সম্প্রতি, ‘ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে বিকাশ কোম্পানী সব বিকাশ ব্যবহারকারীদের ৪৯৯৯ টাকা ঈদ বোনাস দিচ্ছে।’ শীর্ষক একটি ক্যাম্পেইন লিংক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে বিকাশ কোম্পানী সব বিকাশ ব্যবহারকারীদের ৪৯৯৯ টাকা ঈদ বোনাস দেওয়ার দাবিটি সত্য নয় বরং বিকাশের নামে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে বোনাস প্রদানের এই প্রলোভন দেখানো হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে বোনাসের প্রলোভন দেখানো ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশের চেষ্টা করে রিউমর স্ক্যানার টিম। কিন্তু সেসময় ওয়েবসাইট লিংকটি কাজ না করায় প্রবেশ সম্ভব হয়নি।
Screenshot from Fake Bkash website
বিকাশ কি এমন কোনো ক্যাম্পেইন চালু আছে?
বিকাশের ওয়েবসাইট ও ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে অনুসন্ধান করে ঈদুল আযহা উপলক্ষে ব্যবহারকারীদের বোনাস দেওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
Screenshot from Fake Bkash website
পাশাপাশি, নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে বিকাশ থেকে এমন বোনাস দেওয়া প্রসঙ্গে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে বিকাশের ওয়েবসাইটের লাইভ চ্যাটের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে সেখান থেকে বলা হয়, ‘বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে বিকাশের কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করা হলে সেখান থেকে বলা হয়, ‘অনুগ্রহ করে এ ধরনের ভুল তথ্য দ্বারা বিভ্রান্ত হবেন না। অসাধু চক্র বিভিন্ন নকল ওয়েবসাইট তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্য কোনো মাধ্যমে নানা ধরনের মিথ্যা অফার দেখিয়ে বিকাশের সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করছে। বর্তমানে বিকাশ এ ধরনের কোনো অফার ঘোষণা করেনি এবং উক্ত অফারগুলোর সাথে বিকাশ-এর কোনো সম্পর্ক নেই। তাই, এসব মিথ্যা অফারের লোভে পড়ে কিংবা প্রতারিত হয়ে এই ধরনের কোনো ওয়েবসাইট অথবা অন্য কোনো মাধ্যমে কোনো লেনদেন করবেন না এবং আপনার বিকাশ একাউন্ট নাম্বার, পিন, ভেরিফিকেশন কোড বা অন্য কোনো তথ্য দিবেন না। এছাড়া এ ধরনের ওয়েবসাইটের লিংক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকবেন।’
মূলত, ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে বিকাশ কোম্পানী সব বিকাশ ব্যবহারকারীদের ৪৯৯৯ টাকা ঈদ বোনাস দিচ্ছে দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিকাশের পক্ষ থেকে এমন কোনো বোনাস ঘোষণা করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে বিকাশের লোগো ব্যবহার করে বিকাশের ওয়েবসাইটের আদলে তৈরি ভুয়া ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রতারণার উদ্দেশ্যে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
ইতিপূর্বে একাধিকবার বিকাশের ওয়েবসাইট নকল করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে প্রলোভন দেখানো হয়। সেসময় উক্ত বিষয়গুলোকে মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। প্রতিবেদন গুলো দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সম্প্রতি ‘মালদ্বীপের বিপক্ষে এই জয় প্রমাণ করে দিচ্ছে যে আমার নেতৃত্বে ফুটবল সঠিক পথেই আছে’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ডিজিটাল ব্যানার সম্বলিত তথ্য বাফুফে সভাপতি কাজী সালাহদ্দিনের মন্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন মালদ্বীপের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়কে ঘিরে তার নেতৃত্বে ফুটবল সঠিক পথে আছে শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি বরং কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত তথ্যটি কাজী সালাউদ্দিনের মন্তব্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
গুজবের সূত্রপাত
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ‘কিংবদন্তি ফুটবলার কাজী সালাউদ্দীন ওরফে সভাপতি সালাউদ্দিন’ নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ২৫ জুন ‘আজ সকল সমালোচনার জবাব দিয়েছে আমার প্রিয় ছেলেরা’ শীর্ষক শিরোনামে আলোচিত ডিজিটাল ব্যানার সম্বলিত পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
উক্ত পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ফুটবল সংক্রান্ত একটি সার্কাজম বা ট্রল পেজ। বিভিন্ন সময় ফুটবল নিয়ে ট্রল পোস্ট করা হয় এই পেজটিতে।
পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা বাফুফে সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো মাধ্যমে মালদ্বীপের বিপক্ষে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক জয় নিয়ে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের নামে প্রচারিত এই মন্তব্যটির কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা প্রতীয়মান হয় যে, বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের নামে প্রচারিত উক্ত মন্তব্যটি তিনি করেননি।
মূলত, সম্প্রতি ‘মালদ্বীপের বিপক্ষে এই জয় প্রমাণ করে দিচ্ছে যে আমার নেতৃত্বে ফুটবল সঠিক পথেই আছে’ শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য বাফুফে সভাপতি কাজী সালাহদ্দিনের মন্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত মন্তব্যটি বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন করেননি। প্রকৃতপক্ষে গত ২৫ জুন মালদ্বীপের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের পর একটি ট্রল পেজ থেকে বাফুফে সভাপতির নামে এই ভুয়া মন্তব্যটি প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে এটি কাজী সালাউদ্দিনের বাস্তব মন্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ জুন ভারতের বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মালদ্বীপকে ৩-১ গোলে হারায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের হয়ে একটি করে গোল পেয়েছেন রাকিব হোসেন, তারিক কাজী ও শেখ মোরসালিন। মালদ্বীপের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন হামজা মোহামেদ।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই পেজ থেকে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ‘মালদ্বীপের বিপক্ষে এই জয় প্রমাণ করে দিচ্ছে যে আমার নেতৃত্বে ফুটবল সঠিক পথেই আছে’ শীর্ষক একটি তথ্য বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের মন্তব্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশে রোবট দিয়ে রেস্টুরেন্টে ওয়েটার সার্ভিস পরিচালনার ঘটনা হবিগঞ্জে প্রথম নয় বরং ২০১৭ সালে দেশে প্রথম ঢাকার আসাদ গেইট এলাকায় একটি রেস্টুরেন্টে এই সার্ভিস চালু হয়েছে বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার অনলাইন সংবাদমাধ্যম আমাদের সময়.কম এর ওয়েবসাইটে গত ২৫ জুন ‘হবিগঞ্জে প্রথম ‘নারী’ রোবটের খাবার সরবরাহ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলা শহরের বদিউজ্জামান খান সড়কে আলেয়া-আহনাফ টাওয়ারের ৩য় তলায় ‘কিচেন-২০’ নামে একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। রেস্টুরেন্টটি সম্প্রতি রোবটের মাধ্যমে ভোক্তাদের ওয়েটার সার্ভিস দিচ্ছে।
