সম্প্রতি, সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন চাইলো। সংলাপ ডেকে ফেঁসে গেল সিইসি– শীর্ষক ক্যাপশনে এবং সেনাবাহিনীর হতে ক্ষমতা দেওয়ার নির্দেশ, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইলো সিইসি– শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা দেওয়ার নির্দেশ দেয়নি এবং প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগও চায়নি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে উক্ত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ৮ মিনিট ৮ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে দেখা যায়, ভিডিওটির শুরুতে দুইটি ভিডিওর খণ্ডাংশ দেখানো হয়। পরবর্তীতে ভিডিওটিতে চ্যানেলটির উপস্থাপক আলোচিত ভিডিওটির উদ্দেশ্যে দুটি ভিডিও দেখানো হয়৷
ভিডিওটি থেকে জানা যায়, নিবন্ধিত দলগুলোর সাথে ইসির বৈঠকের পর রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের প্রেস ব্রিফিংয়ের ভিডিও এটি।
Comparison: Rumor Scanner
এছাড়া, আলোচিত ভিডিওটিতে হুবহু এই ভিডিওর সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিও যাচাই-২
আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা দ্বিতীয় ভিডিওটিতেও বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন বাংলা’র লোগো’র সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে এটিএন বাংলা’র ইউটিউব চ্যানেলে গত ৩ নভেম্বর “বিএনপির মাজা ভাঙ্গা নিয়ে কি বললেন ভিপি নূর” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিও এবং গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ৩ নভেম্বর (শুক্রবার) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে আলরাজি কমপ্লেক্সের সামনে ২৮ অক্টোবরের সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিদের গায়েবানা জানাজা ও দোয়া মাহফিল-পূর্ব অনুষ্ঠানে গণ অধিকার পরিষদ নেতা নুরুল হক নুর এ কথা বলেন।
এছাড়া, ভিডিওতে থাকা তথ্যের সাথে আলোচিত ভিডিওটির দাবির কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটিতে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার যে ভিডিও ক্লিপগুলো যুক্ত করা হয়েছে সেগুলোতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চাওয়া বিষয়ক কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, বাংলাদেশের মূলধারার কোনো গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চাওয়া বিষয়ক কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালুর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এরই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি “সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা দেওয়ার নির্দেশ, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইলো সিইসি” শীর্ষক থাম্বনেইল এবং শিরোনামে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। অধিকতর ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়। এছাড়া, নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রেও এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবিতে ভিন্ন ভিডিও প্রচার করা হলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চাওয়া সংক্রান্ত দাবিগুলো মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে বললো যুক্তরাষ্ট্র।বিপদে প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দিতে বলেনি বরং কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই এবং অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় ইন্টারনেটে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার দাবিটির সূত্রের খোঁজ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তবে অনুসন্ধানে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বলেছে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ওয়েবসাইটেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বলেছে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গত ৬ নভেম্বরে “Department Press Briefing – November 6, 2023” শীর্ষক প্রকাশিত প্রেস ব্রিফিং শিরোনামে প্রকাশিত প্রেস ব্রিফিং এ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেলের বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot from state.gov
বেদান্ত প্যাটেলকে একজন সাংবাদিক বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক অবস্থা এবং এই মূহুর্তে যুক্তরাষ্ট্র কি বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকবে কিনা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছা আছে কিনা এমন প্রশ্ন করেন।
প্রশ্নের জবাবে বেদান্ত প্যাটেল বলেন ‘এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। এটি আমরা আগেও বলেছি, আপনার বন্ধুর প্রশ্নের জবাবে আমরা এটি পুনরুল্লেখ করেছি। একটি দলের বিপরীতে আমরা আলাদা করে কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করি না। এই মুহূর্তে আমাদের ফোকাস হচ্ছে আগামী জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে নির্বাচনী পরিবেশ ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা।
বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক যুগান্তর এর ওয়েবসাইটে ৯ নভেম্বর “বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গত ৮ নভেম্বররের মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল এর আরও একটি বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক সহকারী প্রেস সচিব মুশফিকুল ফজল আনসারী বিএনপির পক্ষে প্রশ্ন করলে বেদান্ত প্যাটেল স্পষ্ট করে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকার ও বিরোধী দলসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করছে ওয়াশিংটন।”
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের কথা বলে আসছে।
তবে উক্ত দুই প্রেস ব্রিফিং এ কোথাও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দিতে হবে এমন তথ্য বলেনি।
মূলত, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দিতে বলেছে দাবিতে একটি ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যক্তির আলাপচারিতা এবং বক্তব্যে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়া এবং অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে জড়িয়ে ইন্টারনেটে একাধিক ভুল তথ্য প্রচার করা হলে সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন প্রতিবেদন দেখুন এখানে:
সুতরাং, বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দিতে হবে এমন কোনো বিবৃতি যুক্তরাষ্ট্র দেয়নি এবং উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে যে ভূমিকম্পের দৃশ্য দেখানো হয়েছে সেটি ১১.৫ মাত্রার ছিল না বরং ২০১৫ সালে নেপালের কাঠমান্ডুতে সংঘটিত ৭.৮ মাত্রার মাত্রার ভূমিকম্পের ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম দেখেছে, এই ভিডিওর বিষয়ে পূর্বেও আমাদের ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করা হয়েছিল। “নেপালে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের দৃশ্য দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, এটি ২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিল নেপালে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পের দৃশ্য।
উক্ত তথ্যর সূত্র ধরে অনুসন্ধানে জাতিসংঘের ইউএন ক্রনিকল নামক ম্যাগাজিনের ওয়েবসাইটে ২০১৬ সালের মে মাসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উক্ত ভূমিকম্পের বিষয়ে তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়৷ জাতিসংঘ বলছে, ২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিল নেপালে যে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে সেটি ৭.৮ মাত্রার ছিল।
Screenshot: UN
আরও অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও একই তথ্য উল্লেখ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম৷
এছাড়া, মার্কিন সরকারের ভূতত্ত্ব জরিপকারি প্রতিষ্ঠান U.S.Geological Survey (USGS) এর ওয়েবসাইট থেকেও একই তথ্যই মিলেছে।
আমাদের অধিকতর অনুসন্ধানে, নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে আলোচিত ভিডিওতে দেখানো নেপালের ভূমিকম্পটি ৭.৮ মাত্রার বলে জানা গেলেও কতিপয় গণমাধ্যমে এই ভূমিকম্পকে ৭.৯ মাত্রার বলেও উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে কোনো সূত্রেই এই ভূমিকম্প ১১.৫ মাত্রার বলে উল্লেখ পাওয় যায়নি।
তাছাড়া, ১১.৫ বা কাছাকাছি মাত্রার ভূমিকম্প সর্বশেষ কবে হয়েছিল এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে অনুসন্ধান করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। ‘EARTH OBSERVATORY OF SINGAPORE ‘ নামক ওয়েবসাইটে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক ভূমিকম্প বিষয়ক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৯৬০ সালে চিলিতে ৯.৫ মাত্রায় একটি ভূমিকম্প হয়েছিল এবং এটাকেই এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে অধিক মাত্রার ভূমিকম্প হিসেবে ধরা হয়।
Source: EOS/Rachel Siao
মূলত, সম্প্রতি ভূমিকম্পের একটি ভিডিও ইন্টারনেটে শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, উক্ত ভূমিকম্পটি ১১.৫ মাত্রার ছিল। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে, ২০১৫ সালে নেপালের এই ভূমিকম্পটি ৭.৮ মাত্রার ছিল। তাছাড়া এখন পর্যন্ত ১১.৫ বা কাছাকাছি মাত্রার সবচেয়ে বড় মাত্রার ভূমিকম্পটি ৯.৫ মাত্রার ছিল বলে জানা গেছে, যা ১৯৬০ সালে চিলিতে হয়েছিল।
সুতরাং, নেপালে ২০১৫ সালে ৭.৮ মাত্রার একটি ভূমিকম্পকে ১১.৫ মাত্রার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে ; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
