Home Blog Page 559

বোরকা পরে আসায় ছাত্রীদের পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ার ঘটনাটি ভারতের

সম্প্রতি ‘বোরকা পরে আসায় পরীক্ষায় বসতে দেয়া হল না ছাত্রীদের’ শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বোরকা পরে আসায় ছাত্রীদেরকে পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশের নয় বরং ঘটনাটি ভারতের তেলেঙ্গানা প্রদেশের রাজধানী হায়দ্রাবাদের।

অনুসন্ধানের শুরুতে ফেসবুকে প্রকাশিত পোস্টগুলোর সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দেশীয় একাধিক গণমাধ্যমে (ডেইলি ক্যাম্পাস, দৈনিক আমাদের সময়, জুম বাংলা) ‘বোরকা পরে না আসায় পরীক্ষায় বসতে দেয়া হল না ছাত্রীদের’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: The Daily Campus 

প্রচারিত প্রতিবেদনগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, সংবাদ গুলোর শিরোনামে ঘটনাটির স্থান উল্লেখ করা না হলেও প্রতিবেদনগুলোর বিস্তারিত অংশে এটি ভারতের হায়দ্রাবাদের ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

অন্যদিকে একাধিক ফেসবুক পেজ যথাযথভাবে যাচাই না করে অথবা অধিক রিচ পাওয়ার আশায় বিষয়টির বিস্তারিত উল্লেখ না করে গণমাধ্যমের শিরোনাম কপি পেস্ট করে ফেসবুকে প্রচার করেছে। ফলে ঘটনাটি ভারতের হলেও স্থানের নাম উল্লেখ না করে বাংলাদেশে প্রচার করায় বিষয়টি বাংলাদেশের ভেবে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে এবং বাংলাদেশের নেটিজেনরা বিষয়টি সঠিকভাবে না জেনেই ঘটনাটি বাংলাদেশের মনে করেছেন।

এবিষয়ে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলোর কমেন্টবক্স বিশ্লেষণ করে নেটিজেনদের ঘটনাটি বাংলাদেশের ভেবে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করতে দেখা যায়।

Image Collage by Rumor Scanner

পরবর্তীতে আলোচিত বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম Ei Samay এর ওয়েবসাইটে গত ১৭ জুন ‘ফের হিজাব বিতর্ক! তেলেঙ্গনায় বোরখা পরে আসা কলেজ পরীক্ষার্থীদের হলে ঢুকতে ‘না’ কর্তৃপক্ষের’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Ei Samay

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বোরখা পরে আসার কারণে ছাত্রীদের একাংশকে পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হায়দরাবাদের কেভি রাঙ্গা রেড্ডি কলেজের বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে বোরখা খোলার পরেই ছাত্রীদেরকে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেওয়া হয়।

এছাড়া একই দিনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম India Today-র ওয়েবসাইটে  ‘Burqa-clad students denied entry to Hyderabad college, T’gana minister stokes controversy with ‘short dress’ remark’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত  প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। 

Screenshot: India Today 

পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে বাংলাদেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বোরকা পরে আসায় ছাত্রীদেরকে পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, বোরকা পরে আসায় ছাত্রীদেরকে পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়।

মূলত, সম্প্রতি ভারতের হায়দ্রাবাদের একটি কলেজে বোরকা পরে আসায় ছাত্রীদের পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরবর্তীতে বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমের সংবাদের শিরোনামে ঘটনাটির স্থান উল্লেখ না প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে একাধিক ফেসবুক পেজেও বিষয়টি স্থানের নাম উল্লেখ না করে প্রচার করা হয়। এতে বিষয়টি বাংলাদেশের ঘটনা ভেবে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত  নোটিশে বলা হয়, বাংলা বিভাগের সব শিক্ষার্থীকে জানানো যাচ্ছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলা বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটি সর্বসম্মতভাবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী বাংলা বিভাগের প্রতি ব্যাচের সংযোগ ক্লাস (টিউটোরিয়াল প্রেজেন্টেশন), মিডটার্ম পরীক্ষা, চূড়ান্ত পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীর পরিচয় শনাক্তের জন্য কানসহ মুখমণ্ডল পরীক্ষা চলাকালীন সময় দৃশ্যমান রাখতে হবে।’ পরবর্তীতে উক্ত সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আইনজীবী ফয়জুল্লাহ ফয়েজের মাধ্যমে  ৩ শিক্ষার্থী হাইকোর্টে রিট করেন। এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি নিয়ে গত ২৮ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ঐনোটিশের কার্যকারিতা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। পরবর্তীতে হাইকোর্টের ওই আদেশ বাতিল চেয়ে আপিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ গত ২৯ মে  হাইকোর্টের ঐ আদেশ স্থগিত করে পরীক্ষা ও প্রেজেন্টেশন চলাকালে প্রত্যেক ছাত্রীর কানসহ মুখমণ্ডল খোলা রাখতে হবে বলে আদেশ দেয় আপিল বিভাগ এবং সেই সঙ্গে আগামী ২ মাসের মধ্যে হাইকোর্টে চলমান এ সংক্রান্ত রিট চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, পূর্বেও ভারতের ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ দুই তরুণের চাকরি না পাওয়ায় চায়ের দোকান দেওয়ার ঘটনাকে বাংলাদেশে স্থানের নাম উল্লেখ ব্যতীত প্রচারের ফলে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ায় সেসময় বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, ভারতের হায়দ্রাবাদের একটি কলেজে বোরকা পরে আসায় ছাত্রীদেরকে পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশে স্থানের নাম ভারত উল্লেখ না করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