গণমাধ্যম গুলোর প্রতিবেদনে সম্প্রতি হবিগঞ্জে রেস্টুরেন্টে রোবোটিকস ওয়েটার সার্ভিস চালুর কথা উল্লেখ করা হলেও কোনো গণমাধ্যমেই এই ঘটনা হবিগঞ্জেই দেশের প্রথম বলে উল্লেখ করা হয়নি।
পরবর্তীতে দেশের প্রথম রোবোটিকস ওয়েটার সার্ভিস চালু করা রেস্টুরেন্ট কোনটি সেই তথ্য উদঘাটনের জন্য অনুসন্ধান শুরু করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম ‘এনটিভি’ এর ওয়েবসাইটে ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর ‘বাংলাদেশে প্রথম রোবট রেস্টুরেন্টের যাত্রা শুরু’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot taken from NTV website
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঢাকার আসাদ গেইট এলাকায় ফ্যামিলি ওয়ার্ল্ড টাওয়ারের দ্বিতীয় তলায় ‘রোবট রেস্টুরেন্ট’ নামের একটি রেস্টুরেন্ট যাত্রা শুরু করে। যেখানে ভোক্তাদের অর্ডার অনুযায়ী ওয়েটারের ন্যায় রোবট কর্তৃক খাবার সরবরাহের কথা বলা হয়।
সেদিন রেস্টুরেন্টটি উদ্বোধন রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ ও চীনা রোবট প্রস্তুতকারী সংস্থা এইচ জেড এক্স ইলেকট্রনিক টেকনোলজি কোম্পানি যৌথ সংবাদ সম্মেলনেরও আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকরা এটিকে বাংলাদেশে বাংলাদেশে প্রথম রোবট কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা রেস্টুরেন্ট বলে জানান।
মূলত, সম্প্রতি হবিগঞ্জ জেলা শহরের ‘কিচেন-২০’ নামের একটি রেস্টুরেন্টে ভোক্তাদেরকে রোবট দ্বারা ওয়েটার সার্ভিস প্রদান চালু হয়েছে। উক্ত বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ‘দেশের প্রথম রোবোটিকস ওয়েটারের দেখা মিললো হবিগঞ্জে’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। তবে অনুসন্ধানে ২০১৭ সালে ঢাকার আসাদ গেইট এলাকায় একটি রোবট রেস্টুরেন্ট উদ্বোধনের তথ্য জানা যায়। যেখানে রোবট দ্বারা ওয়েটার সার্ভিস চালু হয়। এছাড়া ২০১৭ সালের পূর্বে দেশের কোনো রেস্টুরেন্টে রোবট দ্বারা ওয়েটার সার্ভিস অর্থাৎ ভোক্তাদের খাবার সরবরাহের তথ্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও দেশের প্রথম ঘটনা দাবিতে ছড়িয়ে পড়া গুজব শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। প্রতিবেদনগুলো পড়ুন এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, দেশের প্রথম রোবোটিকস ওয়েটারের দেখা মিললো হবিগঞ্জে শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারী বিভাগের অফিস অব টেরোরিজম অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ১০ বিলিয়ন ডলারের মানি লন্ডারিংয়ের সন্ধান পেয়েছে’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারী বিভাগের অফিস অব টেরোরিজম অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সের দেশটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ১০ বিলিয়ন ডলারের মানি লন্ডারিংয়ের সন্ধান পাওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারী বিভাগের ওয়েবসাইটের মানি লন্ডারিং বিষয়ক সেকশনে এরকম কোনো তথ্য উল্লেখ নেই। তথ্যপ্রমাণ ব্যতীত সূত্র উল্লেখ করে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে উক্ত তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে।
তথ্যের সূত্রপাত, সূত্রের সন্ধান ও তথ্যের বিকৃতি
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সজীব ওয়াজেদ জয়ের মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলোতে তথ্যসূত্র হিসেবে ওয়ালিউল্লাহ নোমান নামে এক ব্যক্তিকে উদ্ধৃত করা হয়েছে।
তবে তার এই পোস্টটির এডিট হিস্ট্রি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই স্ট্যাটাসটি যখন দেওয়া হয়েছিল তখন ক্যাপশন ছিল, ‘আমেরিকান গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে এক বাংলাদেশি কম্পিউটার বিজ্ঞানীর মাত্র ১০ বিলিয়ন মানি লন্ডারিং খুঁজে পেয়েছে! মামলা প্রস্তুতি চলমান-‘
Screenshot: Oliullah Noman Facebook Post
অর্থাৎ পূর্বের স্ট্যাটাসে তিনি মামলার প্রস্তুতি চলমান উল্লেখ করলেও পরে সম্পাদনা করে স্ট্যাটাসটি থেকে এই অংশটুকু মুছে ফেলেন।
অপরদিকে তথ্যটির সূত্রের অনুসন্ধানে ওয়ালিউল্লাহ নোমানের স্ট্যাটাসটিতে অনেকেই উক্ত দাবির সূত্র চেয়ে মন্তব্য করলে তার বিপরীতে তিনি যে উত্তর দেন সেগুলো থেকে তার দাবির পক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Image Collage: Rumor Scanner
যেমন, কাজী হেমায়েত উদ্দিন মিশন নামে জনৈক ব্যক্তির এক মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ওয়ালিউল্লাহ নোমান লিখেন, ‘এটা আমার কাছে একেবারেই প্রাথমিক ইনফরমেশন। ডকুমেন্টস হাতে পেলে বিস্তারিত জানাতে পারবো ইনশাল্লাহ।’
সূত্র চেয়ে আরেফিন রঞ্জু নামে এক ব্যক্তির মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি লিখেন, ‘দয়া করে আমাকে অবিশ্বাস করুন!’ অম্বল ঠাকুর নামে এক ব্যক্তির মন্তব্যে তিনি লিখেন, ‘ দয়া করে আমাকে অবিশ্বাস করুন। ফালতু তর্কে আমি পছন্দ করি না। অথবা unfriend করে ত্যাগ করতে পারেন।’
একইভাবে ইকবাল হোসাইন নামে এক ব্যক্তির মন্তব্যে তিনি নির্ভরযোগ্য প্রমাণ ছাড়া কোনো তথ্য প্রচার করেন না-এমন একটি মন্তব্য করেন।
অর্থাৎ স্ট্যাটাসটিতে তিনি কম্পিউটার বিজ্ঞানীর পরিচয় ও কোনো সংস্থার নাম ও সূত্র উল্লেখ করেননি। পাশাপাশি তিনি জানান, এটি তার কাছে থাকা একটি প্রাথমিক তথ্য এবং এর কোনো ডকুমেন্টস বা নথি তার কাছে নেই।
অপরদিকে তার সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কম্পিউটার বিজ্ঞানী হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয় ও যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারী বিভাগের অফিস অব টেরোরিজম অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে সূত্র হিসেবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
Image Collage: Rumor Scanner
উল্লেখ্য, ওয়ালিউল্লাহ নোমানের স্ট্যাটাসের পর তার তথ্যটিকেই আরও বিস্তৃত করে এর সঙ্গে সজীব ওয়াজেদ জয় ও যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারী বিভাগের অফিস অব টেরোরিজম অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে সূত্র হিসেবে জুড়ে প্রথম পোস্ট দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি Mo Rahman Masum।