টিকটকে প্রচারিত ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রবিবার থেকে সারাদেশে তিন মাসের হরতালের ঘোষণার দাবিটি সত্য নয় বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিন্ন ছবি ও সংবাদের স্ক্রিনশট যুক্ত করে উক্ত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ১১ মিনিট ১০ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে দেখা যায়, ভিডিওটির শুরুতে একজন উপস্থাপন বক্তব্য উপস্থাপন করছেন। পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদের অনলাইন সংস্করণের স্ক্রিনশট সংযুক্ত করে উপস্থাপকের বর্ণনায় ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
ভিডিওটির শুরুতে কালবেলায় গত ২ নভেম্বর “রোববার থেকে আসছে টানা অবরোধ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখা যায়।
আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত সংবাদগুলো হুবহু পাঠ করে শোনাচ্ছেন উপস্থাপক।
এছাড়া, আলোচিত ভিডিওটিতে রবিবার থেকে তিনমাসের হরতাল সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
পাশাপাশি, প্রচারিত দাবিটির বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে অন্যান্য গণমাধ্যম এবং নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ২৯ অক্টোবর সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কর্মসূচি পালনের পর ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে সর্বাত্মক অবরোধের ডাক দেয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। অবরোধের শেষদিন ২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দলটির পক্ষ থেকে নতুন করে ৫ ও ৬ নভেম্বর ৪৮ ঘন্টা সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচী পালনের ডাক দেওয়া হয়। এরইমধ্যে রবিবার থেকে সারাদেশে তিনমাসের হরতাল ঘোষণা– শীর্ষক একটি তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত দাবিটি সত্য নয় বরং ভিন্ন কয়েকটি ছবি ও কয়েকটি সংবাদের স্ক্রিনশট ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
সুতরাং, রবিবার থেকে সারাদেশে তিনমাসের হরতাল ঘোষণার দাবিটি মিথ্যা।
গত ৩০ অক্টোবর গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকায় বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভের সময় এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড নামে একটি তৈরি পোশাক কারখানায় আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। কতিপয় গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছে, পোশাক কারখানাটির মালিক চিত্রনায়ক ও ব্যবসায়ী অনন্ত জলিল।
কতিপয় গণমাধ্যম উক্ত দাবিতে সংবাদ প্রকাশ করে পরবর্তীতে সংশোধন করেছে। পূর্বের সংস্করণটির আর্কাইভ পাওয়া যায়নি। এমন কিছু গণমাধ্যম হচ্ছে প্রথম আলো, চ্যানেল২৪, ঢাকা মেইল, রাইজিং বিডি, বায়ান্ন টিভি।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এবিএম ফ্যাশন লিমিটেডের মালিক অনন্ত জলিল নয় বরং পোশাক কারখানাটি অনন্ত কোম্পানিজ নামে ভিন্ন একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের মালিকানাধীন।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে অনন্ত জলিলের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে গত ৩০ অক্টোবর প্রকাশিত একটি পোস্ট (আর্কাইভ) নজরে আসে আমাদের।
অনন্ত পোস্টে লিখেছেন, ” গাজীপুরে শ্রমিকদের বিক্ষোভের সময় অনন্ত জলিলের কারখানায় আগুন, প্রথম আলোর এই নিউজটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে আমার কোন ফ্যাক্টরি নেই। আমার দুটি গ্রুপ অফ কোম্পানী, একটি এ জে আই গ্রুপ এবং আরেকটি এ বি গ্রুপ, দুটিই সাভারের হেমায়েতপুরে অবস্থিত।
অনন্ত লিখেছেন, “জাগো নিউজ সঠিক নিউজটি করেছেন। তারা সঠিক ইনফরমেশনটি দিয়েছেন।”
Screenshot: Facebook
অনন্ত জলিলের পোস্টের সূত্র ধরে জাগোনিউজ২৪ এর প্রতিবেদনটি খুঁজে বের করেছি আমরা। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, “গাজীপুরের কোনাবাড়িতে এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড কারখানায় আগুন দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। সোমবার (৩০ অক্টোবর) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে কারখানার গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে আগুন ধরিয়ে দেন তারা।” তবে কারখানাটির মালিকের বিষয়ে প্রতিবেদনে কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
আমরা পরবর্তী অনুসন্ধানে নেমে ফেসবুকে কোনাবাড়ীর একটি গ্রুপে অগ্নিকাণ্ডের শিকার হওয়া এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড কারখানাটির লে-অফ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি (আর্কাইভ) খুঁজে পেয়েছি। এবিএম ফ্যাশনের মানব সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা সারাহ নাফিসা স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, কারখানাটি ৩০ অক্টোবর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
Screenshot: Facebook
বিজ্ঞপ্তিতে কারখানাটির মূল প্রতিষ্ঠান হিসেবে Ananta Companies এবং ওয়েবসাইটের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে https://www.ananta.com.bd/।
ওয়েবসাইটটি থেকে জানা যাচ্ছে, অনন্ত কোম্পানিজের অধীনে এবিএম ফ্যাশন ছাড়াও আরও ছয়টি কারখানা রয়েছে যেগুলোর মধ্যে আশুলিয়ায় তিনটি, টঙ্গীতে দুইটি এবং যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে একটির অবস্থান রয়েছে।
Screenshot: Ananta Companies
এই ব্যবসায়ী গ্রুপটির বোর্ড অফ ডিরেক্টরের তালিকায় চেয়ারম্যান হিসেবে আমিনুল হক খান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে ইনামুল হক খান এবং ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে সাজেদুল করিমের নাম উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ, এই তালিকায় অনন্ত জলিল নেই৷
Screenshot: Ananta Companies
অর্থাৎ, এবিএম ফ্যাশন বা অনন্ত কোম্পানিজের সাথে অনন্ত জলিলের সংশ্লিষ্টতা মিলছে না।
অন্যদিকে, অনন্ত জলিলের মালিকানাধীন AJI Group এর ওয়েবসাইটে গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে অনন্ত জলিলের নামই উল্লেখ রয়েছে। এই গ্রুপের অধীনে তিনটি কারখানার তথ্য রয়েছে। তিনটি কারখানাই সাভারের হেমায়েতপুরে অবস্থিত।
এই ওয়েবসাইটেরই কোম্পানি প্রোফাইল থেকে পাওয়া তথ্যমতে, অনন্ত জলিলের এবি গ্রুপের অধীনে আরো দুইটি কারখানা রয়েছে যাদের অবস্থানও সাভারেই৷
Screenshot: AJI Group
অর্থাৎ, গাজীপুরে অনন্ত জলিলের মালিকানাধীন কোনো কারখানা নেই।
মূলত, গত ৩০ অক্টোবর গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকায় বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভের সময় এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড নামে একটি তৈরি পোশাক কারখানায় আগুন দেওয়ার ঘটনায় গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়, পোশাক কারখানাটির মালিক চিত্রনায়ক ও ব্যবসায়ী অনন্ত জলিল। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কারখানাটির মালিক অনন্ত জলিল নয়। গাজীপুরে তার কোনো কারখানাই নেই৷ প্রকৃতপক্ষে, পোশাক কারখানাটি অনন্ত কোম্পানিজ নামে ভিন্ন একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের মালিকানাধীন যার চেয়ারম্যান আমিনুল হক খান।
সুতরাং, গাজীপুরে এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড নামে অনন্ত কোম্পানিজ নামে একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের মালিকানাধীন কারখানায় আগুন লাগার ঘটনাকে চিত্রনায়ক অনন্ত জলিলের পোশাক কারখানায় আগুন লেগেছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ভোটচুরির নির্বাচন করতে দিবোনা সেনাবাহিনীর হুংকার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে হুমকি- শীর্ষক ক্যাপশনে এবং ভোটচুরির নির্বাচন করতে দিবো না: সেনাবেহিনী- শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এমন কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি বরং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও এবং ছবি সংযুক্ত করে চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটির শুরুতে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিওর খণ্ডাংশ এবং ছবি দেখানো হয়। পরবর্তীতে আলোচিত দাবিটি সম্পর্কে পাঁচটি ভিডিও দেখানো হয়। কিন্তু এতে কোথাও জরুরি অবস্থা জারি কিংবা সেনাবাহিনীর ক্ষমতায় আসা বিষয়ক কোনো দৃশ্য কিংবা তথ্য দেওয়া হয়নি।
ভিডিও যাচাই ১
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা প্রথম ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে কানাডা থেকে পরিচালিত Nagorik TV নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ১০ অক্টোবর “জেক সালিভানের সাথে অসফল মিটিং ও অনিশ্চিত রাজনৈতিক গন্তব্য” শীর্ষক শিরোনামে একটি টকশো ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
১ ঘন্টা ৪৪ মিনিট ৬ সেকেন্ডের টকশোটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এখানে সেনাবাহিনী নির্বাচন করতে দিবে না শীর্ষক কোনো আলোচনা হয়নি।
Video Comparison: Rumor Scanner
এছাড়া, আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা অংশটির সাথে উক্ত ভিডিওর ১ ঘন্টা ৩ মিনিটের অংশটির হুবহু মিল রয়েছে।
ভিডিও যাচাই ২
পরবর্তীতে একজন সংবাদ পাঠিকাকে সংবাদ পাঠ করতে শোনা যায়। সেই ভিডিওটিতে থাকা বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসি নিউজের লোগো’র সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ডিবিসি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে গত ৮ অক্টোবর “এবার ঢাকা অচলের পরিকল্পনা বিএনপির, আসছে কঠোর আন্দোলন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, এটি বিএনপি’র সরকার পতন আন্দোলন সংক্রান্ত কর্মসূচি নিয়ে করা একটি প্রতিবেদন।
ভিডিও যাচাই ৩
আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা তৃতীয় ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে Voice Bangla নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৩ অক্টোবর “বিএনপির বিষয়ে সিইসির এতো কঠিন সত্য বয়ান?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত মূল ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের বিবিসি বাংলায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকার নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি।
