Home Blog Page 560

পাঁচজন নয়, ময়মনসিংহে ট্রেন-ট্রাক সংঘর্ষে চারজন মারা গেছেন

0

গত ২৫ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জে বলাকা কমিউটার ট্রেন ও বালুবাহী ট্রাক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় পাঁচজন মারা গেছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

ট্রেন-ট্রাক সংঘর্ষে

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ),  এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।     

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ময়মনসিংহের ট্রেন ও ট্রাক দুর্ঘটনায় পাঁচজন মারা যাওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং উক্ত দুর্ঘটনায় চারজন মারা গেছেন। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ইংরেজি পত্রিকা The Daily Star এর বাংলা সংস্করণের ওয়েবসাইটে গত ২৫ ডিসেম্বর ট্রাকে ট্রেনের ধাক্কায় ৪ জনের মৃত্যু, ময়মনসিংহ- নেত্রকোণা রুটে রেল যোগাযোগ বন্ধ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: The Daily Star

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ‘ময়মনসিংহ শহরে মালবাহী একটি ট্রাকে বলাকা কমিউটার ট্রেনের ধাক্কায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে।’

একই তথ্য পাওয়া যায় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল NTV এর অনলাইন নিউজপোর্টাল NTV Online এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও। 

প্রতিবেদনে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে বলা হয়, নিহত চারজনের মধ্যে তিনজনের পরিচয় জানা গিয়েছে। তারা হলেন, বৈলর গ্রামের সজীব (২৪), ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে থাকা যাত্রী নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুরের টিটু (১৪) এবং বারহাট্টার রফিকুল (৩৫)। তবে অপর আরেকজনের পরিচয় জানা যায়নি। 

Screenshot: NTV Online

পরবর্তীতে উক্ত ঘটনায় হতাহতের তথ্য নিশ্চিত হতে সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা ফায়ার সার্ভিস দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ও ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবু জাফর আহমেদ-এর সাথে রিউমর স্ক্যানার যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল থেকে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করেছি। পাঁচজন মারা যাওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়।’

মৃত্যুর সংখ্যার বিষয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমকে একই তথ্য দিয়েছেন ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন। 

মূলত, গত ২৫ ডিসেম্বর দুপুরে ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জে রেলক্রসিংয়ে বালুবোঝাই ড্রামট্রাকের সাথে বলাকা নামক কমিউটার ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে চারজন নিহত হন। উক্ত ঘটনার পর পাঁচজন নিহত হয়েছেন শীর্ষক দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।  তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত এই দুর্ঘটনায় পাঁচজন নয়, মারা গেছেন চারজন। 

সুতরাং, ময়মনসিং হেট্রেন ও ট্রাক সংঘর্ষে চারজন মারা যাওয়ার তথ্যকে পাঁচজন মারা গেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

সেনাবাহিনীর উপর আওয়ামী লীগের হামলার গুজব

সম্প্রতি, “সেনাবাহিনীর উপর হামলা করলো আ’লীগ খালেদা জিয়াকে মেরে পেলার চেষ্টা” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের হামলা

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাবাহিনীর উপর আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী কর্তৃক হামলা

করা হয়নি বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি একটি সংবাদপাঠের ভিডিও এবং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই-১

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Voice Bangla ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর “খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে বিএনপিতে উদ্বেগ I Mostofa Feroz I Voice Bangla” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওতে আলোচককে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কক্ষে এক সন্দেহভাজন ব্যক্তি ঢুকে পড়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়।

পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, বাংলা নিউজ ২৪ এর ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর “খালেদা জিয়ার কেবিনে প্রবেশের চেষ্টা: সুজন দুই দিনের রিমান্ডে” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কেবিনে প্রবেশের চেষ্টাকালে সুজন নামের এক যুবককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আটককৃত সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।

অর্থাৎ, ঐ ব্যক্তি কোন উদ্দেশ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কেবিনে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন সে ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু জানা যায়নি।

