আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলা এবং নিহতের পুরোনো সংবাদ বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার

সম্প্রতি, “আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলা, নিহত ২০” শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ অফিসে সম্প্রতি কোনো বোমা হামলার ঘটনা ঘটেনি এবং এতে কেউ নিহতও হয়নি বরং প্রচারিত ভিডিওতে ২০০১ সালে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলার পুরোনো সংবাদ এবং থাম্বনেইলে বাংলাদেশের মানুষের সংঘর্ষের পুরোনো ছবি ব্যবহার করায় বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

গত ১৬ জুন  BNC Tv, Ourislam24.com, Padma Tv, News Bulletin এবং আজকের খবর নামের কয়েকটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘আ’লীগ অফিসে বোমা হামলা, নিহত ২০’ শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে বাংলাদেশের মানুষের সংঘর্ষের পুরোনো ছবি ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়।

অনুসন্ধানের শুরুতে উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওগুলো পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। News Plus নামের পেজে প্রচারিত এই ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এটি কয়েকটি প্রতিবেদন নিয়ে তৈরি একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিও।

Screenshot: Facebook 

News Plus নামের পেজ থেকে প্রকাশিত ৯ মিনিট ২৫ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে ৮ মিনিট ৫ সেকেন্ড থেকে ‘আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলা, নিহত ২০’ শিরোনামে একটি সংবাদ পাঠ করা শুরু হয়। এবিষয়ে সংবাদ পাঠ ৮ মিনিট ৫ সেকেন্ড থেকে শুরু হয়ে ৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড পর্যন্ত চলে। 

সেখানে বিস্তারিত সংবাদে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে শোকাবহ দিন ১৬ জুন। ২০০১ সালের এই দিনে চাষাঢ়া আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলায় ২০ জন প্রাণ হারান। কিন্তু ২২ বছরেও এই হামলা মামলার বিচারকাজ শেষ হয়নি। সেদিন বোমা হামলায় আহত হন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি চন্দনশীলসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। যাদের অনেকে হাত-পা হারিয়ে এখনও পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে আছেন। তারা আজও দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন। ২২ বছরেও মামলার বিচারকাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সেদিন বেঁচে যাওয়া নেতাকর্মীরা। তবে মামলা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাক্ষীদের অনীহাসহ নানা কারণে বিচারকাজ বিলম্বিত হচ্ছে।

উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনের ওয়েবসাইটে গত ১৬ জুন  “আ.লীগ অফিসে বোমা হামলায় ২০ জন নিহত, ২২ বছরেও শেষ হয়নি বিচারকাজ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Bangla Tribune

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে শোকাবহ দিন ১৬ জুন। ২০০১ সালের এই দিনে চাষাঢ়া আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলায় ২০ জন প্রাণ হারান। কিন্তু ২২ বছরেও এই হামলা মামলার বিচারকাজ শেষ হয়নি। সেদিন বোমা হামলায় আহত হন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি চন্দনশীলসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। যাদের অনেকে হাত-পা হারিয়ে এখনও পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে আছেন। তারা আজও দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন। ২২ বছরেও মামলার বিচারকাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সেদিন বেঁচে যাওয়া নেতাকর্মীরা। তবে মামলা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাক্ষীদের অনীহাসহ নানা কারণে বিচারকাজ বিলম্বিত হচ্ছে।’

রিউমর স্ক্যানার টিম যাচাই করে দেখেছে, বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রথম তিন প্যারা আলোচিত ভিডিওতে হুবহু পাঠ করা হয়েছে। 

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিও’র বিস্তারিত প্রতিবেদন এবং এবিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, সম্প্রতি আওয়ামী লীগ অফিসে কোনো বোমা হামলার ঘটনা ঘটেনি এবং এতে কেউ নিহতও হয়নি। 

মূলত, ২০০১ সালে নারায়ণগঞ্জের চাষঢ়া আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলার ঘটনার ২২ বছরেও বিচার হয়নি এমন প্রতিবেদন গণমাধ্যম প্রকাশ করলে ঘটনাটি আলোচনায় আসে। তবে উক্ত ঘটনাটিকে প্রচার করতে গিয়ে একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিওতে আ’লীগ অফিসে বোমা হামলা, নিহত ২০’ শীর্ষক অপ্রাসঙ্গিক শিরোনাম এবং চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, চটকদার ক্যাপশন এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে অধিক ভিউ পাবার আশায় উক্ত দাবিতে ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে চটকদার শিরোনাম ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এসব ঘটনা নিয়ে পূর্বেও ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন প্রতিবেদন পড়ুন এখানে এবং এখানে। 

সুতরাং, ২০০১ সালে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলার ঘটনাকে সময় উল্লেখ না করে সম্প্রতি কয়েকটি ভিডিওতে ‘আ’লীগ অফিসে বোমা হামলা, নিহত ২০’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img