উক্ত ভিডিওতে সেনাবাহিনীকে নিয়ে কোনো তথ্য উপস্থাপন করেননি তিনি।
ভিডিও যাচাই ৪
আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা দৃশ্যটির বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল গাজীপুর মহানগর নামক একটি ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ উপজেলার এশিয়ান হাইওয়েতে কেন্দ্র ঘোষিত অবরোধের ১ম দিনের কর্মসূচি পালনকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি সুলতান মাহমুদ, রুপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব মাসুদুর রহমান, সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আরিফ বিল্লাহ ও দাউদপুর ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা তৌহিদ হাসানকে পুলিশ গ্রেফতার করে। সোমবার (৬ নভেম্বর) আটককৃতদের আদালতে হাজির করা হয়।
এছাড়া কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বাংলা ট্রিবিউনে গত গত ৬ নভেম্বর “নারায়ণগঞ্জে ছাত্রদলের ৪ নেতা আটক” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
এই প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।
ভিডিও যাচাই ৫
আলোচিত ভিডিওরিতে সর্বশেষ বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য দেওয়ার একটি ভিডিও ক্লিপ দেখা যায়।
পরবর্তীতে তারেক রহমানের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ৫ নভেম্বর “সারাদেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ সফল করায় জনগণকে ধন্যবাদ এবং সীমিত সামর্থের নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগের আহবান” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটিতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিএনপি’র চলমান কর্মসূচির জন্য নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন।
উপরোক্ত পাঁচটি ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে এটি স্পষ্ট যে, উক্ত ভিডিওগুলোতে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সেনাবাহিনীর বক্তব্য সম্পর্কিত কোনো তথ্য নেই।
এছাড়া, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কোনো বক্তব্য দেওয়া হলে বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটলে অবশ্যই সে সংবাদ দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত হতো। কিন্তু উক্ত দাবিগুলোর বিষয়ে গুগলে কি ওয়ার্ড সার্চ করে কোনোপ্রকার তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আলোচিত দাবি সংক্রান্ত কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি।
মূলত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এরই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি ভোটচুরির নির্বাচন করতে দিব না- সেনাবাহিনী– শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ সেনবাহিনীর পক্ষ থেকে এসংক্রান্ত কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি বা সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়নি। উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য দেশে সেনাবাহিনীর জরুরি অবস্থা জারি দাবিতে ইন্টারনেটে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, সেনাবাহিনীকে উদ্ধৃত করে আগামীতে ভোট চুরির নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধে ইলন মাস্কের গাজাকে সমর্থন জানিয়ে তার এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে কোনো ভিডিও পোস্ট দেয়নি বরং তার নামে তৈরি একটি নকল (প্যারডি) অ্যাকাউন্ট থেকে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধে গাজাকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টিকে ইলন মাস্কের সমর্থন দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে কালবেলার প্রতিবেদনে ইলন মাস্কের এক্স অ্যাকাউন্ট (সাবেক টুইটার) দাবিতে উল্লিখিত এক্স অ্যাকাউন্টটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
Screenshot from X
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইলন মাস্কের টুইটার অ্যাকাউন্ট দাবিতে প্রচারিত এক্স অ্যাকাউন্টিতে ইলন মাস্কের নামের পাশে ইংরেজিতে ‘Parody’ লেখা, যা বাংলায় নকল বোঝায় এবং ইউজার নেমে @ElonMuskAOC লেখা।
এছাড়া কি-ওয়ার্ড সার্চ অনুসন্ধানে Elon Musk (Parody) নামক এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে গত ৭ জুলাই প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। সেই পোস্টে Elon Musk শীর্ষক নাম এবং @elonmusk ইউজার নেমসহ এক্স কর্তৃপক্ষ থেকে ভ্যারিফাইড ইলন মাস্কের আসল এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে করা একটি মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot from X
মন্তব্যে ইলন মাস্ক লিখেন, অনেক মানুষ এই অ্যাকাউন্টটিকে আমার মনে করে (বাংলায় অনূদিত)।
Screenshot from X
ইলন মাস্কের করা সেই মন্তব্যে ইউটিউবার মি বিস্ট এই অ্যাকাউন্টটি ইলন মাস্কের কিনা তা জানতে মন্তব্য করলে ইলন মাস্ক ‘না’ সম্বোধন করেন।
Image Comparison: Rumor Scanner
এছাড়া, অনুসন্ধান করে ইন্টারনেটে এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ইলন মাস্কের ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়া নিয়ে কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ৭ নভেম্বর স্পেস এক্স এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার) এর সত্ত্বাধিকারী ইলন মাস্কের নামে তৈরী Elon Musk (Parody) নামক নকল অ্যাকাউন্ট থেকে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ফিলিস্তিনি পতাকাসহ আন্দোলনকারীদের মিছিলের একটি ভিডিও প্রকাশ করে। সম্প্রতি, সেই আন্দোলনের ভিডিও ইলন মাস্ক প্রকাশ করে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধে গাজার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন দাবিতে জাতীয় দৈনিক কালবেলার ওয়েবসাইটে একটি সংবাদ প্রতিবদন প্রকাশ করেছে।
উল্লেখ্য, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷
সুতরাং, স্পেস এক্সের প্রতিষ্ঠাতা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সের সত্ত্বাধিকারী এলন মাস্ক ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধে গাজার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন দাবিটি মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাকিব আল হাসানের ইনজুরি নিয়ে শ্রীলংকান ক্রিকেটার এঞ্জেলো ম্যাথিউস কোনো টুইট করেননি বরং ম্যাথিউসের নামে চালু থাকা একটি প্যারোডি এক্স অ্যাকাউন্টের টুইটকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে এ সংক্রান্ত দাবিগুলো যে টুইটের বরাতে ছড়িয়েছে, সেটির বিষয়ে অনুসন্ধান করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, Angelo96Mathews নামের আলোচিত এক্স (সাবেক টুইটার) একাউন্টটি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
উক্ত এক্স একাউন্টটিতে আলোচিত টুইটটি খুঁজে পাওয়া যায়।
তবে, চলতি বছরের মে মাসে চালু করা এই অ্যাকাউন্টের About সেকশনেই স্পষ্ট করে লেখা রয়েছে, এটি একটি প্যারোডি অ্যাকাউন্ট। এছাড়াও উক্ত, টুইটার ব্যবহারকারীর লোকেশন হিসেবে London, England উল্লেখ করা হয়েছে।
Source: X
যা থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে উক্ত অ্যাকাউন্টটি একটি প্যারোডি অ্যাকাউন্ট এবং এটির ব্যবহারকারী শ্রীলংকান ক্রিকেটার এঞ্জেলো ম্যাথিউস নন।
পরবর্তীতে, শ্রীলংকান ক্রিকেটার এঞ্জেলো ম্যাথিউসের প্রকৃত এক্স (সাবেক টুইটার) একাউন্ট খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার।
এঞ্জেলো ম্যাথিউসের এক্স একাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে গত ৭ নভেম্বরের একটি টুইট খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচে নিজে টাইমড আউট হওয়ার একটি ভিডিও টুইট করেন ম্যাথিউস। তার উক্ত টুইটে বিশ্বের খ্যাতনামা ক্রিকেটাররা রিটুইট করে এঞ্জেলো ম্যাথিউসের বহুল আলোচিত টাইমড আউটের বিষয়ে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেন।
কিন্তু, উক্ত এক্স একাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে সাকিব আল হাসানের ইনজুরি সংক্রান্ত কোনো টুইট খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিংবা অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে সাকিবের ইনজুরি নিয়ে এঞ্জেলো ম্যাথিউস কোনো মন্তব্য করেছেন শীর্ষক দাবির পক্ষে প্রমাণ মেলেনি।
মূলত, শ্রীলংকান ক্রিকেটার এঞ্জেলো ম্যাথিউসের নামের একটি প্যারোডি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে সাকিব আল হাসানের ইঞ্জুরি নিয়ে হাস্যরসাত্মক টুইট করা হয়। তবে এই টুইট এঞ্জেলো ম্যাথিউসের মূল এক্স অ্যাকাউন্ট থেকেই করা হয়েছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রসঙ্গত, গত ৬ নভেম্বর বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচে বাংলাদেশি অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের আবেদনের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টাইমড আউটের শিকার হন শ্রীলংকান ক্রিকেটার এঞ্জেলো ম্যাথিউস।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ভারতীয় ক্রিকেটার মোহাম্মদ সিরাজের নামে খোলা প্যারোডি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়লে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সুতরাং, একটি প্যারোডি এক্স অ্যাকাউন্টের টুইটকে সাকিব আল হাসানের ইনজুরি সংক্রান্ত এঞ্জেলো ম্যাথিউসের টুইট দাবি করে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, যুদ্ধে শহীদ হওয়ার পূর্বে ফিলিস্তিনি যোদ্ধার শেষ কথা দাবিতে প্রচারিত ভিডিও সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ডায়ালিং নামের একটি ইরাকী শর্ট ফিল্মের অংশবিশেষ।
অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে بهاء الكاظمي নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৭ সালের ১৫ আগস্ট dailing – فيلم جاري الاتصال – اخراج بهاء الكاظمي শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির শিরোনাম ইংরেজিতে অনুবাদ করলে এর অর্থ হয় Dailing – Connecting Movie – directed by Bahaa Al-Kazemi.
