কালবেলা’র নকল ফটোকার্ডে মমতাজের মন্তব্য বিকৃত করে প্রচার

- Advertisement -

সম্প্রতি, ‘সুযোগ বুঝে আমাকে খেয়ে ছেড়ে দিয়েছে’ শীর্ষক তথ্য বা শিরোনামে মানিকগঞ্জ-২ (সিংগাইর-হরিরামপুর-সদরের তিনটি ইউনিয়ন) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগমের ছবিযুক্ত জাতীয় দৈনিক কালবেলার ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

মমতাজের মন্তব্য

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগম ‘সুযোগ বুঝে আমাকে খেয়ে ছেড়ে দিয়েছে’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি এবং দৈনিক কালবেলাও উক্ত শিরোনামে কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং উক্ত ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট করে তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে কালবেলা’র ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে এই সংবাদটি প্রচারের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১৬ জানুয়ারি ২০২৪।

Screenshot: Facebook Claim 

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফটোকার্ডটিতে থাকা তারিখ এবং কালবেলা’র লোগোর সূত্র ধরে কালবেলার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ১৬ জানুয়ারি প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও কালবেলা’র ওয়েবসাইট কিংবা অন্যকোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবিতে প্রচারিত কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।

তবে একই দিনে কালবেলা’র ফেসবুক পেজে ‘সুযোগ বুঝে আমাকে টেনে হিঁচড়ে নিচে নামিয়ে দিচ্ছে’ শীর্ষক শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায় এবং এর কমেন্টে একই বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Kalbela Facebook Page 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়াই করে পরাজিত হয়েছেন সংগীতশিল্পী ও রাজনীতিক মমতাজ বেগম। নির্বাচনের পর প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ তুলেছেন তিনি। ১৫ জানুয়ারি রাতে ফেসবুক নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে একটি পোস্ট (আর্কাইভ) দিয়েছেন মমতাজ। 

পোস্টে মমতাজ লিখেছেন, নিজের খ্যাতিটাও মাঝে মাঝে গলার কাঁটা মনে হয়। সুনাম নষ্ট হবে এই ভয়ে মুখ বুঁজে কত যে অত্যাচার সহ্য করতে হয় তা আমি আর আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।

তিনি আরও লিখেছেন, যা কিছু অর্জন করেছি তা আমার অনেক কষ্টের অর্জন। মা বাবা পীর মুর্শিদের দোয়াও আছে। আমার এই অর্জনের পেছনে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির হাত না থাকলেও আজ সেটাকে ধ্বংস করতে কতিপয় ব্যক্তি উঠেপড়ে লেগেছে। যারা কোনোদিনই আমার সুনাম, খ্যাতি, অর্জন, ভালো থাকা কোনোভাবেই সহ্য করতে পারে নাই, তবুও আমি আমার সাধ্যমতো তাদের সম্মান ও সহযোগিতা করে আসছি, কিন্তু লাভ হয়নি! সুযোগ বুঝে ঠিকই আমাকে টেনেহিঁচড়ে নিচে নামিয়ে দিচ্ছে।

পোস্টের শেষে মমতাজ লিখেছেন, কষ্টটা হলো আমি যা না, আমি যা করিনি সেই অপবাদ আমাকে দিচ্ছে শুধু কিছু অর্থ স্বার্থের বিনিময়ে। আমি জানি সত্যটা ঠিকই একদিন এ দেশের মানুষ জানবে শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র। আল্লাহ তুমি এই স্বার্থপর মানুষগুলোকে হেদায়েত দান করো।

অর্থাৎ, কালবেলা’র ফেসবুক পেজে গত ১৬ জানুয়ারি প্রচারিত ফটোকার্ডটির শিরোনাম ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট করে তাতে ‘সুযোগ বুঝে আমাকে খেয়ে ছেড়ে দিয়েছে’ শীর্ষক শিরোনাম যুক্ত করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

Photocard Comparison by Rumor scanner

মূলত, গত ১৫ জানুয়ারি সাবেক সংসদ সদস্য ও সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগম তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে একটি পোস্ট দেন। তার পোস্টের “সুযোগ বুঝে ঠিকই আমাকে টেনেহিঁচড়ে নিচে নামিয়ে দিচ্ছে” শীর্ষক অংশকে কোট করে মূলধারার গণমাধ্যম কালবেলা তাদের ফেসবুক পেজে একটি ফটোকার্ড প্রকাশ করে। পরবর্তীতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় উক্ত ফটোকার্ডের শিরোনাম বিকৃতের মাধ্যমে ‘সুযোগ বুঝে আমাকে খেয়ে ছেড়ে দিয়েছে’ শীর্ষক শিরোনামে কালবেলা’র ফটোকার্ড দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়।

উল্লেখ্য, পূর্বের কালবেলা’র ফটোকার্ড এডিট করে ইন্টারনেটে প্রচার করা হলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।  

সুতরাং, কালবেলা’র নাম ব্যবহার করে ‘সুযোগ বুঝে আমাকে খেয়ে ছেড়ে দিয়েছে’ শীর্ষক শিরোনামে মমতাজকে উদ্ধৃত করে  প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা বিকৃত।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img