Home Blog Page 558

যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক এমপি মন্ত্রীদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা এবং পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে ভুয়া তথ্য প্রচার 

গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনে সর্বোচ্চ ২২২টি সংসদীয় আসনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তবে গত ১৮ জানুয়ারি ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে “এমপি মন্ত্রীদের ভিসায় মার্কিন নিষেধাজ্ঞা। নতুন নির্বাচনের দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। Political Analysis” শীর্ষক শিরোনাম এবং “এমপি মন্ত্রীদের ভিসায় মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নতুন নির্বাচনের দাবি যুক্তরাষ্ট্রের” শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। 

ভিসা নিষেধাজ্ঞা

ইউটিউবে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবের লিংক শেয়ার করে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৮৪ হাজার বার। ভিডিওটিতে প্রায় ২ হাজার ৩০০ পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক এমপি মন্ত্রীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র পুনরায় নির্বাচনের দাবিও করেনি বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করা হয়না। প্রকৃতপক্ষে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিন্ন ঘটনার একাধিক ছবি ও একটি ভিডিও ক্লিপের সাথে বানোয়াট দাবি যুক্ত করে আলোচিত দাবি সম্বলিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

দাবিগুলো নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম৷ উক্ত ভিডিওতে কলাম লেখক ডঃ জাহেদ উর রহমান এর একটি ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয়। কিন্তু ভিডিওর কোথাও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক এমপি মন্ত্রীদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা কিংবা পুনরায় নির্বাচনের দাবি সংক্রান্ত কোনো তথ্য বা দৃশ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। 

আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা ডঃ জাহেদ উর রহমানের ভিডিওটির অনুসন্ধানে ‘Zahed’s Take’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৮ জানুয়ারি ‘আমেরিকা ইউরোপ কি চলে গেল সরকারের পক্ষে? Zahed’s Take। জাহেদ উর রহমান। Zahed Ur Rahman’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটিই আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

ভিডিওতে ডঃ জাহেদ উর রহমান যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যকার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গণমাধ্যম প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদন পাঠ করে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেন। 

পরবর্তীতে দাবিতে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক এমপি মন্ত্রীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে অনুসন্ধানে কালবেলার ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর  “বাংলাদেশে ভিসা নিষেধাজ্ঞা শুরু করেছে আমেরিকা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার ওইদিন এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন বলে জানা যায়। তবে উক্ত বিবৃতিতে কোনো ব্যক্তির নাম প্রকাশ করা হয়নি। 

উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত ব্যক্তিদের নাম প্রকাশের বিষয়ে অনুসন্ধানে দৈনিক যুগান্তরে গত ২৪ সেপ্টেম্বর “যে কারণে ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কেন ভিসা নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয় না- এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বলেন, ভিসানীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেওয়া হবে, তাদের নাম প্রকাশ করা হয় না। কারণ কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যে কোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য। তিনি আরও বলেন, সাক্ষ্যপ্রমাণ ভালোভাবে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

বর্তমান সরকারের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সম্পর্কের বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।

চিঠিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারত্বের পরবর্তী অধ্যায় শুরুর পর্বে আমি বলতে চাই, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ও জ্বালানি, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য, মানবিক সহায়তা, বিশেষ করে রোহিঙ্গা শরণার্থীসহ আরও অনেক ইস্যুতে আমাদের প্রশাসন একসঙ্গে কাজ করার ঐকান্তিক ইচ্ছা আমি তুলে ধরছি।’

জো বাইডেন বলেছেন, ‘সমস্যা সমাধানে একসঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে আমাদের দীর্ঘ ও সফল ইতিহাস রয়েছে। আর আমাদের এই সম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে দুই দেশের জনগণের শক্তিশালী সম্পর্ক।’

জো বাইডেন তাঁর চিঠিতে আরো লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের উচ্চাভিলাষী অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে সমর্থন এবং একটি অবাধ ও মুক্ত ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অভিন্ন স্বপ্ন পূরণে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এর আগে গত ৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এক বিবৃতিতে বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জনগণ ও গণতন্ত্রের প্রতি তাদের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করে। যুক্তরাষ্ট্র দেখেছে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বেশিরভাগ আসনেই জয়লাভ করেছে।

বিবৃতি তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলের হাজারো সদস্যদের গ্রেপ্তার ও নির্বাচনের অনিয়মের খবরে উদ্বিগ্ন। অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একমত যে, এই নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি এবং সব দল এতে অংশ না নেওয়ায় আমরা হতাশ।”

পরবর্তীতে, গত ১৮ জানুয়ারি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বের অবস্থান পুনব্যক্ত করে বলেন,বিরোধী রাজনৈতিক হাজারো নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনের দিন অনিয়মের খবরে তাঁরা এখনো উদ্বিগ্ন। তাঁরা অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে এই মত পোষণ করেন যে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় তাঁরা দুঃখিত। নির্বাচনের সময় ও পরবর্তী সময়ে সংঘটিত সহিংসতার নিন্দা জানান তাঁরা।