ইন্টার মায়ামির হয়ে মেসির প্রথম ম্যাচে জোড়া গোল দাবিতে পুরানো ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, “ইন্টার মায়ামি থেকে মেসির প্রথম ম্যাচে জোড়া গোল লিওনেল মেসির” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইন্টার মায়ামি ক্লাবের হয়ে মেসির প্রথম ম্যাচে জোড়া গোল করার দাবিটি সত্য নয় বরং ২০২০ সালে বার্সেলোনা বনাম জিরোনার ফুটবল ম্যাচের ভিডিওকেডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তার সম্পাদনার মাধ্যমে ইন্টার মায়ামির স্কোরকার্ড বসিয়ে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ‘BBC’ এ “Lionel Messi to join Inter Miami after leaving Paris St-Germain” শীর্ষক শীরোনামে গত ৭ জুন তারিখে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ফুটবল তারকা লিওনেল মেসি আমেরিকার ফুটবল লীগ মেজর সকার লীগের দল ইন্টার মায়ামিতে যোগ দিয়েছেন।

Screenshot from ‘BBC’

এছাড়া অনুসন্ধানে আরো জানা যায়,লিওনেল মেসি মেজর সকার লীগে যোগদান করার পর ইন্টার মায়ামি মাত্র দুটি ম্যাচ খেলে। 

Screenshot from Google

ইন্টার মায়ামি তাদের দুটি ম্যাচের প্রথমটি খেলে গত ৮ জুন বার্নিংহাম লেজিওন এফসি এর বিপক্ষে এবং অপর ম্যাচ খেলে ১১ জুন নিউ ইংল্যান্ড এর বিপক্ষে। তবে এই দুই ম্যাচের লাইন আপের একটিতেও মেসির নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি।

৮ জুন তারিখে বার্নিংহাম লেজিওন এফসির বিপক্ষে ইন্টার মায়ামি ফুটবল ক্লাবের একাদশ:

Screenshot from Google

১১ জুন নিউ ইংল্যান্ড এর বিপক্ষে ইন্টার মায়ামি ফুটবল ক্লাবের একাদশ:

Screenshot from Google

ইন্টার মায়ামি থেকে মেসির প্রথম ম্যাচে জোড়া গোল করার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর প্রাসঙ্গিক কি-ফ্রেম ব্যবহার করে রিভার্স ইমেজ সার্চ অনুসন্ধানের মাধ্যমে বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাবের ইউটিউব চ্যানেলে “HIGHLIGHTS AND REACTION | Barca 3-1 Girona” শীর্ষক ক্যাপশনে ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ভিডিওর সাথে হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Image comparison by Rumor Scanner

ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরে বার্সেলোনো ফুটবল ক্লাব জিরোনা ফুটবল ক্লাবের সাথে একটি প্রীতি ম্যাচ খেলে। সেই ম্যাচে লিওনেল মেসি দুইটি এবং ফিলিপে কোতিনহো একটি গোল করেন।

মূলত, গত ৭ জুন লিওনেল মেসি আমেরিকার ফুটবল লীগ মেজর সকার লীগের দল ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেন। কিন্তু এ পর্যন্ত মেসি ইন্টার মায়ামির হয়ে একটি ম্যাচেও অংশগ্রহণ করেননি। সম্প্রতি, ইন্টার মায়ামি থেকে মেসির প্রথম ম্যাচে জোড়া গোল করার দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত বার্সেলোনো ফুটবল ক্লাব বনাম জিরোনা ফুটবল ক্লাবের প্রীতি ম্যাচের।

প্রসঙ্গত, এর আগেও ফুটবল তারকা লিওনেল মেসিকে নিয়ে ইন্টারনেটে ভুল তথ্য প্রচার করা হলে সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত বার্সেলোনো বনাম জিরোনা ফুটবল ক্লাবের প্রীতি ম্যাচের ভিডিওর স্কোরকার্ড এডিট করে ইন্টার মায়ামি ফুটবল ক্লাবে মেসির প্রথম জোড়া গোলের ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

পিরিয়ড মিথ: নারীদের নারিকেল, শসা, ঠান্ডা পানি খাওয়া এবং শ্যাম্পু ব্যবহারে বাধা নেই

বিগত কয়েক বছর ধরেই কতিপয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হচ্ছে, নারীদের পিরিয়ডের সময় নারিকেল, শসা এবং ঠান্ডা পানি খাওয়া যাবে না।

উক্ত দাবিতে ২০২২ সালে কতিপয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন সময় টিভি, জাগো নিউজ২৪

একই দাবিতে ২০১৯ সালে কতিপয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন সময়ের আলো, ডেইলি বাংলাদেশ, অধিকার নিউজ। 

একই দাবিতে ২০১৮ সালে কতিপয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন যুগান্তর, একুশে টিভি

উক্ত দাবিগুলোর সাথে পিরিয়ডে শ্যাম্পুও ব্যবহার করা যাবে না বলে আরেকটি দাবি ফেসবুকের একাধিক পোস্টে খুঁজে পাওয়া যায়। ফেসবুকে এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’র ২০২২ সালের এক প্রতিবেদনেও দাবি করা হয়, “পিরিয়ডের সময় চুলের গোড়া আলগা হয়ে যায়, ফলে লোমকূপ উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। এ সময় চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার না করাই ভালো।”

একই দাবিতে ইউটিউবের একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নারীদের পিরিয়ডের সময় নারিকেল, শসা ও ঠান্ডা পানি খাওয়া যাবে না এবং শ্যাম্পু ব্যবহার করা যাবে না শীর্ষক দাবিগুলো সঠিক নয় বরং কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই বিগত কয়েক বছর ধরেই উক্ত ভিত্তিহীন দাবিগুলো প্রচার হয়ে আসছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অধিকাংশ প্রতিবেদনেই আলোচিত তথ্যটির উৎস হিসেবে বোল্ডস্কাই এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। 

পরবর্তীতে অনুসন্ধান করে ভারতের লাইফ স্টাইল বিষয়ক সাইট ‘boldsky’ এ ২০১৭ সালের ১৭ মার্চ Don’t Do This When You Have Periods; It Can Be Dangerous For Your Health শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের সেদিনেরই (১৭ মার্চ, ২০১৭) ইন্টারনেট আর্কাইভ সংস্করণ খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনে পিরিয়ডের সময় শসা খাওয়ার বিষয়ে দাবি করা হয়, “এই সময়ে (পিরিয়ড) শসা আপনার জন্য খারাপ হতে পারে, কারণ শসাতে থাকা উপাদানগুলোর কারণে জরায়ু প্রাচীরে রক্ত জমতে পারে।”

