সম্প্রতি, “আজকের ভিডিও। পুলিশের গাড়িতে আগুন। প্রচুর পরিমাণ শেয়ার করে দিবেন” শীর্ষক শিরোনামে পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং এটি ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ভিডিও।
আলোচিত দাবির সত্যতা যাচাইয়ের শুরুতেই প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটিতে মূলধারার বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল যমুনা টিভি’র লোগো সংযুক্ত রয়েছে।
উক্ত সূত্র ধরে আলোচিত ভিডিওটির কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর মূলধারার গণমাধ্যম যমুনা টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে “নয়াপল্টনে পুলিশের গাড়িতে আগুন | Jamuna TV” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত ভিডিওর সাথে উক্ত ভিডিওর একটি অংশের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর দুপুর ১টার দিকে একটি মিছিল বিএনপি কার্যালয়ে আসার সময় পুলিশ বাধা দিলে বাক-বিতন্ডায় জড়ায় নেতাকর্মীরা। এ সময় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে লাঠিচার্জ করে এবং পরে টিয়ারশেল ছুঁড়ে পুলিশ। এক পর্যায়ে শুরু হয়ে যায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া আর সংঘর্ষ। বিএনপির নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল ছুঁড়ে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
পরবর্তীতে, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, মূলধারার গণমাধ্যম দৈনিক যুগান্তরের ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ১৪নভেম্বর “নয়াপল্টনে পুলিশের গাড়িতে আগুন দিল বিএনপি নেতাকর্মীরা” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকেও পুলিশ-বিএনপির ঐ সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়ার বিষয়ে একই তথ্য জানা যায়।
মূলত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর বিভিন্ন সংসদীয় আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মিছিল সহকারে বিএনপি’র নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন। এসময় অবরুদ্ধ সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করার উদ্দেশ্যে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিতে গেলে পুলিশের সাথে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ঘটনার এক পর্যায়ে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঐ পুরোনো ভিডিওকে বিএনপি’র সাম্প্রতিক আন্দোলনে পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বে বিএনপি’র সমাবেশে পুলিশ-সাংবাদিক কর্তৃক আগুন লাগানোর মিথ্যা দাবি ইন্টারনেটে প্রচারিত হলে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের পুরোনো ভিডিওকে বিএনপি’র সাম্প্রতিক আন্দোলনের সময়ের ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, “ইসরায়েলি কোম্পানি PEPSI বয়কট এড়াতে নকশা পরিবর্তন করে প্যালেস্টাইন লিখেছে। এই প্রতারণার শিকার হবেন না। পেপসি এবং কোক উভয় ব্র্যান্ডের বয়কট চালিয়ে যান” শীর্ষক শিরোনামে একটি একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পণ্যের বয়কট এড়াতে পেপসি ফিলিস্তিনের নকশা সম্বলিত নতুন ক্যান বাজারজাত করেনি বরং চলমান ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধের দুইমাস পূর্বেই আলোচিত নকশার ক্যান বাজারজাত করে পেপসি।
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ই-কমার্স প্লাটফর্ম ebay এর ওয়েবসাইটে ফিলিস্তিনের নকশা সম্বলিত পেপসির পণ্যের একটি বিজ্ঞাপন খুঁজে পাওয়া যায়।
Source: ebay
উক্ত বিজ্ঞাপনের সাথে সংযুক্ত পেপসি ক্যানের ছবি থেকে প্রাপ্ত বারকোড নম্বর আন্তর্জাতিক বারকোড ডাটাবেজ Barcode Look Up এর ওয়েবসাইটে সার্চ করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, পণ্যটি প্রকৃতপক্ষেই পেপসি কোম্পানির প্রস্তুতকৃত।
Source: Barcode Lookup
পরবর্তীতে, উক্ত পণ্যটির বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, পণ্যটি পেপসির ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের দ্বারা প্রস্তুতকৃত এবং পণ্যটির উৎপাদনের তারিখ ২০২৩ সালের ২৩ আগস্ট।
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, Dragon Studio নামের ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ১৬ আগস্টের একটি পোস্ট খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
উক্ত পোস্টে আলোচিত ফিলিস্তিনি নকশার পেপসির ক্যান ডিজাইনের একটি ভিডিও দেখা যায়। উল্লেখ্য, ভিডিওতে ফিলিস্তিনের নকশা সম্বলিত পেপসি ক্যানের দৃশ্যও দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও তাদের ফেসবুক পেজের তথ্য থেকে জানা যায়, Dragon Studio একটি বিজ্ঞাপন প্রস্তুতকারী কোম্পানি। এছাড়াও, তাদের ওয়েবসাইটে সেবাগ্রহীতার তালিকায় পেপসির নাম খুঁজে পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আরবভিত্তিক সংবাদমাধ্যম Mada News এর ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট “Pepsi wears Palestinian clothing” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