ভিডিওটির ৭ মিনিট ২৯ সেকেন্ডে তিনি বলেন, ‘সজীব ওয়াজেদ জয় সাহেবের মানি লন্ডারিংয়ের ইনভেস্টিগেশন চলছে এবং এটা ক্লাস্টিফাইড ডকুমেন্টস, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে। এগুলা কেউ বেরও করতে পারবে না, কথাও বলতে পারবে না। কারণ, করলেই এটা যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিরোধী হয়।’
রহমান মাসুমের লাইভে দেওয়া এই বক্তব্যের সাথে তার পূর্বের দেওয়া স্ট্যাটাসটি সাংঘর্ষিক। কারণ, তিনি সেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারী বিভাগের অফিস অব টেরোরিজম অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে ডকুমেন্টস হিসেবে দেখিয়েছেন, তার দাবি মতে যা কারো পক্ষে বের করা সম্ভব না। আবার একই বিষয়ে ফেসবুক লাইভও করছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিরোধী।
সজীব ওয়াজেদ জয়ের মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে তথ্যের সূত্রপাত, সূত্রের সন্ধান নিয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের এই পর্যন্ত অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয় যে, সজীব ওয়াজেদ জয়ের মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টি নিয়ে তথ্যের সূত্রপাতকারী প্রথমে কোনো ডকুমেন্টস ছাড়া ও ব্যক্তি বিশেষ ও সংস্থার নাম উল্লেখ ব্যতীতই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন৷
এছাড়া পোস্টের প্রথমে এই নিয়ে মামলার প্রস্তুতি চলমান আছে বলে দাবি করলেও পরবর্তীতে তিনি তার পোস্ট থেকে এই অংশটি মুছে দেন। পরবর্তীতে তার সংশোধিত পোস্টটিকেই আরও বিস্তৃত করে এর সঙ্গে সজীব ওয়াজেদ জয় ও যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারী বিভাগের অফিস অব টেরোরিজম অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে জুড়ে দিয়ে ফেসবুকে প্রচার করা হয়।
আমার দেশ ডট ইউকের অসম্পূর্ণ ও মিথ্যা তথ্যে ভরা প্রতিবেদন যখন সূত্রপাতকারীর প্রাথমিক তথ্য
পোস্টটিতে তিনি এর আগে ১৫ জুন (১৪ জুন প্রথম প্রকাশ, ১৫ জুন এডিট করে প্রকাশিত) দেওয়া সজীব ওয়াজেদ জয়ের মানি লন্ডারিংয়ের পোস্টটির প্রাথমিক তথ্য হিসেবে লন্ডন থেকে প্রকাশিত আমার দেশ ডট ইউকে নামের একটি পত্রিকায় গত ৬ জুন ‘লাপাত্তা সজীব ওয়াজেদ জয়‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করেন।
Screenshot: amar desh UK
উক্ত প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিবেদনটিতে অজ্ঞাত সূত্র উল্লেখ করে দাবি করা হয়, আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সজীব ওয়াজেদ জয়কে কেন্দ্র করে একটি মামলার আসামী পক্ষের আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করেছিলেন এবং তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন তাদের কাছে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সম্পদ ও মানি লন্ডারিং নিয়ে আরো কী কী তথ্য আছে।
Screenshot: amar desh UK
তবে প্রতিবেদনটিকে ওয়ালিউল্লাহ নোমান তার সজীব ওয়াজেদ জয়ের মানি লন্ডারিং নিয়ে পোস্টটির প্রাথমিক সূত্র হিসেবে উল্লেখ করলেও উক্ত প্রতিবেদনটিতে সজীব ওয়াজেদ জয়ের কোন মামলা, আমেরিকার কোন গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছে এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।
এছাড়া প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে আরও দেখা যায়, প্রতিবেদনটির শুরুতেই দাবি করা হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক আমেরিকা সফরে সজীব ওয়াজেদ জয়কে দেখা যায়নি।
Screenshot: amar desh UK
তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক আমেরিকা সফরকালে সজীব ওয়াজেদ জয়কে দেশটিতে দেখতে না পাওয়ার দাবিটি মিথ্যা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র সফরকালেই গত ২ মে ওয়াশিংটনে ইউএস চেম্বার অব কমার্সের এক অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনাকালে সজীব ওয়াজেদ জয়ের উপস্থিতি দেখা যায়।
এছাড়া ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে সজীব ওয়াজেদ জয়ের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ও অবস্থান নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়লে সেটি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার টিম।
অর্থাৎ সজীব ওয়াজেদ জয়ের মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে তথ্যের সূত্রপাতকারী তার প্রাথমিক তথ্য হিসেবে সে সূত্র দিয়েছেন সেখানেও কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই এবং সূত্রটিতে মিথ্যা তথ্যের উপস্থিতি বিদ্যমান।
দৈনিক যুগান্তরের একটি সংবাদ, সজীব ওয়াজেদ জয় ও নাগরিক টিভি (কানাডা)
সজীব ওয়াজেদ জয়ের মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে অনুসন্ধানের এ পর্যায়ে রিউমর স্ক্যানার টিম গত ১৫ জুন কানাডা থেকে পরিচালিত নাগরিক টিভি নামের একটি ফেসবুক পেইজে ‘সজীব ওয়াজেদ জয়: দি টেন বিলিয়ন ডলার ম্যান? (আর্কাইভ)’ শীর্ষক একটি ফেসবুক পোস্ট খুঁজে পায়।
Screenshot: Nagorik TV Facebook Post
পোস্টটিতে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবির পাশে বাংলাদেশের মূলধারার জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের চলতি বছরের গত ৩ মে ‘সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চায় আইএমএফ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট জুড়ে দিয়ে তৈরি ব্যানারে প্রশ্ন তোলা হয়, ‘জয়ের সাড়ে দশ বিলিয়ন ডলারের খোঁজ পাওয়া গেছে?’ যদিও এই প্রশ্নের উত্তরে ব্যানারটিতে উল্লেখিত বিস্তারিত বিবরণীতে যুগান্তরের এই প্রতিবেদনের সাথে জয়ের সম্পর্ককে একটি সম্ভাবনা হিসেবেই ব্যাখ্যা করা ছাড়া এর সাথে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আর কোনো তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানার টিম যুগান্তরের উক্ত প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে দেখে।
Screenshot: Daily Jugantor
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের অন্তত ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আটকে আছে। সম্প্রতি বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে এক বৈঠকে ঢাকায় সফরে আসা আইএমএফের প্রতিনিধিদল এই ডলার বাংলাদেশ কেন ফেরত আনছে না তা জানতে চায়।
Screenshot: Daily Jugantor
