গত ২৩ জুন দেশের কতিপয় গণমাধ্যমে ‘নেইমারের বাবা গ্রেফতার’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, “পরিবেশ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমার জুনিয়রের বাবা নেইমার ডি সিলভা সান্তোসকে গ্রেফতার করেছে ব্রাজিলের পুলিশ।”
কোনো কোনো গণমাধ্যমে এসেছে, গ্রেফতারের পর তাকে ছেড়েও দেওয়া হয়। এ ঘটনায় নেইমারের বাবাকে ৫০ লাখ ব্রাজিলিয়ান রিয়েল জরিমানা করা হয়।
উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমের কিছু প্রতিবেদন দেখুন ইনডিপেনডেন্ট টিভি, সময় টিভি (ইউটিউব), যমুনা টিভি, ডিবিসি নিউজ, যুগান্তর, ইনকিলাব, কালবেলা, বাংলাভিশন, দৈনিক আমাদের সময়, নিউজবাংলা, বাংলাদেশ প্রতিদিন, জনকণ্ঠ, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, ডেইলি অবজারভার, নয়া দিগন্ত, দৈনিক করতোয়া, মানবকণ্ঠ, যায়যায়দিন, ডেইলি মেসেঞ্জার, আমাদের সময়, সংবাদ প্রকাশ, জাগো নিউজ২৪, নিউজজি২৪, বায়ান্ন টিভি, বাহান্ন নিউজ, ঢাকা মেইল, সময়ের আলো, বাংলাদেশ জার্নাল, একুশে সংবাদ, ঢাকা টাইমস২৪, ডেল্টা টাইমস, বিডি২৪ রিপোর্ট, এবিনিউজ২৪, সোনালী নিউজ, জুম বাংলা, এমটিএন নিউজ, স্বাধীন আলো, রেডিও টুডে, কুমিল্লার কাগজ।
একই দাবিতে কতিপয় পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণের সংবাদ দেখুন যুগান্তর, প্রতিদিনের বাংলাদেশ।
ভারতীয় গণমাধ্যমে একই দাবিতে প্রকাশিত প্রতিবদন দেখুন হিন্দুস্তান টাইমস, হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা, জিনিউজ, সংবাদ প্রতিদিন।
একই দাবিতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন Uol (ব্রাজিল), The Sun (ইংল্যান্ড), Daily Mail (ইংল্যান্ড)।
একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে ইউটিউবের কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফুটবল তারকা নেইমার জুনিয়রের বাবা নেইমার ডি সিলভা সান্তোসকে গ্রেফতার করার পর ছেড়ে দেওয়া এবং তাকে ৫০ লাখ ব্রাজিলিয়ান রিয়েল জরিমানা শীর্ষক দাবিগুলো সঠিক নয় বরং নেইমার ডি সিলভা সান্তোসকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ গ্রেফতারের আদেশ দিলেও পরে তা বাতিল করা হয়। তাছাড়া, নেইমার বা তার বাবাকে কোনো জরিমানা করা হয়নি। অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে জরিমানা করা হবে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে রিউমর স্ক্যানার দেশের মূলধারার তিন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ২৪, ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলো‘র এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ করে নেইমারের বাবা গ্রেফতার হয়েছেন শীর্ষক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বিডিনিউজ২৪ লিখেছে, বাড়ির নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে গিয়ে স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তাগণ নেইমারের বাবার দুর্ব্যবহার ও অপমানের শিকার হন বলেও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এক পর্যায়ে তাকে গ্রেফতার করার হুমকি দেয় কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তা করা হয়নি।
জরিমানার বিষয়ে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, অভিযোগ প্রমাণ হলে অন্তত ৫০ লাখ ব্রাজিলিয়ান হেইয়াস (১০ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি) জরিমানা দিতে হবে নেইমারকে।
একই তথ্য দিয়েছে ডেইলি স্টার। তবে গ্রেফতার সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ করেনি প্রথম আলো।
অর্থাৎ, বাংলাদেশের গণমাধ্যমেই নেইমারের বাবাকে গ্রেফতার এবং জরিমানা সংক্রান্ত দুই রকম তথ্য দেখা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে উল্লেখ করা হয়, “কর্তৃপক্ষের বিবৃতি অনুযায়ী, অভিযোগ প্রমাণিত হলে নেইমার জুনিয়রকে জরিমানা হিসাবে কমপক্ষে ৫ মিলিয়ন রেইস (১.০৫ মিলিয়ন ডলার) দিতে বাধ্য করা হতে পারে।”
রয়টার্স লিখেছে, “কর্মকর্তারা বলেছেন যে নির্মাণ বন্ধ করতে সম্পত্তি পরিদর্শনের সময়, অ্যাথলেটের বাবা নেইমার দা সিলভা সান্তোস তাদের অপমান করেছিলেন। পরে তাকে গ্রেফতারের হুমকি দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করা হয়নি।”