উক্ত প্রতিবেদনে পেপসির ফিলিস্তিন অঞ্চলের পণ্য বোতলজাতকরণ সহযোগী মডার্ন গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক হাতেম আল ওমারির বরাত দিয়ে জানানো হয়, চলতি বছরের জুন জুলাই মাসে পেপসির একটি ক্যাম্পেইনে অংশ নেওয়া ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের ৯০০০ হাজার অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ৫৮ শতাংশ মানুষ পেপসির স্বাদকে ভালো বলে মতামত দেন। এই ক্যাম্পেইনের ফলাফলের প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তনের সম্মানে ফিলিস্তিনি ঐতিহ্যের নকশা সম্বলিত দুইটি পেপসি ক্যান বাজারে ছাড়ে কোম্পানিটি। প্রতিবেদন থেকেও আরও জানা যায়, ৩ মাসের জন্য ফিলিস্তিনি ঐতিহ্যের নকশা সম্বলিত পেপসি ক্যান বাজারজাত করার কথা রয়েছে কোম্পানিটির।
এখানে লক্ষণীয় যে, চলমান ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হয় চলতি বছরের ৭ অক্টোবর। তার দুইমাস পূর্বেই পেপসি ফিলিস্তিনি ঐতিহ্যের নকশা সম্বলিত ক্যান বাজারজাত করে। যা থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধের সাথে পেপসির ফিলিস্তিনি ঐতিহ্যের নকশা সম্বলিত ক্যানের কোনো সর্ম্পক নেই।
প্রসঙ্গত, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা শুরু করে। এই হামলার প্রেক্ষিতে ইসরায়েলও হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় পাল্টা হামলা চালায়। এতে দেশ দুইটির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়৷ চলমান ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের প্রেক্ষাপটে আরববিশ্বসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ইসরায়েলি যোগসূত্রের অভিযোগে পেপসিসহ একাধিক কোম্পানির বিরুদ্ধে বয়কট ক্যাম্পেইন শুরু করে।
মূলত, গত ৭অক্টোবর শুরু হওয়া ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আরব দেশসহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইসরায়েলি যোগসূত্রের অভিযোগে পেপসিসহ বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য বয়কট করে। সেই প্রেক্ষাপটেই ফিলিস্তিনি ঐতিহ্যের নকশা সম্বলিত একটি পেপসি ক্যানের ছবিকে- বয়কট থেকে বাঁচতে পেপসি ফিলিস্তিনি ঐতিহ্যের নতুন ডিজাইন তৈরি করেছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। তবে অনুসন্ধানে জানা যে, দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, পেপসি ফিলিস্তিনি নকশার ক্যান চলমান ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হওয়ারও দুইমাস পূর্বেই বাজারজাত করে।
উল্লেখ্য, পূর্বে ইসরায়েলি পণ্যের ভুয়া তালিকা ইন্টারনেটে প্রচারিত হলে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
এছাড়া, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷
সুতরাং, বয়কট থেকে বাঁচতে কোমল পানীয় পেপসি ফিলিস্তিনি ঐতিহ্যের নকশা সম্বলিত নতুন ক্যান বাজারজাত করেছে দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায় যে, ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে আর্জেন্টাইন ফুটবলার লিওনেল মেসির এই ছবিটি বাস্তব নয় বরং icons.com নামের একটি বিপণন সংস্থার প্রচারের উদ্দেশ্যে তোলা একটি ছবিকে এডিট করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ছবিটিকে পূঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে আলোচিত ছবিটিতে বেশকিছু অসঙ্গতি খুঁজে পাওয়া যায় যা ছবিটি এডিটেড এই দাবিটিকে জোরালো করে।
Indication By Rumor Scanner
এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিতে আলোচিত ছবিটিকে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে আর্জেন্টাইন ফুটবলার লিওনেল মেসির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ২০২১ সালের ১১ মে’র মেসির ছবি সম্বলিত একটি পোস্ট খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত পোস্টের ছবির সাথে আলোচিত ছবিটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison: Rumor Scanner
এই পোস্টে আর্জেন্টাইন ফুটবলার লিওনেল মেসিকে icons.com নামের একটি সংস্থার কার্ড হাতে দেখতে পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে, উক্ত পোস্টের সূত্র ধরে icons.com ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, icons একটি বিপণন সংস্থা যা ক্রীড়াসামগ্রী বিপণন করে থাকে। উক্ত ওয়েবসাইটের তথ্যানুসারে লিওনেল মেসিসহ বিশ্বসেরা অনেক ফুটবলারই উক্ত সংস্থার আইকন খেলোয়াড় হিসেবে চুক্তিবদ্ধ।
Source: icons
মূলত, icons নামের একটি বিপণন সংস্থার বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে আর্জেন্টাইন ফুটবলার লিওনেল মেসি icons এর কার্ড হাতে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে একটি ছবি প্রকাশ করেন। সম্প্রতি তার সেই ছবিকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে সম্পাদনা বা এডিট করে icons এর কার্ডের স্থলে ফিলিস্তিনের পতাকার ছবি বসিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বে আর্জেন্টাইন ফুটবলার লিওনেল মেসির জার্সিতে ভারতীয় ক্রিকেট দলের লোগো এডিট করে বসিয়ে ইন্টারনেটে প্রচার করা হলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সুতরাং, ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে আর্জেন্টাইন ফুটবলার লিওনেল মেসির একটি ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিকৃত বা এডিটেড।
