সম্প্রতি, জাতীয় গণমাধ্যম দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম কপি করে তা ফেসবুকে পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, দৈনিক যুগান্তর “জনগণের নীরব ভোট প্রত্যাখ্যান, সরকারের পরাজয়” শীর্ষক মন্তব্য জানিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুগান্তরের সূত্রে প্রচারিত তথ্যটি যুগান্তরের নিজস্ব কোনো তথ্যের ভিত্তিতে করা সংবাদ নয় বরং গত ০৭ জানুয়ারি ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের দেওয়া বক্তব্যকে কোট করে প্রকাশিত সংবাদকে যুগান্তরের নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে করা সংবাদ দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক যুগান্তরের ওয়েবসাইটে গত ০৭ জানুয়ারি “জনগণের নীরব ভোট প্রত্যাখ্যান, সরকারের পরাজয়’’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আলোচিত প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “৭ জানুয়ারি দুপুরে প্রেসক্লাব, পল্টন এলাকায় ‘শেখ হাসিনার পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে ১২ দলীয় জোট আয়োজিত হরতাল ও গণ-কারফিউর সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করে নেতাকর্মীরা। তখন ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দরা বলেন, আওয়ামী লীগের ‘ডামি’ নির্বাচনে জনগণের ভোট বর্জন ইতিহাসের মাইল ফলক হয়ে থাকবে।
তারা বলেছেন, আওয়ামী লীগের এখনই নাকে খত দিয়ে পদত্যাগ করা উচিত। কারণ জনগণ ভোট কেন্দ্রে যায়নি। দেশের মানুষ এই জালিম সরকারকে লাল কার্ড দেখিয়ে দিয়েছে। তাই জনগণের নীরব ‘ভোট প্রত্যাখানে’ জাতির বিজয় এবং ফ্যাসিবাদ সরকারের পরাজয়।
তারা আরো বলেনবলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সেই ভোট ডাকাতির কলঙ্কজনক অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। এই সরকার দেশ ও জনগণের জন্য একটি মহাবিপদ ডেকে এনেছে। তাই এই আওয়ামী ফ্যাসিবাদ সরকারের বিদায় না করা পর্যন্ত জনগণের মুক্তি আসবে না। আমরা শেখ হাসিনার পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনসহ একদফার যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাব।
এ সময় ভোট বর্জন, হরতাল ও গণ-কারফিউ পালন করায় দেশবাসীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ১২ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ।”
অর্থাৎ, আলোচিত প্রতিবেদনের শিরোনাম ১২ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দের বক্তব্যের অংশ কোট করে বানানো হয়েছে। এখানে, যুগান্তরের নিজস্ব কোনো সূত্র বা তথ্য নেই।
একই ঘটনায় যুগান্তরের মতোই প্রায় একই শিরোনামে দেশের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন দেখুন আরটিভি, এনটিভি, বাংলা নিউজ২৪ এবং ঢাকা টাইমস।
একই তথ্যে ভিডিও প্রতিবেদন দেখুন- চ্যানেল আই।
মূলত, গত ৭ জানুয়ারি ঢাকায় ‘শেখ হাসিনার পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে ১২ দলীয় জোটের ডাকা হরতালের সমর্থনে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দরা বলেন, আওয়ামী লীগের ‘ডামি’ নির্বাচনে জনগণের ভোট বর্জন ইতিহাসের মাইল ফলক হয়ে থাকবে। উক্ত বিক্ষোভ মিছিলে ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের দেওয়া বক্তব্যকে শিরোনামে কোটেশনের মাধ্যমে উদ্বৃত্ত করে যুগান্তরসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। যেখানে যুগান্তরের শিরোনামটি ছিল “‘জনগণের নীরব ভোট প্রত্যাখ্যান, সরকারের পরাজয়’। যা পরবর্তীতে কপি হয়ে যুগান্তরের নিজস্ব মতামত সম্বলিত সংবাদ প্রতিবেদন দাবিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে নেটিজেনরা উক্ত মন্তব্যকে যুগান্তরের মন্তব্য ধরে নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া জানান।
সুতরাং, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ১২ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দের দেওয়া বক্তব্যকে কোট করে প্রকাশিত সংবাদকে যুগান্তরের নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে করা সংবাদ দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Jugantor- জনগণের নীরব ভোট প্রত্যাখ্যান, সরকারের পরাজয়
- Rumor Scanner’s Own Analysis