Home Blog Page 557

নির্বাচনের কারণে ৫-৮ জানুয়ারি সাধারণ ছুটির ঘোষণা দাবিতে ভুয়া প্রজ্ঞাপন ফেসবুকে 

গত ০২ জানুয়ারি থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ০৫ জানুয়ারি হতে ০৮ জানুয়ারি, ২০২৪ পর্যন্ত ৪ দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে দাবিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সোনিয়া হাসান স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপনের ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়তে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

এই প্রজ্ঞাপন এতটাই ছড়িয়েছে যে এটি রীতিমতো প্রিন্ট করেও প্রচার করা হচ্ছে। 

এ সংক্রান্ত ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ৫-৮ জানুয়ারি চারদিন সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবিতে প্রচারিত প্রজ্ঞাপনটি আসল নয় বরং আগামী ০৭ জানুয়ারির নির্বাচন উপলক্ষ্যে কেবল ভোটের দিনই সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রজ্ঞাপন ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পাদনা করে উক্ত দাবির প্রজ্ঞাপনটি তৈরি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গত ২৮ ডিসেম্বর (২০২৩) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ঘোষণাকৃত সাধারণ সরকারি ছুটির মূল প্রজ্ঞাপনটি খুঁজে পাওয়া যায়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নির্বাচন উপলক্ষ্যে কেবল ভোটের দিন অর্থাৎ ৭ জানুয়ারি সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

উক্ত প্রজ্ঞাপনটির সাথে আলোচ্য দাবিতে প্রচারিত প্রজ্ঞাপনটির তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দাবিকৃত প্রজ্ঞাপনটিতে স্মারক নম্বর, তারিখ, অনুলিপি পাঠানোর ঠিকানায় অসঙ্গতির পাশাপাশি একাধিক বানান ভুল রয়েছে। 

Image comparison: Rumor Scanner

মূল প্রজ্ঞাপনে দুইবার স্মারক নম্বর এবং দুইবার তারিখ লিখা রয়েছে। অন্যদিকে, ভুয়া প্রজ্ঞাপনে একবার স্মারক নম্বর এবং কোনো তারিখ উল্লেখ নেই। মূল প্রজ্ঞাপনে অনুলিপি পাঠানোর ১৭টি ঠিকানা উল্লেখ করা হলেও ভুয়া প্রজ্ঞাপনে কেবল ৮টি ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ভুয়া প্রজ্ঞাপনে ‘প্রজ্ঞাপন’ বানানই ভুল। এসব বিষয় ছাড়াও ভুয়া প্রজ্ঞাপনে নতুন কিছু শব্দ জুড়ে দেওয়া হয়েছে। মূল প্রজ্ঞাপনে ছুটি অবহেলা করলে কোনো শাস্তির কথা উল্লেখ না করা হলেও ভুয়া প্রজ্ঞাপনে ছুটি অবহেলা করলে আর্থিক জরিমানাসহ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। 

পরবর্তীতে বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষরকারী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সোনিয়া হাসানের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি জানান, “আমাদের ওয়েবসাইটে যেটা দেওয়া আছে সেটাই সঠিক। এটা ভুয়া প্রজ্ঞাপন।”

রিউমর স্ক্যানার টিমকে বক্তব্য দেওয়ার পরই উক্ত ভুয়া প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে সতর্ক করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

মূলত, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে কেবল ভোটের দিন অর্থাৎ ৭ জানুয়ারি সাধারণ সরকারি ছুটি ঘোষণা করে গত ২৮ ডিসেম্বর (২০২৩) প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি সেই প্রজ্ঞাপনটি প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট করে তাতে ৭ জানুয়ারির স্থলে ৫ জানুয়ারি হতে ৮ জানুয়ারি চারদিনের নির্বাচনকালীন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে দাবি করে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। উক্ত এডিটেড প্রজ্ঞাপনে স্মারক নম্বর, তারিখ, অনুলিপি পাঠানোর ঠিকানায় অসঙ্গতির পাশাপাশি একাধিক বানান ভুল লক্ষ্য করা গেছে। 

প্রসঙ্গত, নির্বাচনের কারণে আগামী ৫ জানুয়ারি দুপুর ১২টা থেকে ৮ জানুয়ারি দুপুর ১২টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। 

সুতরাং, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ৫-৮ জানুয়ারি সাধারণ ছুটি ঘোষণার দাবিতে প্রচারিত প্রজ্ঞাপনটি বিকৃত বা এডিটেড।

তথ্যসূত্র

বিএনপির ও জামায়াতের গণভবন দখলে নেওয়ার ভুয়া দাবি ইউটিউবে 

সম্প্রতি, “গণভবনে ভাংচুর, সেনা পুলিশকে পিটিয়ে গণভবন দখলে নিলো জামায়াত বিএনপির নেতাকর্মীরা” শীর্ষক শিরোনাম এবং “লাঠি মিছিল নিয়ে গণভবনে ভাংচুর ভয়ে পদত্যাগের ঘোষণা” শীর্ষক থাম্বনেইলে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। 

গণভবন দখলে

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গণভবনে ভাংচুর করে বিএনপি – জামায়াত নেতাকর্মীদের গণভবন দখলে নেওয়া কিংবা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের ঘোষণা সংক্রান্ত কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে বিএনপির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ২৮ আগস্ট “ময়মনসিংহ মুক্তাগাছায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা পরবর্তী নেতাকর্মীদের প্রতিরোধ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটিই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে যুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে। 

Video Comparison : Rumor Scanner

ভিডিওটির বিস্তারিত বর্ণনা থেকে জানা যায়, সেদিন জ্বালানী তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের নজিরবিহীন লোডশেডিং, গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, ভোলায় পুলিশের গুলিতে নূরে-আলম ও আব্দুর রহিম-কে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে ময়মনসিংহ মুক্তাগাছায় বিএনপি’র বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ভিডিও এটি। 

এছাড়া অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে গণভবনে ভাংচুর, বিএনপি – জামায়াতের গণভবন দখলে নেওয়া কিংবা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ সংক্রান্ত কোনো তথ্য বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।  