সম্প্রতি, “আমি জানি তোমাদের হিংসে হয় আমার বিলাসবহুল জীবন দেখে।” শিরোনামে একটি ছবি প্রচার করা হয়েছে। যেখানে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সামনে থাকা টেবিলে মদের বোতল থাকার দাবি করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সামনে মদের বোতল থাকার এই ছবিটি আসল নয় বরং ছবিটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে টেবিলে মদের দোকানের ছবি যুক্ত করে এই ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে মূল ছবিতে তারেক রহমানের সামনে থাকা টেবিলের উপর সাদা রঙের চায়ের কাপ সদৃশ বস্তু ছিল।
ছবিটির সত্যতা অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, Shikat Hossain Imran নামের একটি ফেসবুক আইডিতে গত ২২ মে প্রকাশিত একটি ছবির সাথে আলোচিত ছবিটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ছবিতে তারেক রহমানের সামনে কোনো মদের বোতল দেখা যাচ্ছে না। তবে ছবিটিতে সাদা রঙের চাপের কাপ সদৃশ বস্তু লক্ষ করা যায়। এছাড়া, ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায় উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবিতে তারেক রহমানের পাশের ব্যক্তির নাম ফজলুল হক মিলন। তিনি গাজীপুর জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক এবং সাবেক এমপি।
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে Gulam Kibriea Mithen নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে একই দিনে পোস্টকৃত দুইটি ছবির ছবির সাথে আলোচিত ছবিটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot from Facebook
উক্ত ছবির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, সেসময় গাজীপুর জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক সাবেক এমপি ফজলুল হক মিলন এবং তার স্ত্রী শম্পা হক বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাত করেন।
অর্থাৎ, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এই ছবিতে মদের বোতলের ছবি এডিট করে সংযুক্ত করা হয়েছে।
মূলত, গত মে মাসে গাজীপুর জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক সাবেক এমপি ফজলুল হক মিলন এবং তার স্ত্রী শম্পা হক বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাত করেন। সেসময় সেই সাক্ষাতের কিছু ছবি গাজীপুরে বিএনপি’র স্থানীয় কর্মীরা তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রকাশ করেন। সাম্প্রতিক সময়ে সেই ছবিগুলোর একটি ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সেখানে মদের বোতল এর ছবি যুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও মদের বোতল সম্বলিত তারেক রহমানের একাধিক এডিটেড ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হলে সেমসয় ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। এমন প্রতিবেদন দেখুন:
সম্প্রতি, মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো, একাত্তর টিভি, আজকের পত্রিকা এবং কালবেলা’র ডিজাইন সম্বলিত পৃথক ৪ টি ফটোকার্ডে ৩ নভেম্বরের মধ্যেবর্তমান সরকারের পতন ও ১৫ নভেম্বরের মধ্যে জাতীয় সরকার গঠন শীর্ষক তথ্যকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্য দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখিত চারটি ফটোকার্ড নিয়ে ফেসবুকে প্রচারিত একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
আজকের পত্রিকা’র ডিজাইন সম্বলিত ফটোকার্ড নিয়ে ফেসবুকে প্রচারিত একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
কালবেলা’র লোগো ডিজাইন ফটোকার্ড নিয়ে ফেসবুকে প্রচারিত একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
যা দাবি করা হচ্ছে
প্রথম আলো’র ডিজাইনের আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ড প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ‘৩ তারিখের মধ্যেই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হবে’ ১৫ তারিখ জাতীয় সরকার গঠন হবেঃ রিজভী’
একাত্তর টিভি’র ডিজাইনের আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ড প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ‘৩ তারিখের মধ্যেই সরকার পতনের হুমকি রিজভীর’
আজকের পত্রিকা’র ডিজাইনের আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ড প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ‘৩ তারিখের মধ্যেই সরকার পতন, ১৫ নভেম্বর জাতীয় সরকার গঠন করবে বিএনপিঃ রিজভী’
কালবেলা’র ডিজাইনের আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ড প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ‘১৫ নভেম্বর জাতীয় সরকার গঠন করবে বিএনপিঃ রিজভী’
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ৩ নভেম্বরের মধ্যে বর্তমান সরকারের পতন ও ১৫ নভেম্বরের মধ্যে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে দাবিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কোনো মন্তব্য করেননি। এছাড়া প্রথম আলো, একাত্তর টিভি, আজকের পত্রিকা ও কালবেলাও উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে উল্লেখিত গণমাধ্যমগুলোর ডিজাইন নকল করে আলোচিত ফটোকার্ডগুলো তৈরি করা হয়েছে।
প্রথম আলো কি এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেছে?