ভিডিও যাচাই-২

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, kanaksarwarNEWS ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর “আন ল‘ফুল কমান্ড মানতে বাধ্য না সেনাবাহিনী-মেজর জেনারেল এহতেশাম-উল হক kanaksarwarNEWS” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওতে দেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়। তবে, উক্ত ভিডিওর কোথাও সেনাবাহিনীর উপর আওয়ামীলীগের হামলার তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব ঘটনায় প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের তথ্য ইন্টারনেটে প্রচারিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় “সেনাবাহিনীর উপর হামলা করলো আ’লীগ খালেদা জিয়াকে মেরে পেলার চেষ্টা” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ভিডিওর খণ্ডাংশ যুক্ত করে করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, সেনাবাহিনীর উপর আওয়ামীলীগে হামলা করেছে দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের নির্দেশ এবং দেশে জরুরি অবস্থা জারির ভুয়া তথ্য প্রচার

গত ২৬ ডিসেম্বর Sabaj Shiki নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘হাসিনাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিলো সেনাকর্মকর্তা, রাতেই জরুরি অবস্থা জারি’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

সেনাবাহিনী কর্তৃক

ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ৫২ হাজার বার। ভিডিওটি প্রায় দেড় হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাবাহিনীর কোনো কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়নি এবং দেশে জরুরি অবস্থাও জারি করা হয়নি বরং সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন কার্যক্রমের পুরোনো ভিডিও ক্লিপের সাথে আলোচিত দাবিটি জুড়ে দিয়ে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি পুরোনো ঘটনার ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদন, যেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যদের পুরোনো কিছু কার্যক্রমের দৃশ্য দেখানো হয়।

আলোচিত ভিডিওটি’র শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে উল্লেখিত দাবিগুলোর সাথে ভিডিওটি’র বিস্তারিত অংশের মিল পাওয়া যায়নি। আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে আলাদা আলাদাভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই- ০১

আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘সময় টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘অবসান ঘটলো শ্বাসরুদ্ধকর বিমান ছিনতাই নাটকের’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো প্রথম ভিডিও ক্লিপের মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এর সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত দাবির কোনো মিল নেই।

ভিডিও যাচাই- ০২

আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘আলোচিত খবর’ নামের একটি গণমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ‘হঠাৎ করে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে গোটা দেশ নিরাপত্তার চাঁদরে ঢাকা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো দ্বিতীয় ভিডিও ক্লিপের মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এর সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত দাবির কোনো মিল নেই।

এছাড়াও, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের নির্দেশ এবং দেশে জরুরি অবস্থা জারির দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ধরনের তথ্য প্রচারিত হচ্ছে। নির্বাচন উপলক্ষে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি সামনে আসার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা বাড়ছে। এরই প্রেক্ষিতে গত ২৬ ডিসেম্বর Sabaj Shiki নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘হাসিনাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিলো সেনাকর্মকর্তা, রাতেই জরুরি অবস্থা জারি’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে উক্ত দাবিগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি বরং সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন পুরোনো কার্যক্রমের ভিডিও ক্লিপের সাথে আলোচিত দাবিটি জুড়ে দিয়ে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, সেনাবাহিনীর কোনো কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়নি এবং দেশে জরুরি অবস্থাও জারি করা হয়নি।

প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই প্রেক্ষিতে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৮ দিন মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করবে সেনাবাহিনী।

উল্লেখ্য, পূর্বেও সেনাবাহিনীর হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রেফতারের ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, সেনা কর্মকর্তা কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের নির্দেশ এবং দেশে জরুরি অবস্থা জারি দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

সেনাবাহিনীর হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রেফতার হওয়ার গুজব

গত ২৫ ডিসেম্বর Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে সেনাবাহিনী’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

শেখ হাসিনার গ্রেফতার

ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ২৮ হাজার বার। ভিডিওটি ৯ শত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাবাহিনীর হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার হননি এবং সেনাবাহিনী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পাওয়ার দাবিটিও সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি পুরোনো ঘটনার ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদন, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সেনাবাহিনীর সদস্যদের পুরোনো কিছু কার্যক্রমের দৃশ্য দেখানো হয়।

