছেলে যে দশম শ্রেণীতে পড়ে তার। পরীক্ষিত বিষয় ছিল সামাজিক অধ্যয়ন এবং বিশ্ব ভূগোল।
আমি লক্ষ্য করেছি যে বেশ কয়েকটি মিডিয়া আউটলেট সৌদি আরবের ভিশন 2030 সম্পর্কিত একটি মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করার জন্য আমার টুইট ব্যবহার করেছে। তবে আমি এটি পরিষ্কার করতে চাই যে এর মধ্যে একটি মিডিয়াও বিষয়টি নিয়ে আমার কাছে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। আমি তাদের অনুরোধ করছি প্রসঙ্গ ছাড়াই আমার বক্তব্য প্রকাশ করার আগে আমার সাথে যোগাযোগ করুন (ভাবানুবাদ)।”
মূলত, সৌদিতে বসবাসরত Nouf Almarwaai নামক একজন ব্যবহারকারী টুইটারে তার সন্তানের আন্তর্জাতিক প্রাইভেট স্কুলের প্রশ্নপত্রের ছবি টুইট করেন। সেই প্রশ্নপত্রে “ভারতের দুটি মহাকাব্য: রামায়ন-মহাভারত” শীর্ষক প্রশ্নটি উল্লেখ ছিল। কিন্তু Nouf Almarwaai তার টুইটে ভিশন ২০৩০ উল্লেখ করায় এবং প্রশ্নপত্রটি কিংবা এর সাথে সংশ্লিষ্ট পাঠ্যক্রমটি যে আন্তর্জাতিক প্রাইভেট স্কুলের; সৌদির জাতীয় পাঠ্যক্রমের নয় সেটি এড়িয়ে যাওয়ায় তার টুইটের বরাতে ভারতীয় গণমাধ্যমে ভুল তথ্যটি প্রচারিত হয়। পরবর্তীতে ভারতীয় গণমাধ্যম হয়ে দাবিটি বাংলাদেশের গণমাধ্যমেও প্রচারিত হয়।
প্রসঙ্গত, গণমাধ্যমে প্রচারিত ভুল তথ্য নিয়ে ইতোপূর্বে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফ্যাক্ট-চেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে সৌদির ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট স্কুলের পাঠ্যক্রম’কে “সৌদির স্কুলে (জাতীয় পাঠ্যক্রমে) পড়ানো হবে রামায়ণ-মহাভারত” শীর্ষক দাবি প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “ঘটনাটি ময়মনসিংহের, হালুয়াঘাটের। শ্বশুরবাড়ি থেকে ডিস্কভার বাইক দেওয়ার কথা ছিলো কিন্তু দিয়েছেন মেট্রো বাইক। তাই রাগের বসেই নিজের উঠানে কবরস্থ করেছে সেই বাইক। বিয়ের মাত্র ১ সপ্তাহ যেতেই এই ঘটনা।” শীর্ষক ক্যাপশনে কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শ্বশুরবাড়ি থেকে ডিসকভার বাইক না দিয়ে টিবিএস মেট্রো বাইক দেওয়ায় সেই বাইক উঠানে কবরস্থ করার ঘটনাটি সত্য নয় বরং উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো একটি স্ক্রিপ্টেড ভিডিও থেকে নেওয়া।
গত ১৫ জুন বিনোদন কনটেন্ট ভিত্তিক ফেসবুক পেজ মেজো ভাই’ থেকে মোটরসাইকেল কবর দেওয়ার একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। কিন্তু সেই ভিডিওটি পরবর্তীতে পেজ থেকে পরবর্তীতে সরিয়ে নেওয়া হয়।
ভিডিওতে দাবি করা হয়, যৌতুক হিসেবে শ্বশুরবাড়ি থেকে জামাইয়ের পছন্দ অনুযায়ী ডিসকভার বাইক না দিয়ে টিবিএস মেট্রো বাইক দেওয়ায় সেই বাইক উঠানে কবরস্থ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে একই ফেসবুক পেজে(মেঝো ভাই) মোটরসাইকেল কবর দেওয়ার ভিডিওকে সাজানো দাবি করে আরেকটি ভিডিও প্রচার করে। কিন্তু সেটিও পরবর্তীতে পেজ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। পূর্বের ভিডিওর মতো এই ভিডিওটির ইন্টারনেটে অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
‘Gang Emon Official’ নামক ফেসবুক পেজে “শ্বশুর বাড়ির গাড়ি মাটি চাপা দেওয়াই যেন যেন কাল হলো তার” শীর্ষক ক্যাপশনে হুবহু একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওতে ‘মেজো ভাই’ ফেসবুক পেজের অ্যাডমিন জানান, ভিডিওটি সত্য নয় এবং সেটি তারা কন্টেন্টের জন্য তৈরি করেছেন।
Screenshot from Facebook
এছাড়া মূলধারার গণমাধ্যম ‘আরটিভি’ এর ওয়েবসাইটে গত ১৭ জুন “মোটরসাইকেল কবর দেওয়ার ঘটনা সাজানো নাটক” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। সংবাদ প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায় “আকিকুল বাশার ও ইলিয়াস আহমেদ দুইজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ভাইরাল হওয়ার জন্য এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন।
Screenshot from RTV
ভিডিওর প্রসঙ্গে আকিকুল বাশার আরটিভিকে বলেন, ‘আমরা বিডি আকিকুল ও মেজো ভাই পেজে নিয়মিত কনটেন্ট আপলোড করি। সেই ধারবাহিকতায় প্রথমে বাইক নিয়ে একটি ভিডিও বানাই। কিন্তু সেটি ভাইরাল হয়নি। পরে যৌতুককে কেন্দ্র করে বাইক কবর দেওয়ার ঘটনা সাজানো হয়। আমি আসলে বিয়েই করিনি।’
ইলিয়াস বলেন, ‘মূলত মজা করেই ভিডিওটি বানানো হয়েছে। এখন সেটি ভাইরাল হয়ে গেছে।’
মূলত, গত ১৫ জুন বিনোদন কনটেন্ট ভিত্তিক ফেসবুক পেজ মেঝো ভাই মোটরসাইকেল কবর দেওয়ার একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। উক্ত ভিডিওতে দাবি করা হয়, শ্বশুরবাড়ি থেকে ডিসকভার বাইক না দিয়ে টিবিএস মেট্রো বাইক দেওয়ায় সেই বাইক উঠানে কবরস্থ করা হয়েছে। পরবর্তীতে উল্লিখিত দাবিতে উক্ত ভিডিওর বেশকিছু স্থিরচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, আকিকুল বাশার ও ইলিয়াস আহমেদ নামের দুই কন্টেন্ট নির্মাতা বিনোদনের উদ্দেশ্য কাল্পনিক স্ক্রিপ্টের ওপর ভিত্তি করে উক্ত ভিডিওটি তৈরি করেছিলেন।
প্রসঙ্গত, এর আগেও স্ক্রিপ্টেড ভিডিওকে আসল ঘটনার ভিডিও দাবি করেইন্টারনেটে ভুল তথ্য প্রচার করা হলে সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, শ্বশুরবাড়ি থেকে ডিসকভার বাইক না দিয়ে টিবিএস মেট্রো বাইক দেওয়ায় সেই বাইক উঠানে কবরস্থ করার স্ক্রিপ্টেড ভিডিওর ঘটনাকে সত্য ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “আমেরিকাকে হুমকি দিয়ে লাভ নেই, সুষ্ঠু নির্বাচন আপনাকে দিতেই হবে” শীর্ষক একটি তথ্য বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাসের মন্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাস ”আমেরিকাকে হুমকি দিয়ে লাভ নেই, সুষ্ঠু নির্বাচন আপনাকে দিতেই হবে” শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি বরং কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
উল্লিখিত দাবির সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাম্প্রতিক কার্যক্রম এবং বক্তব্য পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে গত ০৬ জুন ‘প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Prothom Alo
প্রতিবেদনে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে উদ্ধৃত করে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাথে আলোচনার বিষয়ে বলা হয়। আনিসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, “তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বক্তব্য ছিল। সে সব বিষয় নিয়েই রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সরকারের বক্তব্য জানতে চেয়েছেন এবং এই আলোচনা অব্যাহত থাকবে।”
প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আলোচিত মন্তব্য সম্পর্কিত কোনো আলোচনার কথা উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া মূলধারার গণমাধ্যম সমকালের অনলাইন সংস্করণে গত ০৬ জুন ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের বৈঠক’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Samakal
প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠকের বিষয়ে বলা হলেও সেখানে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
এছাড়াও বাংলাদেশস্থ মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইট এবং ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করেও সেখানে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাম্প্রতিক কোনো বক্তব্য বা মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের “আমেরিকাকে হুমকি দিয়ে লাভ নেই, সুষ্ঠু নির্বাচন আপনাকে দিতেই হবে” শীর্ষক মন্তব্যের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা প্রতীয়মান হয় যে, “আমেরিকাকে হুমকি দিয়ে লাভ নেই, সুষ্ঠু নির্বাচন আপনাকে দিতেই হবে” শীর্ষক মন্তব্যটি মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস করেননি।
মূলত, সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাসের মন্তব্য দাবিতে “আমেরিকাকে হুমকি দিয়ে লাভ নেই, সুষ্ঠু নির্বাচন আপনাকে দিতেই হবে” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, কোনোপ্রকার তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। মূলধারার গণমাধ্যম এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মাধ্যমে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এমন মন্তব্যের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ মে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এই নীতির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির জন্য ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপে সক্ষম হবে। এর মধ্যে বর্তমান ও প্রাক্তন বাংলাদেশি কর্মকর্তা/কর্মচারী, সরকারপন্থি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী , বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে এই ঘোষণায় জানানো হয়।
তাছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন ভিসা নীতি ঘোষণার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম চ্যানেল আই এর টকশো অনুষ্ঠান তৃতীয় মাত্রায় লাইভে যুক্ত হন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থাপক জিল্লুরের প্রশ্নের জবাবে ডোনাল্ড লু বলেন, “আমি একটি বিষয় খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, আজ আমরা কাউকে স্যাংশন দিচ্ছি না। সেক্রেটারি অফ স্টেট একটি নতুন নীতির ঘোষণা করেছেন, যা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার সেই সব ব্যক্তির ভিসা সুবিধায় বিধি–নিষেধ আরোপ করতে পারবে, যারা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত করবে।”
উল্লেখ্য, পূর্বেও বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের মন্তব্য দাবিতে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা সেসময় বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং,”আমেরিকাকে হুমকি দিয়ে লাভ নেই, সুষ্ঠু নির্বাচন আপনাকে দিতেই হবে” শীর্ষক একটি তথ্যকে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাসের মন্তব্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক না নেওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয় বরং কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত তথ্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
সূত্রহীন তথ্য
অনুসন্ধানের শুরুতেই রিউমর স্ক্যানার টিম বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক না নেওয়ার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলোতে কোনো তথ্যসূত্র আছে কি না তা যাচাই করে দেখে। তবে অনুসন্ধানে উক্ত পোস্টগুলোতে কোনো তথ্যসূত্রের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এছাড়া এ প্রসঙ্গে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যমেও কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের বানিজ্য সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটেক্সা)র ওয়েবসাইট trade.gov এ বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক না নেওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটির সত্যতা সম্পর্কে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
Screenshot: trade.gov
তবে অনুসন্ধানে ওয়েবসাইটটিতে বাংলাদেশ সম্পর্কে এমন কোনো তথ্যের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক না নেওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি কোনো সুনির্দিষ্ট ও নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের পোষাক রফতানির অবস্থান সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
রিউমর স্ক্যানার টীম অনুসন্ধানের এ পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের পোষাক রফতানির অবস্থান সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে। এ নিয়ে অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে গত ৯ জুন ‘তৈরি পোশাক আমদানি প্রায় এক-চতুর্থাংশ কমিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Prothom Alo
প্রতিবেদনটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যানের বরাতে বলা হয়, চলতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি প্রায় এক-চতুর্থাংশ কমিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ড। ফলে এই বাজারে চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মতো শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে। এই পাঁচ দেশের মধ্যে চীন, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি বেশি কমেছে।
Screenshot: Prothom Alo
এর মধ্যে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা চলতি বছরের প্রথম চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ২৭০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। গত বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছিল ৩২৮ কোটি ডলারের পোশাক।