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ইন্টারনেটে নানা ধরনের তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইন্টারনেটে “গণভবনে ভাং*চু*র, সেনা পুলিশকে পি*টি*য়ে গণভবন দখলে নিলো জামায়াত বিএনপির নেতাকর্মীরা” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিডিওটি নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২২ সালে ময়মনসিংহ মুক্তাগাছায় বিএনপি’র বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের একটি ভিডিওর সাথে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম যুক্ত করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিগুলো প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, গণভবন ভাংচুর করে বিএনপি – জামায়াত নেতাকর্মীদের গণভবন দখলে নেওয়া এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

জাতিসংঘ বাংলাদেশের নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা দেয়নি

সম্প্রতি, নির্বাচন বন্ধ করতে জাতিসংঘে চিঠি পাঠালো বিএনপি, নির্বাচন স্থগিত করার ঘোষণা জাতিসংঘের- শীর্ষক শিরোনামে এবং থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ভিডিওটিতে দাবি করা হয়েছে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বন্ধে জাতিসংঘে বিএনপি চিঠি পাঠিয়েছে এবং জাতিসংঘ নির্বাচন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপি জাতিসংঘে চিঠি দিলেও তার প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ নির্বাচন স্থগিত করার কোনো ঘোষণা দেয়নি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটির শুরুতে সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজের বক্তব্য দেওয়ার একটি ভিডিও রয়েছে। পরবর্তীতে সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নার বক্তব্য দেওয়ার ভিডিও দেখা যায়। এরপর কালবেলা’র একটি ভিডিও প্রতিবেদন এবং সর্বশেষ দেশীয় অনলাইন গণমাধ্যম জাগো নিউজের একটি ভিডিও সংবাদ প্রতিবেদন প্রচার করতে দেখা যায়। 

ভিডিও যাচাই- ১

আলোচিত ভিডিওটির এই অংশে সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজকে বক্তব্য দিয়ে দেখা যায়। পরবর্তীতে অনুসন্ধানে Voice Bangla নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে গতবছরের ৩১ ডিসেম্বর “নির্বাচন ঠেকাতে জাতিসংঘ ও বিদেশিদের হস্তক্ষেপ চেয়ে বিএনপির চিঠি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিওটিতে সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজের দেওয়া বক্তব্যের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা বক্তব্যের  মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ বিএনপি’র পক্ষ থেকে জাতিসংঘে দেওয়া চিঠি নিয়ে আলোচনা করছেন। 

গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে (, , ),  দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘একতরফা’ উল্লেখ করে এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি তাদের বক্তব্য তুলে ধরে জাতিংঘের মহাসচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর (২০২৩) দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত চিঠিটি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে পাঠানো হয়। 

ভিডিও যাচাই- ২

আলোচিত ভিডিওটির এই অংশে সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নাকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। সেই বক্তব্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে MANCHITRO নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে গতবছরের ৩১ ডিসেম্বর “বাংলাদেশে কী ধরণের ব্যবস্থা নেয়ার সম্ভাবনা জাতিসংঘের?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিওটিতে সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নার দেওয়া বক্তব্যের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা বক্তব্যের  মিল রয়েছে।

Video Comparison: Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না বিএনপি’র পক্ষ থেকে জাতিসংঘে দেওয়া চিঠি নিয়ে আলোচনা করছেন। এছাড়া, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘের অবস্থান নিয়েও তিনি আলোচনা করেন। 

তবে, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নাও জাতিসংঘ নির্বাচন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ করেননি।

ভিডিও যাচাই- ৩

এই অংশে কালবেলা’র লোগো সম্বলিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন দেখানো হয়। পরবর্তীতে অনুসন্ধানে কালবেলা’র ইউটিউব চ্যানেলে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর “জাতিসংঘে পাঠানোে বিএনপির চিঠিতে কী আছে” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও প্রতিবেদন (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনটির সাথে  আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা ভিডিও প্রতিবেদনটির মিল রয়েছে।

Video Comparison: Rumor Scanner 

৩ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের ভিডিও প্রতিবেদনটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এখানেও বিএনপি’র পক্ষ থেকে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে পাঠানো চিঠির প্রেক্ষিতে করা সংবাদ প্রতিবেদন এটি। 

এই প্রতিবেদনেও জাতিসংঘ নির্বাচন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ হয়নি। 

ভিডিও যাচাই- ৪

এই অংশে দেশীয় অনলাইন গণমাধ্যম জাগো নিউজের লোগো সম্বলিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন দেখানো হয়। পরবর্তীতে অনুসন্ধানে জাগো নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে গত ১ জানুয়ারি “নির্বাচন ঠেকাতে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চেয়ে বিএনপির চিঠি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনটির সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা ভিডিও প্রতিবেদনটির মিল রয়েছে।

Video Comparison: Rumor Scanner 

উক্ত সংবাদ প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এখানেও শুধু বিএনপি’র পক্ষ থেকে জাতিসংঘে চিঠি পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। 

এছাড়া, জাতিসংঘ নির্বাচন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে কি না এবিষয়ে অনুসন্ধান করে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি জাতিসংঘের ফেসবুক পেজ, ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেলেও এ-সংক্রান্ত কিছু পাওয়া যায়নি। 

মূলত, আগামী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর বিএনপি’র পক্ষ থেকে বিরোধী দলবিহীন ‘একতরফা’ নির্বাচন উল্লেখ করে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে চিঠি দেওয়ার খবর বেরোয় গণমাধ্যমে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “নির্বাচন বন্ধ করতে জাতিসংঘে চিঠি পাঠালো বিএনপি, নির্বাচন স্থগিত করার ঘোষণা জাতিসংঘের” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিটি সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ এবং সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নার জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে দেওয়া চিঠির বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার ভিডিও এবং একই বিষয়ে কালবেলা ও জাগো নিউজের করা সংবাদ প্রতিবেদনকে যুক্ত করে চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে,  জাতিসংঘ নির্বাচন বন্ধের কোনো ঘোষণা দেয়নি। এছাড়া, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, বিএনপি জাতিসংঘে চিঠি দিলেও তার প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ নির্বাচন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