ভিডিওটি’র সংবাদপাঠ অংশে বলা হয়, “এবার নির্বাচনের আগে সেনা সদস্যদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ প্রদান করলেন সেনাপ্রধান। যেকোনো পরিস্থিতিতে জনগনের পাশে থাকার আহ্বান জানান। এবারের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার জন্য যেকোনো দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত বলে জানান সেনাপ্রধান। প্রয়োজনে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত।”

আলোচিত ভিডিওটি’র শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে উল্লেখিত দাবিগুলোর সাথে ভিডিওটি’র বিস্তারিত অংশের মিল পাওয়া যায়নি। আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে আলাদা আলাদাভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই-১

আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সময় টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ১১ জুন ‘সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগের পর মুক্তি পান তিনি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Somoy TV

এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো প্রথম ভিডিও ক্লিপের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, এই ভিডিওটি ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুক্তি পাওয়ার সময়ের।

ভিডিও যাচাই-২

আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৪ ডিসেম্বর ‘চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে হবেঃ সেনাপ্রধান’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: NTV News YouTube

উক্ত ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র সেনাপ্রধানের বক্তব্যের অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সেনাবাহিনীর ৫ ইউনিটকে রেজিমেন্টাল কালার প্রদান অনুষ্ঠানের। এর সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত দাবিগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই।

ভিডিও যাচাই-৩

আলোচিত ভিডিওটি’র অপর একটি অংশ থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম India Today’র ইউটিউব চ্যানেলে গত ০২ নভেম্বর ‘Why Does Opposition Want Bangladesh PM Sheikh Hasina to Resign’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: India Today YouTube

উক্ত ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র  একটি অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত দাবিগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই।

এছাড়াও, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনীর হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রেফতার হওয়া কিংবা সেনাবাহিনী কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পাওয়ার দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া, ২০১১ সালে বাংলাদেশে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে। পরবর্তীতে এই ব্যবস্থা আর পুর্ণবহাল করা হয়নি।

অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সঠিক নয়।

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ ডিসেম্বর Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে সেনাবাহিনী’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিডিওটির দাবিগুলোর বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি পুরোনো ভিডিও ক্লিপ ও ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিগুলো প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, সেনাবাহিনীর হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার হওয়া এবং সেনাবাহিনী কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পাওয়ার তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

সাঁজোয়া যান নিয়ে সেনাবাহিনী কর্তৃক গণভবন ঘেরাও করার গুজব

সম্প্রতি, “সাঁজোয়া যান নিয়ে গণভবন ঘেরাও করলো সেনাবাহিনী, ভয়ে হাসিনার নতুন সিদ্ধান্ত | Caretaker Government” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

সাঁজোয়া যান নিয়ে

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সাঁজোয়া যান নিয়ে গণভবন ঘেরাও করেনি বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি সংবাদপাঠের ভিডিও এবং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই-১

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, Boishakhi Tv News এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর “নয়াপল্টনে বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া | BNP News | Morshed | 14Nov18” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ঘটনার এক পর্যায়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। 

অর্থাৎ, উক্ত ভিডিওটি অপ্রাসঙ্গিকভাবে আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই-২

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, BNP Media Cell Narayanganj ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর “কক্সবাজার মহেশখালী উপজেলা অসহযোগ আন্দোলন দেশব্যাপী অবরোধ বিএনপির আসন কক্সবাজার-২ মহেশখালী” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওর বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর মহেশখালীতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ সমর্থনে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা আলমগীর মুহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ এর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

অর্থাৎ, অপ্রাসঙ্গিকভাবে আলোচিত ভিডিওতে উক্ত ফুটেজটি ব্যবহার করা হয়েছে।

এছাড়াও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে সাঁজোয়া যান নিয়ে সেনাবাহিনীর গণভবন ঘেরাওয়ের সত্যতা জানা যায়নি।