একই প্রতিবেদনে ঠান্ডা পানির বিষয়ে দাবি করা হয়, “আপনার অবশ্যই এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে যেহেতু এসব খেলে জরায়ু প্রাচীরে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। ৫-১০ বছর পর এখান থেকে সিস্ট বা ক্যান্সার কোষ তৈরি হতে পারে।” 

Screenshot collage: Rumour Scanner 

প্রতিবেদনে এই তথ্যগুলোর কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি, দেওয়া হয়নি কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বা ডাক্তারের মত। তাছাড়া, বাংলাদেশের কতিপয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বোল্ডস্কাইয়ের প্রতিবেদনে বরাতে নারিকেল না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলেও মূল প্রতিবেদনে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি। 

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিশ্বের একাধিক ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা পিরিয়ড বিষয়ে আলোচিত এই মিথগুলোর বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েছে। এএফপি ফ্যাক্টচেক যেমন ম্যাক্সিকোর দুই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ Dra. Anaïs Reyes Navarroa এবং Dr. Kiyoshi Arturo Macotela Nakagaki এর সাথে কথা বলেছে। 

Dr. Kiyoshi Arturo Macotela Nakagaki বলছিলেন, “নারকেল খাওয়া বা বরফ ঠাণ্ডা পানি পান করার সাথে পিরিয়ডে সমস্যার কোনো সম্পর্ক নেই। এগুলোর কারণে বন্ধ্যাত্ব বা ক্যান্সারও হয় না। এসবের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও নেই।” সংস্থাটিকে Dra. Anaïs Reyes Navarroa ও একই মত (শসার বিষয়েও) দিয়েছেন।

Screenshot source: AFP Fact Check

শ্যাম্পুর বিষয়ে জানতে চাইলে Dra. Anaïs Reyes Navarroa বলছিলেন, “এ বিষয়ে কিছুই বলার নেই। এটা অনেকটা কৌতুকের (jokes) মতো শোনাচ্ছে।”

আরেক ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা Afria Check কেও একই মত জানিয়েছেন নাইজেরিয়ার স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ Dr Aloysius I. Inofomoh।

Screenshot source: Afria Check

ভারতের ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা The Quint ও সেদেশের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ Dr. Shilpa Agrawal এর সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছে। তিনিও একই মত দিয়ে জানিয়েছেন, পিরিয়ডের সাথে নারকেল, শসা, ঠান্ডা পানি বা শ্যাম্পুর কোনো সম্পর্ক নেই। 

এ বিষয়ে আরও অনুসন্ধান করে ইউনিসেফের ওয়েবসাইটে পিরিয়ড বিষয়ে প্রকাশিত একটি গাইডলাইনে পিরিয়ড বিষয়ক বেশকিছু মিথের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে ঠান্ডা পানি বিষয়ক আলোচিত তথ্যটিরও উল্লেখ পাওয়া যায়। 

ইউনিসেফ বলছে, ঠান্ডা পানি খেলে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায় বলে মিথের প্রচলন দেখা যায় তা সঠিক নয়। ঠাণ্ডা পানির সঙ্গে ঋতুচক্রের কোনো সম্পর্ক নেই। পিরিয়ড সাথে প্রজননতন্ত্র জড়িত আর ঠান্ডা পানির সম্পর্ক পরিপাকতন্ত্রের সাথে। এই দুই তন্ত্র ভিন্ন হওয়ায় এদের একটির সাথে অন্যটির সম্পর্ক নেই। 

ইউনিসেফ পরিস্কার করেই বলেছে, ঠান্ডা পানি এমনকি কোনো নির্দিষ্ট খাবার পিরিয়ডে সমস্যা সৃষ্টি করেনা। 

Screenshot collage: Rumor Scanner 

অর্থাৎ, ঠান্ডা পানির পাশাপাশি পিরিয়ডে শসা কিংবা নারিকেলের মতো নির্দিষ্ট খাবার খেতেও বাধা নেই বলে জানাচ্ছে ইউনিসেফ।

শ্যাম্পুর বিষয়ে অনুসন্ধান করে ইউনিসেফের জর্ডান শাখার একটি প্রতিবেদন খুঁজে পেয়েছি আমরা। ২০১৯ সালের উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইউনিসেফের এবং তাদের সহযোগীরা জর্ডানের কিশোরীদের পিরিয়ডকালীন সময়ের জন্য হাইজিন কিট বিতরণ করে যেখানে শ্যাম্পুও রয়েছে।

Screenshot source: UNICEF

পিরিয়ডে যদি শ্যাম্পু ব্যবহার নিষেধই থাকতো তাহলে ইউনিসেফ শ্যাম্পু বিতরণ করতো না। 

এ বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে যোগাযোগ করলে সংস্থাটির মিডিয়া বিভাগ থেকে জানানো হয়, “এই তথ্যগুলো সম্পূর্ণ ভুল। কেউ ভালোভাবে অনলাইনে যাচাই করলেই এগুলো যে ভুল তা জেনে নিতে পারবে।” 

মূলত, বিগত কয়েক বছর ধরেই নারীদের পিরিয়ডের সময় নারিকেল, শসা ও ঠান্ডা পানি খাওয়া যাবে না এবং শ্যাম্পু ব্যবহার করা যাবে না শীর্ষক দাবি প্রচার হয়ে আসছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব দাবি সঠিক নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে রিউমর স্ক্যানার টিমকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তাছাড়া, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের একাধিক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞও এসব দাবি একবাক্যে ভিত্তিহীন বলে রায় দিয়েছেন। এছাড়া, বৈজ্ঞানিকভাবেও এসব দাবির কোনো ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন তারা। 