পিটার হাস কর্তৃক নির্বাচন বাতিল করার গুজব

সম্প্রতি, “বৈঠক করে নির্বাচন বাতিল করলো পিটার হাস, একি ঘটালো যুক্তরাষ্ট্র হায় হায়”- শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, বৈঠক করে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করেছে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।

পিটার হাস

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পিটার হাস আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করেননি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই- ১

ভিডিওর প্রথম অংশে একজন সংবাদ পাঠিকাকে সংবাদ পাঠ করতে দেখা যায় এবং ভিডিওটিতে দেশীয় গণমাধ্যম ‘কালবেলা’র লোগো দেখা যায়। লোগো’র সূত্র ধরে অনুসন্ধানে কালবেলা’র ইউটিউব চ্যানেলে গত বছরের ৩১ অক্টোবর “নির্বাচন কমিশনারের সাথে কী কথা হলো পিটার হাসের” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনে থাকা সংবাদ পাঠিকা এবং পাঠ করা সংবাদের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা পাঠিকা এবং পাঠ করা সংবাদের হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner

উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করছেন। ৩১ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে নির্বাচন কমিশনে পৌঁছান পিটার হাস। 

তবে, সংবাদ প্রতিবেদনটিতে নির্বাচন বাতিলের কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। তাছাড়া, দুই মাস এ সংক্রান্ত ভিডিওটি ছড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচন বাতিল সংক্রান্ত কোনো খবর গণমাধ্যমে আসেনি।

ভিডিও যাচাই- ২

আলোচিত ভিডিওটির এই অংশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালকে বক্তব্য দিতে দেখা যায় এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘নিউজ২৪’ এর লোগো দেখা যায়। সেই লোগো’র সূত্র ধরে অনুসন্ধানে নিউজ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর “কার কাছে দায়বদ্ধ ইসি? নির্বাচনে বাংলাদেশ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

৪০ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের উক্ত ভিডিওটির ২ মিনিট সময় থেকে সিইসি’র দেওয়া বক্তব্যের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে দেওয়া বক্তব্যের সাথে হুবহু মিল রয়েছে।

Video Comparison: Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, ৩০ ডিসেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া সিলেটের ৩৫ প্রার্থীর সঙ্গে মতবিনিময় এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। 

তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করছে, এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে তারা নির্বাচন প্রতিহত করতে চাইলে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রস্তুতি রয়েছে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে প্রার্থীদের অভিযোগ একেবারেই নগণ্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ দায়িত্ব পালন করলে ভোটারদের আস্থা ফিরে আসবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এবারের নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য হবে, কোনও পক্ষপাতমূলক আচরণ হবে না। যেকোনও মূল্যে নির্বাচন নিরপেক্ষ হতেই হবে। ৭ জানুয়ারি ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ কমানো হবে না। তবে কেউ মিথ্যা তথ্য ছড়ালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অর্থাৎ, সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বন্ধ করা প্রসঙ্গে কোনো তথ্য দেননি। 

এছাড়া, মতবিনিময় সভায় দেওয়া সিইসি’র দীর্ঘ বক্তব্যের কিছু অংশ কেটে আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে।  

ভিডিও যাচাই- ৩

ভিডিওটির তৃতীয় ক্লিপে জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) এর চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজকে বক্তব্য দিতে দেখা যায় এবং ভিডিওটিতে ‘ফেস দ্যা পিপল’ শীর্ষক একটি লোগো দেখা যায়। সেই লোগো’র সূত্র ধরে অনুসন্ধানে Face The People নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর “মৃত কয়েদির হাতপায়ে ডাণ্ডাবেড়ি কেন? বিএনপি জামাতের রাজনীতি করার অধিকার নাই: প্রধানমন্ত্রী” শীর্ষক শিরোনামে একটি একটি টকশো (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। ১ ঘন্টা ৩২ মিনিট ১০ সেকেন্ডের টকশোটির ৩৪ মিনিট থেকে জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) এর চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের দেওয়া বক্তব্যের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা বক্তব্যের হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner 

উক্ত টকশোটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ৩৪ মিনিটের পর থেকে জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) এর চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ সঞ্চালকের করা এক প্রশ্নের জবাবে বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে বক্তব্যটি দেন। 

এছাড়া, পুরো টকশোতে ববি হাজ্জাজকে বা টকশোতে থাকা অন্যান্য অতিথিদের কাউকেই আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বন্ধের ঘোষণা সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ করতে দেখা যায়নি। 

ভিডিও যাচাই- ৪

এই অংশে একজনকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। কিন্তু ভিডিওটির মূল উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তবে, ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, বক্তা আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন দেশের অবস্থান নিয়ে আলোচনা করছেন এবং বাংলা ইনসাইডার এর ওয়েবসাইটে “নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাদের পাঁচ প্রশ্ন” (আর্কাইভ) শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন নিয়েও আলোচনা করতে দেখা যায়।

Screenshot: YouTube Claim 

ভিডিওটিতে বক্তাকে আলোচিত দাবিটি নিয়ে কোনো তথ্য উপস্থাপন বা কথা বলতে শোনা যায়নি। 

এছাড়া, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বন্ধের ঘোষণা এসেছে কি না এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

মূলত, গত বছরের ৩১ অক্টোবর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সাথে বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরই মধ্যে ইন্টারনেটে “বৈঠক করে নির্বাচন বাতিল করলো পিটার হাস” শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত বছরের অক্টোবরে সিইসি’র সাথে পিটার হাসের বৈঠকের প্রেক্ষিতে করা একটি সংবাদের সাথে সিইসি’র সিলেটের অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভার একটি ভিডিও এবং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার একাধিক ভিডিও কেটে তা ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় যুক্ত করে ভিন্ন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

উল্লেখ্য, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। 

সুতরাং, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বন্ধ করেছে পিটার হাস- শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