প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাবসহ সব বাহিনী ২৯ ডিসেম্বর মাঠে নামবে। তারা মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩ দিন দায়িত্ব পালন করবে।

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে সশস্ত্র বাহিনী। নির্বাচনের মাঠে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনীর উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে “সাঁজোয়া যান নিয়ে গণভবন ঘেরাও করলো সেনাবাহিনী, ভয়ে হাসিনার নতুন সিদ্ধান্ত” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ভিডিওর খণ্ডাংশ যুক্ত করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, সাঁজোয়া যান নিয়ে সেনাবাহিনী গণভবন ঘেরাও করেছে দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশিদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার কোনো তালিকা প্রকাশ করেনি

সম্প্রতি,“ভিসা নিষেধাজ্ঞার লিস্ট প্রকাশ করলো যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ ও নেতাদের ভিসা বাতিল” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

ভিসা নিষেধাজ্ঞার

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পুলিশ ও নেতাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার কোনো তালিকা প্রকাশ করেনি হয়নি বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি একটি সংবাদপাঠের ভিডিও এবং ভিন্ন ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই-১

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, ATN News এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২১ ডিসেম্বর “বাংলাদেশকে ‘অ্যালার্ট লিস্ট’ তৈরির প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের | Alert List | Police | USA | ATN News” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে একটি অ্যালার্ট লিস্ট তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে। তবে প্রতিবেদনের কোথাও ভিসা নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করার কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ভিডিও যাচাই-২

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে BanglaVision News এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২২ ডিসেম্বর “অবস্থানে অনড় জাতিসংঘ, কথা বলবে নির্বাচনের পর; জানালেন স্টিফেন ডুজারিক | Stéphane Dujarric | UN” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওতে দেখা যায়, জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক এক প্রশ্নের জবাবে জানান, জাতিসংঘ বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে জাতিসংঘ পূর্বের অবস্থানেই অনড় রয়েছে।

অর্থাৎ, উক্ত ভিডিও ক্লিপগুলোকোনো প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওতে যুক্ত করা হয়েছে।

পরবর্তীতে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পুলিশ ও নেতাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার তালিকা প্রকাশ করেছে  কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সামাজিক মাধ্যমে এসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

তবে, দৈনিক যুগান্তরে গত ২৪ সেপ্টেম্বর “যে কারণে ভিসা নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গণতন্ত্র ও নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর আনুষ্ঠানিক ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তবে কোনো ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেনি যুক্তরাষ্ট্র।

কেন ভিসা নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয় না- এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বলেন, ভিসানীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেওয়া হবে, তাদের নাম প্রকাশ করা হয় না। কারণ কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যে কোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য। তিনি আরও বলেন, সাক্ষ্যপ্রমাণ ভালোভাবে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

অর্থাৎ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতিতে নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পুলিশ ও নেতাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার দাবির বিষয়ে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার গত ২২ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে তাদেরকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে প্রচার হয়ে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি “ভিসা নিষেধাজ্ঞার লিস্ট প্রকাশ করলো যুক্তরাষ্ট্র। পুলিশ ও নেতাদের ভিসা বাতিল” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ভিডিওর খণ্ডাংশ যুক্ত করে করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পুলিশ ও নেতাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার তালিকা প্রকাশ করেছে দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ভিডিওতে থাকা এই নারী মির্জা ফখরুলের মেয়ে নয়

সম্প্রতি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মেয়ে শীর্ষক দাবিতে একটি নারীর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

গত সেপ্টেম্বরে Rj Rabbi Hossen নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি ভিডিওই (আর্কাইভ) এখন অবধি প্রায় ৫৮ লক্ষ বার দেখা হয়েছে। ৭৫ হাজার রিয়েক্ট পাওয়া এই রিল ভিডিওটি শেয়ার করেছেন ২২০০ এর অধিক মানুষ। 