তবে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এসব বক্তব্য-বিবৃতির কোথাও নির্বাচন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পুনরায় নির্বাচনের দাবি কিংবা এমপি মন্ত্রীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবি সম্বলিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার ২০২৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে তাদেরকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে প্রচার হয়ে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি “এমপি মন্ত্রীদের ভিসায় মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নতুন নির্বাচনের দাবি যুক্তরাষ্ট্রের” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিডিওটি নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিগুলো সঠিক নয়। বাংলাদেশে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বলে একাধিকবার দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন অবধি এমপি মন্ত্রীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কোনো তথ্য বা তালিকা প্রকাশ করেনি। এছাড়া, পুনরায় নির্বাচনের দাবিও জানায়নি যুক্তরাষ্ট্র। 

উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক এমপি মন্ত্রীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা এবং দেশটি কর্তৃক পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

গ্রেনেড নিক্ষেপের ভিডিওটি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নয় 

0

সম্প্রতি, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গ্রেনেড নিক্ষেপের দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

মিয়ানমারে

ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশের আগ পর্যন্ত ফেসবুকে সর্বাধিক ভাইরাল হওয়া এ সংক্রান্ত ভিডিওটি প্রায় ২০ লাখ ৯০ হাজারের বেশি বার দেখা হয়েছে। এছাড়া, ৮ হাজার দুইশো এর উপরে পৃথক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে রিয়েক্টশন দেওয়া হয়েছে ও ৪৪৫ বার ভিডিওটি শেয়ার এবং ১৫৩ টি মন্তব্য করা হয়েছে। পাশাপাশি, ভাইরাল পোস্টটির মন্তব্যঘর ঘুরে পোস্টটির দাবির প্রেক্ষিতে অধিকাংশ নেটিজেনকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা যায়।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গ্রেনেড নিক্ষেপের এই ভিডিওটি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নয় বরং ভিডিওটি ২০১৯ সালে চীনা সৈন্যদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় গ্রেনেড নিক্ষেপের দৃশ্য। 

অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ভিয়েতনাম ভিত্তিক গণমাধ্যম VN Express এর ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের পহেলা আগস্ট “Chinese recruits almost died while practicing grenade throwing” (ইংরেজি অনূদিত) শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদনটিতে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। সেই ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner 

উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, এক চীনা সৈনিকের গ্রেনেড নিক্ষেপের প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময়কার দৃশ্য এটি। প্রশিক্ষণের সময় নিক্ষেপ করা গ্রেনেডটি প্রশিক্ষণার্থীর পাশে পড়ে যায়। কিন্তু অফিসার প্রশিক্ষণার্থীকে তাৎক্ষণিক নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যান। এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। 

অর্থাৎ, গ্রেনেড নিক্ষেপ করার ভিডিও মিয়ানমারের নয়। 

মূলত, ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী বাহিনী একজোট হয়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি আবারও মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে জান্তা বাহিনী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়৷ এরইমধ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গ্রেনেড নিক্ষেপের দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গ্রেনেড নিক্ষেপের এই ভিডিওটি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নয় বরং ভিডিওটি ২০১৯ সালে চীনা সৈন্যদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় গ্রেনেড নিক্ষেপের দৃশ্য। 

সুতরাং, চীনা সৈনিকের  গ্রেনেড নিক্ষেপের প্রশিক্ষণের পুরোনো ভিডিওকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গ্রেনেড নিক্ষেপের ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

সেনাবাহিনীর সাথে বিজিবির সংঘর্ষ ও সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের গুজব

0

সম্প্রতি, “সেনাবাহিনীর সাথে বিজিবির তুমুল সংঘর্ষ গদি হারালো হাসিনা” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সেনাবাহিনীর সাথে বিজিবির সংঘর্ষের কোনো ঘটনা কিংবা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদচ্যুত করে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের কোনো ঘটনা ঘটেনি। বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। আলোচিত ভিডিওটি’র শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে উল্লেখিত দাবিগুলোর সাথে ভিডিওটি’র বিস্তারিত অংশের মিল পাওয়া যায়নি। 

ভিডিওতে প্রচারিত আলোচিত দাবিগুলো নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে উক্ত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। 

আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত দাবির বিষয়ে আরও অনুসন্ধানে ভিডিওটিতে দেখানো ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে আলাদাভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই-১

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ATN News এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ১৭ মে “বান্দরবানের রুমায় মিয়ানমার সীমান্তে ২ সেনা সদস্য নিহত | ATN News” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের মে মাসে বান্দরবানের রুমায় কুকিচিন ন্যাশনাল আর্মির হামলায় দুই সেনাসদস্য নিহত হন। এছাড়াও গুরুতর আহত হন দুই সেনাকর্মকর্তা। এটি সেসময় সেই ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদন।

অর্থাৎ, ভিডিওটি পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার। 

ভিডিও যাচাই-২

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Jamuna TV এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি “হঠাৎই দেশে ঢুকে পড়লো মিয়ানমার বর্ডার পুলিশ; ঘটনা কী? | Border Unrest | Myanmar Crisis | Jamuna TV” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর একটি অংশই আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে।

Comparison By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, গত ০৪ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের ছোঁড়া গুলিতে ২ বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। মিয়ানমারের ভেতরে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে মিয়ানমার বর্ডার পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৩০ জন বর্ডার পুলিশ সদস্য সীমান্তে বিজিবি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। এটি সেই ঘটনারই একটি ভিডিও প্রতিবেদন। 

অর্থাৎ, আলোচিত দাবির ভিডিওতে এই ক্লিপটি অপ্রাসঙ্গিকভাবে যুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই-৩

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে NEWS 24 এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি “বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা, বিজিবিকে সহযোগিতা করবে পুলিশ | Myanmar border | News24” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, গত ০৪ ফেব্রুয়ারি তুমব্রু সীমান্তে মায়ানমারের দিক থেকে ছোড়া গুলিতে আহত হয়েছেন দুই বাংলাদেশি। এটি সেই ঘটনারই একটি ভিডিও প্রতিবেদন।

অর্থাৎ, এই ভিডিও ফুটেজটিও অপ্রাসঙ্গিকভাবে আলোচিত ভিডিওর সাথে জুড়ে দিয়ে প্রচার করা হয়েছে।

মূলত, ২০২৩ সালের মে মাসে বান্দরবানের রুমায় কুকিচিন ন্যাশনাল আর্মি(কেএনএফ) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর টহলদলের ওপর হামলা চালায়। এ হামলায় দুই সেনাসদস্য নিহত ও গুরুতর আহত হন দুই সেনাকর্মকর্তা। এছাড়া গত ০৪ ফেব্রুয়ারি তুমব্রু সীমান্তে মায়ানমারের দিক থেকে ছোড়া গুলিতে আহত হয়েছেন দুই বাংলাদেশি। এসব পৃথক ঘটনায় একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদনের ফুটেজ যুক্ত করে সম্প্রতি ‘সেনাবাহিনীর সাথে বিজিবির তুমুল সংঘর্ষ, নিহত ২, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। 

উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, সেনাবাহিনীর সাথে বিজিবির সংঘর্ষে ২ ব্যক্তি নিহত এবং শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ফেরাউনের পাসপোর্ট দাবিতে আর্টওয়ার্কের ছবি প্রচার 

0

সম্প্রতি, “ফেরাউনের পাসপোর্ট। ১৯৭৪ সালে উন্নত মানের ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য ফেরাউনের মমিকে ফ্রান্সে নেওয়ার প্রয়োজন হলে এর জন্য পাসপোর্ট এর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এটাই ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাচীন ব্যাক্তির পাসপোর্ট হিসেবে গণ্য করা হয়।” শীর্ষক তথ্য সম্বলিত একটি পাসপোর্টের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফেরাউন বা দ্বিতীয় রামসেস এর পাসপোর্ট দাবিতে প্রচারিত পাসপোর্টটি আসল নয় বরং ছবিটি একজন শিল্পীর তৈরি ডিজিটাল আর্টওয়ার্ক।

মূলত, আলোচিত পাসপোর্টের ছবি Heritage Daily নামক একটি ওয়েবসাইটে ২০২০ সালে আর্টওয়ার্ক হিসেবে প্রথম প্রকাশিত হয়েছে। পরবর্তীতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নির্মিত এই পাসপোর্টের ছবি ফেরাউনের প্রকৃত/আসল পাসপোর্ট দাবিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। 

উল্লেখ্য, পূর্বেও একই তথ্যে আলোচিত পাসপোর্টের ছবিটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে সেসময় তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

৮ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক তাকবির দিবস’ ঘোষণা করার দাবিটি ভিত্তিহীন

0

সম্প্রতি, “৮ ফেব্রুয়ারি” আন্তর্জাতিক তাকবির দিবস ঘোষণা” শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

তাকবির

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট কিছু দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ৮ ফেব্রুয়ারিকে “আন্তর্জাতিক তাকবীর দিবস” ঘোষণা করা হয়নি বরং কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

মূলত, ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কলেজ প্রাঙ্গণে কর্ণাটকের মাণ্ড্য কলেজের বাণিজ্য শাখার দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুসকান খান হিজাব পরিহিত অবস্থায় স্কুলে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে গেলে তাকে কতিপয় যুবক বাধা দেয় এবং তাকে ঘিরে জয় শ্রী রাম স্লোগান দেয়া হয় কিন্তু এতে ভীত না হয়ে মুসকান ভেতরে প্রবেশ করেন এবং প্রতিবাদে ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দেন। সেসময়তার এই সাহসিকতার ভিডিও দ্রুতই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে উক্ত ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৮ ফেব্রুয়ারিকে “আন্তর্জাতিক তাকবীর দিবস” ঘোষণার দাবি উঠে। সেসময় কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই উক্ত দাবি বিবর্তিত হয়ে ৮ ফেব্রুয়ারিকে “আন্তর্জাতিক তাকবীর দিবস” ঘোষণা করা হয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি সেই তথ্যটিই পুনরায় ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে অনুসন্ধানে উক্ত দাবির কোনোরূপ সত্যতা পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উক্ত বিষয়টি ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে সেসময় বিষয়টিকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