অনুসন্ধানের শুরুতে প্রথম আলো’র ফটোকার্ডের ডিজাইনের আদলে তৈরি ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার। সেখানে এই সংবাদটি প্রচারের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১ নভেম্বর ২০২৩।
Image Source: Facebook Claim Post
অনুসন্ধানে প্রথম আলো’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ১ নভেম্বর বা তার আগে পরে উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া প্রথম আলো’র ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে গত ১ নভেম্বর প্রথম আলো’র ফেসবুক পেজে বাংলাদেশ এবং মতামত শাখা হতে প্রচারিত কয়েকটি ফটোকার্ডের ডিজাইনের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির ডিজাইনের মিল পাওয়া যায়। ধারণা করা যায়, এই ফটোকার্ডগুলো থেকে কোনো একটি সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
Photocard Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, ‘৩ তারিখের মধ্যেই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হবে’ ১৫ তারিখ জাতীয় সরকার গঠন হবেঃ রিজভী’ শীর্ষক শিরোনামে প্রথম আলো কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি।
একাত্তর টিভি কি এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেছে?
এবিষয়ে অনুসন্ধানে একাত্তর টিভি’র ডিজাইনের আদলে তৈরি ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার। সেখানে এই সংবাদটি প্রচারের কোনো তারিখ উল্লেখ করা হয়নি।
Image Source: Facebook Claim Post
অনুসন্ধানে একাত্তর টিভি’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া একাত্তর টিভি’র ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে একাত্তর টিভি’র ফেসবুক পেজে প্রচারিত কয়েকটি ফটোকার্ডের ডিজাইনের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির ডিজাইনের মিল পাওয়া যায়। ধারণা করা যায়, এই ফটোকার্ডগুলো থেকে কোনো একটি সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
Photocard Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, ‘৩ তারিখের মধ্যেই সরকার পতনের হুমকি রিজভীর’ শীর্ষক শিরোনামে একাত্তর টিভি কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি।
আজকের পত্রিকাকি এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেছে?
এবিষয়ে অনুসন্ধানে আজকের পত্রিকা’র ফটোকার্ডের ডিজাইনের আদলে তৈরি ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার। সেখানে এই সংবাদটি প্রচারের কোনো তারিখ উল্লেখ করা হয়নি।
Image Source: Facebook Claim Post
অনুসন্ধানে আজকের পত্রিকা’র ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া আজকের পত্রিকা’র ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে আজকের পত্রিকা’র ফেসবুক পেজে প্রচারিত কয়েকটি ফটোকার্ডের ডিজাইনের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির ডিজাইনের মিল পাওয়া যায়। ধারণা করা যায়, এই ফটোকার্ডগুলো থেকে কোনো একটি সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
Photocard Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, ‘৩ তারিখের মধ্যেই সরকার পতন, ১৫ নভেম্বর জাতীয় সরকার গঠন করবে বিএনপিঃ রিজভী’শীর্ষক শিরোনামে আজকের পত্রিকা কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি।
কালবেলাকি এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেছে?