জি এম কাদের কর্তৃক নির্বাচনে প্রার্থীতা প্রত্যাহার এবং সেনাবাহিনী কর্তৃক মির্জা ফখরুলের মুক্তির ভুয়া দাবি

গত ০২ জানুয়ারি ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবের কয়েকটি চ্যানেলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও রংপুর-৩ (সদর) আসনের প্রার্থী (লাঙ্গল) ‘জিএম কাদের নিজেই প্রার্থী প্রত্যাহার করলো, সেনাবাহিনী মাঠে নেমেই ফখরুলকে মুক্তি দিলো’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

জিএম কাদের

ভিডিওগুলো দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি এ বিষয়ে সর্বাধিক ভাইরাল ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার বার। ভিডিওটিতে প্রায় ১ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের তার নির্বাচনের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেননি এবং সেনাবাহিনী মাঠে নেমে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মুক্তি দেওয়ার দাবিটিও সঠিক নয় বরং নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী বর্তমানে নির্বাচনে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই। প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ছিল গত ১৭ ডিসেম্বর।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও। তবে উক্ত ভিডিওটিতে কোথাও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও রংপুর-৩ (সদর) আসনের প্রার্থী (লাঙ্গল) জিএম কাদের কর্তৃক দলটি’র কোনো প্রার্থীকে প্রত্যাহার ঘোষণার দৃশ্য দেখানো হয়নি এবং সেনাবাহিনী কর্তৃক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মুক্তি দেওয়ারও কোনো দৃশ্য দেখানো হয়নি। তাছাড়া উক্ত দাবিগুলোর পক্ষে ভিডিওটিতে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণও উপস্থাপন করা হয়নি।

আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল ২৪’ এর ইউটিউব চ্যানেলে গত  ০২ জানুয়ারি ‘নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি থাকবে কিনা জানালেন জিএম কাদের’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো জিএম কাদেরের বক্তব্যের অংশের মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

সেখানে তিনি আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। সেখানে তাকে জাতীয় পার্টির কোনো প্রার্থী প্রত্যাহার ঘোষণা করতে দেখা যায়নি।

জাতীয় পার্টির কয়েকটি আসনের প্রার্থীদের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণ হিসেবে জিএম কাদের বলেন, প্রার্থিতা প্রত্যাহার হুমকির কারণেও হতে পারে, অর্থের অভাবেও হতে পারে। অনেক প্রার্থী অর্থশালী হয়ে থাকেন না, অর্থের কারণেও অনেকে নির্বাচন থেকে সরে যান।

জাতীয় পার্টির নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকবে কিনা সে বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন না আসা পর্যন্ত সঠিক করে বলা যাচ্ছে না। নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকব কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে। সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।

অর্থাৎ, এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত দাবির মিল নেই।

এছাড়াও, মূলধারার গণমাধ্যম ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’র অনলাইন সংস্করণে গত ০২ জানুয়ারি ‘যারা না জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে গেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা : জিএম কাদের’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদনে দলটির মনোনীত কয়েকজন প্রার্থীর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে জিএম কাদেরের বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, যারা দলকে না জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে গেছে, তাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এছাড়াও আলোচিত ভিডিওটিতে সেনাবাহিনী মাঠে নেমেই বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মুক্তি দেওয়ার দাবি করা হলেও জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। কেননা আলোচিত ভিডিওটি প্রচার হওয়া আগ পর্যন্ত (গতকাল) সেনাবাহিনী মাঠে নামেনি বরং আজ (বুধবার) থেকে সেনাবাহিনী মাঠে নামবে।

তাছাড়া, মূলধারার গণমাধ্যম দৈনিক ইত্তেফাকের অনলাইন সংস্করণে আজ (০৩ জানুয়ারি) ‘এক সপ্তাহ পেছালো মির্জা ফখরুলের জামিন শুনানি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন শুনানি এক সপ্তাহ পিছিয়েছেন হাইকোর্ট। মির্জা ফখরুলের এক আইনজীবীর সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে বুধবার (৩ জানুয়ারি) বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন।

অর্থাৎ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন পর্যন্ত কারাগার থেকে মুক্তি পাননি।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ ডিসেম্বর ছিল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। সেসময়ের মধ্যে জাতীয় পার্টির ১১ জন প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। 

মূলত, সম্প্রতি গাজীপুর-১ ও ৫ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর ঘোষণা দেন। এছাড়াও গত ৩১ ডিসেম্বর বরিশাল-২ এবং বরিশাল-৫ আসন ও  বরগুনা-১ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থীরাও নিজের নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর ঘোষণা দেন। পাশাপাশি, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ ০৩ জানুয়ারি থেকে মাঠে নেমেছে সশস্ত্র বাহিনী। এসবের প্পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি, ‘সারাদেশ থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রত্যাহার হঠাৎ বিএনপিতে যোগ দিল জাতীয় পার্টি’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, তফসিল অনুযায়ী বর্তমানে নির্বাচনে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই। প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ছিল গত ১৭ ডিসেম্বর। এছাড়া, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী সেনাবাহিনী কর্তৃক মির্জা ফখরুলকে মুক্তি দেওয়ারও কোনো সুযোগ নেই এবং এমন কোনো ঘটনাও ঘটেনি।

উল্লেখ্য, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

সুতরাং, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের কর্তৃক দলটি’র প্রার্থী প্রত্যাহার এবং সেনাবাহিনী কর্তৃক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মুক্তি দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ভিডিওর এই নারী তানজিন তিশা নন, ডিপফেকের শিকার অভিনেত্রী 

সম্প্রতি, এক নারীর পোশাক খোলার একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, তিনি ছোট পর্দার অভিনেত্রী তানজিন তিশা। 

ভিডিওটি গত ২৫ নভেম্বর (২০২৩) কষ্টের দোকান নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করে বলা হচ্ছে, “কে কে বাকি আছো যে এখনো লিংক পাওনি”। ক্যাপশনে ‘তানজিন তিশা’ লেখা এই ভিডিওটি এখন অবধি প্রায় ৮৯ হাজার বার দেখা হয়েছে।  