হালনাগাদ/ Update

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটকে একই দাবি সম্বলিত ভিডিও আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে কতিপয় টিকটক পোস্টকে প্রতিবেদনে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।

রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেননি 

0

সম্প্রতি, পুনরায় নির্বাচনের ঘোষণা দিলো রাষ্ট্রপতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনেই জাতীয় নির্বাচন– শীর্ষক শিরোনামে এবং বিএনপির পক্ষ নিলো রাষ্ট্রপতি, রাতেই হাসিনাকে গ্রফতারের নির্দেশ– শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পুনরায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। 

গ্রেফতারের নির্দেশ

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পুনরায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দেননি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের নির্দেশও দেননি বরং ভিন্ন কয়েকটি ভিডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে চটকদার থাম্বনেইলে এবং শিরোনামে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। আলোচিত ভিডিওটি’র শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে উল্লেখিত দাবিগুলোর সাথে ভিডিওটি’র বিস্তারিত অংশের মিল পাওয়া যায়নি। 

একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হলে তা গণমাধ্যমে সংবাদ হবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু, ভিডিওতে প্রচারিত আলোচিত দাবিগুলো নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও উক্ত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। 

অনুসন্ধানের এপর্যায়ে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে পৃথকভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই-১

শুরুতে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহমুদ উদ্দিন খোকনকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। তার বক্তব্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে অনলাইন গণমাধ্যম Barta Bazar এর ইউটিউবে গত ৫ ফেব্রুয়ারি “সরকার বাতাসে ভাসছে, যেকোনো সময় ধসে পড়বে”- শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনটির শুরুর একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা ফুটেজের হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner 

সংবাদ প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সম্প্রতি বেসরকারি একটি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, এখন সরকার হাওয়ায় ভাসছে। জনগণ নেই, ফাউন্ডেশন নেই। যেকোনো সময় ধসে পড়বে। সেই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বার্তা বাজার একটি ডেস্ক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। 

তবে প্রতিবেদনটিতে আলোচিত দাবিগুলো সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।  

ভিডিও যাচাই-২

এই অংশে গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুরকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। বক্তব্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক ইত্তেফাক এর ইউটিউব চ্যানেলে গত বছরের ১৩ মে “চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি ৩ মাসের মধ্যে সরকারের পতন হবে: নুরুল হক নূর”- শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিওটির একটি অংশই আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে।

Video Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুরের গত বছরের মে মাসে দেওয়া একটি বক্তব্যের ভিডিও এটি। এছাড়া, বক্তব্যে নুরুল হক নুর আলোচিত দাবি সংক্রান্ত কোনো কথাও বলেননি। 

অর্থাৎ এই ভিডিও নির্বাচনের আগে হওয়ায় আলোচিত দাবির সাথে এই ভিডিওটির কোনো সম্পর্ক নেই।

ভিডিও যাচাই-৩

এই অংশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ঐক্যবদ্ধতার মধ্য দিয়ে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে একসাথে নিয়ে এসে, সমস্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরকে একসাথে নিয়ে এসে আজকে আমাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে।… এই সরকারকে সরিয়ে জনগণের সত্যিকার অর্থে সরকার পার্লামেন্টে… 

এই বক্তব্যে আলোচিত দাবি সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

ভিডিও যাচাই-৪

এই অংশে একজন সংবাদ পাঠিকাকে সংবাদ পাঠ করতে শোনা যায়। পঠিত সংবাদের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে Maasranga Tv এর ইউটিউব চ্যানেলে গত বছরের ১২ জুলাই “সরকার পতনের এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা দিতে সমাবেশ শুরু করেছে বিএনপি”- শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনটির শুরুর একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা ফুটেজের হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner 

সংবাদ প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত বছরের ১২ জুলাই সরকার পতনের একদফা দাবি নিয়ে রাজধানীতে আন্দোলনে নামে বিএনপি। সেই প্রেক্ষিতে করা সংবাদ প্রতিবেদন এটি। 

প্রতিবেদনটিতে আলোচিত দাবিগুলো সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।

ভিডিও যাচাই-৫

এই অংশেও একজন সংবাদ পাঠিকাকে সংবাদ পাঠ করতে শোনা যায়। পঠিত সংবাদের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ATN Bangla এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ৬ ফেব্রুয়ারি “বাংলাদেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নতুন করে যা জানালো যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner 

উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত ৫ জানুয়ারি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপপ্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল জানান, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ভিসা নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নির্বাচনে দেশটির জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি বলে উদ্বেগ রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনকে ক্ষুণ্ন করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ঘোষিত মার্কিন ভিসা নীতি বাস্তবায়নের সর্বশেষ অবস্থা কী? জবাবে বেদান্ত প্যাটেল জানান, এ-সংক্রান্ত যে নীতি ঘোষণা করা হয়েছে তার হালনাগাদ বা পরিবর্তনের বিষয়ে নতুন কোনো তথ্য তার কাছে নেই। শুধু নির্বাচন শেষ হয়ে যাওয়ার ফলে এ ধরনের নীতি পরিবর্তন হয়ে যায় না। তবে এ বিষয়ে কিছু বলার মতো হালনাগাদ কোনো তথ্য তার কাছে নেই।

এ পর্যায়ে প্রশ্নকারী সাংবাদিক জানতে চান, যে ভিসা নীতি ঘোষণা করা হয়েছিল তা কি এখনো বহাল আছে? জবাবে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ‘হ্যাঁ। নীতিতে কোনো রদবদল নেই।’ 

এই প্রতিবেদনেও আলোচিত দাবিগুলো সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।

মূলত, গত ০৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত ২৯৮ আসনের ফলাফলে ২২২ টি আসন লাভ করে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। গত ৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। এরই মধ্যে ৬ ফেব্রুয়ারি Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে পুনরায় নির্বাচনের ঘোষণা দিলো রাষ্ট্রপতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনেই জাতীয় নির্বাচন– শীর্ষক শিরোনামে এবং বিএনপির পক্ষ নিলো রাষ্ট্রপতি, রাতেই হাসিনাকে গ্রফতারের নির্দেশ– শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে ভিন্ন ঘটনার সংবাদ প্রতিবেদন এবং পুরোনো কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল বসিয়ে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পুনরায় জাতীয় নির্বাচনের সিদ্ধান্ত এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার নির্দেশ দিয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

কেবল নির্দিষ্ট শ্রেণির শিক্ষার্থীই নয়, মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই অনুদান পাবে

0

সম্প্রতি, “ব্রেকিং নিউজ এইচএসসি, অনার্স, মাস্টার্স শিক্ষার্থীরা পাবে ১০ হাজার টাকা সহায়তা আবেদন শুরু ৪ ই ফেব্রুয়ারি” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

অনুদান

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কেবল এইচএসসি, অনার্স ও মাস্টার্স শিক্ষার্থীরাই অনুদান পাবেনা। প্রকৃতপক্ষে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের (মাউশি) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী অনুদানের জন্য আবেদন করতে পারবে। তবে অনুদান প্রদানের ক্ষেত্রে দুস্থ, প্রতিবন্ধী, অসহায়, রোগগ্রস্ত, গরীব, মেধাবী ও অনগ্রসর এলাকার ছাত্রছাত্রীদের অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে। পাশাপাশি উক্ত আবেদন এর জন্য কোনো ফি এর প্রয়োজন নেই। 

দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত পোস্টগুলোতে (আর্কাইভ) তথ্যসূত্র হিসেবে ‘শিক্ষাবার্তা’ নামক একটি পেজের নাম উল্লেখ পাওয়া যায়। 

উক্ত সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ‘শিক্ষাবার্তা’ নামক পেজে “ব্রেকিং নিউজ এইচএসসি, অনার্স, মাস্টার্স শিক্ষার্থীরা পাবে ১০ হাজার টাকা অনুদান আবেদন শুরু” শীর্ষক তথ্য সম্বলিত একটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot College : Rumor Scanner 

উক্ত পোস্টের কমেন্ট সেকশনে আবেদন করার জন্য শিক্ষার্থীদের পেজটিতে মেসেজ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে এবং আবেদনকরার ক্ষেত্রে ফি প্রযোজ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের (মাউশি) একটি বিজ্ঞপ্তি ও ওয়েবসাইট লিংকও যুক্ত করা দেওয়া হয়েছে। 

পরবর্তীতে বিজ্ঞপ্তিটিতে থাকা তথ্যের সূত্র ধরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটে গত ২৪ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বাজেট অধিশাখার যুগ্মসচিব নূর-ই আলমের স্বাক্ষরিত অনুরূপ বিজ্ঞপ্তিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে অনুদান দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্তের উল্লেখ করে বলা হয়, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের পরিচালন বাজেট থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ (মাউশি)  শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীদের বিশেষ অনুদান দেওয়া হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত শর্ত অনুযায়ী সরকারি বা বেসরকারি সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (এম.পি.ও ভুক্ত ও নন এম.পি.ও. ভুক্ত) ছাত্র- ছাত্রীরা দুরারোগ্য ব্যধি, দৈব দুর্ঘটনা এবং শিক্ষা গ্রহণ কাজে ব্যয়ের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ অনুদান প্রদানের ক্ষেত্রে দুস্থ, প্রতিবন্ধী, অসহায়, রোগগ্রস্থ, গরীব, মেধাবী ও অনগ্রসর এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে তবে বিজ্ঞপ্তির কোথাও কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণি অর্থাৎ এইচএসসি, অনার্স কিংবা মাস্টার্স এর শিক্ষার্থীদের কথা উল্লেখ করা হয়নি।