এবিষয়ে অনুসন্ধানে কালবেলা’র ফটোকার্ডের ডিজাইনের আদলে তৈরি ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার। সেখানে এই সংবাদটি প্রচারের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১ নভেম্বর, ২০২৩।
Image Source: Facebook Claim Post
অনুসন্ধানে কালবেলা’র ফেসবুক পেজে ১ নভেম্বর বা তার আগে পরে উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া কালবেলা’র ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে গত ১ নভেম্বর কালবেলা’র ফেসবুক পেজে প্রচারিত কয়েকটি ফটোকার্ডের ডিজাইনের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির ডিজাইনের মিল পাওয়া যায়। ধারণা করা যায়, এই ফটোকার্ডগুলো থেকে কোনো একটি সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
Photocard Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, ‘১৫ নভেম্বর জাতীয় সরকার গঠন করবে বিএনপিঃ রিজভী’শীর্ষক শিরোনামে কালবেলা কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি।
উক্ত গণমাধ্যমগুলোর নকল ফটোকার্ডে থাকা ছবি যাচাই
মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো, একাত্তর টিভি, আজকের পত্রিকা এবং কালবেলা’র লোগো সম্বলিত আলোচিত ফটোকার্ডগুলোর প্রত্যেকটিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর উক্ত বক্তব্যটি প্রচারে সংবাদ সম্মেলনের একটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
Screenshot: Facebook Claim Post
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে মূলধারার ইংরেজি গণমাধ্যম The Financial Express এর ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি ‘Ruhul Kabir Rizvi speaking at a press conference at party’s Nayapaltan central office’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত রিজভী’র সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য প্রদানের একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। এই ছবিটির সাথে উক্ত ফটোকার্ডগুলোতে প্রচারিত ছবির হুবহু মিল পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, উক্ত ফটোকার্ডগুলোতে ব্যবহৃত বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী’র সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য প্রদান করার এই ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
তবে, গতকাল ০৩ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত মহাসমাবেশে আগামী ১০ নভেম্বরের মধ্যে সরকারকে পদত্যাগের আল্টিমেটামসহ ৪ দফা দাবি জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।
মূলত, গত ২৮ অক্টোবর সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি মহাসমাবেশের আয়োজন করে। পরবর্তীতে মহাসমাবেশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের হামলার অভিযোগ এবং তা নিয়ে সংঘর্ষের জের ধরে সেই সমাবেশ স্থগিত করে ২৯ অক্টোবর সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় বিএনপি। এদিন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটক করে পুলিশ। একইদিন রাতে সরকারের পদত্যাগ, খালেদা জিয়ার মুক্তি, নেতা-কর্মীদের হত্যা, গ্রেপ্তার ও হামলা, মহাসচিবকে গ্রেপ্তার ও নেতাদের বাসায় তল্লাশির প্রতিবাদে ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি। এই সব কর্মসূচির মাঝেই দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী’র বক্তব্য দাবিতে ‘৩ তারিখের মধ্যেই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হবে’ ১৫ তারিখ জাতীয় সরকার গঠন হবে’ শীর্ষক শিরোনামে প্রথম আলো, ৩ তারিখের মধ্যেই সরকার পতনের হুমকি রিজভীর’ শীর্ষক শিরোনামে একাত্তর টিভি, ‘৩ তারিখের মধ্যেই সরকার পতন, ১৫ নভেম্বর জাতীয় সরকার গঠন করবে বিএনপি’ শীর্ষক শিরোনামে আজকের পত্রিকা এবং ‘১৫ নভেম্বর জাতীয় সরকার গঠন করবে বিএনপি’ শীর্ষক শিরোনামে কালবেলা’র ডিজাইনের আদলে তৈরি চারটি পৃথক ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রথম আলো, একাত্তর টিভি, আজকের পত্রিকা ও কালবেলা উক্ত দাবিতে কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি। ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে উল্লেখিত গণমাধ্যমগুলোর ফটোকার্ডের ডিজাইন নকল করে আলোচিত ফটোকার্ডগুলো তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, বিএনপি’র ২৮ অক্টোবরে সমাবেশের ঘটনায় বিভিন্ন ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ফটোকার্ড ব্যবহার করে অপপ্রচারের বিষয়ে গত ০৫ সেপ্টেম্বর বিস্তারিত ফ্যাক্ট ফাইল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ৩ নভেম্বরের মধ্যে বর্তমান সরকারের পতন ও ১৫ নভেম্বরের মধ্যে জাতীয় সরকার গঠন নিয়ে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী’র বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা এবং প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো ভুয়া ও বানোয়াট।