এই প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ তাদের বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে আটকে থাকা বাংলাদেশিদের ওই অর্থ ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সব ব্যাংককে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে। বিশেষ করে যেসব ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি করেছিল রপ্তানিকারক ওইসব প্রতিষ্ঠান।
অর্থাৎ প্রতিবেদনটি থেকে জানা যাচ্ছে, বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে আটকে থাকা এই ডলার মূলত বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে এই ডলার ফেরত আনার নির্দেশ দিয়েছে। তবে এই প্রতিবেদনের সাথে সজীব ওয়াজেদ জয়ের কোনো সংশ্লিষ্টতা রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের অন্তত ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আটকে থাকা প্রসঙ্গে আইএমএফের জানতে চাওয়া নিয়ে যুগান্তরের একটি প্রতিবেদনের সাথে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে সজীব ওয়াজেদ জয়কে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারী বিভাগের অফিস অব টেরোরিজম অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ডাটা থেকে যা জানা যাচ্ছে
অনুসন্ধানের শেষ ধাপে রিউমর স্ক্যানার টিম ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলো সূত্র যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারী বিভাগের অফিস অফ টেরোরিজম এন্ড ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ওয়েবসাইটে সজীব ওয়াজেদ জয়ের মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে কোনো তথ্য আছে কিনা তা নিয়ে যাচাই করে।
অনুসন্ধানে ট্রেজারী বিভাগের অফিস অফ টেরোরিজম এন্ড ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ওয়েবসাইটে মানি লন্ডারিং বিষয়ে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরের গত মার্চে মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে সবশেষ হালনাগাদ করেছে। এর বাইরে সাম্প্রতিক সময়ে আর কোনো তথ্য বা সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলোতে সূত্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারী বিভাগের অফিস অফ টেরোরিজম এন্ড ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে উল্লেখ করলেও তাদের ওয়েবসাইটে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে কোনো তথ্যই খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের অন্তত ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আটকে থাকা প্রসঙ্গে আইএমএফের জানতে চাওয়া নিয়ে যুগান্তরের একটি প্রতিবেদনের সাথে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে সজীব ওয়াজেদ জয়কে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
মূলত, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বিলিয়ন ডলারের মানি লন্ডারিংয়ের সন্ধান পেয়েছে মার্কিন ট্রেজারী বিভাগের অফিস অফ টেরোরিজম এন্ড ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স শীর্ষক একটি দাবি ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায়, দাবিটি সর্বপ্রথম কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম ও সংস্থার নাম উল্লেখ ব্যতীত প্রচার হয় এবং পরবর্তীতে এটি পরিবর্তন করে সজীব ওয়াজেদ জয় ও ট্রেজারী বিভাগের নাম জুড়ে দেওয়া হয়। তবে এসব সূত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ ছাড়াই এসব সূত্রগুলো ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ জুন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার বরাতে ‘মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে তারেক-জোবায়দা দম্পতি লন্ডনে গ্রেফতার’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দাবিটি গুজব বলে প্রতীয়মান হয়। এ নিয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন ‘মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে তারেক-জোবায়দা দম্পতির লন্ডনে গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি গুজব।’
সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ১০ বিলিয়ন ডলারের মানি লন্ডারিংয়ের সন্ধান পাওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একটি কার্যবিবরণী সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন নিয়ে সুনির্দিষ্ট একটি দাবি ফেসবুকে ছড়াতে দেখা যায়।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সাধারণ শাখা থেকে প্রকাশিত কার্যবিবরণী সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি মূলত ঈদুল আযহা উদযাপন বিষয়ে নির্দেশনা। কার্যবিবরণীর ০২ নং ক্রমে লেখা রয়েছে, ঈদের দিন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে যথাযথ মর্যাদায় সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা ও ইসলামিক পতাকা উত্তোলন করতে হবে৷
মূলত, ইসলামিক পতাকা উত্তোলন শীর্ষক তথ্য সম্বলিত এই কার্যবিবরণী সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন নিয়েই আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে ফেসবুকে।
রিউমর স্ক্যানারের ফেসবুক গ্রুপে একাধিক ব্যক্তি এ কার্যবিবরণী সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটির সত্যতা যাচাইয়ের অনুরোধ করেছেন।
প্রজ্ঞাপনটি বিশ্লেষণ করে যা জানা যাচ্ছে
রিউমর স্ক্যানার টিম কার্যবিবরণী সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের ছবিটি বিশ্লেষণ করে দেখেছে, এটি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সাধারণ শাখা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। কার্যবিবরণীতে উল্লিখিত তথ্য বলছে, ঈদুল আযহা উদযাপন উপলক্ষ্যে জেলা পর্যায়ের কর্মসূচি প্রণয়নের জন্য জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে গত ০৪ জুন একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এই সভায় বিস্তারিত আলোচনা শেষে জেলা পর্যায়ে বেশ কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সিদ্ধান্ত হয় বলে জানানো হয় উক্ত নোটিশে।
নোটিশটির ০২ নং ক্রমে দেখা যাচ্ছে, ঈদের দিন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে যথাযথ মর্যাদায় সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা ও ইসলামিক পতাকা উত্তোলন করতে হবে৷
Screenshot source: Facebook
কার্যবিবরণী সম্বলিত প্রজ্ঞাপনটির উপরের ডান কোণায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের একটি সিল রয়েছে যাতে একটি স্বাক্ষরও দেখা যাচ্ছে এবং স্বাক্ষরের তারিখ উল্লেখ রয়েছে ১২ জুন।
তাছাড়া, সিলটির নিচে ‘নিশ্চিতকরণ, পতাকা উত্তোলন’ শীর্ষক হাতে লেখা দুইটি বাক্যও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
কবে থেকে ছড়াচ্ছে এই প্রজ্ঞাপন?