এছাড়া, বিজ্ঞপ্তিতে কোথাও আবেদন ফি লাগবে এমন কোনো তথ্যের উল্লেখ নেই। উক্ত আবেদনের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের পদ্ধতি সম্পর্কিত নির্দেশনা থেকে বাংলাদেশ সরকারের ‘মাইগভ’ নামক ডিজিটাল সেবা প্রদানকারী একটি কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্মের ইউটিউব চ্যানেল থেকেও একই তথ্য জানা যায়। চ্যানেলটিতে ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি “শিক্ষার্থীদের আর্থিক অনুদানের আবেদন পদ্ধতি। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ। মাইগভ। myGov” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিওর ২২ সেকেন্ড সময়ে আবেদন করতে কোনো ফি প্রদান করতে হবে না বলে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়।

অর্থাৎ আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টে উল্লেখিত নির্দিষ্ট কোনো শ্রেণি কিংবা অনুদানের নির্দিষ্ট পরিমাণ ও আবেদন ফির দাবির বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, গত ২৪ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটে (মাউশি) ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের পরিচালন বাজেট থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ (মাউশি) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীদের বিশেষ অনুদান দেওয়া হবে শীর্ষক একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি, ‘ব্রেকিং নিউজ এইচএসসি, অনার্স, মাস্টার্স শিক্ষার্থীরা পাবে ১০ হাজার টাকা সহায়তা আবেদন শুরু ৪ ই ফেব্রুয়ারি’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে যে, কেবল এইচএসসি, অনার্স, মাস্টার্স শিক্ষার্থীরাই অনুদান পাবেনা। প্রকৃতপক্ষে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং শিক্ষামন্ত্রনালয়ের আওতাধীন

সরকারি, বেসরকারি কিংবা সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যেকোনো শিক্ষার্থী অনুদানের জন্য আবেদন করতে পারবে তবে অনুদান প্রদানের ক্ষেত্রে দুস্থ, প্রতিবন্ধী, অসহায়, রোগগ্রস্ত, গরীব, মেধাবী ও অনগ্রসর এলাকার ছাত্রছাত্রীদের অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে। এছাড়া আবেদন করার ক্ষেত্রে ফি প্রদান করার বিষয়টিও সত্য নয়।

উল্লেখ্য, গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে এ আবেদন শুরু হয়েছে যা আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি রাত ১১ টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত চলমান থাকবে।

সুতরাং, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ (মাউশি) এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এইচএসসি, অনার্স, মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা ১০ হাজার টাকা অনুদান পাবে দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

ভারতের পাঠ্যবইয়ে প্রেম ও ডেটিং সম্পর্কিত কোনো অধ্যায় যুক্ত হয়নি

সম্প্রতি, ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই) তাদের নবম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ‘ডেটিং অ্যান্ড রিলেশনশিপ’ নামের একটি অধ্যায় যুক্ত করেছে দাবিতে ভারত ও বাংলাদেশি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি তথ্য প্রচার করা হয়েছে।

ভারতের

উক্ত দাবিতে বাংলাদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন প্রথম আলো, বিডিনিউজ২৪, সময় টিভি, যমুনা টিভি, এটিএন নিউজ (ইউটিউব), এনটিভি, সংবাদ প্রকাশ, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, চ্যানেল২৪, শেয়ার বিজ, ঢাকা ট্রিবিউন, দৈনিক শিক্ষা, দেশ রূপান্তর, বার্তা২৪, ঢাকা পোস্ট, যায়যায়দিন, ডিবিসি নিউজ, বাংলাদেশ মোমেন্টস, ঢাকা প্রকাশ, বাংলাদেশ বুলেটিন, প্রতিদিনের সংবাদ, নিউজজি২৪, বিডি২৪রিপোর্ট, ডেইলি মিরর অব বাংলাদেশ, কিশোর ডাইজেস্ট, শিক্ষা বার্তা, ডেইলি বাংলাদেশ, বাহান্ন নিউজ, পদ্মা নিউজ (ইউটিউব)।

উক্ত দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন এনডিটিভি, নিউজ ১৮, ডেকান হেরাল্ড, ইন্ডিয়া টাইমস, আনন্দবাজার, ইন্ডিয়া টুডে, টাইমস অব ইন্ডিয়া, মানি কন্ট্রোল, টাইমস নাও

একই ঘটনাকে বাংলাদেশের দাবি করেও ফেসবুকে একাধিক পোস্ট হতে দেখা গেছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখান (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সিবিএসই নবম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ‘ডেটিং এন্ড রিলেশনশিপ’ নামক কোনো অধ্যায় চালু করেনি বরং ‘জি. রাম বুকস প্রা: লি:’ নামক প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত একটি বইয়ের অধ্যায়কে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই) এর অফিসিয়াল এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে গত ২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: X

এই পোস্ট থেকে জানা যায়, কতিপয় গণমাধ্যম ডেটিং এবং রিলেশনশিপের বিষয়ে আপত্তিকর উপাদানসহ একটি বইকে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই) এর প্রকাশনা হিসেবে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও ভুল তথ্য। প্রকৃতপক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া অধ্যায়ের বিষয়বস্তুসমূহ ‘জি. রাম বুকস প্রা: লি: ইডুকেশনাল পাবলিশার্স’ নামক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রকাশিত ‘A Guide to Self Awareness and Empowerment’ নামক একটি বইয়ের। সিবিএসই কোনো ধরণের বই প্রকাশ করে না এবং কোনো বেসরকারি প্রকাশকদের বইয়ের প্রচারণা করে না।

