সম্প্রতি, সংসদে ক্ষমা চাইলেন ব্যারিস্টার সুমন, পদত্যাগের নির্দেশ দিলো হাসিনা– শীর্ষক থাম্বনেইল এবং ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিলো ব্যারিস্টার সুমন, কষ্টে সংসদে সুমনের কান্নাকাটি– শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন সংসদে ক্ষমা চেয়েছে এবং তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন।
উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হবিগঞ্জ-৪ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন সংসদে ক্ষমা চাননি এবং তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের নির্দেশ দেননি বরং ভিন্ন কয়েকটি ভিডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে চটকদার থাম্বনেইলে এবং শিরোনামে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। আলোচিত ভিডিওটি’র শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে উল্লেখিত দাবিগুলোর সাথে ভিডিওটি’র বিস্তারিত অংশের মিল পাওয়া যায়নি।
ভিডিওতে প্রচারিত আলোচিত দাবিগুলো নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে উক্ত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানের এপর্যায়ে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে পৃথকভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
ভিডিও যাচাই-১
সংবাদ পাঠকের পঠিত সংবাদের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে News24 এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর “চার টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীকে পদত্যাগের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর/কাল পদত্যাগ করবেন মোস্তফা জব্বার” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবার প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনটির একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা নিউজ২৪ এর সংবাদ প্রতিবেদনের ফুটেজের হুবহু মিল রয়েছে।
উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, এটি ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ববর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের পদত্যাগের নির্দেশ নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনের ভিডিও।
ব্যারিস্টার সুমন একাদশ জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য কিংবা টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী ছিলেন না। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাই এই ভিডিও প্রতিবেদনের সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।
ভিডিও যাচাই-২
ভিডিওর এই অংশে প্রদর্শিত ব্যারিস্টার সুমনের বক্তব্যের ফুটেজের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে Desh Tv এর ইউটিউব চ্যানেলে গতবছরের ২১ ডিসেম্বর “এমপি হওয়া কি টাকা কামানোর জায়গা?: ব্যারিস্টার সুমন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটির একটি অংশই আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে।
উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণার সময় ব্যারিস্টার সুমন Desh Tv কে একটি সাক্ষাৎকার দেন। সেই সাক্ষাৎকারের ভিডিও এটি।
অর্থাৎ এই ভিডিও নির্বাচনের আগে হওয়ায় আলোচিত দাবির সাথে এই ভিডিও কোনো সম্পর্ক নেই।
ভিডিও যাচাই-৩
ব্যারিস্টার সুমনের সাক্ষাৎকারের এই ক্লিপের বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ATN Bangla এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ৩১ জানুয়ারি “এমপি হয়েই চাপে ব্যারিস্টার সুমন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটির একটি অংশই আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে।
উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর সম্প্রতি ব্যারিস্টার সুমন ATN Bangla কে একটি সাক্ষাৎকার দেন। সেই সাক্ষাৎকারের ভিডিও এটি। ১ মিনিট ২৫ সেকেন্ডের পর থেকে ব্যারিস্টার সুমনের দেওয়া বক্তব্যের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা ব্যারিস্টার সুমনের বক্তব্যের হুবহু মিল রয়েছে।
এখানেও ব্যারিস্টার সুমনের বক্তব্যে পদত্যাগ ও ক্ষমা চাওয়া সংক্রান্ত কোনো কথা বলতে বা মন্তব্য করতে শোনা যায়নি।
ভিডিও যাচাই-৪
ভিডিওতে প্রদর্শিত ব্যারিস্টার সুমনের বক্তব্যের এই অংশের ফুটেজ অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে Rtv এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ১০ জানুয়ারি “সংসদে এতো মানুষের দরকার নাই: ব্যারিস্টার সুমন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটির একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিও এই অংশের হুবহু মিল রয়েছে।
উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, ১০ জানুয়ারি সকাল ১০টার পর সংসদ ভবনের নিচতলায় শপথ নেয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের ব্যারিস্টার সুমন বলেন, সংসদে যেসব মানুষ দেখলাম, আরও কমানো যায়। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা মাঝে মাঝে চুপ হয়ে যান। এটা হওয়া যাবে না।
এই সাক্ষাৎকারেও তার পদত্যাগ ও ক্ষমা চাওয়া সংক্রান্ত কোনো মন্তব্য করতে শোনা যায়নি।
মূলত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন গত ১০ জানুয়ারি এমপি হিসেবে তিনি শপথ গ্রহণ করেছেন। পরবর্তীতে গত ৩০ জানুয়ারি প্রথম সংসদ অধিবেশনেও তিনি অংশগ্রহণ করেছেন। এরইমধ্যে সংসদে ক্ষমা চাইলেন ব্যারিস্টার সুমন, পদত্যাগের নির্দেশ দিলো হাসিনা– শীর্ষক থাম্বনেইলে এবং ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিলো ব্যারিস্টার সুমন, কষ্টে সংসদে সুমনের কান্নাকাটি– শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিটি মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে, ভিন্ন কয়েকটি ভিডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার থাম্বনেইল এবং শিরোনাম ব্যবহার করে প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যমেও এ-সংক্রান্ত দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, ব্যারিস্টার সুমন সংসদে ক্ষমা চেয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- News24- চার টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীকে পদত্যাগের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর/কাল পদত্যাগ করবেন মোস্তফা জব্বার
- Desh Tv- এমপি হওয়া কি টাকা কামানোর জায়গা?: ব্যারিস্টার সুমন
- ATN Bangla- এমপি হয়েই চাপে ব্যারিস্টার সুমন
- Rtv- সংসদে এতো মানুষের দরকার নাই: ব্যারিস্টার সুমন
- Rumor Scanner’s Own Analysis