সুতরাং, নারীদের পিরিয়ডের সময় নারিকেল, শসা ও ঠান্ডা পানি খাওয়া যাবে না এবং শ্যাম্পু ব্যবহার করা যাবে না শীর্ষক দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

প্রথম আলো’র ফটোকার্ড নকল করে হিরো আলমকে জড়িয়ে প্রমাণহীন তথ্য প্রচার

0

সম্প্রতি, “ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আমার নির্বাচনী কাজে সহায়তার জন্য ২০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন আন্দালিব পার্থ, কিন্তু মনোনয়ন বাতিল হওয়াতে তিনি সেই টাকা ফেরত চাইছেন” শীর্ষক শিরোনামে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের মন্তব্য দাবিতে একটি তথ্য দৈনিক প্রথম আলোর আদলে তৈরি করা একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে হিরো আলমের বক্তব্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ফটো কার্ডটি প্রথমআলো’র নয় বরং ফটোশপের সহায়তায় প্রথম আলোর আদলে তৈরি করা একটি ফটো কার্ডের মাধ্যমে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রচারিত পোস্টে প্রথম আলো’র আদলে তৈরি ফটো কার্ডটি বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায় এই সংবাদটি প্রচারের তারিখ দেখানো হয়েছে ১৮ জুন ২০২৩। 

Screenshot from ‘Facebook’ 

পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, মূলধারার গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ এর ওয়েবসাইট, ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেল সহ সামাজিক মাধ্যমে অন্যান্য একাউন্টগুলো পর্যবেক্ষণ করেও  ১৮ জুন ২০২৩ তারিখে উক্ত দাবিতে প্রচারিত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

পাশাপাশি, প্রথম আলো ছাড়া অন্যকোনো সংবাদমাধ্যমেও আলোচিত দাবিটির বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

এছাড়া, বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “এ রকম কোনো খবর আমরা দিইনি। এটা নির্জলা অসত্য। অসৎ উদ্দেশ্যে কেউ এমন মিথ্যা খবর আমাদের লোগো ব্যবহার করে প্রচার করেছে।” 

পরবর্তীতে, আলোচিত বিষয়টিকে নিয়ে প্রথম আলো’র ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করা হয়।

Screenshot from ‘Prothom Alo’ Facebook page 

উক্ত পোস্টের মাধ্যমে ‘প্রথম আলো’ প্রচারিত ফটো কার্ডটিকে ভুয়া সাব্যস্ত করে পাঠকদের বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। 

অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, প্রথম আলো আসন্ন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন ঘিরে হিরো আলম ও আন্দালিব পার্থকে জড়িয়ে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি। এছাড়া হিরো আলম বক্তব্য ও আর্থিক লেনদেনের বিষয়টিও কোনোপ্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্য প্রমাণ ছাড়াই প্রচার করা হচ্ছে। 

মূলত, গত ১৮ জুন “ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আমার নির্বাচনী কাজে সহায়তার জন্য ২০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন আন্দালিব পার্থ, কিন্তু মনোনয়ন বাতিল হওয়াতে তিনি সেই টাকা ফেরত চাইছেন” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য দৈনিক প্রথম আলোর আদলে তৈরি করা একটি ফটো কার্ডের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৮ জুন ২০২৩ তারিখে কিংবা তার আগে-পরে প্রথম আলো এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি। এছাড়া প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ প্রচারিত ফটো কার্ডটি প্রথম আলো’র নয় বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।

উল্লেখ্য, পূর্বেও প্রথম আলো’র আদলে ডিজিটাল ব্যানার তৈরি করে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার এবং সাংবাদিক রওশন হক যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে গ্রেফতারের ভুয়া দাবি প্রচার করা হলে বিষয়গুলোকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে। 

সুতরাং, ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচন উপলক্ষে হিরো আলমের সাথে আন্দালিব পার্থের আর্থিক লেনদেন উল্লেখ করে প্রথম আলো’র ফটো কার্ডে হিরো আলমের বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

রোহিত শর্মা টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেননি

সম্প্রতি, “টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন রোহিত শর্মা, ম্যাচ শেষে নিজেই করলেন কনফার্ম” শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

স্পোর্টস উইকি নামের একটি পোর্টালে  “Big Breaking: টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন রোহিত শর্মা, ম্যাচ শেষে নিজেই করলেন কনফার্ম !!” শিরোনামে সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পর তাদের ফেসবুক পোস্টেও প্রচার করা হয়। ফেসবুকে প্রচারিত তাদের সেই নিউজ পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রোহিত শর্মার টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার তথ্যটি সঠিক নয় বরং ভিত্তিহীনভাবে রোহিত শর্মার টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার এই ঘোষণা তথ্যের সূত্রপাত হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে স্পোর্টজ উইকি তে “Big Breaking: টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন রোহিত শর্মা, ম্যাচ শেষে নিজেই করলেন কনফার্ম!!” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে দেখা যায় প্রতিবেদন টি ‘Mufaddal Vohra’ নামের একটি টুইটার অ্যাকাউন্টের একটি টুইটকে ভিত্তি করে রোহিত শর্মার টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার এ সংবাদ প্রকাশ করেছে।

‘Mufaddal Vohra টুইটার অ্যাকাউন্টে করা সেই  টুইটে রোহিত শর্মার উদ্ধৃতি দিয়ে লেখা হয়, রোহিত শর্মা ভারতীয় ভক্তদের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেছেন,  “Sorry to Team India fans.This is my Last Test match as a captain. Soon I’m going to Retire from the Test cricket. Thank you all”

Screenshot from Twitter

রোহিত শর্মা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের ম্যাচ হারার পর ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি এটিই তার শেষ টেস্ট ম্যাচ এমন কিছু ঘোষণা করেছে কি না তা নিয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার। অনুসন্ধানে ‘SPORT Vot’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে “Rohit Sharma | World Test Championship Final 2023 | Day 5 Press Conference | June 11 | #WTC23” শিরোনামে ১২ জুন প্রকাশিত উক্ত ম্যাচ পরবর্তী সময়ে রোহিত শর্মার প্রেস কনফারেন্সের ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। তবে সেই প্রেস কনফারেন্সের ভিডিওতে রোহিত শর্মা টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার ব্যাপারে কিছু বলেছেন এমন কিছু পাওয়া যায়নি। 

Screenshot from Youtube

‘ESPNCricInfo’ তেও ম্যাচ পরবর্তী প্রেস কনফারেন্সে রোহিত শর্মার বলা বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানেও এটিই তার শেষ টেস্ট ম্যাচ শীর্ষক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Screenshot form ESPNCricinfo 

পাশপাশি কিওয়ার্ড সার্চ করার মাধ্যমে ভারতীয় কোনো সংবাদমাধ্যমেও ম্যাচ হারের পর রোহিত শর্মার ক্ষমা চেয়ে এটিই তার শেষ টেস্ট ম্যাচ শীর্ষক ঘোষণার কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। 

একই সময়ে Rohit Sharma নামের একটি ভুয়া টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে “Retirement from Test Cricket” শিরোনামে গত ১১ জুন ভারতের ম্যাচ হারের পর রোহিত শর্মার ভুয়া একটি রিটায়ারমেন্ট লেটার পোস্ট করে অবসরের ভুয়া ঘোষণা দেয়া হয়। যে টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ভুয়া এ ঘোষণাটি দেয়া হয় সেই টুইটারের ইউজার নেম ছিলো ‘ImR0hitt45’। অপরদিকে রোহিত শর্মার অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টের ইউজার হচ্ছে ImRo45 এবং রোহিত শর্মার অফিসিয়াল টুইটারসহ কোনো সোস্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা সংক্রান্ত কিছু পাওয়া যায়নি। 

Screenshot : Fake Twitter & announcement  

অনুসন্ধানে দেখা যায়, রোহিত শর্মার ভুয়া সেই টুইটার অ্যাকাউন্টে যে ভুয়া ঘোষণাপত্রটি টুইট করা হয় সেটি ভারতীয় আরেক ক্রিকেটার ভিরাট কোহলির টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণাপত্র, যেটি নিজ টুইটার অ্যাকাউন্টে ২০২২ সালের ১৫ জানুয়ারি টুইট করেছিলেন ভিরাট কোহলি। 

Image comparison by Rumor Scanner

পরবর্তীতে দেখা গেছে Rohit Sharma নামের ভুয়া টুইটার অ্যাকাউন্টের ভুয়া অবসরের ঘোষণাটি ভাইরাল হওয়ার পর সেই টুইটার অ্যাকাউন্টটি তার টুইটার অ্যাকাউন্টের নাম ও ইউজার পরিবর্তন করে যথাক্রমে ‘Tha7a Fan’ ও ‘ExposeTha7aFan’ রেখেছে।

Screenshot from Twitter

মূলত, গত ১১ জুন ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনাল ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজিত হয় ভারত। আর সেই ম্যাচে ভারতের অধিনায়ক ছিলেন রোহিত শর্মা। প্রেক্ষিতে ভারতের ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপ  ফাইনাল ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রোহিত শর্মা টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন শীর্ষক ভুয়া দাবিটি ছড়িয়ে পড়ে।

সুতরাং, রোহিত শর্মা টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

অস্থির ও বেকার লোকদের জন্য টিকটক তৈরি করার দাবিতে ঝাং ইয়ামিংয়ের নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার

সম্প্রতি, টিকটক ‘প্রতিষ্ঠাতা টিকটক অ্যাপটি কেবল মানসিকভাবে অস্থির ও বেকার লোকদের জন্য তৈরি করেছেন এবং এই ধরনের মানুষের সংখ্যা ভারতে সব থেকে বেশি’ শীর্ষক দাবিতে  অ্যাপটির প্রতিষ্ঠাতা ঝাং ইয়ামিংয়কে উদ্ধৃত করে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ),এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, টিকটক কেবল মানসিকভাবে অস্থির ও বেকার লোকদের জন্য তৈরি করা এবং এই ধরনের মানুষের সংখ্যা ভারতে সব থেকে বেশি’ শীর্ষক মন্তব্যটি টিকটকের প্রতিষ্ঠাতা ঝাং ইয়ামিংয়ের নয় বরং কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ব্যতীত টিকটক প্রতিষ্ঠাতা ঝাং ইয়ামিংকে উদ্ধৃত করে দীর্ঘদিন ধরেই উক্ত মন্তব্যটি ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে।

সূত্রহীন মন্তব্য

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে GH Gossip নামের একটি ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ২০ মে ‘TikTok Was Created For Jobless and Unstable People – TikTok Founder, Zhang Yiming Reveals’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: GH Gossip

প্রতিবেদনটিতে ঝাং ইয়ামিংয়ের ‘টিকটক কেবল মানসিকভাবে অস্থির ও বেকার লোকদের জন্য তৈরি করেছেন এবং এই ধরনের মানুষের সংখ্যা ভারতে সব থেকে বেশি’ শীর্ষক একটি বক্তব্যের ডিজিটাল ব্যানার প্রচার করে পাঠকদের কাছে এই বক্তব্যের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাওয়া হয়। তবে প্রতিবেদনটিতে থেকে ঝাং ইয়ামিং এই বক্তব্যটি প্রদানের সময় ও স্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

পাশাপাশি Opera News এর ওয়েবসাইটে প্রায় তিন বছর আগে  ‘Read this: Zhang Yiming say’s he created Tik Tok for jobless and unstable people’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনেও দাবি করা হয়, ঝাং ইয়ামিং বলেছেন, ‘টিকটক কেবল মানসিকভাবে অস্থির ও বেকার লোকদের জন্য তৈরি করেছেন এবং এই ধরনের মানুষের সংখ্যা ভারতে সব থেকে বেশি।’ তার এই বক্তব্যের ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি ব্যবহারকারীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।

Screenshot: Opera News

তবে উক্ত প্রতিবেদনেও এই বক্তব্যটি তিনি কখন, কোথায় দিয়েছেন এমন কোনো তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। এছাড়া ওয়েবসাইটটিতে উক্ত প্রতিবেদনটি ‘Gossip Celebrity’ বা সেলেব্রেটিদের নিয়ে গুঞ্জন বা গালগল্প ক্যাটাগরিতে প্রকাশ করা হয়েছে। 

উক্ত ওয়েবসাইটগুলো ছাড়াও আরও একাধিক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদন দেখুন I Created Tik Tok For Jobless And Unstable People” – Tik Tok Founder – Celebrities – Nairaland (Nairaland),  “I Created Tik Tok For Jobless And Unstable People” – Tik Tok Founder (misspetitenaijablog). 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারের ভ্যারিফাইড অ্যাকাউন্টে এই প্রসঙ্গে  ২০২২ সালে প্রকাশিত সূত্রহীন একটি টুইট দেখুন এখানে। 

তবে এসব ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বাহিরে ঝাং ইয়ামিংয়ের উক্ত বক্তব্যের বিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি।

রিউমর স্ক্যানার টিমের এই পর্যন্ত অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয় যে, টিকটক প্রতিষ্ঠাতা ঝাং ইয়ামিংয়ের টিকটক খোলার কারণ ও এর সঙ্গে ভারতীয়দের জড়িয়ে দীর্ঘদিন ধরে যে বক্তব্যটি প্রচার করা হচ্ছে তার কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র নেই।

অন্যান্য ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান কি বলছে?

দাবিটি নিয়ে সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

এর মধ্যে ভারতীয় গণমাধ্যম Republic World  ২০২০ সালের ২০ মে Fact Check: Did TikTok Founder Zhang Yiming Say Indian Tiktok Users Were ‘unstable’?  শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানায়, গণমাধ্যমটি টিকটক প্রতিষ্ঠাতার বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পর্কে অনুসন্ধান করে। 

Screenshot: Republic World

অনুসন্ধানে প্রতিষ্ঠানে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে অথবা টিকটকের অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে এমন কোনো বক্তব্যের অস্তিত্বের হদিস মেলেনি। 

এছাড়া ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান Hoax or Fact প্রায় তিন বছর আগে ‘Tik Tok Founder Zhang Yiming Calls Indians Jobless, Unstable: Fact Check’ শীর্ষক একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে জানায়, ঝাং ইয়ামিংয়ের নামে উক্ত উদ্ধৃতিটি ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ সহ বিভিন্ন প্লাটফর্ম ও ইন্টারনেটে পোস্টার ও ছবি আকারে প্রচার হয়ে আসছে। 

Screenshot: Hoax or Fact

প্রতিবেদনটিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালের মে মাসে gistmania.com and ghgossip.com নামের দুইটি অনির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট তাদের পাঠকদের টিকটক প্রতিষ্ঠাতার উক্ত বক্তব্য নিয়ে আলোচনা করতে বলে। যদিও টিকটক প্রতিষ্ঠাতার উক্ত বক্তব্যের বিষয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

টিকটকের সাথে ভারতীয়দের দ্বন্ধ

২০২০ সালের ১৫ জুন ভারতের লাদাখে বিরোধপূর্ণ চীন ভারত সীমান্তে দুই দেশের সৈন্যদের মধ্যে হাতাহাতি ও সংঘর্ষে ভারতের অন্তত বিশজন সৈন্য নিহত হয়। এ ঘটনার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে৷ এরই ধারাবাহিকতায় ভারত ৫৯ টি চীনা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। যার মধ্যে টিকটকও ছিল। 

Screenshot: BBC Bangla 

এছাড়া ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে, ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী শুরু হওয়া করোনা সংক্রমণের জেরে ভারতীয়দের মধ্যে চীনা বিরোধী মনোভাব তৈরির ব্যাপারেও তথ্য পাওয়া যায়। 

সেন্সর টাওয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সমীক্ষা উল্লেখ করে ২০২০ সালের ৪ জুন ভারতীয় অনলাইন পোর্টাল Latestly তাদের বাংলা সংস্করণে ‘TikTok: বয়কট চাইনিজ অ্যাপ! টিকটক ডাউনলোডের চাহিদা একধাক্কায় কমল ৫০ শতাংশ‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানায়, ২০২০ সালের মার্চ এবং মে মাসের মধ্যে ভারতে অ্যাপেল এবং গুগল প্লে স্টোরে টিকটক অ্যাপের ডাউনলোড ৩৫.৭ মিলিয়ন থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ মিলিয়নে, যা প্রায় ৫১ শতাংশ। 

Screenshot: Latestly

অর্থাৎ উপরোক্ত প্রতিবেদন দুইটি থেকে জানা যায়, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও ভারত-চীন সীমান্তে উত্তেজনার জেরে ভারতীয়দের মধ্যে টিকটক নিয়ে বিরূপ মনোভাব ও শেষ পর্যন্ত দেশটিতে টিকটক নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। 

মূলত, শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটক একটি চীনা প্রতিষ্ঠান, এর প্রতিষ্ঠাতা চীনের নাগরিক ঝাং ইয়ামিং। তার নামে ২০১৯ সাল থেকে টিকটক প্রতিষ্ঠার কারণ ও টিকটকে ভারতীয়দের সংখ্যাধিক্যতা নিয়ে ‘প্রতিষ্ঠাতা টিকটক অ্যাপটি কেবল মানসিকভাবে অস্থির ও বেকার লোকদের জন্য তৈরি করেছেন এবং এই ধরনের মানুষের সংখ্যা ভারতে সব থেকে বেশি’ শীর্ষক একটি মন্তব্য ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে। তবে অনুসন্ধানে ঝাং ইয়ামিংয়ের বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি নিয়ে কোনো তথ্যসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং দীর্ঘদিন ধরেই তথ্যসূত্র ছাড়াই বিভিন্ন অনির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইটে উক্ত দাবিটি প্রচার হয়ে আসছে। 