পাশাপাশি আরেকটি জাতীয় দৈনিক সমকালে গত ১৮ জুন ‘পোশাক রপ্তানি বিশ্বে বেড়েছে, কমেছে যুক্তরাষ্ট্রে’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হানকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়ার সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই বলেই মনে হচ্ছে।
Screenshot: Samakal
কারণ, সারাবিশ্ব থেকেই আমদানি কমিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত প্রায় ৩৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা হিসেবে নীতি সুদহার বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ। এ কারণে চাহিদা কমে এসেছে সেখানে। বিশেষ করে আমদানি করা পণ্যের চাহিদা অনেক কম। মূলত এ কারণেই পোশাক রপ্তানি কমছে।
এছাড়া প্রতিবেদনটিতে পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, রপ্তানি কমে আসার সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। যত কিছুই হোক পোশাক আমদানিতে কোনো ধরনের চাপ দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, চীনের সঙ্গে তাদের বাণিজ্যিক বৈরী সম্পর্কের কারণে সে দেশ থেকে পোশাক বেশি নিচ্ছে না।
Screenshot: Samakal
মূলত, সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের নেওয়া উদ্যোগের ফলে দেশটিতে আমদানি করা পণ্যের চাহিদা কমে এসেছে। যার ধারাবাহিকতায় দেশটিতে সারাবিশ্ব থেকেই আমদানি কমেছে। ফলে দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ কম রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যেই সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে আর তৈরি পোশাক নেবে না। তবে অনুসন্ধানে উক্ত দাবির পক্ষে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে আর তৈরি পোশাক নেবে না দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন সিলেবাসে প্রণীত বইগুলোর দায়িত্বে ছিলেন ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, বই খারাপ হওয়ার কারণে স্কুলের পরীক্ষা বাতিল এবং এখন পর্যন্ত এই দুই ক্লাসের জন্য পরীক্ষা সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা আসেনি শীর্ষক দাবিগুলো সঠিক নয় বরং জাফর ইকবাল সিলেবাস প্রণয়ন কমিটি এবং বিজ্ঞান সম্পর্কিত বইগুলো লেখা কমিটির একজন সদস্য ছিলেন৷ বই খারাপ হওয়ার কারণে নয়, পরীক্ষা বাতিলের বিষয়ে ২০২১ সাল থেকেই আলোচনা শুরু হয়েছে এবং এ বছর বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এসেছে। পরীক্ষার পরিবর্তে চলা সামষ্টিক মূল্যায়ন গতকাল শেষ হয়েছে।
প্রথম দাবির বিষয়ে অনুসন্ধান
ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সিলেবাসে যে বইগুলো প্রণীত হয়েছে তার দায়িত্বে ছিলেন ড. মুহম্মদ ইকবাল ছিলেন কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধানে ষষ্ঠ বইগুলো বিশ্লেষণ করে শুধু ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ে অন্যান্য রচনাকারীদের সাথে এবং এবং ‘বিজ্ঞান অনুশীলন’ বইয়ের অন্যান্য সম্পাদনাকারীদের সাথে ড. মুহম্মদ ইকবালের নাম খুঁজে পাওয়া যায়। একইভাবে ৭ম শ্রেণির বইগুলো বিশ্লেষণ করে শুধু ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ে অন্যান্য রচনাকারীদের সাথে এবং ‘বিজ্ঞান অনুশীলন’ বইয়ের অন্যান্য সম্পাদনাকারীদের সাথে ড. মুহম্মদ ইকবালের নাম খুঁজে পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সিলেবাস প্রণয়নের দায়িত্বে ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ছিলেন কিনা এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আমাদের জানান, “আমি কমিটির অন্যান্য সদস্যদের সাথে শুধু পদার্থ বিষয়ক সিলেবাস প্রণয়নে যুক্ত ছিলাম।”
অনুসন্ধানে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ওয়েবসাইটে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ এর পিডিএফ সংস্করণ খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত রূপরেখায় ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুমোদিত জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটির সদস্যদের একটি তালিকা রয়েছে যেখানে সদস্য হিসেবে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের নাম রয়েছে। কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে উল্লেখ রয়েছে এনসিটিবির সে সময়ের (২০১৯) চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহার নাম।
Screenshot source: NCTB PDF
অর্থাৎ, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বইগুলো রচনার দায়িত্বে নয়, দুইটি বইয়ের রচনা ও সম্পাদনা দলের একজন সদস্য ছিলেন ড. মুহম্মদ ইকবাল। তাছাড়া, উক্ত শ্রেণিগুলোর সিলেবাস প্রণয়নের দায়িত্বে নয়, কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।
দ্বিতীয় দাবির বিষয়ে অনুসন্ধান
বই খারাপ হওয়ার কারণে স্কুলের পরীক্ষা বাতিল করতে হয়েছে কিনা এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘বাংলা ট্রিবিউন’ এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেদিন, (১৩ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর কাছে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা উপস্থাপনের পর সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির কিছু বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ এবং বাকি ৪০ শতাংশ আসবে সামষ্টিক মূল্যায়ন (বছর শেষে পরীক্ষা) থেকে। বাকি বিষয়গুলো পুরোপুরি শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে৷
Screenshot source: Bangla Tribune
এ বিষয়ে আরও অনুসন্ধান করে, চলতি বছরের ০৬ জানুয়ারি জাতীয় দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শিক্ষা ব্যবস্থাকে মুখস্থ বিদ্যা আর পরীক্ষানির্ভর মূল্যায়ন থেকে বের করে আনতে জানুয়ারি থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হচ্ছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে প্রথাগত পরীক্ষা থাকছে না। সারা বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে শিখন কার্যক্রমের মূল্যায়ন করা হবে। কোনো সামস্টিক বা অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হবে না।
Screenshot source: Jugantor
পরবর্তীতে গত ১৪ মার্চ জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের শুরু থেকে নতুন কারিকুলামে পাঠদান চলা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে কোনোও প্রচলিত পরীক্ষা বা মডেল টেস্ট নেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর মাউশি। ১৩ মার্চ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এক আদেশে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
Screenshot source: Prothom Alo
অর্থাৎ, বই খারাপ হওয়ার কারণে স্কুলের পরীক্ষা বাতিল করতে হয়েছে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয়৷ ২০২১ সাল থেকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পরীক্ষা কমিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের মার্চে পরীক্ষা পদ্ধতি তুলে নেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এসেছে।
তৃতীয় দাবির বিষয়ে অনুসন্ধান
এখন পর্যন্ত পরীক্ষা (ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে) সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা আসে নি শীর্ষক দাবির বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে গত ০৬ জুন প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নতুন শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ৭ জুন থেকে ষান্মাসিকের সামষ্টিক মূল্যায়ন শুরু হবে। ১৮ জুন পর্যন্ত সামষ্টিক মূল্যায়ন চলবে।
পরবর্তীতে গত ২৫ মে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত নোটিশটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot source: DSHE
অর্থাৎ, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে এখন পর্যন্ত পরীক্ষা সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা আসেনি শীর্ষক দাবিটিও সঠিক নয়৷ গতকালই এ সংক্রান্ত মূল্যায়ন শেষ হয়েছে।