মির্জা ফখরুল

একই ভিডিও ফেসবুকের আরেক পোস্টে  দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওতে থাকা নারী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মেয়ে নয় বরং আসমা আজিজ নামে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের এক নারী সদস্যের ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে Asma Aziz নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বরে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর সাথে উক্ত আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর নারীর চেহারার  মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও থেকে জানা যায়, আসমা আজিজ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সহ-স্বনির্ভর সম্পাদক। তার অ্যাকাউন্টেও তিনি নিজের একই পরিচয় উল্লেখ করেছেন। উক্ত ভিডিওতে তিনি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করেন। 

অর্থাৎ, আলোচিত নারী মির্জা ফখরুলের মেয়ে নয়। 

তাছাড়া, মির্জা ফখরুলের দুই মেয়ে রয়েছে। এরা হলেন বড় মেয়ে মির্জা সামারুহ ও ঢাকায় ছোট মেয়ে মির্জা সাফারুহ।

আমরা অধিকতর নিশ্চিতের জন্য দুই মেয়ের ছবির সাথে আলোচিত নারীর ছবি মিলিয়ে দেখেছি। তবে তাদের দুইজনের সাথে উক্ত নারীর চেহারার মিল পাওয়া যায়নি।  

বড় মেয়ে বড় মেয়ে মির্জা সামারুহ এর সাথে তুলনা দেখুন – 

Video Comparison: Rumor Scanner

ছোট মেয়ে মির্জা সাফারুহ এর সাথে তুলনা দেখুন – 

Video Comparison: Rumor Scanner

মূলত, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মেয়ে দাবিতে একজন নারীর ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ব্যক্তির নাম আসমা আজিজ। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সহ-স্বনির্ভর সম্পাদক বলে নিজেকে পরিচয় দিয়ে থাকেন। তাছাড়া, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দুই মেয়ের সাথেও আলোচিত দাবিতে উল্লিখিত নারীর মিল পাওয়া যায়নি৷ 

সুতরাং, ভিন্ন একজন নারীকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মেয়ে দাবিতে ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

খালেদা জিয়ার কেবিনে ধরা পড়া ব্যক্তি ভারতীয় নাগরিক নয় 

গত ২৩ ডিসেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কেবিনে ঢোকার চেষ্টার সময় এক যুবককে আটক করা হয়। এ সংক্রান্ত ইউটিউবে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে, “খালেদা জিয়ার কেবিনে ঢুকে পড়া ব্যক্তিটি ভারতের নাগরিক এবং তিনি সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়েছেন।”

খালেদা জিয়ার

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার আগ অবধি আলোচিত ভিডিওটি প্রায় ২ লাখ ৮৩ হাজার বার দেখা হয়েছে। এছাড়া ভিডিওটিতে প্রায় ৮ হাজার ৯ শত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। ভাইরাল ভিডিওটির মন্তব্যঘর ঘুরে পোস্টটির দাবির প্রেক্ষিতে অধিকাংশ নেটিজেনকে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা যায়। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, খালেদা জিয়ার কেবিনে ঢুকে পড়া ব্যক্তিটি ভারতের নাগরিক নয় এবং উক্ত ব্যক্তির সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ার দাবিটিও সঠিক নয় বরং মোঃ সুজন নামে আটক ব্যক্তির বাড়ি ফরিদপুরে এবং হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ তাকে আটক করে ঢাকার ভাটারা থানা পুলিশের হেফাজতে দিয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি দুইটি ভিডিও ক্লিপ ও ছবি যুক্ত করে চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদন। যেখানে আলোচিত দাবিটি প্রসঙ্গে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের দুটি ভিডিও দেখানো হয়।  