সুতরাং, টিকটক প্রতিষ্ঠার কারণ ও টিকটকে ভারতীয়দের সংখ্যাধিক্যতা নিয়ে প্লাটফর্মটির প্রতিষ্ঠাতা ঝাং ইয়ামিংয়ের বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

রাষ্ট্রপতির প্রটোকলের জন্য রাস্তা বন্ধ থাকায় শিশু মৃত্যু হয়েছে শীর্ষক দাবিতে দেওয়া নুরুল হক নুরের বক্তব্যটি মিথ্যা

0

বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি, হামলা-মামলা, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের লুটপাট ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে গত ১৪ জুন বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণ অধিকার পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য প্রদানকালে সংগঠনটির সদস্য সচিব নুরুল হক নুর দাবি করেন, “আমাদের নব মনোনীত রাষ্ট্রপতি যখন গোপালগঞ্জ গিয়েছিলেন, তখন তার প্রটোকলের জন্য অটো আটকে একটা বাচ্চাকে মেরে ফেলেছে প্রশাসন। সেটি নিয়ে ভিডিও করায়, প্রতিবাদ করায় ইন্টারমেডিয়েট এর শিক্ষার্থী ইসমাইলকে তিনটা মামলা দিয়েছে।”

যা দাবি করা হচ্ছে

গোপালগঞ্জে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন এর নিরাপত্তা প্রটোকলের জন্য রাস্তা বন্ধ থাকায় চিকিৎসার অভাবে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

গণ অধিকার পরিষদ এর সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের উক্ত বক্তব্যটি সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান এর ফেসবুক আইডি থেকে প্রচারিত হয়। 

ফেসবুকে প্রচারিত ঐ পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

উক্ত ভিডিওর ৭ মিনিট ৩২ সেকেন্ড থেকে ৭ মিনিট ৫৭ সেকেন্ড পর্যন্ত নুরুল হক নুরকে এসব বলতে শোনা যায়।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া মো. সাহাবুদ্দিনের গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া যাত্রায় গাড়ি চলাচল সীমিত করার কারণে হাসপাতালে নিতে না পারায় চিকিৎসার অভাবে নবজাতকের মৃত্যুর দাবিটি সঠিক নয় বরং শিশুটি এর আগেই হাসপাতালে মারা যায় এবং মৃত শিশুটিকে নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার সময়ের ভিডিও ধারণ করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

মূলত, দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ২৬ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ঐ সময় সে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে একটি মৃত শিশুর ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে প্রচার করে দাবি করা হয় যে, ‘রাষ্ট্রপতির টুঙ্গিপাড়াযাত্রায় গাড়ি চলাচল সীমিত করার কারণে নবজাতকের মৃত্যু’ হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের সার্বিক অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয় যে, শিশুটি পূর্বেই হাসপাতালে মারা যায় এবং মৃত শিশুটিকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সময়ের ভিডিও ধারণ করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও এই দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

‘খালি মাঠে বসে গোল আর দেওয়ার সুযোগ নেই’ শীর্ষক মন্তব্যটি ড. ইউনূসের নয়

সম্প্রতি, ‘খালি মাঠে বসে গোল আর দেওয়ার সুযোগ নেই’ শীর্ষক একটি মন্তব্য বাংলাদেশি নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস করেছেন দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘খালি মাঠে বসে গোল আর দেওয়ার সুযোগ নেই’ শীর্ষক মন্তব্যটি ড. মুহাম্মদ ইউনূস করেননি বরং সূত্রহীনভাবে উক্ত মন্তব্যটি তার নামে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

গুজবের সূত্রপাত

অনুসন্ধানের মাধ্যমে দেখা যায়, গত ০৬ জুন রাত ১টা ০৪ মিনিটে ‘Md jashim uddin’ (আর্কাইভ) নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্ধৃত করে আলোচিত মন্তব্যটি প্রথম প্রচার করা হয়।  

Screenshot Source: Facebook.

উক্ত পোস্টে কোনো তথ্যসূত্র উল্লেখ করা হয়নি। তবে পোস্টটিতে বক্তব্য দেওয়া অবস্থায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে। সে ছবি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে, বার্তা সংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি) এর ওয়েবসাইটে গত ০৩ মার্চ ‘Governments should focus on creating entrepreneurs, not job seekers: Professor Yunus’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ছবিটি গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ০২ মার্চ আসামের স্বায়ত্বশাসিত বোডোল্যান্ড অঞ্চলের প্রশাসনিক সদর দপ্তর কোকরাঝারে অনুষ্ঠিত বোডোল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল নলেজ ফেস্টিভ্যালে প্রধান অতিথি হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যে দেওয়া সময় ধারণকৃত।

Screenshot Source: UNB.

