গত ৩১ জানুয়ারি Sabai Shiki নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে “সংসদে ওবায়দুল কাদেরকে পিটালো জিএম কাদের, ভয়ে সংসদ বন্ধের নির্দেশ” শীর্ষক থাম্বনেইল এবং “সংসদে বসেই ওবায়দুল কাদেরকে পি*টা*লো জিএম কাদের, হাসিনার অধিনে সংসদ বয়কট” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভাইরাল এক ভিডিও দেখা হয়েছে প্রায় ২ লক্ষ ১৫ হাজার বার। ভিডিওটিতে প্রায় ৩ হাজার হাজার ২০৯ পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
পরবর্তীতে আরও একটি ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়। সেটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ইউটিউবে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটি’র লিংক শেয়ার করে ফেসবুকে প্রচারিত একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সংসদে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের পিটাননি এবং গত ৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রথম অধিবেশনে সংসদ বন্ধ কিংবা বয়কটের ঘটনাও ঘটেনি বরং গত ২৮ জানুয়ারি মালদ্বীপের সংসদে সরকারি ও বিরোধীদলীয় এমপিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা এবং গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের সংসদে জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে উদ্দেশ্য করে লালমনিরহাট-১ আসনের এমপি মোতাহার হোসেনের দেওয়া বক্তব্যের প্রেক্ষিতে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের উত্তেজিত হওয়ার ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত একাধিক ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটিতে কোথাও ওবায়দুল কাদেরকে জিএম কাদের পিটিয়েছেন এ সম্পর্কিত কোনো তথ্য বা প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। এমনকি ভিডিওটিতে আলোচিত দাবির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কোনো ভিডিও কিংবা বক্তব্যেরও উল্লেখ পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ ভিডিওটি’র শিরোনাম ও থাম্বনেইলে প্রচারিত দাবিটির সাথে বিস্তারিত অংশের অসামঞ্জস্যতা রয়েছে।
আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত দাবির বিষয়ে আরও অনুসন্ধানে ভিডিওটিতে দেখানো ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে আলাদাভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে যুক্ত প্রথম তিনটি ভিডিও ক্লিপই গত ২৯ জানুয়ারি মালদ্বীপে সংসদের ভেতরে এমপিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মূলধারার গণমাধ্যম এটিএন নিউজ, যমুনা টিভি এবং ডিবিসি নিউজ এ প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদন থেকে নেওয়া।
আলোচিত ভিডিওর সর্বশেষ অংশে থাকা ভিডিওটির অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে যমুনা টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি “আবারও উত্তপ্ত জাতীয় সংসদ, জাপা এমপিদের ওয়াকআউটের হুমকি | Parliament | JaPa | Jamuna TV” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনের একটি অংশই আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রথম অধিবেশন শুরু দিন রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর নিজের বক্তব্য দিচ্ছিলেন লালমনিরহাট-১ আসনের এমপি মোতাহার হোসেন। কথা প্রসঙ্গে সংসদকে তিনি জানান, অনেক আগে সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জামানত হারিয়েছিলেন তার কাছে। এতে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন জাপা এমপিরা। এ ইস্যুতে পয়েন্ট অব অর্ডারে কথা বলতে না দিলে ওয়াকআউটের হুমকি দেন তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ডেপুটি স্পিকারের জায়গায় কার্যক্রম চালানোর দায়িত্ব নিজ হাতে নেন স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী।
তবে এই ঘটনায় সরকার ও বিরোধীদলের সদস্যদের মধ্যে হাতাহাতি, সংঘর্ষ কিংবা সংসদ বন্ধ বা বয়কটের ঘটনা ঘটেনি।
অর্থাৎ, উক্ত ভিডিও ক্লিপগুলোর সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই উক্ত ভিডিও ক্লিপগুলো আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাথে যুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া, মূলধারার গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ করে ওবায়দুল কাদেরকে জি এম কাদের পিটিয়েছেন কিংবা সংসদ বন্ধের নির্দেশ সম্পর্কিত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ২৮ জানুয়ারি মালদ্বীপের সংসদ অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জোর মন্ত্রীসভার সদস্যদের অনুমোদন দিতে সংসদের বিশেষ অধিবেশন বসে। মুইজ্জো সরকারের নতুন চার মন্ত্রীকে মন্ত্রিসভায় যোগদানের বিলে প্রবল অসম্মতি জানান বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। সেসময় বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের চেম্বারে প্রবেশের বাধা দেন সরকারি দলের এমপিরা। এর থেকেই দুই দলের এমপিদের মধ্যে মারামারি ও চুল টানাটানির ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রথম অধিবেশনে লালমনিরহাট-১ আসনের এমপি মোতাহার হোসেন বলেন, অনেক আগে সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জামানত হারিয়েছিলেন তার কাছে। এই ঘটনায় তাৎক্ষণিক জাতীয় পার্টির সদস্যরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এতে সংসদে হট্টগোল দেখা দিলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এসব ঘটনা নিয়ে নিয়ে একাধিক গণমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এরই প্রেক্ষিতে একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের কিছু ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে “সংসদে ওবায়দুল কাদেরকে পিটালো জিএম কাদের, ভুয়ে সংসদ বন্ধের নির্দেশ” শীর্ষক থাম্বনেইল এবং “সংসদে বসেই ওবায়দুল কাদেরকে পি*টা*লো জিএম কাদের, হাসিনার অধিনে সংসদ বয়কট” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে যে, দাবিগুলো সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে একাধিক ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিক তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, সংসদে ওবায়দুল কাদেরকে জিএম কাদের পিটিয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- ATN News : সংসদে মারমারি করলেন এমপিরা | Maldives | Parliament Members | Fight in Parliament | ATN News
- Jamuna TV : উত্তপ্ত মালদ্বীপের পার্লামেন্ট; সংসদের ভেতর মারামারি! | Maldives Parliament Clash | Jamuna TV
- DBC News : মালদ্বীপে সংসদের ভেতর এমপিদের মধ্যে মারামারি | DBC NEWS
- Jamuna TV: আবারও উত্তপ্ত জাতীয় সংসদ, জাপা এমপিদের ওয়াকআউটের হুমকি | Parliament | JaPa | Jamuna TV