শুক্রবার, মার্চ 29, 2024
spot_img

২০২২ সালে দেশে যেসকল পাবলিক ফিগারের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছিল

ইতোমধ্যে বিদায় নিয়েছে ২০২২। বিদায়ী বছরে বছর জুড়ে ছিলো নানান আলোচিত ঘটনা। করোনা পরবর্তী বিশ্বে এ বছরে ছিলো রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব, বিশ্বকাপ ফুটবল কিংবা বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকটের মতো বড় বড় ইস্যু। নানান আলোচনার এ বছর থেকে আমরা এই প্রতিবেদনে তুলে ধরব বাংলাদেশে যেসকল জনপরিচিত কিংবা বিখ্যাত ব্যক্তিদের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছিলো। বাংলাদেশের ইন্টারনেটে সেলিব্রেটি মৃত্যু গুজবের শুরুটা হয়েছিল মালেশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ এর মৃত্যুর গুজব দিয়ে, বছর জুড়ে ছিলো কিংবদন্তি পেলে, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেত, চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন কিংবা অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশকজন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের মৃত্যুর গুজব। এই প্রতিবেদনে ২০২২ সালে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়া জনপরিচিত কিংবা বিখ্যাত ব্যক্তিদের মৃত্যুর সংবাদ, যেগুলো রিউমর স্ক্যানার গুজব হিসেবে চিহ্নিত করেছে তা তুলে ধরা হবে।

পেলে

আসল নাম এডিসন আরেন্তেস দো নাসিমেন্তো হলেও সারাবিশ্ব এক নামে পেলে বলেই জানে ব্রাজিল এই ফুটবল কিংবদন্তি কে। বিশ্বকাপ চলাকালে গত ২৯ নভেম্বর হঠাৎই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় পেলে কে। এরপর হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষের বরাতে পেলের শারীরিক অবস্থার জটিলতার সংবাদ প্রকাশিত হলে গত ৩ ডিসেম্বর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পেলের মৃত্যুর গুজব ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।  

বিষয়টির সত্যতা জানতে চেয়ে ৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাত (৪ ডিসেম্বর) সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার। রাত ২ টা ১৫ মিনিটে পাঠানো ফিরতি বার্তায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রিউমর স্ক্যানারকে জানায়, তিনি এখনও চিকিৎসাধীন আছেন এবং তার অবস্থা স্থিতিশীল আছে। খানিক বাদে পেলের অফিশিয়াল সোস্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকেও মৃত্যুর গুজবের প্রেক্ষিতে সবাইকে শান্ত এবং ইতিবাচক থাকার কথা জানিয়ে পোস্ট করা হয়। 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেয়া স্টেটমেন্ট এর বরাতে সেদিনই পেলের মৃত্যুর সংবাদকে গুজব চিহ্নিত করে ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছিলো রিউমর স্ক্যানার।

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মৃত্যুর সংবাদ গুজব হলেও শেষ পর্যন্ত জীবনের ইনিংস আর বাড়াতে পারেননি পেলে, ডিসেম্বর এর শেষ সপ্তাহে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে হাসপাতালেই মৃত্যু হয় তার। ডিসেম্বর ২৯ তারিখ, মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ার ২৬ দিন পর মারা যান এ কিংবদন্তি।

ইয়াসির আল-শাহরানি

দেশে সৌদি আরবের ফুটবলার ইয়াসির আল-শাহরানির দুই দফায় মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছিল। প্রথমবার গত ২২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সৌদি আরব ও আর্জেন্টিনার মধ্যকার ম্যাচচলাকালে নিজ দলের গোলরক্ষকের হাঁটুর আঘাতে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার পর নভেম্বর এর শেষ সপ্তাহে, দ্বিতীয়বার কতিপয় ভুঁইফোড় ক্লিকবেইট পোর্টালের বরাতে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে। দুই দফাতেই তার মৃত্যু হওয়ার দাবিটি কে গুজব চিহ্নিত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলো রিউমর স্ক্যানার।

