সম্প্রতি, ”সংদের ভিতরে ওবায়দুল কাদেরকে পিটিয়ে রক্তাক্ত মন্ত্রিত্ব থেকে বহিষ্কার হলেন ওবায়দুল কাদের।” শীর্ষক শিরোনাম এবং “সংসদের ভিতরে ওবায়দুল কাদেরকে পিটিয়ে রক্তাক্ত আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হলেন ওবায়দুল কাদের” থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে ১৫ হাজার ৬০০ বার। ভিডিওটিতে ৪ শত ৮০ টি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে সংসদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়নি এবং তাকে মন্ত্রিত্ব ও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারও করা হয়নি বরং গণমাধ্যমে প্রকাশিত মালদ্বীপের সংসদ সদস্যদের মারামারির সংবাদের ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। আলোচিত ভিডিওটি’র শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে উল্লেখিত দাবিগুলোর সাথে ভিডিওটি’র বিস্তারিত অংশের মিল পাওয়া যায়নি।
ভিডিওতে প্রচারিত আলোচিত দাবিগুলো নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে উক্ত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানের এপর্যায়ে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে পৃথকভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
ভিডিও যাচাই ০১
ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে বেসরকারি ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম ATN News Live এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৯ জানুয়ারি “সংসদে মারমারি করলেন এমপিরা | Maldives | Parliament Members | Fight in Parliament ATN News” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনের একটি অংশই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে যুক্ত করা হয়েছে।
ভিডিও থেকে জানা যায়, সম্প্রতি মালদ্বীপের সংসদে মন্ত্রিসভায় নতুন চার মন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলীয় এমপিদের মতবিরোধ হলে তা এক পর্যায়ে মারামারিতে রূপ নেয়। এটি সেই ঘটনারই একটি ভিডিও।
ভিডিও যাচাই: ০২
ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে বেসরকারি ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম RTV এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর “যে কারণে ক্ষেপলেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনের একটি অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর ওবায়দুল কাদেরের সংসদের বক্তব্যদানের ফুটেজ অংশের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিও থেকে জানা যায়, ২০২২ সালে সেপ্টেম্বের সংসদ অধিবেশনে বক্তব্য প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামের উচ্চারণ এবং নিজের পদবি ভুলভাবে উপস্থাপনের করার কারণে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যের প্রতি রাগান্বিত হন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ক্ষমতাসীন দলের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ভিডিও যাচাই: ০৩
প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে অনলাইন পোর্টাল Bdnews24 এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৫ সালের ১৭ জুলাই “Transport Minister Obaidul Quader inspects roads at Savar, Gazipur before Eid” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনের একটি অংশই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে যুক্ত করা হয়েছে।
ভিডিও থেকে জানা যায়, তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের সেদিন ঈদের সময় ফিটনেস বিহীন গাড়ির বিষয়ে ও গাড়ির চালক এবং মালিককে আইনের আওতায় আনার কথা বলেন।
অর্থাৎ, মালদ্বীপের সংসদে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের এমপিদের মারামারির ঘটনার ভিডিও ফুটেজের সাথে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনায় ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের ফুটেজ সম্পাদনার মাধ্যমে যুক্ত করে সংসদে ওবায়দুল কাদেরকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা এবং তাকে মন্ত্রিত্ব ও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এছাড়া, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহণ এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে সংসদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করা এবং তার মন্ত্রিত্ব ও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হওয়ার দাবির প্রেক্ষিতে দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ২৯ জানুয়ারি মালদ্বীপের সংসদে মন্ত্রিসভায় নতুন চার মন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলীয় এমপিদের মতবিরোধ হয়। পরবর্তীতে তা এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মারামারিতে রূপ নেয়। এই তথ্যের ভিত্তিতে বেসরকারি ইলেকট্রনিক মিডিয়া এটিএন নিউজে একটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। এছাড়া, ২০২২ সালের নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামের উচ্চারণ এবং নিজের পদবি ভুল ভাবে উপস্থাপনের কারণে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যের প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ক্ষমতাসীন দলের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাগান্বিত হন। এই তথ্যের ভিত্তিতে সেসময় বেসরকারি ইলেকট্রনিক মিডিয়া আরটিভিতে সংবাদ প্রচারিত হয়। এছাড়া, ২০১৫ সালের জুলাই মাসে ঈদের সময় ওবায়দুল কাদের ফিটনেস বিহীন গাড়ির বিষয়ে ও গাড়ির চালক এবং মালিককে আইনের আওতায় আনার কথা বলেন। যা সেসময় অনলাইন পোর্টাল বিডিনিউজ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত হয়। সম্প্রতি, এই ভিডিওগুলো থেকে কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফুটেজ সংগ্রহ করে সেগুলো ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে একত্র করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে সংসদে পিটিয়ে রক্তাক্ত এবং তাকে মন্ত্রিত্ব ও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বে সংসদে জি এম কাদের কর্তৃক ওবায়দুল কাদেরকে পেটানোর দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচারিত হলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে সংসদে রক্তাক্ত করা মন্ত্রিত্ব ও আওয়ামী লীগ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা।