বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচজন নয়, চারজন নিহত হয়েছেন 

গত ০৫ জানুয়ারি রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে উক্ত দুর্ঘটনার ঘটনায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে নিহতের দুইটি ভিন্ন সংখ্যা প্রচারিত হয়। অধিকাংশ গণমাধ্যমে নিহতের সংখ্যা ৪ জন বলে দাবি করা হলেও কিছু কিছু গণমাধ্যম নিহতের সংখ্যা ৫ জন বলে দাবি করা হয়। তবে যেসকল গণমাধ্যমে ৫ জন নিহত খবর প্রচার করা হয় তার মধ্যে অনেক গুলোতে পরবর্তীতে সংশোধন করে ৪ জন নিহত হয়েছে বলে জানানো হয়।

পরবর্তীতে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা যাচাইয়ে অনুসন্ধানে নামে রিউমর স্ক্যানার টিম।

ট্রেনে

পাঁচজন নিহত দাবিতে দেশীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ প্রতিবেদন দেখুন- নিউজবাংলা২৪, নয়া দিগন্ত, জাগোনিউজ২৪, জনকণ্ঠ, যুগান্তর, ইনডিপেনডেন্ট টিভি, এখন টিভি, এক টাকার খবর (ফেসবুক) নাগরিক টিভি (ফেসবুক), ডেইলি ক্যাম্পাস, ঢাকা প্রকাশ, এবিনিউজ২৪, নিউজজি২৪, বাংলা২৪লাইভ নিউজপেপার, বাহান্ন নিউজ, বার্তা বাজার, ডেল্টা টাইমস, অর্থসূচক, দৈনিক সরোবর, জনমত, সময়ের কণ্ঠস্বর, আজকের বাংলাদেশ, জাগরণ, দৈনিক করতোয়া, আজকের দর্পণ, শেয়ারনিউজ২৪, দৈনিক করতোয়া– ২(ফেসবুক)।

একই দাবি দৈনিক আমাদের সময় প্রতিবেদন করলেও পরবর্তীতে তারা প্রতিবেদনটি সংশোধন করে নেয়। সংশোধন পূর্ববতী প্রতিবেদনের আর্কাইভ পাওয়া যায়নি।

পাঁচজন নিহত দাবিতে ভিনদেশী গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ প্রতিবেদন দেখুন- এই সময়, হিন্দুস্তান টাইমস, ফার্স্ট পোস্ট, দ্য ইকোনোমিক টাইমস, উইয়ন, নিউজ৯, ইন্ডিয়া টুডে, এনডিটিভি, আউটলুক ইন্ডিয়া, কালিঙ্গা টিভি, পর্দাফাঁস, প্রেগ নিউজ, মিন্ট, এডিটরজি, ইন্ডিয়া ব্লুম, নিউজ রুম ওডিশা, ইন্টারন্যাশনাল দ্য নিউজ, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, গলফ নিউজ। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচজন নিহত হননি বরং উক্ত ঘটনায় সর্বমোট চারজন নিহত হয়েছেন।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বিডিনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে ৯ জানুয়ারি “ট্রেন পোড়ানোর মামলায় নবীকে রিমান্ডে চায় রেল পুলিশ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ০৫ জানুয়ারি শুক্রবার রাত ৯টার দিকে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার কমলাপুরে ঢোকার আগে আগে আগুন লাগানো হলে একই পরিবারের তিনজনসহ চারজন পুড়ে মারা যান।

একই তারিখে আজকের পত্রিকা “বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন: রেল মন্ত্রণালয়ের তদন্তেও সন্দেহ ৩ যুবককে নিয়ে” শীর্ষক শিরোনামে একটি আরেকটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

এই প্রতিবেদনেও চারজন নিহতের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। 

এছাড়া, ঘটনার দিন ০৫ জানুয়ারি বিবিসি বাংলা এবং ডয়েচে ভেলে-ও চারজন নিহতের তথ্য উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ করে।

পাশাপাশি একই দিনদেশীয় মূলধারার অধিকাংশ গণমাধ্যম চারজন নিহত হওয়ার তথ্যে সংবাদ প্রকাশ করেছে। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন- প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, কালের কণ্ঠ এবং সমকাল। 

বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য বার্ন ইনস্টিটিউটগুলোর জাতীয় সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেনের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার। 

অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, আহতাবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা কেউ মারা যাননি। 

পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়ার সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার। 

মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, “চারজনের লাশ হাসপাতালে আনা হয়েছে। এছাড়া কেউ মারা যাননি। চিকিৎসাধীন থাকা কেউ মারা যাননি।” 

মূলত, গত ০৫ জানুয়ারি রাজধানীর গোপীবাগ কাঁচাবাজার এলাকায় বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ট্রেনটির কয়েকটি বগি আগুনে পুড়ে যায়। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একই পরিবারের তিনজনসহ মোট চারজন পুড়ে মারা যান। তবে এই ঘটনাটিকেই পরবর্তীতে কতিপয় দেশীয় এবং ভিনদেশী গণমাধ্যমে কোনো প্রকার তথ্যপ্রমাণ ব্যতীত পাঁচজন নিহত হয়েছেন দাবিতে প্রচার করা হয়।

সুতরাং, রাজধানীতে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনাকে পাঁচজন নিহত হওয়ার দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়; যা বিভ্রান্তিকর।  

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img