মিঠুন চক্রবর্তী

নভেম্বরের প্রথম দশকে দেশের ফেসবুকে ভারতীয় কিংবদন্তি অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছিল কতিপয় ভুঁইফোড় পোর্টালের মাধ্যমে। অসুস্থতার কারণে হাসপাতাল ভর্তি থাকা মিঠুন চক্রবর্তীর পুরনো একটি ছবি প্রচারের মাধ্যমে তার মৃত্যুর গুজবটি প্রচার করা হয়েছিল। গত ১০ নভেম্বর মিঠুন চক্রবর্তী মারা গেছেন শীর্ষক দাবিটি কে গুজব চিহ্নিত করে ফ্যাক্টচেক করেছিল রিউমর স্ক্যানার।

প্রবীর মিত্র

২০২২ সালে অন্তত দু’বার বাংলাদেশের কিংবদন্তি ও প্রবীণ অভিনেতা প্রবীর মিত্র এর মৃত্যুর গুজব ছড়ায়। প্রথমবার আগস্টে এবং শেষবার অক্টোবর মাসে। দুবারই তার মারা যাওয়ার দাবিটি কে গুজব চিহ্নিত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার। 

ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরার মৃত্যুর গুজবটি ছড়িয়েছিল ২০২২ এর আগস্টে। শারীরিক নানা জটিলতায় অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরাকে ৭ আগস্ট সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তার শারীরিক জটিলতার সংবাদ প্রকাশিত হলে সেসময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের সাথে কথা বলে তার মৃত্যুর সংবাদটি গুজব নিশ্চিত হওয়ার পর ২৬ আগস্ট ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার।

মমতাজ বেগম

২০২২ সালের আগস্ট মাসে গায়িকা এবং সংসদ সদস্য মমতা বেগমেরও মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। কতিপয় ভুঁইফোড় ক্লিকবেইট পোর্টালের মাধ্যমে ফেসবুকে তার মারা যাওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হলে ২১ আগস্ট তা গুজব চিহ্নিত করে ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। 

ইলিয়াস কাঞ্চন

বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা, চলচিত্র পরিচালক, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির বর্তমান সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চনের মৃত্যুর গুজবটিও একইভাবে আগস্টে ভুঁইফোড় ক্লিকবেইট পোর্টালের বরাতে প্রচারিত হয়েছিল। যা নিয়ে ৯ আগস্ট ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। 

হানিফ সংকেত 

২০২২ এর মে মাসে জনপ্রিয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ইত্যাদির উপস্থাপক ও পরিচালক হানিফ সংকেতের মৃত্যুর গুজবটি ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল।

যা সেসময় গুজব চিহ্নিত করে ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার

ফজলে রাব্বি মিয়া

জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুর সংবাদ ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল ২০২২ সালের মে মাসে। অসুস্থ থাকা ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বির অসুস্থ অবস্থার ছবি প্রচারের মাধ্যমে গুজবটি মূলত ছড়িয়ে পড়েছিল। এপ্রিলে ছড়িয়ে পড়া তার এই মৃত্যুর সংবাদটি গুজব হওয়ায় তা নিয়ে ২০২২ সালের ২৯ এপ্রিল ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। যদিও পরবর্তীতে সে বছরের ২২ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

মিনো রাইওয়ালা

অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর জনপ্রিয় ফুটবল এজেন্ট মিনো রাইওলা মারা গেছেন শীর্ষক গুজবটি ছড়ায় ২৮ এপ্রিল।  তখন পর্যন্ত তার মারা যাওয়ায় দাবিটি সত্য না হওয়ায় তা গুজব বলে ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার। অবশ্য মৃত্যুর গুজবের দু দিন পর ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল মারা যান মিনো রাইওয়ালা।

মোশারফ হোসেন রুবেল

ক্যান্সার আক্রান্ত এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকা ক্রিকেটার মোশাররফ হোসেন রুবেলের মৃত্যুর গুজবটি ছড়ায় ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল। সেসময় তার মৃত্যুর সংবাদটি গুজব হওয়ায় তা চিহ্নিত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ার ৬ দিন পর ২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল ঢাকার একটি হাসপাতালে ৪০ বছর বয়সে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন মোশাররফ রুবেল। ২০১৯ সাল থেকে ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

আকবর হোসেন পাঠান ফারুক

চলচ্চিত্র অভিনেতা এবং ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক দীর্ঘদিন ধরে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালে ২০২০ সালের এপ্রিলে তার মৃত্যুর গুজব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছিল। মৃত্যুর সংবাদটি গুজব হওয়ায় তা চিহ্নিত করে সেসময় ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। 

