৮ আগস্ট সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রদল। এ ঘটনায় হলে থাকা শিক্ষার্থীদের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এই প্রেক্ষিতে কতিপয় গণমাধ্যমে দাবি করে, বামপন্থি ছাত্রসংগঠন ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক সদস্য সচিব ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও মুখপাত্র উমামা ফাতেমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষ বরাবর এক দরখাস্তে ঢাবির আবাসিক হলে বাম ছাত্র সংগঠন ছাড়া অন্য সব দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।

এই দাবিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন: যুগান্তর, কালের কণ্ঠ, বাংলা ভিশন, জনকণ্ঠ, একুশে টিভি, সময়ের আলো, দৈনিক সংগ্রাম, রূপালী বাংলাদেশ, জুম বাংলা।
এছাড়া, আমার দেশও একই দাবিতে সংবাদ প্রকাশ করলেও, পরবর্তীতে শিরোনাম পরিবর্তন করে আশ্চর্যবোধক চিহ্ন যোগ করে।
একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
ইউটিউবে প্রচারিত একই দাবি দেখুন: এখানে।
ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত দাবি দেখুন: এখানে, এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, উমামা ফাতেমা ঢাবির কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষ বরাবর এক দরখাস্তে ঢাবির আবাসিক হলে বাম ছাত্র সংগঠন ছাড়া অন্য সব দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি করেছেন বলে প্রচারিত তথ্যটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, দরখাস্তে তিনি বাম দলের নাম উল্লেখ না করলেও, বাম ছাড়া আরও কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নামও উল্লেখ করেননি।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে দেখা যায়, গণমাধ্যমে প্রচারিত দাবির সঙ্গে যুক্ত উমামা ফাতেমার ওই দরখাস্তে উল্লেখ করা হয়েছে, ০৭/০৯/২০২৪ তারিখে সম্মিলিত আন্দোলনের মাধ্যমে প্রশাসন থেকে এই মর্মে প্রতিশ্রুতি নিতে সক্ষম হই যে, উক্ত তারিখ থেকে সুফিয়া কামাল হলে সকল প্রকার ছাত্ররাজনীতি (ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, শিবির, বাগছাস) নিষিদ্ধ থাকবে। গত এক বছরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে প্রশাসনের এই চুক্তি বলবৎ ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে কতিপয় সংগঠন গুপ্তভাবে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে হলে। অতঃপর আজ ০৮/০৮/২০২৫ তারিখ সকালবেলা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের হল ইউনিট সাত সদস্যবিশিষ্ট হল কমিটি ঘোষণা করেছে। আমরা শিক্ষার্থীরা মনে করি, তাদের এইসব কার্যকলাপ জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে সৃষ্টি হওয়া উল্লেখিত চুক্তিকে ভঙ করে, যা স্পষ্টত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণার সামিল।
দরখাস্তে চারটি সংগঠনের নাম সরাসরি উল্লেখ থাকলেও বামপন্থি সংগঠনগুলোর নাম নেই। একই সঙ্গে, এতে বাম সংগঠন ছাড়া অন্য সব দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিও করা হয়নি।
রিউমর স্ক্যানারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি নিশ্চিত করেছেন, ঢাবিতে অন্তত পাঁচটি বামপন্থি ছাত্র সংগঠন বর্তমানে সক্রিয় রয়েছে। এগুলো হলো সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী), বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী এবং বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। এছাড়া ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ছাত্র অধিকার ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, ছাত্র যুব আন্দোলন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদ ও বাংলাদেশ ছাত্রপক্ষসহ আরও কয়েকটি সংগঠন রয়েছে। উক্ত দরখাস্তে বামপন্থি দলগুলোর মতো এসব অন্যান্য সংগঠনের নামও উল্লেখ করা হয়নি।
৯ আগস্ট বেসরকারি সংবাদ সংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি)-তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উমামা ফাতেমার মন্তব্য উদ্ধৃত হয়। তিনি জানান, “দৈনিক জনকণ্ঠসহ অন্যান্য মিডিয়ায় শিরোনাম ও ফটোকার্ডে আমার বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে। এসব সাংবাদিক নিজের মতো একটা অর্থ বানিয়েছে। কবি সুফিয়া কামাল হলে বামরা কোনো ফ্যাক্টর নয়, আমাদের হলে বাম রাজনীতি করেন এমন কেউ নেই।”
আলোচিত দাবির বিষয়ে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি দীর্ঘ পোস্টে উমামা জানান, ৮ আগস্ট ছাত্রদলের হল কমিটি ঘোষণার পর শিক্ষার্থীদের তীব্র প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে তিনি প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দেন। সেখানে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে একটি স্মারকলিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম খসড়ায় ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, শিবির ও বাগছাস—এই চার সংগঠনের নাম উল্লেখ করা হয়। পরে, এক শিক্ষার্থীর প্রস্তাবে সব রাজনৈতিক সংগঠনকে বোঝাতে “ইত্যাদি” শব্দ যুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে “বাম” প্রসঙ্গ ওঠার পর প্রশাসনের কাছে প্রদত্ত স্মারকলিপি নিয়ে “বামপন্থী” শব্দটিও সংযোজন করা হয়।
সুতরাং, উমামা ফাতেমা ঢাবির আবাসিক হলে বাম ছাত্র সংগঠন ছাড়া অন্য সব দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি করেছেন বলে প্রচারিত তথ্যটি বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- UNB: হলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ: উমামার বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন
- Umama Fatema: Facebook Post
- Rumor Scanner’s analysis.