একই তথ্য পাওয়া যায়, ফুটবল বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম Goal এর ওয়েবসাইটের এক প্রতিবেদনেও।
Goal লিখেছে, ব্রাজিলের উপকূলীয় শহর মাঙ্গারাতিবার (Mangaratiba) স্থানীয় মেয়রের অফিস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে।
পরবর্তীতে অনুসন্ধান করে মাঙ্গারাতিবার (Mangaratiba) স্থানীয় মেয়রের অফিসের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে আলোচিত বিবৃতিটি (আর্কাইভ) খুঁজে পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
বিবৃতিতে জরিমানার বিষয়ে বলা হয়, “আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপটি হবে খুঁজে পাওয়া অনিয়মগুলো মূল্যায়ন করে জরিমানা ধার্য করা। ধারণা করা যাচ্ছে, পরিবেশগত ক্ষতির পরিপ্রেক্ষিতে সেটা ৫০ লাখ ব্রাজিলিয়ান রিয়ালের (১০ লাখ ডলারের বেশি) কম হবে না।”
অর্থাৎ, নেইমার বা তার বাবাকে কোনো জরিমানা করা হয়নি। অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে জরিমানা করা হবে।
নেইমারের বাবাকে গ্রেফতারের বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে এভাবে, “এটা স্পষ্ট করা উচিত যে অভিযান চলাকালীন, সেক্রেটারি শায়েন ব্যারেটো নেইমারের বাবার দ্বারা উপেক্ষার স্বীকার হন এবং তাকে সাজার আদেশ দিয়েছিলেন। দণ্ডবিধির ৩৩১ নং ধারার উপর ভিত্তি করে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, যা তাদের পেশা অনুশীলনে সরকারী কর্মকর্তাদের অবমাননাকে অপরাধ করে তোলে। যাইহোক, যুক্তিযুক্ততার নীতি বিবেচনা করে এবং জনাব নেইমার সান্তোসের উপদেষ্টার অনুরোধ অনুসরণ করে, তাকে সাও পাওলোতে একটি প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।”
বিষয়টি নিশ্চিত হতে মাঙ্গারাতিবার (Mangaratiba) স্থানীয় মেয়রের অফিসের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তাদের কাছে পুরো বিষয়টির ব্যাখ্যা চাইলে শুরুতে তাদের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে ফেসবুক পোস্টটিরই একটি কপি পাঠানো হয়।
দেখুন এখানে:
ইংরেজি ভাষায় অনুবাদকৃত সংস্করণ দেখুন এখানে –
একই মেইলে স্থানীয় মেয়রের অফিস উক্ত ঘটনার সময়কালের তিনটি ভিডিও পাঠান।
দেখুন এখানে।
পরবর্তীতে নেইমারের বাবাকে গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় মেয়রের অফিস থেকে রিউমর স্ক্যানার টিমকে জানানো হয়, “Foi dada a voz de prisão, e algum tempo depois, ainda durante a operação de fiscalização, a Secretária retrocedeu da decisão para atender um pedido da assessoria do pai de Neymar.”
অর্থাৎ, গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছিল। তবে কিছু সময় পর নেইমারের বাবার উপদেষ্টার অনুরোধে উক্ত সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে তারা।
মূলত, গত ২৩ জুন দেশের কতিপয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, “পরিবেশ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমার জুনিয়রের বাবা নেইমার ডি সিলভা সান্তোসকে গ্রেফতার করেছে ব্রাজিলের পুলিশ। গ্রেফতারের পর তাকে ছেড়েও দেওয়া হয়। এ ঘটনায় নেইমারের বাবাকে ৫০ লাখ ব্রাজিলিয়ান রিয়েল জরিমানা করা হয়।” কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিগুলো সঠিক নয়। নেইমারের বাবাকে গ্রেফতার করা হয়নি। অভিযান পরিচালনাকারী কর্তৃক গ্রেফতারের আদেশ দেওয়া হলেও পরে তা বাতিল করা হয়। তাছাড়া, নেইমার বা তার বাবাকে কোনো জরিমানা করা হয়নি। অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে জরিমানা করা হবে। স্থানীয় মেয়রের অফিসের পক্ষ থেকে এ বিষয়গুলো রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
সুতরাং, নেইমারের বাবাকে গ্রেফতারের পর ছেড়ে দেওয়া এবং ৫০ লাখ ব্রাজিলিয়ান রিয়েল জরিমানা করা শীর্ষক দুইটি দাবি আন্তর্জাতিক ও দেশীয় কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Reuters: Construction halted on mansion of Brazilian soccer star Neymar
- Goal: PSG star Neymar facing $1m fine after construction halted on Brazilian mansion due to environmental violations
- City Hall of Mangaratiba: Facebook Post
- Statement from City Hall of Mangaratiba
- Rumor Scanner’s own analysis