তানজিনা তিশা

এছাড়া, পরদিন (২৬ নভেম্বর) ভাইরাল ভিডিও নামে আরেকটি পেজ থেকেও ভিডিওটি শেয়ার করা হয় যা এখন অবধি ৭৫ হাজারের অধিক বার দেখা হয়েছে। 

ফেসবুকের এ সংক্রান্ত ভিডিওগুলো দেখুন- এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷ 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটিতে যে নারীকে দেখা যাচ্ছে তিনি তানজিন তিশা নয় বরং একটি পর্ণ সাইট থেকে সংগৃহীত ভিন্ন এক নারীর নগ্ন ভিডিওতে উক্ত নারীর মুখের স্থলে তানজিন তিশার মুখ ডিপফেক প্রযুক্তির সহায়তায় বসিয়ে এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।  

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চসহ একাধিক সার্চ টুল ব্যবহারের পর আমরা একটি পর্ণ ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত মূল ভিডিওটির সন্ধান পেয়েছি (সঙ্গত কারণে লিংক সংযুক্ত করা হয়নি)। ভিডিওতে যে নারীকে পোশাক খুলতে দেখা যাচ্ছিল তার চেহারার সাথে আলোচিত ভিডিওটির নারীর চেহারার মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে উক্ত নারীর পেছনের দেয়াল, ছাদের রংসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়বস্তুর সাথে তানজিন তিশার ভিডিও দাবিতে প্রচারিত দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner 

মূলত, ২০২৩ সালের অন্তত নভেম্বর থেকে ইন্টারনেটে এক নারীর পোশাক খোলার ভিডিও প্রচার করে সেটিকে তানজিন তিশার ভিডিও বলে দাবি করা হচ্ছে। ভিডিওটি দেখে তিশার চেহারার সাথে উক্ত ভিডিওর নারীর চেহারার দৃশ্যমান মিল পরিলক্ষিত হওয়ায় এটিকে তিশার ভিডিও বলেই ভেবে নিচ্ছেন নেটিজেনরা। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে জেনেছে, এই নারী তানজিন তিশা নয়৷ প্রকৃতপক্ষে, পর্ণ সাইট থেকে সংগৃহীত ভিন্ন এক নারীর নগ্ন ভিডিওতে উক্ত নারীর মুখের স্থলে তানজিন তিশার মুখ ডিপফেক প্রযুক্তির সহায়তায় বসিয়ে এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

সুতরাং, পর্ণ সাইট থেকে সংগৃহীত ভিন্ন এক নারীর আপত্তিকর ভিডিওতে তানজিন তিশার মুখ ডিপফেক প্রযুক্তির সহায়তায় বসিয়ে ভিডিওটি তানজিন তিশার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিকৃত।

তথ্যসূত্র

  • Main Source: Hidden (adult purpose)
  • Rumor Scanner’s own analysis 

জি এম কাদের ও জাতীয় পার্টির নেতাদের গ্রেফতারের গুজব

সম্প্রতি, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও রংপুর-৩ আসনের প্রার্থী জিএম কাদের এবং দলটির কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে দাবিতে কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

জিএম কাদের

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

সমজাতীয় দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত কয়েকটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এ বিষয়ে প্রচারিত সর্বাধিক ভাইরাল ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৮৪ হাজার বার। ভিডিওটিতে প্রায় ৮ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৭ শত বার। তাছাড়া ভিডিওটি’র মন্তব্যঘর ঘুরে অধিকাংশ নেটিজেনকে উক্ত দাবির পক্ষে তাদের মতামত জানাতে দেখা গেছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের অভিযোগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও রংপুর-৩ আসনের প্রার্থী জিএম কাদের এবং দলটি’র নেতাদের গ্রেফতার হওয়ার দাবিটি সঠিক নয় এবং দলটি’র পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বা সম্মিলিতভাবে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়নি বরং চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই উক্ত ভিডিওগুলো প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওগুলো পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওগুলোর শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং দলটি’র নেতাদের গ্রেফতার হওয়ার দাবি উল্লেখ করা হলেও ভিডিওগুলোর বিস্তারিত অংশে তাদের গ্রেফতার সম্পর্কিত কোনো দৃশ্য কিংবা উক্ত দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখানো হয়নি।

কিওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘নিউজ২৪’ এর ইউটিউব চ্যানেলে আজ ০৩ জানুয়ারি ‘নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত খোলাসা করলেন জিএম কাদের’ শীর্ষক শিরোনামে জিএম কাদেরের সাক্ষাতকার নিয়ে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: NEWS24

উক্ত ভিডিওটিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দলটি’র কৌশলগত অবস্থানের বিষয়ে কথা বলতে দেখা যায়।

এছাড়াও, মূলধারার গণমাধ্যম যুগান্তর এর অনলাইন সংস্করণে ‘ভোটাররা সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয়ে ভুগছেন: জিএম কাদের’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Jugantor 

উক্ত প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য থেকে জিএম কাদেরের আজকে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। আজ (০৩ জানুয়ারি) দুপুরে নিজ নির্বাচনি এলাকা রংপুর-৩ আসনের বুড়িরহাট রোডে গণসংযোগ শেষে সাংবাদিকদের জিএম কাদের বলেন, আমাদের ভোটাররা সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয়ে ভুগছেন। তাদের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়ার মতো না। অতীতে নির্বাচন ভালো হয়নি, এবার সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়। এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না পরিবেশ কেমন থাকে।

তবে, ইতোমধ্যে জাতীয় পার্টির কয়েকজন প্রার্থী বিভিন্ন কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর খবর গণমাধ্যমে এলেও এখন পর্যন্ত গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে তাদের মধ্যে কাউকে গ্রেফতারের দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা দিয়েছে জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণে দলটির কয়েকটি আসনের প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়। এরই প্রেক্ষিতে জাতীয় পার্টির বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক সময়ে ইন্টারনেটে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও রংপুর-৩ আসনের প্রার্থী জি এম কাদের এবং দলটির কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে দাবিতে কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ভিডিও প্রচার করা হয়।  তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে এখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের কিংবা দলটির অন্য কোনো নেতা গ্রেফতার হননি।

