সম্প্রতি, “কিংবদন্তী চলচ্চিত্র অভিনেতা প্রবীর মিত্র আর নেই” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রবীর মিত্রের মারা যাওয়ার দাবিটি সত্য নয় বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে।
কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, জাতীয় দৈনিক মানবজমিন এর ওয়েবসাইটে গত ১১ আগস্ট ‘এফডিসিতে যাওয়ার জন্য মন ছটফট করে’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্র দীর্ঘদিন ধরে অস্টিওপরোসিস রোগে আক্রান্ত। তবে দিল্লির হাসপাতালে পায়ের অস্ত্রোপচার হওয়ায় আগের তুলনায় ভালো আছেন তিনি। গত মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় মানবজমিন-এর প্রতিবেদক মাজহারুল তামিম প্রবীর মিত্রের বাসায় যান, কথা বলেন প্রবীর মিত্র ও তার ছেলের সঙ্গে।
এছাড়া Channel I Online এ গত ১২ আগস্ট প্রবীর মিত্রের ঘরবন্দি জীবন, ফিরতে চান অভিনয়ে শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, “তার দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে টিভি দেখে। ঘরবন্দী থাকলেও মন পড়ে থাকে এফডিসি ও শুটিংয়ে। প্রবীর মিত্রের ছেলে মিথুন মিত্র জানান, তার বাবার শ্রবণ শক্তি দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে। সে কারণে তিনি ঠিকমত কানে শুনতে পান না। উচ্চস্বরে কথা বললে উত্তর দিতে পারেন। তবে তিনি ঠিকমত খাওয়াদাওয়া করতে পারেন।”
গুজবের সূত্রপাত
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৭ আগস্ট ফ্রেশনিউজ নামক একটি ভুঁইফোড় অনলাইন পোর্টালে কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্র আর নেই তিনি না ফেরার দেশে পারি জমিয়েছেন!!! (আর্কাইভ) শিরোনামে প্রকাশ হওয়া একটি প্রতিবেদনের লিঙ্ক ব্যবহার করে প্রবীর মিত্রের মৃত্যুর খবরটি ফেসবকে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। তবে প্রতিবেদনের শিরোনামের সাথে প্রতিবেদনে লেখা তথ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায় নি।
বিস্তারিত প্রতিবেদনে বলা হয়, “বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়; চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সাত দিনের বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান তার পুত্রবধূ সোনিয়া ইসলাম।অস্টিওপরোসিসসহ (হাড়ক্ষয়) বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে কয়েক বছর ধরেই চার দেওয়ালে বন্দি জীবন কাটছিল ৮১ বছর বয়সী এ অভিনয়শিল্পীর।”
এই প্রতিবেদনের কিছু লেখা কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দেখা যায়, মূল ধারার গণমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ গত ৯ ফেব্রুয়ারী প্রবীর মিত্র দিল্লির হাসপাতালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে প্রবীর মিত্রের ভারতে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এই প্রতিবেদনের লেখার সাথে ফ্রেশনিউজের প্রতিবেদনটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Gigs news নামক আরেকটি ভুঁইফোড় অনলাইন পোর্টালও গত ৮ আগস্ট প্রবীর মিত্রের মৃত্যুর খবর (আর্কাইভ) প্রকাশ করে। কিন্তু সেই প্রতিবেদনে বিস্তারিত কোনো লেখা খুঁজে পাওয়া যায় নি।
উল্লেখ্য, প্রবীর মিত্রকে জড়িয়ে পূর্বেও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছে ফেসবুকে। গত মে মাসে ‘বৃদ্ধাশ্রম’ নামক একটি চলচ্চিত্রে প্রবীর মিত্রের অভিনয়ের বিষয়টিকেই কিছু বেনামী ভুঁইফোড় অনলাইন পোর্টালে “ ‘বৃদ্ধাশ্রমে’ প্রবীর মিত্র” শীর্ষক বিকৃত শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। ফলে বিষয়টি নিয়ে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
মূলত, দীর্ঘদিন ধরে অস্টিওপরোসিস রোগে আক্রান্ত প্রবীর মিত্র। তবে সম্প্রতি ভারত থেকে চিকিৎসা করিয়ে আসায় আগের তুলনায় ভালো আছেন বলে গত ০৯ আগস্ট মানবজমিন পত্রিকাকে জানান এই অভিনেতা। কিন্তু কিছু ভুঁইফোড় অনলাইন পোর্টালে ৪ আগস্ট থেকে ‘প্রবীর মিত্র আর নেই’ – শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যার শিরোনামের সাথে বিষয়বস্তুর কোনো মিল নেই। এমন কিছু প্রতিবেদনের লিঙ্ক ব্যবহার করে এর কোনো সত্যতা যাচাই না করেই তথ্যটি ফেসবুকে ছড়ানো হচ্ছে।
সুতরাং, কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্রের মারা যাওয়ার খবরটি সম্পূর্ণ গুজব।
তথ্যসূত্র
- Daily Manab Zamin : ‘এফডিসিতে যাওয়ার জন্য মন ছটফট করে’
- Channel I Online : প্রবীর মিত্রের ঘরবন্দি জীবন, ফিরতে চান অভিনয়ে
- বিডিনিউজ২৪ প্রবীর মিত্র দিল্লির হাসপাতালে