মূলত, সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্টে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষাক্রম বিষয়ে দাবি করা হয় এই দুই শ্রেণির নতুন সিলেবাসে প্রণীত বইগুলোর দায়িত্বে ছিলেন ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। বই জঘন্য হওয়ার কারণে এই দুই শ্রেণির স্কুলের পরীক্ষা বাতিল করতে হয়েছে। এখন পর্যন্ত এই দুই ক্লাসের জন্য পরীক্ষা সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা আসে নি। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিগুলো সঠিক নয়৷ ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বইগুলো রচনার দায়িত্বে নয়, দুইটি বইয়ের রচনা ও সম্পাদনা দলের একজন সদস্য ছিলেন ড. মুহম্মদ ইকবাল। তাছাড়া, তিনি সিলেবাস প্রণয়ন সংক্রান্ত কমিটির একজন সদস্য ছিলেন৷ বই খারাপ হওয়ার কারণে নয়, পরীক্ষা বাতিলের বিষয়ে আলোচনা ২০২১ সাল থেকে চলার পর এ বছর বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এসেছে। পরীক্ষার পরিবর্তে এই দুই শ্রেণিতে সামষ্টিক মূল্যায়ন চলছিল, যা গতকালই শেষ হয়েছে।
সুতরাং, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যক্রম বিষয়ে ফেসবুকে সুনির্দিষ্ট তিনটি দাবি ছড়িয়ে পড়েছে, যেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “ম্যাচের শুরুর এক মিনিটে গোল করতে পারলেই ফুটবল ইতিহাসে একমাত্র মেসিই ম্যাচের সকল মিনিটে গোল করার রেকর্ড করবে” শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ম্যাচ শুরুর এক মিনিটের মধ্যে গোল করতে পারলে ফুটবল ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে লিওনেল মেসি ম্যাচের ৯০ মিনিটের সকল মিনিটেই গোল করার রেকর্ড গড়ার দাবিটি সত্য নয় বরং ইতোমধ্যেই তিন জন খেলোয়াড়ের এই রেকর্ড রয়েছে। লিওনেল মেসির এক মিনিট বাদে সব মিনিটে গোল রয়েছে। তিনি এক মিনিটে গোল করতে পারলে চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে এই রেকর্ড গড়বেন।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গেটাফের বিপক্ষে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে লুইস সুয়ারেজ দুইটি গোল করেন। এর মধ্যে খেলার ৭৮তম মিনিটের প্রথম গোলটির মাধ্যমে উরুগুয়ের ফুটবলার লুইস সুয়ারেজ তার ফুটবল ক্যারিয়ারের প্রতি মিনিটে গোল করার রেকর্ড করেছেন। এর আগে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও জ্বালাতান ইব্রাহিমোভিচ এই রেকর্ড অর্জন করেছেন।
Screenshot: The Sun
পাশাপাশি খেলাধুলা ভিত্তিক ওয়েবসাইট tribuna.com এ “Luis Suarez enters 3-man list of players who scored in EVERY minute of a game – Messi is not there” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গেটাফের বিরুদ্ধে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে খেলার ৭৮ মিনিটে গোল করার মাধ্যমে খেলা শুরুর প্রথম মিনিট থেকে অতিরিক্ত ৭ মিনিট সহ মূল খেলার প্রতি মিনিটে গোল করার অনন্য একটি রেকর্ড গড়েছেন লুইস সুয়ারেজ।
Screenshot: Tribune.com
প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, ইতোপূর্বে পর্তুগীজ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও সুইডিশ তারকা ইব্রাহিমোভিচের এই রেকর্ড আছে। তবে আর্জেন্টাইন তারকা মেসি এখনো এই রেকর্ড গড়তে পারেননি।
মূলত, গত ১৫ জুন বেইজিংয়ের ওয়ার্কাস স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার সাথে প্রীতি ম্যাচে শুরুর ১ মিনিট ১৯ সেকেন্ডে গোল করে নিজ ক্যারিয়ারের দ্রুততম গোল করার রেকর্ড গড়েন লিওনেল মেসি। এর ফলে ফুটবলের ৯০ মিনিটের প্রতি মিনিটে গোল করার রেকর্ড অর্জনের আরো কাছে চলে যান তিনি। এর আগে ৯০ মিনিটের মধ্যে তার ১ এবং ২ মিনিটে গোল করা বাকি ছিল তার। এখন শুধু ১ মিনিটের মধ্যে গোল করলেই তিনি ফুটবল খেলার ৯০ মিনিটের মধ্যে সব মিনিটে গোল করার রেকর্ড গড়বেন। উক্ত বিষয়ের প্রেক্ষিতে ‘ম্যাচের শুরুর এক মিনিটে গোল করতে পারলেই ফুটবল ইতিহাসে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে লিওনেল মেসি ম্যাচের ৯০ মিনিটের সকল মিনিটে গোল করার রেকর্ড করবে’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইতোমধ্যেই পর্তুগিজ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, উরুগুয়ের লুইস সুয়ারেজ ও সুইডেনের জ্বালাতন ইব্রাহিমোভিচ এই রেকর্ড গড়েছেন এবং মেসি এই রেকর্ড গড়লে চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে এই রেকর্ডে নিজের নাম লেখাবেন।
সুতরাং, ম্যাচের শুরুর এক মিনিটে গোল করতে পারলেই ফুটবল ইতিহাসে একমাত্র মেসিই ম্যাচের সকল মিনিটে গোল করার রেকর্ড করবেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।