উল্লেখ্য, পূর্বেও জাতীয় পার্টি এবং দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে নিয়ে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং দলটির কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ওবায়দুল কাদেরের পা ধরেননি মাহিয়া মাহি, এটি সিনেমার শুটিংয়ের দৃশ্য

সম্প্রতি, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি আওয়ামী লীগের দলীর প্রার্থী হওয়ার জন্য দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের পা ধরে কান্না করেছেন শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। 

পা ধরেননি মাহিয়া মাহি

ফেসবুকে প্রচার করা এই সংক্রান্ত একটি ভিডিওই এখন অবধি ২২ লক্ষাধিক মানুষ দেখেছেন, শেয়ার করেছেন প্রায় ২৮০০ মানুষ। 

এটিসহ একই ভিডিও ফেসবুকের আরো কিছু পোস্টে দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

আমরা ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, মাহি কর্তৃক পা ধরার দৃশ্যটির পর প্রবাসী ভাইরাল তারকা সেফাত উল্লাহ ওরফে সেফুদা এ বিষয়ে বিষোদগার করছেন।  

এরই সূত্র ধরে সেফুদার ইউটিউব চ্যানেলে গত ০৩ ডিসেম্বর প্রকাশিত এ সংক্রান্ত দাবির মূল ভিডিওটি পাওয়া গেছে। দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

একই ভিডিও ইউটিউবের আরেক চ্যানেলে দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

একই ভিডিও টিকটকের একটি অ্যাকাউন্টেও প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম যেখানে এখন অবধি ১৭ লক্ষাধিক বার দেখা হয়েছে।

ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)৷ 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মাহিয়া মাহি ওবায়দুল কাদেরের পা ধরে কান্না করেননি এবং আলোচিত দৃশ্যে থাকা ব্যক্তিটি ওবায়দুল কাদেরও নন বরং আনন্দ অশ্রু নামে একটি সিনেমার শুটিংয়ে অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিমের পা ধরে মাহির কান্নার এই দৃশ্যকে মিথ্যা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

এই ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ইউটিউবে Quarter BD নামের একটি চ্যানেলে ২০১৯ সালের ০৯ জুলাই প্রকাশিত এ সংক্রান্ত ভিডিওটির সন্ধান মিলেছে৷ 

পূর্ণ ফ্রেমের এই ভিডিওটিতে মাহি এবং ওবায়দুল কাদের দাবিকৃত ব্যক্তিকে একই দৃশ্যে দেখা যায়। এই ভিডিওটি পূর্ণ ফ্রেমের হওয়ায় এখানে উক্ত ব্যক্তির চেহারা দেখা যাচ্ছিল। তিনি ওবায়দুল কাদের নন, ছিলেন অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম। দৃশ্যটির ব্যাকগ্রাউন্ডে কোনো ব্যক্তিকে কাট শীর্ষক শব্দ উচ্চারণ করতে শোনা যায়, যা শুটিংয়ের একটি পরিচিত শব্দ। 

Screenshot comparison: Rumor Scanner 

আরো অনুসন্ধান করে সে বছরের ০৬ ডিসেম্বর নিউজ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে আনন্দ অশ্রু নামক একটি সিনেমার শুটিংয়ে বিষয়ে প্রকাশিত একটি সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়। যাতে সিনেমার নায়িকা মাহিয়া মাহিকে সাক্ষাৎকার দিতে দেখা যায়। এই সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় মাহির পরনে থাকা পোশাকের সাথে আলোচিত ভিডিওতে মাহির পরনে থাকা পোশাকের হুবহু মিল পরিলক্ষিত হয়৷ 

Screenshot comparison: Rumor Scanner 

গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত ‘আনন্দ অশ্রু’ নামক একটি সিনেমায় একসঙ্গে অভিনয় করেছেন মাহিয়া মাহি ও শহীদুজ্জামান সেলিম। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে এই সিনেমার শুটিং শুরু হয়ে শেষ হয় পরের বছরের জানুয়ারিতে। 

অর্থাৎ, মাহি ওবায়দুল কাদেরের পা ধরেছেন শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এটি সিনেমার শুটিংয়ের দৃশ্য।

তাছাড়া, ২০১৯ সালে যখন এই শুটিং হয় সেসময় মাহি রাজনীতির সাথেও সম্পৃক্ত ছিলেন না। বিডিনিউজ২৪ বলছে, ২০২২ সালের অক্টোবরে রাজনীতিতে নাম লেখান মাহি। সে সময় বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সংগঠনটির রাজশাহী বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পান তিনি৷

মূলত, ২০১৯ সালে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি একটি সিনেমার শুটিংয়ে দৃশ্যে অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিমের পা ধরেন। উক্ত শুটিংয়ের দৃশ্যকে সম্প্রতি আংশিক ফ্রেমের মাধ্যমে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে মাহি কর্তৃক ওবায়দুল কাদেরের পা ধরে কান্না করার দৃশ্য এটি। অথচ, মাহি ২০১৯ সালে রাজনীতিতেই যুক্ত ছিলেন না। 

সুতরাং, সিনেমার শুটিংয়ে দৃশ্যে মাহিয়া মাহি কর্তৃক অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিমের পা ধরার ঘটনাকে মাহির ওবায়দুল কাদেরের পা ধরে কান্না করার দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।  

তথ্যসূত্র

২০২৩ সালে ১৯১৫টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার 

0

সদ্য বিদায়ী বছরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রচারিত ১৯১৫টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে বাংলাদেশের ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা রিউমর স্ক্যানার।

২০২৩

রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেক থেকে গণনাকৃত এই সংখ্যার মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়ে সবচেয়ে বেশি (৫৯৭) ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ মিলেছে, যা মোট ভুল তথ্যের ৩১ শতাংশ। ২০২২ সালে রাজনৈতিক বিষয়ে ছড়িয়ে পড়া ২৪৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছিল রিউমর স্ক্যানার। এ বছর প্রথম নয় মাসেই এ সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে।