কানাডিয়ান স্নাইপার ওয়ালি

বছরের সবচেয়ে আলোচিত রাশিয়া-ইউক্রেন কনফ্লিক্টে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ইউক্রেনের ‘ইন্টারন্যাশনাল লিজিয়ন অফ টেরিটোরিয়াল ডিফেন্স’ এ যোগ দিতে ২০২১ সালের মার্চের শুরুতে ইউক্রেন গিয়েছিলেন কানাডিয়ান স্নাইপার ওয়ালি। মার্চের মাঝামাঝি সময়ে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হাতে তার নিহত হওয়ার সংবাদ প্রচারিত হলে তা বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তার মৃত্যুর সংবাদটি মিথ্যা নিশ্চিত হলে তা নিয়ে ২০২২ সালের ২৬ মার্চ ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন করেছিল রিউমর স্ক্যানার।

মাহাথির মোহাম্মদ 

২০২২ সালের প্রথম মাসেই মালয়েশিয়ার সফল সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ এর মারা যাওয়ার গুজব দেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।  হৃদরোগ জনিত সমস্যা নিয়ে কুয়ালালামপুরের ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউটের করোনারি কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন থাকার সংবাদগুলো প্রকাশের প্রেক্ষিতে তার মারা যাওয়ার গুজব প্রচারিত হয়। মাহাথির মোহাম্মদ এর মারা যাওয়ার বিষয়টি গুজব হিসেবে চিহ্নিত করে ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারী ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার।

এছাড়াও আলোচিত ডা. আফিয়া সিদ্দিকী এবং ভারতে হিজাব বিতর্কে আলোচিত তরুনী মুসকানের মৃত্যুর গুজব উল্লেখযোগ্য।

২০২২ সালের পাবলিক ফিগারদের মৃত্যুর গুজব ছড়ানোর এই তালিকাকে যদি আমরা পর্যবেক্ষণ করি তাহলে এ ধরনের মৃত্যু গুজব প্রচার হওয়ার তিনটি মেজর কারণ পাওয়া যায়। 

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জনপ্রিয় কেউ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে এবং তার শারিরিক জটিলতার সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে, তাদের মৃত্যুর গুজব প্রচার হতে দেখা যাচ্ছে, এ ধরনের গুজব সৃষ্টির পিছনে এটা অন্যতম কারণ হিসেবে পরিলক্ষিত হয়েছে। এরপর অন্যতম বড় কারণ হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে কতিপয় ভুঁইফোড় পোর্টালের বিভিন্ন পাবলিক ফিগারের মৃত্যু নিয়ে ক্লিকবেইট শিরোনাম কিংবা ভুয়া মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ। তৃতীয় অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে মৃত্যুর গুজব প্রচারিত হওয়ার বিষয়টি। যার উদাহরণ হিসেবে নেয়া যেতে পেরে ভারতের হিজাব বিতর্কের সময় মুসকানের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়া কিংবা পদ্মা সেতুর উদ্বোধনীতে ফেরি বন্ধ থাকায় শিশুর মৃত্যুর গুজবটি। 

শুধু এবছরই নয়, প্রতিবছরই নানান পাবলিক ফিগারের মৃত্যুর গুজব সোস্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। এটা একরকম মহামারি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। লোকজন তথ্য শেয়ারে সতর্ক না হলে মৃত্যুর গুজব ছড়ানোর এই অসুস্থতা বন্ধ হওয়া সম্ভব নয়। কারো মৃত্যুর গুজব প্রচার কিংবা একজন ব্যক্তি বেঁচে আছেন কিংবা চিকিৎসাধীন আছেন এমন সময় তার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে দেয়া অত্যন্ত গর্হিত কাজ। যার মৃত্যুর গুজব ছড়ানো হয় তার পরিবারের মানসিক অবস্থা কেমন হয় তা জানতে  নিজের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেতের দেয়া ফেসবুক পোস্টটি নিচে তুলে ধরা যাক, 