রিউমর স্ক্যানার টিম ভাইরাল প্রজ্ঞাপনটির উৎস অনুসন্ধানে একাধিক ফেসবুক মনিটরিং টুলস এবং ম্যানুয়াল সার্চের মাধ্যমে যাচাই করে দেখতে পায়, এই প্রজ্ঞাপনটির দুইটি সংস্করণ ফেসবুকে ছড়িয়েছে। একটি পিডিএফ সদৃশ স্ক্যান কপি। আরেকটি মোবাইলে ধারণকৃতঅই ছবি।
অনুসন্ধানে গত ২৪ জুন রাত ০১ টা ২১ মিনিটে এ বিষয়ে একটি পাবলিক পোস্টে মোবাইলে তোলা ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
Screenshot source: Facebook
পিডিএফ স্ক্যান কপিটি একইদিন সকাল ৬ টা ৫৩ মিনিটে ফেসবুকের একটি পাবলিক পোস্টে খুঁজে পাওয়া যায়৷ দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
Screenshot source: Facebook
দুই পোস্টেই উল্লিখিত প্রজ্ঞাপনে কোনো পার্থক্য দেখা যায়নি।
অর্থাৎ, একই কার্যবিবরণী দুইটি আলাদা সংস্করণে ছড়িয়েছে।
অনুসন্ধানে যা জানা গেল
রিউমর স্ক্যানার টিম এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে মূলধারার গণমাধ্যম ‘বাংলা ট্রিবিউন’ এর ওয়েবসাইটে গতকাল (২৫ জুন) রাতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানতে পারে, আলোচিত সভাটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১২ জুন এই আদেশ (কার্যবিবরণী) জারি করে প্রজ্ঞাপন দিয়েছিল জেলা প্রশাসন।
বাংলা ট্রিবিউন জানাচ্ছে, ‘তবে এমন আদেশ জারি হওয়ার পর সমালোচনার মুখে শনিবার (২৪ জুন) এই আদেশ সংশোধন করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে জেলা প্রশাসন।’
বাংলা ট্রিবিউনে আরো উল্লেখ রয়েছে যে, এ বিষয়ে জানতে বাংলা ট্রিবিউন এর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তার পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার আবদুল্লাহ আল আমিন সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, ‘ইসলামিক পতাকা উত্তোলনের বিষয়টি প্রিন্টিং মিসটেক। ভুল করে ছাপানো হয়েছে। বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর সংশোধন করে পুনরায় প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।’
Screenshot source: Bangla Tribune
এ বিষয়ে আরও অনুসন্ধান করে ফেসবুকে Positive Expression নামক একটি পেজে প্রকাশিত একটি অডিও রেকর্ডে আলোচিত ঘটনায় সাতক্ষীরা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শেখ মঈনুল ইসলাম মঈনের সাক্ষাৎকার (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot source: Facebook
জনাব মঈন জানান (৩:৪০ মিনিট থেকে), “এটা হচ্ছে ঈদগাহ কমিটির সভা। এটা ড্রাফট করে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে আমরা ঠিক করে দেই। অনেক সময় একসাথে অনেক ফাইল আসলে দেখা হয় না। এরকম একটা কারণে হয়েছে। পরবর্তীতে আমাদের চোখে পড়ার পরপরই আমরা এটা চেঞ্জ করে দিয়েছি। আর উনারা আসলে এটা মিন করে লেখেননি। উনারা আসলে বুঝাতে চেয়েছেন, ঈদ মোবারক লেখা পতাকাকে উনারা ভাবসেন এটা ইসলামিক পতাকা। আর কিছু না।”
প্রশ্নকারির এক প্রশ্নের জবাবে জনাব মঈন দাবি (৫:২০ মিনিট থেকে) করেন, “সভায় এমন কোনো সিদ্ধান্তও হয় নাই। সভায় বলা হয়েছে, ঈদগাহ মাঠ জাতীয় পতাকা এবং ঈদ মোবারক লেখা পতাকা দিয়ে সজ্জিত করার বিষয়টা। এটা হচ্ছে সভার সিদ্ধান্ত। ঈদগাহ কমিটির যিনি ড্রাফট করেছেন তিনি ভুলে ঈদ মোবারক লেখা পতাকাকে ইসলামিক পতাকা ভেবেছেন।”
এ বিষয়ে জানতে আমরা Positive Expression পেজটির এডমিনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আমাদের জানান, তিনি প্রথমে জেলা প্রশাসককে ফোন করেন এ বিষয়ে। তবে তার ফোন ধরেন জেলা প্রশাসকের ব্যক্তিগত সহকারি পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি। তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন। পরবর্তীতে তিনিই পরামর্শ দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শেখ মঈনুল ইসলাম মঈনের সাথে কথা বলার।
পেজের এডমিন পরবর্তীতে জনাব মঈনের সাথে কথা বলেন।
পেজটির এডমিন রিউমর স্ক্যানারের কাছে উক্ত দুইটি কল রেকর্ড পাঠিয়েছেন যা রিউমর স্ক্যানার টিমের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
অনুসন্ধানের এই পর্যায়ে এসে দেখা যাচ্ছে, বাংলা ট্রিবিউনকে জেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলছেন, ইসলামিক পতাকা উত্তোলনের বিষয়টি রেখেই প্রজ্ঞাপন জারির পর আলোচিত বিষয়টি সংশোধন করে পুনরায় প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শেখ মঈনুল ইসলাম মঈনের দাবি, এটা ড্রাফট করার পর সংশোধন করা হয়।
অর্থাৎ, একই প্রতিষ্ঠান থেকেই একই বিষয়ে ভিন্ন মত পাওয়া যাচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিটি সংশোধিত শীর্ষক প্রমাণের খোঁজে
এ বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধান করতে গিয়ে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে গত ২৪ জুন দুপুর ৩ টা ২৩ মিনিটে প্রকাশিত একটি পোস্টে (আর্কাইভ) ঈদুল আযহার কর্মসূচির একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ছবিতে একই প্রজ্ঞাপন সদৃশ বিষয়বস্তু দেখা গেলেও ০২ নং ক্রমে শুধু জাতীয় পতাকা উত্তোলন শীর্ষক বাক্যই উল্লেখ পাওয়া যায়।
Screenshot source: Facebook
তবে, রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
আলোচিত প্রজ্ঞাপনটিতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ের সিল এবং স্বাক্ষর রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে তাই অনুসন্ধান করে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা-তুজ-জোহরার ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে গত ২৪ জুন সন্ধ্যা ৬ টা ৪৯ মিনিটে প্রকাশিত একটি পোস্টে (আর্কাইভ) ঈদুল আযহার কর্মসূচি সম্বলিত বিজ্ঞপ্তির দুইটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
এই বিজ্ঞপ্তিটিতেও ০২ নং ক্রমে শুধু জাতীয় পতাকা উত্তোলন শীর্ষক বাক্যই উল্লেখ পাওয়া যায়।
তবে উক্ত ছবিগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, বিজ্ঞপ্তির শুরুতেই লেখা রয়েছে, “একই তারিখ ও স্মারকে প্রতিস্থাপিত।”
Screenshot source: Facebook
অনুসন্ধানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একটি সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাই আমরা যেখানে বিজ্ঞপ্তির শুরুতে একই বাক্য লেখা রয়েছে।
Screenshot source: Chittagong District Website
রিউমর স্ক্যানার টিম এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে এই ধরনের নোটিশের সাথে সংশ্লিষ্ট বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানতে পেরেছে, পূর্বের বিজ্ঞপ্তিতে কোনো সংশোধন থাকলে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে উক্ত বাক্যটি লেখা হয়৷
