গাজীপুরে হামলার শিকার সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন মারা যাননি

গত ৬ আগস্ট গাজীপুরের সাহাপাড়া এলাকায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বেধড়ক মারধরের শিকার হন দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকার রিপোর্টার আনোয়ার হোসেন। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছিলেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক। এ ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন তিনি।

এরই প্রেক্ষিতে, ‘Daily Ajker kantho’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত ৭ আগস্ট একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ‘এবার গাজীপুরে থানার পাশেই যুবককে পাথর মেরে হত্যা: নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে বিদ্ধ পুলিশ’ 

এছাড়াও ক্যাপশন বর্ণনায় বলা হয়, ‘…চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় এক যুবককে পাথর দিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা। ঘটনার সময় পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি সত্ত্বেও কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় জনমনে তীব্র ক্ষোভ ও নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।’

একই পেজ থেকে গত ৮ আগস্ট ‘আর নেই সাংবাদিক আনোয়ার: পুলিশের সামনেই যাকে পিটিয়েছিল চাঁদাবাজরা’ শিরোনামে একটি ফটোকার্ড প্রচার করা হয়। 

ফটোকার্ডটির বর্ণনায় দাবি করা হয়, ‘তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এছাড়াও দাবি করা হয়, সাংবাদিক আনোয়ারের মৃত্যুর পর তার মা বাদী হয়ে গাজীপুর সদর মেট্রো থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।’

ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৬ আগস্ট গাজীপুরের সাহাপাড়া এলাকায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বেধড়ক মারধরের শিকার দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকার রিপোর্টার আনোয়ার হোসেন মারা যাননি। দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মফিজুর রহমান এবং গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বিষয়টি রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেন।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ঢাকা ট্রিবিউন -এর ওয়েবসাইটে গত ৭ আগস্ট ‘গাজীপুরে পুলিশের সামনেই সংবাদকর্মীকে পেটালো চাঁদাবাজরা’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ফিচার ইমেজের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর একটি নির্দিষ্ট ফ্রেম ও আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডের ছবির সাদৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, অটোরিকশা এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের কাছ থেকে প্রতিদিনই চাঁদা আদায় করছে কয়েকজন চাঁদাবাজ। এমন তথ্য পেয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে গত ৬ আগস্ট পুলিশের সামনেই বেধড়ক মারধরের শিকার হয়েছেন সংবাদকর্মী আনোয়ার হোসেন সৌরভ। প্রতিবেদনটিতে সেই সময় গুরুতর আহত অবস্থায় তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়।

এছাড়াও প্রতিবেদনটিতে সাংবাদিকের মা এবং গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসানের বক্তব্যও পাওয়া যায়।

ওই সাংবাদিকের মা আনোয়ারা সুলতানা বলেন, “আমার ছেলে সাংবাদিক। কোনো অপরাধ ছাড়াই তাকে নির্মমভাবে মেরেছে। হাসপাতালে ছেলেকে নিয়ে আছি। তবে আমরা আতঙ্কিত।”

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, “ওই ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”

এই বিষয়ে গত ৮ আগস্ট ডেইলি স্টারের বাংলা সংষ্করণপ্রথম আলোর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ঘটনার ফলোআপ খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, উক্ত ঘটনায় ফরিদ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিবেদন প্রকাশকালীন সময়ে দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকার সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন বলেও জানা যায়।

আলোচিত দাবির বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে সাংবাদিক আনোয়ার হোসেনের কর্মস্থল দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকার সম্পাদক এবং গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসানের সাথে কথা বলে রিউমর স্ক্যানার টিম।

দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মফিজুর রহমান জানান, আনোয়ার হোসেন বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসানও নিশ্চিত করেন আনোয়ার হোসেন মারা যানানি।

সুতরাং, গত ৬ আগস্ট গাজীপুরের সাহাপাড়া এলাকায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বেধড়ক মারধরের শিকার দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকার রিপোর্টার আনোয়ার হোসেন মারা গেছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img