সম্প্রতি, “বাস্তব জিন দেখেন তুরস্কের স্তাম্বলশহরে জিন পরি নামাজ পড়তে আসে সেখানকার হুজুর এদের বন্দি করে ফেলে” শীর্ষক শিরোনামে তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে অজুরত জ্বীন-পরী আটকে রাখা হয়েছে দাবিতে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি ইস্তাম্বুলে জিন আটকে রাখার নয় বরং ভিডিওটি তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের একটি মনুমেন্ট বা স্মৃতিস্তম্ভের, যা ২০১৬ সালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের বিরুদ্ধে সংঘটিত ব্যর্থ সামরিক ক্যু’তে নিহত সাধারণ তুর্কি নাগরিকদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়েছে।
আলোচিত ভিডিওটির কিছু কী ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, steemit নামের ওয়েবসাইটে “Saraçhane monument of July 15” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
Source: steemit
উক্ত নিবন্ধ থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই তুরস্কে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের বিপক্ষে একটি অভ্যুত্থান অনুষ্ঠিত হয়। সেসময় তুরস্কের সাধারণ জনগণ এই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাজপথে নামেন। ফলশ্রুতিতে অভ্যুত্থানকারী সামরিক বাহিনীর সদস্যরা নির্বিচারে নিরস্ত্র সাধারণ জনগণের উপর গুলিবর্ষণ করে।
সিসি ক্যামেরায় সেদিন অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে ইস্তাম্বুল শহরে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার পূর্বে কয়েকজন মানুষের অজু করার দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। যারা বিক্ষোভে অংশ নেওয়াকে অনিবার্য মৃত্যু মেনে নিয়েছিলেন এবং পবিত্র অবস্থায় মৃত্যুবরণের উদ্দেশ্যে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার জন্য অজু করেছিলেন। পরবর্তীতে, উক্ত অভ্যুত্থানের ঘটনায় তুরস্কের সাধারণ মানুষের আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করে রাখতে অজুরত বিক্ষোভকারীদের একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে ইস্তাম্বুল মিউনিসিপ্যাল কর্তৃপক্ষ।
উক্ত নিবন্ধের সূত্র ধরে, প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে eslam.de নামের ওয়েবসাইটে উক্ত স্মৃতিস্তম্বের একটি ফলকের ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
স্মৃতিস্তম্ভের ফলকে খোদাইকৃত ঘটনা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ২০১৬ সালে অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিহত সাধারণ তুর্কি নাগরিকদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মিত হয়।
Source: eslam.de
তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের বিরুদ্ধে হওয়া সেই ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন আল-জাজিরা।
মূলত, ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের বিরুদ্ধে একটি সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। উক্ত অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে এরদোয়ানপন্থী সাধারণ তুর্কি নাগরিকরা রাজপথে বিক্ষোভ করলে অভ্যুত্থানকারীদের হামলায় ২৪১জন নিহত হন। পরবর্তীতে, এই অভ্যুত্থানের ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ইস্তাম্বুলে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয় যেখানে অজুরত বিক্ষোভকারীদের ভাষ্কর্য রয়েছে। উক্ত স্মৃতিস্তম্ভের অজুরত মানুষের ভাস্কর্যের দৃশ্যকেই তুরস্কে ইস্তাম্বুল শহরে জ্বীন-পরী বন্দী করে রাখার দৃশ্য দাবিতে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও পাকিস্তানের হাসপাতালে ভূত দেখতে পাওয়ার ভিডিও দাবিতে স্ক্রিপ্টেড একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে সেবিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, স্মৃতিস্তম্ভের দৃশ্যকে তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে জ্বীন-পরী আটকে রাখার দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “নয়াপল্টনে গণধর্ষণের শিকার ছাত্রদল নেত্রী মানসুরা” শীর্ষক তথ্য বা শিরোনামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও আইন বিভাগের ছাত্রী মানসুরা আলমের ছবি যুক্ত জাতীয় দৈনিক কালবেলা’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
একই বিষয় সত্য কিনা তা জানতে চেয়ে করা একটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়,নয়াপল্টনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও আইন বিভাগের ছাত্রী মানসুরা আলমের গণধর্ষণের শিকার হওয়ার বিষয়ক কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং দৈনিক কালবেলাও উক্ত শিরোনামে কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে কালবেলা’র ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে এই সংবাদটি প্রচারের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ৩০ অক্টোবর ২০২৩।