ভিডিও যাচাই

আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো প্রথম ভিডিওটির অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ‘NAYEEM ELLI 2’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে “রাতের আধারে খালেদা জিয়ার কেবিনে একি কান্ড।।কে এই গ্রেফতার সুজন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একই ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওটিতে খালেদা জিয়ার কেবিনে গত ২৩ ডিসেম্বর সুজন নামের এক ব্যক্তির ঢুকে পড়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন চ্যানেলটির উপস্থাপক। ভিডিওটির কোথাও সুজন নামক ব্যক্তি ভারতের কিংবা সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতারের বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তী ভিডিওটির অনুসন্ধানে ‘Channel US Bangla’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৪ ডিসেম্বর “খালেদা জিয়ার কেবিনে ঢুকতে যাওয়া যুবক ভারতীয়! What is his identify” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত অনুরূপ ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওটিতে চ্যানেলটির উপস্থাপক খালেদা জিয়ার কেবিনে ঢুকার চেষ্টা করা ব্যক্তি সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন ব্যক্তিটি ভারতের বলে তার ধারণা হয়। এছাড়াও তিনি এ বিষয়ে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেন। 

অর্থাৎ আলোচিত ভিডিওতে খালেদা জিয়ার কেবিনে ঢুকার চেষ্টা করা ব্যক্তি ভারতের এবং উক্ত ব্যক্তি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতারের দাবি করা হলেও ভিডিওটিতে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।  

পরবর্তীতে আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে অর্থাৎ খালেদা জিয়ার কেবিনে ঢুকা ব্যক্তিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে চ্যানেল ২৪ এর ওয়েবসাইটে গত ২৪ ডিসেম্বর “খালেদা জিয়ার কেবিনে ঢুকতে চাওয়া সেই যুবক দুই দিনের রিমান্ডে” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৩ ডিসেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কেবিনে ঢোকার চেষ্টা করে সুজন নামক এক যুবক। পরবর্তীতে ওই যুবককে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আটক করে এবং পরে তাকে ভাটারা থানার পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। 

আটক সুজনের পরিচয়ের বিষয়ে অনুসন্ধানে বিডিনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে গত ২৪ ডিসেম্বর “খালেদার কেবিনে ঢোকার চেষ্টা: আটক যুবক ২ দিনের রিমান্ডে” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আটক সুজনের বাড়ি ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চর চাঁদপুরে।

মূলত, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। গত ২৩ ডিসেম্বর বিকেলে তার কেবিনে ঢোকার চেষ্টা করে ফরিদপুরের সুজন নামক এক ব্যক্তি। পরবর্তীতে তাকে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ আটক করে এবং ভাটারা থানায় তাকে সোপর্দ করা হয়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে “খালেদা জিয়ার কেবিনে ঢুকে পড়া ব্যাক্তি ভারতের ধরা পড়লো সেনাবাহিনীর হাতে” শীর্ষক শিরোনামে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়৷ তবে রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে দেখেছে যে, অধিক ভিউ পাবার আশায় দুইটি ভিন্ন ভিডিও ক্লিপ ও ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। 

সুতরাং, খালেদা জিয়ার কেবিনে ঢুকে পড়া ব্যক্তি ভারতের, ধরা পড়লো সেনাবাহিনীর হাতে শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে ; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে বৈঠক এবং নির্বাচন বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব দেওয়ার গুজব

সম্প্রতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বৈঠক, ৭ তারিখ নির্বাচন বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব– শীর্ষক শিরোনামে এবং থাম্বনেইলে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবিতে বৈঠক হয়েছে এবং আগামী ৭ জানুয়ারি আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো প্রস্তাব আসেনি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য কোনো বৈঠকও হয়নি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো কয়েকটি ছবি এবং সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজের দেওয়া একটি বক্তব্য যুক্ত করে সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি একটি ভিডিও।

ভিডিও যাচাই 

আলোচিত ভিডিওটিতে সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। সেই বক্তব্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে Voice Bangla নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ২২ ডিসেম্বর “পিটার ডি হাস এবং সারা কুক কি কথা বললেন পররাষ্ট্র সচিবের সাথে?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। (আর্কাইভ

উক্ত ভিডিওটিতে থাকা মোস্তফা ফিরোজের দেওয়া বক্তব্যের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা মোস্তফা ফিরোজের বক্তব্যের হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখ যায়, সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ গত বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস এবং ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সাথে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের বৈঠক নিয়ে কথা বলছেন। এছাড়া, মোস্তফা ফিরোজকে একই তারিখে চ্যানেল ২৪ এর অনলাইনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাঠ করতে শোনা যায়।