Screenshot: Youtube
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভিডিওটির ১০ সেকেন্ড থেকে ৪০ সেকেন্ড এবং ১৪ মিনিট ১৮ সেকেন্ড থেকে ১৪ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের অংশটুকুর সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।
Video Comparison by Rumor Scanner
পরবর্তীতে ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণী ইংরেজি ভাষায় অনুবাদের মাধ্যমে জানা যায়, শর্ট ফিল্মটি মূলত একজন মায়ের সন্তান হারানোর গল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। যার সন্তান ইরাকী সেনাবাহিনীর হয়ে সন্ত্রাসী সংগঠন আইএসআইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গিয়ে শহীদ হয়েছেন। এছাড়াও জানা যায়, শর্ট ফিল্মটি বাহা আল-কাজেমী নামের একজন পরিচালনা করেছেন এবং তার নির্মিত এই ফিল্মটি ২০১৫ সালে দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও প্রদর্শন করা হয়েছে।
Screenshot: Youtube
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যম Dubai International Film Festival এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর DIFF 2015 – Dialing শীর্ষক শিরোনামে Dialing ফিল্মটির একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Youtube
অর্থাৎ, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি একটি ইরাকী শর্ট ফিল্মের কিছু অংশ ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় কাট করে তা জোড়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
মূলত, গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলে আকস্মিক এবং নজিরবিহীন মিসাইল হামলা চালায় হামাস। এরপর থেকেই ক্রমাগত দেশ দুটির মধ্যকার চলমান সংকট আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে শুরু করে। যা বর্তমানে যুদ্ধে রূপ লাভ করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি যুদ্ধে শহীদ হওয়ার পূর্বে ফিলিস্তিনি যোদ্ধার শেষ কথা দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি মূলত Dialing নামের একটি ইরাকী শর্ট ফিল্মের কিছু অংশ কাট করে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও শর্ট ফিল্মটি ইরাকের সেনাবাহিনী এবং সন্ত্রাসী সংগঠন আইএসআইএসের মধ্যে চলমান সংকটকে ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এর সাথে ইসরায়েল কিংবা ফিলিস্তিনের কোনো সম্পর্ক নেই।
সুতরাং, ইরাকের একটি শর্ট ফিল্মের অংশকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে শহীদ হওয়ার পূর্বে ফিলিস্তিনি যোদ্ধার শেষ কথার ভিডিও দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে আসছে জানুয়ারিতে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গেল বেশ কয়েক মাস ধরেই রাজপথে নানা কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে আন্দোলনে নিজেদের যুক্ত রেখেছে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো। এর মধ্যে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নিয়মিত কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। গেল ১৮ অক্টোবর দলটি রাজধানীর নয়াপল্টনে নিজেদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত এক জনসমাবেশ থেকে ঘোষণা দেয়, ২৮ অক্টোবর একই স্থানে মহাসমাবেশ করবে তারা।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেদিন জানান, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ থেকে শুরু হবে সরকার পতনের মহাযাত্রা।
Image source: Facebook
পরবর্তীতে একই দিনে ঢাকায় সমাবেশ ডাকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও। বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেইটে ‘শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ’ আয়োজনের ঘোষণা দেয় দলটি। এই দুই দল ছাড়াও ২৮ অক্টোবর রাজধানীর শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় আরেক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামিও। শুধু এই তিন দলই নয়, ২৮ অক্টোবর ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আরো একাধিক দল ও জোট সমাবেশ আয়োজনের ঘোষণা দেয়।
Image source: Facebook
তবে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এই তিন দলের সমাবেশ নিয়েই রাজনীতির ময়দানে আলোচনা ছিল বেশি। এক দিনেই ঢাকায় এসব সমাবেশের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দলগুলো যেমন প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছিল, তেমনি জনসাধারণের মধ্যেও এ দিনটি ঘিরে ছিল নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও উত্তেজনা, যা গণমাধ্যমের খবরে উঠে এসেছে।
তাই এই দিনটিকে ঘিরে রিউমর স্ক্যানার টিমের ছিল পূর্ব প্রস্তুতি, তবে তা অবশ্যই ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়া রোধের বিরুদ্ধে। এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে মধ্যেই ২৫ অক্টোবর বিএনপির আদলে তৈরি একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়তে দেখি আমরা। ‘আগামী ২৮ অক্টোবর ২০২৩, শনিবার রাজধানী ঢাকায় বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে যোগদানের আগে যেসকল নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসবেন, তারা তাদের পরিবারের নিকট থেকে বিদায় নিয়ে আসবেন।’ শীর্ষক একটি তথ্য ছিল উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে। এই বিজ্ঞপ্তিটি অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ইনসাইডারও প্রচার করে।
Image source: Facebook
কিন্তু বিএনপি’র মিডিয়া সেল এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক পোস্টে আলোচিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া (১) বলে নিশ্চিত করা হয়।
জানিয়ে রাখি, ২৮ অক্টোবর ঢাকার তিন সমাবেশের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও জামায়াতে ইসলামী অনুমতি পায়নি। ২৫ অক্টোবর ইউটিউবে এ সংক্রান্ত একটি ভিডিওর থাম্বনেইলে দাবি করা হয়, সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পিটিয়েছে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে (২) দেখেছে, অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো সূত্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর জামায়াত-শিবিরের হামলার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
গত ২৬ অক্টোবর জাতীয় দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার বরাতে ফেসবুকে প্রচারিত একাধিক পোস্টে দাবি করতে দেখা যায়, ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ নিয়ে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। ফখরুল পন্থী বনাম তারেক পন্থী দ্বন্দ্ব চরমে।
Screenshot source: Facebook
আমরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলাম (৩) মানবজমিনের চিফ নিউজ এডিটর সাজেদুল হকের সাথে। তিনি বলছিলেন, ‘আমরা এ ধরনের কোন রিপোর্ট করিনি। এটি গুজব।’
পরদিন (২৭ অক্টোবর) সকালে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার স্বাক্ষর সম্বলিত দলটির আদলে তৈরি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ফেসবুকে প্রচার করা হয়, ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কারণে ঢাকায় পূর্বঘোষিত শান্তি সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে জানিয়ে সারাদেশের জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
Image source: Facebook
পরবর্তীতে বিপ্লব বড়ুয়া নিজেই নিশ্চিত (৪) করেন যে বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া৷ ঢাকার সমাবেশ স্থগিত হয়নি।
কিন্তু এই ভুল তথ্য ছড়ানো তবু থেমে থাকেনি বরং নতুন উপায়ে ছড়িয়েছে। পরবর্তীতে দেশের দুই গণমাধ্যমের সূত্র দাবি করে ফেসবুকে প্রচার করা হয়, ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে। কালবেলা’র আদলে তৈরি ফটোকার্ডে এই তথ্যটিই শুধু প্রচার করা হলেও প্রথম আলো’র আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ডে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উক্ত দাবি করেছেন বলে প্রচার করা হয়।
Photocard Comparison: Rumor Scanner
কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে (৫) জেনেছে, ওবায়দুল কাদের এমন কোনো মন্তব্য করেননি এবং দৈনিক প্রথম আলো এবং দৈনিক কালবেলা উক্ত দাবিতে কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদও প্রকাশ করেনি।
এই ঘটনার কাছাকাছি সময়ে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নামেও একটি ভুয়া বিজ্ঞপ্তি ছড়ানো হয় ফেসবুকে, যাতে দাবি করা হয়েছিল, সংগঠনটির কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বহু নেতাকর্মী যারা গত কয়েকদিন ধরে ঢাকার বাইরে অবস্থান করছেন তাদের ঢাকায় ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর থাকা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন (৬), তাদের সংগঠন থেকে এমন কোনো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি।
একইদিন দুপুরে মানবজমিন এর আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ড প্রচার হতে দেখেছি আমরা, যাতে দাবি করা হচ্ছিল, বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক রুমিন ফারহানা চ্যানেল আই’য়ের টকশোতে এই মহাসমাবেশের তারিখ পেছানোর বিষয়ে “বৌদ্ধদের প্রবারণা পূর্ণিমার জন্য কেন সমাবেশ পেছাতে হবে? দেশে বৌদ্ধ আছে কতজন যে তাদের জন্য আপনারা মায়াকান্না করছেন?” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন।
Screenshot source: Facebook
রিউমর স্ক্যানার টিম এ বিষয়ে রুমিন ফারহানা, চ্যানেল আই এবং মানবজমিনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে। আমরা যাচাই (৭) করে দেখেছি, এ সংক্রান্ত কোনো মন্তব্য করেননি রুমিন ফারহানা। তাছাড়া, তিনি আলোচিত কর্মসূচী ঘোষণা পরবর্তী সময়ে চ্যানেল আইয়ের কোনো টকশোতেও যাননি। তাছাড়া, মানবজমিনও এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেননি।
কিন্তু রুমিন ফারহানার নামে ছড়িয়ে পড়া এই মন্তব্যের প্রেক্ষাপটকে কাজে লাগিয়ে কয়েক ঘন্টা পরই বিএনপির সমাবেশ স্থগিত ঘোষণা সংক্রান্ত একটি দাবি একইসাথে দলটির আদলে তৈরি প্রেস বিজ্ঞপ্তি এবং দ্য ডেইলি স্টারের আদলে তৈরি ফটোকার্ডের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। দাবি করা হয়, ‘লক্ষ্মীপূজা’ এবং ‘প্রবারণা পূর্ণিমা’র কারণে বিএনপি ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের তারিখ পরিবর্তন করে ২৯ অক্টোবর নির্ধারণ করেছে। কিন্তু অনুসন্ধান (৮) জানাচ্ছে, বিএনপি সমাবেশ পেছানোর কোনো ঘোষণাই দেয়নি। এমনকি ডেইলি স্টারও এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি।
২৭ অক্টোবর সন্ধ্যার পর ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়, যাতে দেখা যাচ্ছিল একটি ট্রেন উপচেপড়া যাত্রীসমেত চলছে। ভিডিওগুলোর ক্যাপশন পড়ে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছিল যে এটি পরদিন বিএনপির মহাসমাবেশে যোগ দিতে মানুষের ঢাকায় গমনের দৃশ্য।
তবে মজার বিষয় হচ্ছে, এই একই ভিডিও নিয়ে পূর্বেও রিউমর স্ক্যানার ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছিল। গেল বছরের (২০২২) অক্টোবরে বিএনপির খুলনার সমাবেশে জনগণের যোগদানের দাবিতেও এই ভিডিও প্রচার করা হয়েছিল। সেসময় আমরা ফ্যাক্টচেক করে জানিয়েছিলাম, ভিডিওটি ২০১৯ সালের বিশ্ব ইজতেমা শেষে মুসল্লীদের বাড়ি ফেরার দৃশ্য। সাম্প্রতিক দাবিটি নিয়ে আমাদের ফ্যাক্টচেক দেখুন এখানে (৯)।
ট্রেনের ভিডিও সংক্রান্ত আলোচ্য ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়তে যখন শুরু করে, তখন প্রায় একই সময়ে সমজাতীয় দাবি নিয়ে আরেকটি ভিডিও-ও প্রচার হতে দেখা যায়। এই ভিডিওতেও দেখা যাচ্ছিল, অসংখ্য মানুষ ট্রেনে করে তাদের গন্তব্যে ফিরছে।
আমরা এই ভিডিওটি নিয়েও পূর্বে অনুসন্ধান করেছিলাম। ২০২২ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত সেই অনুসন্ধানের ফলাফলে আমরা জানিয়েছিলাম, এটি সে বছরের ঈদুল ফিতর পালনের উদ্দেশ্যে মানুষের ট্রেনে করে বাড়ি ফেরার ভিডিও। এবার তাই আমাদের তাই আমাদের বিষয়টি নিয়ে বাড়তি অনুসন্ধানের প্রয়োজন পড়েনি। সাম্প্রতিক দাবিটি নিয়ে আমাদের ফ্যাক্টচেক দেখুন এখানে (১০)।
Video comparison: Rumor Scanner
বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকে জড়িয়েও ২৭ অক্টোবর ভুল তথ্য প্রচার হচ্ছিল বলে লক্ষ্য করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেদিন রাতে ইউটিউবের একটি ভিডিওর মাধ্যমে প্রচার করা হয়, পুলিশ বেড়ি ভেঙে রাতের শাপলা চত্বর দখলে নিলো জামায়াত- শিবিরের নেতা কর্মীরা। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার ভিডিওটি যাচাই (১১) করে দেখতে পায়, এটি সাম্প্রতিক সময়ের কোনো দৃশ্য নয়। ২০২১ সালের ২৬ মার্চ হাটহাজারী মাদরাসা ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে মুসল্লিদের উপর হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে রাজধানীতে জামায়াতে ইসলামীর বিক্ষোভ মিছিলের একটি ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। আমরা যখন বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করি, ততক্ষণে প্রায় ১২ লক্ষাধিক মানুষ পুরোনো ঘটনার এই ভিডিওটি দেখেছে।
২৭ অক্টোবর রাতে জাতীয় দৈনিক কালবেলা পত্রিকার আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ড প্রচারের মাধ্যমে দাবি করা হয়, সেদিন (২৭ অক্টোবর) রাতে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির নেত্রী নিপুণ রায়ের বিতরণ করা খিচুড়ি খেয়ে ৬৫ জন অসুস্থ হয়েছেন এবং তাদের ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
Screenshot source: Facebook
পরবর্তীতে সমজাতীয় দাবি আরেক জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ডেও প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। কিন্তু অনুসন্ধানে (১২) দেখা গেল, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় কালবেলা ও প্রথম আলো’র ডিজাইন নকল করে আলোচিত ফটোকার্ড দুইটি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো গ্রহণযোগ্য সূত্রে পল্টনে খিচুড়ি খেয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের অসুস্থতার দাবির বিষয়ে কোনো সত্যতা মেলেনি।
২৭ অক্টোবর শেষ ঘন্টায় কালবেলা’র আদলে একটি ফটোকার্ড ব্যবহার করে কিছু পোস্টে দাবি করা হয়, বিএনপির কার্যালয়ে ঢুকছে জাল টাকার নোট, যা দেয়া হবে নেতাকর্মীদের। তবে অনুসন্ধানে (১৩) কালবেলা’র ফেসবুক পেজ কিংবা অন্য কোনো প্লাটফর্মে উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
২৮ অক্টোবরের সমাবেশগুলো কেন্দ্র করে এর আগের দিনগুলোয় এমন করেই ক্ষণে ক্ষণে ভুল তথ্য মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছে। আমরা হিসেব করে দেখেছি, সমাবেশগুলোর কর্মসূচী ঘোষণা পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে ২৮ অক্টোবরের আগের দিন অর্থাৎ ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সমাবেশ কেন্দ্রিক ১৩ টি ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
আমরা পরদিনের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি। কাঙ্ক্ষিত সেইদিন অর্থাৎ ২৮ অক্টোবরের প্রথম প্রহরেই ফেসবুকে প্রচার হওয়া একটি পোস্টে অসংখ্য মানুষকে জড়ো হওয়ার একটি ছবি দেখতে পাই আমরা।
ডাঃ সানসিলা জেবরিন প্রিয়াঙ্কা নামক একটি পেজে ছবিটি শেয়ার করে ক্যাপশনে দাবি করা হয়, সেদিন রাতে ঢাকার রাজপথের দৃশ্য এটি। গণজমায়েতের পেছনের দিকে বিএনপির কিছু পোস্টার দেখা যাচ্ছে। তা থেকে সহজেই অনুমেয়, এটি বিএনপি সমর্থকদের কোনো গণজমায়েতের দৃশ্য।
Screenshot source: Facebook
আমরা ছবিটি রিভার্স সার্চ (১৪) করে বিএনপি’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ০৫ অক্টোবর ‘চট্টগ্রামে সমাপনী পথসভায় জনতার ঢল’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি পোস্টে একই ছবি খুঁজে পেয়েছি। অর্থাৎ, চট্টগ্রামের একটি ছবি ২৩ দিন পর স্থান বদলে ঢাকার দাবিতে প্রচার করা হলো।
সেদিন রাতেই জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ডে প্রচার করা হয়, বিএনপি-র সমাবেশ স্থলে কে বা কারা ফেলে গেছে ৪ টি হাঁস। হাঁস দেখতে উৎসুক জনতার ভিড়’। বিষয়টি হাস্যরসাত্মক তথ্য বলে প্রতীয়মান হলেও দেশের একটি গণমাধ্যমের বরাতে আলোচিত তথ্যটি প্রচার করার প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার। তবে অনুসন্ধানে (১৫) ইত্তেফাক এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেছে বলে প্রমাণ পাইনি আমরা।