অর্থাৎ, আলোচিত বিজ্ঞপ্তিটি জারি করেছিল জেলা প্রশাসন। যা পরবর্তীতে সংশোধন করে নতুন করে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।
অনুসন্ধান চলাকালে ফেসবুকের একটি পোস্টে (আর্কাইভ) একই সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পেয়েছি আমরা যেখানে সংশোধন সংশ্লিষ্ট উপরোক্ত বাক্যটি না থাকলেও ‘সংশোধিত’ শব্দটি উল্লেখ ছিল।
Image source: Facebook
রিউমর স্ক্যানার টিম এ বিষয়ে জানতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা-তুজ- জোহরাকে ফোন করলেও তিনি কথা বুঝতে পারছেন না বলে কেটে দেন। পরবর্তীতে হোয়াটসঅ্যাপে তাকে প্রশ্ন পাঠালে তিনি জেলা প্রশাসকের ফেসবুক প্রোফাইলে প্রকাশিত ছবিটি আমাদের কাছে পাঠান। কিন্তু আমরা তার কার্যালয়ের সিল সম্বলিত বিজ্ঞপ্তিটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাদের মেসেজ দেখেও কোনো উত্তর দেননি৷
আমরা এ বিষয়ে জানার জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার আবদুল্লাহ আল আমিন এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শেখ মঈনুল ইসলাম মঈনের সাথেও যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা কেউই উত্তর দেননি।
অর্থাৎ, সম্প্রতি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একটি কার্যবিবরণী সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন নিয়ে সুনির্দিষ্ট একটি দাবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। প্রজ্ঞাপনটিতে উল্লেখ করা ছিল যে, ঈদের দিন জাতীয় পতাকা ও ইসলামিক পতাকা উত্তোলন করতে হবে। রিউমর স্ক্যানারের দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত বিষয়ে জেলা প্রশাসনের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিটি সত্য এবং আলোচিত প্রজ্ঞাপনে এই বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে এবং সেখানে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ের সিল এবং স্বাক্ষরও রয়েছে। তবে পরবর্তীতে প্রজ্ঞাপনটি সংশোধন করে ইসলামিক পতাকা উত্তোলন বিষয়ক শব্দগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কার্টুন সিরিজ সিম্পসনস টাইটান ট্রাজেডি পূর্বেই অনুমান করেছিল শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, কার্টুন সিরিজ সিম্পসন এর আলোচিত ভিডিওটির সাথেও সম্প্রতি দুর্ঘটনার শিকার ডুবযান টাইটানের ঘটনার বেশকিছু অমিল রয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে কার্টুন সিরিজ সিম্পসনের আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটিতে প্রদর্শিত দুই আরোহী দুটি আলাদা ডুবোযানে করে সম্পদের সন্ধানে সমুদ্রের তলদেশে যায়। পরবর্তীতে সেখান থেকে প্রথম আরোহী সফলভাবে ফিরে গেলেও দ্বিতীয় আরোহী ফেরার পথে পাথরের সাথে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনায় তার ডুবোযানটি অক্সিজেন সংকটে পড়ে। তবে বিপদের সম্মুখীন হলেও পরবর্তীতে সেই আরোহী বেঁচে ফিরে আসে।
Screenshot: Twitter
ইউটিউবে প্রচারিত এই এপিসোডটির ফুল ভিডিও দেখুন এখানে।
অপরদিকে ডুবযান টাইটানের আরোহী ছিল মোট পাঁচজন এবং তাদের মধ্যে কেউই সম্পদের সন্ধানে সমুদ্রের তলদেশে যায়নি বরং তারা টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়েছিল। সেখানে শেষ পর্যন্ত তাদের কেউই বাঁচেনি। তাছাড়া অক্সিজেন সংকটের আগেই তারা ডুবযান বিস্ফোরণে মারা গেছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
অর্থাৎ, এখানে কার্টুন সিরিজ সিম্পসনের সাথে টাইটান ট্রাজেডির খুব সামান্য মিল থাকলেও অমিলের পরিমাণ অনেক বেশি এবং এতে কোনোভাবেই প্রমাণ হয় না যে, কার্টুন সিরিজ সিম্পসনস টাইটান ট্রাজেডি পূর্বেই অনুমান করেছিল। তাছাড়া সিম্পসনসের কার্টুন ভিডিওটিতে দেখানো ডুবোযানের কোনো নাম উল্লেখ করা হয়নি।
মূলত, সম্প্রতি কার্টুন সিরিজ সিম্পসনস টাইটান ট্রাজেডি পূর্বেই প্রেডিক্ট করেছিল দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত এপিসোডের সাথে টাইটান ট্রাজেডির বেশকিছু অমিল রয়েছে। সিম্পসনসে প্রচারিত কার্টুনে দুই আরোহী দুটি পৃথক ডুবোযানে সমুদ্রে যায় এবং এদের একজন আরোহী দুর্ঘটনার শিকার হলেও পরবর্তীতে তিনি বেঁচে যান। অপরদিকে টাইটানে ছিল পাঁচজন আরোহী এবং এদের সবাই বিস্ফোরণের কারণেই মারা গেছে বলে ধারণা করছে মার্কিন কোস্টগার্ড।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ জুন পানির নিচে থাকা জাহাজ টাইটানিকের শতাব্দী পুরোনো ধ্বংসাবশেষ দেখাতে পর্যটকদের নিয়ে ডুব দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওশানগেট এর ডুবোযানটাইটান, কিন্তু যাত্রার পৌনে দুই ঘণ্টার মধ্যে নিয়ন্ত্রক জাহাজের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে চালকসহ পাঁচ যাত্রী নিয়েনিখোঁজ হয় ডুবযানটি। পরবর্তীতে গত ২২ জুন মহাসাগরের তলদেশে ব্যাপক তল্লাশির পর উদ্ধারকারীরা ডুবযানটির ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার কথা জানান।
উল্লেখ্য, পূর্বেও সিম্পসন্স কার্টুনে তুরস্কের ভূমিকম্পের ইঙ্গিত দেওয়ার মিথ্যা দাবি শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, কার্টুন সিরিজ সিম্পসনসের একটি এপিসোডে পূর্বেই সাম্প্রতিক টাইটান ট্রাজেডি অনুমান করেছিল দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
প্রচারিত ভিডিওটিতে ডান পাশে রুমিন ফারহানার বর্তমান সময়ের একটি ভিডিও’র সাথে বাম পাশে সমুদ্র সৈকতে বিকিনি পরিহিত এক নারীর অপর একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা ২০১৩ সালে যখন ছাত্রী ছিলেন তখনকার ভিডিও এটি।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৩ সালের রুমিন ফারহানা দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত নারীটি বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা নয় বরং আলেক্সা ব্রুক রিভেরা নামের এক আমেরিকান মডেল এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারের একটি ভিডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় বিকৃত করে মুখমণ্ডল পরিবর্তন করে উক্ত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটির কিছু স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে lexibrookerivera নামের একটি ভেরিফাইড ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২০২২ সালের ০৭ মার্চ প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Instagram
এই ভিডিওটির সাথে রুমিন ফারহানার ২০১৩ সালে তিনি যখন ছাত্রী ছিলেন দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
ভিডিও দুটিতে নারীর পোশাক, ব্যাকগ্রাউন্ড, চুল এবং অঙ্গভঙ্গি সহ সবকিছুর হুবহু মিল পাওয়া যায়। তবে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় আলেক্সার মূল ভিডিওটি বিকৃত করে তার মুখমণ্ডল সরিয়ে রুমিন ফারহানার মুখমণ্ডলের অবয়ব বসানো হয়েছে।