এছাড়া, সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য বৈঠক বা যুক্তরাষ্ট্র আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বন্ধের প্রস্তাব দেওয়া সংক্রান্ত কোনো কথা বলতে বা তথ্য উপস্থাপন করতে শোনা যায়।

পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় গণমাধ্যমেও এসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

তাছাড়া, ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইটেও এসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

মূলত, আগামী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে বেশ কয়েকদিন ধরেই এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে করার দাবি জানিয়ে আসছে জাতিসংঘসহ বিভন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের অবস্থান জানিয়েছে। দেশটি বলছে, বাংলাদেশে তারা অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায়। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বৈঠক, ৭ তারিখ নির্বাচন বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিটি সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজের ভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার একটি ভিডিওর সাথে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি যুক্ত করে চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, পক্ষ থেকে কোনো প্রস্তাব আসেনি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য কোনো বৈঠকও হয়নি। এছাড়া, আন্তর্জাতিক ও জাতীয় গণমাধ্যমে এসংক্রান্ত কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি। 

প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষনে এই ঘোষণা দেন তিনি।

সুতরাং, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো প্রস্তাব এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য বৈঠক হয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

মাদক গ্রহণের এই ভিডিওটি শামীম ওসমানের স্ত্রীর নয়

সম্প্রতি, সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বউ দাবিতে এক নারীর মাদক গ্রহণের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওতে দেখানো নারী সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের স্ত্রী নন। ভিডিওতে মাদক গ্রহণ করা নারীর প্রকৃত পরিচয় না পাওয়া গেলেও শামীম ওসমানের স্ত্রীর চেহারার সাথে উক্ত নারীর চেহারার কোনো মিল পাওয়া যায়নি। 

আলোচিত দাবির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য শুরুতে সংসদ শামীম ওসমানের স্ত্রীর চেহারার সাথে আলোচিত দাবিতে দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর নারীর চেহারার চেহারা মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করে রিউমর স্ক্যানার।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে শামীম ওসমানের স্ত্রীকে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায় শামীম ওসমানের স্ত্রীর নাম সালমা ওসমান লিপি। 

উক্ত সূত্র ধরে ফেসবুকে সালমা ওসমান লিপির নামে পরিচালিত একটি পেজ খুঁজে পাওয়া যায়। এই পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, পেজটিতে সালমা ওসমান লিপির নিয়মিত কার্যক্রমের ছবি ও ভিডিও প্রচার করা হয়। 

তবে এই পেজে প্রচারিত সালমা ওসমান লিপির ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওর মাদক গ্রহণ করা নারীর চেহারার কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। 

Image Comparison by Rumor Scanner 

পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে সালমা ওসমান লিপিকে নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যম প্রকাশিত প্রতিবেদনে (, , ) থাকা তার ভিডিও ও ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওর নারীর চেহারা বিশ্লেষণ করেও কোনো মিল পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম।

তবে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর নারীর আসল পরিচয় খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে একই ভিডিওটি গত ০৭ আগস্ট ছাত্রলীগ নেত্রীর মদ খাওয়ার ভিডিও দাবিতেও ফেসবুকে পোস্ট (আর্কাইভ) করা হয়। তবে ঐ পোস্টে দাবি সমর্থিত কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

মূলত, সম্প্রতি ফেসবুকে এক নারীর মাদক গ্রহণের একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে ভিডিওর নারী নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের স্ত্রী। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে শামীম ওসমানের স্ত্রী সালমা ওসমান লিপির চেহারার সাথে প্রচারিত ভিডিওতে মাদক গ্রহণ করা নারীর চেহারা মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। আলোচিত ভিডিওতে অতীতেও ভিন্ন ভিন্ন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হলেও এই নারীর প্রকৃত পরিচয় জানা যায়নি।

সুতরাং, সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের স্ত্রী দাবিতে ভিন্ন এক নারীর মাদক গ্রহণের ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র