অনুসন্ধনে ‘জি. রাম বুকস প্রা: লি:’ এর এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে গত ০২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি বিবৃতি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

বিবৃতিতে জি. রাম বুকস প্রা: লি: কর্তৃপক্ষ জানায়, “আমাদের প্রকাশনা থেকে ‘A Better You: A Guide to Self-Awareness & Empowerment’ নামক বইয়ের ‘ডেটিং এবং রিলেশনশিপস’-এর ওপর রচিত একটি অধ্যায়ের ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া বিপুল সমর্থন এবং ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় আমরা অভিভূত।”

“আমরা আরও স্পষ্ট করতে চাই যে আমাদের এই বইগুলো সিবিএসই বা ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ইডুকেশনাল রিসার্চ এন্ড ট্রেইনিং (এনসিইআরটি) দ্বারা প্রকাশিত হয়নি। সেগুলো আমাদের দ্বারা অর্থাৎ জি. রাম বুকস প্রা: লি: কর্তৃক নিজস্ব চিন্তাভাবনা এবং দায়িত্বের সাথে স্কুল শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য প্রকাশ করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে আরো জানতে জি. রাম বুকস প্রা: লি: এর নির্বাহী পরিচালক টেন্সি মঙ্গলের সাথে কথা বলেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি আমাদের বলেছেন, “এই বইটি প্রথম থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য। অনেক বিদ্যালয়েই এটি পড়ানো হয়। বইটি কোভিডের পর প্রকাশিত হয় এবং কত মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা দেখেই বইটি লেখা হয়েছিল।”

টেন্সির কথার সাথে মিল পাওয়া যায় এক্সে এক ব্যক্তির পোস্টের। ‘Khushi’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে গত ৩১ জানুয়ারি এ বিষয়ে সম্ভাব্য প্রথম দাবিটি প্রচারিত হয়েছিল। তিনি বইটির দুইটি পৃষ্ঠার ছবি প্রকাশ (আর্কাইভ) করে ক্যাপশনে লিখেন, ‘এখনকার নবম শ্রেণির ক্লাসের পাঠ্যবই যেমন হয়।’ ভাইরাল হওয়া এই পোস্টে তার কমেন্ট পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, তিনি এটিকে সিবিএসই এর বই বলে দাবি করছেন। বলছেন, এটি তার ভাইয়ের পাঠ্যবইতে তিনি দেখেছেন। 

Screenshot collage: Rumor Scanner

পরবর্তীতে তিনি গত ০২ ফেব্রুয়ারি সিবিএসই এর দেওয়া বিবৃতিটি শেয়ার করে স্বীকার করেন যে, এটি সিবিএসই কর্তৃক সুপারিশকৃত বই নয়। স্কুলগুলো নিজেরা স্ব-প্রণোদিত হয়ে বইটি পড়াচ্ছে।

Screenshot: X

অর্থাৎ, টেন্সি মঙ্গল এবং জনৈক খুশির বার্তা থেকে এটা নিশ্চিত যে, সিবিএসই এই বইটি প্রকাশ না করলেও ভারতের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে এই বই পড়ানো হয়। 

তাছাড়া, সিবিএসই কর্তৃক প্রকাশিত সর্বশেষ ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের সিলেবাসেও এই বইটির বিষয়ে উল্লেখ নেই। সিলেবাসটি দেখুন এখানে।

মূলত, ‘A Guide to Self Awareness and Empowerment’ শীর্ষক একটি বই ভারতের জি. রাম বুকস প্রা: প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়। যাতে ‘ডেটিং এবং রিলেশনশিপস’-এর ওপর রচিত একটি অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে সম্প্রতি ‘ডেটিং এবং রিলেশনশিপস’ অধ্যায়টি ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই) এর পাঠ্যক্রমের নবম শ্রেণির পাঠ্য বইয়ের অধ্যায় দাবিতে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে, এটি ভারতের নবম শ্রেণির পাঠ্যবই নয়। এই বই সিবিএসই প্রকাশ করেনি। এমনকি স্কুলে পড়ানোর জন্য সুপারিশও করেনি। তাছাড়া, কোভিডের পর এটি প্রকাশিত হলে তখন থেকেই এটি বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পড়ানো হচ্ছে বলে প্রকাশনা সংস্থার পক্ষ থেকে রিউমর স্ক্যানারকে জানানো হয়েছে।

সুতরাং, একটি স্বাধীন প্রকাশনা সংস্থার বইয়ে ‘ডেটিং এবং রিলেশনশিপস’ এর রচিত অধ্যায় থাকার তথ্যকে ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশনের পাঠ্যক্রমের নবম শ্রেণির বইয়ের অধ্যায় দাবিতে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

  • CBSE – X Post
  • G. Ram Books (P) Ltd. – X Post 
  • Statement from Tency Mangal, G.ram Books Pvt Ltd
  • Rumor Scanner’s own analysis

সারাদেশে নয়, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধের ঘটনাটি বরগুনার একটি কলেজের

0

সম্প্রতি, “একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়ার আদেশটি সারাদেশের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য নয় বরং ২০২৩ সালের নভেম্বরে বরগুনা সরকারি কলেজে ক্লাস চলাকালীন একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার তথ্যটি উক্ত কলেজের নাম উল্লেখ না করে শুধুমাত্র একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য দাবিতে প্রচারিত হচ্ছে।

মূলত, ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর বরগুনা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মতিউর রহমান স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে উক্ত কলেজে ক্লাস চলাকালীন একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। সেসময় উক্ত নিষেধাজ্ঞার বিজ্ঞপ্তি নিয়ে অনলাইন পোর্টাল ঢাকা পোস্ট তাদের ফেসবুক পেজে ‘একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ’ শীর্ষক তথ্যে একটি ফেসবুক পোস্ট করে এবং একই শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে। তবে সেসময় উক্ত সংবাদ শিরোনাম এবং ফেসবুক পোস্টে বরগুনা সরকারি কলেজের কথা  উল্লেখ না থাকায় নেটিজেনরা বিষয়টি সারাদেশের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য আদেশ ভেবে বিভ্রান্ত হয়ে এ বিষয়ে নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে এবং উক্ত পোস্টটিকে কপি পেস্ট করে বরগুনার বিষয় উল্লেখ না করে প্রচার করে। উক্ত বিষয়টিই সাম্প্রতিক সময়ে আবারও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে। 

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের নভেম্বরে উক্ত বিষয়টি ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে সেসময় বিষয়টিকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

জিয়া পরিবারকে খুনি হিসেবে আখ্যায়িত করে রুমিন ফারহানা বক্তব্য দেননি

0

চলতি বছরের শুরুর দিকে, ‘এক ভিডিওতে বিএনপির তিন নেতাকে ধুয়ে দিলেন রুমিন ফারহানা’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদকরুমিন ফারহানাকে বলতে শোনা যায়, “জিয়া, খালেদা, তারেক সকলেই খুনি, তাদের বিচার হবে।”

রুমিন

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে খুনি বলে সম্বোধন করেননি বরং জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে খুনি হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি বিষয়টি উল্লেখ করে উক্ত কথাগুলো বলেছেন।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে ভিডিওতে প্রদর্শিত রুমিন ফারহানার বক্তব্যে কিছু অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া, ভিডিওটি’র সাথে কয়েকটি ফানি ক্লিপও যুক্ত করা হয়েছে।

বিষয়টি যাচাইয়ে ভিডিওটি’র মূল উৎস অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ‘Rumeen’s Voice’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর ‘স্যাংশনের কথা আমেরিকা সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে? Rumeen’s Voice | রুমিন ফারহানা | Rumeen Farhana’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

এই ভিডিওটি’র একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র মিল রয়েছে। ভিডিওটি’র ৩ মিনিট ১৬ সেকেন্ড থেকে ৩ মিনিট ২৫ সেকেন্ড অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র রুমিন ফারহানার বক্তব্যের অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

মূল ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে রুমিন ফারহানা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। উক্ত ভিডিওটিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ উপলক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে বিএনপিকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য নিয়ে তিনি সমালোচনা করেন। তিনি দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম ডেইলি স্টারে প্রকাশিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে খুনি হিসেবে আখ্যায়িত করে দেওয়া এক বক্তব্যের বিষয়ে সমালোচনা করেন। এসময় তিনি উক্ত প্রতিবেদনটি পড়ে শোনান।

পরবর্তীতে ডেইলি স্টারের ওয়েবসাইটে গত ৩০ ডিসেম্বর ‘জিয়া, খালেদা ও তারেক খুনি, তাদের বিচার হবে: প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত উক্ত প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৩০ ডিসেম্বর মাদারীপুরের কালকিনিতে নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দেন। উক্ত বক্তব্যে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে খুনি হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খুনের জন্য তাদের বিচার হবে।

মূলত, ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর Rumeen’s Voice নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক রুমিন ফারহানার মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার একটি ভিডিও প্রচারিত হয়। উক্ত ভিডিওটিতে তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ উপলক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে বিএনপিকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য নিয়ে তিনি সমালোচনা করেন। পরবর্তীতে সেখান থেকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে খুনি হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি বিষয়টি বর্ণনা করেন। উক্ত অংশটি কেটে তাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ‘বিএনপির তিন নেতাকে ধুয়ে দিলেন রুমিন ফারহানা’ শীর্ষক শিরোনাম যুক্ত করে ভিডিওটি’র খণ্ডাংশ বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে রুমিন ফারহানা জিয়া পরিবারকে নিয়ে এমন কোনো মন্তব্য করেননি।

উল্লেখ্য, পূর্বেও ভিন্ন ঘটনার ভিডিওকে বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে রুমিন ফারহানার বক্তব্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়টি মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিয়া পরিবারকে উদ্দেশ্য করে দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে সমালোচনা করে বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানার বক্তব্যের খণ্ডিত অংশকে জিয়া পরিবারকে খুনি আখ্যা দিয়ে তার (রুমিন) মন্তব্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র