সম্প্রতি ‘শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র’ শীর্ষক টাইটেল এবং ‘গয়েশ্বরএবং ভিপি নুরের হামলার ভিডিও দেখে খেপলো জাতিসংঘ প্রধান’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তার ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। গত ০৫ আগস্ট Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র’ শীর্ষক টাইটেল ব্যবহার করে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়।

১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের এই ভিডিওটির ১ মিনিট এক সেকেন্ডে বলা হয়, আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কড়া বার্তা দিলো জাতিসংঘ। বিরোধী দলের সমাবেশে পুলিশের উপর হামলা ও নির্যাতন নিয়ে কঠোর হুশিয়ারি দিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোরিও গুতেরেস। ভিডিও বার্তায় বলা হয় পুলিশের দমন নিপীড়নের ফলে বিরোধী দল তাদের সমাবেশ কিরতে পারছে না। এর ফলে গণতান্ত্রিক মৌলিক অধিকার প্রয়োগে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর জন্য জাতিসংঘ তীব্র নিন্দা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদ প্রদান করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা নিরাপত্তা বাহিনীর অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও আলোচিত দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে উল্লিখিত দাবির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি প্রকাশের আগের দিন মূলধারার গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ এর ওয়েবসাইটে একই তারিখে (০৪ আগস্ট) ‘পুলিশকে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ না করার আহ্বান জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের স্বার্থে শান্তিপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে সব রাজনৈতিক দল, তাদের সমর্থক ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশন। একই সাথে বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত বল প্রয়োগের বিষয়টির অবশ্যই দ্রুত তদন্ত করতে হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
ব্রিফিংয়ে মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের মুখপাত্র জেরেমি লরেন্স বলেন, গত কয়েক মাসে বিরোধীদের বেশ কয়েকটি সমাবেশে সহিংসতা ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। পুলিশ সেখানে রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও জলকামান ব্যবহার করেছে। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদাপোশাকের ব্যক্তিদের প্রতিবাদকারীদের দমনে হাতুড়ি, লাঠি, ব্যাট ও লোহার রডসহ নানা ধরনের বস্তু ব্যবহার করতে দেখা যায়।
ব্রিফিংয়ে পুলিশের ব্যাপারে বলা হয়, আমরা পুলিশের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, কেবল জরুরি প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রিতভাবে বল প্রয়োগ করা যেতে পারে। যদি করতেই হয়, বৈধতা, সংযমের ভিত্তিতে এবং যৌক্তিক কারণ সাপেক্ষে তা করতে হবে। অতিরিক্ত বল প্রয়োগের বিষয়টি অবশ্যই দ্রুত তদন্ত করতে হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
পরবর্তী অনুসন্ধানে কি ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে (০৪ আগস্ট) জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস এর ওয়েবসাইটে “Bangladesh Protests” শীর্ষক শিরোনামে একই তথ্যে প্রকাশিত প্রেস ব্রিফিংটি খুঁজে পাওয়া যায়।

এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের শতাধিক কর্মকর্তার ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, আলোচিত ভিডিওটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তার ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয়।
মূলত, সম্প্রতি ‘শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র’ শীর্ষক টাইটেল এবং ‘গয়েশ্বর এবং ভিপি নুরের হামলার ভিডিও দেখে খেপলো জাতিসংঘ প্রধান’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানের প্রেক্ষিতে দেখা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রের উল্লেখ নেই এবং আলোচিত দাবিগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তাছাড়া মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস কর্তৃক বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমোদন দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কোনো ভাবেই বিদেশি কোনো রাষ্ট্রদূতের পক্ষে এমন কাজ করার সুযোগও নেই।
প্রসঙ্গত, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাব ও বাহিনীটির ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
উল্লেখ্য, পূর্বেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে তথ্য প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তার ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Prothom Alo – পুলিশকে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ না করার আহ্বান জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের
- United Nations Human Rights – Bangladesh Protests
- US Embassy – Website
- Rumor Scanner’s own analysis