সম্প্রতি, “দুঃখের আঁধার রাত্রি বারে বারে” শীর্ষক একটি কবিতাকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা সর্বশেষ কবিতা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, “দুঃখের আঁধার রাত্রি বারে বারে” শীর্ষক কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সর্বশেষ কবিতা নয় বরং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা সর্বশেষ কবিতা হলো “তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি”।
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, দ্য ডেইলি স্টার বাংলা এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ৭ আগস্ট প্রকাশিত “যেমন ছিল রবীন্দ্রনাথের শেষের দিনগুলো ও শেষযাত্রা” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনের বিস্তারিত অংশ থেকে জানা যায়, ১৯৪১ সালের ৩০ জুলাই সকালে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ “তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি” কবিতাটি রচনা করেন। সেইসাথে উক্ত কবিতাটিকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সর্বশেষ সৃষ্টি হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

পাশাপাশি, রবীন্দ্ররচনা বিষয়ক ওয়েবসাইট tagoreweb এর ওয়েবসাইটে কবিতা রচনার তারিখ অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, “তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি” কবিতাটি ১৯৪১ সালের ৩০ জুলাই কলকাতার জোড়াসাঁকোতে রচিত হয়েছিল।

সেইসাথে, ফেসবুকে প্রচারিত কবিতাটি রচনার তারিখ অনুসন্ধান করে দেখা যায়, “দুঃখের আঁধার রাত্রি বারে বারে” কবিতাটি ১৯৪১ সালের ২৯ জুলাই কলকাতার জোড়াসাঁকোতে রচিত হয়েছিল।

স্পষ্টতই “তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি” কবিতাটি রচিত হয়েছিল “দুঃখের আঁধার রাত্রি বারে বারে” কবিতাটি রচনার পর।
জীবনের শেষ বয়সে রবীন্দ্রনাথ শারীরিক অসুস্থতার কারণে শ্রুতিলিখনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত সচিব অনিলকুমার চন্দের স্ত্রী ও রবীন্দ্রনাথের স্নেহধন্যা রাণী চন্দকে দিয়ে লেখাতেন। রানী চন্দ এর লেখা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ “গুরুদেব” এ উঠে এসেছে রবীন্দ্রনাথের জীবনের শেষদিনগুলোর স্মৃতিচারণ। গুরুদেব গ্রন্থের দ্বিতীয় মুদ্রণের ১৬০ এবং ১৬১ নম্বর পাতায় ১৯৪১ সালের ৩০ জুলাইয়ের স্মৃতিচারণ খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
রাণী চন্দের সেই স্মৃতিচারণা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, “তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি” কবিতাটি ৩০ জুলাই সকাল বেলায় রানী চন্দ নিজেই শ্রুতিলেখক হিসেবে লিপিবদ্ধ করেছিলেন।

গ্রন্থটি থেকে আরও জানা যায়, ৩০ জুলাই তারিখে কবিতাটি রচনার পরই জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে রবীন্দ্রনাথের অপারেশন সম্পন্ন হয় এবং রবীন্দ্রনাথের শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে গড়াতে থাকে। সবশেষ ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট প্রয়ান ঘটে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ফলে, শেষ কবিতাটি সম্পাদনা করারও সুযোগ হয়নি তার।
মূলত, ১৯৪১ সালের ২৯ জুলাই রবীন্দ্রনাথ জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে “দুঃখের আঁধার রাত্রি বারে বারে” কবিতাটি রচনা করেন। এই কবিতাটিকেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত সর্বশেষ কবিতা দাবি করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, উক্ত কবিতা রচনার একদিন পর অর্থাৎ, ১৯৪১ সালের ৩০ জুলাই কবিগুরু রচনা করেন “তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি” কবিতাটি যেটি তার জীবনের শেষ রচনা।
উল্লেখ্য, পূর্বেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজের কণ্ঠে গাওয়া গান দাবিতে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়লে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং,“দুঃখের আঁধার রাত্রি বারে বারে” শীর্ষক কবিতাটিকে রবীন্দ্রনাথের শেষ কবিতা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- দ্য ডেইলি স্টার: “যেমন ছিল রবীন্দ্রনাথের শেষের দিনগুলো ও শেষযাত্রা”
- Tagore web: শেষ লেখা১৪
- Tagore web: শেষ লেখা১৫
- গুরুদেব-রানী চন্দ; দ্বিতীয় সংস্করণ
- Rumor Scanner’s Own Analysis