“আমার ভাবতে কষ্ট হচ্ছে আমাকে স্ট্যাটাস দিয়ে প্রমাণ দিতে হলো, আমি বেঁচে আছি। আমার মৃত্যু নিয়ে এ ধরণের স্ট্যাটাস কখনও দিতে হবে ভাবিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী এক শ্রেণির বিকৃত মানসিকতার মানুষ তাদের ভিউ ব্যবসা ও ফলোয়ার বাড়াবার প্রত্যাশায় মানুষের মৃত্যু নিয়ে মিথ্যে ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে অসামাজিক কাজ করছে। ছড়িয়েছে আমার মৃত্যু সংবাদ। একজন সুস্থ মানুষকে মেরে ফেলার পেছনে এদের কি ধরণের মানসিকতা কাজ করে আমার বোধগম্য নয়। তারা কী একবারও চিন্তা করে না আমাদেরও পরিবার আছে, আত্মীয়-স্বজন আছে, শুভাকাঙ্ক্ষী আছে? এ ধরণের সংবাদে তাদের মানসিক অবস্থা কি হতে পারে? আমি আপনাদের সবার দোয়া ও ভালোবাসায় সুস্থ আছি। ভালো আছি। আমার কোনরকম কোন দুর্ঘটনাও ঘটেনি। গত দু’দিন ধরে আমি ও আমার পরিবার এই মৃত্যু গুজবের কারণে নিদারুণ মানসিক কষ্টে আছি। শত শত মানুষ যোগাযোগ করেছেন, এখনও করছেন। সুস্থতা কামনা করছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে শুধুমাত্র ভিউ, লাইক, শেয়ার পাবার জন্য একজন মানুষকে এরা মেরে ফেলবে? এ কি ধরণের মানসিকতা? নাকি এদের অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে? এর আগেও বেশ কয়েকজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের মৃত্যুর আগেই মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছে একটি মহল। সময় এসেছে এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার। যেসব মাধ্যম এবং পেজ থেকে এ ধরণের সংবাদ আপলোড হচ্ছে, শেয়ার হচ্ছে তাদের আপনারা বুঝিয়ে দিন, না জেনে না শুনে নিশ্চিত না হয়ে কোন কিছু শেয়ার করা শুধু অন্যায় নয়, অপরাধও। দেশ বিদেশ থেকে আমার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী, আত্মীয়-স্বজন ও ভালোবাসার মানুষরা আমাকে সমবেদনা জানিয়েছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।আমার আকস্মিক মৃত্যু গুজবে যারা কষ্ট পেয়েছেন, সমবেদনা জানিয়েছেন সবার প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আর যারা এ ধরণের গুজব ছড়িয়েছে তাদের প্রতি অন্তর থেকে ঘৃণা প্রকাশ করছি। ইতোমধ্যে আমি সাইবার ক্রাইম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা শীঘ্রই ব্যবস্থা নেবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। আর একটি অনুরোধ, ‘গুজবে কখনও কান দিবেন না’।”

মৃত্যুর গুজব ছড়ানোর বাহক না হতে চাইলে করণীয় 

যেকোনো তথ্য সেটা যে মাধ্যমেই আসুক না কেনো তা গ্রহণ করে নেয়া এবং শেয়ার করার আগে নিজে ক্রসচেক করে সত্যতা নিশ্চিতের বিকল্প নেই। কারো মৃত্যুর সংবাদ শেয়ার করার আগে তাই সত্যতা নিশ্চিত হয়ে নিন। কোনো পাবলিক ফিগারের মৃত্যু হলে তা নিয়ে অবশ্যই মূলধারার গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হবে। তাই খুব সহজেই সেই পাবলিক ফিগারের নাম গুগলে সার্চ করে গুগলের নিউজ সেকশনে ক্লিক করার মাধ্যমে তার মৃত্যু নিয়ে মূলধারার কোনো সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে কি না তা ক্রসচেক করে নিতে পারবেন। ভুঁইফোড় ক্লিকবেইট পোর্টালের অভাব নেই। তাই বেনামি ভুঁইফোড় পোর্টালগুলো থেকে তথ্য গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করুন। অন্তত কারো মৃত্যু সংবাদ নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে নিশ্চিত না হওয়া অব্দি শেয়ার না করার অভ্যাস করুন। আমাদের সচেতনতাই গুজব প্রতিরোধে অন্যতম মাধ্যম।

নিচে রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশ গ্রুপে প্রকাশিত সেলিব্রিটি মৃত্যুর গুজব নিয়ে করা একটা প্রাসঙ্গিক মিম দিয়ে শেষ করা যাক!

মৃত্যুর গুজব ছড়ানোর এই অসুস্থতা বন্ধ হওয়ার প্রত্যাশায় প্রতিবেদনটি শেষ হলো।

RS Team
RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img