২৮ অক্টোবর মধ্যরাতে মানবজমিন ও যমুনা টিভির বরাত দিয়ে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। এ সংক্রান্ত পোস্টগুলোতে দাবি করা হচ্ছিল, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশে কমপক্ষে ৮০-১০০ টি লাশ চেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দুইটি গণমাধ্যম এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদই প্রকাশ করেনি বলে অনুসন্ধানে (১৬) জেনেছে রিউমর স্ক্যানার।
প্রায় একই সময়ে প্রথম আলোর আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ডে ওবায়দুল কাদেরের একটি ছবি ব্যবহার করে প্রচার করা হয়, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশে মঞ্চে উঠে ওবায়দুল কাদেরকে অতিরিক্ত কথা বলতে নিষেধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। অনুসন্ধানে (১৭) প্রথম আলো তো নয়ই, দেশের কোনো গণমাধ্যমেই এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রকাশ হতে দেখেনি রিউমর স্ক্যানার। বরং গত ২৪ অক্টোবর প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে বিএনপি’র একই মহাসমাবেশ নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ডে তার মন্তব্যটি সরিয়ে আলোচিত দাবিটি বসিয়ে ফটোকার্ডটি প্রচার করা হয়েছে।
Photocard comparison: Rumor Scanner
২৮ অক্টোবর মধ্যরাতটি যেন হয়ে উঠছিল ভুল তথ্য ছড়ানোর প্রহর। সেদিন রাত আনুমানিক তিনটা থেকে পরবর্তী প্রায় ঘন্টাখানেক একাধিক ভুল তথ্য সম্বলিত পোস্টে সয়লাব ছিল ফেসবুক। সেসময়েই আমাদের নজরে আসে, বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদকে পুলিশের ১০ হাজার পোশাকসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে শীর্ষক একটি তথ্য একাধিক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে ঢাকার কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুকুল আলমের সাথে কথা বলেছিলাম আমরা। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলছিলেন (১৮), তাকে গ্রেপ্তারের ঘটনা তো আরও প্রায় সপ্তাহখানেক আগের। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে দায়ের করা মামলায়। পুলিশের ১০ হাজার পোশাকসহ গ্রেপ্তারের দাবিটি ভুয়া। বর্তমানে তিনি কারাগারেই আছেন।
সেদিন একই সময়ে কিছু পোস্টে দাবি করা হচ্ছিল, গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের বাসা থেকে ছেড়ে আসা একটি পিক-আপ ভ্যানকে বস্তাভর্তি বোমা ও লাঠিসহ রাজধানীতে আটক করা হয়েছে। এই দাবিটি ছড়াতে কালবেলা’র আদলে একটি ফটোকার্ডকে ব্যবহার করতে দেখা গেছে৷ পরবর্তীতে আমাদের অনুসন্ধান (১৯) বলছে, প্রচারিত তথ্যটি ভিত্তিহীন৷ কালবেলাও এমন কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি।
কাছাকাছি সময়েই কালবেলা’র আদলে তৈরি ফটোকার্ডে এক নারীর ছবি এবং কিছু মানুষের রাতের অন্ধকারে হামলার ছবি যুক্ত করে দাবি করা হয়, পল্টনে মহিলাদল কর্মী মৌসুমীর পাছায় হাত দিয়ে গণপিটুনি খেলেন বরিশাল যুবদল নেতা রায়হান। আমরা ছবি দুইটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে হামলার ছবিটি ২০২০ সালে ভারতের একটি ঘটনার বলে প্রমাণ (২০) পেয়েছি। কিন্তু উক্ত নারীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এছাড়া, অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো গ্রহণযোগ্য সূত্রে পল্টনে মহিলা দলের কথিত কর্মী মৌসুমীকে শ্লীলতাহানি করায় বরিশালের যুবদল নেতা গণপিটুনির শিকার শীর্ষক দাবির বিষয়ে কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
২৮ অক্টোবর মধ্যরাতে কাছাকাছি সময়ে ছড়িয়ে পড়া পাঁচটি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সেদিন নির্ধারিত সময়েই রাজনৈতিক দলগুলো সমাবেশ শুরু করে। বিএনপির সমাবেশ দুপুর সাড়ে ১২ টার পর শুরু হয়। এর কাছাকাছি সময়ে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট নজরে আসে আমাদের, যাতে দাবি করা হচ্ছিল, বিএনপি’র সমাবেশে দেশের দুই সংবাদমাধ্যম সময় টিভি ও একাত্তর টিভিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। বিএনপি এবং দলটির নেতাদের হেয় করে বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে গেল আগস্টে সময়-একাত্তর টিভির টকশো বর্জনের নির্দেশ দেওয়া হয় বিএনপির নেতাদের। কিন্তু পরবর্তীতে বা ২৮ অক্টোবরের সমাবেশে উক্ত দুই গণমাধ্যমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা সংক্রান্ত কোনো সংবাদ নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে আমরা উল্লেখ পাইনি। বিএনপির পক্ষ থেকেও রিউমর স্ক্যানারকে বিষয়টি ভুয়া বলে নিশ্চিত (২১) করা হয়েছে।
সমাবেশ চলাকালীন সময়েই ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাওয়ার পথে ছাত্রদলের নেতাদের হাতে এক তরুণী লাঞ্ছিত হয়েছেন দাবিতে অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা পোস্ট এর লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছিল। অনুসন্ধানে (২২) এই তথ্যের পক্ষেও কোনো সংবাদ ঢাকা পোস্টসহ অন্য কোনো গণমাধ্যমে পাওয়া যায়নি। একই কায়দায় ৩১ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও আইন বিভাগের ছাত্রী মানসুরা আলমের ছবি যুক্ত করে কালবেলা’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে দাবি করা হয়, নয়াপল্টনে তিনি গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। কিন্তু অনুসন্ধানে (২৩) এই দাবির পক্ষেও কোনো প্রমাণ মেলেনি।
২৮ অক্টোবর সমাবেশ চলার মধ্যেই গণমাধ্যমে খবর আসতে শুরু করে, রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সেই সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা কাকরাইল মসজিদের সামনের পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে। সেসময় প্রধান বিচারপতির বাসভবনেও হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রথম আলো এক প্রতিবেদনে বলছিল, কাকরাইল মসজিদের সামনের এলাকায় অনেক সময় ধরেই বিএনপি নেতা-কর্মী ও পুলিশের মধ্যে উত্তেজনা সেসময় চলছিল। একপর্যায়ে পুলিশের এক সদস্য আহত হন। প্রথম আলোর এই প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল, “কাকরাইলে পুলিশ বক্স ও গাড়িতে আগুন, মসজিদের সামনে বিজিবি।” কিন্তু ফেসবুকে এই প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট নিয়ে তাতে ভিন্ন শিরোনাম যুক্ত করে দাবি করা হয়, কাকরাইলে মসজিদে আগুন দিয়েছে বিএনপি কর্মীরা। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে (২৪) কাকরাইল মসজিদ তো নয়ই, সেদিন ঢাকার কোনো মসজিদেই আগুন দেওয়ার ঘটনার খবর মেলেনি।
Screenshot comparison: Rumor Scanner
একই দাবি সেদিন বিকেলে কালবেলা’র আদলে তৈরি ফটোকার্ডের মাধ্যমেও প্রচার করা হয়। এই ফটোকার্ডে পাশাপাশি রাখা দুইটি গাড়িতে আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু অনুসন্ধানে আমরা দেখেছি, এটি কাকরাইল মসজিদ প্রাঙ্গণের কোনো দৃশ্য নয়। সেসময় কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ ভবনে রাখা গাড়িতে আগুন জ্বলার দৃশ্যকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়।
বেলা গড়ানোর সাথে সাথে খবর আসছিল, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশেকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। বিকেলের দিকে তিনটি গণমাধ্যমের আদলে ফটোকার্ড আমাদের নজরে আসে। এসব ফটোকার্ডে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় একাত্তর টিভির সৌমিত্র মজুমদার, সমকালের কাজল হাজরা এবং জাগোনিউজ২৪ এর বিভাষ দিক্ষীত বিপ্লব আক্রমণের শিকার হয়েছেন শীর্ষক দাবি প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে জানা (২৫) গেল, উক্ত দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। যেসব সাংবাদিক সেদিন আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন তাদের কারো নাম এই ফটোকার্ডগুলোতে ছিল না। তাছাড়া, এই ফটোকার্ডগুলোও নকল ছিল। আমরা সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের বিষয়েও খোঁজ নিয়েছি, তারা কেউই সেদিন হামলার শিকার হননি।
সেদিনের ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর রাখতে থাকি আমরা। দুপুরে যখন কাকরাইলে সংঘর্ষের খবর জানা যাচ্ছিল, তখন তা পল্টনে বিএনপির সমাবেশস্থলেও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে বলে খবর দিচ্ছিলো গণমাধ্যমগুলো।