এছাড়াও পরবর্তীতে আলেক্সা ব্রুক রিভেরার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ১৪ মার্চ প্রকাশিত রিলে একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
অর্থাৎ, বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানার ২০১৩ সালের ভিডিও দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি মূলত আমেরিকান মডেল ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার আলেক্সা ব্রুক রিভেরার।
মূলত, ফেসবুকে প্রচারিত একটি ভিডিওতে ডান পাশে রুমিন ফারহানার বর্তমান সময়ের একটি ছবির সাথে বাম পাশে সমুদ্র সৈকতে বিকিনি পরিহিত এক নারীর অপর একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়, রুমিন ফারহানা ২০১৩ সালে যখন ছাত্রী ছিলেন তখনকার ভিডিও এটি। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি আমেরিকান মডেল এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার আলেক্সা ব্রুক রিভেরার। প্রকৃতপক্ষে আলেক্সার ভেরিফাইড ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে প্রচারিত ভিডিওটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট করে ভিডিওতে আলেক্সার মুখমণ্ডলের স্থানে বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানার মুখমণ্ডলের অবয়ব বসিয়ে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি এডিটেড ভিডিও শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, ২০১৩ সালের রুমিন ফারহানা দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওটি রুমিন ফারহানার নয় এবং ভিডিওটি সম্পূর্ণ এডিটেড বা বিকৃত।
সম্প্রতি বাংলাদেশ স্কাউটসের বরাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘রেড এলার্ট’ শীর্ষক একটি তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।
পোস্টগুলোতে যা দাবি করা হচ্ছেঃ
‘সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে।।।।।। দৃষ্টি আকর্ষন করছি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন…… যদি আপনার বাসায় অপরিচিত কেউ এসে বলে যে আমরা মেডিকেল কলেজ থেকে এসেছি। আপনার রক্তের গ্লুকোজ বা ডায়াবেটিস আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখব, কোন ফি লাগবে না। ভুলেও পরীক্ষাটা করতে দিবেন না। শীঘ্রই ৯৯৯ কল দিবেন কিংবা পুলিশকে অবহিত করবেন। কারণ তারা আইএস জঙ্গি। তারা আপনার রক্তে এইচ আইভি এইডস ভাইরাস প্রবেশ করিয়ে দিবে। বন্ধু এবং আত্মীয়-স্বজনদের কাছে এটা শেয়ার করুন।’
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশ স্কাউটসের বরাতে ফেসবুকে ‘রেড এলার্ট’ শীর্ষক মেডিকেল শিক্ষার্থী পরিচয়ে কেউ বাসায় এসে রক্তের গ্লুকোজ বা ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে চাইলে তা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি ভিত্তিহীন। প্রকৃতপক্ষে ২০১৮ সাল থেকেই বিভিন্ন সূত্র উল্লেখ করে উক্ত দাবিটি ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।
একই দাবির বিভিন্ন সূত্র
এ নিয়ে অনুসন্ধানে ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পুলিশের সূত্রে আলোচিত দাবির অনুরূপ সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। তবে পোস্টটি থেকে বাংলাদেশ পুলিশ কখন এই বিজ্ঞপ্তিটি দিয়েছে এর পক্ষে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot: Md Aminul Islam Facebook Post
বাংলাদেশ পুলিশকে সূত্র উল্লেখ করে সে সময়ে প্রকাশিত এমন আরও কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷
পরবর্তী অনুসন্ধানে ২০১৯ সালেও একই দাবি সম্বলিত পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। তবে এবার সূত্র হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থানাকে উল্লেখ করতে দেখা যায়।
অপরদিকে ২০২০ সালে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোতে কোনো তথ্যসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। ২০২০ সালে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) ও এখানে (আর্কাইভ)।
Image Collage: Rumor Scanner
এছাড়া অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০২২ সালে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোতে তথ্যসূত্র হিসেবে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থানাকে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২২ সালে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
Image Collage: Rumor Scanner
এসব পোস্টের সূত্রে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে কোনো গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্যের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
২০২৩ সালে আলোচিত দাবিটি বাংলাদেশ স্কাউটসের বরাতে প্রচার হলে রিউমর স্ক্যানার টিম স্কাউটসের জনসংযোগ ও মার্কেটিং বিভাগের উপ পরিচালক মো: মশিউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করে। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে স্কাউটসের উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য শাখার পরিচালকের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
পরবর্তীতে স্কাউটসের জাতীয় সদর দফতরের পরিচালক (সমাজ উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ‘না, আমরা এমন কোনো রেড এলার্ট দেইনি। কে বা কারা এটা ছড়াচ্ছে আমাদের জানা নেই।’
মূলত, মেডিকেল শিক্ষার্থী পরিচয়ে কেউ বাসায় এসে রক্তের গ্লুকোজ বা ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে চাইলে তা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি বিভিন্ন সূত্র ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বাংলাদেশ স্কাউটসের বরাতেও একই তথ্য প্রচার করা হলে রিউমর স্ক্যানার টিম থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এই ধরনের কোনো রেড এলার্ট দেননি বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেন।
সুতরাং, মেডিকেল শিক্ষার্থী পরিচয়ে কেউ বাসায় এসে রক্তের গ্লুকোজ বা ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে চাইলে তা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “ব্রাজিলের সর্বকালের সেরা একাদশ ঘোষণা, নেই রোনালদিনহো-নেইমার” শীর্ষক শিরোনামে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘চ্যানেল২৪’ এর ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনের বিস্তারিত অংশে যা দাবি করা হচ্ছে