Screenshot : Facebook claim post
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফটোকার্ডটিতে থাকা তারিখ এবং কালবেলা’র লোগোর সূত্র ধরে কালবেলা’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ৩০ অক্টোবর প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও কালবেলা’র ওয়েবসাইটেও এসংক্রান্ত কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।
Photocard Comparison : Rumor Scanner
আলোচিত ফটোকার্ডটির সাথে জাতীয় দৈনিক কালবেলা’র ফটোকার্ডের ডিজাইনের প্রায় মিল থাকলেও আলোচিত ফটোকার্ডে থাকা টেক্সটের ফন্ট ডিজাইনের সাথে কালবেলা কর্তৃক প্রকাশিত ফটোকার্ডের টেক্সটের ফন্ট ডিজাইনের মধ্যে সুক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে।
এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো বিশ্বস্ত সূত্রে উক্ত দাবি সংক্রান্ত কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।
মূলত, সরকার পতনের আন্দোলনে রাজপথে সরব বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় রাজধানীতে নয়াপল্টনে অবস্থিত হওয়ার স্বাভাবিক এই স্থানটি এখন রাজনৈতিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এরই প্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে প্রায়ই গণমাধ্যমের সংবাদে উঠে আছে রাজধানীর এই এলাকাটির নাম। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি নয়াপল্টনে ‘গণধর্ষণের শিকার ঢাবির ছাত্রদল নেত্রী মানসুরা’ শীর্ষক শিরোনামে জাতীয় দৈনিক কালবেলা’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ফেসবুকে প্রকাশিত হয়। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় জাতীয় দৈনিক কালবেলা’র ডিজাইন নকল করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো গ্রহণযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবিটির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ অক্টোবর সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি মহাসমাবেশের আয়োজন করে। পরবর্তীতে মহাসমাবেশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের হামলার অভিযোগ এবং তা নিয়ে সংঘর্ষের জের ধরে সেই সমাবেশ স্থগিত করে ২৯ অক্টোবর সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় বিএনপি। এদিন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটক করে পুলিশ। একইদিন রাতে সরকারের পদত্যাগ, খালেদা জিয়ার মুক্তি, নেতা-কর্মীদের হত্যা, গ্রেপ্তার ও হামলা, মহাসচিবকে গ্রেপ্তার ও নেতাদের বাসায় তল্লাশির প্রতিবাদে ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি।
উল্লেখ্য, পূর্বে বিএনপি’র ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ইন্টারনেটে ছড়ানো একাধিক গুজব শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত নকশার দাবিতে যে নকশাটি প্রচার করা হচ্ছে তা ঠাকুরগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় বরং এটি কিশোরগঞ্জে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত নকশা।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে কিশোরগঞ্জে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে আলোচিত নকশাটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman University Website
মূলত, একটি প্রস্তাবিত নকশার ছবি ঠাকুরগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত নকশার ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত নকশাটি কিশোরগঞ্জে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত নকশার ছবি। এছাড়া, ঠাকুরগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো উপাচার্য নিয়োগ না হওয়ায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইট না থাকায় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবিতে ছবিটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার।
সম্প্রতি “আগামীকাল থেকে হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফোন কলের নতুন যােগাযােগের নিয়ম কার্যকর করা হবে” শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কোনো প্রকার তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিগুলো ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে এবং পূর্বেও বিভিন্ন সময়ে এই ভিত্তিহীন বিষয়টি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছিল।
মূলত, কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ছাড়াই বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে “আগামীকাল থেকে হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফোন কলের নতুন যােগাযােগের নিয়ম কার্যকর করা হবে” শীর্ষক দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রচার করা হয়। তবে দাবিগুলোর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য,পূর্বেও বিভিন্ন সময়ে বিষয়টি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে এটিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