বিএনপির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে দুপুর তিনটার পরে এক পোস্টে (আর্কাইভ) এ সংক্রান্ত কিছু ছবি যুক্ত করে দাবি করা হয়, “পুলিশের নারকীয় তান্ডবে লন্ডভন্ড নয়াপল্টন। বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে পুলিশ অতর্কিত গুলিবর্ষণ করছে। গুলিবৃদ্ধ হয়েছে হাজার, হাজার নেতা-কর্মী।” (বানান অপরিবর্তিত)
সেসময় পল্টনে পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়ার দৃশ্য এবং হরতালে অগ্নিসংযোগের ভিন্ন দুইটি দাবিতে একটি ভিডিও প্রথম টিকটক এবং পরে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়তে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। তবে আমাদের অনুসন্ধানে (২৬) জানা যাচ্ছে, পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়ার ভিডিওটি ২০১৮ সালের। সেদিন কিংবা ২৯ অক্টোবর পল্টন বা ঢাকার কোনো স্থানেই পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেনি। তবে সমাবেশের দিন কাকরাইলে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ বহনকারী একটি বাসে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। চালকের ভাষ্যমতে, বাসে আগুন দেওয়া দুই যুবক পুলিশের ভেস্ট পরিহিত ছিলেন। তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ বলেছেন, “কাকরাইলে বাসে অগ্নিসংযোগকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বা ডিবির কেউ না। অনেক সময় ডিবির জ্যাকেট পড়ে ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ করে অপরাধীরা। ঢাকায় বাসে আগুনের ঘটনাটিও তেমন কোনো চক্র। যারাই এটা করেছে, আমরা তাদের খুঁজছি।” এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথম আলো’র আদলে ফটোকার্ড তৈরি করে প্রচার করা হয়, “কাকরাইলের বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে গেল ছাত্রদলের ২ নেতা।” কিন্তু প্রথম আলো এক ফেসবুক পোস্টে (২৭) জানিয়েছে, এই ফটোকার্ড তারা প্রকাশ করেনি। প্রথম আলোর নামে ছড়ানো এই ছবি ও তথ্য নকল।
বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের বিষয়ে সেদিন নাগরিক টিভি একটি ভিডিও প্রকাশ করে। ভিডিওটির ৪০ সেকেন্ড থেকে প্রায় ৫৯ সেকেন্ড পর্যন্ত সময়কালে দেখা যায়, পুলিশ ও মাছরাঙা টিভির সাংবাদিক মিলে কাগজ সদৃশ কিছুতে আগুন লাগানোর চেষ্টা করছেন। এই ফুটেজ ব্যবহার করে পরবর্তীতে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া কিছু পোস্টে দাবি করা হয়, বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সংঘর্ষে পুলিশ ও সাংবাদিক মিলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানে (২৮) রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, সংঘর্ষ চলাকালে টিয়ারশেলের ঝাঁঝের তীব্রতা থেকে আগুন জ্বালিয়ে একজন পুলিশ ও সংবাদকর্মীর রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা ছিল এটি। ভিডিওতে থাকা উক্ত সাংবাদিকের নাম মাহমুদ কমল। তিনি মাছরাঙা টিভির সিনিয়র রিপোর্টার।
নয়া পল্টনে সংঘর্ষের খবরের মধ্যেই জানা যায়, বিএনপির মহাসমাবেশ স্থগিত হয়েছে। মাইকে শব্দ শোনা যাচ্ছে না। এই ঘটনায় সেদিন রাতে ফেসবুকের কিছু পোস্টে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের মন্তব্য দাবিতে একটি তথ্য প্রচার হতে দেখি আমরা৷ প্রথম আলো’র আদলে একটি ফটোকার্ড তৈরি করে প্রচার করা হয়, মির্জা ফখরুল বলেছেন, “কারো ভয়ে সমাবেশ স্থগিত করা হয়নি; হঠাৎ বুকে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করায় সমাবেশ স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছি।” কিন্তু মির্জা ফখরুলের এমন মন্তব্যের অস্তিত্ব নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে পায়নি রিউমর স্ক্যানার (২৯)। তাছাড়া, প্রথম আলো’র ফেসবুক পেজ কিংবা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বিএনপি দুপুর সাড়ে তিনটার পর ঘোষণা দেয়, নয়া পল্টনে হামলার প্রতিবাদে পরদিন (২৯ অক্টোবর) সারাদেশে হরতাল পালন করবে দলটি।
সেসময় নয়া পল্টন কার্যত ফাঁকা দেখা যায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে। পুলিশ পুরো এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
এর কিছু সময় পরই “পল্টন ছেড়ে বিএনপি নেতাদের পলায়ন। মীর্জা ফখরুল’কে ফোনে পাচ্ছেন না তারেক জিয়া” শীর্ষক শিরোনামে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং ফাঁকা থাকা নয়া পল্টনের ছবি ব্যবহার করে কালবেলা’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ফেসবুকে প্রচার হতে দেখা যায়। তবে আমরা অনুসন্ধানে (৩০) কালবেলার ফেসবুক পেজে এমন কোনো ফটোকার্ডের অস্তিত্ব পাইনি। তাছাড়া, উক্ত দাবিটি নিয়ে গণমাধ্যমেও কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়নি।
বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের পর গণমাধ্যমসূত্রে আমরা দুইটি মৃত্যুর খবর জানতে পারি সেদিন। বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে দলটির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশের এক সদস্য নিহত হয়। নিহত ওই পুলিশ সদস্যের নাম আমিরুল ইসলাম (পারভেজ)। তিনি কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অন্যদিকে, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য কাদের গনি চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে জানান, নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে শামীম মোল্লা নামে এক যুবদল নেতার মৃত্যু হয়েছে। তিনি মুগদা থানা যুবদলের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের এক নম্বর ইউনিটের সভাপতি বলে দাবি করেন কাদের গনি চৌধুরী। এই খবরটি জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন তাদের ওয়েবসাইটে ‘নয়াপল্টনে সংঘর্ষে যুবদল নেতা নিহত’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশ করে। এই খবরের স্ক্রিনশট নিয়ে শিরোনামটি বদলে দিয়ে “নয়াপল্টনে নিজেদের ছোড়া ইট-পাটকেলে যুবদল নেতা নিহত” শীর্ষক শিরোনাম বসিয়ে ফেসবুকের কতিপয় পোস্টে প্রচার করা হয়েছে, যা আমাদের মনিটরিংয়ে (৩১) বেরিয়ে এসেছে। আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, শিরোনাম তো নয়ই, পত্রিকাটির বিস্তারিত প্রতিবেদনেও এমন কোনো দাবি করা হয়নি।
Screenshot comparison: Rumor Scanner
কথিত যুবদল নেতা শামীমের বিষয়ে পরবর্তীতে গত ২৯ অক্টোবর আরেকটি ভুল তথ্য প্রচার হতে দেখা গেছে। সেদিন প্রকাশিত ভাইরাল কিছু পোস্টে একটি ভিডিও যুক্ত করে দাবি করা হয়, ভিডিওটি শামীমের লাশের। তার লাশ ঘিরে পরিবারের সদস্যরা আহাজারির দৃশ্য বলে দাবি করা হয়৷ মজার বিষয় হচ্ছে, একই ভিডিও ব্যবহার করে এটি নিহত পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলামের দাবি করেও একাধিক ফেসবুক পোস্ট দেখেছি আমরা। এ বিষয়ে অনুসন্ধানে (৩২) নেমে রিউমর স্ক্যানার জেনেছে, এটি ২৮ অক্টোবর মারা যাওয়া কথিত যুবদল নেতা শামিম বা পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজের লাশ নয়। প্রকৃতপক্ষে, বাগেরহাটের স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার লাশের গত ১২ অক্টোবরের পুরোনো ভিডিওকে ভিন্ন দুই দাবিতে সম্প্রতি প্রচার করা হয়েছে। পুলিশ কনস্টেবল আমিরুলের মৃত্যুতে তার সন্তানের আহাজারির দৃশ্য দাবিতে আরেকটি ভিডিও একইদিন (২৯ অক্টোবর) প্রচার করা হলেও সেটিও যাচাই (৩৩) করে আমরা দেখতে পাই, চট্টগ্রামে চলতি বছরের মে মাসে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত নৈশপ্রহরী আজাদুর রহমান আজাদের মেয়ের কান্নার ভিডিও এটি।
দিনভর নানা ঘটনাবলির পর ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যার পর দেশের একাধিক গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়, সন্ধ্যায় বিএনপির নয়া পল্টনের কার্যালয়ের ভেতরে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা মিয়ান আরাফি। তিনি নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির সদস্য বলেও দাবি করেন৷
Screenshot Source: Facebook