তবে উক্ত প্রতিবেদনে ‘খালি মাঠে বসে গোল আর দেওয়ার সুযোগ নেই’ শীর্ষক মন্তব্যের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে, উক্ত ফেসবুক পোস্টকারী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের সাথে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নামে প্রচারিত আলোচিত মন্তব্যটির সূত্র জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে কোনো প্রত্যুত্তর না দিয়েই ব্লক করে দেওয়া হয়।

অর্থাৎ, অপ্রাসঙ্গিক ছবি ব্যবহার করে এবং সূত্রহীন ভাবে একটি ফেসবুক পেজ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্বৃত্ত দিয়ে আলোচিত মন্তব্যটি গত ০৬ জুন প্রথম প্রচার করা হয়।

তাছাড়া বিভিন্ন পদ্ধতিতে অনুসন্ধান চালিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের করা এমন কোনো মক্তব্য ওপেন সোর্সে খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত ইউনূস সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ‘এটি সম্পূর্ণ ভুয়া। অধ্যাপক ইউনূস কখনো এ ধরনের কথা বলেননি।’

মূলত, বাংলাদেশি নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘খালি মাঠে বসে গোল আর দেওয়ার সুযোগ নেই’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি তথ্য সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এমন মন্তব্য ড. ইউনূস করেননি। বরং গত ০৬ জুন ‘Md jashim uddin’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে অপ্রাসঙ্গিক ছবি ব্যবহার করে এবং সূত্রহীনভাবে ড. ইউনূসকে উদ্ধৃত করে আলোচিত মন্তব্যটি প্রথম প্রচার করা হয় এবং পরবর্তীতে তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যায়। এছাড়া ইউনূস সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠাটি জানায়, এটি সম্পূর্ণ ভুয়া। 

সুতরাং, ‘খালি মাঠে বসে গোল আর দেওয়ার সুযোগ নেই’ শীর্ষক মন্তব্যটি ড. মুহাম্মদ ইউনূস করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হলে শিক্ষার্থীদেরকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিগ্রি প্রদানের দাবিটি মিথ্যা 

0

সম্প্রতি “দুর্ঘটনাক্রমে পাস’ আইন অনুসারে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আগুণে পুড়ে বা ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে গেলে অবিলম্বে সব শিক্ষার্থীকে Graduate ঘোষণা করতে হবে” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দুর্ঘটনাক্রমে পাস বা Pass By Catastrophe কোনো সত্য আইন নয়, বরং প্রকৃতপক্ষে এটি একটি শহুরে উপকথা যা বহুবছর ধরে প্রচলিত হয়ে আসা একটি গল্প কিংবা লোককাহিনী।

মূলত, বিপর্যয় পাস’ একটি মিথ যেখানে বলা হয় কোনো একটি বিদ্যালয়ে পরীক্ষা চলাকালীন সময় যদি আগুণ লাগা, ভূমিকম্প বা এরকম কোনো বিপর্যয় ঘটে তাহলে ঐ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বয়ঙ্গক্রিয়ভাবে ঐ পরীক্ষায় পাস করে যাবে। এধরণের কোনো আইন নেই। তবে, বিপর্যয় ঘটলে বিপর্যয়ের গুরত্ব ও গভীরতা বিবেচনায় কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষার্থীদেরকে কিছু সুবিধা দিতে পারে, যা ঐ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। ‘বিপর্যয় পাস’ নামের কোনো আইন নেই যা মেনে চলতে প্রতিষ্ঠানগুলো বাধ্য।

উল্লেখ্য, পূর্বেও এই দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়টি নিয়ে  ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

প্রথম আলো’র ফটোকার্ড নকল করে সাংবাদিক রওশন হক গ্রেফতারের ভুয়া দাবি প্রচার

0

সম্প্রতি “যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের একটি অভিজাত হোটেলে অনৈতিক কাজ করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা খেলেন বিএনপি নেত্রী রওশন হক” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য দৈনিক প্রথম আলোর আদলে তৈরি করা একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নিউইয়র্কের একটি হোটেলে পুলিশের হাতে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কথিত বিএনপি নেত্রী রওশন হকের গ্রেফতারের দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয় এবং প্রথম আলোও গত ১৬ জুন বা তার আগে-পরে এধরণের কোনো সংবাদ প্রচার করেনি বরং ভিত্তিহীনভাবে প্রথম আলোর আদলে তৈরি করা একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রচারিত পোস্টে প্রথম আলোর আদলে তৈরি ফটোকার্ডটি বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায় এই সংবাদটি প্রচারের তারিখ দেখানো হয়েছে ১৬ জুন ২০২৩।

Screenshot: Facebook 

পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে মূল ধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর ওয়েবসাইট, প্রথম আলোর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ এবং প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেলে ১৬ জুন ২০২৩ তারিখে উক্ত দাবিতে প্রচারিত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

Image Collage by Rumor Scanner 
Image Collage by Rumor Scanner 

তাছাড়া, প্রথম আলো ছাড়াও অন্যকোনো সংবাদমাধ্যমেও আলোচিত দাবিটির বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Screenshot: Google Search

পরবর্তীতে ম্যানুয়ালি অনুসন্ধানে লেখক ও সাংবাদিক রওশন হকের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আলোচিত বিষয়টি নিয়ে একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Rowshan Haque Facebook

উক্ত পোস্টের মাধ্যমে তিনি প্রচারিত ফটোকার্ডটিকে ভুয়া সাব্যস্ত করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। 

পরবর্তীতে বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “প্রথম আলো এমন কোনো নিউজ করেনি। ইতোপূর্বেও প্রথম আলোর নামে এমন ভুয়া সংবাদ প্রচার করা হয়েছে, এটিও তারই অংশ।”

পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কিংবা বিএনপি সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো সূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটি হোটেলে আলোচিত সাংবাদিক রওশন হকের গ্রেফতার সম্পর্কিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটি হোটেলে আলোচিত সাংবাদিক রওশন হকের গ্রেফতার হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। 

মূলত, গত ১৬ জুন “যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের একটি অভিজাত হোটেলে অনৈতিক কাজ করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা খেলেন বিএনপি নেত্রী রওশন হক” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য দৈনিক প্রথম আলোর আদলে তৈরি করা একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৬ জুন ২০২৩ তারিখে কিংবা তার আগে-পরে প্রথম আলো এমনকোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি। এছাড়াও প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ প্রচারিত সংবাদটি প্রথম আলোর নয় বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।

উল্লেখ্য, পূর্বেও প্রথম আলোর আদলে ডিজিটাল ব্যানার তৈরি করে মির্জা ফখরুলের নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়টি শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক নেত্রী রওশন হক নিউইয়র্কে একটি অভিজাত হোটেলে অনৈতিক কাজ করতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র