রিউমর স্ক্যানারের পর্যবেক্ষণ বলছে, ২০২৩ সাল বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ববর্তী বছর হওয়ায় এই সময়ে ইন্টারনেটে রাজনৈতিক বিষয়ক ভুল তথ্য প্রচারের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে জড়িয়ে গেল বছরে ৩২০টি ভুল তথ্য ছড়ানোর প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। নির্বাচন সামনে রেখে বিদেশি গণমাধ্যম, রাষ্ট্র, কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং তাদের নেতৃত্বকে উদ্ধৃত করে বা জড়িয়ে ভুয়া মন্তব্য বা তথ্য প্রচারের প্রবণতা লক্ষ্য করেছে রিউমর স্ক্যানার, যার সংখ্যা ৪৯টি। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা বাতিল সংক্রান্ত ৩৫টি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে ৩০টি এবং রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য বিকৃত করে ৩২টি ভুল তথ্য প্রচার করতে দেখা গেছে। 

রাজনৈতিক বিষয়ের বাইরে গেল বছরে আন্তর্জাতিক বিষয়ে ৩৫৯টি, খেলার বিষয়ে ২২৩টি, জাতীয় বিষয়ে ১৭১টি, ধর্মীয় বিষয়ে ১৪২টি, শিক্ষা বিষয়ে ১০৭টি, বিনোদন ও সাহিত্য বিষয়ে ৭৯টি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে ৬৫টি, আর্থিক প্রতারণা বিষয়ে ৫৫টি, স্বাস্থ্য বিষয়ে ২৯ টি এবং অন্যান্য বিষয়ে ৮৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

রিউমর স্ক্যানার টিমের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বিদায়ী বছরে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক (১২১টি) ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে, যা মোট রাজনৈতিক ভুল তথ্যের ২০ শতাংশ। এছাড়া, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিষয়ে ৩১টি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিষয়ে ৩০টি, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বিষয়ে ২৯টি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিষয়ে ২৩টি, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে ১৭ টি, জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিষয়ে ১৬টি, বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানাকে জড়িয়ে ১৪টি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে জড়িয়ে ছড়ানো ০৩টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।

এর বাইরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালকে জড়িয়ে ১৯টি এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলমের বিষয়ে ২০টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে ১২টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

গুজবের রোষানল থেকে রক্ষা পায়নি রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোও। গেল বছর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে ৬৪টি এবং বাংলাদেশ পুলিশের বিষয়ে ছড়ানো ৩৮টি গুজব শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।

বিদায়ী বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশকে ঘিরে সৃষ্ট উত্তপ্ত পরিস্থিতির ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়া ৪০ টি ভুল তথ্য (লিঙ্ক) শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে ২৮ অক্টোবর একদিনেই ১২টি ভুল তথ্য শনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার। গেল বছরে কোনো ঘটনায় একদিনে এটিই ছিল সর্বোচ্চ ভুল তথ্য ছড়ানোর সংখ্যা।

প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বাংলাদেশের নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রমকে ঘিরে ২০২৩ সালে দেশের শিক্ষাক্রম ছিল আলোচনার অন্যতম বিষয়বস্তু। গেল বছর নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ইন্টারনেটে ছড়ানো ০৭টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর স্বীকৃতিস্বরূপ প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান লিডসউইন লিমিটেডের পক্ষ থেকে পজেটিভ ইনফ্লুয়েন্সার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে (লিঙ্ক) রিউমর স্ক্যানার।

গেল বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা করলে দেশ দুইটির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়, শুরু হয় হামলা পাল্টা হামলা৷ এ সময় উক্ত ঘটনার বিষয়ে ছড়িয়ে পড়া ৫৯টি ভুল তথ্য (লিঙ্ক) শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। ২০২৩ সালে একক কোনো ঘটনায় এটিই সর্বোচ্চ ভুল তথ্য শনাক্তের সংখ্যা। 

২০২৩ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত হয় ছেলেদের ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। এই ক্রিকেট মহাযজ্ঞকে কেন্দ্র করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ৫২টি ভুল তথ্য (লিঙ্ক) শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। গত বছরে একক কোনো ঘটনায় এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভুল তথ্য শনাক্তের সংখ্যা। 

এছাড়া, বিদায়ী বছরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচিত তুরস্ক ও সিরিয়ায় একাধিক ভূমিকম্পের ঘটনায় ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ৩৬টি ভুল তথ্য (লিঙ্ক) শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

২০২৩ সালে গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ও ভুয়া ফটোকার্ড ব্যবহার করে ১৪৫টি ভুল তথ্য (নকল ও ভুয়া ফটোকার্ড ১০৫টি, গণমাধ্যমের নাম ও লোগো ব্যবহারে ২০টি, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম এডিট করে ভিন্ন শিরোনাম যুক্ত করে প্রচার ২০টি) প্রচার করা হয়েছে। এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে ভুল তথ্য প্রচারে জাতীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’র নাম সবচেয়ে বেশি (৪০) ব্যবহার করা হয়েছে, যা শতকরা হিসেবে প্রায় ২৮ শতাংশ। ‘প্রথম আলো’র পরই আরেক জাতীয় গণমাধ্যম কালবেলা’র নাম বেশি (২৭) ব্যবহার করা হয়েছে, যা শতকরা হিসেবে প্রায় ১৯ শতাংশ।

উল্লেখ্য, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন বিষয়ক সকল ভুল তথ্যের যাচাই প্রতিবেদনসহ ডায়নামিক ইনফোগ্রাফিকের সাহায্যে এ সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক নানান তথ্য নিয়ে আগামী ৫ জানুয়ারি বিশেষ একটি ওয়েবসাইট প্রকাশ করতে যাচ্ছে রিউমর স্ক্যানার।

রিউমর স্ক্যানার একটি ফ্যাক্ট-চেকিং বা তথ্য-যাচাইয়ের উদ্যোগ যার প্রধান লক্ষ্য দেশের চলমান গুজব ও ভুয়া খবর নির্মূল করা এবং সঠিক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ যাত্রা শুরুর পর পরের বছরের (২০২১) ২৮ জুলাই আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট-চেকিং নেটওয়ার্ক (আইএফসিএন) এর সদস্যপদ লাভ করে রিউমর স্ক্যানার।