এ বিষয়ে অনুসন্ধান শেষে আমরা যখন গত ৩১ অক্টোবর ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করি, ততক্ষণে তাকে পুলিশ আটক করে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। আমাদের অনুসন্ধানে (৩৪) বেরিয়ে এসেছে, মিয়ান আরেফির সাথে মার্কিন সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তিনি নিজেকে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির সদস্য বলে দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে তার কাছে Democratic National Committee এর একটি সম্মানসূচক কন্ট্রিবিউটিং মেম্বারশিপ কার্ড রয়েছে, যা ডোনেশনের মাধ্যমে যে কেউই পেতে পারে। অপরের রূপ ধারণ ও মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ করার অভিযোগ এনে মিয়ান আরেফির বিরুদ্ধে গত ২৯ অক্টোবর একটি মামলা দায়ের করা হয়। সেদিন রাতেই গণমাধ্যমে তার স্বীকারোক্তিমূলক একটি বক্তব্যের ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ডেমোক্রেট কমিটির লিডার এবং জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় তাকে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলতে।
এভাবেই ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের রাজনীতির ময়দানে সমাবেশ আর সংঘাতকে পুঁজি করে ভুল তথ্য ছড়িয়েছে৷
তবে ২৮ অক্টোবরের ঘটনাবলির রেশ যেমন সেদিনই শেষ হয়ে যায়নি, তেমনি পরের কয়েকদিনও উক্ত দিনের ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে ভুল তথ্যের প্রচার এবং প্রসার ঘটতে দেখেছি আমরা। যেমন, গত ২৯ অক্টোবরও ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ কেন্দ্রিক আরও দুইটি ভুয়া ফটোকার্ড প্রচার করা হয়েছে ফেসবুকে। একটিতে প্রথম আলো’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে প্রচার করা হয়, টাঙ্গাইলের একজন বিএনপি নেতা বলেছেন, “তারেক রহমান না আসা পর্যন্ত আর কোন সমাবেশে আসবো না।” ফটোকার্ডে থাকা ব্যক্তির ছবির সূত্র ধরে আমরা অনুসন্ধান করে দেখি, ইনি টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে (৩৫) জানান, “প্রথম আলোর নামে ছড়ানো এই ফটোকার্ডটি প্রথম আলো প্রকাশ করেনি, সেটি আমি আগেই জানতে পেরেছি এবং আমার এমন কোনো মন্তব্য করার প্রশ্নই উঠেনা।”
আরেক ফটোকার্ড ছড়ানো হয়েছে কালবেলা’র আদলে, যেখানে দাবি ছিল এরকম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল এর সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু সমাবেশে বলেছেন, পিটার হাস আমাদের উপরে তুলে মই সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানে (৩৬) কালবেলাসহ মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো সূত্রে আলোচিত দাবিটির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
২৯ অক্টোবর সকালে খবর আসে, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় রমনা থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেদিন রাতেই তাকে আদালতে হাজির করার আগ পর্যন্ত তিনি ডিবি অফিসেই ছিলেন।
সেদিন বিকেলে কালবেলা ও প্রথম আলোর ডিজাইন সম্বলিত দুইটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে কিছু পোস্টে দাবি করা হয়, “ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে মির্জা ফখরুল বলেছেন, নকল পুলিশ ভেস্ট পরে বাসে আগুন দিয়েছে বিএনপি কর্মীরা।”
কিন্তু ফখরুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে সেদিন দুপুরে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হলেও জিজ্ঞাসাবাদে তিনি কী বলেছেন তা উল্লেখ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট দুই গণমাধ্যমও এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ (৩৭) প্রকাশ করেনি।
পরবর্তীতে সেদিন সন্ধ্যার পর তারেক রহমানের নির্দেশে মেজর (অব.) আক্তারুজ্জামানকে ফখরুলের অবর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে’র লোগো সম্বলিত পৃথক পৃথক ফটোকার্ডে প্রচার হতে দেখা যায়। ফেসবুকের কতিপয় পোস্টে এ সংক্রান্ত বিএনপির আদলে তৈরি একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিও প্রচার হতে দেখা যায়। এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তথ্যটিকে সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং গুজব বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত (৩৮) করেন।
পরদিনও মির্জা ফখরুলের বিষয়ে ভুল তথ্য প্রচার করা বন্ধ থাকেনি। ভাইরাল একটি ভিডিওর মাধ্যমে সেদিন দাবি করা হয়, ডিবি কার্যালয় ঘেরাও করার পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুক্তি পেয়েছেন৷ রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে (৩৯) দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি গত জানুয়ারি মাসে মির্জা ফখরুলের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ধারণ করা।
২৯ অক্টোবরের হরতালের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ সমাবর্তনের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচী ছিল৷ সেদিন সকাল নাগাদ ফেসবুকে প্রথম আলো ও কালবেলা’র আদলে তৈরি ভিন্ন দুই ফটোকার্ডের মাধ্যমে প্রচার করা হয়, নিরাপত্তা বা হরতালজনিত কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের(ঢাবি) বিশেষ সমাবর্তন স্থগিত হয়েছে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ডক্টর এম মাকসুদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে (৪০) বলেন, ‘সমাবর্তন চলমান, স্থগিত হয়নি।’
২৮ অক্টোবরের রাজনৈতিক কর্মসূচী ঘিরে রিউমর স্ক্যানার ৪০ টি ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে দুইটি বিষয়ে (১, ২) গণমাধ্যমেও ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এর বাইরে সিংহভাগ ভুল তথ্যই ফেসবুকের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের কাছে ছড়িয়েছে। এক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয়েছে গণমাধ্যমকেই। আমরা বিশ্লেষণ করে দেখছি, ৪০ টি বিষয়ের মধ্যে ২৫ টিতেই ভুল তথ্য ছড়াতে একাধিক গণমাধ্যমকে ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে গণমাধ্যমগুলোর আদলে নকল ফটোকার্ড, গণমাধ্যমের নাম, লোগো এবং ওয়েবসাইটে প্রায় সংবাদের শিরোনাম বদলে দিয়ে ভুল তথ্যগুলোকে সত্য হিসেবে প্রচারের চেষ্টা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে কালবেলা’কে (১১)৷ এছাড়া প্রথম আলোকে জড়িয়ে ১০ টি, মানবজমিনকে জড়িয়ে ০৩ টি, ডেইলি স্টার, সময় টিভি, একাত্তর টিভিকে জড়িয়ে ০২ টি করে এবং চ্যানেল আই, যমুনা টিভি, ইত্তেফাক, ঢাকা পোস্ট, বাংলাদেশ প্রতিদিন এবং জাগোনিউজ২৪ কে জড়িয়ে একটি করে ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
গণমাধ্যম ছাড়াও এবার ভুল তথ্য ছড়াতে ব্যবহার করা হয়েছে নকল প্রেস বিজ্ঞপ্তিকেও। বিএনপির আদলেই এমন তিনটি নকল প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে, যা দলটি প্রকাশই করেনি। এছাড়া, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নামে একটি করে ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। ২৮ অক্টোবরের আগে-পরের ঘটনা প্রবাহ বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি গুজব ছিল তথ্য কেন্দ্রিক (২৩ টি), যা মোট ভুলের ৫৭ শতাংশ। এছাড়া, সংশ্লিষ্ট ঘটনায় পুরোনো বা ভিন্ন স্থানের ভুল ছবি ব্যবহার করা হয়েছে ০৮ টি, যা শতকরা হিসেবে ২১ শতাংশ। এর বাইরে ভিডিও কেন্দ্রিক ভুল তথ্য প্রচারিত হয়েছে ০৯ টি।
তাছাড়া, বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনকে জড়িয়ে ২৯ টি ভুল তথ্য, আওয়ামী লীগ ও এর ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনকে জড়িয়ে ০৫ টি ভুল তথ্য, জামায়াতে ইসলামী ও এর অঙ্গসংগঠনকে জড়িয়ে ০৩ টি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে। এর বাইরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পুলিশ ও সাংবাদিকদের বিষয়ে ০৫ টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
সার্বিকভাবে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে যে, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২৮ অক্টোবরের রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশময় একটি দিনে রাজনৈতিক ময়দানে ঘটনা প্রবাহের সাথে ঠিক কীভাবে এবং কত উপায়ে সময়ে সময়ে ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে ভুল তথ্যের প্রচার এবং প্রসার হয় তার একটি বাস্তব উদাহরণ হয়ে থাকলো।