বারকোড হল একটি বর্গাকার বা আয়তক্ষেত্রাকার চিত্র যাতে সমান্তরাল কালো রেখা এবং বিভিন্ন প্রস্থের সাদা স্থানের একটি সিরিজ থাকে, যা স্ক্যান করে পাঠ করা যায়। দ্রুত সনাক্তকরণের উপায় হিসাবে পণ্যগুলিতে বারকোড ব্যবহার করা হয়৷ সহজভাবে বললে কোনো পণ্য কেনার পর প্যাকেটের গায়ে আমরা কিছু সাদা-কালো দাগ কাটা আর তার নিচে কিছু সংখ্যা লেখা দেখতে পাই। এই লেবেলকেই বলে বারকোড।
বারকোড তথ্য উপস্থাপন করার একটি উপায় বা মাধ্যম। আবার অন্য ভাবে বলতে গেলে বারকোড মূলত পণ্যের প্রস্তুতকারক কোম্পানি, উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ, ওজন, পরিমাণ, মূল্য এবং স্টক সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপনের একটি ডিজিটাল মাধ্যম। অর্থাৎ, কোনো পণ্যের গায়ে নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থের সাদা-কালো রংয়ের সংমিশ্রণে পণ্যের বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ রাখার উপায়ই হলো বারকোড।
বারকোডের ব্যবহার
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩০ ধরনের বারকোডিং সিস্টেম প্রচলিত আছে। তবে এর সবগুলোই বিশ্বব্যাপী বহুলভাবে ব্যবহৃত হয় না। ১৯৭৩ সালে যাত্রা শুরু করা GS1 বিশ্বব্যাপী বহুল প্রচলিত বারকোড সিস্টেমগুলোর একটি। অ্যামাজন, গুগল, আলিবাবা, ওয়ালমার্টের মত অনলাইন প্লাটফর্ম ছাড়াও বিশ্বব্যাপী লক্ষ-কোটি বিপনী বিতানে পণ্যের তথ্য সংরক্ষণে GS1 স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই বারকোডিং পদ্ধতিতে সাধারণত বারকোডের প্রথম তিনটি সংখ্যা দ্বারা পণ্যটি কোন দেশের কোম্পানির তা জানা যায়।
বারকোড নির্দেশক
বারকোড ইস্যুকারী সংস্থা GS1 এর ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, বিশ্বের প্রত্যেক দেশের বিপরীতে তারা তিন সংখ্যার একটি কোড সরবরাহ করে থাকে। এই তিন সংখ্যা দিয়ে সেই দেশের প্রত্যেক কোম্পানির বারকোড শুরু হয়। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের জিএস১ কোড হলো ৮৯০। এর অর্থ হলো, ভারতীয় কোম্পানির উৎপাদিত সকল পণ্যের বারকোড নম্বর ৮৯০ সংখ্যা দ্বারা শুরু হবে।
বারকোড কেন এখন আলোচনায়
সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন সংঘাতকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের জোর দাবি উঠেছে। এই বয়কটের দাবির স্বাপেক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বারকোড দেখে ইসরায়েলি পণ্য শনাক্তের একটি পদ্ধতি প্রচার করা হচ্ছে। যেখানে বলা হচ্ছে, “ইসরাইলী পণ্য চেনার সহজ উপায়। বারকোডের শুরুতে যদি ৭২৯ সংখ্যা থাকে, বুঝে নিবেন এটা ইসরাইলী পণ্য” এবং পোস্টের সাথে সংযুক্ত ছবিতে থাকা ‘মেড ইন ইসরায়েল’ লেখা দ্বারা ইসরায়েলে উৎপাদিত পণ্য বলা হয়েছে। ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট এখানে এবং এখানে।
বারকোডে ৭২৯ কোড দ্বারা আসলে কী নির্দেশ করে?
বারকোড ইস্যুকারী সংস্থা GS1 এর দেওয়া তালিকা অনুযায়ী, ইসরায়েলের জন্য বরাদ্দকৃত কোডটি হচ্ছে ৭২৯।
Indication By Rumor Scanner
এই তালিকার শুরুতে বলা হয়েছে, জিএস১ বারকোডিং সিস্টেমে শুরুর ৩টি ডিজিট পণ্যের কোম্পানির দেশ নির্দেশ করে, তবে পণ্যটি নির্দিষ্ট করে কোন দেশে উৎপাদিত হয়েছে তা নির্দেশ করে না। তাই ৭২৯ সংখ্যা দিয়ে শুরু হওয়া বারকোডের পণ্যটি একটি ইসরায়েলি কোম্পানির পণ্য, তবে এটি ইসরায়েলে বা পৃথিবীর অন্য দেশেও উৎপাদিত হতে পারে।
অর্থাৎ, জিএস১ বারকোডিং পদ্ধতিতে ৭২৯ প্রেফিক্স ডিজিট দ্বারা নির্দেশ করা হয় যে, পণ্যটি একটি ইসরায়েলি কোম্পানির পণ্য। তবে, ৭২৯ প্রেফিক্স কোডের পণ্যটি ইসরায়েলে যেমন উৎপাদিত হতে পারে, তেমন ভিন্ন কোনো দেশেও উৎপাদিত হতে পারে। তাই নির্দিষ্ট করে বারকোডের প্রথম তিনটি সংখ্যা দ্বারা এটি জানা যায় না ঐ পণ্য কোথায় উৎপাদন করা হয়েছে। বরং যে কোম্পানি ঐ পণ্য উৎপাদন করছে সেটি কোন দেশের তা বারকোডের প্রথম তিন সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত করা যায়। তবে যদি বারকোডের প্রথম তিন সংখ্যা ৭২৯ এর পাশাপাশি পণ্যে নির্দিষ্ট করে Made in Israel লেখা থাকে তাহলে তখন নির্দিষ্ট করে বলা যাবে ঐ পণ্যটি ইসরায়েলি কোম্পানির এবং ইসরায়েলে উৎপাদিত।
মূলত, বারকোড হলো তথ্য উপস্থাপন করার একটি উপায় বা মাধ্যম, যেখানে পণ্যের প্রস্তুতকারক কোম্পানি, উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ, ওজন, পরিমাণ, মূল্য এবং স্টক সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য নির্দেশিত থাকে। বর্তমানে বিশ্বে GS1 নামক একটি বারকোড ইস্যুকারী সংস্থার স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করা হচ্ছে। GS1 প্রতিটি দেশের জন্য তিন সংখ্যার একটি কোড সরবরাহ করে থাকে। এর মাধ্যমে, নির্দিষ্ট পণ্যটি কোন দেশের কোম্পানির তা নির্দেশ করে। তবে পণ্যটির উৎপাদন ঐ দেশেও হতে পারে অথবা অন্য কোনো দেশেও হতে পারে।