বার্তা প্রেরক
মোঃ ছাকিউজ্জামান
সহ-প্রতিষ্ঠাতা 
[email protected]

তিন মাসের জন্য নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা এবং জাতীয় পার্টির নির্বাচন বর্জন ও জিএম কাদেরের বিএনপিতে যোগদান করার গুজব

সম্প্রতি, ‘লাস্ট মুহূর্তে নির্বাচন বর্জন করলো জাতীয় পার্টি, ৩ মাসের জন্য নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করলো সিইসি, বিএনপিতে যোগ দিলেন জিএম কাদের’ শীর্ষক থাম্বনেইল যুক্ত একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।

নির্বাচন স্থগিত

ইউটিউবে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জাতীয় পার্টি নির্বাচন বর্জন করেনি এবং জিএম কাদেরও বিএনপিতে যোগদান করেননি। এছাড়াও তিন মাসের জন্যে সিইসির নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। বরং, অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায় ভিডিওটির ‍উপস্থাপক, ‘নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে এসে আবারও পল্টি নিল জাতীয় পার্টি। অবশেষে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, জাতীয় পার্টির অনেক প্রার্থীরা এখন নির্বাচন থেকে সরে দাড়াচ্ছেন। যদি এভাবেই তারা সরে যেতে থাকে তাহলে তো আর নির্বাচনে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিলেন জিএম কাদের। তিনি কি বলেছেন আপনাদেরকে বিস্তারিত ভিডিওতে দেখাবো। সেই সঙ্গে তিন মাসের জন্যে স্থগিত করা হচ্ছে নির্বাচন। যা বললেন নির্বাচন কমিশনার।’ শীর্ষক মন্তব্য করে দর্শকদের উদ্দেশ্যে দুটি ভিডিও দেখান। যার সাথে আলোচিত দাবির কোনো মিল নেই। 

ভিডিও যাচাই ১

আলোচিত ভিডিওটির শুরুতে দেখানো ভিডিওটি অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে DESH TV News এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ১ জানুয়ারি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকব কি না সময়ই বলে দেবে: জিএম কাদের | GM Quader | Election 2024 | Desh TV শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটির প্রথম ভিডিওর সাথে উক্ত ভিডিওর মিল রয়েছে। তবে আলোচিত ভিডিওটি মিরর করে প্রচার  করা হয়েছে।

Video Comparison by Rumor Scannar

তবে, আলোচিত ভিডিওর উপস্থাপকের ‘অবশেষে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, জাতীয় পার্টির অনেক প্রার্থীরা এখন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। যদি এভাবেই তারা সরে যেতে থাকে তাহলে তো আর নির্বাচনে যাওয়া সম্ভব নয়।’ শীর্ষক দাবির একদম ভিন্ন বক্তব্য দিতে দেখা যায় জিএম কাদেরকে। তিনি বলেন, অনেকেই নানা সময় শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকেন না। তবে এবছর এটা বেশি হাইলাইট করা হয়েছে।’ এছাড়াও তিনি জানান, যারা নির্বাচন করতে চান না, তাদের তিনি জোর করে করাবেন না। কিন্তু এভাবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো তাদের রাজনৈতিক জীবনে কলংক হয়ে থাকবে। জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে কিনা এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সেটা নির্বাচন আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আমরা এখন বলতে পারছি না।’

ভিডিওটির কোথাও জাতীয় পার্টির নির্বাচন বর্জন কর কিংবা জিএম কাদের-এর বিএনপিতে যোগদান করার বিষয়ে তাকে কোনো কথা বলতে শোনা যায়নি।

ভিডিও যাচাই ২

দ্বিতীয় ভিডিওটি অনুসন্ধানে ভিডিওতে থাকা বাংলাভিশনের লোগোর সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশন-এর ইউটিউব চ্যানেল BVNEWS24 এ গত ১ জানুয়ারি আস্থার সংকটের কারণ চৌদ্দ-আঠারোর নির্বাচন: সিইসি শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটির দ্বিতীয় ভিডিওর সাথে উক্ত ভিডিওর মিল রয়েছে। তবে আলোচিত ভিডিওটি মিরর করে প্রচার  করা হয়েছে।

Video Comparison by Rumor Scannar

প্রতিবেদনটির এক পর্যায়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালকে বলতে শোনা যায়, ‘অনেকেই বলেন নির্বাচনটা যদি আরও তিন মাস পিছিয়ে দিতেন তাহলে ভালো হত। কিন্তু নির্বাচন তিন মাস পিছিয়ে দেওয়ার কোনো রকম এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের নেই।’

অর্থাৎ, সিইসির তিন মাসের জন্যে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করার আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। 

মূলত, গত ১ জানুয়ারি রাজধানীতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের আইন-বিধিবিধান সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ আয়োজিত হয়। এ সময় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘অনেকেই নির্বাচন অন্তত তিন মাস পেছানোর কথা বলেন। তারা মনে করেন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো ঐকমত্য গড়ে ওঠেনি। কিন্তু কমিশনের নির্বাচন তিন মাস পেছানোর কোনো রকম এখতিয়ার নেই।’ এর প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ‘লাস্ট মুহূর্তে নির্বাচন বর্জন করলো জাতীয় পার্টি ৩ মাসের জন্য নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করলো সিইসি বিএনপিতে যোগ দিলেন জিএম কাদের’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থাকছে কিনা এ বিষয়ে সাংবাদিকদের দেওয়া জিএম কাদেরের একটি বক্তব্যের ভিডিওর সাথে সিইসির উক্ত প্রশিক্ষণে দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও যুক্ত করে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে আলোচিত দাবিটি যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

সুতরাং, তিন মাসের জন্যে সিইসির নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা ও জাতীয় পার্টির নির্বাচন বর্জন কিংবা জিএম কাদেরের বিএনপিতে যোগদান করার তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র