সম্প্রতি, “৭০ উইকেটের বিনিময়ে অর্জন ৪০%, তার মধ্যে ৩৮% জাল, ২% কাস্ট, গত ১৫ বছরে এটাই তাদের অর্জন…! সাংবাদিক হিসেবে আমি লজ্জিত।” শীর্ষক একটি মন্তব্য জার্মান ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে’র বাংলা বিভাগের প্রধান খালেদ মুহিউদ্দীন এর মন্তব্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে টিকটকের ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে ইউটিউবের ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ডয়েচে ভেলের সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন এরূপ কোনো মন্তব্য করেননি বরং তিনি ০৭ জানুয়ারি দুুপুরে ‘দুইটি কেন্দ্র বাদ দিলে ঢাকার যে কয়টি ভোট কেন্দ্র DW বাংলা টিম ঘুরেছে সেগুলোতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে বলে একটি মন্তব্য করেছিলেন।
অনুসন্ধানে “৭০ উইকেটের বিনিময়ে অর্জন ৪০%, তার মধ্যে ৩৮% জাল, ২% কাস্ট। ১৫ বছরে এটাই তাদের অর্জন…!” শিরোনামের বিভিন্ন পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। এরূপ কিছু পোস্টে DW বাংলার একটি ভিডিও যুক্ত করতেও দেখা গেছে। তবে প্রথমদিকের এ পোস্টগুলোর শিরোনামে ওই মন্তব্যকে খালেদ মুহিউদ্দীন এর মন্তব্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি।
যদিও পরবর্তীতে তা বিবর্তিত হয়ে ওই মন্তব্য খালেদ মুহিউদ্দীন এর মন্তব্য হিসেবে প্রচারিত হচ্ছে।
যে ভিডিওটি যুক্ত করে প্রচারিত হচ্ছে সেটি মূলত DW বাংলার গত ০৭ জানুয়ারির ভোটের দিনে দুপুর ১.৫৩ মিনিটে শুরু হওয়া “ভোটের পরস্থিতি কেমন দেখা যাচ্ছে? দেখুন লাইভ, জানান মতামত।” শিরোনামের একটি লাইভে খালেদ মুহিউদ্দীনের দেওয়া বক্তব্য।
ওই ভিডিওতে ২ শতাংশ ভোট পড়েছে সংক্রান্ত খালেদ মুহিউদ্দীন এর একটি বক্তব্য পাওয়া যায়, যেখানে তিনি বলেছেন– “জাহাঙ্গীর কবীর নানক ও ইলিয়াস মোল্লার বাসার কেন্দ্র দুইটি বাদ দিলে আমরা ঢাকার যত ভোট কেন্দ্র ঘুরেছি সেগুলোতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২% এর মতো ভোট পড়েছে।”
তবে পুরো ভিডিওতে ‘৭০ উইকেটের বিনিময়ে অর্জন ৪০%, তার মধ্যে ৩৮% জাল, ২% কাস্ট, গত ১৫ বছরে এটাই তাদের অর্জন, কিংবা সাংবাদিক হিসেবে আমি লজ্জিত।’ তার এমন কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রিউমর স্ক্যানার টিম এ সংক্রান্ত বিশ্লেষণে দেখেছে, ২ শতাংশ ভোট কাস্টিং সংখ্যাটির উল্লেখ যেসকল পোস্টগুলোতে করা হয়েছে, সেই পোস্টগুলো ওই লাইভের পরই করা হয়েছে৷ এ বিষয়টি ওই দাবিতে উল্লেখ করা ৪০ শতাংশ শীর্ষক সংখ্যাটি থেকেও বোঝা যায়। এই ৪০ শতাংশের সংখ্যাটি ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া সংখ্যা।
খালেদ মুহিউদ্দীন এর ওই লাইভ বক্তব্যের ভিডিওটি বিকেলের পর বিভিন্ন শিরোনামে ব্যাপক প্রচারিত হয়। ফলে সন্ধ্যার পর থেকে কিছু পোস্টে নির্বাচনের সমালোচনা করতে গিয়ে ২ শতাংশ শীর্ষক সংখ্যাটির উল্লেখ দেখা যায়। এমন একটি পোস্ট নিচের স্ক্রিনশটে দেখা যাচ্ছে। ম্যানুয়াল অনুসন্ধানে এই পোস্টটি এই শিরোনামের সম্ভাব্য প্রথম পোস্ট হিসেবে পাওয়া যায়।
গত ৭ জানুয়ারি সন্ধা ৭.৩০ মিনিটে দেওয়া ওই পোস্টে দেখা যায় পোস্টদাতা একই শিরোনাম দিলেও তিনি তার শিরোনামে এটিকে খালেদ মুহিউদ্দীন এর বক্তব্য হিসেবে উল্লেখ করেননি৷ তিনি শিরোনামে ৩৮ শতাংশ ভোট জাল হওয়ার দাবি করেছেন৷
ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া ৪০ শতাংশ ভোট পড়ার তথ্য এবং খালেদ মুহিউদ্দীন এর দুপুরের লাইভের ২ শতাংশ সংখ্যা থেকে বিয়োগ করে ৩৮ শতাংশ সংখ্যাটা এসে থাকতে পারে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তবে খালেদ মুহিউদ্দীন এর বলা ২ শতাংশ ভোট পড়ার হারটি ছিল ঢাকার কিছু কেন্দ্রের ১২টা পর্যন্ত ঘুরে কেমন ভোট ওই সময় পড়েছে তার পর্যবেক্ষণ। এটি সারাদেশের ও সারাদিনের ভোটের পর্যবেক্ষণ নয়।
পরবর্তীতে মন্তব্যটি সম্পর্কে জানতে চেয়ে সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে এমন কোনো মন্তব্য করেননি বলে নিশ্চিত করেছেন।
মূলত, গত ০৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন DW বাংলার দুপুরের একটি লাইভে খালেদ মুহিউদ্দীন ঢাকার কিছু কেন্দ্র ঘুরে ১২টা পর্যন্ত কেমন ভোট পড়েছে তার পর্যবেক্ষণ জানাতে গিয়ে ২ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে বলে জানান। এছাড়াও ভোট নিয়ে আরও বেশকিছু আলোচনা করেন। তার ওই লাইভে দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও পরবর্তীতে অনেকে প্রচার করে। ওই ভিডিওতে তার বলা ২ শতাংশ সংখ্যাটি নির্বাচনের সমালোচনা করতে গিয়ে একটি ‘৭০ উইকেটের বিনিময়ে অর্জন ৪০%, তার মধ্যে ৩৮% জাল, ২% কাস্ট, গত ১৫ বছরে এটাই তাদের অর্জন’ শিরোনামেও কিছু পোস্ট হয়। পরবর্তীতে এই শিরোনাম বিবর্তিত হয়ে ‘সাংবাদিক হিসেবে আমি লজ্জিত’ অংশ যুক্ত হয়ে এই শিরোনাম খালেদ মুহিউদ্দীন এর মন্তব্য হিসেবে প্রচার হয়।
সুতরাং, ৭০ উইকেটের বিনিময়ে অর্জন ৪০%, তার মধ্যে ৩৮% জাল, ২% কাস্ট, গত ১৫ বছরে এটাই তাদের অর্জন…! সাংবাদিক হিসেবে আমি লজ্জিত। শীর্ষক মন্তব্য খালেদ মুহিউদ্দীন করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Rumor Scanner Investigation
- DW Live Video
- Statement from Khaled Muhiuddin