ব্রাজিলই একমাত্র দল যারা পরপর তিনবার বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে উঠেছে। ১৯৯৪, ১৯৯৮ এবং ২০০২ সালে। এরমধ্যে দুই বারই শিরোপা জিতেছে। ১৯৩০ সালের পর বিশ্বকাপের আসর থেকে কখনোই বাদ পড়েনি ব্রাজিল।
উক্ত দাবিতে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনটি দেখুন চ্যানেল ২৪।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্রাজিল পরপর তিনবার ফুটবল বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠা একমাত্র দল নয় বরং ব্রাজিল ছাড়াও জার্মানি (তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি) পরপর তিনবার ফুটবল বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, পশ্চিম জার্মানি (বর্তমান জার্মানি) ১৯৮২, ১৯৮৬ এবং ১৯৯০ সালে টানা তিনবার ফুটবল বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচ খেলে।
Screenshot from ‘The New York Times’
এছাড়া, ‘Olympics’ এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে “FIFA World Cup final: Records, stats and FAQs” শীর্ষক শিরোনামে গত ২৮ মে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায় জার্মানির সাবেক ফুটবল তারকা পিরে লিটবার্সকি ১৯৮২, ১৯৮৬ এবং ১৯৯০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনালের স্কোয়াডে ছিলেন। অর্থাৎ, এ বছর গুলোতে জার্মানি টানা তিনবার ফুটবল বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছিলো।
Screenshot from Olympics website
এছাড়া গুগলে অনুসন্ধানের মাধ্যমেও জার্মানির ১৯৮২, ১৯৮৬ এবং ১৯৯০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ ফাইনালে অংশগ্রণের সত্যতা পাওয়া যায়।
১৯৮২ সালে জার্মানি (তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি) বনাম ইতালির ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
Screenshot from Google
১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনা বনাম জার্মানির (তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি) মধ্যকার ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
Screenshot from Google
১৯৯০ সালে জার্মানি (তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি) বনাম আর্জেন্টিনার খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
Screenshot from Google
অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে এটা স্পষ্ট যে, ব্রাজিল পরপর তিনবার ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠা একমাত্র দল নয়।
মূলত, ইউরোপ মহাদেশের দেশ জার্মানি (তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি) ১৯৮২, ১৯৮৬ এবং ১৯৯০ সালে টানা তিনবার ফুটবল বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলে। আর লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল ১৯৯৪, ১৯৯৮ এবং ২০০২ সালে টানা তিনবার বিশ্বকাপ ফাইনালে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু সম্প্রতি ব্রাজিলই একমাত্র দল যারা পরপর তিনবার ফাইনালে উঠেছে শীর্ষক দাবিতে দেশীয় মূলধারার সংবাদমাধ্যম চ্যানেল২৪ এর ওয়েবসাইটে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন সময় ফুটবল সংক্রান্ত বিষয়ে ইন্টারনেটে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হলে সেসময় সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনগুলো দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, ব্রাজিলই একমাত্র দল যারা পরপর তিনবার ফাইনালে উঠেছে শীর্ষক দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মিয়ানমারে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত উক্ত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং এটি ২০১১ সালের ২৪ মার্চ মিয়ানমারের বার্মায় সংঘটিত এক ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত একটি সেতু ও সড়কের ছবি।
অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে কানাডার সংবাদমাধ্যম CBC NEWS এর ওয়েবসাইটে ২০১১ সালের ২৫ মার্চ ‘Burma quake death toll reported at 73’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: CBC NEWS
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এটি মিয়ানমারের বার্মায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত একটি রাস্তা ও সেতুর ছবি। ২০১১ সালে ৬.৮ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ৭৩ জন মানুষ নিহত ও ১১১ জন আহত হয়েছিল।
পরবর্তীতে একই তারিখে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম REUTERS এর ওয়েবসাইটে ‘Quake kills 74 in Myanmar as aftershock rattles Thailand’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: REUTERS
উক্ত প্রতিবেদন থেকেও মিয়ানমারের পুরোনো ভূমিকম্প সম্পর্কে একই তথ্য জানা যায়।
Image Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, মিয়ানমারে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বারো বছর পূর্বের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
পাশাপাশি, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটির ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি বরং কিছু গণমাধ্যমে ছবিটি সংগৃহীত এবং কোনো কোনো গণমাধ্যমে ছবির ক্যাপশনে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিটি ব্যবহার করে সংগৃহীত উল্লেখ কিংবা কোনো তথ্যই উল্লেখ না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই ছবিটি মিয়ানমারের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের বলে প্রতীয়মান হয়। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
মূলত, গত ২০ জুন মিয়ানমারে ভূমিকম্পের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে একটি ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ও সড়কের ছবি প্রচারের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। ২০১১ সালের ২৪ মার্চ মিয়ানমারের বার্মায় ভূমিকম্পের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সেতু ও সড়কের ছবি এটি। গণমাধ্যমের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলোতে আলোচিত ছবিটির ক্যাপশনে পুরোনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য না দেওয়ায় ছবিটি সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও কঙ্গোতে ভারী বর্ষণে বন্যার ঘটনায় গণমাধ্যমে একাধিক পুরোনো ছবি ব্যবহার করা হলে সেসময় বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, মিয়ানমারের সাম্প্রতিক সময়ে ভূমিকম্পের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বারো বছর পূর্বের ছবি প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।